মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ
-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*
(১৪তম কিস্তি)
আসমান-যমীনে সর্বোত্তম স্থান
দেওবন্দীরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবরকে আসমান-যমীনের সকল স্থান অপেক্ষা উত্তম মনে করে। অথচ ইসলামী শরী‘আতে এরকম কোন নির্দেশনা নেই। বরং শরী‘আতে দু’টি স্থানকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে; যা ‘হারাম’ বা পবিত্র নামে খ্যাত। হাদীছে এসেছে, জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,إِنَّ إِبْرَاهِيْمَ حَرَّمَ مَكَّةَ وَإِنِّىْ حَرَّمْتُ الْمَدِيْنَةَ مَا بَيْنَ لَابَتَيْهَا ‘নিশ্চয় ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মক্কাকে হারাম করেছেন আর আমি মদীনার দুই পাথুরে অঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম করলাম’।[১] এই হারাম[২] এলাকা দু’টিতে কেউ কারো উপর চড়াও হওয়া বা আঘাত করা নিষিদ্ধ। এমনকি এই এলাকাতে কোন গাছ কাটা বা শিকার করাও নিষিদ্ধ।[৩] মহান আল্লাহ এই পৃথিবীর সকল শহরের উপর মক্কা ও মদীনাকে মর্যাদা দিয়েছেন ও সম্মানিত করেছেন।
মক্কা ও মদীনার ফযীলত
পবিত্র ও সম্মানিত দুই শহরের যে ফযীলত আছে, তা অন্য কোন শহরের নেই। দুই হারামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, এই দুই হারাম অহীর অবতরণ স্থল। যে অহীর মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার সার্বিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মহান আল্লাহই এ দুই শহরকে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ও মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন।
ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন।[৪] তিনি এর অধিবাসীদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে খাছ করে দু‘আ করেছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ اِذۡ قَالَ اِبۡرٰہٖمُ رَبِّ اجۡعَلۡ ہٰذَا بَلَدًا اٰمِنًا وَّ ارۡزُقۡ اَہۡلَہٗ مِنَ الثَّمَرٰتِ مَنۡ اٰمَنَ مِنۡہُمۡ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ
‘স্মরণ কর সে সময়ের কথা, যখন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনি এই শহরকে নিরাপদ করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান আনবে তাদেরকে বিভিন্ন ফল-ফলাদি দ্বারা রিযিক প্রদান করুন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১২৬)।
মক্কা এমন একটি শহর, যাকে মহান আল্লাহ সম্মানিত করেছেন। তিনি এ শহরকে পৃথিবীর সর্বোত্তম, সর্বশ্রেষ্ঠ, বরকতময় এবং হেদায়াত স্বরূপ করেছেন। মহান আল্লাহ এই শহরের মর্যাদা বর্ণনা করে বলেন, اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّ ہُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡنَ ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য বরকতময় ও হেদায়াত স্বরূপ’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ৯৬)।
মক্কা বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ও মর্যাদাসম্পন্ন শহর। যে মর্যাদা পৃথিবীর অন্য কোন শহর বা নগরীকে প্রদান করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে যখন মদীনায় হিজরতের নির্দেশ প্রদান করা হল, তখন তিনি মক্কা শহরের মর্যাদার কথা স্মরণ করে দুঃখ করে বলেন,وَاللهِ إِنَّكِ لَخَيْرُ أَرْضِ اللهِ وَأَحَبُّ أَرْضِ اللهِ إِلَى اللهِ وَلَوْلاَ أَنِّى أُخْرِجْتُ مِنْكِ مَا خَرَجْتُ ‘আল্লাহর কসম! নিশ্চয় তুমি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ভূমি ও আল্লাহর নিকট আল্লাহর ভূমি সমূহের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ভূমি, যদি আমাকে তোমার থেকে বের করে না দেয়া হত তবে আমি বেরিয়ে যেতাম না’।[৫]
মক্কা এমন এক জায়গা যেখানে রয়েছে দু‘আ কবুলের অনেক সুযোগ ও স্থান। দু‘আ কবুলের স্থানসমূহের মধ্যে রয়েছে মক্কার পবিত্র স্থানসমূহ। তাছাড়া হজ্জের প্রত্যেকটি স্থানই দু‘আ কবুলের সর্বোত্তম স্থান। যেমন, ১. বাইতুল্লাহ ২. হাজারে আসওয়াদ ৩. রুকনে ইয়ামানী।[৬] ৪. ছাফা ও মারওয়ায় সাঈরত অবস্থায়[৭] ৫. আরাফার মাঠ[৮] ৬. মুযদালিফায়।[৯]
ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর ন্যায় অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও মদীনার জন্য বিশেষভাবে আল্লাহর নিকট দু‘আ করেছিলেন। তাঁর দু‘আর ফলে মদীনা বরকতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন,اَللَّهُمَّ اجْعَلْ بِالْمَدِيْنَةِ ضِعْفَىْ مَا جَعَلْتَ بِمَكَّةَ مِنَ الْبَرَكَةِ ‘হে আল্লাহ! আপনি মক্কার তুলনায় মদীনাতে দ্বিগুণ বরকত দান করুন’।[১০] অন্য হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, মদীনার লোকজন যখন তাদের নতুন গাছের ফল দেখত, তখন তারা তা নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে নিয়ে যেতেন, আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঐ ফল হাতে নিয়ে বলতেন,
اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ ثَمَرِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِىْ مَدِيْنَتِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِىْ صَاعِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِىْ مُدِّنَا اللَّهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيْمَ عَبْدُكَ وَخَلِيْلُكَ وَنَبِيُّكَ وَإِنِّىْ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ وَإِنَّهُ دَعَاكَ لِمَكَّةَ وَإِنِّىْ أَدْعُوْكَ لِلْمَدِيْنَةِ بِمِثْلِ مَا دَعَاكَ لِمَكَّةَ وَمِثْلِهِ مَعَهُ
‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মদীনাতে বরকত দান করুন, আমাদের ছা‘-তে বরকত দান করুন, আমাদের ‘মুদ্দ’-এ বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! নিশ্চয় ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) আপনার বান্দা, খলীল (বন্ধু) ও নবী। আমিও আপনার বান্দা ও নবী। তিনি মক্কার জন্য দু‘আ করেছেন আর আমি দু‘আ করছি মদীনার জন্য। আপনার কাছে আমি মদীনার জন্য তেমন প্রার্থনা করছি যেমন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মক্কার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। সেই সাথে আরো অনুরূপ।[১১] অর্থাৎ মক্কার তুলনায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দ্বিগুণ বরকতের দু‘আ করেছেন। অন্য বর্ণনায় আছে, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মদিনায় আগমন করলেন, আবূ বকর ও বেলাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হলেন। আমি গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এই খবর দিলে তিনি বললেন,
أَللهم حَبِّبْ إِلَيْنَا الْمَدِيْنَةَ كَحُبِّنَا مَكَّةَ أَوْ أَشَدَّ وَصَحِّحْهَا وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِهَا وَمُدِّهَا وَانْقُلْ حَمَّاهَا فَاجْعَلْهَا بِالْجُحْفَةِ
‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য মদীনাকে প্রিয় করুন, যেভাবে মক্কা আমাদের নিকট প্রিয় অথবা তা অপেক্ষাও অধিক। তাকে আমাদের পক্ষে স্বাস্থ্যকর করুন; আমাদের জন্য তার ছা‘ ও তার মুদ্দ-এ বরকত দান করুন এবং তার জ্বরকে জুহফায় স্থানান্তরিত করুন’।[১২]
মদীনা এমন একটি বরকতময় শহর, যেখানে মহামারী প্লেগ বা কোন রকমের আসমানী আযাব প্রবেশ করবে না। এমনকি দাজ্জালও প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা এই শহরকে নিরাপদ করেছেন। তিনি এই শহরের নিরাপত্তার জন্য পাহারাদার হিসাবে ফেরেশতাদের নিয়োজিত করেছেন।[১৩] মহান আল্লাহ এ শহরকে সকল ধরনের বিদ‘আত এবং বিদ‘আতীদের থেকে হেফাযত করেছেন। কেননা সেখানে বিদ‘আত করা বা বিদ‘আতীদের প্রশ্রয় দেয়া নিষিদ্ধ।[১৪] তিনি এ শহরকে শত্রু থেকেও নিরাপদ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
وَلَا يُرِيْدُ أَحَدٌ أَهْلَ الْمَدِيْنَةِ بِسُوْءٍ إِلَّا أَذَابَهُ اللهُ فِي النَّارِ ذَوْبَ الرَّصَاصِ أَوْ ذَوْبَ الْمِلْحِ فِي الْمَاءِ
‘যে ব্যক্তিই মদিনাবাসীদের ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দোযখের আগুনে এমনভাবে বিগলিত করবেন, যেভাবে আগুনের তাপে শীশা গলে যায় অথবা পানিতে লবণ গলে যায়’।[১৫]
যে ব্যক্তি এ বরকতময় শহরে ক্ষুধা ও কষ্টের সময় ধৈর্যধারণ করবে এবং তাতে মৃত্যুবরণ করবে, ক্বিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার জন্য সুপারিশ করবেন।[১৬]
মদীনা শহরটি হল ঈমানের শহর। যে শহরের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীতে ঈমানের আলো ছড়িয়ে পড়েছিল। আবার এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষ ঈমানহীন হয়ে যাবে, তখন ঈমান পুনরায় মদীনাতে প্রত্যাবর্তন করবে। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,إِنَّ الإِيْمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِيْنَةِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا ‘নিশ্চয় ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে যেমনভাবে সাপ তার গর্তে ফিরে আসে।[১৭] এটা মদীনার জন্য এক মহা ফযীলত, যে সারা বিশ্ব ঈমান শূন্য হলেও মদীনা থাকবে ঈমানে পূর্ণ।
এটা এমন নিরাপদ শহর, যার বৃক্ষ ছেদন করা যাবে না, শিকার হত্যা করা চলবে না[১৮], তাতে রক্ত প্রবাহিত করা হবে না, যুদ্ধের জন্য অস্ত্র বহন করা যাবে না এবং পশুর খাদ্যের জন্য ব্যতীত তাতে কোন গাছের পাতা ঝাড়া যাবে না।[১৯] এ শহরের পবিত্রতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
أُمِرْتُ بِقَرْيَةٍ تَأْكُلُ الْقُرَى يَقُوْلُوْنَ يَثْرِبُ وَهِيَ الْمَدِيْنَةُ تَنْفِي النَّاسَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ
‘আমি এমন এক জনপদে হিজরতের জন্য আদিষ্ঠ হলাম, যে জনপদ অন্য জনপদসমূহকে গ্রাস করবে। মানুষেরা তাকে ‘ইয়াসরিব’ বলে, আর তা হল ‘মদীনা’। মদীনা মানুষকে বিশুদ্ধ করে যেভাবে হাঁপর মরিচা ঝেড়ে লোহাকে বিশুদ্ধ করে।[২০] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেছেন,إِنَّ اللهَ سَمَّى الْمَدِيْنَةَ طَابَةً ‘আল্লাহ তা’আলা মদীনার নাম রেখেছেন ‘ত্বাবা’ বা পবিত্র’।[২১] নবী করীম (ﷺ) তাবূক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদীনার নিকটবর্তী হলে তিনি বললেন, هَذِهِ طَابَةُ ، وَهَذَا أُحُدٌ ، جَبَلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ ‘এই ত্বাবা (পবিত্র) এবং এই উহূদ পর্বত আমাদের ভালোবাসে আর আমরাও তাকে ভালোবাসি’।[২২]
দুই হারামে দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ
দুই হারাম অন্য সকল শহরের চেয়ে অত্যধিক ফযীলতপূর্ণ। কেননা দুই হারামে দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ। ক্বিয়ামতের বড় আলামত সমূহের মধ্যে অন্যতম হল দাজ্জালের আগমন। ঐ সময় দাজ্জাল এসে নিজেকে আল্লাহ দাবি করবে এবং সারা বিশ্ব চষে বেড়াবে চোখের পলকে। কিন্তু সে দুই হারামে প্রবেশ করতে পারবে না এবং এর অধিবাসীদেরও কোন ধরনের ক্ষতি করতে পারবে না। দাজ্জালের ফিতনা থেকে দুই হারাম সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ থাকবে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ لَيْسَ مِنْ بَلَدٍ إِلاَّ سَيَطَؤُهُ الدَّجَّالُ إِلاَّ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةَ لَيْسَ لَهُ مِنْ نِقَابِهَا نَقْبٌ إِلاَّ عَلَيْهِ الْمَلاَئِكَةُ صَافِّيْنَ يَحْرُسُوْنَهَا ثُمَّ تَرْجُفُ الْمَدِيْنَةُ بِأَهْلِهَا ثَلاَثَ رَجَفَاتٍ فَيُخْرِجُ اللهُ كُلَّ كَافِرٍ وَمُنَافِقٍ
আনাস বিন মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, মক্কা ও মদীনা ব্যতীত এমন কোন শহর নেই যেখানে দাজ্জাল যাবে না। মক্কা ও মদীনাতে সে এজন্য প্রবেশ করতে পারবে না যে, সেখানে সারি সারি ফেরেশতা দ্বারা নিশ্চিদ্র পাহারা বসানো হবে। অতঃপর মদীনা তার অধিবাসীদের নিয়ে তিনবার চরমভাবে প্রকম্পিত হয়ে উঠবে। আর এর মাধ্যমে আল্লাহ সকল কাফির ও মুনাফিক্বকে মদীনা থেকে বের করে দেবেন।[২৩]
দুই হারামে জান্নাতী নিদর্শন
১. হাজারে আসওয়াদ : হাজারে আসওয়াদ বা কালো পাথর জান্নাত থেকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতী নিদর্শন হিসাবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। যা মক্কায় কা‘বা ঘরের দক্ষিণ দিকে রক্ষিত আছে। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, نَزَلَ الْحَجَرُ الأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِىْ آدَمَ ‘কালো পাথর জান্নাত থেকে এসেছে। আর এটি দুধের চেয়েও সাদা ছিল কিন্তু বনী আদমের পাপরাশি একে কালো করে দিয়েছে’।[২৪]
২. রুকনে ইয়ামানী ও মাক্বামে ইবরাহীম : আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
إِنَّ الرُّكْنَ وَالْمَقَامَ يَاقُوْتَتَانِ مِنْ يَاقُوْتِ الْجَنَّةِ طَمَسَ اللهُ نُوْرَهُمَا وَلَوْ لَمْ يَطْمِسْ نُوْرَهُمَا لَأَضَاءَتَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ
‘রুকনে ইয়ামানী ও মাক্বামে ইবরাহীম এ দু’টি জান্নাতের দুটি মুক্তা। আল্লাহ তা‘আলা এর জ্যোতি মুছে দিয়েছেন। যদি আল্লাহ এই জ্যোতি মুছে না দিতেন, তাহলে এ দুই পাথর পূর্ব থেকে পশ্চিম তথা সারা বিশ্বকে আলোকিত করত’।[২৫]
৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হুজরা, মিম্বার ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান : রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হুজরা, মিম্বার ও মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের একটি অংশ। যেমন হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, مَا بَيْنَ بَيْتِىْ وَمِنْبَرِىْ رَوْضَةٌ مِّنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ وَمِنْبَرِىْ عَلَى حَوْضِىْ ‘আমার বাড়ী ও মিম্বরের মধ্যবর্তীস্থান জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্যে একটি বাগান। আর আমার মিম্বর আমার হাউযের (কাওছার) উপর’।[২৬] নবী করীম (ﷺ) আরো বলেছেন,مِنْبَرِى هَذَا عَلَى تُرْعَةٍ مِنْ تُرَعِ الْجَنَّةِ ‘আমার এই মিম্বার জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগানের উপর স্থাপিত’।[২৭] অন্য হাদীছে এসেছে, উম্মে সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, إِنَّ قَوَائِمَ مِنْبَرِىْ هَذَا رَوَاتِبُ فِى الْجَنَّةِ ‘আমার এই মিম্বারের খুঁটিসমূহ জান্নাতের উপরেই স্থাপিত’।[২৮]
দুই হারামে ছালাত আদায় করার ফযীলত
দুই হারাম তথা মসজিদে হারাম, মসজিদে নববীতে ছালাত আদায় করার ফযীলত অত্যধিক। মহান আল্লাহ বলেন,
سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِہٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا الَّذِیۡ بٰرَکۡنَا حَوۡلَہٗ لِنُرِیَہٗ مِنۡ اٰیٰتِنَا اِنَّہٗ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ
‘পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মসজিদুল হারাম থেকে আল মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমরা বরকত দিয়েছি, যেন আমরা তাকে আমাদের কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ১)। মহান আল্লাহ বলেন,
لَا تَقُمۡ فِیۡہِ اَبَدًا لَمَسۡجِدٌ اُسِّسَ عَلَی التَّقۡوٰی مِنۡ اَوَّلِ یَوۡمٍ اَحَقُّ اَنۡ تَقُوۡمَ فِیۡہِ فِیۡہِ رِجَالٌ یُّحِبُّوۡنَ اَنۡ یَّتَطَہَّرُوۡا وَ اللّٰہُ یُحِبُّ الۡمُطَّہِّرِیۡنَ
‘আপনি সেখানে কখনো (ছালাত কায়েম করতে) দাঁড়াবেন না। অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাক্বওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে তা বেশী হকদার যে, আপনি সেখানে ছালাত কায়েম করতে দাঁড়াবেন। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন’ (সূরা আত-তওবাহ : ১০৮)।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ صَلَاةٌ فِيْ مَسْجِدِيْ هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيْمَا سِوَاهُ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ
ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আমার এ মসজিদে এক ছালাত অপর মসজিদে এক হাযার ছালাত অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, তবে মসজিদে হারাম ব্যতীত।[২৯]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ صَلَاةٌ فِيْ مَسْجِدِيْ هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيْمَا سِوَاهُ مِنَ الْمَسَاجِدِ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ وَصَلَاةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِائَةِ صَلَاةٍ فِيْ هَذَا
আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মসজিদুল হারাম ব্যতীত অপরাপর মসজিদের ছালাত অপেক্ষা আমার মসজিদের ছালাত হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ। মসজিদে হারামে এক ছালাত আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববী) ছালাত আদায় অপেক্ষা একশ গুণ শ্রেষ্ঠ।[৩০]
عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ صَلَاةٌ فِيْ مَسْجِدِيْ أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيْمَا سِوَاهُ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ وَصَلَاةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِائَةِ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيْمَا سِوَاهُ
জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, মসজিদুল হারাম ব্যতীত অপরাপর মসজিদের ছালাত অপেক্ষা আমার মসজিদের ছালাত হাজার গুণ উত্তম। অন্যান্য মসজিদের ছালাতের তুলনায় মসজিদুল হারামের ছালাত এক লক্ষ গুণ উত্তম।[৩১]
পরিশেষে বলা যায় যে, মক্কা ও মদীনা নবী-রাসূলদের নিকট ভালোবাসার স্থান।[৩২] কেননা মহান আল্লাহ ও রাসূলগণ এ দু’টি শহরকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ও মর্যাবান শহর বলে উল্লেখ করেছেন। যারা নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কবরকে এ দু’টি স্থানের উপর মর্যাদা দেয়, তারা বিদ‘আতী ও কবর পূজারী ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সবচেয়ে বেশি ভয় করতেন, যেন তাঁর কবরকে ইবাদতের স্থান নির্ধারণ করা না হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,اَللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِيْ وَثَنًا يُعْبَدُ ‘হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তি করবেন না, যার পূজা হতে থাকবে’।[৩৩] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেছেন, أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ إِنِّىْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ ‘সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করে যাচ্ছি’।[৩৪] এ কারণে সালাফগণ তিন মসজিদে শুধু ইবাদতের উদ্দেশ্যেই সফর করতেন, অন্য উদ্দেশ্যে নয়। যেমন হাদীছে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, সুলায়মান বিন দাঊদ (আলাইহিস সালাম) বায়তুল মাক্বদিসের নির্মাণ কাজ শেষ করে আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেন, আল্লাহর হুকুম মত সুবিচার, এমন রাজত্ব যা তার পরে আর কাউকে দেয়া হবে না এবং যে ব্যক্তি বাইতুল মাক্বদিসে কেবল ছালাত পড়ার জন্য আসবে, তার গুনাহ যেন তার থেকে বের হয়ে যায়, তার মা তাকে প্রসব করার দিনের মত। এরপর নবী করীম (ﷺ) বলেন, প্রথম দু’টি তাঁকে দান করা হয়েছে এবং আমি আশা করি তৃতীয়টিও তাঁকে দান করা হবে।[৩৫] শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
وَلِهَذَا كَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا يَأْتِي إلَيْهِ فَيُصَلِّيْ فِيْهِ وَلَا يَشْرَبُ فِيْهِ مَاءً لِتُصِيْبَهُ دَعْوَةُ سُلَيْمَانَ لِقَوْلِهِ "لَا يُرِيْدُ إلَّا الصَّلَاةَ فِيْهِ" فَإِنَّ هَذَا يَقْتَضِيْ إخْلَاصَ النِّيَّةِ فِي السَّفَرِ إلَيْهِ وَلَا يَأْتِيْهِ لِغَرَضِ دُنْيَوِيٍّ وَلَا بِدْعَةٍ
‘এজন্য ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বায়তুল মাক্বদিস মসজিদে গমন করে ছালাত আদায় করেছিলেন, কিন্তু সেখানে পানি পান করেননি, যাতে তার উপর সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর দু‘আ পৌঁছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সেখানে শুধু ছালাতের উদ্দেশ্যে গমন করবে’। এটা ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর সফরের ইখলাছকে নির্দেশ করে যে, তিনি সেখানে দুনিয়াবী বা কোন বিদ‘আত কাজ করার জন্য গমন করেননি।[৩৬]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহী মুসলিম, হা/১৩৬২।
[২]. মক্কা ও মদীনার হারাম এলাকা। (ক) মক্কার হারাম এলাকা : ১. দক্ষিণে মক্কা হতে মদীনার দিকে তানঈম পর্যন্ত বা মসজিদে ওমরাহ পর্যন্ত প্রায় ৭ কি.মি.। ২. পশ্চিমে মক্কা হতে জেদ্দার দিকে হুদাইবিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৮ কি.মি.। ৩. পূর্বদিকে নাজদের দিক দিয়ে জারানা পর্যন্ত প্রায় ১৪.৫ কি.মি.। ৪. উত্তরে আরাফার ময়দানের দিক দিয়ে নামিরা পর্যন্ত হারাম এলাকার পরিমাণ প্রায় ২০ কি.মি। (খ) মদীনার হারাম এলাকা : মদীনার হারাম এলাকা হল আইর থেকে ছাওর পর্যন্ত। হাদীছে এসেছে, আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, اَلْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إِلَى ثَوْرٍ ‘মদীনার আইর থেকে ছাওর পর্বত পর্যন্ত হারাম এলাকা’। জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ وَإِنِّى حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ مَا بَيْنَ لاَبَتَيْهَا ‘নিশ্চয় ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মক্কাকে হারাম করেছেন আর আমি মদীনার দুই পাথুরে অঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম করলাম’। উল্লেখিত হাদীছ দু’টিতে মদীনার হারাম এলাকার পরিধি উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- ১. দক্ষিণে ছাওর পর্বত, যা একটি ছোট পাহাড়। ২. উত্তরে আইর পাহাড়, যা পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। পশ্চিম দিক যুল-হুলায়ফা। ৩. আর পূর্বদিক কুবা ও পূর্ব হেরা। পূর্ব হেরা দুই লাবা এর একটি। আর লাবা দ্বারা উদ্দেশ্য হল কালো পাথর বিস্তৃত এলাকা। ৪. পশ্চিমে পশ্চিম হেরা। আর এটি হল ২ লাবা এর দ্বিতীয়টি। মোট কথা উত্তর-দক্ষিণে আইর থেকে ছাওর পর্যন্ত আর পূর্ব পশ্চিমে পূর্ব হেরা থেকে পশ্চিম হেরা পর্যন্ত এলাকা হারাম হিসাবে চিহ্নিত। দ্র. ছহীহ বুখারী, হা/৬৭৫৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২, ১৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬১৫। দ্রষ্টব্য : মুহাম্মাদ ইউনুস, “দুই হারামের গুরুত্ব ও ফযীলত”, ছিরাতে মুস্তাক্বীম, পর্ব-২, ইসলামিক রিসার্চ এ্যান্ড রিফরমেশন সেন্টার, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০১৬ খৃ., পৃ. ২১৫।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২।
[৫]. তিরমিযী, হা/২৯২৫; মিশকাত, হা/২৭২৫, সনদ ছহীহ।
[৬] . ১. আব্দুল্লাহ ইবনু উবায়েদ ইবনু ঊমায়ের হতে বর্ণিত, তিনি তার পিতাকে বলতে শুনেছেন, তিনি ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে বললেন, কী ব্যাপার আপনাকে শুধু হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীতে চুম্বন করতে দেখি কেন? ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, আমি যদি তেমনটা করেই থাকি, (তবে শোন) আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, এই দু’টিতে চুম্বন পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়। ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি তাঁকে আরো বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর চার দিকে সাতবার ত্বাওয়াফ করবে এবং দুই রাকা‘আত ছালাত আদায় করবে, তার জন্য গোলাম আযাদ সমপরিমাণ নেকী হবে। ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি তাঁকে আরো বলতে শুনেছি, কোন ব্যক্তি ত্বাওয়াফের সময় যতবার পা উঠাবে বা নামাবে’ ততবার তার জন্য দশটি নেকী লিখে দেয়া হয়, দশটি গুনায় ক্ষমা করা হয় ও দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। দ্র. তিরমিযী, হা/৯৫৯; মিশকাত, হা/২৫৮০, সনদ ছহীহ । ২. আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর চার দিকে সাতবার ত্বাওয়াফ করবে এবং দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, সে ঐ দিনের ন্যায় পবিত্র হয়ে যায়, যে দিন তার মাতা তাকে প্রসব করেছিল। দ্র. মুছান্নাফে ইবনু আবী শায়বাহ, হা/১২৮০৯, সনদ ছহীহ।
[৭] .ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮।
[৮]. ১. আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আরাফাহ দিবসের তুলনায় এমন কোন দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক সংখ্যক লোককে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ তা‘আলা নিকটবর্তী হন, অতঃপর বান্দাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের সামনে গৌরব প্রকাশ করেন এবং বলেন, তারা কী চায়? ২. জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর নিকটে যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকের ন্যায় উত্তম কোন দিন নেই। রাবী বলেন, একজন ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! যিলহাজ্জ মাসের দশ দিন উত্তম নাকি জিহাদের ময়দানে সে পরিমাণ দিন অতিবাহিত করা উত্তম? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যিলহাজ্জ মাসের দশ দিন জিহাদের ময়দানে সে পরিমাণ দিন অতিবাহিত করার চেয়ে উত্তম। আল্লাহর নিকটে ‘আরাফাহর দিনের চেয়ে উত্তম কোন দিন নেই, এই দিনে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং হাজীদের নিয়ে দুনিয়াবাসী ও ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন এবং বলেন, ‘দেখ আমার বান্দাদের দিকে, তারা আমার নিকট এসেছে এলোমেলো কেশে, ধুলা-বালি গায়ে, ফরিয়াদ করতে করতে বহু দূর-দূরান্ত হতে। তারা আমার রহমতের আশা করে, আমার শাস্তিকে তারা দেখতে চায় না। ‘আরাফাহর দিন অপেক্ষা এমন কোন দিন নেই, যাতে জাহান্নাম হতে এতো অধিক সংখ্যাক মানুষকে মুক্তি দেয়া হয়। দ্র. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৪৮; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/২৮২৭; মুসনাদে আবী ই‘আলা, হা/২০৯০; বাযযার, কাশফুল আসত্বার, হা/১১২৮; ছহীহ ইবনে খুযায়মাহ, হা/২৮৪০; ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৩৮৫৩; মিশকাত, হা/২৫৯৪।
[৯] . ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮; নাসাঈ, হা/৩০৪৫; ছহীহুল জামে‘, হা/৬৬৯২, সনদ ছহীহ ; তাফসীর ইবনু কাছীর, ১ম খ-, পৃ. ৫৪৬; তায়সীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান, পৃ. ৯২।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৮৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৯; মিশকাত, হা/২৭৫৪।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৭৩; তিরমিযী, হা/৩৪৫৪।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৮৯, ৩৯২৬, ৫৬৫৪, ৫৬৭৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৭৬।
[১৩]. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,عَلَى أَنْقَابِ الْمَدِيْنَةِ مَلَائِكَةٌ لَا يَدْخُلُهَا الطَّاعُوْنُ وَلَا الدَّجَّالُ মদীনার নিরাপত্তার জন্য ফেরেশতারা পাহারায় থাকবে ফলে মহামারী বা প্লেগ ও দাজ্জাল এখানে প্রবেশ করতে পারবে না। দ্র. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৮০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৭৯; মিশকাত, হা/২৭৪১।
[১৪]. আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম ধ বলেন,
اَلْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ فَمَنْ أَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا أَوْ آوَى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ لَا يُقْبَلُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَدْلٌ وَلَا صَرْفٌ
‘মদীনা হারাম এলাকা। সুতরাং তথায় যদি কেউ কোন বিদ‘আত করে অথবা কোন বিদ‘আতীকে আশ্রয় দেয়, তাহলে তাঁর উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ ও সকল মানুষের লা‘নত। আর ক্বিয়ামতের দিন তাঁর কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করা হবে না। দ্র. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৭১; মিশকাত, হা/২৭৪১।
[১৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৩।
[১৬]. ১. সা’দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমি মদীনার দু’ প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম করছি, তার বৃক্ষ ছেদন করা যাবে না এবং তার শিকার হত্যা করা চলবে না। তিনি আরও বলেন, মদীনা তাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা বুঝত। যে ব্যক্তি মদিনার প্রতি অনাগ্রহে মদীনা ত্যাগ করবে, তার পরিবর্তে আল্লাহ তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিকে সেখানে স্থান দিবেন এবং যে তার অনটন ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যের সাথে টিকে থাকবে, ক্বিয়ামতে আমি তার জন্য সুপারিশকারী হব। ২. ইবনু ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কেউ মদীনাতে মৃত্যুবরণ করতে সক্ষম হলে সে যেন সেখানেই মৃত্যুবরণ করে। কারণ যে ব্যক্তি সেখানে মৃত্যুবরণ করবে আমি তার জন্য সুপারিশ করব। দ্র. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৩; তিরমিযী, হা/৩৯১৭; ইবনু মাজাহ, হা/৩১১২; ইবনু হিব্বান, হা/৩৭৪১, সনদ ছহীহ; মিশকাত, হা/২৭২৯।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৭৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৭; ইবনু মাজাহ, হা/৩১১১; মিশকাত, হা/১৬০।
[১৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৩; মিশকাত, হা/২৭২৯।
[১৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৭৪।
[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৭১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৮২।
[২১]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৮৫।
[২২]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৪২২।
[২৩]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৮১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৪৩; মিশকাত, হা/২৭৪২।
[২৪]. তিরমিযী, হা/৮৭৭; ছহীহ ইবনু খুযায়ামা, হা/২৭৩৩; মিশকাত, হা/২৫৭৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৬১৮; ছহীহুল জামে‘, হা/৬৭৫৬, সনদ ছহীহ।
[২৫]. তিরমিযী, হা/৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০০০; ছহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/২৭৩১; মিশকাত, হা/২৫৭৯; ছহীহুল জামে‘, হা/১৬৩৩, সনদ ছহীহ।
[২৬]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৮৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৪৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২২২; মিশকাত, হা/৬৯৪।
[২৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭০৬; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৬৬২১।
[২৮]. নাসাঈ, হা/৬৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৫১৯, সনদ ছহীহ।
[২৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৯৫।
[৩০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬১১৭; ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/১৬২০, সনদ ছহীহ।
[৩১]. ইবনু মাজাহ, হা/১৪০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫২৭১, সনদ ছহীহ।
[৩২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৬৮৩, সনদ ছহীহ।
[৩৩]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৪১৯, সনদ ছহীহ; মিশকাত, হা/৭৫০।
[৩৪]. জুনদুব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তাঁকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে থেকে আমার কোন খলীল বা একান্ত বন্ধু থাকার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে মুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ ইবরাহীমকে যেমন খলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন, সেভাবে আমাকেও খলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন। আমি আমার উম্মাতের মধ্যে থেকে কাউকে খলীল হিসাবে গ্রহণ করতে চাইলে আবূ বকরকেই তা করতাম। সাবধান থেকো তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদার স্থান) হিসাবে গ্রহণ করত। সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করে যাচ্ছি। দ্র. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৩২।
[৩৫]. ইবনু মাজাহ, হা/১৪০৮; নাসাঈ, হা/৬৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৬৪৪; ছহীহ ইবনে খুযায়মাহ, হা/১৩৩৪; ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/১৬৩৩, সনদ ছহীহ।
[৩৬]. ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমু‘উল ফাতাওয়া, ৬ষ্ঠ খ-, পৃ. ২৭।