রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

মূর্তিপূজার ইতিহাস

-অধ্যাপক মুহাম্মাদ আকবার হোসাইন*


ভূমিকা

আদম (আলাইহিস সালাম) পৃথিবীর প্রথম মানুষ এবং আল্লাহ্র নবী। আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) পর্যন্ত একলক্ষ চব্বিশ হাযার পয়গম্বরকে আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন শিরক মুক্ত পৃথিবী গড়ার জন্য। স্রেফ নির্ভেজাল তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য। এরই মধ্যে শুরু হয় মূর্তি পূজা। মূর্তি, প্রতিমা, পুতুল তিনটি নাম, তিনটি ইতিহাস। এদের স্রষ্টা মানুষ। সৃষ্টির উপাদান খড়, কূটা, কাদা, মাটি, কাঠ, পাথর বা কোন ধাতব পদার্থ। যেমন স্বর্ণ, রৌপ্য, তামা, পিতল প্রভৃতি। ওদের উদ্ভাবক, রূপকার, সংগঠক, সংস্থাপক প্রভৃতিও মানুষই। ওদের গড়া-ভাঙ্গা, থাকা না থাকা, চলা না চলা প্রভৃতিও একান্তরূপেই নির্ভর করে মানুষের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, অনুরাগ-বিরাগ এবং আবেগ ও অনুভূতির উপর। মূর্তি, প্রতিমা এবং পুতুলকে কেন্দ্র করে যে ইতিহাস গড়ে উঠেছে সেই ইতিহাসের স্রষ্টাও মানুষই। কেননা ইতিহাস সৃষ্টি করতে হয়; অথচ মূর্তি, প্রতিমা এবং পুতুলেরা কোনও কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, সে যোগ্যতা এবং অধিকারও ওদের নেই, থাকতে পারে না। এককথায় ওরা প্রাণ, প্রজ্ঞা, আবেগ এবং অনুভূতিহীন জড়পি-। অথচ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এসব মূর্তি, পুতুল, প্রতিমা যে প্রভূত পরিমাণে সম্মান, মর্যাদা, শ্রদ্ধা-ভক্তি পেয়ে আসছে রোড়স এর সুবিশাল এবং বিশ্ববিখ্যাত পিতল-মূর্তি এবং পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের উল্লেখযোগ্য ও জনবহুল স্থান সমূহে স্থাপিত দোর্দ-প্রতাপ বীর শাসক এবং প্রখ্যাত জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিদের প্রস্তর বা অন্য ধাতবে নির্মিত বা প্রতিকৃতি সমূহেই তার প্রকৃতি প্রমাণ বহন করছে। নিম্মে মূর্তি পূজার ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

মূর্তি পূর্জার প্রাচীনত্ব  

মূর্তি পূজার শুরুর ইতিহাস জানতে হলে মূর্তি পূজার প্রাচীনত্ব তথা কতদিন পূর্বে মূর্তি পূজার সূচনা বা গোড়াপত্তন হয়েছিল সে বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে হবে। অথচ বিষয়টি অত্যন্ত জটিল এবং ভীষণভাবে তমসাচ্ছন্ন। জটিল এবং তমসাচ্ছন্ন এ জন্যই বলা হল যে,

(ক) কবে, কখন এবং কিভাবে মূর্তি পূজার সূচনা হয়েছিল তার নির্ভরযোগ্য কোনও প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

(খ) প্রায় সকল দেশের মূর্তি পূজার প্রবর্তক বা প্রবর্তকেরাই মূর্তি পূজা সম্পর্কীয় যেসব বিবরণ রেখে গিয়েছিল তা শুধু অদ্ভুত, অবিশ্বাস্য এবং প্রত্যক্ষ সত্যের বিপরীতই নয়-ভীষণভাবে বিভ্রান্তিকরও।

(গ) পৃথিবীর সকল দেশে একই সময়ে এবং একই সঙ্গে মূর্তি পূজার উদ্ভব ঘটেনি। সুতরাং সকল দেশের মূর্তি পূর্জা সমানভাবে প্রাচীন হতে পারে না। এমতাবস্থায় পৃথিবীর কোন্ মূর্তি সর্বপ্রথম নির্মিত ও পূজিত হয়েছিল তা নির্ণয় করা শুধু ভীষণভাবে কষ্টসাধ্যই নয় বরং অসম্ভব।

(ঘ) পুরানসমূহের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে বিশ্বকোষের অভিমত Purans (Disordered Genealogies of Kings Compounded with legends, Put in present form fourth country A.D and Latter.[১]

ডব্লিউ.এল.লেঙ্গারের এ গবেষণা সঠিক হয়ে থাকলে ধরে নিতে হয় যে, ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর ৪০০ বছর পরে অর্থাৎ এখন থকে প্রায় দেড় হাযার বছর পূর্বে পুরান রচিত হয়েছে।

ড. বেদপ্রকাশ উপাদ্যায় এম.এ (সংস্কৃতিবিদ) রিসার্চ স্কলার, সংস্কৃতি বিভাগ, প্রয়াগ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রয়াগ, তার লিখিত ‘বেদ ও পুরানের ভিত্তিতে ধর্মীয় ঐক্যের জ্যোতি’ নামক গ্রন্থে বহু তথ্য প্রমাণাদি তুলে ধরে মন্তব্য করে বলেন, ‘অতএব পুরাণ রচনার সময়কাল প্রায় ২৫০২ খৃ. পূর্ব হতে ২৫৬৩ খৃ. পূর্বের মধ্যকাল হইবে’।

মূর্তি পূজার প্রাচীনত্ব সম্পর্কে প্রসিদ্ধ চিন্তাবিদ, প্রখ্যাত আলেম এবং ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর অন্যতম নেতা আব্দুল্লাহিল কাফী আল-কোরায়শী ‘তর্জুমানুল হাদীছ’ প্রথমার্ধ প্রথম সংখ্যায় সূরা ফাতিহার তাফসীর লিখতে গিয়ে মূর্তি পূজার সূচনা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহ্র ঘোষণা, وَ قَالُوۡا لَا تَذَرُنَّ  اٰلِہَتَکُمۡ وَ لَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَّ لَا سُوَاعًا وَّ لَا یَغُوۡثَ وَ یَعُوۡقَ وَ نَسۡرًا ‘কাফেররা বলল, তোমরা তোমাদের মা‘বূদগুলোকে কখনও পরিত্যাগ কর না। বিশেষ করে ওয়াদ, সু‘আ, ইয়াগূছ, ইয়াউক্ব এবং নসর (মূর্তিগুলোকে) কখনও পরিত্যাগ কর না’ (সূরা আন-নূহ : ২৩)। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, উল্লেখিত পাঁচ ব্যক্তি আদম (আলাইহিস সালাম) ও নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর অন্তবর্তী যুগের সাধু পুরুষ ছিলেন। জীবদ্দশায় লোকেরা এদের অনুসরণ এবং এদের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি পোষণ করত। এদের মৃত্যুর পরে এ শ্রদ্ধা ভক্তি প্রদর্শনের জন্য এদের সমাধিতে গিয়ে ধরণা দেয় এবং ঘটা করে শোক প্রকাশ করার নিয়ম চালু করা হয়।

 
সকলের পক্ষে সমাধিতে গমন সম্ভব নয় বিধায় পরবর্তী সময়ে এদের ছবি অংকন করে সভা-সমিতি এবং প্রকাশ্য স্থান সমূহে টাঙ্গানো হতে থাকে। পরবর্তী বংশধরেরা অজ্ঞতা এবং ভক্তির আতিশয্যে তাদের মূর্তি নির্মাণ ও ঘরে ঘরে সেই মূর্তির প্রতিষ্ঠা দান করে। এভাবে কিছুদিন চলার পরে পরবর্তী বংশধররা শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও বিভিন্ন কামনা-বাসনা পুরণের অভিপ্রায় উক্ত মূর্তি সমূহের পূজা শুরু করে দেয়।

বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীর ইবনু কাছীর’-এর ৯ম খণ্ড ৭ ও ৮ পৃষ্ঠা এবং ‘আরযুল কুরআন’-এর ২য় খণ্ড ২৩৫ পৃষ্ঠার বরাত দিয়ে ‘তর্জুমানুল হাদীছ’-এর উক্ত সংখ্যায় বলা হয়েছে, অনাবৃষ্টির সময়ে মানুষরা বৃষ্টি লাভের আশায় এ পাঁচ জনের প্রথম অর্থাৎ ওয়াদের মূর্তিকে ভোগ-নৈবেদ্যাদি দিয়ে পূজা করত এবং বৃষ্টি প্রার্থনা করত। বাকী মূর্তি চতুষ্টয়ের কোন্টির পূজা কী উদ্দেশ্যে করা হত তার বিবরণ দিতে গিয়ে উক্ত সংখ্যায় যে কথাগুলো বলা হয়েছে সেগুলো নিম্নে  হুবহু উদ্ধৃত করা হল :

‘মোট কথা পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মানুষরা যাদের পূজা শুরু করেছিল তারা তাদের মতই মানুষ ছিল এবং তাদেরকে তারা আল্লাহরূপে পূজা করত না। আল্লাহ্র রুবূবিয়াতে অল্পবিস্তর তাদেরও ভাগ আছে এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা তাদের পূজার প্রবৃত্ত হয়েছিল। পরবর্তী যুগে ‘ওয়াদ’ প্রেমের দেবতারূপে পুজিত হত। তার প্রতিপক্ষ শত্রুতার দেবী ছিল ‘নকরাহ’। কেউ কেউ মনে করেন, ‘ওয়াদ‘উ’ হতে উৎপন্ন। আর এটি ব্যাবিলীয়দের ভাষায় উহা সূর্যের নাম। ‘ইয়াউক্ব’-এর অর্থ ‘বিপত্তারণ’। ‘ইয়াগূছ’-এর আভিধানিক অর্থ ‘শকুন’। শকুনের আকারে আকাশে যে তারকা পুঞ্জ আছে আরবী ভাষায় তাকে ‘নছর’ বলা হয়। ব্যবিলীয়দের অন্যতম দেবতার নাম ‘নছরক’ ছিল।  ‘ওয়াদ’-এ মূর্তিই যে পৃথিবীর প্রাচীনতম ও প্রথম পূজিত মূর্তি অর্থাৎ এ থেকেই যে পৃথিবীতে মূর্তি পূজার সূচনা হয়েছিল উপরিউক্ত তাফসীরদ্বয়ের বিবরণ থেকে সে কথা সুষ্পষ্ট ও নিঃসন্ধিগ্ধরূপে আমরা জানতে পারলাম। এবার আসুন এখান থেকে কতদিন পূর্বে পৃথিবীর সর্বপ্রথম মূর্তি পূজার সূচনা হয়েছিল সেকথা জানার চেষ্টা করি।

বিশেষজ্ঞদের মতে এখন থেকে প্রায় পনের হাযার বছর পূর্বে নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর সময় মহাপ্লাবন সংঘটিত হয়েছিল। এ প্লাবনের কারণেই যে ভূমধ্য উপত্যকা মধ্য সাগর পরিণত হয় এ বিশ্বাসও অত্যন্ত দৃঢ়রূপে তারা পোষণ করেন বলে জানা যায়। উক্ত তাফসীর দ্বয়ের বর্ণনানুযায়ী ‘ওয়াদ’ এবং বাকী চারজন সাধু পুরুষ নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর সম্প্রদায়ের নেককার ব্যক্তিদের নাম।

বাইবেলের বিবরণ অনুযায়ী আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে নূহ (আলাইহিস সালাম) পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান ৭০৩০ বছর। বিশেষজ্ঞদের মতে, নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর সময়ে সংঘটিত মহাপ্লাবন যে এখন থেকে প্রায় পনের হাযার বছর পূর্বে সংঘটিত হয়েছিল ইতিপূর্বে সে কথা বলা হয়েছে। ওয়াদ যদি নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর সম্প্রদায়ের মানুষ হয়, তবে ধরে নেয়া যেতে পারে যে, এখন থেকে পনের হাযার বছর পূর্বে তিনি জীবিত ছিলেন। অতএব মোটামুটিভাবে ধরে নেয়া যেতে পারে যে, এখন থেকে অন্তত পনের হাযার বছর পূর্বে ওয়াদের মূর্তি নির্মাণ ও পূজানুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পৃথিবীতে সর্ব প্রথম মূর্তি পূজার সূচনা হয়েছিল।

শিয়ালকোর্টের প্রখ্যাত মাওলানা মুহাম্মাদ ছাদেক উর্দূ ভাষায় তার লিখিত ‘আনোয়ারুত তাওহীদ’ নামক গ্রন্থে এ পৃথিবীতে মূর্তি পূজার সূচনা সম্পর্কীয় যে বিবরণ তুলে ধরেছেন উপরিউক্ত বিবরণের সাথে তা হুবহু মিল রয়েছে।[২] হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,  

أَسْمَاءُ رِجَالٍ صَالِحِينَ مِنْ قَوْمِ نُوحٍ فَلَمَّا هَلَكُوا أَوْحَى الشَّيْطَانُ إِلَى قَوْمِهِمْ أَنِ انْصِبُوا إِلَى مَجَالِسِهِمُ الَّتِى كَانُوا يَجْلِسُونَ أَنْصَابًا وَسَمُّوهَا بِأَسْمَائِهِمْ فَفَعَلُوا فَلَمْ تُعْبَدْ حَتَّى إِذَا هَلَكَ أُولَئِكَ وَتَنَسَّخَ الْعِلْمُ عُبِدَتْ 

‘নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর সম্প্রদায়ের কতিপয় নেককার ব্যক্তিদের নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ করল, তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে কুমন্ত্রণা দিয়ে বলল, যেসব জায়গায় তাদের মজলিস বসত সেসব জায়গায় তাদের মূর্তি স্থাপন কর এবং তাদের নামেই মূর্তিগুলোর নামকরণ কর। তখন তারা তাই করল। তবে তাদের জীবদ্দশায় ঐ সমস্ত মূর্তির পূজা করা হয়নি। কিন্তু মূর্তি স্থাপনকারীরা যখন মৃত্যুবরণ করল এবং মূর্তি স্থাপনের ইতিকথা ভুলে গেল তখনই এগুলোর ইবাদত শুরু হল’।[৩] ‘ওয়াদ’ ছিলেন পৃথিবীর প্রথম পূজিত ব্যক্তি যার মূর্তি বানানো হয়।[৪]

মূর্তি পূর্জা (عبادة الاصنام) সম্পর্কে আল-কুরআনের বর্ণনা

(ক) আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন,

قَالَ قَدۡ وَقَعَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ رِجۡسٌ وَّ غَضَبٌ ؕ اَتُجَادِلُوۡنَنِیۡ فِیۡۤ  اَسۡمَآءٍ سَمَّیۡتُمُوۡہَاۤ  اَنۡتُمۡ  وَ اٰبَآؤُکُمۡ مَّا نَزَّلَ اللّٰہُ بِہَا مِنۡ سُلۡطٰنٍ ؕ فَانۡتَظِرُوۡۤا  اِنِّیۡ مَعَکُمۡ  مِّنَ الۡمُنۡتَظِرِیۡنَ

‘সে বলল, নিশ্চয় তোমাদের উপর  তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আযাব ও ক্রোধ পতিত হয়েছে। তোমরা কি এমন নামসমূহের ব্যাপারে আমার সাথে বিবাদ করছ, যার নামকরণ করেছ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা, যার ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ নাযিল করেননি? সুতরাং তোমরা অপেক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৭১)। 

(খ) অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, وَ یَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ مَا لَمۡ  یُنَزِّلۡ بِہٖ سُلۡطٰنًا وَّ مَا لَیۡسَ لَہُمۡ بِہٖ عِلۡمٌ ؕ وَ مَا  لِلظّٰلِمِیۡنَ  مِنۡ  نَّصِیۡرٍ ‘আর তারা আল্লাহ্র পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত করে , যে সম্পর্কে তিনি কোন প্রমাণ নাযিল করেননি এবং যে ব্যাপারে তাদেরও কোন জ্ঞান নেই। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (সূরা আল-হাজ্জ : ৭১)।

(গ) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

اِذۡ قَالَ لِاَبِیۡہِ  وَ قَوۡمِہٖ مَا تَعۡبُدُوۡنَ . قَالُوۡا نَعۡبُدُ اَصۡنَامًا فَنَظَلُّ لَہَا عٰکِفِیۡنَ . قَالَ ہَلۡ یَسۡمَعُوۡنَکُمۡ   اِذۡ   تَدۡعُوۡنَ . اَوۡ  یَنۡفَعُوۡنَکُمۡ  اَوۡ  یَضُرُّوۡنَ . قَالُوۡا بَلۡ وَجَدۡنَاۤ  اٰبَآءَنَا کَذٰلِکَ یَفۡعَلُوۡنَ . قَالَ اَفَرَءَیۡتُمۡ مَّا کُنۡتُمۡ تَعۡبُدُوۡنَ . اَنۡتُمۡ  وَ  اٰبَآؤُکُمُ  الۡاَقۡدَمُوۡنَ

‘যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা কিসের ইবাদত কর? তারা বলল, আমরা মূর্তির পূজা করি। অতঃপর এগুলোর পূজায় আমরা নিষ্ঠার সাথে রত থাকি। সে বলল, যখন তোমরা ডাক তখন তারা কি তোমাদের সে ডাক শুনতে পায়? অথবা তারা কি তোমাদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে? তারা বলল, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের পেয়েছি, তারা এরূপই করত। ইবরাহীম বলল, তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ, তোমরা যাদের পূজা কর। তোমরা এবং তোমাদের অতীত পিতৃতপুরুষরা’ (সূরা আশ-শু‘আরা : ৭০-৭৬)।

(ঘ) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

اِنَّمَا تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ  اَوۡثَانًا وَّ تَخۡلُقُوۡنَ  اِفۡکًا ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ لَا یَمۡلِکُوۡنَ لَکُمۡ رِزۡقًا فَابۡتَغُوۡا عِنۡدَ اللّٰہِ الرِّزۡقَ وَ اعۡبُدُوۡہُ وَ اشۡکُرُوۡا لَہٗ ؕ  اِلَیۡہِ تُرۡجَعُوۡنَ

‘তোমরা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিগুলোর পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। নিশ্চয় তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা কর, তারা তোমাদের রিযিক-এর মালিক নয়। তাই আল্লাহ্র কাছে রিযিক অন্বেষণ কর, তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’ (সূরা আল-আনকাবূত : ১৭)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ قَالَ  اِنَّمَا اتَّخَذۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اَوۡثَانًا ۙ مَّوَدَّۃَ بَیۡنِکُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ ثُمَّ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ یَکۡفُرُ بَعۡضُکُمۡ بِبَعۡضٍ وَّ یَلۡعَنُ بَعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ۫ وَّ مَاۡوٰىکُمُ النَّارُ وَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ  نّٰصِرِیۡنَ

‘ইবরাহীম বলল, দুনিয়ার জীবনে তোমাদের মধ্যে মিল-মহব্বতের জন্যই তো তোমরা আল্লাহ ছাড়া মূর্তিদেরকে গ্রহণ করেছ। তারপর ক্বিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং পরস্পর পরস্পরকে লা‘নত করবে আর তোমাদের নিবাস জাহান্নাম এবং তোমাদের জন্য থাকবে না কোন সাহায্যকারী’ (সূরা আল-‘আনকাবূত : ২৫)।

(ঙ) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اٰلِہَۃً  لَّعَلَّہُمۡ یُنۡصَرُوۡنَ  ‘তারা আল্লাহ্র পরিবর্তে অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে এই আশায় যে, তারা (ঐসব ইলাহ দ্বারা) সাহায্যপ্রাপ্ত হবে’ (সূরা ইয়াছিন : ৭৪)। তিনি আরো বলেন, قَالَ  اَتَعۡبُدُوۡنَ  مَا تَنۡحِتُوۡنَ ‘সে বলল, তোমরা (পাথর) খোদাই কর যেগুলো নিজেরা বানাও, সেগুলোরই আবার ইবাদত কর? (সূরা আছ-ছাফ্ফাত : ৯৫)।  আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَتَدۡعُوۡنَ بَعۡلًا وَّ تَذَرُوۡنَ  اَحۡسَنَ الۡخَالِقِیۡنَ ‘তোমরা কি বা‘আলকে ডাক, আর পরিত্যাগ কর সর্বোত্তম সৃষ্টিকারীকে’ (সূরা আছ-ছাফ্ফাত : ১২৫)।

(চ) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اَلَا لِلّٰہِ الدِّیۡنُ الۡخَالِصُ ؕ وَ الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِہٖۤ  اَوۡلِیَآءَ ۘ مَا نَعۡبُدُہُمۡ  اِلَّا لِیُقَرِّبُوۡنَاۤ  اِلَی اللّٰہِ  زُلۡفٰی ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَحۡکُمُ بَیۡنَہُمۡ فِیۡ مَا ہُمۡ فِیۡہِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ۬ؕ اِنَّ اللّٰہَ  لَا یَہۡدِیۡ مَنۡ ہُوَ کٰذِبٌ  کَفَّارٌ

‘জেনে রাখ, আল্লাহ্র জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদত-আনুগত্য। আরা যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করে তারা বলে, আমরা কেবল এজন্যই তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে দিবে। যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে আল্লাহ নিশ্চয় সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে ফায়ছালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী কাফির নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হোদায়াত দেন না’ (সূরা আয-যুমার : ৩)।

(ছ) মহান আল্লাহ বলেন,

اَفَرَءَیۡتُمُ  اللّٰتَ وَ الۡعُزّٰی . وَمَنٰوۃَ  الثَّالِثَۃَ  الۡاُخۡرٰی . اَلَکُمُ  الذَّکَرُ  وَ لَہُ  الۡاُنۡثٰی  . تِلۡکَ  اِذًا  قِسۡمَۃٌ  ضِیۡزٰی  . اِنۡ  ہِیَ  اِلَّاۤ  اَسۡمَآءٌ سَمَّیۡتُمُوۡہَاۤ  اَنۡتُمۡ وَ اٰبَآؤُکُمۡ  مَّاۤ  اَنۡزَلَ اللّٰہُ  بِہَا مِنۡ سُلۡطٰنٍ ؕ اِنۡ یَّتَّبِعُوۡنَ  اِلَّا الظَّنَّ وَ مَا تَہۡوَی الۡاَنۡفُسُ ۚ وَ لَقَدۡ جَآءَہُمۡ مِّنۡ رَّبِّہِمُ  الۡہُدٰی 

‘তোমরা কি লাত ও উযযা সম্পর্কে ভেবে দেখেছ? আর তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? তোমাদের জন্য কি পুত্র আর আল্লাহ্র জন্য কণ্যা? তাহলে এটাতো খুবই অসঙ্গত বণ্টন। এগুলো কেবল কতকগুলো নাম, যে নামগুলো তোমরা আর তোমাদের পিতৃপুরুষরা রেখেছ। এর পক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। তারা তো শুধু অনুমান আর প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। যদিও তাদের কাছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হেদায়াত এসেছে’ (সূরা আন-নাজম : ১৯-২৩)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ قَالُوۡا لَا تَذَرُنَّ  اٰلِہَتَکُمۡ وَ لَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَّ لَا سُوَاعًا ۬ۙ وَّ لَا یَغُوۡثَ وَ یَعُوۡقَ وَ نَسۡرًا ‘আর তারা বলেছিল, তোমাদের দেবদেবীদের কখনও পরিত্যাগ কর না। আর অবশ্যই পরিতাগ কর না। ওয়াদ, সু‘আ, ইয়াগূছ, ইয়াউক্ব ও নাসরকে’ (সূরা আন-নূহ : ২৩)।

আধুনিক যুগে মূর্তি স্বদৃশ যা করা হয়

আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির যুগেও বিগত যুগের ন্যায় মানুষ একইভাবে মানুষের ছবি, চিত্র বা তৈলচিত্রকে সম্মান করে থাকে। বিগত যুগে কাঠ, মাটি, বা পাথরের তৈরি মূর্তির সম্মুখে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হত, আজকের যুগেও তার সম্মানে একইভাবে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হচ্ছে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ছবি শোভা পাচ্ছে। আল্লাহ্র অমূল্য নে‘মত তরতাজা ফুলগুলেকে ছিঁড়ে এনে মালা বানিয়ে তা ছবিতে পরানো হচ্ছে। তার চিত্রে বা কবরে এমনকি কবর বিহীনভাবে নিজেদের বানানো শহীদ মিনারে, স্মৃতিসৌধে ও স্তম্ভে ‘শিখা অনির্বাণ’ ও ‘শিখা চিরন্তন’ নামীয় অগ্নিশিখার পাদদেশে অগ্নিপূজকদের ন্যায় শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করা হচ্ছে। এমনকি পীর-ফকীর ও অলি-আউলিয়া উপাধী লোকদের কবরেও তাদের ছবি ও তৈলচিত্রে রীতিমত সিজদা ও তার কাছে প্রার্থনা নিবেদন করা হচ্ছে। শী‘আ নামধারী কিছু বিভ্রান্ত মুসলিম তাযিয়ার নামে হুসায়েন প-এর ভূয়া কবর বানিয়ে পূজা করছে। আলেম নামধারী একদল দুষ্টমতি লোক পীর-আউলিয়াদের নামে উদ্ভট গল্পসমূহ রচনা করে বই লিখছে ও প্রবন্ধ রচনা করে পত্রিকায় ছাপছে। রেডিও-টিভিতে ও বিভিন্ন ধর্মীয় জালসায় ওয়াযের নামে ভিত্তিহীন গাল-গল্প বলছে। যাতে এই সব শিরকের আড্ডাখানা গুলিতে লোক সমাগম বৃদ্ধি পায় ও নযর নেয়াযের নামে সেখানে অর্থের পাহাড় গড়ে উঠে। কবরের পার্শ্বে ছালাত আদায় করা, বাতি জ্বালানো, আগরবাতি লাগানো এবং কবরের উপরে সৌধ নির্মাণ করা। কবরবাসীর কাছে দু’আ করা। সাহায্য চাওয়া, দুনিয়া ও আখেরাতের প্রয়োজন মিটানোর জন্য আবেদন করা। কোন ব্যক্তি যদি এ আক্বীদা পোষণ করে যে, উদ্দেশ্য হাসিলের ক্ষেত্রে কবরবাসীররা স্বতন্ত্র ক্ষমতার অধিকারী, তাহলে সে মুসলিম থাকবে না। কবর পূজা করা, কবরের পার্শ্বে অনুষ্ঠান করা ও কবরের পার্শ্বে মসজিদ নির্মাণ করা ইহুদী-খৃষ্টানদের কাজ। এক্ষেত্রে নি¤েœর হাদীছগুলো প্রণিধানযোগ্য :

عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ لَمَّا اشْتَكَى النَّبِىُّ ৎ ذَكَرَتْ بَعْضُ نِسَائِهِ كَنِيسَةً رَأَيْنَهَا بِأَرْضِ الْحَبَشَةِ يُقَالُ لَهَا مَارِيَةُ وَكَانَتْ أُمُّ سَلَمَةَ وَأُمُّ حَبِيبَةَ رضى الله عنهما أَتَتَا أَرْضَ الْحَبَشَةِ فَذَكَرَتَا مِنْ حُسْنِهَا وَتَصَاوِيرَ فِيهَا فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ أُولَئِكَ إِذَا مَاتَ مِنْهُمُ الرَّجُلُ الصَّالِحُ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا ثُمَّ صَوَّرُوا فِيهِ تِلْكَ الصُّورَةَ أُولَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللهِ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ)-এর অসুস্থতার সময় তাঁর এক সহধর্মিণী হাবশা দেশে তাঁর দেখা মারিয়া নামক একটি গীর্জার কথা বললেন। উম্মু সালমাহ এবং উম্মু হাবীবাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হাবশায় গিয়েছিলেন। তারা দু’জনে ঐ গীর্জাটির সৌন্দর্য এবং তার ভিতরের চিত্রকর্মের বিবরণ দিলেন। তখন নবী করীম (ﷺ) তাঁর মাথা তুলে বললেন, সে সব দেশের লোকেরা তাদের কোন নেককার ব্যক্তি মারা গেলে তাঁর ক্ববরে মসজিদে নির্মাণ করত এবং তাতে ঐ সব চিত্রকর্ম অংকন করত। তারাই হল, আল্লাহ্র নিকট নিকৃষ্ট সৃষ্টি।[৫] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

وَإِذَا وُضِعَ السَّيْفُ فِىْ أُمَّتِى لَمْ يُرْفَعْ عَنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَلَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِىْ بِالْمُشْرِكِيْنَ وَحَتَّى تَعْبُدَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى الأَوْثَانَ وَإِنَّهُ سَيَكُوْنُ فِىْ أُمَّتِىْ كَذَّابُوْنَ ثَلَاثُوْنَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِىٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ لَا نَبِىَّ بَعْدِىْ وَلَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِىْ عَلَى الْحَقِّ قَالَ ابْنُ عِيْسَى ظَاهِرِيْنَ ثُمَّ اتَّفَقَا لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللهِ

‘আমার উম্মতের মধ্যে যখন একবার তারবারী চালিত হবে, তখন আর তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আর ক্বিয়ামত সেই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে না, যতদিন না আমার উম্মতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সাথে মিশে যাবে এবং যতদিন না আমার উম্মতের কিছু গোত্র মূর্তি বা স্থান পূজা করবে। অদূর ভবিষ্যতে আমার উম্মতের মাঝে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর আর্বিভাব ঘটবে, যাদের প্রত্যেকেই আল্লাহ্র নবী হওয়ার দাবী করবে। অথচ বাস্তব কথা এই যে, আমি শেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী নেই। আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল সত্যের উপরে অবিচল থাকবে। বিরোধিতাকারীগণ তাদের কোনই ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে’।[৬]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃত্যুর মাত্র পাঁচদিন পূর্বে অন্তিম শয়নে স্বীয় উম্মতকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন,

أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوْا يَتَّخِذُوْنَ قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيْهِمْ مَسَاجِدَ أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ إِنِّىْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ

‘জেনে রাখ! তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা তাদের নবী ও নেক্কার লোকদের কবর সমূহকে সিজদা বা উপাসনার স্থল হিসাবে গ্রহণ করেছিল। সাবধান! তোমরা যেন কবর সমূহকে সিজদার স্থান হিসাবে গ্রহণ কর না। আমি তোমাদেরকে এ বিষয়ে নিষেধ করে যাচ্ছি’।[৭] আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূল (ﷺ) তাঁর জীবনের শেষ অসুখে বলেছিলেন,لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‘ইহুদী-খৃষ্টানদের উপর আল্লাহ্র অভিশাপ, তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছিল’।[৮]

এছাড়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সর্বদা আল্লাহ্র নিকট দু‘আ করতেন যে, তার কবর যেন মূর্তিতে পরিণত না হয়। যেমন হাদীছে এসেছে, আত্বা ইবনু ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রার্থনা করে বলেন, اللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَنًا يُعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করো না, যার ইবাদত করা হবে। আল্লাহ ঐ জাতির উপর রাগান্বিত হয়েছেন যারা তাদের নবীগণের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।[৯] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, وَلاَ تَجْعَلُوا قَبْرِى عِيدًا ‘তোমরা আমার কবরকে তীর্থ কেন্দ্রে পরিণত কর না’।[১০] জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, نَهَى رَسُوْلُ اللهِ ম أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিষেধ করেছেন কবর পাকা করতে, সেখানে বসতে ও তার উপর সৌধ নির্মাণ করতে’।[১১]

ছবি ও মূর্তির ক্ষতিকর দিক সমূহ

(ক) দ্বীন ও আক্বীদাগত ক্ষতি

মানুষ তার বিশ্বাস অনুযায়ী কর্ম করে থাকে। আর এই বিশ্বাসগত পার্থক্যের কারণেই মানবজাতি অসংখ্য ধর্ম ও রাজনৈতিক সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়েছে। মুসলিম উম্মাহ তার সার্বিক জীবনে আল্লাহ্র একক আনুগত্যের উপরে বিশ্বাসী একটি বৃহৎ মানব সম্প্রদায়ের নাম। তারা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ব্যতীত কোন সৃষ্টির উপাসনা ও তার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রদর্শন করে না। মুশরিক সম্প্রদায়ের সাথে তাদের মৌলিক পার্থক্য এখানেই। কিন্তু ছবি ও মূর্তি একটি বিষয়। আর ছবি ও মূর্তি মুসলিমদের আক্বীদার উপরে আঘাত হানে। হাতে গড়া ছবি ও মূর্তির দৃশ্যমান সত্তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে সে মহাশক্তিধর অদৃশ্য সত্তা আল্লাহকে ভুলে যায়। তাঁর স্মরণ ও তাঁর বিধানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের বিষয়টি গৌণ হয়ে যায়। আল্লাহ্র উপরে তাওয়াক্কুল করার মাধ্যমে যে পবিত্র ও অজেয় মানসিক শক্তি সে অর্জন করত, তা থেকে সে বঞ্চিত হয়।

ইসলামের প্রাথমিক যুগের যুদ্ধ সমূহে সংখ্যাগুরু মুশরিকরা পরাজয় বরণ করত সংখ্যালঘু মুসলিমদের অজেয় ঈমানী শক্তির কাছে। তাদের অস্ত্র শক্তির কাছে নয়। বদর বিজয়ী সেনাপতি মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর ক্ষুৎপিপাসায় কাতর সাথীদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এই বলে যে, قُوْمُوْا إلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ ‘তোমরা অগ্রসর হও জান্নাতের পানে, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনে পরিব্যপ্ত’।[১২] অথচ সেই মুসলিমরা ১৯৬৭ সালের ফিলিস্তীন যুদ্ধে ইহুদীদের বিরুদ্ধে সৈন্য পরিচালনার সময় নির্দেশ দেয়,سيروا للامان فان معكم المطربة فلانة وفلانة ‘হে সৈন্যরা! তোমরা সম্মুখে এগিয়ে চল। তোমাদের সঙ্গে আছে অমুক অমুক গায়িকা ও নর্তকী’।[১৩] ফলাফল ছিল লজ্জাকর পরাজয়। এই পরাজয়ের ফলে ফিলিস্তীন ভূখণ্ডের একটি বিরাট অংশ, মিসরের সিনাই উপত্যকা এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি ইসরাঈলী দখলে চলে যায়। যা আজও রয়েছে। এখনও তারা মার খেয়েই চলেছে। অথচ এত মার খেয়েও ফিলিস্তীনের নির্যাতিত মুসলিমরা ইয়াসির আরাফাতের, ইরানের মুসলিমরা ইয়াসির আরাফাতের ইরানের মুসলিমরা খোমেনীর ও ইরাকের মুসলিমরা সাদ্দামের ছবি নিয়ে মিছিল করছে। মিসরীয় মুসলিমরা কায়রোর প্রধান ফটকে ফেরাউনের বিশাল মূর্তি স্থাপন করে তাকে জাতীয় বীরের মর্যাদা দিচ্ছে ও তার থেকে প্রেরণা হাছিল করছে।[১৪] আল্লাহ্র উপরে তারা ভরসা করতে পারে না। হারানো ঈমানী শক্তি তারা আজও ফিরে পেল না।

বাংলাদেশের মুসলিমরা তাদের মৃত রাজনৈতিক নেতা বা মারেফতী পীরদেরকে তাদের প্রেরণার উৎস বলে গর্ব করে। তাদের ছবিকে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করে। নিজ গৃহে, বৈঠকখানায় ও অফিসে টাঙ্গিয়ে রাখে। সেখানে সম্মানে দাঁড়িয়ে থাকে ও তাকে মাল্য ভূষিত করে। ছবি না থাকলেও তার সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। বিশেষ বিশেষ সময়ে তাদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করে। সুযোগমত তাদের ছবি নিয়ে মিছিল করে। ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া বা ভারতের মূর্তি পূজারীদের সাথে আজ বাংলাদেশের কবর পূজারী, ছবি, স্মৃতিস্তম্ভ, ভাস্কর্য, মিনার, সৌধ, অগ্নি পূজারী মুসলিমদের কোনই পার্থক্য নেই। তাদের লালিত তাওহীদ বিশ্বাসের অজেয় প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে আজ মুশরিকদের পাশব শক্তির কাছে মাথা নত করছে। অথচ তারা জানে না যে, প্রয়োজনীয় বৈষয়িক শক্তি অর্জনের পর কেবল নিখাদ ঈমানী শক্তিই তাদেরকে বিজয়ী করতে পারে।
 
(খ) চারিত্রিক বিপর্যয়ের ক্ষতি

একথা আজ দিবালোকের ন্যায় ষ্পষ্ট যে, যে কোন দেশের যুব চরিত্র ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারণ হল ছবি। রাস্তার ধারে, অফিসে-দোকানে, ঘরে, বৈঠকখানায়, পত্র-পত্রিকায়, সিনেমা-টেলিভিশনে, ভিসিপি-ভিসিআর. সিডি-কম্পিউটারে, মোবাইলে সর্বত্র আজ সাদা ও নীল ছবির ছড়াছড়ি। বিশেষ করে কল্পনায় আঁকা কিংবা বাস্তবে তন্বী নারীদের ও বিখ্যাত নায়িকাদের অর্ধউলঙ্গ ছবি ও যৌনোদ্দীপক ভঙ্গিমা সর্বস্ব পোষ্টার ও বিজ্ঞাপন সমূহ আজ উঠতি বয়সের তরুণদের চরিত্র দ্রুত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পুরুষ-নারী নির্বিশেষে ঐসব নোংরা ছবির দর্শনে বিষদুষ্ট হয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বদা অসংখ্য পাপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। যেনা-ব্যভিচার, হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অধুনা সেক্সডল নামীয় বিশাল ও পূর্ণাঙ্গ মানবদেহী যৌন পুতুলের সাহায্যে গোপনে যৌনক্ষুধা মেটানোর ব্যবস্থা আবিষ্কৃত হয়েছে। যা নারী-পুরুষের স্বাস্থ্য ও চরিত্র দুই-ই ধ্বংস করে দিচ্ছে। অথচ এ সবকিছুরই মুল উৎস হল ছবি ও মূর্তি।

(গ) আর্থিক ক্ষতি

ছবি, মূর্তি, ভাষ্কর্য, স্মৃতিসৌধ, স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার, প্রতিকৃতি, তৈলচিত্র, ছায়াচিত্র, স্থিরচিত্র, চলচ্চিত্র, রঙিনচিত্র ইত্যাদি হরেক রকম চিত্রের আর্থিক ক্ষতি অকল্পনীয়। এইসব ছবি ও মূর্তি তৈরি ও রক্ষণা-বেক্ষণে ব্যক্তিগত ও জাতীয় বাজেটের একটি অংশ ব্যয় হয়ে যায়। যা একেবারেই অনর্থক ও বাজে খরচ।  অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اِنَّ الۡمُبَذِّرِیۡنَ کَانُوۡۤا اِخۡوَانَ الشَّیٰطِیۡنِ  ‘নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ২৭)। অথচ শয়তানের রাস্তায় ব্যয়িত এইসব অপচয় বন্ধ করে যদি দারিদ্র্য বিমোচনে তা ব্যয় করা হত, তাহলে পৃথিবীর কোন দেশেই দরিদ্র লোকের সন্ধান পাওয়া যেত কি-না সন্দেহ।
 
(ঘ) সামাজিক ক্ষতি

নেতা-নেত্রীদের ছবি টাঙানো, পোস্টার লাগানো কিংবা সম্মান-অসম্মান নিয়ে সমাজে প্রায়শঃ হিংসা-হানাহানি ও মারামারী লেগে আছে। প্রতি বছরে কেবল ছবির কারণে মারামারিতেই বহু নেতা-কর্মীর জীবনহানী ঘটে। অনেকে চির পঙ্গুত্ব বরণ করে। অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়। অনেকে মিথ্যা মামলা ও জেল-যুলুমের শিকার হয়। এমনকি খোদ নেতা-নেত্রীদের বিশাল মূর্তিও লাঞ্চিত হয়। রাশিয়ার কম্যুনিস্ট নেতা লেলিনের ৭২ টন ওযনের পিতলের বিশাল মূর্তি বিধ্বস্ত হয়েছে তারই জনগণের হাতে। চীনের কম্যুনিস্ট নেতা মাও সেতুং-এর ছবি তার দেশের জনগণই আগুনে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপিত বহু সম্মানিত ব্যক্তির মূর্তির মাথায় ও দেহে দৈনিক হাযারো পশু-পাখি পেশাব-পায়খানা করছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি সমূহ তাদের ভক্ত ও তাদের শত্রুদের মাধ্যমে দৈনিক পূজিত ও পদদলিত হচ্ছে। এভাবে ছবি ও মূর্তির দুর্দশা দেখার পরেও ছবির সমাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষতি বুঝতে কারো বাকী থাকার কথা নয়। ছবি ও মূর্তি নিষিদ্ধ বিষয়ে ইসলামের সিদ্ধান্ত তাই নিঃসন্দেহে দূরদর্শিতাপূর্ণ ও বৈজ্ঞানিক।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* সহকারী অধ্যাপক, আরবী বিভাগ, হামিদপুর আল-হেরা কলেজ, যশোর।

তথ্যসূত্র :
[১]. Encyclopedia of owrld History by W.L. Langer. Page-43.
[২]. আবুল হোসেন ভট্টাচার্য, মূর্তি পূজার গোড়ার কথা (ঢাকা : জ্ঞান বিতরণী প্রকাশণী, তাবি), পৃ. ৯৬-১১০।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৯২০।
[৪]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা আন-নূহ ২৩ আয়াত; ছহীহ বুখারী, হা/৪৯২০ ‘তাফসীর’ অধ্যায়; ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ছবি ও মূর্তি (রাজশাহী : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২য় সংস্করণ, মে ২০১৬ খ্রিঃ), পৃ. ৫।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৪১ ‘কবরের উপর মসজিদ তৈরি করা’ অনুচ্ছেদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়-২৩;
[৬]. আবূ দাঊদ, হা/৪২৫২; তিরমিযী, হা/২২১৯; মিশকাত, হা/৫৪০৬; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/১৭৭৩।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৩২; মিশকাত, হা/৭১৩।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৯০; ছহীহ মুসলিম, হা/৫২৯; মিশকাত, হা/৭১২।
[৯]. মুওয়াত্তা মালেক, হা/৫৯৩; মিশকাত, হা/৭৫০; সনদ ছহীহ, আলবানী, আছ-ছামারুল মুসতত্বাব, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৬১।
[১০]. আবূ দাঊদ, হা/.২০২৪; মিশকাত, হা/৯২৬; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৭২২৬।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭০; মিশকাত, হা/১৬৭০।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০১; মিশকাত, হা/৩৮১০।
[১৩]. মুহাম্মাদ বিন জামীল যায়নু, তাওজীহাত ইসলামিয়াহ (মক্কা মুকাররমা, ৫ম সংস্করণ, তাবি), পৃ. ১০৯।
[১৪]. মুহাম্মাদ সালামাহ জাবার, তারীখুল আম্বিয়া (কুয়েত : মাকতাবা ছাহওয়া ১ম সংস্করণ ১৪১৩ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৭।




নফল ছিয়াম - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (১৪তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
সালাফী মানহাজের মূলনীতিসমূহ (শেষ কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার (১০ম কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
বিদ‘আত পরিচিতি (২৫ তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
সচ্চরিত্রই মানব উন্নতির চাবিকাঠি - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
যিলহজ্জ মাসের আমল ও তার ফযীলত - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
আল-কুরআন সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের মূল্যায়ন - রাফিউল ইসলাম
রজব মাসের বিধানসমূহ - অনুবাদ : ইউনুস বিন আহসান
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৮ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির

ফেসবুক পেজ