সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা
-ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর*
(৫ম কিস্তি)
২). সূদখোর পরকালে মৃগী রোগীর মত দাঁড়াবে
সূদখোর ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন শয়তানের আছর করা মৃগী রোগীর ন্যায় দাঁড়াবে। দেখেই মনে হবে সে যেন অর্ধ বেহুঁশ রোগী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَلَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا کَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُہُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّمَا الۡبَیۡعُ مِثۡلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللّٰہُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ فَمَنۡ جَآءَہٗ مَوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّہٖ فَانۡتَہٰی فَلَہٗ مَا سَلَفَ ؕ وَ اَمۡرُہٗۤ اِلَی اللّٰہِ ؕ وَ مَنۡ عَادَ فَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ.
‘যারা সূদ খায়, তারা সেই লোকের মত দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা বেহুঁশ করে দেয়, এ শাস্তি এ জন্য যে, তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় সূদের মতই, অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সূদকে হারাম করেছেন। সুতরাং যার নিকট তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে উপদেশবাণী পৌঁছল এবং সে বিরত হল, পূর্বে যা (সূদের আদান-প্রদান) হয়ে গেছে, তা তারই, তার বিষয় আল্লাহর জিম্মায় এবং যারা আবার আরম্ভ করবে তারাই অগ্নির বাসিন্দা, তারা তাতে চিরকাল থাকবে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৭৫)।
অত্র আয়াতে সূদখোরের ভয়াবহ পরিণাম কী হবে তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। একে তো তারা বেহুঁশ রোগীর মত বিচারের মাঠে দাঁড়াবে। তাছাড়া আরো ভয়ঙ্কর বিষয় হল এরূপ কর্মের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তির শেষ পরিণাম হবে জাহান্নাম। সূদী কারবারে সম্পৃক্ত কোন মুসলিমের পরকাল ভয়াবহ। প্রসঙ্গত এখানে সূদ ও ব্যবসার মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। কেননা জাহেলী যুগের মানুষ এর পার্থক্য না বুঝার কারণে সূদকে ব্যবসার মতই বলত। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এরূপ কথাকে নিন্দনীয়ভাবে উপস্থাপন করেছেন। মূলত সূদ আর ব্যবসা এক জিনিস নয়, যা আমরা পূর্বে উপস্থাপন করেছি। ব্যবসা শ্রম নির্ভর একটি প্রক্রিয়া আর সূদ শ্রমহীন কর্মে লভ্যাংশ ভোগের ফাঁদমাত্র।
৩). সূদখোর আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী
সূদখোরদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তোমরা সূদ পরিহার না করলে আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا فَاۡذَنُوۡا بِحَرۡبٍ مِّنَ اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ ۚ وَ اِنۡ تُبۡتُمۡ فَلَکُمۡ رُءُوۡسُ اَمۡوَالِکُمۡ ۚ لَا تَظۡلِمُوۡنَ وَ لَا تُظۡلَمُوۡنَ - وَ اِنۡ کَانَ ذُوۡ عُسۡرَۃٍ فَنَظِرَۃٌ اِلٰی مَیۡسَرَۃٍ ؕ وَ اَنۡ تَصَدَّقُوۡا خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ.
‘অতঃপর যদি তোমরা (সূদ) না ছাড় তবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা তোমাদের মূলধন পেয়ে যাবে, তোমরা কারো প্রতি অত্যাচার কর না, এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। আর যদি সে (ঋণ গ্রহণকারী) দরিদ্র (অভাবগ্রস্ত) হয়, তবে স্বচ্ছল অবস্থা আসা পর্যন্ত অবকাশ দিবে, আর মাফ করে দেয়া তোমাদের পক্ষে অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে’! (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৭৯-২৮০)।
সূদখোর ব্যক্তি প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ কারীর ন্যায়। কেননা তারা সরাসরি কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জেনে শুনে প্রকাশ্যে ইসলামের বিধান লঙ্ঘন করে, মানব রচিত পুঁজিবাদী সূদী কারবারে লিপ্ত হয়েছে। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তওবা করলে তাদের বিনিয়োগকৃত বা প্রদেয় ঋণ তথা মূলধন ফেরত পাবে। সূদের টাকা ছেড়ে দিতে হবে। কেননা এই আয়াতে সূদকে এক প্রকার অত্যাচার হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন সূদখোরকে বলা হবে- তোমরা অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আল্লাহ্র সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও’। তিনি আরো বলেন, ‘যে সময়ে যিনি ইমাম থাকবেন তাঁর জন্য এটা অবশ্য কর্তব্য যে, যারা সূদ পরিত্যাগ করবে না তাদেরকে তওবা করাবেন। যদি তারা তওবা না করে তবে তিনি তাদেরকে হত্যা করবেন’। হাসান বাছরী ও ইবনে সীরীনও (রাহিমাহুল্লাহ) একই মত পোষণ করেছেন।[১]
সূদের দ্বারা মানুষের সাথে অত্যাচার করলে তার শেষ পরিণতিও খুব ভয়াবহ। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘নিশ্চয় যুলুম ক্বিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকারের কারণ হবে’।[২] অপর একটি হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারীকে এক নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে তাকে যখন পাকড়াও করেন, তখন তাকে আর ছাড়েন না’। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেন, ‘আর এভাবেই তখন তিনি কোন জনপদের অধিবাসীদেরকে পাকড়াও করেন যখন তারা অত্যাচার করে; নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত যাতনাদায়ক, কঠিন’ (সূরা হুদ : ১০২)।[৩]
বিধায় সূদখোর স্বীয় যুলুমের কারণে তাঁর পাকড়াও এর নির্মম শিকারে পরিণত হবে। তা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। যারা এ পথ থেকে ফিরে আসতে চায় তাদের কথা ভিন্ন। তবে তাদেরকে প্রদেয় আসল টাকাও এহসানের সাথে ফেরত নিতে হবে।
৪). সূদখোর ব্যভিচারের চেয়েও ভয়ঙ্কর পাপে জড়িত
হাদীছের দৃষ্টিতে সূদখোর ব্যভিচারের চেয়েও ভয়াবহ পাপে জড়িত রয়েছে। সূদের ভয়াবহতা ব্যভিচারের ভয়াবহতার চেয়ে বহুগুণ বেশী। একজন রুচিশীল ব্যক্তির জন্য যেনা যেমন জঘন্য কর্ম হিসাবে বিবেচিত। তার জন্য সূদী কারবারে সম্পৃক্ত হওয়া তার চেয়েও ঘৃন্য কর্ম বলে প্রমাণীত।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ حَنْظَلَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ غَسِيْلِ الْمَلَائِكَةِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دِرْهَمُ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَّثَلَاثِيْنَ زِنْيَةً
আব্দুল্লাহ ইবনু হানযালা (রাযিয়াল্লাহু আনহু), যিনি ফেরেশতাগণ কর্তৃক গোসলপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি জেনে শুনে এক দিরহাম সূদ গ্রহণ করলে ছত্রিশবার যেনা করার চেয়ে কঠিন পাপ হবে’।[৪]
জেনে বুঝে এক দিরহাম তথা এক টাকা সূদ খাওয়া, ছত্রিশবার ব্যভিচারের চেয়েও ভয়াবহ পাপ। ব্যভিচার এক জঘন্য সামাজিক পাপ। যার মাধ্যমে সমাজ জীবনে ধ্বংস নেমে আসে। ব্যক্তি নিজে আত্মীয়-স্বজন সহকারে কলঙ্কিত হয়। ব্যভিচারের দরুন সামাজিক নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচারের শাস্তিও খুব কঠিন। অবিবাহিত নারী-পুরুষ ব্যভিচার করলে শাস্তি হল- তাকে একশ বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের জন্য স্বীয় এলাকা থেকে বের করে দিতে হবে (সূরা আন-নূর : ২)।[৫] আর বিবাহিত নারী-পুরুষ ব্যভিচার করলে, তাকে রজম করতে হবে তথা তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে।[৬] ব্যভিচারের শাস্তির দিকে দৃষ্টি দিলেই বুঝা যায় তা কত জঘন্য প্রকারের পাপ। অথচ সূদ ব্যভিচারের চেয়েও অনেকগুণ বেশী ভয়াবহ পাপ। যা পরিহার করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرِّبَا سَبْعُوْنَ حُوْبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكَحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সূদের পাপের ৭০টি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ (ছোট গুনাহ) হচ্ছে নিজের মাকে বিবাহ করা’।[৭] অপর হাদীছে রয়েছে,
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرِّبَا اثْنَانِ وَسَبْعُوْنَ بَابًا أَدْنَاهَا مِثْلُ إِتْيَانِ الرَّجُلِ أُمَّهُ وَأَرْبَا الرِّبَا اسْتِطَالَةُ الرَّجُلِ فِيْ عِرْضِ أَخِيْهِ
বারা ইবনু ‘আযেব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সূদের পাপের বাহাত্তরটি স্তর রয়েছে, তারমধ্যে সবচেয়ে নিচুমানেরটি হল, মায়ের নিকট গমন করা (মায়ের সাথে ব্যাভিচার করা)। আর সূদের পাপের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর হচ্ছে, কোন মুসলিম ভাইয়ের সম্মানহানি করা’।[৮] অপর বর্ণনায় রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, اَلرِّبَا ثَلَاثَةٌ وَسَبْعُوْنَ بَابًا أَيْسَرُهَا مِثْلُ أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ ‘সূদের পাপের তিয়াত্তরটি স্তর রয়েছে, তন্মধ্যে সর্বনি¤œটি হল মাকে বিবাহ করা’।[৯]
সূদের জঘন্যতা ও ভয়াবহতা প্রকাশের জন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন নোংরা উদাহরণ পেশ করেছেন। যেন তাঁর উম্মাহ এরূপ নোংরা পাপ থেকে সর্বতোভাবে বেঁচে থাকে। এ কথা বোঝাবার নয় যে, ব্যভিচার কত বড় ঘৃণ্য পাপ; যে পাপ বিবাহের পর করলে, তার শাস্তি হল হত্যা। এতো দূরবর্তী একটি অপর মেয়ের সাথে ব্যভিচার করার পাপ। পক্ষান্তরে তার অন্তত দশগুণ বেশী পাপ হয়, কোন প্রতিবেশীর মহিলার সাথে ব্যভিচার করলে।[১০] তার থেকে নোংরা কাজ বাড়ির কোন বেগানা মহিলার সাথে ব্যভিচার করার। তার থেকে খারাপ কাজ বাড়ির কোন এগানা মহিলার সাথে ব্যভিচার করা। তার থেকেও নিন্দনীয় কাজ নিজের মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচার করা। তার থেকে অনেক বেশী জঘন্য কাজ হল, নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। আর সূদ খাওয়া তার চাইতেও বহুগুণ বড় পাপ। নাঊযু বিল্লাহি মিন যালিক!
সূদ খেলে সত্তর বা তিয়াত্তর প্রকারের পাপ হয়। তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা ছোট পাপ হল মাকে বিয়ে করা। মাকে বিবাহ করা যদি সূদখোরের সবচেয়ে ছোট পাপ হয়, তাহলে বড় পাপটি কেমন হতে পারে? সূদখোরের ৭০/৭৩ নম্বর পাপ যদি এতো জঘন্য হয়, তাহলে এক নম্বর পাপটি কত নোংরা হতে পারে? বিবেক দিয়ে ভাবতে গেলে মাথা কাজ করবে না!
উল্লেখিত বিষয়টি লিখতেও খারাপ লাগে। কলম ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে যায়। ভাবতেও খুব ঘৃণা লাগে। রুচি হায়িয়ে যায়, বিবেক বিকল হয়ে যায়। অথচ এই হাদীছ শুনা বা পড়ার পরও একজন সূদখোরের হৃদয়ে কোন প্রতিক্রিয়া হয় না। তার বিবেকে কোন প্রভাব পড়ে না। তার ঈমানী চেতনা জাগ্রত হয় না। সূদ দাতা, গ্রহীতা, লেখক (সূদী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারী) ও উক্ত কর্মের সাক্ষীর সামান্যতম পরিবর্তন হয় না। অথচ তারা সকলে সমান অপরাধী। সূদী কারবারে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের হৃদয়ের গহীন তলদেশে হাদীছটি নিয়ে ভাবা সময়ের যৌক্তিক দাবী।
৫). সূদখোর ব্যক্তি অভিশপ্ত
সূদের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন। সূদদাতা, গ্রহীতা, লেখক ও সাক্ষী সকলের উপরে অভিশাপ। তারা সকলে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক অভিশপ্ত। বলা যায় সূদের সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তিই অভিশাপ থেকে মুক্ত নয়। তারা অন্যায়ের দিক দিয়ে সমঅপরাধী। একজন মুসলিমের সূদ খাওয়াতো দূরের কথা তার নিকটবর্তী হওয়াও নিন্দনীয়। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক অভিশাপ থেকে বাঁচা প্রতিটি মুসলিমের জন্য যরূরী। ছাহাবীগণ তাঁর অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য সদা-সর্বদা তৎপর থাকতেন। বরং তার নিকট থেকে কল্যাণের দু‘আ নেয়ার জন্য ব্যস্ত থাকতেন। তাদের থেকে আমাদের দীক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, চুক্তিপত্রের লেখক ও সূদের দু’সাক্ষীর প্রতি অভিশাপ করেছেন। তিনি আরো বলেন, অভিশাপে তারা সবাই সমান।[১১] অপর একটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-
عَن أَبِيْ حُجَيْفَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ وَثَمَنِ الْكَلْبِ وَكَسْبِ الْبَغِيِّ وَلَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ وَالْمُصَوِّرَ
আবূ হুযায়ফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তের মূল্য, কুকুরের মূল্য এবং পতিতার উপার্জন ভক্ষণ করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি সূদদাতা, গ্রহীতার, যে ব্যক্তি দেহের কোন অংশে উলকী আঁকায় উলকী আঁকিয়ে দেয় এবং ছবি অংকনকারীর প্রতি লা‘নত করেছেন।[১২]
প্রসঙ্গত সূদের বিষয়টি আমাদের মূল আলোচ্য। সূদখোর এতোই জঘন্য যার উপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক অভিশপ্ত ব্যক্তির জীবন কখনো কল্যাণকর হতে পারে না। তার ইহকাল ও পরকাল কোন জীবনেই সফলতা আশা করা যায় না। তার উভয় জীবনই ব্যর্থ। আর অভিশপ্ত ব্যক্তির জীবনে ধ্বংস অনিবার্য। এরূপ অভিশপ্ত জীবনের গ্লানি থেকে মুক্তির লক্ষ্যেই সূদী লেনদেন বর্জন করা উচিৎ।
৬). সূদ জীবন ধ্বংসের মরণ ফাঁদ
সূদী অর্থনীতি জীবন ধ্বংসের এক মরণ ফাঁদ স্বরূপ। যে ফাঁদে পড়লে ইহকাল-পরকাল উভয় জীবন ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে। একজন ব্যক্তির জীবন ধ্বংসের জন্য সূদ অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। সূদপ্রথা পুরো সমাজ ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলে।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী কর্ম হতে বেঁচে থাক। সকলে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তা কী কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা (২) যাদু করা (৩) ন্যায় সঙ্গত অধিকার ছাড়া আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা করা হারাম করেছেন তা হত্যা করা (৪) সূদ খাওয়া (৫) এতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা (৬) যুদ্ধের দিন (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) পলায়ন করা এবং (৭) সৎ চরিত্রা মুমিনা নারীর চরিত্রে মিথ্যা কলঙ্ক দেয়া’।[১৩]
যে সকল জিনিস মানব জীবনে ধ্বংস ডেকে আনে তার মধ্যে সূদ অন্যতম। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয়ের মধ্যে সূদকেও উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকে ধ্বংসের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, তা কোন ভাবেই মানুষের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। সূদে সাময়িক কল্যাণ মনে হতে পারে। তবে তা স্রেফ ধুধু বালুচরে মরীচিকা বৈ কিছু নয়। সূদখোরের জীবনে তা নিশ্চিত ধ্বংস ডেকে আনবে। শুধু সময়ে ব্যবধান, দু’দিন আগে অথবা দু’দিন পরে।
৭). সূদের পরিণাম সামাজিক নিঃস্বতা
আমরা জানি সূদের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। সূদী কারবারী এর দ্বারা প্রচুর সম্পদের মালিক হয়। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে, সূদের মাধ্যমে সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। সূদ খেলে দারিদ্রতা আরো বাড়ে। এক পর্যায়ে সমাজ নিঃস্ব হয়ে যায়। যেহেতু এটা কুরআন মাজীদ ও ছহীহ হাদীছের চুড়ান্তবাণী, সেহেতু সূদে সম্পদ হ্রাস পায় এ কথাই চিরন্তন সত্য। কেননা কুরআন-সুন্নাহ মহা সত্যের অমোঘ বাণী। সূদের দ্বারা সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হয় এ মর্মে মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে বলেন,
یَمۡحَقُ اللّٰہُ الرِّبٰوا وَ یُرۡبِی الصَّدَقٰتِ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یُحِبُّ کُلَّ کَفَّارٍ اَثِیۡمٍ
‘আল্লাহ সূদকে সংকুচিত করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোন অবিশ্বাসী পাপীকে পসন্দ করেন না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৭৬)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ مَاۤ اٰتَیۡتُمۡ مِّنۡ رِّبًا لِّیَرۡبُوَا۠ فِیۡۤ اَمۡوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرۡبُوۡا عِنۡدَ اللّٰہِ
‘মানুষের ধন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তোমরা যে সূদ দিয়ে থাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধন বৃদ্ধি করে না’ (সূরা আর-রূম : ৩৯)। একই মর্মে হাদীছেও ইঙ্গিত রয়েছে,
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيْرُ إِلَى قَلٍّ
ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সূদ এমন বস্তু যার পরিণাম হচ্ছে সংকুচিত হওয়া যদিও তা বৃদ্ধি মনে হয়’।[১৪]
উল্লেখিত আয়াতদ্বয় ও হাদীছে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সূদের মাধ্যমে সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। আর দানের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। বাহ্যিকভাবে মনে হয় সূদে সম্পদ বাড়ে কিন্তু গভীরভাবে খেয়াল করলে দেখা যায় সম্পদ কমে। আল্লাহ তা‘আলা সূদকে সমূলে ধ্বংস করেন। হয় সূদে অর্জিত সম্পদকে সরাসরি নষ্ট করেন, না হয় ওর রবকত নষ্ট করে দেন। হতে পারে সূদখোরকে আল্লাহ কঠিন কোন অসুস্থতায় ফেলতে পারেন অথবা বড় রকমের বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবতের মধ্যে ফেলে দেন। ফলশ্রুতিতে অল্প সময়ের ব্যবধানে তার পুঞ্জিভূত অর্থের পাহাড় ধসে পড়ে। ব্যয় হয়ে যায় লক্ষ কোটি টাকা। যা সে কল্পনাও করতে পারেনি। আবার যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে সস্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা। তার অনেক জটিল রোগ সামান্য চিকিৎসায় ভাল হয়। অনুরূপ অনেক কঠিন বিপদ সহজেই সমাধান হয়। যার ফায়ছালা সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছাধীন। দুনিয়াতেও সূদীপ্রথা ধ্বংসের কারণ হয় এবং পরকালেও শাস্তির কারণ হয়।
তাছাড়া পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে সম্পদ গুটি কয়েক ব্যক্তির নিকট পুঞ্জিভূত হয়ে যায়। আর বহু সংখ্যক ব্যক্তি দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হয়। গরিব মানুষ সূদে ঋণ নিয়ে কখনো বড় লোক হতে পারে না। বরং তারা একবার সূদে জাড়িয়ে পড়লে, এই সূদী অক্টোপাসের কবল থেকে সাধারণত আর বের হতে পারে না। এক সময় সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। সূদের মাধ্যমে একেবারে সীমিত সংখ্যক মানুষের হাতে অর্থ গচ্ছিত হয়ে যায়। আর সমাজের ঐ কজন ব্যতীত প্রায় সকলেই স্থায়ী দারিদ্রতায় ভুগে। যা সামাজিক নিঃস্বতার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহী।
তথ্যসূত্র :
[১]. উমদাতুল ক্বারী, ১১ম খণ্ড, পৃ. ২০২; তাফসীর ইবনু কাছীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ৭১৬; তাফসীরে কুরতুবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৬৩; ফাতহুল কাদীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪০৫; তাফসীরে তাবারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৫।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৪৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৭৪২; মিশকাত, হা/৫১২৩।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৬৮৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৩; তিরমিযী, হা/৩১১০; ইবনু মাজাহ, হা/৪০১৮।
[৪]. আহমাদ, হা/২২০০৭-২২০০৮; দারাকুৎনী, হা/২৮৮০; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১০৩৩; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৮৫৫; মিশকাত, হা/২৮২৫, সনদ ছহীহ।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৫০৯; ইবনু মাজাহ, হা/২৫৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৯৫১; দারেমী, হা/২৩২৭; বুলুগুল মারাম, হা/১২০৬; মিশকাত, হা/৩৫৫৮।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৫০৯; আবূ দাউদ, হা/৪৪৬১; ইবনু মাজাহ, হা/২৫৫০; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৪২৫; ইরওয়াউল গালীল, হা/২৩৪১; মিশকাত, হা/৩৫৫৮।
[৭]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৭৪; মুসতাদরাক হাকেম, হা/২২৫৯; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৮৫৮; বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৫২০; মিশকাত, হা/২৮২৬, সনদ ছহীহ।
[৮]. ত্বাবারাণী আওসাত্ব, হা/৭১৭৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হা/৬৫৭৫; কানযুল উম্মাহ, হা/৯৭৫৯; ছহীহুল জামে‘, হা/৩৫৩৭; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৮৫৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৮৭১, সনদ ছহীহ।
[৯]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৭৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫১৩১; সুবুলুস সালাম, হা/২; আল-মুসনাদুল জামে‘, হা/৯১৪৪; বলুগুল মারাম, হা/৮৩১, সনদ ছহীহ।
[১০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৯০৫; বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৫৫২; আল-জামে‘ আছ-ছাগীর, হা/৯১৭৪; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৪০৪; আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৬০৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/১০৩; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬৫, সনদ ছহীহ।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪১৭৭; আবূ দাউদ, হা/৩৩৩৩; তিরমিযী, হা/১২০৬; নাসাঈ, হা/৫১০৫; ইবনু মাজাহ, হা/২২৭৭; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫০২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৭৩৭; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৮৪৭; মিশকাত, হা/২৮০৭।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৮৬; নাসাঈ, হা/৫১০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৬৪; দারেমী, হা/২৫৩৫; আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/২৮১; মিশকাত, হা/২৭৬৫।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৬৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭২; আবূ দাউদ, হা/২৮৭৪; নাসাঈ, হা/৩৬৭১; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৫৬১; বায়হাক্বী শু‘আবুর ঈমান, হা/২৮৪; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৩৩৮; ইরওয়াউল গালীল, হা/২৩৬৫; মিশকাত, হা/৫২।
[১৪]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৭৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৭৫৪; মুসতাদরাক হাকেম, হা/২২৬২; আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১০৫৩৮; আল-জামে‘ আছ-ছাগীর, হা/৫৮৫৫; ছহীহুল জামে‘, হা/৩৫৪২; বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৫১১; মিশকাত, হা/২৮২৭, সনদ ছহীহ।