বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

মসজিদ: ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র

-ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*


(২য় কিস্তি)

৩- শহরে, গ্রামে, গৃহে, বাড়িঘর ও ভ্রমণের স্থানে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা

শরী‘আতে মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। শহর, গ্রাম, বাড়ী-ঘরে, ভ্রমণের স্থান সহ বিভিন্ন স্থানে মসজিদ নির্মাণ করার বিষয়ে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া রাসূল (ﷺ) মদীনায় হিজরত করে প্রথমে বনী আমর ইবনু আউফের পার্শ্ববর্তী এলাকায় কুবা মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। অতঃপর তাঁর মসজিদ তথা মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে অনেক মসজিদ সেখানে নির্মিত হয়। মদীনায় মসজিদে নববী ছিল তার কেন্দ্রীয় মসজিদ। আর অন্যান্য মসজিদ ছিল শাখা মসজিদ, যেখানে ছালাত আদায় করা হত। যেমন কুবা মসজিদ, ক্বিবলাতাইন মসজিদ, মসজিদে গামামা, বানু যুরাইক্বের মসজিদ ইত্যাদি। পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণের প্রতি গুরুত্বের ব্যাপারে করে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘আয়িশাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَمَرَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِبِنَاءِ الْمَسَاجِدِ فِى الدُّوْرِ وَأَنْ تُنَظَّفَ وَتُطَيَّبَ ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন’।[১]

মানুষের ঘর-বাড়ীতেও রাসূল (ﷺ) মসজিদ নির্মাণে সম্মতি দিয়ে সেখানে ছালাতও আদায় করেছিলেন। অন্ধ ছাহাবী ‘ইতবান ইবনু মালিক আল-আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর প্রসিদ্ধ ঘটনা তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়।[২] অনুরূপভাবে রাসূল (ﷺ) আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর দাদা মুলায়কা (ﷺ)-এর বাড়ীতে ছালাত আদায় করেছিলেন।[৩] আর এটা স্বতঃসিদ্ধ বিষয় হলো, ছালাত আদায়ের স্থানকেই মসজিদ বলা হয়। এছাড়া রাসূল (ﷺ) যখন কোন জায়গায় সফর করতেন কিংবা যুদ্ধে যেতেন, তখনও তিনি সেখানে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করতেন এবং তাঁর ছাহাবীদেরকে নিয়ে সেখানে ছালাত আদায় করতেন। যেমনভাবে খায়বার, তাবূক ও খন্দক প্রান্তরে তিনি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ইবনু রুশদ বর্ণনা করেছেন যে, শুধু তাবূক ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে রাসূল (ﷺ) ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। ইবনু ইসহাক বলেন, ১৪টি। এমনকি খন্দকের প্রান্তরে ‘মসজিদুল ফাত্হ’ নামক একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৪]

অতএব উক্ত আলোচনা মসজিদের মর্যাদা এবং মুসলিমদের উপর এর নির্মাণের অপরিহার্যতা নির্দেশ করে। অর্থাৎ সে যেখানেই থাকুক না কেন; পার্শ্ববর্তী এলাকা, বাড়িঘর এবং ভ্রমণ বা উপস্থিতি যাই হোক না কেন, সেখানেই তারা ছালাত আদায় করবে। আর ছালাত আদায়ের স্থানকেই তো মসজিদ বলা হয়। তাই, মুসলিম দেশগুলোর প্রশাসকগণের উচিত যাত্রীদের জন্য ট্যাক্সি-বাস-ট্রাক স্টান্ডে মসজিদ স্থাপনের সাথে সাথে গ্রাম ও এলাকায় যেখানে যাত্রীদের নামতে হয় সেখানে মসজিদ স্থাপন করা। এক্ষেত্রে ইসলামী এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো খুব ভাল উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। তারা যাত্রীদের জন্য তাদের প্লেনে ছোট মসজিদ ডিজাইন করতে পারে, দীর্ঘ ফ্লাইটে যেখানে মুসল্লীরা পালা করে ছালাত আদায় করতে পারে। সম্প্রতি সঊদী এয়ারলাইনসের কয়েকটি বিমানে এটি করেছে।

৪- মসজিদ হল ঈমান, নেক আমল এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে জিহাদের আহ্বানের একটি বাস্তব প্রয়োগের স্থান

ইসলামে মসজিদের কার্যাবলী এর মর্যাদাকে সুসংহত ও সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। মসজিদ থেকেই ঈমান ও নেক আমলের আহ্বান ওঠে তথা আযান দেয়া হয়। যা মুসলিম শহর ও গ্রামের প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় ধ্বনিত হয়। এখানে ঈমানের চর্চা হয়, বিভিন্ন নেক আমল করা হয় ও তার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এই মসজিদ থেকেই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জিহাদের ডাক দেয়া হয়, সৈন্যবাহিনী একত্রিত করা হয় এবং সৈন্যদল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জিহাদের উদ্দেশ্য প্রেরিত হয়। মসজিদেই মুসলিমদেরকে ছালাতের আহ্বান করা হয়। এখানেই সমস্ত যিকর, কুরআন তেলাওয়াত, দাঁড়ানো, রুকু, সেজদা, বসা, নড়াচড়া ও স্থিরতা বাস্তবে রূপান্তরিত হয়। এগুলোর মাধ্যমেই ঈমানের দৃঢ়তা অর্জিত হয়, মহান আল্লাহর তাওহীদের বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুসরণ ও আনুগত্য পরিপূর্ণতা লাভ করে।

মুয়াজ্জিনের আওয়াজ পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তে দিনে ও রাতে পাঁচবার ফুটে ওঠে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ তাতে সাড়া দেয়, সবকিছু পিছনে ফেলে, তাদের প্রভুর সাথে তাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য এবং তার ঘরে তাদের জন্য যা বাধ্যতামূলক ছিল তা পালন করার জন্য। আযান শুনে একজন একনিষ্ঠ মুসলিম তার আরামের বিছানা পরিত্যাগ করে থাকে। আযানের জবাব দিয়ে মসজিদে এসে ইবাদতে মশগূল থাকে। যার মাধ্যমে মজবুতহ ঈমানী শক্তি অর্জিত হয়। পক্ষান্তরে ভণ্ড, প্রবৃত্তি পূজারী, মুনাফিক্ব ও দুনিয়াদার ব্যক্তি অলস সময় অতিবাহিত করে, অযথা ঘুরাফেরা করে কিন্তু সত্যের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে অসত্য কাজে লিপ্ত থাকে। মসজিদে এসে ইবাদতে রত থাকা তাদের নিকট অনেক কঠিন ও ঝামেলার কাজ মনে হয়। যেমনটি নিম্নের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

«إِنَّ أَثْقَلَ صَلَاةٍ عَلَى الْمُنَافِقِيْنَ صَلَاةُ الْعِشَاءِ وَصَلَاةُ الْفَجْرِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِيْهِمَا لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا وَلَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِالصَّلَاةِ فَتُقَامَ ثُمَّ آمُرَ رَجُلًا فَيُصَلِّىَ بِالنَّاسِ ثُمَّ أَنْطَلِقَ مَعِىْ بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلَى قَوْمٍ لَا يَشْهَدُوْنَ الصَّلَاةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوْتَهُمْ بِالنَّارِ».


‘এশা ও ফাজরের ছালাত আদায় করা মুনাফিকদের জন্য সর্বাপেক্ষা কঠিন। তারা যদি জানত যে, এ দু’টি ছালাতের পুরস্কার কত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বুক হেঁচড়ে হলেও তারা এ দু’ওয়াক্ত জামা‘আতে উপস্থিত হত। আমি ইচ্ছা করেছি ছালাত আদায় করার আদেশ দিয়ে কাউকে ইমামতি করতে বলি। আর আমি কিছু লোককে নিয়ে জ্বালানী কাঠের বোঝাসহ যারা ছালাতের জামা‘আতে আসে না তাদের কাছে যাই এবং আগুন দিয়ে ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেই’।[৫] আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর ছাহাবীগণ বুঝতে পেরেছিলেন যে, কেবল মুনাফিকই বিনা অজুহাতে জামা‘আতে ছালাতে উপস্থিত হতে দেরি করবে এবং তারা নিজেদের জন্য ভীত ছিল। এজন্য অসুস্থ থাকার পরেও ঐ অবস্থায় জামা‘আতে ছালাত আদায়ে অংশ নিতেন। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,

‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমাদের দেখেছি, জামা‘আতে ছালাত আদায় করা থেকে মুনাফিকরা ব্যতীত কেউ বিরত থাকত না। যাদের মুনাফিক্বী অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল অথবা রুগ্ন লোক। যদি কোন রুগ্ন লোক দু’ব্যক্তির উপর ভর করে চলতে সক্ষম হত সেও জামা‘আতে আসত। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে হিদায়াতের পথসমূহ শিক্ষা দিয়েছেন। আর হিদায়াতের পথসমূহের মধ্যে মসজিদে জামা‘আতে ছালাত আদায় করাও একটি হিদায়াতের পথ, যে মসজিদে আযান দেয়া হয়’। অপর বর্ণনায় আছে, রাসূলুুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আগামীকাল আল্লাহর সাথে পূর্ণ মুসলিম হিসাবে সাক্ষাৎ করে সন্তুষ্ট হতে চায়, সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হয়, যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের আযান দেয়া হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তা তোমাদের নবীর জন্য হিদায়াতের পথসমূহ হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। এছাড়া এই ছালাতসমূহ হিদায়াতের পথসমূহের অন্যতম একটি। যদি তোমরা তোমাদের ঘরে ছালাত আদায় কর, যেভাবে মুনাফিক্বরা তাদের ঘরে ছালাত আদায় করে, তাহলে অবশ্যই তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ করলে। আর যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ কর, তাহলে তোমরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে অতঃপর ঐ মসজিদসমূহের মধ্যে কোন মসজিদের দিকে গমন করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি পায়ের ধাপের বিনিময়ে একটি করে নেকী দান করবেন, তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নত করবেন এবং তার একটি পাপ ক্ষমা করবেন। আমি আমাদের দেখেছি, জামা‘আতে ছালাত আদায় করা থেকে মুনাফিক্বরা ব্যতীত কেউ বিরত থাকত না, যাদের মুনাফিক্বী অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল। কোন লোককে দু’ব্যক্তির উপর ভর করে এনে ছালাতের সারিতে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত।[৬]

মসজিদে যেসব নেক আমল করা হয় তন্মধ্যে চিন্তা ও নম্রতার সাথে কুরআন পাঠ করা, মুখস্থ করা এবং তা অধ্যয়নের জন্য একত্রে মিলিত হওয়া অন্যতম। যেমন আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বর্ণনা করেছেন যে,

وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِىْ بَيْتٍ مِّنْ بُيُوْتِ اللهِ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَيَتَدَارَسُوْنَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِيْنَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِىْمَنْ عِنْدَهُ وَمَنْ بَطَّأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبَهُ

‘যখন কোন একটি দল আল্লাহর ঘরসমূহের মধ্যে কোন একটি ঘরে একত্রিত হয়ে আল্লাহ্র কিতাব পাঠ করে এবং পরস্পর আলোচনা করে, তখনই তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হতে আরম্ভ করে এবং রহমত তাদের বেষ্টন করে ফেলে, ফেরেশতাগণ তাদের ঘিরে নেন এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকটে যারা আছেন তাঁদের নিকট তাদের উল্লেখ করেন’।[৭] অনুরূপভাবে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ই‘তিকাফ। আর মসজিদ ব্যতীত ই‘তিকাফ বিশুদ্ধ হয় না।[৮] এইভাবে রাসূল (ﷺ) তাঁর মসজিদে জিহাদের জন্য লোকদের আহ্বান করতেন ও সেখানে এ বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করতেন, তিনি তাঁর অস্ত্র পরিধান করে সেখানে তাঁর সঙ্গীদের কাছে যেতেন এবং তাদের সাথে তার মসজিদ থেকে জিহাদের জন্য যাত্রা করতেন, যেভাবে তিনি তাদের সাথে মসজিদ থেকে হজ্বের জন্য বের হতেন।

৫- মসজিদ হলো শিক্ষা ও ইসলামী রাষ্ট্রগঠনের যোগ্য মানুষ তৈরির একটি বিশ্ববিদ্যালয়

ইসলামী শিক্ষার সূতিকাগার হলো মসজিদ। দেড় হাজার বছর পূর্বে ইসলামের সোনালী যুগে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের যোগ্য মানুষ তৈরিতে মসজিদের ভূমিকা ছিল একটি উন্নত ও সুসংসহত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায়। মসজিদ স্থাপনের পূর্বে মক্কায় প্রাথমিক অবস্থায় ‘দারুল আরকাম’-এ ইবনু আরকামে রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবীগণ একত্রিত হতেন। সেখানে রাসূল (ﷺ) তাঁর ছাহাবীদেরকে দ্বীনের শিক্ষা ও পরিশুদ্ধির প্রাথমিক শিক্ষা দিতেন। অতঃপর মদীনায় হিজরতের পর মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানেই তাদের সম্মুখে কুরআন তেলাওয়াত করতেন ও শিক্ষা দিতেন এবং ইসলামী শরী‘আতের দ্বিতীয় উৎস ‘আস-সুন্নাহ’-এর কথা ও কর্মের মাধ্যমে বাস্তবে প্রয়োগ করে ছাহাবীদেরকে ইসলামের বাস্তব শিক্ষা প্রদান করতেন। যারা পরবর্তীতে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বের বুকে নিজেদেরকে যোগ্যতম স্থানে নিয়ে যান। মূলত জাতিকে রাসূল (ﷺ)-এর কথা ও কাজ শিক্ষা দেয়ার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মসজিদ। ছাহাবীগণ তাঁর নিকট থেকে শিক্ষা লাভের জন্য তাঁর চারিপার্শ্বে সর্বদা অবস্থান করতেন। হাদীছে এসেছে, আবূ ওয়াক্বিদ আল-লাইছী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত,

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ بَيْنَمَا هُوَ جَالِسٌ فِى الْمَسْجِدِ وَالنَّاسُ مَعَهُ، إِذْ أَقْبَلَ ثَلَاثَةُ نَفَرٍ، فَأَقْبَلَ اثْنَانِ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ وَذَهَبَ وَاحِدٌ، قَالَ فَوَقَفَا عَلَى رَسُوْلِ اللهِ فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَرَأَى فُرْجَةً فِى الْحَلْقَةِ فَجَلَسَ فِيْهَا، وَأَمَّا الآخَرُ فَجَلَسَ خَلْفَهُمْ، وَأَمَّا الثَّالِثُ فَأَدْبَرَ ذَاهِبًا، فَلَمَّا فَرَغَ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ «أَلَا أُخْبِرُكُمْ عَنِ النَّفَرِ الثَّلَاثَةِ أَمَّا أَحَدُهُمْ فَأَوَى إِلَى اللهِ، فَآوَاهُ اللهُ، وَأَمَّا الآخَرُ فَاسْتَحْيَا، فَاسْتَحْيَا اللهُ مِنْهُ، وَأَمَّا الْآخَرُ فَأَعْرَضَ، فَأَعْرَضَ اللهُ عَنْهُ».

‘আল্লাহর রাসূল (ﷺ) একদা মসজিদে বসে ছিলেন; তাঁর সাথে আরও লোকজন ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনজন লোক আসল। তন্মধ্যে দু’জন আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর দিকে এগিয়ে আসলেন এবং একজন চলে গেলেন। আবূ ওয়াক্বিদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, তাঁরা দু’জন আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর নিকট কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তাঁদের একজন মাজলিসের মধ্যে কিছুটা খালি জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়লেন এবং অপরজন তাদের পেছনে বসলেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি ফিরে গেল। যখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) অবসর হলেন (ছাহাবীদের লক্ষ্য করে) বললেন: আমি কি তোমাদেরকে এই তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলব না? তাদের একজন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করল, আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিলেন। অন্যজন লজ্জাবোধ করল, তাই আল্লাহও তার ব্যাপারে লজ্জাবোধ করলেন। আর অপরজন (মাজলিসে হাযির হওয়া থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলেন, তাই আল্লাহও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন’।[৯]

মসজিদের মিম্বারে রাসূল (ﷺ) জুমু‘আর খুতবাহ দিতেন এবং বিভিন্ন সময় আরো প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতেন। ছাহাবীগণ সেখানে উপস্থিত থাকতেন, তাঁর কার্যক্রম অবলোকন করতেন এবং তাঁর নির্দেশনা শ্রবণ করতেন।[১০] তিনি লোকেদেরকে তাঁর কথা শেখাতেন এবং তাঁর কর্ম সম্পর্কে শিক্ষা দিতেন, যাতে তারা তাঁর মত কাজ করতে পারে। সাথে সাথে তাঁর সঙ্গীদের মন তীক্ষè করতেন এবং তিনি তাদের যা বলেছিলেন তা শোনার জন্য প্রস্তুত করতেন।[১১] ছাবাহীগণ কোন সমস্যায় পতিত হলে মসজিদে আসতেন এবং রাসূল (ﷺ)-এর নিকট থেকে তার সামাধান নিয়ে যেতেন।[১২] তাঁর সাথীরা যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনত তারা তাঁর কাছে আসত এবং তাদের বাড়িঘর তার থেকে দূরে থাকত। ফলে তারা তাঁর মসজিদে অবস্থান করত এবং তারা তাঁর কাছ থেকে দ্বীনের বিষয়ে ফিকাহ গ্রহণ করত, তারপর তারা ফিরে আসত।[১৩] এভাবে অসংখ্য বিষয় রয়েছে, যা ছাহাবীগণ মসজিদেই রাসূল (ﷺ)-এর নিকট থেকে শিক্ষা অর্জন করতেন। এখান থেকে জানা যায় যে, মসজিদটি শিক্ষা ও শিক্ষার জন্য একটি মহান বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এবং আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর ছাহাবায়ে কেরাম তাঁর আস্থার ভিত্তিতে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন এবং একটি শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্র এবং মানবজাতির নেতৃত্ব দেয়ার জন্য সবচেয়ে যোগ্য লোক ছিল। তাঁরা মসজিদ থেকেই তাদের সমস্ত আন্দোলন তথা দাওয়াত ও জিহাদ পরিচালনা করতেন। তাঁরা এই মহান মসজিদ থেকেই দ্বীনের প্রসার ঘটিয়েছিল, যা আজ বিশ্বের প্রতিটি স্থানে সুপরিচিত একটি দ্বীন হিসাবে স্বীকৃত। পৃথিবীতে এমন কোন খলীফা নেই, কোন বিচারক নেই, কোন রাজপুত্র নেই, ইসলামের সমৃদ্ধ যুগে মুসলিমদের অভিভাবক নেই, যিনি মসজিদ থেকে শিক্ষা অর্জন করেননি।

প্রাথমিক যুগে মুসলিম পণ্ডিতরা মসজিদ ছাড়া এমন কোন জ্ঞানের জায়গা জানতেন না, যা মানুষকে একত্রিত করত। তবে কিছু সমসাময়িক লেখক যা দাবি করেছেন তা হল যে মসজিদ প্রতিষ্ঠার কারণ হল মুসলিমদের এই অনুভূতি জাগ্রত করা যে, ব্যক্তিগত বাড়িগুলো তাদের জন্য খুব সংকীর্ণ। মিটিং এবং তাদের ইচ্ছা মত ইবাদত ও মিলিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এটি একদিকে সত্য যে, ব্যক্তিগত বাড়িগুলো মিলিত হওয়ার জন্য খুব সংকীর্ণ এবং একদিকে এটি সত্য নয় যে যদি কারণটি সংকীর্ণতা হত তবে তারা তাদের জন্য বিজ্ঞান এবং জনসভা শেখানোর জন্য ভবন তৈরি করত এবং এটি যুগের কোন যুগেই কঠিন ছিল না। কিন্তু উদ্দেশ্য হল জীবনের সকল কর্মকাণ্ডে ইসলামী শিক্ষাকে সংযুক্ত করা, তা সামরিক হোক কিংবা বেসামরিক। সুতরাং যারা ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করতে চায় তাদের মধ্যে কোন যুক্তি অচল ও অথর্ব।

একথা সর্বজনবিদিত যে, এই মসজিদ থেকে জ্ঞানের প্রখ্যাত পণ্ডিতগণ বের হয়েছিলেন, যাদের নির্দেশনা, জ্ঞান, ধার্মিকতা ও তাক্বওয়া এবং তাদের মহান প্রচেষ্টার উপর মুসলিমরা ব্যাপক উপকৃত হয়েছে। ইসলামী দাওয়াত ও সংস্কৃতির প্রসারেও রয়েছে অসামান্য অবদান। যা বিভিন্ন শিল্পে তাদের লেখা, ব্যাখ্যা, হাদীছে, এবং আইনশাস্ত্র, ইতিহাস, যন্ত্র বিজ্ঞান এবং অন্যান্য বিষয়গুলো সবই সাক্ষ্য বহন করে, যা তারা উপস্থাপন করেছে। আর মুসলিমরা শরী‘আতের জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তারা তাদের যুগে বিদ্যমান সমস্ত বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ স্তর অর্জন করেছিল; যা মসজিদ কেন্দ্রিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছিল। এই বিষয়টি আধুনিক ইউরোপীয়রাও স্বীকার করে থাকে।[১৪]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. ইমাম আবূ দাঊদ, আস-সুনান, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৭৮, হাদীছ নং-৪৫৫।
[২]. ঘটনাটি এরূপ: মাহমূদ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, ‘ইতবান ইব‌নু মালিক আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে (যিনি ছিলেন বদর জিহাদে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে উপস্থিত বদরী ছাহাবীগণের অন্যতম) বলতে শুনেছেন যে, আমি আমার গোত্র বনূ সালিমের ছালাতে ইমামতি করতাম। আমার ও তাদের (মসজিদের) মধ্যে ছিল একটি উপত্যকা। বৃষ্টি হলে উপত্যকা আমার মসজিদ গমনে বাধা সৃষ্টি করত এবং এ উপত্যকা অতিক্রম করে তাদের মসজিদে যাওয়া আমার জন্য কষ্টকর হত। তাই আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করলাম, (হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)!) আমি আমার দৃষ্টিশক্তির কমতি অনুভব করছি (উপরন্তু) আমার ও আমার গোত্রের মধ্যকার উপত্যকাটি বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয়ে যায়। তখন তা পার হওয়া আমার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই আমার একান্ত আশা যে, আপনি শুভাগমন করে আমার ঘরের কোন স্থানে ছালাত আদায় করবেন; আমি সে স্থানটিকে ছালাতের স্থানরূপে নির্ধারণ করে নিব। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, শীঘ্রই তা করব। পরের দিন সূর্যের উত্তাপ যখন বেড়ে গেল, তখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এবং আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আসলেন। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) (প্রবেশের) অনুমতি চাইলে আমি তাঁকে স্বাগত জানালাম, তিনি উপবেশন না করেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার ঘরের কোন্‌ জায়গায় আমার ছালাত আদায় করা তুমি পসন্দ কর? যে স্থানে ছালাত আদায় করা আমার মনঃপূত ছিল, তাঁকে আমি সে স্থানের দিকে ইঙ্গিত করে দিলাম আল্লাহর রাসূল (ﷺ) দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন, আমরা সারিবদ্ধভাবে তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। তিনি দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। তাঁর সালাম ফেরানোর সময় আমরাও সালাম ফিরালাম...’। দ্র.: ছহীহুল বুখারী, হাদীছ নং-১১৮৬; ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫৪, হাদীছ নং-৩৩।
[৩]. আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর দাদা মুলায়কাহ তার নিজের হাতে প্রস্তুত একটি খাবার খেতে রাসূল (ﷺ)-কে দাওয়াত দিলে তিনি তা খেলেন। খাওয়া শেষে তিনি বললেন, তোমরা সবাই উঠে দাঁড়াও, আমি তোমাদের (বারাকাত বা শিক্ষার) জন্য ছালাত আদায় করব। আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি উঠে গিয়ে আমাদের একটি চাটাইয়ের উপর দাঁড়ালাম, যা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের ফলে কালো বর্ণ ধারণ করেছিল। আমি সেটির উপর কিছু পানি ছিটিয়ে দিলাম। রাসূল (ﷺ) ঐ চাটাইয়ের উপর দাঁড়ালেন। আর বৃদ্ধ মহিলারা দাঁড়ালেন  পিছনে। অতঃপর রাসূল (ﷺ) আমাদের সাথে নিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করলেন এবং তারপর চলে গেলেন। দ্র.: ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫৭, হাদীছ নং-৬৫৮।
[৪]. নূরুরুদ্দীন আবুল হাসান আল-সামাহূদী, ওয়াফাউল ওয়াফা বি আখবারিল দারিল মুসত্বফা, ৩য় খণ্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪১৯ খ্রি.), পৃ. ৩৯, ১৭৮-১৭৯।
[৫]. ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫১, হাদীছ নং-৬৫১; আহমাদ ইবনু হাম্বাল আবূ আব্দিল্লাহ আশ-শায়বানী, আল-মুসনাদ, ২য় খণ্ড (কায়রো : মুওয়াসসাসাতু কর্ডোভা, তা.বি.), পৃ. ৫৩১, হাদীছ নং-১০৮৮৯।
[৬]. ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫৩, হাদীছ নং-৬৫৪।
[৭]. ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২০৭৪, হাদীছ নং-২৬৯৯; মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্দিল্লাহ আল-খাত্বীব আত-তিবরীজী, মিশকাতুল মাসাবীহ, ১ম খণ্ড (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৫ হি./১৯৮৫ খ্রি.), পৃ. ৪৪, হাদীছ নং-২০৪।
[৮]. সূরাহ আল-বাক্বারাহ: ১৮৭।
[৯]. মুহাম্মাদ ইবনু ইসমা‘ঈল আল-বুখারী আল-জু‘ফী, আস-সাহীহ (কায়রো: দারুল হাদীছ, ১৪৩২ হি./২০১১ খ্রি.), পৃ. ২৪, হাদীছ নং-৬৬।
[১০]. ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৮৬, হাদীছ নং-৫৪৪।
[১১]. ছহীহুল বুখারী, পৃ. ৩২, হাদীছ নং-৬১।
[১২]. ছহীহুল বুখারী, পৃ. ৪৫, হাদীছ নং-১৩৩।
[১৩]. আহমাদ ইবনু শু‘আইব আবূ আব্দির রহমান আন-নাসাঈ, আস-সুনান, ২য় খণ্ড (আলেপ্পো: মাকতাবাতুল মাতবূ‘আত আল-ইসলামিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ, ১৪০৬ হি./১৯৮৬ খ্রি.), পৃ. ৯, হাদীছ নং-৬৩৫।
[১৪]. রিসালাতুল মাসজিদ, রাবেতাতুল আলাম আল-ইসলামী, ৬ষ্ঠ সংখ্যা, ১৪০৩ হি., পৃ. ১৫।






প্রসঙ্গসমূহ »: মসজিদ
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (২য় কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (৫ম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ইসলামী সংগঠন ও তরুণ-যুবক-ছাত্র - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায় (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
মহামারী থেকে বেঁচে থাকার দশটি উপদেশ - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
সদাচরণের প্রতিদান ও দুশ্চরিত্রের পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামে দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও তার সমাধান - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন

ফেসবুক পেজ