সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন

মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*


(১৫তম কিস্তি)

আক্বীদা-৩ : নবী-রাসূল সহ অন্যান্যদের জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় ওসীলা নেয়া জায়েয।

দেওবন্দীদের অন্যতম আক্বীদা হল, তারা নবী-রাসূলসহ অন্যান্যদের জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় ওসীলা নেয়া বৈধ মনে করে। যেমনটা দেওবন্দী আলিমগণ বলেছেন, ‘আম্বিয়া-কেরাম, সলফে সালেহীন, আওলিয়া, ছিদ্দীকিন ও শুহাদায়ে-কেরাম জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় দোয়ায় তাদের ওসীলা নেয়া আমাদের ও আমাদের পূর্বসূরীদের মতে জায়েয। দু‘আয় যেন বলা হয়, হে আল্লাহ! আমার দু‘আ কবুল ও হাজত পূরণের ক্ষেত্রে আমি অমুকের অসীলা নিয়ে প্রার্থনা করছি’।[১]

পর্যালোচনা

দেওবন্দীদের এ আক্বীদা প্রমাণিত নয়। এটা শরী‘আত বিবর্জিত আক্বীদা। কেননা তা নবী করীম (ﷺ), ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ-তাবেঈন ও তাঁদের পরবর্তী সালাফদের আমলের খেলাফ। ইসলামী শরী‘আতে মহান আল্লাহকে ডাকার জন্য বা তাঁর নিকট চাওয়ার জন্য কোন মাধ্যম বা মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন নেই। কেননা শরী‘আত পৌঁছে দেয়া ছাড়া আল্লাহ ও বান্দার মাঝে কোন মাধ্যম নেই। মহান আল্লাহ বলেন, وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ وَ نَعۡلَمُ مَا تُوَسۡوِسُ بِہٖ  نَفۡسُہٗ ۚۖ وَ نَحۡنُ  اَقۡرَبُ اِلَیۡہِ  مِنۡ  حَبۡلِ  الۡوَرِیۡدِ ‘আমরা মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয়, সে সম্বন্ধেও আমরা অবগত আছি। আমরা তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী’ (সূরা ক্বাফ : ১৬)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ ؕ اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ۙ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا  لِیۡ  وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ  لَعَلَّہُمۡ  یَرۡشُدُوۡنَ

‘আর আমার বান্দারা যখন আপনাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, বস্তুত আমি তো সন্নিকটেই রয়েছি। আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে আহ্বান করে। কাজেই তারা আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যেন তারা সৎপথে চলতে পারে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৬)।

উপরিউক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, তিনি বান্দার নিকটে অর্থাৎ বান্দার কাছে আছেন, তার সব কথা শোনেন, তাঁকে ডাকলে ডাকে সাড়া দেন, সেখানে মধ্যস্থতাকারী বা মাধ্যমের কি প্রয়োজন আছে?

আর দ্বীন প্রচারের মাধ্যম হলেন রাসূলগণ। পক্ষান্তরে, বিপদ দূর করা বা কল্যাণ নিয়ে আসার জন্য যে মাধ্যম ধরা হয়, তা মূলত কাফির মুশরিকদের বিশ্বাস। আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর পরে বান্দা ও তার রবের মাঝে কিভাবে মধ্যস্থতাকারী থাকতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَقَالَ رَبُّکُمُ ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَکُمۡ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِیۡ سَیَدۡخُلُوۡنَ جَہَنَّمَ دٰخِرِیۡنَ

‘তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকার করে আমার ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সত্বরই তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (সূরা আল-গাফির : ৬০)।

মহান আল্লাহ এখানে বলেননি যে, তোমরা আমার অলী-বুজুর্গদের ডাক বা আমার নবীদের ডাক বা শহীদ অথবা আমার প্রিয়পাত্র ও সৎ বান্দাদের মাধ্যমে সাহায্য চাও। বরং তিনি বলেছেন, ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَکُمۡ ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’। তিনি আরো বলেন, ‘আর আমার বান্দারা যখন আপনাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, বস্তুত আমি তো সন্নিকটেই রয়েছি। আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে আহ্বান করে। কাজেই তারা আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যেন তারা সৎপথে চলতে পারে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৬)। হাদীছে এসেছে,

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় না, তিনি তার উপর রাগান্বিত হন’।[২] ইবনু মাজার বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, مَنْ لَمْ يَدْعُ اللهَ سُبْحَانَهُ غَضِبَ عَلَيْهِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে আহ্বান করে না, তিনি তার উপর রাগান্বিত হন’।[৩] অন্য হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,ادْعُوا اللهَ وَأَنْتُمْ مُوْقِنُوْنَ بِالْإِجَابَةِ ‘তোমরা আল্লাহর কাছে দু‘আ কর, কবুল হওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ আস্থা নিয়ে’।[৪]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنْتُ خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ يَوْمًا فَقَالَ يَا غُلَامُ احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْكَ احْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ وَإِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ وَاعْلَمْ أَنَّ الْأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَّنْفَعُوْكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوْكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوْا عَلَى أَنْ يَّضُرُّوْكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوْكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الْأَقْلَامُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ

ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পিছনে ছিলাম। তিনি বললেন, হে তরুণ! তুমি আল্লাহর বিধি-নিষেধের রক্ষা করবে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহকে তুমি কাছে পাবে। তোমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহর নিকট চাও। আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহর নিকটেই কর। আর জেনে রেখ, যদি সকল উম্মতও তোমার কোন উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয় ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অপরদিকে যদি সকল উম্মত তোমার কোন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে একতাবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু ক্ষতিই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার তাক্বদীরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে।[৫]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিন্তু এ কথা বলেননি যে, নবীগণ তোমাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে, এই আশায় তোমরা নবীদের ডাক অথবা নবী ও সৎ লোকদের অসীলা বানাও। বরং তিনি বলেছেন, তোমাদের কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহর নিকট চাও। আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহর নিকটেই কর।[৬] এ কারণেই নবীগণের একজনের আরেকজনকে অসীলা গ্রহণের কোন প্রমাণ নেই, ছাহাবাগণেরও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে মাধ্যম করে অসীলা গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া যায় না, তাবেঈদের থেকেও নেই, এমনকি পরবর্তী কোন গ্রহণযোগ্য ইমামের থেকেও নেই।

অসীলার পরিচয়

অসীলা (الوسيلة) শব্দটি আরবী। এটি আরবী (وسِل) শব্দ থেকে এসেছে। বহুবচন হল وسائل।[৭] যা কুরআন ও সুন্নাহয় বর্ণিত হয়েছে। অসীলার পরিচয় প্রদান করে আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,التقرب إلى المطلوب والتوصل إليه برغبة ‘কাক্সিক্ষত বস্তুর নিকটবর্তী হওয়া, প্রবল আগ্রহ নিয়ে তার নিকট পৌঁছা’।[৮] আল্লামা ইবনুল আছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যার মাধ্যমে কোন বস্তুর নিকট পৌঁছা যায় বা যার মাধ্যমে নিকটবর্তী হওয়া যায় বা নৈকট্য অর্জন করা যায়।[৯] আল্লামা ফীরোযাবাদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,وسل إلى الله تعالى توسيلاً عمل عملاً تقرب به إليه كتوسل ‘আল্লাহর নিকট পৌঁছার একটি মাধ্যম। তা এমন একটি আমল, যা তাওয়াসসুলের ন্যায় তার নিকটবর্তী করে দেয়’।[১০]

মহান আল্লাহ বলেন,یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ ابۡتَغُوۡۤا اِلَیۡہِ الۡوَسِیۡلَۃَ وَ جَاہِدُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِہٖ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য অন্বেষণ কর ও আল্লাহ্র পথে জিহাদ করতে থাক, আশা করা যায় যে, তোমরা সফলকাম হবে’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৩৫)।

উপরিউক্ত আয়াতে وَ ابۡتَغُوۡۤا اِلَیۡہِ الۡوَسِیۡلَۃَ-এর ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু জারীর আত-ত্বাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,واطلبوا القربة إليه بالعمل بما يرضيه ‘সৎ আমলের মাধ্যমে তাঁর নিকট তোমরা নৈকট্য অন্বেষণ কর’।[১১] হাফেয ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণনা করেন যে,

وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ أي القربة. وكذا قال مجاهد وعطاء وأبو وائل والحسن وقتادة وعبد الله بن كثير والسدي وابن زيد. وقال قتادة أي تقربوا إليه بطاعته والعمل بما يرضيه. وقال إبن كثير وهذا الذي قاله هؤلاء الأئمة لا خلاف بين المفسرين فيه والوسيلة هي التي يتوصل بها إلى تحصيل المقصود

‘ الْوَسِيلَةَঅর্থ নৈকট্য। মুজাহিদ, ওবাই, ওয়ায়িল, হাসান, আব্দুল্লাহ ইবনু কাছীর, সুদ্দী, ইবনু জায়েদ এবং অন্যান্যরা (রাহিমাহুমুল্লাহ) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ক্বাতাদাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, তোমরা সৎ আমল ও তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য কর। অতঃপর ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ ব্যাপারে ঐ সমস্ত ইমামগণ যা বলেছেন তাতে মুফাসসিরগণের মাঝে কোন বিরোধ নেই। আর অসীলা এমন একটি বিষয় যার দ্বারা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছা যায়’।[১২]

মহান আল্লাহ বলেন,

اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ یَبۡتَغُوۡنَ  اِلٰی رَبِّہِمُ الۡوَسِیۡلَۃَ اَیُّہُمۡ اَقۡرَبُ وَ یَرۡجُوۡنَ رَحۡمَتَہٗ وَ یَخَافُوۡنَ عَذَابَہٗ ؕ اِنَّ عَذَابَ  رَبِّکَ  کَانَ  مَحۡذُوۡرًا

‘তারা যাদেরকে আহ্বান করে তারাইতো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে তাদের মধ্যে কে কত নিকট হতে পারে, তার দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় করে; আর তোমার প্রতিপালকের শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৫৭)।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) উপরিউক্ত আয়াত সম্পর্কে যা বলেছেন, তা অসীলার অর্থকে আরো স্পষ্ট করে তোলে। তিনি বলেন,

 نَزَلَتْ فِى نَفَرٍ مِنَ الْعَرَبِ كَانُوا يَعْبُدُونَ نَفَرًا مِنَ الْجِنِّ فَأَسْلَمَ الْجِنِّيُّونَ وَالإِنْسُ الَّذِينَ كَانُوا يَعْبُدُونَهُمْ لاَ يَشْعُرُونَ فَنَزَلَتْ (اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ یَبۡتَغُوۡنَ  اِلٰی رَبِّہِمُ الۡوَسِیۡلَۃَ)

‘উক্ত আয়াতটি আরবের একটি দলের ব্যাপারে নাযিল হয়েছিল। যারা জিন সম্প্রদায়ের উপাসনা করত। অতঃপর জিনেরা ইসলাম গ্রহণ করলে মানুষরা তাদের উপাসনা করতে থাকে কিন্তু তারা এটা বুঝার চেষ্টা করত না’। এমতাবস্থায় اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ یَبۡتَغُوۡنَ  اِلٰی رَبِّہِمُ الۡوَسِیۡلَۃَ আয়াতটি নাযিল হয়’।[১৩] ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

أي استمر الأنس الذين كانوا يعبدون الجن على عبادة الجن والجن لا يرضون بذلك لكونهم أسلموا وهم الذين صاروا يبتغون إلى ربهم الوسيلة

‘মানুষরা জিনের ইবাদত করত। মুসলিম হওয়ার কারণে জিনেরা এটা পসন্দ করত না। মানুষরা তাদের প্রভুর নিকটে তাদেরকে অসীলা হিসাবে কামনা করে। এভাবে তারা তার উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়’।[১৪]

উপরিউক্ত বক্তব্যের আলোকে শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘অসীলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, তাহল যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়। এ কারণে তিনি বলেন, يبتغون অর্থ সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণ করা। এটা প্রত্যেক সুস্থ চিন্তার জন্য এরূপই ইঙ্গিত করে। বাহ্যিকভাবে কিছু মানুষ তাদের ইবাদত ও দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহর কিছু বান্দার দিকে রূজু হয়। তারা তাদেরকে ভয় করে, তাদের নিকট কামনা করে। এভাবেই তারা পুঁজিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়। তারা তাদের ইসলামের কথা ও ইবাদতের স্বীকৃতির কথা ঘোষণা করেছিল। অথচ এরাই সৎ আমলের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল। তারা তাঁর রহমত কামনা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। আল্লাহ আয়াতে এদেরকে নির্বোধ বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা এই নির্বোধরাই জিনের ইবাদত করে এবং তাদেরই ইবাদত করতে থাকে। অথচ তারাও আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁর ইবাদতকারী। এরা মানুষের মতই দুর্বল। তারা নিজেদের লাভ-ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা রাখে না। ইবাদতের মাধ্যমে তার দিকে রুজু না হওয়ার কারণে আল্লাহ তাদের প্রতি নাখোশ। কেননা আল্লাহই একমাত্র লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখেন, তাঁরই হাতে রয়েছে সকল কিছুর চাবিকাঠি। তিনিই সবকিছুর রক্ষক’।[১৫]

অসীলার প্রকার

অসীলা দুই প্রকার। ১. শরী‘আত সম্মত ২. শরী‘আত বিবর্জিত।[১৬]

শরী‘আত সম্মত অসীলা : শরী‘আত সম্মত অসীলা আবার দুই প্রকার। (১) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান ও সৎ আমলকে অসীলা বানানো। অসীলার এই প্রকারের বৈধতার ব্যাপারে আলেমদের মাঝে কোন মতবিরোধ নেই। সেটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় হোক বা তাঁর মৃত্যুর পরে। (২) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় তাঁর দু‘আকে অসীলা বানানো।[১৭] যেমন,

১. জুমু‘আর দিন খুত্ববা চলাকালীন সময়ে এক ব্যক্তি মিম্বরের সোজাসুজি এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বৃষ্টির জন্য দু‘আ করতে বলেছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বৃষ্টির জন্য দু‘আ করেছিলেন।[১৮]

২. একজন অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এসে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করার আবেদন করেছিলেন।[১৯]

৩. একজন কালো দাসী নবী (ﷺ)-এর কাছে মৃগীরোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে বলেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার জন্য দু‘আ করেছিলেন।[২০]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দু‘আর মাধ্যমে যে অসীলা জায়েয ছিল, তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথেই তা শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং একজন মুসলিমের রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবরের কাছে গিয়ে প্রয়োজন পূরণ, পাপ মোচন বা বিপদ দূর করার জন্য তাঁর কাছে দু‘আ করা সম্পূর্ণভাবে না জায়েয। শরী‘আতে এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।  বরং ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সময়ে একবার অনাবৃষ্টি দেখা দিলে তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চাচা আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ডেকে বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করার আবেদন করেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ   رَضِىَ اللهُ عَنْهُكَانَ إِذْ قُحِطُوْا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِيْنَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا قَالَ فَيُسْقَوْنَ

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, লোক যখন অনাবৃষ্টি কষ্টে পতিত হত, তখন ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চাচা আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর অসীলায় আল্লাহর নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমরা আপনার নিকট প্রথমে আমাদের নবীর অসীলা পেশ করতাম আর আপনি আমাদের বৃষ্টি দান করতেন, এখন আমরা আপনার নিকট আমাদের নবীর চাচার অসীলা পেশ করছি। আপনি আমাদের বৃষ্টি দান করুন। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এতে তাঁদেরকে বৃষ্টি দান করা হত।[২১]

সুধী পাঠক! চিন্তুা করুন, যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর তাঁকে অসীলা করে দু‘আ করা জায়েয হত, তাহলে ছাহাবীগণ তাঁদের বাড়ির পাশে কবরে থাকা নবী (ﷺ)-কে ছেড়ে জীবিত আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর দিকে ফিরে যেতেন না। সালাফগণ যেখানে নবী (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর তাঁকে অসীলা করে দু‘আ করা বা চাওয়া বৈধ মনে করতেন না, সেখানে নবী করীম (ﷺ)-এর উম্মত (সালাফে ছালেহীন, অলী-আওলিয়া, ছিদ্দীকিন ও শুহাদায়ে-কেরাম)-কে অসীলা ধরা কি করে জায়েয হয়?

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, পৃ. ৫০; দেওবন্দী আহলে সুন্নাতের আক্বীদা, পৃ. ২৭।
[২]. তিরমিযী, হা/৩৩৭৩, সনদ হাসান।
[৩]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৮২৭, সনদ হাসান; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৬৫৪।
[৪]. তিরমিযী, হা/৩৪৭৯, সনদ হাসান; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৫৯৪।
[৫]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬৯; তিরমিযী, হা/২৫১৬, সনদ ছহীহ; মিশকাত, হা/৫৩০২।
[৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬৯; তিরমিযী, হা/২৫১৬, সনদ ছহীহ; মিশকাত, হা/৫৩০২।
[৭]. মাজদুদ্দীন আবুস সা‘আদাত ইবনুল আছীর, আন-নিহায়াতু ফী গারীবিল হাদীছি ওয়াল আছার, ৫ম খণ্ড (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইলমিয়াহ, ১৩৯৯ হি.), পৃ. ১৮৫; মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, আত-তাওয়াসসুলু আনওয়াঊহু ওয়া আহকামুহ (রিয়ায :  মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১ম সংস্করণ ১৪২১ হি./২০০১ খৃ.), পৃ. ১১।
[৮]. আত-তাওয়াসসুলু আনওয়াঊহু ওয়া আহকামুহ, পৃ. ১১।
[৯]. আন-নিহায়াতু ফী গারীবিল হাদীছি ওয়াল আছার, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৮৫; আত-তাওয়াসসুলু আনওয়াঊহু ওয়া আহকামুহ, পৃ. ১১।
[১০]. মাজদুদ্দীন আবু তাহের মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াকূব আল-ফীরোযাবাদী, আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব (বৈরূত : মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ৮ম সংস্করণ ১৪২৬ হি.), পৃ. ১০৬৮; আত-তাওয়াসসুলু আনওয়াঊহু ওয়া আহকামুহ, পৃ. ১১।
[১১]. জামে‘ঊল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন, ১০ম খণ্ড, পৃ. ২৯০।
[১২]. আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম (দারু ত্বাইয়েবা, ২য় সংস্করণ ১৪২০ হি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১০৩।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৭১৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৩০৩০; তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৮৮।
[১৪]. আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শারহু ছহীহিল বুখারী, ৮ম খণ্ড (বৈরূত : দারুল মা‘আরিফাহ, ১৩৭৯ হিঃ), পৃ. ৩৯৭।
[১৫]. আত-তাওয়াসসুলু আনওয়াঊহু ওয়া আহকামুহু, পৃ. ১৪-১৫।
[১৬]. শারহু তাত্বহীরুল জিনান ওয়াল আরকান আন দারানিশ শিরকি ওয়াল কুফরান, পৃ. ১০২।
[১৭]. শারহু তাত্বহীরুল জিনান ওয়াল আরকান আন দারানিশ শিরকি ওয়াল কুফরান, পৃ. ১০২।
[১৮]. হাদীছটি হল, আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন মিম্বরের সোজাসুজি দরজা দিয়ে (মসজিদে) প্রবেশ করল। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তখন দাঁড়িয়ে খুত্ববা দিচ্ছিলেন। সে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাগুলো চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন, যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তখন তাঁর উভয় হাত তুলে দু‘আ করলেন, اللَّهُمَّ اسْقِنَا ، اللَّهُمَّ اسْقِنَا ، اللَّهُمَّ اسْقِنَا ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দিন’। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তখন আকাশে মেঘমালা, মেঘের চিহ্ন বা কিছুই দেখতে পাইনি। অথচ সাল‘আ (মদীনার একটি পাহাড়) পর্বত ও আমাদের মধ্যে কোন ঘর-বাড়ি ছিল না। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, হঠাৎ সাল‘আ পর্বতের পিছন হতে ঢালের মত মেঘ বেরিয়ে এল এবং তা মধ্য আকাশে পৌঁছে বিস্তৃত হয়ে পড়ল। অতঃপর বর্ষণ শুরু হল। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা ছয়দিন সূর্য দেখতে পাইনি। অতঃপর এক ব্যক্তি পরবর্তী জুমু‘আর দিন সে দরজা দিয়ে (মসজিদে) প্রবেশ করল। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তখন দাঁড়িয়ে খুত্ববা দিচ্ছিলেন। লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাটও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই আপনি আল্লাহর নিকট বৃষ্টি বন্ধের জন্য দু‘আ করুন। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাঁর উভয় হাত তুলে দু‘আ করলেন, اَللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا ، اَللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে, আমাদের উপর নয়; টিলা, পাহাড়, উচ্চভূমি, মালভূমি, উপত্যকা এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন’। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এতে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা (মসজিদ হতে বেরিয়ে) রোদে চলতে লাগলাম। দ্র. ছহীহ বুখারী, হা/১০১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা১৩০৩৯; নাসাঈ, হা/১৫০৪; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৯৯২; মুওয়াত্বা মালেক, হা/৬৫০।  

[১৯]. হাদীছটি হল, ওছমান ইবনু হুনাইফ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক দৃষ্টিশক্তিহীন ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, আপনি আল্লাহ্র নিকট দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাকে সুস্থতা দান করেন। তিনি বললেন, তুমি যদি চাও, আমি আল্লাহ্র নিকট দু‘আ করব; কিন্তু যদি ধৈর্য ধরতে পার, তাহলে তা হবে তোমার পক্ষে উত্তম। সে বলল, আপনি দু‘আ করুন। ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে উত্তমরূপে ওযূ করতে এবং এরূপ দু‘আ করতে বললেন,اللهم إِنِّيْ أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ إِنِّيْ تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّيْ لِيَقْضِيَ لِيْ فِيْ حَاجَتِيْ هَذِهِ اللهم فَشَفِّعْهُ فِيَّ ‘হে আল্লাহ! আপনার নবী মুহাম্মাদ (ﷺ), যিনি রহমতের নবী, তাঁর মাধ্যমে আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি ও  মুখ ফিরাচ্ছি। আমি আপনার মাধ্যমে আমার আল্লাহ্র দিকে মুখ ফিরাচ্ছি, যাতে তিনি আমার এই প্রয়োজন পূর্ণ করেন। হে আল্লাহ! আপনি আমার ব্যাপারে তাঁর সুপারিশ কবুল করুন’। দ্র. তিরমিযী, হা/৩৫৭৮, সনদ ছহীহ; মিশকাত, হা/২৪৯৫।

[২০]. হাদীছটি হল, ‘আত্বা ইবনু আবু রাবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে একবার ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, (আতা!) আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এই কালো মহিলাটি হচ্ছে জান্নাতী। সে একবার নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং উলঙ্গ হয়ে যাই। আল্লাহ্র নিকট আমার জন্য দু‘আ করুন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘তুমি ইচ্ছা করলে ছবর করতে পার। তাহলে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর যদি ইচ্ছা কর আমি তোমার জন্য দু‘আ করব। আল্লাহ যেন তোমাকে আরোগ্য দান করেন। সে বলল, আমি ছবর করব। অতঃপর বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। দু‘আ করুন, আমি যেন উলঙ্গ না হই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার জন্য দু‘আ করলেন’। দ্র. ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৫২, ‘রোগীদের বর্ণনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৭৩৬।

[২১]. ছহীহ বুখারী, হা/১০১০; মিশকাত, হা/১৫০৯।




বিদায় হজ্জের ভাষণ : তাৎপর্য ও মূল্যায়ন (শেষ কিস্তি) - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
ফিলিস্তীন, হে মুসলিম! - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (৫ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
কর্যে হাসানাহ প্রদানের গুরুত্ব ও ফযীলত - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩টি উপায় (শেষ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ - ড. মেসবাহুল ইসলাম
কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
ক্রোধের ভয়াবহতা ও তার শারঈ চিকিৎসা (শেষ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (২য় কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৩য় কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
মাযহাবী গোঁড়ামি ও তার কুপ্রভাব (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : রিদওয়ান ওবাইদ

ফেসবুক পেজ