বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭ অপরাহ্ন

দু‘আ ও যিকর : আল্লাহর অনুগ্রহ ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*


(২য় কিস্তি) 

যিকরের পরিচয়

যিকর (الذِّكْرُ) আরবী শব্দ। এটি মাছদার। অর্থ হল, কোন কিছু স্মরণ করা। কিসাঈ বলেন,الذِّكْرُ بِاللِّسَانِ ضِدُّ الإِْنْصَاتِ وَبِالْقَلْبِ ضِدُّ النِّسْيَانِ ‘যিকর হল মুখে উচ্চারণ করা যা চুপ থাকার বিপরীত এবং অন্তরে স্মরণ করা যা ভুলে যাওয়ার বিপরীত’। কেউ কেউ বলেন, (الذِّكْرُ) শব্দের দু’টি পরিভাষা রয়েছে।

১. الشَّيْءُ يَجْرِي عَلَى اللِّسَانِ أَيْ مَا يُنْطَقُ بِهِ ‘মুখে কোন কিছু উচ্চারণ করা অর্থাৎ যা বলা হয়’। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ذِکۡرُ  رَحۡمَتِ  رَبِّکَ  عَبۡدَہٗ   زَکَرِیَّا  ‘এটা তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের বিবরণ তাঁর বান্দাহ যাকারিয়ার প্রতি’ (সূরা মারইয়াম : ২)।

২. اسْتِحْضَارُ الشَّيْءِ فِي الْقَلْبِ ضِدُّ النِّسْيَانِ ‘অন্তরে কোন কিছু উপস্থিত হওয়া যা ভুলে যাওয়ার বিপরীত’। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَاۤ  اَنۡسٰنِیۡہُ اِلَّا الشَّیۡطٰنُ اَنۡ اَذۡکُرَہٗ  ‘শয়তানই ওর কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল’ (সূরা আল-কাহফ : ৬৩)।[১] এ ভিত্তিতে যিকর দু’ ধরনের। ১. অন্তরে স্মরণ করা ২. মুখে উচ্চারণ করা। প্রত্যেক কথাকে যিকর বলা হয়। আবার অন্তর ও মুখের মাধ্যমেও যিকর হয়। মহান আল্লাহ বলেন,

فَاِذَا قَضَیۡتُمۡ مَّنَاسِکَکُمۡ فَاذۡکُرُوا اللّٰہَ  کَذِکۡرِکُمۡ اٰبَآءَکُمۡ اَوۡ اَشَدَّ ذِکۡرًا ؕ فَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّقُوۡلُ رَبَّنَاۤ  اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا وَ مَا لَہٗ فِی الۡاٰخِرَۃِ  مِنۡ خَلَاقٍ.

‘অনন্তর যখন তোমরা তোমাদের (হজ্জের) অনুষ্ঠানগুলো সম্পন্ন করে ফেলো তখন যেরূপ তোমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে স্মরণ করতে, তদ্রƒপ আল্লাহকে স্মরণ কর বরং তদপেক্ষা দৃঢ়তর ভাবে স্মরণ কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২০০)।

যিকর-এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। ১. মুখ থেকে যা উচ্চারণ করা হয়। ২. অন্তরে কোন কিছু স্মরণ করা। ৩. কোন জিনিস সম্পর্কে সতর্ক করা। শরী‘আতের পরিভাষায় যিক্র হল, বান্দা তার রবকে স্মরণ করা। হোক তা তাঁর নাম, গুণ অথবা কাজ নিয়ে, প্রশংসা বা কুরআন তেলাওয়াত করে, এককত্বের ঘোষণা করে, তাঁর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করে বা তার কাছে কিছু চেয়ে।[২]

যিক্র দু’ প্রকার। যথা- কওলী বা কথার মাধ্যমে যিক্র ও আমলী বা কাজের মাধ্যমে যিক্র। প্রথম প্রকার যিকরের মধ্যে রয়েছে- কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম ও ছিফাতসমূহের আলোচনা ও স্মরণ করা এবং তাঁর এককত্বের ঘোষণা ইত্যাদি। আর দ্বিতীয় প্রকারে রয়েছে- ইলম অর্জন করা ও শিক্ষা দেয়া, আল্লাহর হুকুম-আহকাম ও আদেশ-নিষেধ মেনে চলা ইত্যাদি।[৩] আসলে যিকর শব্দটি ব্যাপক অর্থবহ। আল-কুরআনে এ শব্দটি বিশেষ বিশেষ অর্থ বহন করে। যেমন-

১. কুরআন :  আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ  وَ  اِنَّا  لَہٗ  لَحٰفِظُوۡنَ ‘নিশ্চয় আমরাই যিকর (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক’ (সূরা আল-হিজর : ৯)।

২. লাওহে মাহফুয : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ لَقَدۡ کَتَبۡنَا فِی الزَّبُوۡرِ مِنۡۢ بَعۡدِ الذِّکۡرِ اَنَّ الۡاَرۡضَ یَرِثُہَا عِبَادِیَ الصّٰلِحُوۡنَ ‘আর অবশ্যই আমরা যিকর এর পর যাবূরে লিখে দিয়েছি যে, যমীনের অধিকারী হবে আমার যোগ্য বান্দারাই’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ১০৫)। সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যিকর হল যা আসমানে রয়েছে। মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যিকর হল আল্লাহর নিকট মূল যে কিতাব রয়েছে।[৪] আর আসমানের উপর আল্লাহর নিকট মূল কিতাবই হল লাওহে মাহফুয।

৩. ফেরেশতা : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَالۡمُلۡقِیٰتِ ذِکۡرًا ‘শপথ তাদের যারা মানুষের অন্তরে পৌঁছে দেয় উপদেশ’ (সূরা আল-মুরসালাত : ৫)। এখানে ফেরেশতা উদ্দেশ্য।[৫]

৪. তাওরাত ও ইঞ্জীলের অভিজ্ঞ আলেম : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا  مِنۡ قَبۡلِکَ اِلَّا رِجَالًا نُّوۡحِیۡۤ  اِلَیۡہِمۡ فَسۡـَٔلُوۡۤا اَہۡلَ الذِّکۡرِ  اِنۡ کُنۡتُمۡ  لَا  تَعۡلَمُوۡنَ ‘আর আপনার আগে আমরা অহীসহ কেবল পুরুষদেরকেই পাঠিয়েছিলাম, সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর যদি না জান’ (সূরা আন-নাহল : ৪৩)। এখানে যিকর অর্থ আহলে কিতাব।[৬]

৫. সম্মান, শ্রেষ্ঠত্ব, উল্লেখ, আলোচনা, বিবরণ এবং উপদেশ : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, صٓ  وَ  الۡقُرۡاٰنِ ذِی الذِّکۡرِ  ‘ছোয়াদ, শপথ উপদেশপূর্ণ কুরআনের (সূরা ছোয়াদ : ১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَقَدۡ اَنۡزَلۡنَاۤ  اِلَیۡکُمۡ  کِتٰبًا فِیۡہِ  ذِکۡرُکُمۡ ؕ اَفَلَا  تَعۡقِلُوۡنَ ‘আমরা তো তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি কিতাব যাতে আছে তোমাদের আলোচনা’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ১০)।[৭]

৬. সীমালংঘনকারীদের জন্য আল্লাহর শাস্তি : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَفَنَضۡرِبُ عَنۡکُمُ  الذِّکۡرَ صَفۡحًا اَنۡ کُنۡتُمۡ  قَوۡمًا مُّسۡرِفِیۡنَ ‘আমরা কি তোমাদের থেকে এ উপদেশবাণী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেব এ কারণে যে, তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়? (সূরা আয-যুখরুফ : ৫)। এখানে যিকর অর্থ শাস্তি।[৮]

৭. ফরয ছালাত : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, رِجَالٌ ۙ لَّا تُلۡہِیۡہِمۡ تِجَارَۃٌ  وَّ لَا بَیۡعٌ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ ‘এমন সব লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত রাখে না’ (সূরা আন-নূর : ৩৭)। এখানে যিকর অর্থ ছালাত প্রতিষ্ঠার জন্য মসজিদে উপস্থিত হওয়া।[৯]

৮. জুমু‘আর ছালাত : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰہِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ.

‘হে ঈমানদারগণ! জুমু‘আর দিনে যখন ছালাতের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর’ (সূরা আল-জুমু‘আ : ৯)। এখানে যিকর অর্থ জুমু‘আর ছালাত।[১০]

৯. কুরআনের বিধি-বিধান : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡ ذِکۡرِیۡ فَاِنَّ لَہٗ مَعِیۡشَۃً ضَنۡکًا وَّ نَحۡشُرُہٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ اَعۡمٰی ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমরা তাকে ক্বিয়ামতের দিন জমায়েত করব অন্ধ অবস্থায়’ (সূরা ত্বা-হা : ১২৪)।[১১]

১০. তাসবীহ-তাহলীল করা : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاِذَا قَضَیۡتُمُ الصَّلٰوۃَ فَاذۡکُرُوا اللّٰہَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِکُمۡ ‘অতঃপর যখন তোমরা ছালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে’ (সূরা আন-নিসা : ১০৩)।

যিক্রের হুকুম

যিকির করা মুস্তাহাব। তবে কিছু ক্ষেত্রে শরী‘আতে নিষেধ আছে। যেমন পেশাব-পায়খানা করার সময় এবং খুত্ববাহ চলাকালীন সময়। মুস্তাহাবের দলীল হিসাবে মহান আল্লাহ বহু আয়াতে যিক্র করার নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং তা থেকে গাফেল থাকতে ও ভুলে যেতে নিষেধ করেছেন। কখনো কখনো যিক্র ওয়াজিব হয়। যেমন, ছালাতের মধ্যে যিক্র-আযকার, কুরআন তেলাওয়াত, আযান, ইক্বামত, সালামের জবাব, যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলা। কখনো কখনো যিক্র করা হারাম হয়। যা শিরকের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন জাহিলি সমাজের হজ্জের তালবিয়া বলা। আবার খাছ করে কিছু সময় যিক্র করা হারাম। যেমন খুত্ববাহ চলাকালীন সময় অর্থাৎ জুমু‘আর ছালাত।[১২]

যিক্রের ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন, اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ  وَ  اِنَّا  لَہٗ  لَحٰفِظُوۡنَ ‘নিশ্চয় আমরাই যিক্র (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক’ (সূরা আল-হিজর : ৯)। মহান আল্লাহ বলেন, فَاذۡکُرُوۡنِیۡۤ اَذۡکُرۡکُمۡ  وَ اشۡکُرُوۡا لِیۡ وَ لَا تَکۡفُرُوۡنِ ‘অতএব তোমরা আমাকেই স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও ও অবিশ্বাসী হয়ো না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫২)। মহান আল্লাহ বলেন, وَ اِذَا قَامُوۡۤا اِلَی الصَّلٰوۃِ قَامُوۡا کُسَالٰی ۙ یُرَآءُوۡنَ النَّاسَ وَ لَا  یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰہَ  اِلَّا  قَلِیۡلًا ‘যখন তারা ছালাতের জন্য দ-ায়মান হয় তখন লোকদেরকে দেখাবার জন্য আলস্যভরে দ-ায়মান হয়ে থাকে এবং আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে থাকে’ (সূরা আন-নিসা : ১৪২)। মহান আল্লাহ বলেন, صٓ  وَ  الۡقُرۡاٰنِ ذِی الذِّکۡرِ  ‘ছোয়াদ, শপথ উপদেশপূর্ণ কুরআনের’ (সূরা ছোয়াদ : ১)। মহান আল্লাহ বলেন, نَسُوا اللّٰہَ  فَنَسِیَہُمۡ  ‘তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, সুতরাং তিনিও তাদেরকে ভুলে গিয়েছেন’ (সূরা আত-তাওবা : ৬৭)। মহান আল্লাহ বলেন,وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ  لِذِکۡرِیۡ  ‘আমার স্মরণার্থে ছালাত কায়েম করুন’ (সূরা ত্বা-হা : ১৪)।  মহান আল্লাহ বলেন, رِجَالٌ ۙ لَّا تُلۡہِیۡہِمۡ تِجَارَۃٌ  وَّ لَا بَیۡعٌ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ ‘এমন সব লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত রাখে না’ (সূরা আন-নূর : ৩৭)। মহান আল্লাহ বলেন, فَاِذَا قَضَیۡتُمُ الصَّلٰوۃَ فَاذۡکُرُوا اللّٰہَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِکُمۡ ‘অতঃপর যখন তোমরা ছালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে’ (সূরা আন-নিসা : ১০৩)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَسُبۡحٰنَ اللّٰہِ  حِیۡنَ تُمۡسُوۡنَ وَ حِیۡنَ تُصۡبِحُوۡنَ - وَ لَہُ الۡحَمۡدُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ عَشِیًّا وَّ  حِیۡنَ  تُظۡہِرُوۡنَ.

‘অতএব তোমরা আল্লাহর তাসবীহ কর যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে এবং সকালে উঠবে। আর অপরাহ্ণে ও যুহরের সময়ে; আর আসমান ও যমীনে সকল প্রশংসা একমাত্র তাঁরই’ (সূরা আর-রূম : ১৭-১৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَاالَّذِیۡنَ  اٰمَنُوا اذۡکُرُوا اللّٰہَ  ذِکۡرًا کَثِیۡرًا - وَّ سَبِّحُوۡہُ  بُکۡرَۃً  وَّ  اَصِیۡلًا.

‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা কর কর’ (সূরা আল-আহযাব : ৪১-৪২)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلۡ مَنۡ یَّکۡلَؤُکُمۡ  بِالَّیۡلِ وَ النَّہَارِ مِنَ الرَّحۡمٰنِ ؕ بَلۡ ہُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ رَبِّہِمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ.

‘বল, ‘রাতে এবং দিনে পরম করুণাময় হতে কে তোমাদেরকে রক্ষা করবে? তবুও তারা তাদের রবের স্মরণ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৪২)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَاصۡبِرۡ عَلٰی مَا یَقُوۡلُوۡنَ وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ قَبۡلَ طُلُوۡعِ الشَّمۡسِ وَ قَبۡلَ الۡغُرُوۡبِ.

‘অতএব এরা যা বলে তাতে আপনি ধৈর্য ধারণ করুন এবং সূর্য উদয়ের পূর্বে ও অস্তমিত হওয়ার পূর্বে আপনি আপনার রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করুন’ (সূরা ক্বাফ : ৩৯)। মহান আল্লাহ বলেন,

اِنَّا سَخَّرۡنَا الۡجِبَالَ مَعَہٗ یُسَبِّحۡنَ بِالۡعَشِیِّ  وَ  الۡاِشۡرَاقِ.

‘পর্বতমালাকে অনুগত করেছিলাম, তার সাথে এগুলো সকালÑসন্ধ্যায় আমার তাসবীহ পাঠ করত’ (সূরা ছোয়াদ : ১৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَاصۡبِرۡ عَلٰی مَا یَقُوۡلُوۡنَ وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ قَبۡلَ طُلُوۡعِ الشَّمۡسِ وَ قَبۡلَ غُرُوۡبِہَا ۚ وَ مِنۡ اٰنَآیِٔ الَّیۡلِ فَسَبِّحۡ وَ اَطۡرَافَ النَّہَارِ لَعَلَّکَ تَرۡضٰی.

‘সুতরাং এরা যা বলে তার উপর ধৈর্য ধারণ করুন এবং তাসবীহ পাঠ করুন আপনার রবের প্রশংসা বর্ণনার মাধ্যমে, সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং তাসবীহ পাঠ করুন রাতের কিছু অংশে ও দিনের প্রান্তসমূহে, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হতে পারেন’ (সূরা ত্ব-হা : ১৩০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, 

وَ اصۡبِرۡ نَفۡسَکَ مَعَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ رَبَّہُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ  وَ الۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَہٗ  وَ لَا  تَعۡدُ عَیۡنٰکَ عَنۡہُمۡ ۚ تُرِیۡدُ زِیۡنَۃَ الۡحَیٰوۃِ  الدُّنۡیَا ۚ وَ لَا تُطِعۡ مَنۡ  اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَہٗ عَنۡ  ذِکۡرِنَا وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ  وَ کَانَ   اَمۡرُہٗ   فُرُطًا.

‘আর আপনি নিজকে ধৈর্যশীল রাখুন তাদের সাথে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে। আপনার দুচোখ যেন তাদের থেকে ঘুরে না যায়। আর ওই ব্যক্তির আনুগত্য করবেন না, যার অন্তরকে আমরা আমার যিক্র থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে’ (সূরা আল-কাহফ : ২৮)।

عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا جُلُوْسًا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَنَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ فَقَالَ إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لَا تُضَامُوْنَ فِيْ رُؤْيَتِهِ فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لَا تُغْلَبُوْا عَلَى صَلَاةٍ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَا فَافْعَلُوْا ثُمَّ قَرَأَ (وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ قَبۡلَ طُلُوۡعِ الشَّمۡسِ وَ قَبۡلَ غُرُوۡبِہَا).

জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে বসেছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাত্রিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে যেমন তোমরা এই চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। আল্লাহকে দেখতে তোমরা কোন প্রকার বাধাপ্রাপ্ত হবে না। সুতরাং তোমরা সাধ্যমত চেষ্টা করবে সূর্যোদয়ের পূর্বের ছালাত সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পরের ছালাত সূর্যাস্তের পরে আদায় করতে যেন ব্যর্থ না হও। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেন যে, ‘সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পরে তার প্রভুর পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করুন’ (সূরা ত্ব-হা, আয়াত : ১৩০)।[১৩]

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ لَأَنْ أَقْعُدَ أَذْكُرُ اللهَ وَأُكَبِّرُهُ وَأَحْمَدُهُ وَأُسَبِّحُهُ وَأُهَلِّلُهُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَعْتِقَ رَقَبَتَيْنِ أَوْ أَكْثَرَ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ وَمِنْ بَعْدِ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَعْتِقَ أَرْبَعَ رِقَابٍ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ.

আবূ উমামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, (ফজর ছালাতের পর) বসে বসে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর যিকির, তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা, তার প্রশংসা, তাসবীহ পাঠ ও ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করা আমার কাছে, ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম)-এর বংশের দুই বা ততোধিক গোলাম আজাদ করার চেয়েও উত্তম এবং আছরের পর থেকে সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত এসব পাঠ করা আমার কাছে, ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম)-এর বংশের চার জন গোলাম আযাদ করার চেয়েও উত্তম’।[১৪]

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি (ﷺ) বলেছেন, وَاسْتَعِيْنُوا بِالْغَدْوَةِ وَالرَّوْحَةِ وَشَيْءٍ مِنَ الدُّلْجَةِ ‘তোমরা সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদাত সহযোগে) সাহায্য চাও’।[১৫]

عَنْ عَمْرِو بْنِ عَبسَةَ السُّلَمِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ أَنَّهُ قَالَ مَا تَسْتَقِلُّ الشَّمْسُ فَيَبْقَى شَيْءٌ مِنْ خَلْقِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا سَبَّحَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَحَمِدَهُ إِلَّا مَا كَانَ مِنَ الشَّيَطَانِ.

আমর ইবনু আবাসা আস-সুলামী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যেকোন দিন শুরু হয় এবং তাতে আল্লাহর কোন সৃষ্টি তাঁর জন্য তাসবীহ পাঠ ও প্রশংসা করে, তাতে শয়তান বনী আদমের কোন ক্ষতি করতে পারে না।[১৬]

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَبِيْتُ عَلَى ذِكْرٍ طَاهِرًا فَيَتَعَارَّ مِنَ اللَّيْل فَيسْأَلُ اللهُ خَيْرًا إِلَّا أَعْطَاهُ اللهُ إِيَّاهُ.

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে কোন মুসলিম পবিত্র অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে সন্ধ্যায় শয়ন করে এবং রাতে উঠে আল্লাহর নিকট কোনরূপ কল্যাণ কামনা করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে তা দান করেন।[১৭]

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِىَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلَاثَ عُقَدٍ يَضْرِبُ عَلَى كُلِّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيْلٌ فَارْقُدْ فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللهَ اِنْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَإِنْ تَوَضَّأَ اِنْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَإِنْ صَلَّى اِنْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَأَصْبَحَ نَشِيْطًا طَيِّبَ النَّفْسِ وَإِلَّا أَصْبَحَ خَبِيْثَ النَّفْسِ كَسْلَانًا.

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ঘুমায়, তখন শয়তান তার মাথার পিছন দিকে তিনটি গিরা দেয় এবং প্রত্যেক গিরার উপর প্রহার করে আর বলে, এখনও অনেক রাত্রি আছে, সুতরাং তুমি ঘুমাও। যদি সে জাগে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে, তাহলে একটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর যদি সে ওযূ করে, তাহলে আরো একটি গিরা খুলে যায়। এরপর যদি সে ছালাত আদায় করে, তবে অপর গিরাটিও খুলে যায়, এভাবে সে সকালে উঠে প্রফুল্ল মন ও পবিত্র অন্তরে অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষিত অন্তর ও অলস মনে।[১৮]

মসজিদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّوَجَلَّ وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ ‘এটা শুধু আল্লাহর যিক্র, ছালাত ও কুরআন পাঠের জন্য’।[১৯]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِيْ بِيْ وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِيْ فَإِنْ ذَكَرَنِيْ فِيْ نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِيْ نَفْسِيْ وَإِنْ ذَكَرَنِيْ فِيْ مَلَأٍ ذَكَرْتُهُ فِيْ مَلَأٍ خَيْرٍ مِّنْهُم.

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার বান্দার নিকটে সেরূপ, যেরূপ সে আমাকে ভাবে। আর আমি তার সাথেই থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে মনে মনে স্মরণ করে, তখন আমিও তাকে আমার মনে মনে স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে জনসমাজে স্মরণ করে, তাহলে আমিও তাকে তাদের চেয়ে উত্তম ব্যক্তিদের মাঝে স্মরণ করি।[২০]

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, الدُّنْيَا مَلْعُوْنَةٌ مَلْعُوْنٌ مَا فِيْهَا إِلَّا ذِكْرَ اللهِ وَمَا وَالَاهُ أَوْ عَالِمًا أَوْ مُتَعَلِّمًا ‘দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবই অভিশপ্ত, কিন্তু আল্লাহর যিক্র এবং তাঁর সাথে সংগতিপূর্ণ অন্যান্য (যে সকল নেকীর কাজ আল্লাহ ভালোবাসেন) আমল বা আলিম ও ইলম অন্বেষণকারী ব্যতীত’।[২১]

আয়েশা সিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

مَا مِنْ سَاعَةٍ تَمُرّ بِابْنِ آدَمَ لَمْ يَذْكُرِ اللهَ فِيْهَا إِلَّا تَحَسَّرَ عَلَيْهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘বনী আদমের যে সময়টুকু আল্লাহর যিক্র ব্যতীত অতিবাহিত হয়, ক্বিয়ামতের দিন সে তার জন্য আফসোস করবে’।[২২]

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন,

ثَلَاثَةٌ لَا يَرُدُّ اللهُ دُعَاءَهُمْ الذَّاكِرُ اللهَ كَثِيْرًا وَدَعْوَةُ الْمَظْلُوْمِ وَالإِمَامُ الْمُقْسِطُ.

‘তিন শ্রেণীর লোকের দু‘আ কখনো ফেরত দেয়া হয় না, ১. আল্লাহর অধিক যিক্রকারী, ২. মাযলুমের দু‘আ, ৩. ন্যায়পরায়ণ ইমাম।[২৩]

আল্লাহর যিক্রকারী উত্তম মুমিন

আব্দুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, বনু উজরাহর তিন জন ব্যক্তি নবী (ﷺ)-এর নিকটে এসে ইসলাম গ্রহণ করল। রাবী বলেন, নবী (ﷺ) বলেন, কে তাদের দায়িত্বভার নিবে? তালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘আমি’। রাবী বলেন, তারা তালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বাড়িতে আশ্রয় নিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যুদ্ধের জন্য একটি কাফেলা প্রেরণ করলে, তাদের একজন তাতে শরীক হয়ে শাহাদাত বরণ করল। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরেকটি কাফেলা প্রেরণ করলেন, যাতে অপর একজন শরীক হয়ে শাহাদাত বরণ করল। রাবী বলেন, বাকী অন্যজন বিছানাতেই মৃত্যুবরণ করল। তালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি (স্বপ্নে) দেখলাম এই তিনজন ব্যক্তি জান্নাতে অবস্থান করছে। কিন্তু যে ব্যক্তিটি বিছানাতে মৃত্যুবরণ করেছিল সে সবার সম্মুখে রয়েছে। দেখলাম, শেষে শহীদ হওয়া ব্যক্তিটি তার পাশেই রয়েছে। আর যে ব্যক্তিটি সর্বপ্রথম শহীদ হয়েছিল তাকে সর্বশেষে দেখলাম। তালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, বিষয়টি আমার মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি করল। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকটে গিয়ে বিষয়টি তাঁকে জানালাম। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,

وَمَا أَنْكَرْتَ مِنْ ذَلِكَ؟ لَيْسَ أَحَدٌ أَفْضَلُ عِنْدَ اللهِ مِنْ مُؤْمِنٍ يُعَمَّرُ فِي الْإِسْلاَمِ لِتَسْبِيْحِهِ وَتَكْبِيْرِهِ وَتَهْلِيْلِهِ .

‘তুমি বিষয়টিকে অস্বীকার করতে পারবে না। মুমিনদের মধ্য হতে যাকে তাসবীহ, তাকবীর ও তাহলীল পাঠের মাধ্যমে দীর্ঘজীবী করা হয়েছে, সেই উত্তম মুমিন’।[২৪]

যিক্রকারীদের ক্ষমা করা হয় এবং তাদের মন্দকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করা

عَنْ سَهْلِ بْنِ حَنْظَلَةَ ঃ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِسًا يَذْكُرُوْنَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فِيْهِ فَيَقُوْمُوْنَ حَتَّى يُقَالَ لَهُمْ قُوْمُوْا قَدْ غَفَرَ اللهُ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَبُدِّلَتْ سَيِّئَاتِكُمْ حَسَنَاتٍ.

সাহল ইবনু হানযালা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কিছু লোক কোন মজলিসে বসে আল্লাহকে স্মরণ করে বা আল্লাহর যিক্র করে অতঃপর তারা সেখানে অবস্থান করে। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে বলা হয়, তোমরা দাঁড়িয়ে যাও; আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তোমাদের মন্দকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।[২৫]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)



* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[১]. লিসানুল আরব, ৪র্থ খ-, পৃ. ৩০৮; তাজুল ঊরূস মিন জাওয়াহিরি ক্বমূস, ১১তম খ-, পৃ. ৩৭৭; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাতু, ২১তম খ-, পৃ. ২১৯; আবূ মানছূর মুহাম্মাদ আযহারী, তাহযীবুল লুগাহ (বৈরূত : দারু ইহইয়াইত তুরাছিল আরাব, ২০০১ হি.), ১০ম খ-, পৃ. ৯৪।

[২]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাতু, ২১তম খ-, পৃ. ২২০।

[৩]. ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, কুরআনুল কারীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর), ১ম খ-, পৃ. ১৪৩-১৪৪।  

[৪]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৫ম খ-, পৃ. ৩৮৪-৩৮৫।

[৫]. জামি‘ঊল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন, ২৩তম খ-, পৃ. ৫৮৮।

[৬]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৪র্থ খ-, পৃ. ৫৭৩।

[৭]. তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান, পৃ. ৫১৯।

[৮]. জামি‘ঊল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন, ২০তম খ-, পৃ. ৫৪৮।

[৯]. মা‘আলিমুত তানযীল, ৬ষ্ঠ খ-, পৃ. ৫১।

[১০]. জামি‘ঊল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন, ২২তম খ-, পৃ. ৬৩৭; মা‘আলিমুত তানযীল, ৮ম খ-, পৃ. ১১৫; তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান, পৃ. ৮৬৩।

[১১]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৫ম খ-, পৃ. ৩২২-৩২৩।

[১২]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাতু, ২১তম খ-, পৃ. ২২৩।

[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৫৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৩৩; মিশকাত, হা/৫৬৫৫।

[১৪]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৯৪; সনদ হাসান।

[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৯।

[১৬]. ইবনুস সুন্নী, ‘আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইলাহ, হা/১৪৮, ১ম খ-, পৃ. ২৮১; সনদ হাসান; ছহীহুল জামে, হা/৫৫৯৯।

[১৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১০১; আবূ দাঊদ, হা/৫০৪২; সনদ ছহীহ।

[১৮]. ছহীহ বুখারী, হা/১১৪২; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৭৬; মিশকাত, হা/১২১৯।

[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/২২১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৫; মিশকাত, হা/৪৯২।

[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৪০৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৫; মিশকাত, হা/২২৬৪।

[২১]. ইবনু মাজাহ, হা/৪১১২; সনদ হাসান।

[২২]. হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৫/৩৬২ পৃঃ; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৫১১; সনদ ছহীহ; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭২০।

[২৩]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৩৫৮; সনদ হাসান, আল-জামে‘উছ ছাগীর, হা/৩০৬৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১২১১।

[২৪]. মুসনাদে আবু ইয়া‘লা, হা/৬৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪০১; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬৫৪।

[২৫]. মু‘জামুল কাবীর, হা/৬০৩৯; ছহীহুল জা‘মেঈ, হা/৫৬১০; সনদ ছহীহ। 




প্রসঙ্গসমূহ »: দু‘আ
আল-কুরআনের প্রতি ঈমান আনয়নের স্বরূপ - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৭ম কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২০তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার (১২তম কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
ইসলামের দৃষ্টিতে রোগর চিকিৎসা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি (শেষ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ক্যারিয়ার : শিক্ষক নিবন্ধনের প্রস্তুতির ধরন ও বিষয়াবলী - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ (৩য় কিস্তি) - ড. মেসবাহুল ইসলাম
বিদ‘আত পরিচিতি (২৭তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও তার সমাধান (৩য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
দলাদলির কুপ্রভাব : উত্তরণের উপায় (শেষ কিস্তি) - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী

ফেসবুক পেজ