সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন

মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*


(৯ম কিস্তি)

আক্বীদা-৪ : আল্লাহর দুনিয়ার আসমানে অবতরণ এবং ক্বিয়ামতের দিন বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য নেমে আসা

মাতুরীদীরা (জাহমিয়া, মু‘তাযিলা ও আশ‘আরীরাসহ[১]) আল্লাহর দুনিয়ার আসমানে অবতরণ এবং (ক্বিয়ামতের দিন বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য) নেমে আসাকে অস্বীকার ও অপব্যাখ্যা করে। তারা বলে,

ولا يجوز أن يوصف الله تعالى بالمجئ والذهاب لأن المجئ والذهاب من صفات المخلوقين وأمارات المحدثين وهما صفتان منفيتان عن الله تعالى 

‘আল্লাহর জন্য আসা-যাওয়ার গুণ বর্ণনা করা বৈধ নয়। কেননা আসা-যাওয়া সৃষ্টির গুণ এবং কথকের (যারা কথা বলে) নিদর্শন। আর এ দু’টি গুণ আল্লাহ থেকে নির্বাসিত’।[২] তারা আরো বলে যে, ‘আল্লাহর জন্য যখন আসা-যাওয়ার গুণ নির্ধারণ করা হবে, তখন আল্লাহর জন্য স্থানান্তর এবং অস্তমিত হওয়া অপরিহার্য হবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা অস্তমিতদের মধ্যে গণ্য হবেন। অথচ ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) বলেছেন[৩], لَاۤ  اُحِبُّ الۡاٰفِلِیۡنَ ‘আমি অস্তমিত বস্তুকে ভালোবাসি না’ (সূরা আল-আন‘আম : ৭৬)।[৪] এই আয়াত দ্বারা তারা দলীল গ্রহণ করেছে। যেহেতু অস্তমিতদেরকে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) রব হিসাবে গ্রহণ করেননি। অতএব আল্লাহর জন্য অবতরণ এবং আসা-যাওয়ার গুণ বর্ণনা করা বৈধ নয়। তারা এই আক্বীদা পোষণ করতে গিয়ে অন্যান্য আয়াতেরও অপব্যাখ্যা করে। নি¤েœ কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হল।

১. আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَّ  جَآءَ  رَبُّکَ وَ الۡمَلَکُ صَفًّا صَفًّا ‘যখন তোমার প্রতিপালক আগমন করবেন, আর ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে (থাকবে)’ (সূরা আল-ফাজর : ২২)। এখানে ‘তোমার প্রতিপালক আগমন করবে’-এর অর্থ হল- أي أمر ريك ‘তোমার প্রতিপালকের আদেশ আগমন করবে’।[৫]

২. হাদীছে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক দিন এবং রাত্রীতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। এই হাদীছের অপব্যাখ্যা করে তারা বলে, ‘আল্লাহর অবতরণের অর্থ হল- الاطلاع والإقبال على عباده يعني ينظر إلى عباد بالرحمة ‘তাঁর বান্দাদেরকে অবহিত করা এবং তাদের প্রতি মনোযোগ দেয়া। অর্থাৎ বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেয়া’।[৬]

পর্যালোচনা

প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর বড়ত্ব ও সম্মানের জন্য যেভাবে নেমে আসা শোভা পায়, তিনি সেভাবেই নেমে আসেন। কুরআন ও হাদীছ থেকে আল্লাহর দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করা ও (ক্বিয়ামতের দিন বিচার করার জন্য) নেমে আসার দলীল পাওয়া যায়। আল্লাহর অবতরণ ও আসা ছিফাতে ফে‘লিয়া তথা কর্মগত গুণের অন্তর্ভুক্ত। তবে আল্লাহর নেমে আসা সৃষ্টির নেমে আসার সাথে তুলনীয় নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَیۡسَ کَمِثۡلِہٖ  شَیۡءٌ ۚ وَ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ‘তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (সূরা শুরা : ১১)। হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُوْلُ مَنْ يَّدْعُوْنِىْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ مَنْ يَّسْأَلُنِىْ فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَّسْتَغْفِرُنِىْ فَأَغْفِرَ لَهُ  

‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতেই দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন, যখন রাত্রির শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে এবং বলতে থাকেন, কে আমায় ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দিব? কে আমার নিকট কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব? এবং কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?[৭]

ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ثبوت النزول الإلهي إلى سماء الدنيا على ما يليق بجلال الله ‘আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতে দুনিয়ার আসমানে তাঁর নেমে আসা সুসাব্যস্ত’।[৮]  

মাতুরীদীদের অপব্যাখ্যা সম্পর্কে ছালেহ আল-ফাওযান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর নেমে আসাকে তাঁর রহমত বা আদেশ আগমণ করার দ্বারা ব্যাখ্যা করে, তাদের ব্যাখ্যা সঠিক নয়। কারণ আসল হচ্ছে শব্দের প্রকৃত অর্থ গ্রহণ করা এবং প্রকৃত অর্থ বাদ না দেয়া। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, مَنْ يَّدْعُوْنِىْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ ‘কে আমার নিকট দু‘আ করবে, আমি তার দু‘আ কবুল করব’। এখান থেকে কি এই কথা বুঝা যায়, আল্লাহর রহমত বা তাঁর আদেশ এইভাবে শেষ রাতে ডাকাডাকি করে এবং কথা বলে?[৯]

দুনিয়ার আসমানে নেমে আসার ন্যায় আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতে ক্বিয়ামতের ময়দানে বান্দার হিসাব-নিকাশ করার জন্য আগমন করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ہَلۡ یَنۡظُرُوۡنَ  اِلَّاۤ  اَنۡ یَّاۡتِیَہُمُ اللّٰہُ فِیۡ ظُلَلٍ مِّنَ الۡغَمَامِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ قُضِیَ الۡاَمۡرُ ؕ وَ  اِلَی اللّٰہِ تُرۡجَعُ  الۡاُمُوۡرُ

‘তারা শুধু এ অপেক্ষাই করছে যে, আল্লাহ তা‘আলা সাদা মেঘমালার ছায়াতলে তাদের নিকট সমাগত হবেন আর ফেরেশতারাও (আসবেন), সমস্ত কার্যের নিষ্পতি করা হবে এবং আল্লাহরই নিকট সমস্ত কার্য প্রত্যাবর্তিত হয়ে থাকে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২১০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ہَلۡ یَنۡظُرُوۡنَ  اِلَّاۤ  اَنۡ تَاۡتِیَہُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ اَوۡ  یَاۡتِیَ  رَبُّکَ ‘তারা কি শুধু এ প্রতীক্ষায় রয়েছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতা আসবে? কিংবা স্বয়ং তোমার প্রতিপালক আসবেন?’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৫৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَّ  جَآءَ  رَبُّکَ وَ الۡمَلَکُ صَفًّا صَفًّا ‘যখন তোমার প্রতিপালক আগমন করবেন, আর ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে (থাকবে)’ (সূরা আল-ফাজর : ২২)। এখানে প্রতিপালক আগমন করার অর্থ সরাসরি আল্লাহ তা‘আলা নিজেই ক্বিয়ামতের দিন বান্দাদের হিসাব-নিকাশ করার জন্য আগমন করবেন’।[১০]

ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ذكر مجئ الله سبحانه وتعالى لفصل القضاء بين عباده على ما يليق بجلاله ‘ক্বিয়ামতের দিন বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা সেভাবেই নেমে আসবেন, যেভাবে নামা তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয়’।[১১]  

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার দিকে আগমন ও আসার যে সম্বন্ধ করা হয়েছে, তা দুই প্রকার। ১. مطلق  বা সাধারণ ও কোন কিছু ছাড়াই আগমন করা ২. مقيد বা কয়েদযুক্ত তথা কোন কিছু নিয়ে আগমন করা।[১২]

১. مطلق  বা সাধারণ ও কোন কিছু ছাড়াই আগমন করা

আল্লাহর দিকে যেই মুতলাক (সাধারণ) আগমণের সম্বন্ধ করা হয়েছে, তা দ্বারা সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার আগমণ উদ্দেশ্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

ہَلۡ یَنۡظُرُوۡنَ  اِلَّاۤ  اَنۡ یَّاۡتِیَہُمُ اللّٰہُ فِیۡ ظُلَلٍ مِّنَ الۡغَمَامِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ قُضِیَ الۡاَمۡرُ ؕ وَ  اِلَی اللّٰہِ تُرۡجَعُ  الۡاُمُوۡرُ

‘তারা শুধু এ অপেক্ষাই করছে যে, আল্লাহ তা‘আলা সাদা মেঘমালার ছায়া তলে তাদের নিকট সমাগত হবেন আর ফেরেশতারাও (আসবেন), সমস্ত কার্যের নিষ্পতি করা হবে এবং আল্লাহরই নিকট সমস্ত কার্য প্রত্যাবর্তিত হয়ে থাকে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২১০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَّ  جَآءَ  رَبُّکَ وَ الۡمَلَکُ صَفًّا صَفًّا ‘যখন তোমার প্রতিপালক আগমন করবেন, আর ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে (থাকবে)’ (সূরা আল-ফাজর : ২২)।

২. مقيد বা কয়েদযুক্ত তথা কোন কিছু নিয়ে আগমন করা

আল্লাহর আগমণ দ্বারা যদি তাঁর রহমত, আযাব এবং অনুরূপ অন্য কিছু আসা উদ্দেশ্য হয়, তখন সেই আগমণকে কয়েদযুক্ত করা হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَ لَقَدۡ جِئۡنٰہُمۡ بِکِتٰبٍ فَصَّلۡنٰہُ عَلٰی عِلۡمٍ ہُدًی وَّ رَحۡمَۃً  لِّقَوۡمٍ  یُّؤۡمِنُوۡنَ ‘আর আমরা তাদের নিকট এমন একখানা কিতাব পৌছিয়ে ছিলাম যাকে আমরা জ্ঞান তথ্যে সমৃদ্ধ ও সুবিস্তৃত করেছিলাম এবং যা ছিল ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে হেদায়ত ও রহমতের প্রতিক’ (সূরা আল-‘আরাফ : ৫২)।

আক্বীদা-৫ : হাত (اليد), ডানহাত (اليمين), কাফ (الكف), আছাবিঊ (الأصابع) এবং ক্বাবযাহ (القبضة)-এগুলো ছিফাতকে অস্বীকার ও অপব্যাখ্যা করা

মাতুরীদীরা আল্লাহর প্রকৃত দু’ হাতকে অপব্যাখ্যা করে বলে, المراد من اليد النعمة والقدرة أو الملك ‘হাত দ্বারা কুদরত ও নে‘মত বা রাজত্ব উদ্দেশ্য’।[১৩] তারা আল্লাহর ডান হাতের অপব্যাখ্যা করে। তারা বলে, اليمين বা ডান হাতের অর্থ হল- القدرة التامة ‘পরিপূর্ণ কুদরত (ক্ষমতা) বা عظمة الله تعالى ‘আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব বা মর্যাদা’।[১৪] কাফ বা হাতের তালুকে অপব্যাখ্যা করে বলে, الكف (কাফ) অর্থ التدبير বা পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনা করা’। الأصابع (আছাবিঊ) বা আঙ্গুলসমূহের অপব্যাখ্যা করে বলে, ‘উছবূ অর্থ القدرة বা ক্ষমতা’।[১৫] القبضة (ক্বাবযাহ) অর্থ পরিমাণ বা পরিমাপ[১৬]  এবং الملك والقدرة বা রাজত্ব ও ক্ষমতা।[১৭]

পর্যালোচনা

প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর বড়ত্ব ও সম্মানের জন্য শোভনীয় তাঁর দু’টি হাত, আঙ্গুল, হাতের মুঠো ও পাঞ্জা রয়েছে। কুরআন ও হাদীছে এগুলো থাকার কথা প্রমাণিত। আল্লাহর হাত ছিফাতে জাতিয়া তথা সত্ত্বাগত গুণ এবং ছিফাতে ফে‘লিয়া তথা কর্মগত গুণের অন্তর্ভুক্ত। তবে এগুলো কোন মাখলুকের মত নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَیۡسَ کَمِثۡلِہٖ شَیۡءٌ ۚ وَ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ‘তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই’ (সূরা শুরা : ১১)। নি¤েœ দলীলসমূহ পেশ করা হল-

১. আল্লাহর হাত 

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলার জন্য দু’টি হাত সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  قَالَ یٰۤاِبۡلِیۡسُ مَا مَنَعَکَ اَنۡ تَسۡجُدَ لِمَا خَلَقۡتُ بِیَدَیَّ  ‘হে ইবলীস! আমি যাকে আমার দুই হাত দ্বারা সৃষ্টি করলাম, তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল?’ (সূরা ছোয়াদ : ৭৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, تَبٰرَکَ الَّذِیۡ  بِیَدِہِ  الۡمُلۡکُ  وَ ہُوَ عَلٰی کُلِّ  شَیۡءٍ قَدِیۡرُۨ ٌ ‘বরকতময় তিনি, যার হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব। আর তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান’ (সূরা আল-মুলক : ১)।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ قَالَتِ الۡیَہُوۡدُ یَدُ اللّٰہِ مَغۡلُوۡلَۃٌ  غُلَّتۡ اَیۡدِیۡہِمۡ وَ لُعِنُوۡا بِمَا قَالُوۡا بَلۡ یَدٰہُ مَبۡسُوۡطَتٰنِ  یُنۡفِقُ  کَیۡفَ یَشَآءُ ‘আর ইহুদীরা বলে, আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে; তাদেরই হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের এ উক্তির দরুন তাদের প্রতি অভিশাপ করা হয়েছে; বরং তাঁর (আল্লাহর) তো দু’টি হাতই উন্মুক্ত, যেরূপ ইচ্ছা তিনি ব্যয় করেন’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৬৪)।

হাদীছেও আল্লাহ তা‘আলার জন্য দু’টি হাত সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আদম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম)তাদের প্রভুর নিকটে পরস্পরে বিতর্কে লিপ্ত হন। তাতে আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর উপরে জয়ী হন। মূসা (আলাইহিস সালাম) আদম (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন,أَنْتَ آدَمُ الَّذِىْ خَلَقَكَ اللهُ بِيَدِهِ وَنَفَخَ فِيْكَ مِنْ رُوْحِهِ ‘আপনি আদম, যাকে আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন ও আপনার মধ্যে তাঁর পক্ষ থেকে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন’।[১৮]

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

يَدُ اللهِ مَلأَىٌ لَا تَغِيْضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُذْ خَلَقَ السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ؟ فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِىْ يَدِهِ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَىْ الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الْمِيْزَانُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ

‘আল্লাহর হাত সর্বদা পূর্ণ। রাত্রি ও দিনের অবিশ্রান্ত ধারায় দান তাতে কিছুমাত্র কমাতে পারে না। তোমরা কি বলতে পার আসমান ও যমীন সৃষ্টির সূচনা থেকে এযাবৎ তিনি কত দান করেছেন? অথচ এই দান তাঁর হাতে যা আছে, তাতে বিন্দুমাত্র কমাতে পারেনি। তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে। তাঁর হাতেই রয়েছে দাঁড়িপাল্লা, যা তিনি উঁচু-নীচু করেন’।[১৯]

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন মানুষ যখন দুর্বিষহ মর্মান্তিক অবস্থায় পড়বে, তখন সমস্ত মানুষ সেই অবস্থা থেকে মুক্তি লাভের জন্য সুপারিশকারীর মাধ্যম খুঁজে বেড়াবে। সর্বপ্রথম আদম (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট আসবে এবং তারা বলবে,

فَيَقُوْلُوْنَ أَنْتَ أَبُو النَّاسِ خَلَقَكَ اللهُ بِيَدِهِ وَأَسْجَدَ لَكَ مَلَائِكَتَهُ وَعَلَّمَكَ أَسْمَاءَ كُلِّ شَىْءٍ فَاشْفَعْ لَنَا عِنْدَ رَبِّكَ حَتَّى يُرِيْحَنَا مِنْ مَكَانِنَا هَذَا

‘আপনি আদম, আপনাকে আল্লাহ নিজের হাতে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদের দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন ও সমস্ত কিছুর নাম শিখিয়েছিলেন। অতএব আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করুন, যাতে আমাদেরকে এই মর্মান্তিক অবস্থা থেকে মুক্তি দান করেন’।[২০]

আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,

إِنَّ يَمِيْنَ اللهِ مَلأَى لَا يَغِيْضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ فَإِنَّهُ لَمْ يَنْقُصْ مَا فِى يَمِيْنِهِ وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الأُخْرَى الْفَيْضُ أَوِ الْقَبْضُ يَرْفَعُ وَيَخْفِضُ

‘আল্লাহর ডান হাত পূর্ণ, রাত দিনের খরচেও তা কমে না। তোমরা ভেবে দেখেছ কি? আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টির সূচনা থেকে তিনি কত খরচ করে যাচ্ছেন, তবুও তাঁর ডান হাতের কিছুই কমেনি। তাঁর আরশ পানির উপর আছে। তাঁর অন্য হাতে আছে দেয়া আর নেয়া। তা তিনি উঠান ও নামান’।[২১]

আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, لَمَّا خَلَقَ اللهُ الْخَلْقَ كَتَبَ بِيَدِهِ عَلَى نَفْسِهِ إِنَّ رَحْمَتِىْ تَغْلِبُ غَضَبِىْ ‘আল্লাহ তা‘আলা যখন মাখলূক সৃষ্টি করলেন, তখন নিজ হাতে লিখে দিলেন যে, আমার রহমত আমার গযবকে (ক্রোধ) পরাভূত করেছে’।[২২]

আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। (আদম ও মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর পরস্পর ঝগড়ার ব্যাপারে) নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, فَقَالَ آدَمُ أَنْتَ مُوسَى اصْطَفَاكَ اللهُ بِكَلَامِهِ وَخَطَّ لَكَ التَّوْرَاةَ بِيَدِهِ ‘আদম বললেন, তুমি মূসা। তোমাকে বাক্যালাপের জন্য লোকদের মধ্যে মনোনিত করেছেন এবং নিজ হাতে তিনি তোমার জন্য তাওরাত কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন’।[২৩]

২. আল্লাহর হাতের মুঠো ও পাঞ্জা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 وَ مَا قَدَرُوا اللّٰہَ حَقَّ قَدۡرِہٖ وَ الۡاَرۡضُ جَمِیۡعًا قَبۡضَتُہٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ السَّمٰوٰتُ مَطۡوِیّٰتٌۢ بِیَمِیۡنِہٖ  سُبۡحٰنَہٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ

‘আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ ক্বিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে’ (সূরা আয-যুমার : ৬৭)।

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন يَقْبِضُ اللهُ الأَرْضَ وَيَطْوِى السَّمَاءَ بِيَمِيْنِهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ مُلُوْكُ الأَرْضِ ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা যমীনকে মুঠোর মধ্যে ধারণ করবেন এবং আসমানকে পাল্টিয়ে ডান হতে ধারণ করবেন। অতঃপর বলবেন, আমি বাদশাহ, কোথায় যমীনের বাদশারা?[২৪] আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

يَطْوِى اللهُ عَزَّ وَجَلَّ السَّمَوَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِيَدِهِ الْيُمْنَى ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُوْنَ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُوْنَ ثُمَّ يَطْوِى الأَرَضِيْنَ بِشِمَالِهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُوْنَ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُوْنَ

‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহকে পাল্টাবেন। অতঃপর তাঁর ডান হাতে ধারণ করবেন। অতঃপর বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় দুনিয়ার প্রভাবশালীরা? কোথায় অহংকারীরা? অতঃপর যমীনকেও পাল্টাবেন এবং অন্য হস্তে অর্থাৎ বাম হস্তে পাল্টানো অবস্থায় ধারণ করে বলবেন, আমিই একমাত্র বাদশাহ। কোথায় প্রভাবশালীরা’।[২৫] ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

إِنَّ اللهَ يَقْبِضُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الأَرْضَ وَتَكُوْنُ السَّمَوَاتُ بِيَمِيْنِهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا الْمَلِكُ.

‘ক্বিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর মুঠোতে এবং আসমানসমূহ থাকবে তাঁর ডান হাতে। অতঃপর তিনি বলবেন, আমিই বাদশা’।[২৬]

৩. আল্লাহর আঙ্গুল

আল্লাহর আঙ্গুল রয়েছে হাদীছে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা এসেছে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,

جَاءَ حَبْرٌ مِنَ الأَحْبَارِ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّا نَجِدُ أَنَّ اللهَ يَجْعَلُ السَّمَوَاتِ عَلَى إِصْبَعٍ وَالأَرَضِيْنَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالشَّجَرَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالْمَاءَ وَالثَّرَى عَلَى إِصْبَعٍ وَسَائِرَ الْخَلاَئِقِ عَلَى إِصْبَعٍ فَيَقُوْلُ أَنَا الْمَلِكُ  فَضَحِكَ النَّبِىُّ ﷺ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ تَصْدِيْقًا لِقَوْلِ الْحَبْرِ ثُمَّ قَرَأَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ (وَ مَا قَدَرُوا اللّٰہَ حَقَّ قَدۡرِہٖ  وَ الۡاَرۡضُ جَمِیۡعًا قَبۡضَتُہٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ السَّمٰوٰتُ مَطۡوِیّٰتٌۢ بِیَمِیۡنِہٖ  سُبۡحٰنَہٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ)

‘ইহুদী আলিমদের থেকে এক আলিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! আমরা (তাওরাতে দেখতে) পাই যে, আল্লাহ তা‘আলা আকাশসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। যমীনকে এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এক আঙ্গুলের উপর, মাটি এক আঙ্গুলের উপর এবং অন্যান্য সৃষ্টিজগৎ এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। তারপর বলবেন, আমিই বাদশাহ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা সমর্থনে হেসে ফেললেন; এমনকি তাঁর সামনের দাঁত প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাঠ করলেন, ‘আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ ক্বিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে ’ (সূরা আয-যুমার : ৬৭)।[২৭]

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

إِنَّ قُلُوْبَ بَنِىْ آدَمَ كُلَّهَا بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ كَقَلْبٍ وَاحِدٍ يُصَرِّفُهُ حَيْثُ يَشَاءُ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ

‘আদম সন্তানের অন্তরসমূহ আল্লাহর অঙ্গুলিসমূহের দুই অঙ্গুলির মধ্যে মাত্র একটি অন্তরের ন্যায়। তিনি যেভাবে ইচ্ছা তাকে ঘুরিয়ে থাকেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমাদের অন্তরসমূহকে আপনার আনুগত্যের দিকে পরিবর্তন করে দিন’।[২৮]

উপরিউক্ত আয়াত এবং সুন্নাহসমূহ থেকে মহান আল্লাহর দু’টি হাত, আঙ্গুল, হাতের মুঠো ও পাঞ্জা থাকার কথা প্রমাণিত হল। প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর বড়ত্ব ও সম্মানের জন্য শোভনীয় তাঁর দু’টি হাত রয়েছে। এই হাত দু’টি কোন মাখলুকের দুই হাতের মত নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَیۡسَ کَمِثۡلِہٖ  شَیۡءٌ ۚ وَ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ‘তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই’ (সূরা শুরা : ১১)।

যারা আল্লাহর প্রকৃত দুই হাতকে অপব্যাখ্যা করে, তারা উপরিউক্ত আয়াত ও সুন্নাহসমূকে অস্বীকার করে। উপরিউক্ত দলীলসমূহ দ্বারা তাদের প্রতিবাদ করা হয়েছে। আর যারা ধারণা করে, হাত দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার কুদরত বা নেমত উদ্দেশ্য তাদেরও প্রতিবাদ রয়েছে। কেননা হাত দ্বারা যদি কুদরত উদ্দেশ্য হত, যেমন বাতিলপন্থীরা ধারণা করে থাকে, তাহলে আল্লাহ্র উভয় কুদরতী হাত দ্বারা আদম (আলাইহিস সালাম)-কে খাছভাবে সৃষ্টি করার মধ্যে কোন আলাদা বৈশিষ্ট থাকার কথা বাতিল বলে প্রমাণিত হত। অর্থাৎ আদম (আলাইহিস সালাম)-এর জন্য কোন আলাদা বৈশিষ্ট প্রমাণিত হত না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত মাখলুককে এমনকি ইবলীসকেও স্বীয় কুদরতের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং আদম (আলাইহিস সালাম)-কেও যদি আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কুদরতের মাধ্যমে সৃষ্টি করে থাকেন, তাহলে আল্লাহর বাণী, لِمَا خَلَقۡتُ بِیَدَیَّ ‘যাকে আমি নিজের দুই হাতে সৃষ্টি করেছি’ (সূরা ছোয়াদ : ৭৫) -এর মধ্যে আদম (আলাইহিস সালাম)-এর জন্য ইবলীসের উপর কী ফযীলত থাকতে পারে? হাত দ্বারা যদি কুদরত উদ্দেশ্য হত, তাহলে ইবলীসের জন্যও এই কথা বলার সুযোগ থাকত যে, আমাকেও তো তোমার দুই হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছ।

তাছাড়া হাত দ্বারা যদি কুদরত উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলার কুদরত মাত্র দু’টি হওয়া আবশ্যক হয়। অথচ মুসলিমদের ঐক্যমতে এই কথা বাতিল বলে প্রমাণিত। কেননা আয়াতের মধ্যে আল্লাহর দুই হাত সাব্যস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে আরো বলা যেতে পারে যে, হাত দ্বারা যদি নে‘মত উদ্দেশ্য হয়, তাহলে অর্থ দাঁড়ায় যে, আল্লাহ তা‘আলা আদম (আলাইহিস সালাম)-কে মাত্র দু’টি নে‘মত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। এটি সম্পূর্ণ বাতিল। কেননা আল্লাহর নে‘মত অসংখ্য; মাত্র দু’টি নয়।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. আব্দুর রহমান ইবনু নাছির ইবনু আব্দুল্লাহ আস-সা‘দী, তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরিল কালামিল মান্নান; আব্দুর রহমান ইবনু মা‘লা (মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১৪২০ হি.), ১ম খ-, পৃ. ৯৪।
[২]. বাহরুল কালাম, পৃ. ১১০।
[৩]. তারা দলীল হিসাবে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর ঘটনা উল্লেখ করেছে। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) যেমন অস্তমিত বস্তুকে প্রতিপালক হিসাবে গ্রহণ করেননি। কেননা তাঁর প্রতিপালক এমন নয় (অর্থাৎ একবার এখানে, আরেকবার ওখানে)। এ কারণেই তিনি বলেছেন, আমি অস্তমিত বস্তুকে ভালোবাসি না। আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘যখন রাত্রির অন্ধকার তাকে আবৃত করল, তখন তিনি আকাশের একটি নক্ষত্র দেখতে পেলেন, আর বললেন, এটাই আমার প্রতিপালক, কিন্তু যখন ওটা অস্তমিত হল তখন তিনি বললেন, আমি অস্তমিত বস্তুকে ভালোবাসি না’ (সূরা আল-আন‘আম : ৭৬)। ‘অতঃপর যখন তিনি আকাশে চন্দ্রকে উজ্জ্বল আভায় দেখতে পেলেন তখন বললেন, এটাই আমার প্রতিপালক; কিন্তু ওটাও যখন অস্তমিত হল, তখন বললেন, আমার প্রতিপালক যদি আমাকে পথ প্রদর্শন না করেন তবে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের অন্তুর্ভুক্ত হয়ে যাবো’ (সূরা আল-আন‘আম : ৭৭)। ‘অতঃপর যখন তিনি সূর্যকে উজ্জ্বল উদ্ভাসিত দেখতে পেলেন তখন বললেন, এটি আমার মহান প্রতিপালক। কারণ এটি হচ্ছে সব থেকে বড়। যখন সেটিও অস্তমিত হল তখন তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে আল্লাহর অংশী কর তা থেকে আমি মুক্ত’ (সূরা আল-আন‘আম : ৭৮)। মূলত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) উক্ত আয়াতসমূহ বাহ্যিকভাবে তার জাতির সাথে তর্কসুলভ যে অবতারণা করেছেন তাঁর আক্বীদা-বিশ্বাস এমন ছিল না; বরং এভাবে তাদেরকে অপারগ করে তাওহীদের পথে আহবানই উদ্দেশ্য ছিল।
[৪]. আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ৫১৬।
[৫]. বাহরুল কালাম, পৃ. ১১০।
[৬]. প্রাগুক্ত।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৫৮; মিশকাত, হা/১২২৩।
[৮]. শারহুল আক্বীদাহ আল-ওয়াসিত্বীয়া, পৃ. ২০৫।
[৯]. প্রাগুক্ত, পৃ. ২০৬।
[১০]. আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম; তাহক্বীক : সামী ইবনু মুহাম্মাদ সালামাহ (দারুত তাইয়্যেবা, ২য় সংস্করণ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খৃ.), ১ম খ-, পৃ. ৫৬৬, ৮ম খ-, পৃ. ৩৯৯; তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরিল কালামিল মান্নান, ১ম খ-, পৃ. ৯৪।
[১১]. শারহুল আক্বীদাহ আল-ওয়াসিত্বীয়া, পৃ. ১১৩।
[১২]. প্রাগুক্ত, পৃ. ১১৭।
[১৩]. আল্লামা কাযী কামালুদ্দীন আহমাদ আল-বায়াযী আল-হানাফী, ইশারাতুল মারাম মিন ইবারাতিল ইমাম, তাহক্বীক : শাইখ ইউসুফ আব্দুর রাযযাক আশ-শাফেঈ এবং ইমাম কাওছারী (পাকিস্তান : যমযম প্রকাশনী, ১৪২৫ হি./২০০৪ খৃ.), পৃ. ১৮৯; আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ৩য় খ-, পৃ. ৫৫।
[১৪]. ইমাম আবূ সঊদ মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-‘আমদী, তাফসীর আবি সুঊদ আল-মুসাম্মা ইরশাদিল ‘আকলিস সালীম ইলা মারাইয়া কুরআনিল কারীম (বৈরূত : দারুল ইহইয়ায়ুস তুরাছ, তাবি) ৭ম খ-, পৃ. ২৬২; ইশারাতুল মারাম মিন ইবারাতিল ইমাম, পৃ. ১৯০; আদা’ঊ মাতুরিদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরিদীয়া- আল-মাতুরিদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ৩য় খ-, পৃ. ৫৭।
[১৫]. المراد من اليد النعمة والقدرة أو الملك وأما صفة اليمين فحرفوها إلى القدرة التامة أو عظمة الله تعالى وأما صفة الكف فيحرفونها إلى التدبير وأما صفة الأصابع فيحرفونها إلى القدرة- আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ৩য় খ-, পৃ. ৫৭।
[১৬]. তাফসীর আবি সুঊদ আল-মুসাম্মা ইরশাদিল ‘আকলিস সালীম ইলা মারাইয়া কুরআনিল কারীম, ৭ম খ-, পৃ. ২৬২; সূরা আয-যুমার ৬৭ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।
[১৭]. বাহরুল কালাম, পৃ. ১০৭।
[১৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৫২; মিশকাত, হা/৮১। 
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৪১১, ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৯৩; মিশকাত, হা/৯২। 
[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৪৭৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৩; তিরমিযী, হা/২৪৩৪; ইবনু মাজাহ, হা/৪৩১২।      
[২১]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৪১৯।      
[২২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৫৯৫।      
[২৩]. আবূ দাঊদ, হা/৪৭০১; ইবনু মাজাহ, হা/৮০।      
[২৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫১৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৮৭; ইবনু মাজাহ, হা/১৯২।      
[২৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৮৮; আবূ দাঊদ, হা/৪৭৩২; মিশকাত, হা/৫৫২৩।      
[২৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৪১২।      
[২৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৮১১।      
[২৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৫৪, ‘তাক্বদীর’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১।  




প্রসঙ্গসমূহ »: আক্বীদা বা বিশ্বাস
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী - আব্দুল গাফফার মাদানী
ইসলামে পর্দার বিধান (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ফাযায়েলে কুরআন (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
ফাযায়েলে কুরআন (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
গাযওয়াতুল হিন্দ : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ - হাসিবুর রহমান বুখারী
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৫ম কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
রামাযানের শেষ দশকের গুরুত্ব ও করণীয় - মাইনুল ইসলাম মঈন
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন - হাসিবুর রহমান বুখারী
বিদ‘আত পরিচিতি (১৯তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
হেদায়াত লাভের অনন্য মাস রামাযান - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব ও মূল্যায়ন (শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন

ফেসবুক পেজ