রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০১ অপরাহ্ন

ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন

-হাসিবুর রহমান বুখারী*



ইমাম মাহদীর আগমন

ইমাম মাহদী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বংশোদ্ভূত হবেন। আখেরী যামানায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটবে, যা ক্বিয়ামাতের সর্বপ্রথম বড় আলামত। তিনি আগমন করে এই উম্মতের নেতৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। দ্বীন ইসলামকে সংস্কার করবেন এবং ইসলামী শরী‘আতের মাধ্যমে বিচার-ফায়ছালা ক্বায়েম করবেন। পৃথিবী হতে যুলম-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন দূরীভূত করে ন্যায়-ইনছাফ দ্বারা তা পরিপূর্ণ করে দিবেন। তাঁর নাম নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাম অনুসারে হবে এবং তাঁর পিতার নাম নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিতার নাম অনুসারে হবে। অর্থাৎ তিনি হবেন মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ আল-মাহদী অথবা আহমাদ ইবনু আব্দুল্লাহ আল-মাহদী। তিনি হবেন হাসান ইবনু ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর বংশোদ্ভূত। বিশৃঙ্খলার সময়ে যখন ভূপৃষ্ঠ অত্যাচার ও শত্রুতায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে, তখন তিনি আবির্ভূত হবেন।[১]

ইমাম মাহদী কখন আবির্ভূত হবেন

শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইমাম মাহদী কখন অবতরণ করবেন, তা আল-কুরআন ও সুন্নাহর কোথাও স্থিরীকরণ করা হয়নি। শুধু এতটুকুই জানা যায়ে যে, তিনি শেষ যাামানায় অবতরণ করবেন। আর তাঁর আবির্ভাব দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর পূর্বেই ঘটবে।[২] এছাড়া এব্যাপারে হাদীছের বক্তব্যও সুস্পষ্ট।  যেমন আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

يخرُجُ فِيْ آخِرِ أُمَّتي المَهْدِيُّ يَسْقِيْهُ اللهُ الغَيْثَ وَتُخْرِجُ الْأرْضُ نَبَاتَهَا ويُعْطٰي الْمَالَ صِحَاحًا وتَكْثُرُ الْمَاشِيَةُ وَتَعْظُمُ الْأُمَّةُ يُعِيْشُ سَبْعًا أَوْ ثَمَانِيًا يَعْنيْ حِجَجًا

‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের মধ্যে ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে। তাঁর শাসনামলে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, ভূপৃষ্ঠ প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন’।[৩]

অথচ এ সম্পর্কে উম্মাতে মুহাম্মাদী খুবই বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সঙ্গে কিছু জ্ঞানীগুণী আলিমও পথভ্রষ্ট হয়েছে। অনেকেই তাঁর অবতরণকাল নির্ধারণ করার অপপ্রচেষ্টা করেছেন। কেউ বলেছিলেন ২০১৯ সাল, কেউ ২০২১ সাল। আবার কেউ বলছেন ২০২৪ সাল তো কেউ ২০২৮ সাল। এমনকি তারা বিভিন্ন জাল, যঈফ, মুনকার হাদীছ ও খোঁড়া যুক্তি দ্বারা প্রমাণ করার অপ্রপ্রয়াস চালাচ্ছেন। প্রমাণস্বরূপ নিম্নোক্ত জাল হাদীছটি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। ফিরোজ দায়লামী বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

يَكُوْنُ فِيْ رَمَضَانَ صَوْتٌ قَالُوْا فِيْ أَوَّلِهِ أَوْ فِيْ وَسَطِهِ أَوْ فِيْ آخِرِهِ؟ قَالَ لَا بَلْ فِي النِّصْفِ مِنْ رَمَضَانَ إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ يَكُوْنُ صَوْتٌ مِّنَ السَّمَاءِ يُصْعَقُ لَهُ سَبْعُوْنَ أَلْفًا وَيُخْرَسُ سَبْعُوْنَ أَلْفًا وَيُعْمَى سَبْعُوْنَ أَلْفًا وَيُصِمُّ سَبْعُوْنَ أَلْفًا

‘কোন এক রামাযানে বিকট আওয়াজ হবে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! রামাযানের শুরুতে, না-কি মাঝামাঝি, না-কি শেষ দিকে হবে’? নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘না! বরং রামাযানের মাঝামাঝি দিনে। যে রামাযান মাসের ১৫ তারিখের রাত্রী শুক্রবারের রাত্রী হবে, সেই রাত্রীতে আকাশ থেকে একটি বিকট শব্দ আসবে। ফলস্বরূপ সত্তর হাজার মানুষ সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে, সত্তর হাজার বধির হয়ে যাবে, সত্তর হাজার বাকশক্তিহীন হয়ে যাবে, আর সত্তর হাজার অন্ধ হয়ে যাবে’।

পর্যালোচনা : প্রথমতঃ হাদীছটি জাল, যঈফ ও মুনকার। শায়খ আল্লামা আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি موضوع বা বানোয়াট।[৪]  ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি باطل বা পরিত্যাজ্য।[৫] শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি باطل বা পরিত্যাজ্য অথবা মিথ্যা।[৬] ইমাম জুরক্বানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি মুনকার।[৭]

দ্বিতীয়তঃ এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী আল-কুরআনের স্পষ্ট বিরোধী। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকটেই রয়েছে ক্বিয়ামত (সংঘটিত হওয়ার) জ্ঞান, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন জরায়ুতে যা আছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ দেশে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত’ (সূরা লুক্বমান : ৩৪)। ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مِفْتَاحُ الْغَيْبِ خَمْسٌ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا اللهُ لَا يَعْلَمُ أَحَدٌ مَا يَكُوْنُ فِيْ غَدٍ

‘ইলমে গায়েব বা অদৃশ্যের চাবিকাঠি পাঁচটি, যা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। আগামী কাল কী ঘটবে, তা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না’।[৮]

ক্বিয়ামতের নিকটবর্তী কিছু নিদর্শন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কিন্তু ক্বিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঠিক সময় নিশ্চিতরূপে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন। এমনকি তা কোন ফিরিশতাও জানেন না এবং কোন প্রেরিত নবী-রাসূলও  জানেন না। সেজন্য নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ক্বিয়ামত সম্পর্কে জিজেস করা হলে উত্তরে তিনি বলতেন, ‏وَيْلَكَ وَمَا أَعْدَدْتَ لَهَا ‘তোমার জন্য আক্ষেপ, তুমি এর জন্য কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ’? [৯]

অতএব, ক্বিয়ামত ও তার নিদর্শনাবলী সম্পর্কে কোন প্রকারের ভবিষ্যদ্বাণী ও নির্দিষ্টকরণ করা গর্হিত অপরাধ। ২০২৪/২০২৮ সালে রামাযান মাসের ১৫ তারিখ শুক্রবার হবে কি-না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কেননা তা চাঁদের সঙ্গে সম্পর্কিত, পঞ্জিকার সঙ্গে নয়। তাই ক্যালেন্ডারের উপর ভিত্তি করে এ কথা বলা সীমাহীন মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু বিগত দিনের রামাযান মাসগুলোর মধ্যে অনেক রামাযান মাসেরই ১৫ তারিখ শুক্রবার ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। যেমন (১) ১৪৪১ হি./২০২০ খ্রি.-এর ১৫ই রামাযান। (২) ১৪৩৩ হি./২০১২ খ্রি.-এর ১ম ও ১৫ই রামাযান। (৩) ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.-এর ১৫ই রামাযান। (৪) ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.-এর ১ম ও ১৫ই রামাযান। (৫) ১৪১৭ হি./১৯৯৭ খ্রি.-এর ১৫ই রামাযান। (৬) ১৪১২ হি./১৯৯২ খ্রি.-এর ১৫ই রামাযান। (৭) ১৪০৯ হি./১৯৮৯ খ্রি.-এর ১৫ই রামাযান। (৮) ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি.-এর ১৫ই রামাযান এবং (৯) ১৪০১ হি./১৯৮১ খ্রি.-এর ১৫ই রামাযান শুক্রবার ছিল।

উল্লেখ্য, শুধু বিগত ৪০ বছরে নয় বার ১৫ই রামাযান শুক্রবার হয়েছে। যদি সত্যিই এ হাদীছ ছহীহ হত, তবে ঘটনা অনেক পূর্বেই ঘটে যাওয়া উচিত ছিল। অতএব প্রমাণিত হল যে, এ হাদীছ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং ইমাম মাহদীর আগমনের সময় নির্ধারণ করা শরী‘আত বিরোধী।

ইমাম মাহদী কোথায় অবতরণ করবেন?

শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইসলামী শরী‘আতের কোথাও ইমাম মাহদীর আগমনের স্থান সম্পর্কে কোন স্পষ্ট তথ্য বর্ণিত হয়নি। অনুরূপভাবে শায়খ আব্দুল আযীয আত্ব-ত্বারিফী (হাফিযাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হল যে, ইমাম মাহদীর আগমনের স্থান সম্পর্কে কি কোন হাদীছ বর্ণিত হয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তা ছহীহ নয়। যেমন,

হাদীছ নং-১ : ছাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন তোমরা খুরাসানের দিক থেকে কালো পতাকাবাহীদের আসতে দেখবে, তখন তোমরা তাদের সঙ্গে শামিল হয়ে যাবে। কেননা তাদের মধ্যেই খলীফা ইমাম মাহদী থাকবেন।[১০]

পর্যালোচনা : শু‘আইব আল-আরনাঊত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটির সনদ যঈফ।[১১] আল্লামা আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি মুনকার।[১২] আব্দুর রহমান মুবারাকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি যঈফ। বর্ণনাকারী শারীক বিন আব্দুল্লাহ কাযীর স্মৃতি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল।[১৩] আল্লামা আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, হাদীছটি যঈফ।[১৪]

হাদীছ নং-২ : ছাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের একটি গুপ্তধনের নিকট তিনজন লোক ঝগড়া করবে। তারা প্রত্যেকেই হবে খলীফার পুত্র। কিন্তু কেউ তা দখল করতে পারবে না। অতঃপর পূর্ব দিক থেকে কালো পতাকাধারী একদল সৈনিক আসবে। তারা ব্যাপক হত্যাকা- চালাবে’। হাদীছের বর্ণনাকারী বলেন, এরপর নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কিছু বিষয়ের কথা বর্ণনা করলেন, যা আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। অতঃপর তিনি বলেন, ‘তোমরা যখন তাদেরকে দেখতে পাবে, তখন তাদের নেতার হাতে বায়‘আত করবে। যদিও বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে উপস্থিত হতে হয়। কেননা তিনিই হলেন আল্লাহ্র খলীফা মাহদী’।[১৫]

পর্যালোচনা : ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি যঈফ ও মুনকার।[১৬] ইমাম বায়হাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আব্দুর রাযযাক হাদীছটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন।[১৭] ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই হাদীছের মধ্যে আলী বিন যায়েদ দুর্বল রাবী আছে।[১৮] ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি মুনকার।[১৯]

হাদীছ নং-৩ : আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইমাম মাহদী ইয়ামানের কারআহ নামক অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হবেন। তাঁর মাথায় পাগড়ি থাকবে। একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকবে যে, নিশ্চয় এই ব্যক্তিই ইমাম মাহদী। সুতরাং তাঁর হাতে বায়‘আত কর।

তাহক্বীক্ব : ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আব্দুল ওয়াহাব বিন যাহহাক সন্দেহযুক্ত রাবী। আবূ হাতীম তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। ইমাম নাসাঈ তাকে পরিত্যাজ্য বলেছেন। দারাকুৎনী তাকে মুনকারুল হাদীছ বলেছেন।[২০]

সুধী পাঠক! নির্বোধ শী‘আরা সামেরার সিরদাব নামক গর্ত হতে ইমাম মাহদী বের হওয়ার যে দাবী করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা আরো দাবী করে যে, তিনি গর্তের মাঝে লুক্কায়িত আছেন। শী‘আদের একটি প্রতিদিন দল সে গর্তের কাছে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। এ ধরণের আরো অনেক হাস্যকর কাল্পনিক ঘটনা বর্ণিত আছে। অথচ এ সমস্ত কথার পক্ষে কোন দলীল নেই; বরং আল-কুরআন, হাদীছ ও বিবেক বহির্ভূত কথা।[২১]

হাদীছের আলোকে ইমাম মাহদীর আগমনের প্রামাণিকতা

‘আহলে কুরআন’ ও অন্যান্য কিছু ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণকারী সম্প্রদায় ইমাম মাহদীর আগমন অস্বীকার করলেও, অনেক ছহীহ হাদীছে তাঁর আগমনের প্রামাণিকতা বিদ্যমান। কোন কোন হাদীছে প্রকাশ্যভাবে তাঁর নাম উল্লেখ আছে। আবার কোন কোন হাদীছে তাঁর গুণাগুণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর আগমন প্রামাণ্য হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত হাদীছগুলো যথেষ্ট।

১. আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

يَخْرُجُ فيْ آخِرِ أُمَّتي المَهْدِيُّ يَسْقِيْهُ اللهُ الْغَيْثَ وتُخْرِجُ الْأرْضُ نَبَاتَهَا ويُعْطٰي الْمَالَ صِحَاحًا وتَكْثُرُ الْمَاشِيَةُ وَتَعْظُمُ الْأُمَّةُ يُعِيْشُ سَبْعًا أَوْ ثَمَانِيًا يَعْنِيْ حِجَجًا

‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের মধ্যে ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে। তাঁর শাসনামলে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, ভূপৃষ্ঠ প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন’।[২২]

২. আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

اَلمَهْديُّ منِّيْ أَجْلى الْجَبْهةِ أَقْنى الْأَنْفِ يَملَأُ الْأرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنيْنَ

‘আমার বংশ থেকেই মাহদী আবির্ভূত হবে। সে হবে প্রশস্ত ললাট ও উন্নত নাকবিশিষ্ট। পৃথিবী হতে যুলম-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন দূরীভূত করে সমপরিমাণ ন্যায়বিচার ও ইনছাফ দ্বারা তা পরিপূর্ণ করে দিবেন। সাত বছর পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন’।[২৩]

৩. উম্মে সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, اَلْمَهْدِىُّ مِنْ عِتْرَتِىْ مِنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ ‘মাহদী আমার পরিজন থেকে ফাতিমাহর সন্তানদের বংশ থেকে আবির্ভূত হবে’।[২৪]

৪. জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে,

لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِىْ يُقَاتِلُوْنَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِيْنَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ قَالَ فَيَنْزِلُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ عليه السلام  فَيَقُوْلُ أَمِيْرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا فَيَقُوْلُ لَا إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ تَكْرِمَةَ اللهِ هَذِهِ الْأُمَّةَ

‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের একটি দল সত্য দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অবতরণ করবেন। তৎকালীন মুসলিমদের আমীর বলবেন, আসুন! ছালাতে আমাদের ইমামতি করুন। তিনি বলবেন, না! বরং আপনাদের ইমাম আপনাদের মধ্য হতেই নিযুক্ত হবেন। এ হল আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত এ উম্মতের সম্মান’।[২৫] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে যে, فَيَقُوْلُ أَمِيْرَهُمْ الْمَهْدِيِّ ‘তিনি বলেন, তাদের আমীর ইমাম মাহদী’।[২৬] এই হাদীছ সম্পর্কে ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছের সনদ ভালো।[২৭] আল্লামা আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি ছহীহ।[২৮]

৫. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَوْ لَمْ يَبْقَ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا يَوْمٌ قَالَ زَائِدَةُ فِيْ حَدِيْثِهِ لَطَوَّلَ اللهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ ثُمَّ اتَّفَقُوْا حَتَّى يَبْعَثَ فِيْهِ رَجُلًا مِنِّيْ أَوْ مِنْ أَهْلِ بَيْتِيْ يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِيْ وَاسْمُ أَبِيْهِ اسْمَ أَبِيْ. زَادَ فِيْ حَدِيْثِ فِطْرٍ يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ ظُلْمًا وَجَوْرًا. وَقَالَ فِيْ حَدِيْثِ سُفْيَانَ لَا تَذْهَبُ أَوْ لَا تَنْقَضِي الدُّنْيَا حَتَّى يَمْلِكَ الْعَرَبَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِيْ يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي

‘যদি দুনিয়ার মাত্র একদিনও অবশিষ্ট থাকে তবে আল্লাহ তা‘আলা সেই দিনকে অত্যন্ত দীর্ঘায়িত করবেন এবং আমার থেকে অথবা আমার পরিজন থেকে একজন লোক আবির্ভূত করবেন, যার নাম হবে আমার নামে এবং তার পিতার নাম হবে আমার পিতার নামে। সে পৃথিবী থেকে যুলম-অত্যাচার দূরীভূত করে সমপরিমাণ সুবিচার ও ইনছাফে পরিপূর্ণ করবে। আর সুফিয়ান থেকে বর্ণিত হাদীছে বলেন, ততদিন পর্যন্ত দুনিয়া ধ্বংস হবে না, যতদিন পর্যন্ত আমার পরিবারের এক ব্যক্তি আরবে রাজত্ব না করবে, তার নাম হবে আমার নামের অনুরূপ। (অর্থাৎ তাঁর নাম হবে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ)’।[২৯]

৬. উম্মু সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

يَعُوْذُ عَائِذٌ بِالْبَيْتِ فَيُبْعَثُ إِلَيْهِ بَعْثٌ فَإِذَا كَانُوْا بِبَيْدَاءَ مِنَ الْأَرْضِ خُسِفَ بِهِمْ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَكَيْفَ بِمَنْ كَانَ كَارِهًا قَالَ‏ يُخْسَفُ بِهِ مَعَهُمْ وَلَكِنَّهُ يُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى نِيَّتِهِ.‏ وَقَالَ أَبُوْ جَعْفَرٍ هِيَ بَيْدَاءُ الْمَدِيْنَةِ‏

‘কা‘বা ঘরের পার্শ্বে একজন আশ্রয় গ্রহণকারী আশ্রয় গ্রহণ করবেন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে একদল সামরিক বাহিনী প্রেরণ করা হবে। অতঃপর সৈনিকরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে, তখন তাদেরকে ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিধ্বস্ত করে দেয়া হবে। উম্মু সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, যারা বাধ্য হয়ে সাথে যাবে তাদের অবস্থা কী হবে? উত্তরে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে সহ ভূপৃষ্ঠ ধসে যাবে। তবে ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেকেই স্বীয় নিয়তের ভিত্তিতে পুনরুত্থিত হবে’। বর্ণনাকারী আবূ জা‘ফর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘বায়দা’ হল, মদীনার নিকটবর্তী স্থান’।[৩০]

৭. হাফছা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

‏سَيَعُوْذُ بِهَذَا الْبَيْتِ يَعْنِي الْكَعْبَةَ قَوْمٌ لَيْسَتْ لَهُمْ مَنَعَةٌ وَلَا عَدَدٌ وَلَا عُدَّةٌ يُبْعَثُ إِلَيْهِمْ جَيْشٌ حَتَّى إِذَا كَانُوْا بِبَيْدَاءَ مِنَ الْأَرْضِ خُسِفَ بِهِمْ‏.‏

‘অচিরেই এই ঘরের অর্থাৎ কা‘বার পার্শ্বে এমন এক সম্প্রদায় আশ্রয় গ্রহণ করবে বা দায়িত্ব গ্রহণ করবে, যাদের শত্রুর সাথে মোকাবিলা করার মত কোন উল্লেখযোগ্য সামরিক বাহিনী কিংবা অস্ত্রশস্ত্র বা প্রস্তুতি থাকবে না। তাদেরকে হত্যা করার জন্য একটি সৈন্যদল প্রেরণ করা হবে। সৈন্যদলটি যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে, তখন ভূপৃষ্ঠের মধ্যে তাদেরকে বিধ্বস্ত করে দেয়া হবে’।[৩১]

৮. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‏كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ فِيْكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ فَأَمَّكُمْ مِنْكُمْ ‘সেদিন তোমাদের অবস্থা কেমন হবে, যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করবেন এবং তোমাদেরই মধ্য হতে একজন তোমাদের ইমাম হবেন’।[৩২] অর্থাৎ ঈসা (আলাইহিস সালাম) তোমাদের সাথে জামা‘আতে শরীক হয়ে তোমাদের ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করবেন।

সালাফগণের অভিমত

শেষ জামানায় ইমাম মাহদীর আগমন সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অসংখ্য মুতাওয়াতির (ঐ হাদীছকে বলা হয়, যার বর্ণনাকারীর সংখ্যা অধিক হওয়ার কারণে মিথ্যার উপর তাদের ঐকমত্য হওয়ার কল্পনাও করা যায় না) ও ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তাঁর আবির্ভাব ক্বিয়ামতের দশটি বড় আলামত বা নিদর্শনের একটি। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অনেক আলেমই সে কথাই বলেছেন। যেমন শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), হাফিয আবুল হাসান আল-আবিরী (রাহিমাহুল্লাহ), ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ), শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ), শায়খ নবাব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (রাহিমাহুল্লাহ), আল্লামা শামসুল হক আযীমাবাদী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রমুখ। তন্মধ্যে তিনজন শায়খের অভিমত উল্লেখ করা হল।

অভিমত-১ : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) ও সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘মাহদীর বিষয়টি অতি সুস্পষ্ট। এ ব্যাপারে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত। তাঁর আগমন সত্য। তিনি হলেন মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বংশোদ্ভূত। নাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-হাসানী আল-ফাতিমী। তিনি শেষ যামানায় দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর পূর্বে ফিতনা-বিশৃঙ্খলা ও মতপার্থক্যের যুগে আবির্ভূত হবেন। সাত বছর রাজত্বকালে তিনি পৃথিবী থেকে অন্যায়-অবিচার দূরীভূত করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর সময়কালেই ঈসা (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করবেন। মাহদী সম্পর্কে রাফেযী শী‘আদের দাবী ভিত্তিহীন, যার কোন বাস্তবতা নেই। তারা (صاحب السرداب) অর্থাৎ সিরদাব নামক স্থানে আত্মগোপনকারী ব্যক্তিকে মাহদী বলে দাবী করে, যা অনুচিত এবং অসত্য। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ সত্য ও কল্যাণের ঝাণ্ডা সুউচ্চ করবেন। তাঁর হাতে মুমিনরা বায়‘আত গ্রহণ করবেন। যে ব্যক্তি আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর আগমনকে অস্বীকার করবে তার কথায় কর্ণপাত করা যাবে না’।[৩৩]

অভিমত-২ : হাফিয আবুল হাসান আল-আবিরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মাহদী সম্পর্কিত হাদীছগুলো নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মুতাওয়াতির হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি আহলে বায়ত তথা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বংশোদ্ভূত হবেন। তাঁর রাজত্বকালে ঈসা (আলাইহিস সালাম) আগমন করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। ঈসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর পিছনে ছালাত আদায় করবেন’।[৩৪]

অভিমত-৩ : ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যতদূর জানা যায় মাহদীর ব্যাপারে ৫০টি মুতাওয়াতির হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ছহীহ, হাসান ও সামান্য ত্রুটি বিশিষ্ট হাদীছ, যা অন্য সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে ত্রুটিমুক্ত হয়েছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির’।[৩৫]

এতদ্ব্যতীত ইমাম মাহদীর আগমনের প্রমাণ স্বরূপ অনেক আলিম পৃথক গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন হাফিয আবূ নু‘আইম, ইমাম আবূ দাঊদ, ইমাম ইবনু কাছীর, ইমাম সাখাবী, ইমাম শাওকানী, শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ, শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল-মাহদী প্রমুখ।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, ক্বিয়ামতের দশটি বড় আলামতের প্রথম আলামত ইমাম মাহদীর আগমন। তাঁর আগমন অবশ্যম্ভাবী, যা একাধিক ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। তিনি শেষ যামানায় অবতরণ করবেন। কিন্তু কখন ও কোথায়? এ সম্পর্কে কোন তথ্য ছহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। ছহীহ সূত্রে যতটুকু বর্ণিত হয়েছে তার উপরেই সন্তুষ্ট থাকা প্রত্যেক মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য। কারণ এটা আক্বীদার বিষয়। নিজের পক্ষ থেকে কোন কিছু বানিয়ে বলা অথবা জাল, যঈফ ও মুনকার হাদীছ বর্ণনা করা রাসূলুল্লহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর মিথ্যা রচনা করার নামান্তর। যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আমার প্রতি মিথ্যারোপ করা অন্য কারো প্রতি মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন অবশ্যই তার ঠিকানা জাহান্নামে করে নেয়’।[৩৬] নিশ্চয় ক্বিয়ামত ও তার নিদর্শনাবলী সম্পর্কে কোন প্রকারের ভবিষ্যদ্বাণী করার অর্থ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্পষ্ট বিরুদ্ধচারণ করা।[৩৭] অতএব এ সম্পর্কে আমাদের সকলকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সঠিক জিনিস জানার ও মানার তাওফীক্ব দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন!!

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

* মুর্শিদাবাদ, ভারত।

[১]. শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ, ইসলাম সাওয়ল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৪৩৮৪০।
[২]. ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২১৬৪৬৭, ১০৩০১।
[৩]. মুস্তাদরাক হাকিম, হা/৮৬৭৩; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৭১১; তাখরীজু সুনান আবী দাঊদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৪৩; তাখরীজুল মুসনাদ, ১৭তম খণ্ড, পৃ. ২৫৫।
[৪]. সিলসিলা যঈফাহ, হা/৬১৭৯।
[৫]. তারতীবুল মাউযূ‘আত, হা/২৮৭।
[৬]. ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২৬তম খণ্ড, পৃ. ৩৪৪।
[৭]. আল-আবাতীল ওয়াল মানাকীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ১০৫; মাউযূ‘আত ইবনে জাওযী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৬২; জামি‘উল মাসানীদ ওয়াস সুনান, হা/৮৭৬২।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/১০৩৯, ৪৬২৭, ৪৬৯৭, ৪৭৭৮, ৭৩৭৯।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১৬৭।
[১০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩৮৭।
[১১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩৮৭।
[১২]. তাখরীজ মিশকাতুল মাছাবীহ, হা/৫৩৮৯।
[১৩]. মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৪০।
[১৪]. যঈফুল জামে‘, হা/৫০৬।
[১৫]. ইবনু মাজাহ, হা/৪০৮৪।
[১৬]. যঈফুল জামে‘, হা/ ৬৪৩৪; যঈফ ইবনু মাজাহ, হা/৮১৮; সিলসিলা যঈফাহ, হা/৮৫।
[১৭]. দালাইলুল নাবুওয়াত, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৫১৫।
[১৮]. আল-মানারুল মুনীফ, পৃ. ১১৫।
[১৯]. মীযানুল ই‘তিদাল, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১২৮।
[২০]. মীযানুল ই‘তিদাল, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৭৯-৬৮০; বিস্তারিত দ্র. : ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২১৬৪৬৭।
[২১]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯-৩০।
[২২]. মুস্তাদরাক হাকিম, হা/৮৬৭৩; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৭১১; তাখরীজু সুনান আবী দাঊদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৪৩; তাখরীজুল মুসনাদ, ১৭তম খণ্ড, পৃ. ২৫৫।
[২৩]. আবূ দাঊদ, হা/৪২৮৫; সনদ হাসান, ছহীহুল জামে‘, হা/৬৭৩৬; মিশকাত, হা/৫৩৮২; মুস্তাদরাক হাকিম, হা/৮৬৭০।
[২৪]. আবূ দাঊদ, হা/৪২৮৪; মিশকাত, হা/৫৩৮১; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৬৭৩৪; মিনহাজুস সুন্নাহ, ৮ম খণ্ড, পৃ. ২৫৫।
[২৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৬, ২৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫১২৭; মিশকাত, হা/৫৫০৭।
[২৬]. আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ, শারহু সুনানি আবী দাঊদ, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ২৯।
[২৭]. আল-মানারুল মুনীফ, পৃ. ১৪৭-১৪৮।
[২৮]. সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২২৩৬।
[২৯]. আবূ দাঊদ, হা/৪২৮২; তিরমিযী, হা/২২৩০-২২৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৫৭১-৩৫৭৩, ৪০৯৮, ৪২৭৯, সনদ হাসান ছহীহ।
[৩০]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৮২; আবূ দাঊদ, হা/৪২৮৯; তিরমিযী, হা/২১৭১; ইবনু মাজাহ, হা/৪০৬৫।
[৩১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৮৩; নাসাঈ, হা/২৮৭৯-২৮৮০; ইবনু মাজাহ, হা/৪০৬৩।
[৩২]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৪৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৫, ২৮৩-২৮৫।
[৩৩]. ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪১; দ্র. : ফাতাওয়া ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট।
[৩৪]. তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১১৯৪।
[৩৫]. নাজমুল মুতানাছির মিনাল হাদিছিল মুতাওয়াতির, পৃ. ১৪৫-১৪৬।
[৩৬]. ছহীহ বুখারী, হা/১২৯১; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২৬৫।
[৩৭]. সূরা লুক্বমান : ৩৪; ছহীহ বুখারী, হা/১০৩৯, ৪৬২৭, ৪৬৯৭, ৪৭৭৮, ৭৩৭৯।




প্রসঙ্গসমূহ »: বিবিধ নীতি-নৈতিকতা
রামাযান : কুরআন নাযিলের মাস - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
এমফিল ও পিএইচডি : গবেষণার প্রকৃতি ও পদ্ধতি - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
সালাফী মানহাজের মূলনীতিসমূহ (২য় কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
রামাযান মাসে প্রচলিত বিদ‘আত সমূহ - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
কালো কলপ ব্যবহারের শারঈ বিধান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
বিদ‘আত পরিচিতি (১২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
হজ্জ ও ওমরাহ সম্পর্কে প্রচলিত বিদ‘আতসমূহ - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি (শেষ কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
বিদ‘আত পরিচিতি (২৬তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
গাযওয়াতুল হিন্দ : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ - হাসিবুর রহমান বুখারী

ফেসবুক পেজ