মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ন

উম্মাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অধিকার : একটি বিশ্লেষণ

- ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*


(২য় কিস্তি)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অধিকার বলতে কী বুঝায়?

পৃথিবীবাসীর জন্য রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) হলেন আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত সর্বশেষ পয়গম্বর। যার আগমনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের শরী‘আত রহিত হয়ে গেছে, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহ মানসূখ হয়ে গেছে। কারণ হল- আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মাধ্যমে যেমন নবী ও রাসূল আগমনের ধারাবাহিকতার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন, তেমনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও নবীদের সর্দার খিতাবে আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া তাঁর মাধ্যমে দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে এবং সর্বশেষ কিতাব ও সংবিধান হিসাবে আল-কুরআন নাযিলও পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছে। যার সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করেছেন। এমনকি কুরআনের মত সুন্নাহকেও সংরক্ষণ স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর অধিকার থাকা নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উম্মত হিসাবে ‘উম্মতে মুহাম্মাদী’-এর উপর স্বাভাবিক। উলামায়ে কিরাম উম্মাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অধিকার বলতে যা বুঝিয়েছেন এক্ষণে আমরা তা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

প্রথম অধ্যায়: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি ঈমনের স্বরূপ ও প্রকৃতি

নব্য জাহেলিয়াতের হিংস্র থাবায় ইসলামের সৌন্দর্য আজ বিলুপ্তির পথে। ইসলামের চিরন্তন জীবনাদর্শ মানুষ আজ ভুলতে বসেছে। কোন ক্ষেত্রেই ইসলামী নিদর্শনের লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ব্যক্তিগতভাবে মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত। পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় যেন মানুষকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ইসলামের উপস্থিতি আজ শূন্যের কোঠায়। নৈতিকতা আজ করুণ সময় অতিবাহিত করছে। উক্ত ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের সৌন্দর্য ও আদর্শ বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাধ্যমেই যার পরিপূর্ণতা পেয়েছে। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবনাচরণ ও আচরণবিধি সকলেরই জানা কর্তব্য। তন্মধ্যে সর্বাগ্রে তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক। সে হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি ঈমানের স্বরূপ ও প্রকৃতি কেমন হওয়া উচিত নিম্নে তা উল্লেখ করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

১. ঈমানের পরিচয়

‘আল-ঈমান’ (الإيمان) শব্দটি আরবী। বাবেإفعال -এর মাছদার। এটি آمَنَ يُؤْمِنُ إِيْمَانًا فَهُوَ مُؤْمِنٌ থেকে উৎপত্তি, যার অর্থ নিরাপত্তা। ঈমানের দু’টি অর্থ সমাজে প্রচলিত। যা নিম্নরূপ:

প্রথমতঃ বিশিষ্ট অভিধানবেত্তা আয-যুহরী (২৮২-৩৭০ হি.) বলেন, অধিকাংশ অভিধানবেত্তার নিকট اَلْإِيْمَانُ শব্দের অর্থ اَلتَّصْدِيْقُ ‘বিশ্বাস করা’। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قَالَتِ الۡاَعۡرَابُ اٰمَنَّا ؕ قُلۡ لَّمۡ تُؤۡمِنُوۡا وَ لٰکِنۡ  قُوۡلُوۡۤا  اَسۡلَمۡنَا وَ لَمَّا یَدۡخُلِ الۡاِیۡمَانُ فِیۡ  قُلُوۡبِکُمۡ .

‘আরব বেদুঈনগণ বলে, আমরা ঈমান আনলাম; (হে নবী!) আপনি বলুন, তোমরা ঈমান আননি, বরং তোমরা বল, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি মাত্র। কারণ ঈমান এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি’ (সূরা আল-হুজুরাত: ১৪)।[১]

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَاۤ  اَنۡتَ بِمُؤۡمِنٍ لَّنَا وَ لَوۡ کُنَّا صٰدِقِیۡنَ ‘কিন্তু আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না। যদিও আমরা সত্যবাদী’ (সূরা ইউসুফ: ১৭)। অর্থাৎ ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)-এর ভাইয়েরা বলেছিল যে, আপনি আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না।[২]

দ্বিতীয়তঃ ‘উলামায়ে সালাফ’-এর অভিমত অনুযায়ী اَلْإِيْمَانُ শব্দের অর্থ দু’টি। যথা:

প্রথমতঃ যখন اَلْإِيْمَانُ শব্দটি ‘الباء’ অব্যয় যোগে ব্যবহৃত হবে, তখন অর্থ হবে صدق به বিশ্বাস করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ  اُنۡزِلَ اِلَیۡہِ مِنۡ رَّبِّہٖ  ‘রাসূল তাঁর প্রতিপালক হতে তার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা বিশ্বাস করেন...’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৮৫)। উক্ত আয়াতের اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ এর ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) (৬০০-৬৭১ হি./১২০৪-১২৭৩ খ্রি.) বলেন, صدق الرسول ‘রাসূল বিশ্বাস করেন’।[৩]

দ্বিতীয়তঃ যখন اَلْإِيْمَانُ শব্দটি ‘اللام’ অব্যয় যোগে ব্যবহৃত হবে, তখন অর্থ হবে أقر له ‘স্বীকৃতি দেয়া বা স্বীকার করা’।  যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَاۤ  اَنۡتَ بِمُؤۡمِنٍ لَّنَا وَ لَوۡ کُنَّا صٰدِقِیۡنَ ‘কিন্তু আপনি তো আমাদেরকে স্বীকার করবেন না। যদিও আমরা সত্যবাদী’ (সূরা ইউসুফ: ১৭)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, فَاٰمَنَ لَہٗ  لُوۡطٌ ‘লূত্ব (আলাইহিস সালাম) তাঁর (ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম))-এর প্রতি ঈমান আনলেন’ (সূরা আল-‘আনকাবূত: ২৬)।

সুধী পাঠক! সালাফগণ ঐ সকল অভিধানবেত্তার প্রতিবাদ করেছেন, যারা اَلْإِيْمَانُ শব্দটির অর্থ বর্ণনায় শুধু اَلتَّصْدِيْقُ ‘বিশ্বাস করা’-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছেন। সালাফগণ বলেন, اَلْإِيْمَانُ শব্দটিকে শুধু اَلتَّصْدِيْقُ ‘বিশ্বাস করা’-এর সাথে সংশ্লিষ্ট করলে নিরঙ্কুশ বিশ্বাস বুঝায় না। মূলত এর অর্থ হল- اَلْإِقْرَارُ বা স্বীকার করা এবং اَلطَّمَأنِيْنَةُ বা প্রশান্তি উভয়ই’।[৪] আর اَلْإِقْرَارُ ‘স্বীকার করা’ দু’টি অর্থকে শামিল করে। যথা: (১) قول القلب الذي هو التصديق ‘অন্তরের কথা, যাকে التصديق বা বিশ্বাস করা বলা হয় (২) عمل القلب الذي هو الانقياد ‘অন্তরের আমল, যাকে الانقياد বা অনুগত হওয়া বা বশ্যতা স্বীকার করা বলা হয়।[৫]

শরী‘আতের পরিভাষায়,

ঈমান اَلْإِيْمَانُ এর সংজ্ঞায় সালাফগণের অভিব্যক্তি নিম্নরূপ:

কেউ কেউ বলেছেন: الإيمان قول وعمل ‘ঈমান হল-কথা ও কাজ’।
আবার কেউ বলেছেন, هو قول وعمل ونية ‘ঈমান হল- কথা, কাজ ও নিয়ত’।
আবার কেউ বলেছেন, هو قول وعمل ونية واتباع سنة ‘ঈমান হল- কথা, কাজ, নিয়ত ও সুন্নাতের অনুসরণ’।[৬]
আহলে সুন্নাহর মূলনীতি অনুযায়ী, ঈমান হল-تَصْدِيْقٌ بِالْجِنَانِ وَقَوْلٌ بِاللِّسَانِ وَعَمَلٌ بِالْجَوَارِحِ وَالْأَرَكَانِ يَزِيْدُ بِالطَّاعَةِ وَيَنْقُصُ بِالْمَعْصِيَةِ ‘অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি, আমলে বাস্তবায়নের নাম ঈমান, যা পুণ্য দ্বারা বৃদ্ধি পায় এবং পাপ দ্বারা হ্রাস পায়’।[৭]
শাইখুল ইসলাম ইমাম আহমাদ ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৬১-৭২৮ হি./১২৬৩-১৩২৮ খ্রি.) বলেন, সাহল ইবনু ‘আব্দিল্লাহ আত-তুসতারী (রাহিমাহুল্লাহ) (২০০-২৮৩ হি.)-কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, ঈমান কাকে বলে? তখন তিনি বলেন,

قَوْلٌ وَعَمَلٌ وَنِيَّةٌ وَسُنَّةٌ؛ لِأَنَّ الْإِيْمَانَ إِذَا كَانَ قَوْلًا بِلَا عَمَلٍ فَهُوَ كُفْرٌ، وَإِذَا كَانَ قَوْلًا وَعَمَلًا بِلَا نِيَّةٍ فَهُوَ نِفَاقٍ، وَإِذَا كَانَ قَوْلًا وَعَمَلًا وَنِيَّةً بِلَا سُنَّةٍ فَهُوَ بِدْعَةٍ.

‘কথা, কর্ম, নিয়ত বা সংকল্প এবং সুন্নাতের অনুসরণ করা। কেননা নিশ্চয় ঈমান যখন শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে কিন্তু আমল করবে না, তাহলে সে কুফ্রী করল। আর কথা ও আমল করল কিন্তু নিয়ত বা সংকল্প করল না, তাহলে সে নিফাক্বী করল। আর যখন কথা, কর্ম ও নিয়তও করল কিন্তু সুন্নাত অনুযায়ী করল না, তখন সে বিদ‘আত করল’।[৮] উল্লেখ্য, যারা বলে যে, ঈমান হল- কথা ও কর্মের নাম। তাদের এটা দ্বারা উদ্দেশ্য হল- মুখের ও অন্তরের কথা এবং অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজকে বুঝানো’।[৯]

মূলত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের নিকট অন্তরে বিশ্বাস ও মুখে স্বীকৃতি হল ঈমানের মূল। আর কর্মে বাস্তবায়ন করা ঈমানের শাখা ও পরিপূরক। সুতরাং কারো যদি আমলে ত্রুটি কিংবা কমতি থাকে তাহলে সে ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যায় না বরং অন্তরে বিশ্বাস ও মুখে স্বীকৃতির কারণে সে ফাসিক মুমিন হিসাবে গণ্য। কিন্তু খারেজী চরমপন্থীদের ‘আক্বীদাহ হল, অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়ন সবটাই ঈমান। তাই কেউ যদি ইসলামের কোন ফরয ইবাদত না করে, তাহলে সে ঈমান শূন্য হয়ে যাবে এবং তার রক্ত হালাল হবে। অর্থাৎ তাকে হত্যা করা বৈধ হবে। সে চিরস্থায়ী জাহান্নামের অধিবাসী হবে।[১০] যা সুস্পষ্ট ভ্রান্ত ‘আক্বীদাহ। ইবনু আবিল ইয্্ আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) (৭৩১-৭৯২ হি./১৩৩১-১৩৯০ খ্রি.) বলেন,

فَإِذَا كَانَ الْإِيْمَانُ أَصْلًا لَهُ شُعَبٌ مُتَعَدِّدَةٌ وَكُلُّ شُعْبَة مِنْهَا تُسَمَّى إِيمَانًا فَالصَّلَاة مِنَ الْإِيمَانِ وَكَذَلِكَ الزَّكَاة وَالصَّوْمُ وَالْحَجُّ وَالْأَعْمَالُ الْبَاطِنَة، كَالْحَيَاءِ وَالتَّوَكُّلِ وَالْخَشْيَة مِنَ اللهِ وَالْإِنَابَة إِلَيْهِ، حَتَّى تَنْتَهِي هَذِهِ الشُّعَبُ إِلَى إِمَاطَة الْأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ فَإِنَّهُ مِنْ شُعَبِ الْإِيمَانِ.

‘ঈমান হচ্ছে মূল, যার বহু শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর প্রত্যেকটি শাখাকে ‘ঈমান’ বলা হয়। ফলে ছালাত, যাকাত, ছওম ও হজ্জ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে গোপন আমলও। যেমন লজ্জা, ভরসা, আল্লাহ্্র ভয় ও তাঁর নিকট তওবা। এভাবে ‘রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা’ পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে এসব শাখা-প্রশাখা। কেননা সেটাও ঈমানের অন্তর্ভুক্ত’।[১১] সেজন্য ঈমানের পারিভাষিক অর্থে মৌলিকভাবে পাঁচটি বিষয় থাকা যরূরী। যথা:

অন্তরের কথা।
মুখের স্বীকৃতি।
অন্তরের আমল।
মুখের আমল।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল।[১২]
ইসলামের পঞ্চম খলীফা উমার ইবনু আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) (৬১-১০১ হি./৬৮১-৭২০ খ্রি.) তাঁর ‘আল-জাযীরা’ অঞ্চলের গভর্ণর আদী ইবনু আদী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নিকট এক চিঠিতে লিখেছিলেন,

إِنَّ لِلْإِيْمَانِ فَرَائِضَ وَشَرَائِعَ وَحُدُوْدًا وَسُنَنًا فَمَنِ اسْتَكْمَلَهَا اسْتَكْمَلَ الإِيْمَانَ وَمَنْ لَمْ يَسْتَكْمِلْهَا لَمْ يَسْتَكْمِلِ الإِيْمَانَ.

‘ঈমানের কতগুলো ফরয, বিধি-নিষেধ, সীমারেখা এবং সুন্নাত রয়েছে। যে সেগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে, তার ঈমান পূর্ণ হয়। আর যে সেগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে না, তার ঈমান পূর্ণ হয় না’।[১৩]

আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত

১- রাসূল (ﷺ) আব্দুল ক্বায়স প্রতিনিধি দলকে প্রশ্ন করেছিলেন,

هَلْ تَدْرُوْنَ مَا الإِيْمَانُ بِاللهِ؟ قَالُوْا اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ قَالَ شَهَادَةُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهِ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ وَإِقَامُ الصَّلَاةِ وَإِيْتَاءُ الزَّكَاةِ وَأَظُنُّ فِيْهِ صِيَامُ رَمَضَانَ وَتُؤْتُوْا مِنَ المَغَانِمِ الخُمُسَ.

‘তোমরা কি জানো, ঈমান কী? তারা বলেছিলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল- একথার সাক্ষ্য দেয়া, ছালাত ক্বায়েম করা, যাকাত আদায় করা। রাবী বলেন, আমার মনে হয়, এতে রামাযানের ছিয়ামও আছে- এবং গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ দান করা’।[১৪]

২- আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত,

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ سُئِلَ أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ فَقَالَ ্রإِيْمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِগ্ধ. قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ ্রالْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِগ্ধ. قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ ্রحَجٌّ مَبْرُوْرٌগ্ধ.

‘একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হল- কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করা। আবার প্রশ্ন করা হল- তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। তারপর আবার প্রশ্ন করা হল- তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, কবুলযোগ্য হজ্জ’।[১৫]

৩- আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

্রاَلْإِيْمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُوْنَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّوْنَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيْقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيْمَانِগ্ধ.

‘ঈমানের সত্তর ও ষাটেরও অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম হল- এ কথা বলা হয়ে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই’। আর সর্বনিম্ন হল- রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূরীভূত করা। আর লজ্জাশীলতাও ঈমানের একটি শাখা’।[১৬]

উপরিউক্ত হাদীছত্রয় থেকে বুঝা যায় যে, আমলও ঈমানের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। আর ঈমানের সংজ্ঞা অনুযায়ী ভাল কাজের আমলের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং খারাপ আমলের মাধ্যমে ঈমান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।

সালাফদের বক্তব্য

আমল যে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত বিষয় এ বিষয়ে সালাফগণের বক্তব্য নিম্নরূপ:

১- ইমাম আউযাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) (৮৮-১৫৭ হি./৭০৭-৭৭৪ খ্রি.) বলেন,

كَانَ مَنْ مَضَى مِنَ السَّلَفِ لَا يُفَرِّقُوْنَ بَيْنَ الْإِيْمَانِ وَالْعَمَلِ فَمَنِ اسْتَكْمَلَهَا اسْتَكْمَلَ الْإِيْمَانَ وَمَنْ لَمْ يَسْتَكْمِلْهَا لَمْ يَسْتَكْمِلِ الْإِيْمَانَ.

‘সালাফে ছালেহীন ঈমান এবং আমলের মধ্যে কোন পার্থক্য করতেন না। যে আমল পূর্ণ করল, সে ঈমান পূর্ণ করল। আর যে আমল পূর্ণ করল না, সে ঈমান পূর্ণ করল না’।[১৭] তিনি আরো বলেন,

وَكَانَ مَنْ مَضَى مِنْ سَلَفِنَا لَا يُفَرِّقُوْنَ بَيْنَ الْإِيْمَانِ وَالْعَمَلِ وَالْعَمَلُ مِنَ الْإِيْمَانِ وَالْإِيْمَانُ مِنَ الْعَمَلِ.

‘আমাদের সালাফে ছালেহীন ঈমান এবং আমলের মধ্যে কোন পার্থক্য করতেন না। আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত এবং ঈমান আমলের অন্তর্ভুক্ত’।[১৮]

২- ইমাম আজুর্রী (রাহিমাহুল্লাহ) (২৮০-৩৬০ হি.) বলেন,

بَابُ الْقَوْلِ بِأَنَّ الْإِيْمَانَ تَصْدِيْقٌ بِالْقَلْبِ وَإِقْرَارٌ بِاللِّسَانِ وَعَمَلٌ بِالْجَوَارِحِ لَا يَكُوْنُ مُؤْمِنًا إِلَّا أَنْ تَجْتَمِعَ فِيْهِ هَذِهِ الْخِصَالُ الثَّلَاثُ.

‘অনুচ্ছেদ: ঈমান অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা কাজের নাম। কেউ ততক্ষণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না তার মধ্যে এই তিনটি বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটবে’।[১৯] এরপর তিনি বলেন,

ثُمَّ اعْلَمُوْا أَنَّهُ لَا تُجْزِئُ الْمَعْرِفَةُ بِالْقَلْبِ وَالتَّصْدِيْق إِلَّا أَنْ يَكُوْنَ مَعَهُ الْإِيْمَانُ بِاللِّسَانِ نُطْقًا وَلَا تُجْزِيءُ مَعْرِفَةٌ بِالْقَلْبِ، وَنُطْقٌ بِاللِّسَانِ، حَتَّى يَكُوْنَ عَمَلٌ بِالْجَوَارِحِ، فَإِذَا كَمُلَتْ فِيْهِ هَذِهِ الثَّلَاثُ الْخِصَالِ كَانَ مُؤْمِنًا دَلَّ عَلَى ذَلِكَ الْقُرْآنُ، وَالسُّنَّةُ، وَقَوْلُ عُلَمَاءُ الْمُسْلِمِيْنَ.

‘অতঃপর জেনে রাখুন, শুধু অন্তরের বিশ্বাস যথেষ্ট হবে না, যতক্ষণ না এর সাথে মৌখিক স্বীকৃতি থাকবে। অনুরূপভাবে অন্তরের বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি যথেষ্ট হবে না, যতক্ষণ না এর সাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল থাকবে। অতএব কোন ব্যক্তির মাঝে এই তিনটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেলে সে-ই ‘মুমিন’ হিসাবে গণ্য হবে। কুরআন, হাদীছ এবং ওলামায়ে মুসলিমীনের বক্তব্য একথারই প্রমাণ বহন করে’।[২০]

৩- শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৬১-৭২৮ হি./১২৬৩-১৩২৮ খ্রি.) বলেন,

وَمِنْ أُصُوْلِ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ أَنَّ الدِّيْنَ وَالإِيْمَانَ قَوْلٌ وَعَمَلٌ قَوْلُ الْقَلْبِ وَاللِّسَانِ وَعَمَلُ الْقَلْبِ وَاللِّسَانِ وَالْجَوَارِحِ.

‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে, কথা ও কাজের নাম দ্বীন ও ঈমান। কথা বলতে অন্তর এবং মুখের কথা বুঝানো হয়েছে। আর আমল বলতে অন্তর, মুখ এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল বুঝানো হয়েছে’।[২১]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


[১]. আবূ মানছূর মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনুল আযহারী আল-হারবী, তাহযীবুল লুগাহ, ১৫শ খণ্ড (বৈরূত: দারু ইহইয়াইত তুরাছির ‘আরাবী, ১ম সংস্করণ, ২০০১ খ্রি.), পৃ. ৩৬৮; মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আয-যুবাইদী, তাজুল ঊরূস মিন জাওয়াহিল কামূস (দারুল হিদায়া, তাবি), ৩৪শ খণ্ড, পৃ. ১৮৬।

[২]. মুহাম্মাদ ইবনু মুকাররম ইবনু ‘আলী ইবনু মানযূর আল-ইফরীক্বী, লিসানুল ‘আরব, ১৩শ খণ্ড (বৈরূত: দারু ছাদর, ৩য় সংস্করণ, ১৪১৪ হি.), পৃ. ২৩।

[৩]. আবূ ‘আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ বকর শামসুদ্দীন আল-কুরতুবী, আল-জামি‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ৩য় খণ্ড (রিয়াদ: দারু ‘আলিমিল কুতুব, ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি.), পৃ. ৪২৫।

[৪]. শাইখুল ইসলাম ইমাম আহমাদ ইবনু তাইমিয়্যাহ, আছ-ছারিমুল মাসলূল ‘আলা শাতিমির রাসূল (সঊদী আরব: আল-হারাসুল ওয়াত্বানী আস-সাঊদী, তা.বি), পৃ. ৫১৯।

[৫]. শাইখুল ইসলাম ইমাম আহমাদ ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৭ম খণ্ড (দারুল ওয়াফা, ৩য় সংস্করণ, ১৪২৬ হি./২০০৫ খ্রি.), পৃ. ৬৩৮; ঐ, আল-ঈমানুল আওসাত্ব (রিয়াদ: দারু ত্বাইয়েবা লিন নাশর, ১ম সংস্করণ, ১৪২২ হি.), পৃ. ১৮৪।

[৬]. মুহাম্মাদ ইবনু খালীফাহ ইবনু ‘আলী আত-তামীমী, হুকূকুন নবী (ﷺ) ‘আলা উম্মাতিহি ফী যাওইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড (রিয়াদ: আযওয়াঊস সালাফ, ১ম সংস্করণ, ১৪১৮ হি./১৯৯৭ খ্রি.), পৃ. ২৬; খালিদ ইবনু ‘আব্দিল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-মুছলিহ, শারহুল আক্বীদাহ আল-ওয়াসিত্বিয়্যাহ, আলোচ্য বিষয়: ২৩, পৃ. ২।

[৭]. ইবনু তাইমিয়াহ, আল-আক্বীদাতুল ওয়াসেত্বিইয়াহ, তাহক্বীক্ব: আশরাফ ইবনে আব্দুল মাক্বছূদ (রিয়ায : আযওয়াউস সালাফ, ২য় প্রকাশ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি), পৃ. ১১৩; আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল হামীদ আল-আছারী, আল-ওয়াজীয ফী আক্বীদাতিস সালাফিছ ছলেহ (সঊদী ধর্ম মন্ত্রণালয়, ১ম প্রকাশ, ১৪২২ হি.), পৃ. ১০৩।

[৮]. ইবনু তাইমিয়াহ, আল-ঈমান, তাহক্বীক্ব: মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (‘আম্মান: আল-মাকতাবুল ইসলামী, ৫ম সংস্করণ, ১৪১৬ হি./১৯৯৬ খ্রি.), পৃ. ১৩৮।

[৯]. হুকূকুন নবী (ﷺ) ‘আলা উম্মাতিহি ফী যাওইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৭।

[১০]. হুকূকুন নবী (ﷺ) ‘আলা উম্মাতিহি ফী যাওইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯।

[১১]. ইবনু আবিল ইয্্, শারহুল আক্বীদাহ আত-ত্বহাবিইয়াহ, তাহক্বীক্ব : আহমাদ শাকের, (সঊদী আরব :  ধর্ম, ওয়াক্্ফ, দা‘ওয়াত ও দিক-নির্দেশনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ১ম প্রকাশ, ১৪১৮ হি.), পৃ. ৩২৩।

[১২]. ইবনু তাইমিয়াহ, আল-আক্বীদাতুল ওয়াসেত্বিইয়াহ, পৃ. ১১৩।

[১৩]. ছহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০ (‘মু‘আল্লাক্ব’ হিসাবে); আল-ইবানাহ আল-কুবরা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৫৮ পৃ, আছার নং-১১৬৬।

[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৭২৬৬।

[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬।

[১৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩৫; আবূ দাঊদ, হা/৪৬৭৬।

[১৭]. সাফফারীনী, লাওয়ামি‘উল আনওয়ার আল-বাহিয়্যাহ, ১ম খণ্ড (দিমাশক্ব : মুওয়াস্সাসাতুল খাফিক্বীন, ২য় প্রকাশ, ১৪০২ হি./১৯৮২ খ্রি.), পৃ. ৪০৫।

[১৮]. ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল হামীদ আল-আছরী, আল-ঈমানু হাক্বীক্বাতুহ ওয়া খাওয়ারিমাহু ওয়া নাওয়াক্বিযাহু ‘ইনদা আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আতি (রিয়াদ: মাদারুল ওয়াত্বান লিন নাশর, ১ম সংস্করণ, ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি.), পৃ. ৪০; ড. গালিব ইবনু আলী ‘আওয়াজী, ফিরাকুন মু‘আছিরাহ তানতাসিবু ইলাল ইসলাম ওয়া বায়ানু মাওক্বিফুল ইসলাম মিনহা, ৩য় খণ্ড (জিদ্দা: আল-মাকতাবাতুল ‘আছরিয়্যাহ আয-যাহাবিয়্যাহ লিত-ত্বাবা‘আতি ওয়ান নাশর, ৪র্থ সংস্করণ, ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.), পৃ. ১১০৬; ইবনু তাইমিয়্যাহ, আল-ঈমান, পৃ. ২৩২।

[১৯]. আবুবকর আল-আজুর্রী, আশ-শারী‘আহ, ২য় খণ্ড (রিয়ায: দারুল ওয়াত্বান, ২য় প্রকাশ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.), পৃ. ৬১১।

[২০]. আশ-শারী‘আহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬১১।

[২১]. মুহাম্মাদ ইবনু খালীল হাসান হাররাস, শারহুল আক্বীদাহ আল-ওয়াসিত্বিইয়্যাহ (আল-খাবির, সঊদী আরব: দারল হিজরাহ, ৩য় সংস্করণ, ১৪১৫ হি.), পৃ. ২৩১।




প্রসঙ্গসমূহ »: মুসলিম জাহান
বিদ‘আত পরিচিতি (১৩তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (২৭তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
অহংকার করা ও তার পরিণাম (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩টি উপায় (শেষ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
বিদ‘আত পরিচিতি (৭ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ঈদুল ফিতরে করণীয় ও বর্জনীয় - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ইসলামে রোগ ও আরোগ্য - ড. মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
সুন্নাহ বিরোধী ও সংশয় উত্থাপনকারীদের চক্রান্তসমূহ ও তার জবাব - হাসিবুর রহমান বুখারী
ক্রোধের ভয়াবহতা ও তার শারঈ চিকিৎসা (শেষ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
উমরাহ ও হজ্জের সঠিক পদ্ধতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি (শেষ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ফাযায়েলে কুরআন (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ