উম্মাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অধিকার: একটি বিশ্লেষণ
-ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
(৩য় কিস্তি)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান আনয়নের প্রকৃতি
রাসূলল্লাহ (ﷺ)-এর ঈমান আনয়ন করা ঈমানের রুকন বা স্তম্ভসমূহের অন্যতম। তাঁর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান আনয়ন ব্যতীত কোন মানুষের ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। ঈমানদার বলে দাবীও করতে পারবে না। সে অধিকারও রাখে না। এ প্রসঙ্গে কোনরূপ সন্দেহ, সংশয়, দূরতম ও মনগড়া ব্যাখ্যা এবং বাড়াবাড়ী করার কোন সুযোগ নেই। এজন্য উম্মাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অন্যতম অধিকার হলো- তাঁর প্রতি পরিপূর্ণরূপে পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ ঈমান আনয়ন করা। নবী-রাসূলদের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক হওয়ার অনেক দলীল-প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡہَکُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ وَ لٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ وَ الۡکِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ.
‘তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল পূর্ব বা পশ্চিম দিকে প্রত্যাবর্তিত করার মধ্যে কোন ছাওয়াব নেই; বরং পূণ্য তার, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৭৭)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡہِ مِنۡ رَّبِّہٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَ مَلٰٓئِکَتِہٖ وَ کُتُبِہٖ وَ رُسُلِہٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِہٖ.
‘রাসূল তাঁর প্রতিপালক হতে তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছেন এবং মুমিনগণও; তাঁরা সবাই ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর এবং তাঁর রাসূলগণের উপর। আমরা তার রাসূলগণের মধ্যে কাউকেও পার্থক্য করি না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৮৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡفُرُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ رُسُلِہٖ وَ یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یُّفَرِّقُوۡا بَیۡنَ اللّٰہِ وَ رُسُلِہٖ وَ یَقُوۡلُوۡنَ نُؤۡمِنُ بِبَعۡضٍ وَّ نَکۡفُرُ بِبَعۡضٍ ۙ وَّ یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یَّتَّخِذُوۡا بَیۡنَ ذٰلِکَ سَبِیۡلًا- اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ حَقًّا.
‘যারা আল্লাহ ও তার রাসূলদের সাথে কুফুরী করে, আল্লাহ ও তার রাসূলদের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে আমরা কারো প্রতি ঈমান আনয়ন করব ও কারো প্রতি ঈমান আনয়ন করব না। আর তারা কুফর ও ঈমানের মাঝখানে একটি পথ বের করতে চায়, তারা সবাই প্রকৃত কাফের’ (সূরা আন-নিসা: ১৫০)।
সুধী পাঠক! উপরিউক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করাকে তাঁর প্রতি, ফেরেশতাগণের প্রতি এবং কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনয়নের সাথে মিলিয়ে উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে যারা আল্লাহর প্রতি এবং রাসূলদের প্রতি ঈমান আনয়নের মধ্যে পার্থক্য করবে এবং কারো প্রতি ঈমান আনবে ও কারো প্রতি কুফুরী করবে, তাদেরকে কাফের হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
নবী ও রাসূলের ধারাবাহিকতায় আল্লাহ তা‘আলা তার নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসাবে যমীনবাসীর নিকট পাঠান। ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ পৃথিবীতে আসবে, তাদের সকলের জন্য তিনিই নবী হিসাবে থাকবেন। তাকে এমন শরী‘আত দিয়ে পাঠানো হয়েছে, যা সর্বকালের সকল মানুষের জন্য উপযোগী। এ শরী‘আতের কোন পরিবর্তন কিংবা রদবদল হবে না। সমস্ত যমীনবাসীর জন্য তাঁর অনুসরণ এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اٰمِنُوۡا بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ الۡکِتٰبِ الَّذِیۡ نَزَّلَ عَلٰی رَسُوۡلِہٖ وَ الۡکِتٰبِ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ مِنۡ قَبۡلُ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡفُرۡ بِاللّٰہِ وَ مَلٰٓئِکَتِہٖ وَ کُتُبِہٖ وَ رُسُلِہٖ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیۡدًا.
‘হে মুমিনগণ! তোমরা বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এবং এ কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর অবতীর্ণ করেছেন এবং ঐ কিতাবের প্রতি যা পূর্বে অবতীর্ণ করেছিলেন এবং যে আল্লাহর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং পরকাল সম্বোন্ধে অবিশ্বাস করে তবে নিশ্চয় ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে’ (সূরা আন-নিসা: ১৩৬)।
মুহাম্মাদ (ﷺ) সর্বযুগে সকল ধরনের মানুষের জন্য রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلۡ یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنِّیۡ رَسُوۡلُ اللّٰہِ اِلَیۡکُمۡ جَمِیۡعَۨا ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল হিসাবে এসেছি’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৮)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا کَآفَّۃً لِّلنَّاسِ بَشِیۡرًا وَّ نَذِیۡرًا وَّ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ‘আর আমরা তো আপনাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে পাঠিয়েছি। কিন্তু বেশীর ভাগ লোক জানে না’ (সূরা সাবা: ২৮)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ ‘হে মুহাম্মাদ! আমি আপনকে সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি’ (সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৭)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
مَا کَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنۡ رِّجَالِکُمۡ وَ لٰکِنۡ رَّسُوۡلَ اللّٰہِ وَ خَاتَمَ النَّبِیّٖنَ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمًا.
‘মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে কারোর পিতা নন। কিন্তু তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত’ (সূরা আল-আহযাব: ৪০)।
সুধী পাঠক! আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপর যে আয়াতগুলো নাযিল করেছেন, সেখানে সকল জিন ও মানব জাতিকে সম্বোধন করা হয়েছে এবং জাতিগত ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে থেকে তাদের সকলকে এক দ্বীনের বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়েছে। মোটকথা নবীদের দ্বীন মাত্র একটিই। আর তা হচ্ছে ইখলাছের সাথে আল্লাহর ইবাদত করা এবং শিরক ও ফাসাদ থেকে বিরত থাকা। পরিস্থিতি, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজন অনুপাতে যদিও তাদের শরী‘আত বিভিন্ন হয়েছে, কিন্তু তাদের দ্বীনের মূল কথা একই। এভাবেই মুহাম্মাদ (ﷺ) পর্যন্ত এসে নবী-রসূলদের ধারাবাহিকতা শেষ হয়েছে।
১- রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান আনয়নের অর্থ
এ প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৬১-৭২৮ হি./১২৬৩-১৩২৮ খ্রি.) বলেন,
هُوَ تَصْدِيْقُهُ وَطَاعَتُهُ وَاِتِّبَاعُ شَرِيْعَتِهِ
‘তাঁকে সত্যায়ন করা তথা বিশ্বাস করা, তাঁর আনুগত্য করা এবং তাঁর শরী‘আতের অনুসরণ করা’।[১] মূলত এই বিষয়গুলো এমন রুকন বা স্তম্ভ, যার উপর নবী (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং নবী (ﷺ)-এর প্রতি আনয়নের আলোচনায় এগুলো ব্যাখ্যা করা আবশ্যক। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর উক্ত বক্তব্যকে আলেমগণ দু’টি বিভাগে ভাগ করে আলোচনা করেছেন। যেমন,
প্রথমতঃتَصْدِيْقُهُ صَلَّى اللهَ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সত্যায়ন করা বা বিশ্বাস করা। এ অংশটি আার দু’টি বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। যথা:
১- ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, إثْبَاتُ نُبُوَّتِهِ وَصِدْقِهِ فِيْمَا بَلَّغَهُ عَنْ اللهِ وَهَذَا مُخْتَصٌّ بِهِ ‘নির্দিষ্টভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নবুওয়াতকে সাব্যস্ত করা এবং আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তিনি যা প্রচার করেছেন বা পৌঁছে দিয়েছেন তাকে সত্যায়ন করা।[২] আর এই সাব্যস্তকরণ ও সত্যায়ন করার বিষয়টি নিম্নোক্ত স্তরগুলোর মাঝে সীমাবদ্ধ। যথা:
১. الإيمان بعموم رسالته إلى كافة الثقلين إنسهم وجنهم ‘দুই মর্যাদাবান সৃষ্টি মানুষ এবং জিন উভয়ের জন্যই তাঁর রিসালাতের সর্বজনীনতাকে স্বীকৃতি দেয়া’।
২. الإيمان بكونه خاتم النبين ورسالته خاتمة الرسالات ‘তাঁকে সর্বশেষ নবী হওয়া ও তাঁর রিসালাতাকে সর্বশেষ রিসালাত হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া’।
৩. الإيمان بكون رسالته ناسخة لما قبلها من الشرائع ‘তাঁর রিসালাতকে পূর্ববর্তী সকল শরী‘আতের রহিতকারী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া’।
৪. الإيمان بأنه ﷺ قد بلغ الرسالة وأكملها وأدى الأمانة ونصح لأمته حتى تركهم على البيضاء ليلها كنهارها.‘এই মর্মে স্বীকৃতি দেয়া যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রিসালাত পৌঁছে দিয়েছেন, তা পূর্ণ করেছেন, আমানত পূরণ করেছেন এবং তাঁর উম্মাহকে উপদেশ দিয়েছেন। এমনকি তিনি তাদের এমন সরল পথে রেখে গেছেন, যার রাত দিনের মতই স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন’।
৫. الإيمان بعصمته صلى الله عليه وسلم ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মা‘ছূম বা নিষ্পাপত্বের প্রতি স্বীকৃতি দেয়া’।
৬. الإيمان بماله من حقوق خلاف ما تقدم ذكره كمحبته وتعظيمه صلى الله عليه وسلم ‘উপরিউক্ত অধিকার ব্যতীত তার অন্যান্য অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া। যেমন মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে ভালোবাসা, সম্মান করা ইত্যাদি’।[৩]
২- শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
تَصْدِيقُهُ فِيمَا جَاءَ بِهِ وَأَنَّ مَا جَاءَ بِهِ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ حَقٌّ يَجِبُ اتِّبَاعُهُ وَهَذَا يَجِبُ عَلَيْهِ وَعَلَى كُلِّ أَحَدٍ.
‘তিনি যা এনেছেন তাকে স্বীকৃতি দেয়া। আর তিনি যা আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে এনেছেন তা সত্য এবং তা অনুসরণ করা আবশ্যক। এটি রাসূল (ﷺ)-এর উপর এবং সকলের উপর বাধ্যতামূলক।[৪] অর্থাৎ নবী (ﷺ) আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে যে সকল বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন, পূর্বের কোন সংবাদ হোক কিংবা ভবিষ্যৎ কোন সংবাদ হোক এবং হালালসমূহ ও হারাম সমূহ তাকে সত্য হিসাবে বিশ্বাস করা ওয়াজিব। সুতরাং এই মর্মে ঈমান আনয় করা যে, এগুলো সবই আল্লাহ রব্বুল আলামীনের নিকট থেকে আগত।[৫] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مَا یَنۡطِقُ عَنِ الۡہَوٰی - اِنۡ ہُوَ اِلَّا وَحۡیٌ یُّوۡحٰی
‘আর তিনি মনগড়া কথাও বলেন না। এটা তো অহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়’ (সূরা আন-নাজম: ৩-৪)। ইবনু আবীল ঈয আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
يَجِبُ عَلَى كُلِّ أَحَدٍ أَنْ يُؤْمِنَ بِمَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ إِيْمَانًا عَامًّا مُجْمَلًا، وَلَا رَيْبَ أَنَّ مَعْرِفَةَ مَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ عَلَى التَّفْصِيْلِ فَرْضٌ عَلَى الْكِفَايَةِ.
‘প্রত্যেককে পরিপূর্ণ ঈমানের সাথে রাসূল (ﷺ) যা এনেছেন তাতে ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। আর কোন সন্দেহ নেই যে, রাসূল (ﷺ) যা নিয়ে এসেছেন সে ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে জ্ঞান অর্জন করা ফরযে কিফায়া’।[৬]
দ্বিতীয়তঃ طاعته واتباع شريعته তাঁর আনুগত্য করা এবং তাঁর শরী‘আতের অনুসরণ করা’। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান আনার মধ্যে রয়েছে তিনি যা এনেছেন তাতে বিশ্বাস রাখা এবং তিনি যা এনেছেন সে অনুযায়ী কাজ করার দৃঢ় সংকল্প করা। এটি তাঁর প্রতি ঈমানের স্তম্ভগুলোর দ্বিতীয় স্তম্ভ। অর্থাৎ তিনি যা আদেশ করেছেন তা পালন করে এবং তিনি যা নিষেধ করেছেন এবং সতর্ক করেছেন তা থেকে এড়িয়ে চলার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَ مَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡہُ ٭ وَ مَا نَہٰىکُمۡ عَنۡہُ فَانۡتَہُوۡا ‘রাসূল (ﷺ) তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক’ (সূরা আল-হাশর: ৭)।
সুতরাং মানব জাতির উচিত তাঁর শরী‘আতের অনুসরণ করা এবং তাঁর সুন্নাহ মেনে চলা, একই সাথে তাঁর নির্দেশিত বিধানে সন্তুষ্ট থাকা এবং তার কাছে আত্মসমর্পণ করা। এছাড়া এরা দৃঢ়ভাবে ঈমান আনয়ন করা যে, তাঁর আনুগত্য করা মানে মহান আল্লাহর আনুগত্য করা এবং তাঁর অবাধ্যতা মানে মহান আল্লাহর অবাধ্যতা করা। কেননা তিনি হলেন মহান আল্লাহ এবং মানব ও জিন জাতির মাধে তাবলীগের মধ্যস্থতাকারী। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৬১-৭২৮ হি./১২৬৩-১৩২৮ খ্রি.) বলেন,
يَجِبُ عَلَى الْخَلْقِ الْإِقْرَارُ بِمَا جَاءَ بِهِ النَّبِيُّ ﷺ فَمَا جَاءَ بِهِ الْقُرْآنُ الْعَزِيْزُ أَوْ السُّنَّةُ الْمَعْلُوْمَةُ وَجَبَ عَلَى الْخَلْقِ الْإِقْرَارُ بِهِ جُمْلَةً وَتَفْصِيْلًا عِنْدَ الْعِلْمِ بِالتَّفْصِيْلِ؛ فَلَا يَكُوْنُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا حَتَّى يُقِرَّ بِمَا جَاءَ بِهِ النَّبِيُّ ﷺ وَهُوَ تَحْقِيْقُ شَهَادَةِ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ. فَمَنْ شَهِدَ أَنَّهُ رَسُوْلُ اللهِ شَهِدَ أَنَّهُ صَادِقٌ فِيْمَا يُخْبِرُ بِهِ عَنْ اللهِ تَعَالَى فَإِنَّ هَذَا حَقِيْقَةُ الشَّهَادَةِ بِالرِّسَالَةِ.
‘নবী (ﷺ) যা এনেছেন, তা মানুষকে স্বীকার করতে হবে। পবিত্র কুরআন বা সুন্নাহ যা-ই আনুক না কেন, মানুষ যখন বিস্তারিতভাবে জানবে তখন তাকে সম্পূর্ণরূপে এবং বিস্তারিতভাবে স্বীকার করতে হবে। একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারে না যতক্ষণ না সে নবী (ﷺ) যা এনেছেন তা স্বীকার করে। যা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল। সুতরাং যে কেউ সাক্ষ্য দেয় যে, তিনি আল্লাহর রাসূল, সে সাক্ষ্য দেয় যে, তিনি মহান আল্লাহ সম্পর্কে আমাদের যা বলেন তাতে তিনি সত্যবাদী, কারণ এটিই রিসালাতের প্রকৃত সাক্ষ্য’।[৭]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
[১]. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইক্বতিযাঊছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম লিমুখালিফাতি আছহাবিল জাহীম, ১ম খণ্ড (রিয়াদ: মাকতাবাতুর রুশদ, তাবি), পৃ. ২৯৫।
[২]. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৫শ খণ্ড (দারুল ওয়াফাহ, ৩য় সংস্করণ, ১৪২৬ হি./২০০৫ খ্রি.), পৃ. ৯১।
[৩]. মুহাম্মাদ ইবনু খালীফাহ ইবনু ‘আলী আত-তামীমী, হুকূকুন নাবী (ﷺ) ‘আলা উম্মাতিহি ফী যাউইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড (রিয়ায: আযওয়াফুস সালাফ, ১ম সংস্করণ, ১৪১৮ হি./১৯৯৭ খ্রি.), পৃ. ৩৪।
[৪]. মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৫শ খণ্ড, পৃ. ৯১।
[৫]. হুকূকুন নাবী (ﷺ) ‘আলা উম্মাতিহি ফী যাউইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫।
[৬]. ইবনু আবীল ঈয আল-হানাফী, শারহুল আক্বীদাতিত ত্বাহাবিয়্যাহ (বৈরূত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, ৪র্থ সংস্করণ, ১৩৯১ হি.), পৃ. ৬৯।
[৭]. মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৫৪।
প্রসঙ্গসমূহ »:
মুসলিম জাহান