বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা

-মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান*


 (শেষ কিস্তি)

ইসলাম ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ছালাতের পার্থিব উপকারিতা

মহান আল্লাহ প্রদত্ত অন্যতম নে‘মত ছালাত আমাদেরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পবিত্রতা, নিয়মানুবর্তিতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, আনুগত্য, নেতৃত্ব, শ্রদ্ধাশীলতা, বিনয়, একতা, আল্লাহভীতি ও পরহেযগারিতা ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দেয়। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক সৎ কাজের জন্য ইহকালে ও পরকালে পুরস্কার ও সুফল নির্ধারণ করেছেন।

ছালাতের পার্থিব উপকারিতা

(১) শরীর, মন ও জ্ঞান এই তিনটির সমন্বয়ে ছালাত। ছালাতে হৃদয়ের সজীবতা ও প্রাণের স্পর্শ থাকবে। (২) ছালাতে শরীরের কাজ ক্বিয়াম, কুঊদ, রুকূ‘, সুজূদ, তাকবীর, তাসবীহ ও ক্বিরাআত প্রভৃতি। আর জ্ঞানের কাজ হল- চিন্তা ও গবেষণার এবং ক্বলব বা হৃদয়ের কাজ হল- একনিষ্ঠ মনে, একাগ্রচিত্রে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা। (৩) মুসলিমদের দিনের শুরু ফজরের ছালাত দিয়ে। তাই তাকে খুব ভোরে উঠতে হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ইংরেজীতে আছে- ঊধৎষু ঃড় নবফ ধহফ বধৎষু ঃড় ৎরংব. সধশবং ধ সধহ যবধষঃযু বিধষঃযু ধহফ রিংব (ঋৎধহশষরহ). (৪) ছালাতের পূর্বে ওযূ ও গোসল করতে হয়, যা মুখম-ল, হাত, মাথা ও পা সহ সমস্ত শরীরকে জীবাণুমুক্ত করে। (৫) মহান আল্লাহর নির্দেশ হল- ‘প্রত্যেক ছালাতের সময় তোমরা উত্তম পোশাকে সুসজ্জিত হও’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৩১)। (৬) ছালাত মানুষের জীবনে শৃংখলা এনে দেয়। অসময়ে ঘুম, অসময়ে খাওয়া এবং সকল প্রকার অনিয়মের হাত থেকে রক্ষা করে। (৭) প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করা, নির্মল বায়ু সেবন করা ও হালকা কিছু ব্যায়াম করা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য। সূর্যোদয়ের একঘণ্টা পূর্বের নির্মল ও পবিত্র বায়ু মস্তিষ্ককে সবল করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, মনে অনাবিল আনন্দ দান করে এবং বিশুদ্ধ অক্সিজেন ফুসফুসকে সতেজ করে। (৮) ভোরে উঠলে অলসতা, অকর্মন্যতা ও পুষ্টিহীনতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। (৯) অন্যান্য ধর্মের লোকেরও সুস্থ থাকার জন্য সকালে উঠে ব্যায়াম, অঙ্গ পরিচালনা করে থাকে এবং সকল প্রকার সৈনিকগণ সকালে শারীরিক কসরত করে থাকে। (১০) ছালাত আত্মা ও মনের সাথে সম্পৃক্ত। ঘুমানোর পর শরীর জড়রূপ ধারণ করে। ছালাত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের জড়তা ভেঙ্গে দেয়। শীত-গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে ঈমানদার ব্যক্তি আযানের পর বিছানায় আর পিঠ রাখতে পারে না। (১১) যুবক-যুবতীরা ভরা যৌবনে আল্লাহর ভালবাসায় বিভোর হয়ে ভোরে বিছানা ত্যাগ করে ছালাতের জন্য বেরিয়ে পড়ে। এদের জন্যই তো রয়েছে আল্লাহর আরশের ছায়া।

ছালাতের বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে শরীরের বিশেষ উপকারিতা

ক). ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো : দুই পায়ে সমান ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হয় এবং দুই পায়ের মাঝে কিছু ফাঁকা থাকে, যাতে পাশের মুছল্লীদের পায়ের সাথে পা এবং কাঁধের সাথে কাঁধ লেগে থাকে। এ দাঁড়ানো বিজ্ঞানসম্মত ও এর উপকারিতাও অনেক। এতে ছোট-বড়, ধনী-গরীব, কুলি-মজুর ও সমাজের সকল শ্রেণীর লোকের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠে। পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, অহমিকা এবং ঘৃণা নামক প্রবৃত্তি যাতে প্রকাশ না পায়। এটাই সুন্নাত। তাছাড়া দু’জনের মাঝে ফাঁকা থাকলে সেখানে শয়তান দাঁড়ায়।[১] দুই কাঁধ বা কান বরাবর উঠিয়ে সম্পূর্ণ খালি হাতে একনিষ্ঠ মনে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছালাতে দাঁড়াতে হয়। এর ফলে ফুসফুস প্রশস্ত হয়।

খ). রুকূ‘তে হাঁটু ধরে বিনয়ের সাথে অবনত হওয়া : ক্বিয়াম শেষে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে মনপ্রাণ সপে দিয়ে আমরা আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পিত হই। যেমন-

(ক) রুকু‘তে কোমড় বাঁকা ও সোজা হয়ে দাঁড়ালে উক্ত স্থানের মাংসপেশী সহ স্নায়ুগুলো ও মেরুদ-ের হাড়গুলো সবল ও সতেজ হয়। ফলে বিভিন্ন জটিল রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।

(খ) দুই হাতে চেঁপে ধরে দুই হাঁটু সোজা রাখা আবার পরক্ষণে সোজা হয়ে সেজদায় যাওয়ায় গিরা দু’টির পেশী মযবুত হয় এবং নানাবিধ ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

(গ) রুকূ‘ অবস্থায় দুই কনুই, কব্জি এবং কাঁধের দুই গিরার উপরে চাপ পড়ে। ফলে গিরাগুলো কর্মঠ ও সচল হয়। ফলে গিরার ব্যথা থেকে রেহায় পাওয়া যায়।

(ঘ) রুকূ‘তে যাওয়া ও উঠার সময় পাকস্থলি, যকৃত, ক্লোন, ক্ষুদ্র অন্ত্র ও বৃহৎ অন্ত্রগুলোর উপর চাঁপ সৃষ্টির ফলে এগুলো সংকোচন ও প্রসারণ হয় এবং রক্ত সঞ্চালন সক্রিয় হয়। তখন ঐ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে বিভিন্ন প্রকার পাচক রস এবং লিভার (যকৃত) থেকে পিত্তরস আমাদের ভক্ষিত খাদ্যদ্রব্যের সাথে মিশে হজমে সহায়তা করে। আর দু’টি কিডনী (বৃক্ক) একই কারণে সজীবতা লাভ করে। ফলে আমরা বদহজম ও অন্যান্য কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাই।

(ঙ) রুকূ‘ অবস্থায় শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়া সুগম হয় এবং হৃদপি- থেকে অশোধিত রক্ত দুই ফুসফুসে গিয়ে শোধিত হয়ে পুনরায় হৃদপি-ে ফিরে আসে। সেখান থেকে শোধিত রক্ত সমস্ত শরীরে সঞ্চালিত হয়ে এই জটিল প্রক্রিয়াকে ত্রুটিমুক্ত করে শরীরকে সুস্থ রাখে।

(চ) রুকূ‘তে যাওয়া এবং উঠার সময় পেটের ও পিঠের মাংসপেশীগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে বলে কাজটি সহজ হয়। ফলে মেরু-রজ্জুসহ মেরুদ-ের কার্যাবলী সঠিকভাবে চলে।

গ). সিজদায় মহান আল্লাহর দরবারে লুটিয়ে পড়া : মানুষ যখন সিজদায় অবনত হয়, মাথা নীচু অবস্থায় থাকায় স্বাভাবিকভাবেই হৃদপি- থেকে মাথার প্রতিটি অংশে বিশেষত মস্তিষ্কে প্রতিটি কোষে বেশী পরিমাণ রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মন সুস্থ সবল থাকে এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়। তাইতো বলে, ঐবধষঃযু সরহফ রং ধ যবধষঃযু নড়ফু. অর্থাৎ ‘সুস্থ শরীরেই সুস্থ মন বিরাজ করে’।

ঘ). দুই সিজদার মাঝে বসা : এখানে বাম পায়ের উপরে বসে ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো খাড়া অবস্থায় ভাজ করে রাখতে হয়। যদি কেউ ডান পা পিছনের দিকে বাঁকা করে রাখে, তাহলে ডান পায়ের গিরার উপর চাপ পড়ে। হাদীছ অনুযায়ী না বসলে গিরাটি দুর্বল হবে এবং নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আঙ্গুলের শিরা-উপশিরার রক্ত চলাচলেও বিঘœ ঘটে। সিজদায় হাত-পা, পেট-পিঠ, কোমড় সহ হাত ও পায়ের সবগুলো জোড়া কাজ করে। ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।

ঙ). রুকূ‘ থেকে উঠে দাঁড়ানো : রুকূ‘ থেকে সিজদায় যাওয়ার ফলে হৃদপি- থেকে অতিরিক্ত রক্ত দুই ফুসফুসে এবং মস্তিষ্ক সহ চক্ষু, কর্ণ, জিহ্বা ইত্যাদি বিভিন্ন অঙ্গে প্রবাহিত হয়। রুকূ‘ থেকে দাঁড়ালে আবার তা হৃদপি-ে ফিরে আসে। দুই সিজদার মাঝে যারা শান্ত হয়ে বসে না, তারা এ সুফল পাবে না। আমাদের শরীরে রক্তের মত আরও এক ধরনের রংবিহীন জলীয় পদার্থ আছে, যাকে ‘কার্বোস্পাইনাল ফ্লুইড’ বলে। মস্তিষ্কের বাইরে ও ভিতর থেকে এবং মেরুদ-ের ভিতরে অবস্থিত মেরুরজ্জুকে স্নাত করে ওদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফলে সঠিকভাবে ধীরে ধীরে রুকূ‘-সিজদাকারীদের বিভিন্ন জটিল রোগ থেকে আল্লাহ রক্ষা করেন।

চ). সালাম ফিরানো : নত ও শান্ত অবস্থা থেকে ঘাড় খাড়া করে ডানে ও বামে মুখ ঘুরিয়ে সালাম ফিরানোর ফলে গীরাগুলো পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে ও সতেজ হয়। এতে ঘাড়ের ও চোখের ‘ছালাত’ নামক ব্যায়ামের মাধ্যমে ঘাড়ব্যথা সহ বিভিন্ন রোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। তাই ছালাত আধ্যাত্মিক, মানসিক দুর্বল স্বাস্থ্যের প্রতিষেধক।[২]

ছ). এ্যারোবিক ব্যায়ামে স্মরণশক্তি বাড়ে : উন্মুক্ত বায়ুতে ব্যায়াম করাকে ‘এ্যারোবিক ব্যায়ম’ বলে। বিশেষ করে ফজরের ছালাতে দ্রুতপদে হেঁটে মসজিতে যাওয়া, সাইকেল চালানো, মাঠে কাজ করা, জগিং করা। এ ব্যায়ামে মস্তিষ্কের সার্বিক কার্যক্রম সক্রিয় ও সচল হয়। শরীর ও মন চনমনে হয় এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।[৩]

সুস্থ থাকার আধুনিক কিছু টিপস

বর্তমানে মানুষ সুস্থতার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে। ইন্টারনেট, মোবাইল, ফেইসবুক, ইউটিউব ইত্যাদিতে আসক্ত হয়ে মানুষ আজ রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। গাস্ট্রিক, হার্ট এ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, লিভার ক্যান্সার ইত্যাদি মরণব্যাধী নিয়ে জীবন-যাপন করছে। দুনিয়াকে প্রাধান্য, অতিরিক্ত লোভ, মনের খায়েশমত খাবার গ্রহণ, প্রবৃত্তির চাহিদামত জীবন-পদ্ধতি বর্তমান প্রজন্মকে ব্যাধিগ্রস্ত করে ফেলেছে। অথচ এগুলো সহ সকল ধরনের মরণব্যাধি থেকে আত্মরক্ষার জন্য লাইফ স্টাইল একটু পরিবর্তন করলেই অনেক সুফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে নি¤েœর টিপসগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন,

১). আমাদের শরীরের জন্য আলো ও অন্ধকার উভয় প্রয়োজন। শুধু ছায়া বা এয়ারকান্ডিশান রুমে থাকলে অনেক রোগ বেড়ে যায়। মানুষের মস্তিষ্ক ছায়ার চেয়ে আলো দেখলেই বেশি পুলকিত হয়। সূর্যের আলোতে ইউডিএ রশ্নি থাকে, যা ভিটামিন-ডি প্রস্তুতে সহায়তা করে। সূর্যের আলোয় ত্বকের বাইরের অংশ পুুরু হয়। স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও হাড়ের জন্য এটা খুবই প্রয়োজন। এর অভাবে হাড় ভেঙে যায় ও চিকন হয়। শিশু-কিশোরদের জন্য এটা খুবই প্রয়োজন।[৪]

২). ছায়ায় ও বদ্ধঘরে থাকলে গ্যাস ও রোগজীবাণু বৃদ্ধি পায়। মাঝে মধ্যে সূর্যের আলো ও গাছপালাপূর্ণ স্থানে বেড়ানো উচিত।

৩). জীবনের সুখ-দুঃখ ও ভাল-মন্দের গল্পগুলো প্রিয়জনকে জানানো। মন হালকা হবে এবং অনেক রোগ হতে মুক্তি পাওয়া যাবে। ৪. সকল প্রকার টেনশন ও দুশ্চিন্তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করুন তাহলে মন ও শরীর ভাল থাকবে।

জ্বর ছাড়াই শীত শীত করলে মনে করতে হবে শরীরে অসুখ আছে। শশা, গাজর, মুলা, পেঁয়াজ ও রসুন এবং শাকশবজি বেশি করে খাবে, সুস্থ হবে।
৬). ডায়াবেটিস ও সুস্থতার মহৌষধ নারিকেল। নারিকেল খাওয়ার সাথে সাথে তৈলাক্ত অংশ শক্তি যোগায় কোষে। নারিকেল শরীরে চর্বি জমতে দেয় না। চর্বিযুক্ত ও ফাষ্টফুডে মানুষ মোটা হয়। চর্বি পেটের নীচে জমা হয়। নারিকেলের চর্বি গুড ফ্যাট বা ভাল চর্বি। নারিকেল তেল খেলে এটা লিভার ও কোষে চলে যায়। নারিকেল বেশি বেশি খাওয়ার কারণে বাড়তি ফ্যাট কমে না ও ডায়াবেটিস ঘেষতে পারে না।[৫]

৭). কোমল পানীয় মহিলাদের হাড় দুর্বল করে। হাড়ের বিএমডি কমে যায় ও কোমড়ের হাড় দুর্বল হয়। ১৩-১৯ বছরের মেয়েদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। কোকা কোলায় ব্যবহৃত সোডাই এই ক্ষতির অন্যতম কারণ। ৮. ব্যায়ামের সময় লম্বা পদক্ষেপে হাঁটাই বেশি উপকার। ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার ও হৃদরোগের সম্ভাবনা ২০% কমে। প্রতিদিন বাড়তি হাঁটাহাঁটি শরীরের জন্য সীমাহীন উপকারী।

৯). শাসনের চেয়ে সহযোগিতা বেশী উপকারী। শাসন ও বকাঝকা, তিরষ্কার বাচ্চাদের হতাশা ও হতোদ্দম করে তোলে। মানুষের মন অনেক বেশী ও রহস্যময়। এতে মনে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য বদমেজাজি শিক্ষকের চেয়ে শান্তশিষ্ট ও ভদ্র শিক্ষককে ছাত্র-ছাত্রীরা বেশী ভালবাসে। একজনের জন্য অন্যান্যদের রাগ করা বা পেটানো কঠিন অপরাধ। শিক্ষকেরও চিন্তা করা উচিৎ তিনি কি সকল কাজে সফল হয়েছেন?

১০). কলা ও আম উচ্চ ক্যালরী সমৃদ্ধ খাবার। বাদাম ও ফল-ফলাদি প্রতিদিন খাওয়া উচিত। মেধা বিকাশে সস্তা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। শুধু দামী খাবারে পুষ্টি হয় না। ১১). খাবার সাবধানে ও চিবিয়ে খেতে হবে। এজন্যই তো খাবারের সময় গল্প করা ও টিভি দেখা ঠিক নয়। খাবারের সময় বেশি পানি পান করলে হজমের রসের ঘনত্ব কমে হজমে সমস্যা হয়।

১২). টিনএজ (১৩-১৯ বছরের) সন্তানদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া ঠিক নয়। বাড়তি আদর ও শিথিল শাসন এ বয়সের সন্তানদের গোল্লায় যেতে বেশি সহায়তা করে। ১৩). সিগারেটের ধোয়া নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ফল খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। ১৪). প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়া, পায়খানা ও গোসল করা উচিত। বিশেষ করে ভোরে পায়খানা করা ভাল।[৬]  ১৫). জীবনের প্রথমদিকে যত বেশী কাঁচা ও পাকা ফল ও শাকশবজি খাবে তার দৃষ্টিশক্তি ভাল ও স্থায়ী হবে। চোখের জন্য কাঁচা কলাই বেশী উপকারী।

১৬). ঘামের জন্য কোনকিছু ব্যবহার না করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই যথেষ্ট। ঘাম উপকারী। এর গন্ধটা এমোনিয়ার। কোনকিছু ব্যবহারে এর গন্ধ বন্ধ হয় কিন্তু ত্বকের ক্ষতি হয়। ১৭). রাগ শরীর ও মনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রাগী মানুষকে শুধু মানুষ নয় তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও অনাস্থা প্রকাশ করে। ক্রুদ্ধ অবস্থায় হার্ট এ্যাটাক বা ষ্ট্রোক করলে তাকে বাঁচানো কঠিন। রাগীদের মৃত্যুহার ঠা-া, শান্তশিষ্টদের চেয়ে অনেক বেশি। ১৮). রাতে মরিচ কম খাওয়া উচিত। বেশি মরিচ রাতে যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয়। যদিও মরিচে রুচি বৃদ্ধি করে ও ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আছে।

১৯). শরীরে শক্তির উৎপাদন ও খাবারকে রূপান্তরের জন্য ভিটামিন-বি অর্থাৎ থায়াবিন ও নিয়াসিম খুবই প্রয়োজন। ত্বকের সৌন্দর্য, মস্তিষ্কের রক্ষণাবেক্ষণ ও লোহিত কণিকার ঘাটতি পূরণের জন্য এটা খুবই প্রয়োজন। ডিম, দুধ, ঘি, মাখন, রুটি, পুইশাক, বাঁধাকপি, কুমড়া, লেবু, মটরশুটি ও আঙ্গুর ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-বি আছে। ২০). দুধ, ফল-ফলাদি ও সবজি খেলে লিভার ক্যান্সার হয় না।

২১). হার্টের রোগীদের রাস্তার পাশে বাস করা উচিত নয়। কারণ এতে হার্ট এ্যাটাক ও  প্রেসার হতে পারে। হাইড্রোলিক হর্ণের কারণে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। নিরিবিলি পরিবেশে হার্টএ্যাটাকের ঝুঁকি কম থাকে। ২২). গর্ভাবস্থায় মর্ণিং সিকনেস অর্থাৎ সকাল বেলায় অবসাদ ও বমি বমি ভাব দেখা যায়। প্রতিদিন তিন বেলা কিছু আদা খেলে এ ভাব দূর হবে। ২৩). হার্ট ও ত্বকের জন্য আঙ্গুর খুবই উপকারী। আঙ্গুরে পলিফেনাল আছে। এটা হার্টের সবচেয়ে উপকারী। আঙ্গুর শরীরের জন্য ক্ষতিকারক প্রোটিন উৎপাদনে বাধা দেয়। আঙ্গুরের রস হার্টের জন্য আর এর শ্বাস শরীর এবং ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। লাল আঙ্গুর আরও বেশী উপকারী। লাল আঙ্গুর হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমায় এবং ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধক।[৭]

আরো কিছু টিপস

(ক) মুখ, চোখ, কান ও দাঁতের যতœ নেয়া। (ক) নিয়মিত সুষম খাদ্য খাওয়া। (গ) প্রয়োজনমত বিশ্রাম ও ঘুমানো। (ঘ) ধুমপান সহ সকল নেশাজাত দ্রব্য ত্যাগ করা। (ঙ) প্রতিদিন শরীরচর্চা ও ব্যায়াম করা। (চ) প্রতিদিন কিছু শ্রমের কাজ করা। (ছ) ভাজা-পোড়া, তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার ও ফাষ্টফুড ত্যাগ করা। (জ) মানসিক চাপ বা টেনশন কমানো। (ঝ) ধর্মীয় অনুশাসন নিয়মিত মেনে চলা। (ঞ) দূষিত পরিবেশ এড়িয়ে চলা। (ট) পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ভাল ব্যবহার করা।

উপসংহার

কথায় বলে, ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। এজন্য সুস্বাস্থ্য আল্লাহ তা‘আলার এক বিশেষ নে‘মত। ইসলামে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অসংখ্য দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মূলত ইসলামের প্রত্যেক বিধান যেমন পরকালীন মুক্তির মাধ্যম, তেমনি পার্থিব জীবন সুখ, শান্তি ও সুস্থ জীবন-যাপনের অন্যতম মাধ্যম। প্রবন্ধে উল্লিখিত মধু, দুধ, পানি, খেজুর, কালোজিরা ইত্যাদির যে উপকারিতার কথা বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো আল্লাহর উপর ভরসা করে নিয়মিত গ্রহণ করলে পূর্ণ সুফল পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!



* চাঁদপুর, খুলনা।

[১]. ছহীহ আবু দাঊদ, হা/৬৬৬; মিশকাত, হা/১১০২, সনদ ছহীহ।

[২]. ডাঃ শেখ আবু আব্দুল্লাহ লিয়াকত বিন আব্দুস সামাদ, সালাতুন্নবী (সাঃ), ২য় খ-, পৃ. ৬২-৬৪।

[৩]. মাসিক আত-তাহরীক, ফেব্রুয়ারী ২০১৩।

[৪]. দৈনিক ইত্তেফাক, ২০ ডিসেম্বর, ২০০৬।

[৫]. দৈনিক ইত্তেফাক, ৮ই অক্টোবর ২০০৬।

[৬]. দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০ অক্টোবর ২০০৬।

[৭]. দৈনিক ইত্তেফাক ও অন্যান্য পত্রিকা থেকে গৃহীত।




প্রসঙ্গসমূহ »: চিকিৎসা
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার (৯ম কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ফাযায়েলে কুরআন (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
বিদ‘আত পরিচিতি (৩২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
অহংকার করা ও তার পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
মহামারী থেকে বেঁচে থাকার দশটি উপদেশ - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
বিদ‘আত পরিচিতি (১২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির

ফেসবুক পেজ