সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন

মুসলিম বিভক্তির কারণ ও প্রতিকার

-ড. মুযাফফর বিন মুহসিন


(শেষ কিস্তি)

(২য় কিস্তির পর)

দলাদলি ও বিভক্তি নিরসনে করণীয় :

(১) নিঃশর্ত ও দ্বিধাহীনচিত্তে কুরআন-সুন্নাহর কাছে আত্মসমর্পণ :

যখনই মতভেদ দেখা দিবে, তখনই পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে যেতে হবে। কোন দল, গোষ্ঠী এবং পীর-মাশায়েখ, আমীর-ফকীর, দরবেশ, আলেম, ইমামের কল্পিত মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়া যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡہُ اِلَی اللّٰہِ وَ الرَّسُوۡلِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ذٰلِکَ خَیۡرٌ وَّ اَحۡسَنُ تَاۡوِیۡلًا

‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মাঝের উলুল আমরের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতবিরোধ হয়, তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে থাক। এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর সমাধান’ (সূরা আন-নিসা : ৫৯)। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন,

فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

‘তোমাদের মধ্যে যে বেঁচে থাকবে, সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাত এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত পথনির্দেশক খলীফাগণের সুন্নাত আঁকড়ে ধরে থাকবে। মাড়ির দাঁত দিয়ে এই সুন্নাতকে কামড়ে ধরে থাকবে। আর তোমরা শরী‘আতে নবাবিষ্কার থেকে সাবধান থাকবে। কেননা প্রত্যেকটি নবাবিষ্কৃত বিষয়ই বিদ‘আত আর প্রত্যেকটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’।[১]

(২) দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব প্রদর্শন করা :

মুসলিম ভাই হিসাবে অপর মুসলিমের সাথে সম্পর্ক হতে হবে অত্যন্ত সুদৃঢ় ও শক্তিশালী। এটি ফরয দায়িত্ব। কারণ দ্বীনি ভ্রাতৃত্বে ঘাটতি থাকলে ঈমানেও ঘাটতি হবে। এমনকি সুসম্পর্ক না থাকলে ঈমান শূন্য হয়ে যাবে। মূলত ঈমানের সবচেয়ে শক্ত বন্ধন হল, আল্লাহর জন্য অপর মুসলিম ভাইয়ের সাথে দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা। যেমন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

أَوْثَقُ عُرَى الْإِيْمَانِ الْمُوَالَاةُ فِي اللهِ وَالْمُعَادَاةُ فِي اللهِ وَالْحُبُّ فِي اللهِ وَالْبُغْضُ فِي اللهِ

‘ঈমানের সর্বাধিক শক্তিশালী বন্ধন হচ্ছে, আল্লাহর জন্য মিত্রতা পোষণ ও আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষণ এবং আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও আল্লাহর জন্য অপসন্দ করা’।[২] অন্য হাদীছে এসেছে, الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا ‘একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য একটি ভবন সদৃশ, যার একাংশ অন্যাংশের সাথে শক্তভাবে গাঁথা’। একথা বলার সময় তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলোকে একটি আরেকটির মধ্যে প্রবেশ করিয়েছিলেন।[৩]

রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমগ্র মুসলিম জাতিকে একটি দেহের সাথে তুলনা করে বলেন,

مَثَلُ الْمُؤْمِنِيْنَ فِيْ تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَىي مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَي لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّي

‘পারস্পরিক ভালবাসা, দয়া এবং সহানুভূতির ক্ষেত্রে মুমিনগণ একটি দেহের মত। যখন দেহের একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন গোটা দেহ ডেকে আনে অনিদ্রা এবং তাপ’।[৪] এছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও’ (সূরা আল-হুজুরাত : ১০)।

উক্ত আলোচনায় শরী‘আতের ‘ওয়ালা ও বারা’র গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ ‘সাহায্য করা, ভালবাসা, সম্মান-ইযযত করা এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রিয় মানুষের সাথে থাকাই হল, ‘ওয়ালা’ (الْوَلَاءُ)।[৫] পক্ষান্তরে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করা, দূরে সরে থাকা এবং শত্রুতা পোষণ করাই হল, ‘বারা’ (وَالْبَرَاءُ)’।[৬]

ইসলামে ঈমানী ভ্রাতৃত্বই মিত্রতা ও শত্রুতা পোষণের মানদণ্ড। বিশেষ করে মুসলিমদের মধ্যে যাদের আক্বীদা ও আমল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক তাদের সাথে সম্পর্ক বেশী দৃঢ় ও গভীর হওয়া আবশ্যক। কোন বিদ্বেষ-হিংসা তো দূরের কথা সালাফী আক্বীদার ভাই পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন তার জন্য কল্যাণ কামনা করা ও দু‘আ করা একান্ত কর্তব্য। কারণ ঈমান ও দ্বীনের বিশাল ব্যাপ্তি ও গভীরতার কাছে দেশ, অঞ্চল, গোত্র, বর্ণ, বংশ ও সাংগঠনিক গণ্ডির কোন মূল্যই নেই। যেমন সুফিয়ান ছাওরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

إِذَا بَلَغَكَ عَنْ رَجُلٍ بِالْمَشْرِقِ صَاحِبِ سُنَّةٍ وَآخَرَ بِالْمَغْرِبِ فَابْعَثْ إِلَيْهِمَا بِالسَّلَامِ وَادْعُ لَهُمَا مَا أَقَلَّ أَهْلَ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ

‘পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থানকারী আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের দু’জন ব্যক্তির সংবাদ যদি তোমার কাছে পৌঁছে, তাহলে তাদের উভয়ের নিকট তুমি সালাম পাঠাও এবং তাদের জন্য দু‘আ কর। আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের লোকদের সংখ্যা কতই না কম!’।[৭]

(৩) হিংসা ও সংকীর্ণতাকে কুরবানী দিয়ে উদারতা প্রদর্শন করা

হিংসা ও সংকীর্ণতা উভয়ই ঈমানের জন্য ক্ষতিকর। এটা মানসিক রোগ। অন্যের ভালকে সহ্য করতে না পারার কারণে মানসিক রোগকে যালেমের মত প্রয়োগ করে। সুসম্পর্ক নষ্ট করার জন্য এই রোগ সাংঘাতিক মারণাস্ত্র। যদিও হিংসুক ও সংকীর্ণ মনের মানুষ এক সময় আফসোস করে আমি সফল হতে পারলাম না। কারণ যার হৃদয়ে হিংসা আছে তার হৃদয়ে ঈমান স্থান পায় না। আর ঈমানহীন মানুষ কখনো সফল হতে পারে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, لَا يَجْتَمِعَانِ فِىْ قَلْبِ عَبْدٍ الإِيْمَانُ وَالْحَسَدُ ‘বান্দার অন্তরে ঈমান ও হিংসা একত্রে অবস্থান করে না’।[৮] অন্য হাদীছে এসেছে, عَنِ الْحَسَنِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْضَلُ الْإِيْمَانِ الصَّبْرُ وَالسَّمَاحَةُ ‘হাসান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম ঈমান হল ধৈর্য ও উদারতা’।[৯]

উক্ত হাদীছদ্বয় প্রমাণ করে যে, যার মধ্যে আন্তরিকতা ও উদারতা নেই, বরং হিংসা-বিদ্বেষ বিদ্যমান তার মাঝে ঈমান নেই। ঈমানের শক্ত বাঁধন তার অন্তরেও অনুপস্থিত।

(৪) অহংকার ও আমিত্ব প্রদর্শন না করা

অহংকার পতনের মূল। দাম্ভিক ও অত্যাচারী ব্যক্তি তার স্বেচ্ছাচারীর মাধ্যমে অহংকারের আগুন সর্বত্র জ্বালিয়ে দেয়। এক সময় ঐ আগুনই তাকে ধ্বংস করে দেয়। দুনিয়াতে চরমভাবে অপমানিত হয়, পরকালে জাহান্নামের পুঁজ ভর্তি সাগরে নিক্ষিপ্ত হয়। হাদীছে এসেছে

عَنْ حَارِثَةَ بْنِ وَهْبٌ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ؟ كُلُّ ضَعِيْفٍ مُتَضَعِّفٍ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ. أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ

হারেছা বিন ওয়াহাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতের অধিবাসীদের সম্পর্কে সংবাদ দিব না? যারা দুর্বল, মাযলূম তারাই জান্নাতের অধিবাসী। আর যারা জাহান্নামের অধিবাসী তারা শক্তিশালী, কঠোর, কর্কশভাষী ও অহংকারী।[১০] অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يُحْشُرُ الْمُتَكَبِّرُوْنَ أَمْثَالَ الذَّرِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِىْ صُوَرِ الرِّجَالِ يَغْشَاهُمُ الذُّلُّ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ يُسَاقُوْنَ إِلَى سِجْنٍ فِىْ جَهَنَّمَ يُسَمَّى بُوْلَسُ تَعْلُوْهُمْ نَارُ الْأَنْيَارِ يُسْقَوْنَ مِنْ عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ طِيْنَةَ الْخَبَالِ

আমর ইবনু শু‘আইব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর পিতার সূত্রে দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অহঙ্কারীরা মানুষের চেহারা নিয়ে ক্বিয়ামতের মাঠে পিঁপড়া সদৃশ উঠবে। প্রত্যেক স্থানে অপমান তাদেরকে ঘিরে ধরবে। অতঃপর ‘বূলাস’ নামক জাহান্নামের এক জেলখানার দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে অগ্নিশিখা তাদেরকে গ্রাস করবে। তথায় তাদেরকে জাহান্নামীদের দগ্ধিত শরীরের গলিত রক্ত-পুঁজ ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ নামক সাগর থেকে পান করানো হবে।[১১]

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِىْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنَ كِبْرٍ

ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যার অন্তরে যাররা পরিমাণ অহঙ্কার রয়েছে। জনৈক ব্যক্তি বলল, কেউ চায় তার পোশাক ও জুতা সুন্দর হোক। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্যকে পসন্দ করেন। কিন্তু অহংকার হল, সত্যকে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।[১২]

(৫) পূর্বের দোষ-ত্রুটি উল্লেখ না করা

যখন ঐক্যের আলোচনা হবে বা ঐক্য প্রতিষ্ঠার পরিবেশ তৈরি হবে, তখন পরস্পররের মাঝে ঘটে যাওয়া পূর্বের তিক্ততা ও অবস্থান উল্লেখ করা, পর্যালোচনা করা হারাম। এটাই ঐক্যের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। ইহুদী চক্র রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঐক্যবদ্ধ সমাজকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছিল পূর্বের জাহেলী যুগের অবস্থান উল্লেখ করে। একদা আনছার-মুহাজির একত্রে বসে আলোচনা করছিলেন তখন এক ইহুদী পূর্বের তিক্ততা উসকে দিলে যুদ্ধের উপক্রম হয়। আর তখনই নিম্নের আয়াত নাযিল হয়।[১৩] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيْعًا وَلاَ تَفَرَّقُوْا وَاذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنْتُمْ عَلَى شَفَا حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِنْهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ

‘তোমরা সকলে আল্লাহ্‌র রজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র যে নে‘মত রয়েছে তা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনিই তোমাদের অন্তঃকরণে প্রীতি স্থাপন করেছিলেন, তারপর তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ হলে এবং তোমরা অনলকুণ্ডের ধারে ছিলে, তিনিই তোমাদের তা থেকে উদ্ধার করেছেন; এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করেন যেন তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হও’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)।

(৬) সমালোচনা, গীবত, গালমন্দ, চুগলখোরী, পিছনে লাগা ও কুৎসা রটনা না করে কল্যাণ কামনা করা

সবচেয়ে সহজ কাজ অন্যের সমালোচনা করা। এ সময় নিজের বদ অভ্যাস ও খারাপ আচরণের কথা একদম মনে থাকে না। বরং অন্যের পিছনে লাগা, গালমন্দ করা, কুৎসা রটনা করা ঈমানী দায়িত্ব মনে করে থাকে। এই পরচর্চা দলীয় নেতা-কর্মীর মাঝে বেশী পরিলক্ষিত হয়। এগুলো যে আল্লাহর নিকট চরম অন্যায় তা তারা ভুলেই গেছে। হাদীছে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الحَدِيْثِ وَلاَ تَحَسَّسُوْا وَلاَ تَجَسَّسُوْا وَلاَ تَنَاجَشُوْا وَلاَ تَحَاسَدُوْا وَلاَ تَبَاغَضُوْا وَلاَ تَدَابَرُوْا وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانَا

আবূ হুরায়রাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা ধারণা করা হতে সাবধান থাক। নিশ্চয় ধারণাই সবচেয়ে বড় মিথ্যা হয়ে থাকে। তোমরা মানুষের গোপন কথা কান লাগিয়ে শুননা, কারো গোপন দোষ অনুসন্ধান কারো না, প্রতারণা করো না, পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর শত্রুতা করো না, পরস্পর করো পিছনে লাগিও না। তোমরা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও’।[১৪] অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ وَ فِي رِوَاْيَةِ مُسْلِمٍ نَمَّامٌ

হুযায়ফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘আমি রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[১৫] মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, চুগলখোর জান্নাতে যাবে না।[১৬]

عَنْ اَبِىْ صَرْمَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ ضَارَّ ضَارَّ اللهُ بِهِ وَمَنْ شَاقَّ شَاقَّ اللهُ عَلَيْهِ

আবূ ছারমাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করে, আল্লাহ তার ক্ষতি করেন। আর যে অন্যকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাকে কষ্ট দেন’।[১৭]

মুসলিম হয়ে অপর মুসলিমের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ পরায়ণ হওয়া উচিত নয়। সর্বদা অপরের গীবত করা, দোষ অন্বেষণ করা, কুধারণা সৃষ্টি করা, কোন অভিযোগ শুনা মাত্রই যাচাই না করে প্রচার করা আত্মঘাতী স্বভাব।

রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

لَا تُؤْذُوْا الْمُسْلِمِيْنَ وَلَا تُعَيِّرُوْهُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنْ يَتَّبِعْ عَوْرَةَ أَخِيْهِ الْمُسْلِمِ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِىْ جَوْفِ رَحْلِهِ

‘তোমরা মুসলিম ব্যক্তিদের কষ্ট দিও না, তাদেরকে লজ্জা দিও না এবং তাদের দোষ অন্বেষণ কর না। কারণ যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের দোষান্বেষণ করে, আল্লাহ তার দোষ অন্বেষণ করেন। আর আল্লাহ যার দোষ খুঁড়িয়ে বের করবেন, তাকে তিনি অপমান করেই ছাড়বেন, যদিও সে তার ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকে’।[১৮]

(৭) অন্তরের নিফাক্বী ও কূধারণা দূর করা

‘মিছরির ছুরি’ বা ‘মুখে মধু অন্তরে বিষ’ কথাটি সমাজে বহুল প্রচলিত। এই নোংরা স্বভাব সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর। অন্তরের নিফাকী বুঝা বড় ভার। মানুষের সামনে কথা বলার সময় কারো সম্পর্কে অনেক প্রশংসা ও মিষ্ট কথা বলা হয়। অথচ ভিতরে ভিতরে তার বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র ও গভীর চক্রান্ত অব্যাহত রাখে। এগুলো প্রকাশ্য প্রতারণা ও চরম মুনাফেক্বী। এটা চূড়ান্ত হারাম ও নিষিদ্ধ।[১৯] এ ধরনের লোকের মাথা থেকে পা পর্যন্ত নিফাক্বীতে পরিপূর্ণ। এই নগ্ন স্বভাব যদি কোন আলেম ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির মাঝে থাকে তাহলে সমাজ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

(৮) সাংগঠনিক গোঁড়ামি প্রদর্শন না করা

যেকোন বিষয়ে গোঁড়ামি ও চরমপন্থা অবলম্বন করা অভদ্রতা ও অন্যায়। আহলেহাদীছ সংগঠনগুলোর আক্বীদা ও আমল যেহেতু প্রায় একই, তাই কোন বিষয় নিয়ে এক সংগঠন আরেক সংগঠনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পরায়ণ হয়ে গোঁড়ামি প্রদর্শন করা উচিত নয়। তাছাড়া এ ধরনের কোন সংগঠনকে দল বা ফের্কা মনে করা যাবে না; বরং দাওয়াতী বিভাগ মনে করতে হবে। যেহেতু একই আক্বীদা ও আমলের প্রচারক তাই কোন্ সংগঠন কত বেশী দাওয়াতী কাজ করতে পারে এ ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করা উচিত। যেমন আহলেহাদীছ মাদরাসাগুলো দারস-তাদরীসের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। এক মাদরাসা অন্য মাদরাসাকে বাতিল বা বিদ‘আতী বলে ফৎওয়া দেয় না। আর দারস-তাদরীসও দাওয়াতের একটি বড় মাধ্যম। তাই অঞ্চল ভিত্তিক যেকোন সালাফী দাঈ দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন আর সারা দেশেই পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করবেন এবং কল্যাণ কামনা করবেন। যেকোন বৃহত্তর স্বার্থে সারা দেশের দাঈগণ একত্রিত হবেন, আলোচনা করবেন এবং সমাধান করবেন। কেউ পূর্বের কোন তিক্ত বিষয় উল্লেখ করে উত্ত্যক্ত করে ভ্রাতৃত্বের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করবেন না। ‘ওয়ালা ও বারা’র এই ঈমানী বিষয়টি যদি নেতৃবৃন্দ বাস্তবায়ন না করেন, তবে কারা জাতিকে মুক্তির পথ দেখাবে! তাই আবশ্যক হল, সব ভেদাভেদ, গোঁড়ামি, জিদ ও কলহ ভুলে একই প্লাটফরমে সমবেত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করা।

সেই সাথে সাধারণ জনগণকেও শান্তিপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সতর্ক মন্তব্য করতে হবে। কারো প্রতি অতি ভক্তি প্রদর্শন করে যেমন আল্লাহর আসনে বসানো যাবে না, তেমনি কাউকে ঘৃণা করে শয়তান, অমুসলিম, কাফের-মুশরিকদের মত প্রত্যাখ্যানও করা যাবে না। যা বর্তমানে খুবই চলছে। সাধারণ কোন ব্যক্তি যদি একপক্ষকে বাতিল বা বিদ‘আতী মনে করে, আর অন্য পক্ষকে হক্বপন্থী মনে করে তাহলে তারাও ফের্কাবাজির মধ্যে পড়ে যাবে। তারাও মুক্তির পথ থেকে দূরে সরে যাবে। সালাফী বিদ্বানগণ যেখানে চার মাযহাবের অনুসারীদেরকে বিদ‘আতী বা বাতিল ফের্কা বলতে চাননি।[২০] সেখানে এক আহলেহাদীছ সংগঠন অন্য সংগঠনকে বাতিলপন্থী বা বিদ‘আতী বলে আখ্যায়িত করে কিভাবে? জনগণকে মনে রাখতে হবে যে, কোন একজন ব্যক্তির বিদ‘আতী স্বভাব, অহংকার ও আমিত্বের কারণে সমস্ত মানুষ বিভক্ত থাকতে পারে না। তাই সালাফী আক্বীদার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রেখে সাধারণ জনগণকে ঐক্যের ভূমিকা পালন করতে হবে। আশা করি আল্লাহভীতি ও মৃত্যুর ভয় তাড়া করলে আত্মোহংকার, আমিত্ব, গোঁড়ামি ও নেতৃত্বের মোহ সবকিছুই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

(৯) নেতার প্রতি অন্ধভক্তি অর্থাৎ ব্যক্তিপূজার তাক্বলীদী মনোভাব বর্জন করা

ঐক্যের পথে পাহাড়সম বাধা হল, ব্যক্তি বিশেষের প্রতি অন্ধভক্তি বা ব্যক্তিপূজার তাক্বলীদী মনোভাব। অতিভক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে নেতাকে অনেক সময় আল্লাহর আসনে বসিয়ে দেয় ভক্তরা। ভাল-মন্দ ও কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক মনে করে। নেতার কিংবা দলের সিদ্ধান্তকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সিদ্ধান্তের চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করে মূল্যায়ন করে। এভাবে পীর, দরবেশ এবং আলেম, ইমাম ও নেতার রীতি-নীতির অনুসরণ করাই হল ত্বাগূতের ইবাদত করা। ধর্মগুরুরা মুরীদদের অতি ভক্তি পেয়ে এভাবেই মা‘বূদ বনে যান। এগুলো ইহুদী-খ্রীস্টানদের স্বভাব।[২১] শাহ ইসমাঈল শহীদ (১৭৭৯-১৮৩১ খৃ.) সূরা তওবার ৩১ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আদী ইবনু হাতেম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীছের আলোকে বলেন,

فَعُلِمَ مِنْ هَذَا أَنَّ اِتِّبَاعَ شَخْصٍ مُعَيِّنٍ بِحَيْثُ يَتَمَسَّكُ بِقَوْلِهِ وَإِنْ ثَبَتَ عَلَى خِلاَفِهِ دَلاَئِلٌ مِنَ السُّنَّةِ وَ الْكِتَابِ وَ يُأَوِّلُ إِلَى قَوْلِهِ شَوْبٌ مِنَ النَّصْرَنِيَّةِ وَ حَظٌّ مِنَ الشِّرْكِ

‘এর দ্বারা বুঝা গেল যে, অবশ্যই নির্দিষ্ট ব্যক্তির অনুসরণ করা, যেমন- তার কথা এমনভাবে আঁকড়ে ধরা, যদিও তা কুরআন-সুন্নাহর দলীল সমূহের বিরোধী সাব্যস্ত হয় এবং কুরআন সুন্নাহকে তার পক্ষে ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে তার মধ্যে খ্রিষ্টানী স্বভাব মিশ্রিত আছে এবং শিরকের অংশ রয়েছে’।[২২]

উক্ত নীতি যে কত বড় অন্যায় তা ভক্তরা জানে না। এটা শিরকে আকবার, যার পরিণাম চিরস্থায়ী জাহান্নাম। এ সমস্ত দিকভ্রান্ত নেতা, দরবেশ, পীর, ফকীর, বুযর্গ, আলেম, মুফতি ক্বিয়ামতের দিন কোন কাজে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা তুলে ধরেছেন এভাবে-

وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّتَّخِذُ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اَنۡدَادًا یُّحِبُّوۡنَہُمۡ کَحُبِّ اللّٰہِ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰہِ وَ لَوۡ یَرَی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اِذۡ یَرَوۡنَ الۡعَذَابَ ۙ اَنَّ الۡقُوَّۃَ لِلّٰہِ جَمِیۡعًا وَّ اَنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعَذَابِ اِذۡ تَبَرَّاَ الَّذِیۡنَ اتُّبِعُوۡا مِنَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡا وَ رَاَوُا الۡعَذَابَ وَ تَقَطَّعَتۡ بِہِمُ الۡاَسۡبَابُ وَ قَالَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡا لَوۡ اَنَّ لَنَا کَرَّۃً فَنَتَبَرَّاَ مِنۡہُمۡ کَمَا تَبَرَّءُوۡا مِنَّا کَذٰلِکَ یُرِیۡہِمُ اللّٰہُ اَعۡمَالَہُمۡ حَسَرٰتٍ عَلَیۡہِمۡ وَ مَا ہُمۡ بِخٰرِجِیۡنَ مِنَ النَّارِ

‘মানুষের মধ্যে এরূপ কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুকে মা‘বূদ মনে করে, আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবাসে। তবে যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে অত্যধিক ভালবাসে। আর যারা অত্যাচার করেছে, তারা যদি শাস্তি দেখতে পেত, তবে বুঝতে পারত- যাবতীয় ক্ষমতার উৎস আল্লাহই এবং আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। যখন নেতারা তাদের অনুসারীদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে ও সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, তখন অনুসারীরা বলবে, আমরা যদি ফিরে যেতে পারতাম, তবে তারা যেমন আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে, আমরাও তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতাম। এভাবে আল্লাহ তাদের কর্মসমূহকে দুঃখজনকভাবে প্রদর্শন করাবেন। আর তারা কখনো জাহান্নাম হতে মুক্তি পাবে না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬৫-৬৭)। অন্য আয়াতে এসেছে,

وَ یَوۡمَ یَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰی یَدَیۡہِ یَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِی اتَّخَذۡتُ مَعَ الرَّسُوۡلِ سَبِیۡلًا یٰوَیۡلَتٰی لَیۡتَنِیۡ لَمۡ اَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِیۡلًا لَقَدۡ اَضَلَّنِیۡ عَنِ الذِّکۡرِ بَعۡدَ اِذۡ جَآءَنِیۡ ؕ وَ کَانَ الشَّیۡطٰنُ لِلۡاِنۡسَانِ خَذُوۡلًا

‘যালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ দুই হাত কামড়াবে আর বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ চলতাম! হায়! দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ না করতাম! আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর আমাকে সে বিভ্রান্ত করেছিল। আসলে শয়তান মানুষের জন্য বড় প্রতারক’ (সূরা আল-ফুরক্বান : ২৭-২৮)।[২৩]

উক্ত অন্ধভক্তদের পরিণাম যে কত ভয়াবহ হবে তা নিম্নের আয়াতে আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে-

یَوۡمَ تُقَلَّبُ وُجُوۡہُہُمۡ فِی النَّارِ یَقُوۡلُوۡنَ یٰلَیۡتَنَاۤ اَطَعۡنَا اللّٰہَ وَ اَطَعۡنَا الرَّسُوۡلَا وَ قَالُوۡا رَبَّنَاۤ اِنَّاۤ اَطَعۡنَا سَادَتَنَا وَ کُبَرَآءَنَا فَاَضَلُّوۡنَا السَّبِیۡلَا رَبَّنَاۤ اٰتِہِمۡ ضِعۡفَیۡنِ مِنَ الۡعَذَابِ وَ الۡعَنۡہُمۡ لَعۡنًا کَبِیۡرًا

‘যেদিন তাদের মুখমণ্ডল জাহান্নামে উলট-পালট করা হবে সেদিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম ও রাসূলকে মানতাম! তারা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা ও বুযর্গদের আনুগত্য করেছিলাম। তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন এবং তাদেরকে দিন মহা অভিশাপ’ (সূরা আল-আহযাব : ৬৬-৬৮)।

উপরের আলোচনা দ্বারা ভক্তদের আক্ষেপ ও ভয়াবহ পরিণাম স্পষ্ট হলেও পথভ্রষ্ট দরবেশ ও ত্বাগূতী নেতারাই আগে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

يَجْمَعُ اللهُ النَّاسَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُوْلُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ شَيْئًا فَلْيَتَّبِعْهُ. فَيَتَّبِعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الشَّمْسَ الشَّمْسَ وَيَتَّبِعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الْقَمَرَ الْقَمَرَ وَيَتَّبِعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الطَّوَاغِيْتَ الطَّوَاغِيْتَ

‘আল্লাহ সমস্ত মানুষকে ক্বিয়ামতের দিন একত্রিত করে বলবেন, পৃথিবীতে যে যার ইবাদত করেছে, সে যেন আজ তার অনুসরণ করে। তখন যারা সূর্যের পূজা করত তারা সূর্যের অনুসরণ করবে। যারা চন্দ্রের পূজা করত তারা চন্দ্রের অনুসরণ করবে। আর যারা ত্বাগূতের ইবাদত করত তারা ত্বাগূতের অনুসরণ করবে..।[২৪]

(১০) আহলেহাদীছদের মর্যাদাকে মূল্যায়ন কর

শিরক-বিদ‘আত, জাহেলিয়াত, বাতিল ফের্কা, মানবরচিত মতবাদ ও যেকোন ইসলাম বিরোধী কার্যক্রমকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করাই আহলেহাদীছদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানুষ যখন রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতকে নষ্ট করবে, তখন তারা সুন্নাতকে সংরক্ষণ করবে। আহলেহাদীছগণ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন যুগের পর যুগ। কারণ রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৭৩ কের্ফার মধ্যে যে ফের্কাকে জান্নাতী ফের্কা বলতে চেয়েছেন, তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেছেন, مَا أَنَا عَلَيْهِ الْيَوْمَ وَأَصْحَابِىْ ‘আমি ও আমার ছাহাবীগণ আজকের দিনে যার উপর আছি, তার উপরে যে দলটি থাকবে’।[২৫]

উক্ত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সমগ্র বিশ্বে যারা সালাফী ও আহলেহাদীছ বলে পরিচিত তারাই মূলত উক্ত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কারণ তারাই কেবল রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ এবং ছাহাবায়ে কেরামের মূলনীতিকে আঁকড়ে ধরে আছে। তারাই হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত ঐক্যবদ্ধ একটি শক্তিশালী কাফেলা। উক্ত হাদীছের মূলনীতির মধ্যে যারা অন্তর্ভুক্ত হবেন, তারাই ফের্কায়ে নাজিয়ার মধ্যে শামিল হবেন। এই বিজয়ী কাফেলার গণ্ডি যেমন সীমাহীন, মর্যাদাও তেমনি ঈর্ষণীয়। যেমন নিম্নের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُدْعَى نُوحٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ يَا رَبِّ . فَيَقُولُ هَلْ بَلَّغْتَ فَيَقُولُ نَعَمْ . فَيُقَالُ لأُمَّتِهِ هَلْ بَلَّغَكُمْ فَيَقُولُونَ مَا أَتَانَا مِنْ نَذِيرٍ . فَيَقُولُ مَنْ يَشْهَدُ لَكَ فَيَقُولُ مُحَمَّدٌ وَأُمَّتُهُ . فَتَشْهَدُونَ أَنَّهُ قَدْ بَلَّغَ. ( وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا ) فَذَلِكَ قَوْلُهُ جَلَّ ذِكْرُهُ ( وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُوْنُوْا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا ) وَالْوَسَطُ الْعَدْلُ

আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন নূহ (আলাইহিস সালাম)-কে ক্বিয়ামতের দিন আহ্বান করা হবে, তখন তিনি বলবেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার সম্মানে হাযির। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি রিসালতের দায়িত্ব পালন করেছ? তিনি উত্তরে বলবেন, জি হ্যাঁ। অতঃপর তাঁর উম্মতকে বলা হবে তিনি কি তোমাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন? তারা বলবে, আমাদের কাছে কোন সতর্ককারী আসেনি। আল্লাহ নূহ (আলাইহিস সালাম)-কে বলবেন, তোমার পক্ষে এখন কে সাক্ষী দিবে? তিনি বলবেন, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর উম্মত। অতঃপর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা তখন সাক্ষী দিবে যে তিনি দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হবেন’। আর এটাই মহান আল্লাহর বাণী, ‘আর এভাবে আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী ন্যায়পরায়ণ উম্মত হিসাবে সৃষ্টি করেছি, যেন তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষী হও এবং রাসূলও তোমাদের জন্য সাক্ষী হন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৪৩)। মধ্যমপন্থী অর্থ ন্যায়পরায়ণতা।[২৬]

উক্ত হাদীছ ও আয়াতে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মতের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। যারা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের প্রকৃত অনুসারী তাদের পক্ষে যে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই সাক্ষী দিবেন তাও বর্ণিত হয়েছে। কুরআন-সুন্নাহর অনুসারীরা কতই না ভাগ্যবান! তাই যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (১৯১৪-১৯৯৯/১৩৩৩-১৪২০ হি.) কত সুন্দরই না বলেছেন,

فَأَهْلُ الْحَدِيْثِ حَشَرَنَا اللهُ مَعَهُمْ لَايَتَعَصَّبُوْنَ لِقَوْلِ شَخْصٍ مُعَيَّنٍ مَهْمًا عَلَا وَسَمَا حَاشَا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِخِلَافِ غَيْرِهِمْ مِمَّنْ لَايَنْتَمِىْ إِلَى الْحَدِيْثِ وَالْعَمَلِ بِهِ فَإِنَّهُمْ يَتَعَصَّبُوْنَ لِأَقْوَالِ أَئِمَّتِهِمْ وَقَدْ نَهَوْهُمْ عَنْ ذَلِكَ كَمَا يَتَعَصَّبُ أَهْلُ الْحَدِيْثِ لِأَقْوَالِ نَبِيِّهِمْ

‘আহলেহাদীছগণ (আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাদের সাথে একত্রিত করুন!) হলেন তাঁরাই, যারা মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির রায়কে প্রাধান্য দেন না, তিনি যত বড়ই হউন না কেন। তারা তাদের বিরোধী, যারা হাদীছ ও তার প্রতি আমল করার তোয়াক্কা করে না। ইমামগণ নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা যেমন শুধু তাদের ইমামদের রায়কে প্রাধান্য দেয়, তেমনি আহলেহাদীছগণ একমাত্র তাদের নবীর কথাকে প্রাধান্য দেন’। অতঃপর তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন,

فَلَا عَجَبَ بَعْدَ هَذَا الْبَيَانِ أَنْ يَّكُوْنَ أَهْلُ الْحَدِيْثِ هُمُ الطَّائِفَةُ الظَّاهِرَةُ وَالْفِرْقَةُ النَّاجِيَةُ بَلْ وَالْأُمَّةُ الْوَسَطُ الشُّهَدَاءُ عَلَى الْخَلْقِ

‘এই বর্ণনার পর আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, আহলেহাদীছগণই সেই বিজয়ী কাফেলা এবং নাজাতপ্রাপ্ত দল; বরং তারাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, যারা মানবজাতির উপর হবেন সাক্ষী স্বরূপ’।[২৭] মুহাদ্দিছ খত্বীব বাগদাদী (৩৯২-৪৬৩ হি.) অন্যান্যদের সাথে আহলেহাদীছদের পার্থক্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

وَكُلُّ فِئَةٍ تَتَحَيَّزُ إِلَى هَوَاى تَرْجِعُ إِلَيْهِ أَوْ تَسْتَحْسِنُ رَأْيًا تَعْكِفُ عَلَيْهِ سِوَى أَصْحَابِ الْحَدِيْثِ فَإِنَّ الْكِتَابَ عُدَّتُهُمْ وَالسُّنَّةَ حُجَّتُهُمْ وَالرَّسُوْلَ فِئَتُهُمْ وَإِلَيْهِ نِسْبَتُهُم لَايَعْرِجُوْنَ عَلَى الْأَهْوَى وَلَايَلْتَفِتُوْنَ إِلَى الْأَرَاءِ

‘প্রত্যেক দলই প্রবৃত্তির অনুসরণ করে ও তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করে অথবা রায় বা নিজস্ব অভিমতকেই উত্তম মনে করে এবং তার উপরই অটল থাকে; কেবল আহলেহাদীছগণ ছাড়া। কারণ আল-কুরআন তাদের হাতিয়ার, সুন্নাহ্ তাদের দলীল, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের দলনেতা এবং তাঁর দিকেই তাদের সম্বন্ধ। তারা মনোবৃত্তির উপর বিচরণ করে না এবং রায়ের দিকেও ভ্রুক্ষেপ করে না’।[২৮]

অতএব কুরআন-সুন্নাহর প্রকৃত অনুসারী হিসাবে আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদার প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখতে হবে। শারঈ বিধান অনুসরণের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং যাবতীয় শিরক-বিদ‘আত ও জাহেলিয়াতের স্পর্শ থেকে দ্বীনকে সংরক্ষণের প্রচেষ্টা করতে হবে। কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করতে হবে এবং আল্লাহর ভয়ে দলে দলে বিভক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

উপসংহার

বিভক্তি মুসলিম উম্মাহর জন্য অভিশাপ। তাই ইসলামে বিভক্তি ও দলাদলি হারাম ও চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ। যারা এই দলাদলি ও ফের্কাবাজির রোগে আক্রান্ত তারা অভিশপ্ত। তাদের জন্য জাহান্নাম অপেক্ষা করছে। আর যারা দলাদলি থেকে মুক্ত থাকবে তাদের উপর আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে স্থায়ী রহমত আছে (সূরা হূদ : ১১৮-১৯)। তাই দলবাজি থেকে আমাদেরকে মুক্ত থাকতে হবে। কেবল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করতে হবে এবং সালাফী তথা আহলেহাদীছ আক্বীদাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। কুরআন-সুন্নাহর অনুসারী আহলেহাদীছ ভাই যে শ্রেণীরই হোক না কেন, তার সাথে তাক্বওয়া ভিত্তিক স্থায়ী দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে হবে। আমিত্ব, অহংকার, দলীয় গোঁড়ামি ও প্রভুত্বের মনোভাব ঝেড়ে ফেলতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন, যাবতীয় মুছীবত থেকে হেফাযত করুন এবং জান্নাতের রাস্তায় পরিচালিত করুন-আমীন!!

তথ্যসূত্র :
[১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৪৪, সনদ ছহীহ।
[২]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১১৫৩৭; সনদ ‘হাসান’, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৯৮।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৮১।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৬।
[৫]. তায়সীরুল আযীযিল হামীদ, পৃ. ৪১৩।
[৬]. সাঈদ আল-ক্বাহত্বানী, আল-ওয়ালা ওয়াল-বার ফিল ইসলাম, পৃ. ৯০।
[৭]. লালকাঈ, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস-সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ, আছার নং ৫০।
[৮]. নাসাঈ, হা/৩১০৯, সনদ হাসান।
[৯]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯২৫৯; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৫৫৪; ছহীহুল জামে‘, হা/২৭৯৫।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৯১৮; মিশকাত, হা/৫১০৬।
[১১]. তিরমিযী, হা/২৪৮২; মিশকাত, হা/৫১১২, সনদ হাসান।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/৯১; মিশকাত, হা/৫১০৮।
[১৩]. আব্দুল মালিক ইবনু হিশাম ইবনু আইয়ূব আল-হুমাইরী আল-মু‘আফিরী আবু মুহাম্মাদ, আস-সীরাহ আন-নাবুবিয়াহ লি ইবনি হিশাম, ৩য় খণ্ড (বৈরূত : দারুল জাইল, ১৪১১ হি.), পৃ. ৯৪; ছফিউর রহমান মুবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম (বৈরূত : দারুল মুআইয়িদ, ১৯৯৬ খৃ./১৪১৬ হি.), পৃ. ১০৬।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৬৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৩; মিশকাত, হা/৫০২৮।
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৫৬; মিশকাত, হা/৪৮২৩।
[১৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০৫; মিশকাত, হা/৪৮২৩।
[১৭]. তিরমিযী, হা/১৯৪০; মিশকাত, হা/৫০৪২, সনদ হাসান।
[১৮]. তিরমিযী, হা/২০৩২; মিশকাত, হা/৫০৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৪৮২৩, সনদ ছহীহ।
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৬৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৩; মিশকাত, হা/৫০২৮।
[২০]. মাজমূ‘উল ফাতাওয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ ৩৪৬; মিনহাজুস-সুন্নাহ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৪৮-২৪৯; আল-মুনতাক্বা মিন মিনহাজিল ই‘তিদাল, পৃ. ৩৩৪।
[২১]. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা, হা/২০৮৪৭, সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩২৯৩; তিরমিযী, হা/৩০৯৫।
[২২]. শাহ ইসমাঈল শহীদ, তানভীরুল আইনাইন ফী ইছবাতি রাফ‘ঈল ইয়াদায়েন (মীরাট : মুজতাবায়ী প্রেস, ১২৭৯ হি./১৮৬৩ খৃ.), পৃ. ৪৫।
[২৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৪৩৭ ও ৭৪৩৯, ২য় খণ্ড, পৃ. ১১০৬ ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৮; মিশকাত, হা/৫৫৭৮, ‘হাশর ও শাফা‘আত’ অধ্যায়।
[২৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০০, (ইফাবা হা/৩৪৮), ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৮; ছহীহ বুখারী, হা/৭৪৩৭ ও ৭৪৩৯, ২য় খণ্ড, পৃ. ১১০৬-১১০৭ ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৪;; মিশকাত, হা/৫৫৭৮, ‘হাশর ও শাফা‘আত’ অধ্যায়।
[২৫]. তিরমিযী, হা/২৬৪১, ২য় খণ্ড, পৃ. ৯২-৯৩; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৩৪৮, ২য় খণ্ড, পৃ. ৯২; মুস্তাদরাক হাকেম, হা/৪৪৪, ১ম খণ্ড, পৃ. ২১৮; মিশকাত, হা/১৭১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, ১ম খণ্ড, পৃ. ১২৬, হা/১৬৩।
[২৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৪৮৭।
[২৭]. সিলসিলা ছহীহাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৮২, হা/২৭০-এর ব্যাখ্যা।
[২৮]. শারাফু আছহাবিল হাদীছ, পৃ. ২৮।




ইসলামে রোগ ও আরোগ্য - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
মহামারী থেকে বেঁচে থাকার দশটি উপদেশ - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২০তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
রামাযানের স্বরূপ - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৫ম কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
ফাযায়েলে কুরআন (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
তওবার গুরুত্ব ও ফযীলত (২য় কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ফিলিস্তীন, হে মুসলিম! - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
বিদ‘আত পরিচিতি (১৭তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৮ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
মসজিদ: ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান

ফেসবুক পেজ