বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন
আল-কুরআনে মানুষ: মর্যাদা ও স্বরূপ বিশ্লেষণ 
- ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ* 

(৩য় কিস্তি)  

২. নেতিবাচক দিক

মানুষের স্বভাবের এমন কতিপয় দিক রয়েছে, যার প্রভাবে মানুষ নিজ নিজ গুণাবলী ও মর্যাদা বিচ্যুৎ হয়ে অন্য নামে আখ্যায়িত হয়; সেগুলোই তার নেতিবাচক দিক। এক কথায় বলতে গেলে, মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিতে যেসব মৌলিক ও অসৎগুণাবলীর সংমিশ্রণ রয়েছে, যা বর্জন করা একজন মানুষ হিসাবে সকলের কর্তব্য। সেগুলো নিম্নরূপ:

এক. স্বার্থপরতা

মানুষ বড় ঝবষভরংয বা স্বার্থপর। কোথাও বা কোন কাজে তার স্বার্থ ও সুযোগ সুবিধা জড়িয়ে না থাকলে সে কাজ সিদ্ধ করে না। এজন্যই পবিত্র কুরআনে তাকে অসংখ্যবার জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, যেন সে তা অর্জনের আশায় দুনিয়ায় বৈধ পথে চলাচল করে। মানুষ বিপদ আসলে সর্বদা আল্লাহকে ডাকে, আর বিপদ কেটে গেলে তাঁকে উপেক্ষা করে চলে। এ চরিত্র বর্ণনায় আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

وَ اِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنۡۢبِہٖۤ اَوۡ قَاعِدًا اَوۡ قَآئِمًا ۚ فَلَمَّا کَشَفۡنَا عَنۡہُ ضُرَّہٗ  مَرَّ کَاَنۡ  لَّمۡ  یَدۡعُنَاۤ  اِلٰی ضُرٍّ مَّسَّہٗ ؕ  کَذٰلِکَ زُیِّنَ  لِلۡمُسۡرِفِیۡنَ مَا  کَانُوۡا  یَعۡمَلُوۡنَ.

‘আর মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে বসে অথবা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকে, অতঃপর আমরা যখন তার দুঃখ-দৈন্য, দুরীভূত করি, সে এমন পথ অবলম্বন করে, যেন তাকে যে দুঃখ-দৈন্য, স্পর্শ করেছিল তার জন্য সে আমাকে ডাকেনি’ (সূরা ইউনুস: ১২)। আল-কুরআনে আরো এসেছে,

اِنَّ  الۡاِنۡسَانَ خُلِقَ ہَلُوۡعًا-اِذَا مَسَّہُ  الشَّرُّ  جَزُوۡعًا- وَّ  اِذَا مَسَّہُ  الۡخَیۡرُ  مَنُوۡعًا.

‘মানুষতো সৃজিত হয়েছে অতিশয় অস্থির চিত্তরূপে, যখন বিপদ তাকে স্পর্শ করে সে হয় হা-হুতাশকারী। আর যখন কল্যাণ তাকে স্পর্শ করে সে হয় অতি কৃপণ’ (সূরা আল-মা‘আরিজ:১৯-২১)।

দুই. অহংকারী

মানুষের জীবনের যাত্রা দুর্বলতা ও অসামর্থ্যরে তথা মাটি ও শুক্র জাতীয় দু’টি দুর্বল ও অক্ষম উপাদান দিয়ে শুরু হলেও মানুষ অহংকারী স্বভাবের হয়ে থাকে। দুনিয়ার হিসাব অনুযায়ী বড় ধরনের কোন কল্যাণ প্রাপ্ত হলে তখন সে স্বেচ্ছাচারী রূপ নিয়ে অহংকারবশত তাঁর অতীতকে ভুলে যেতে চেষ্টা করে। আল-কুরআনে তাদের চিত্র ফুটে উঠেছে এভাবে,

وَ لَئِنۡ اَذَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنَّا رَحۡمَۃً  ثُمَّ  نَزَعۡنٰہَا مِنۡہُ ۚ اِنَّہٗ  لَیَـُٔوۡسٌ کَفُوۡرٌ- وَ لَئِنۡ اَذَقۡنٰہُ نَعۡمَآءَ بَعۡدَ ضَرَّآءَ مَسَّتۡہُ  لَیَقُوۡلَنَّ ذَہَبَ السَّیِّاٰتُ عَنِّیۡ ؕ اِنَّہٗ  لَفَرِحٌ  فَخُوۡرٌ.

‘যদি আমরা মানুষকে আমাদের নিকট হতে অনুগ্রহ আস্বাদন করাই ও পরে তার নিকট হতে তা প্রত্যাহার করি তখন সে অবশ্যই হতাশ ও অকৃতজ্ঞ হবে। আর যদি দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর আমি তাকে সুখ-সম্পদ আস্বাদন করাই তখন সে অবশ্যই বলবে, আমার বিপদ আপদ কেটে গেছে, আর সে তো হয় প্রফুল্ল ও অহংকারী’ (সূরা হূদ: ৯-১০)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَ  اِذَاۤ   اَنۡعَمۡنَا عَلَی  الۡاِنۡسَانِ اَعۡرَضَ وَ نَاٰ بِجَانِبِہٖ ۚ وَ اِذَا مَسَّہُ  الشَّرُّ کَانَ یَــُٔوۡسًا ‘আমরা যখন মানুষের প্রতি অনুহগ্র করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দূরে সরে যায় এবং তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে’ (সূরা বানী ইসরাঈল: ৮৩)।

তিন. ঠুনকো বিশ্বাসী

মানুষের মধ্যে এমন এক ধরনের মানুষ আছে, যাদের বিশ্বাস খুবই ঠুনকো। যারা তাদের বিশ্বাসের উপর দৃঢ় থাকতে পারে না। এরা ততক্ষণ ঈমানের পথে থাকে যতক্ষণ নিরাপদ ও নির্ঝামেলায় তা থেকে ফায়দা লাভ করা যায়। আর যদি কোনরূপ পরীক্ষা বা কাঠিন্য আরোপ করা হয়, সাথে সাথে তারা ঈমান ত্যাগ করতে দ্বিধা করে না। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে,

وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّعۡبُدُ اللّٰہَ عَلٰی حَرۡفٍ ۚ فَاِنۡ  اَصَابَہٗ  خَیۡرُۨ  اطۡمَاَنَّ بِہٖ ۚوَ اِنۡ اَصَابَتۡہُ فِتۡنَۃُۨ  انۡقَلَبَ عَلٰی وَجۡہِہٖ ۟ۚ  خَسِرَ الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃَ ؕ ذٰلِکَ  ہُوَ  الۡخُسۡرَانُ  الۡمُبِیۡنُ.

‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইবাদত করে দ্বিধার সাথে। তার মঙ্গল তাতে তার চিত্ত প্রশান্ত হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ক্ষতিগ্রস্থ হয় দুনিয়াতে ও আখিরাতে; এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি’ (সূরা আল-হাজ্জ: ১১)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপটে বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এক ব্যক্তি মদীনায় বাস করত। যদি তার স্ত্রীর গর্ভে পুত্র সন্তান জন্মলাভ করত এবং তার পশুটি কোন বাচ্চা প্রসব করতে তাহলে সে বলত, দ্বীন ইসলাম বড় চমৎকার। আর যদি তার স্ত্রীর গর্ভে পুত্রসন্তান না জন্মাত এবং তার পশুটিরও বাচ্চা না হত তাহলে সে বলত দ্বীন ইসলাম খারাপ ও অপয়া’।[১] আল-কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّقُوۡلُ اٰمَنَّا بِاللّٰہِ  فَاِذَاۤ اُوۡذِیَ فِی اللّٰہِ جَعَلَ فِتۡنَۃَ  النَّاسِ کَعَذَابِ اللّٰہِ ؕ وَ لَئِنۡ جَآءَ  نَصۡرٌ مِّنۡ رَّبِّکَ لَیَقُوۡلُنَّ  اِنَّا کُنَّا مَعَکُمۡ ؕ اَوَ لَیۡسَ اللّٰہُ  بِاَعۡلَمَ بِمَا فِیۡ صُدُوۡرِ الۡعٰلَمِیۡنَ.

‘মানুষের মধ্যে কতক লোক বলে, আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস করি, কিন্তু আল্লাহর পথে যখন তারা নিগৃহীত হয়, তখন তারা মানুষের পীড়নকে আল্লাহর শাস্তির মত গণ্য করে এবং তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে কোন সাহায্য আসলে তারা বলতে থাকে, আমরা তো তোমাদের সাথেই ছিলাম। বিশ্ববাসীর অন্তঃকরণে যা আছে, আল্লাহ কি তা সম্যক অবগত নন?’ (সুরা আল-আনকাবুত: ১০)।

চার. ভীরু কাপুরুষ

কিছু লোক এমন আছে যারা সত্যকে ঘৃণা ও অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে থাকে। সত্যের সাথে পরিচিত হতে চায় না। ফলে একদিকে তাদের জিদ ও হঠকারিতা সত্য থেকে বিরত রাখে, অপরদিকে তাদেরকে কাপুরুষতায় পেয়ে বসে। যার কারণে তারা কখনো সত্যের মুখোমুখী হওয়ার সাহস পর্যন্ত পায় না। মহান আল্লাহর ভাষায়, یُجَادِلُوۡنَکَ فِی الۡحَقِّ بَعۡدَ مَا تَبَیَّنَ کَاَنَّمَا یُسَاقُوۡنَ اِلَی الۡمَوۡتِ وَ ہُمۡ یَنۡظُرُوۡنَ ‘সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পরও তারা তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। মনে হচ্ছিল তারা যেন মৃত্যুর দিকে চালিত হচ্ছে, আর তারা যেন তা প্রত্যক্ষ করছে’ (সূরা আল-আনফাল: ৬)।

পাঁচ. হাসি-কৌতুক উদ্রেককারী

কতিপয় মানুষের কর্মকাণ্ড হাসি-তামাশায় উদ্রেক করে মাত্র। তারা খুব আজব প্রকৃতির। অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই সত্য থেকে পলায়নের চেষ্টায় তার বিভোর হয়ে পড়ে। মূলত তারা সত্য গোপনকারী। কুরআনে এসেছে,

فَمَا لَہُمۡ عَنِ التَّذۡکِرَۃِ  مُعۡرِضِیۡنَ- کَاَنَّہُمۡ حُمُرٌ مُّسۡتَنۡفِرَۃٌ- فَرَّتۡ مِنۡ قَسۡوَرَۃٍ.

‘তাদের কি হলো যে, তারা উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? যেন তারা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গর্দভ, হট্টগোলের কারণে পলায়নপর’ (সূর আল মুদ্দাছছির: ৪৯-৫১)।

ছয়. প্রশংসাকাক্সক্ষী

মানুষ সর্বদা প্রশংসিত হতে পসন্দ করে। তবে এক্ষেত্রে তারা নিজেরা করে না এমন বিষয়েও প্রশংসা কামনা করে। তাদের সম্পর্কে কুরআনে এসেছে, وَّ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ یُّحۡمَدُوۡا بِمَا لَمۡ یَفۡعَلُوۡا فَلَا تَحۡسَبَنَّہُمۡ بِمَفَازَۃٍ مِّنَ الۡعَذَابِ ۚ وَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ  ‘যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে যারা, তারা শাস্তি হতে মুক্তি পাবে-এরূপ তুমি কখনো মনে করো না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে’ (সূরা আলে ইমরান: ১৮৮)।

সাত. সুবিধাবাদী

এমন কিছু লোক আছে, যারা সুবিধা পেলে একদলে ভিড়ে যায় আবার সেখানে অসুবিধা হলে অন্য দলে যোগ দেয়। মহান আল্লাহ বলেন,

الَّذِیۡنَ یَتَرَبَّصُوۡنَ بِکُمۡ ۚ فَاِنۡ کَانَ لَکُمۡ فَتۡحٌ مِّنَ اللّٰہِ قَالُوۡۤا اَلَمۡ نَکُنۡ مَّعَکُمۡ ۫ۖ وَ اِنۡ کَانَ لِلۡکٰفِرِیۡنَ نَصِیۡبٌ ۙ قَالُوۡۤا اَلَمۡ نَسۡتَحۡوِذۡ عَلَیۡکُمۡ وَ نَمۡنَعۡکُمۡ مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ؕ فَاللّٰہُ یَحۡکُمُ بَیۡنَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ وَ لَنۡ یَّجۡعَلَ اللّٰہُ لِلۡکٰفِرِیۡنَ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ  سَبِیۡلًا.

‘যারা তোমাদের অমঙ্গলের প্রতীক্ষায় থাকে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের জয় হলে বলে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না। আর যদি কাফিরদের কিছু বিজয় হয়, তবে তারা বলে আমরা কি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রবল ছিলাম না এবং আমরা কি তোমাদেরকে মুমিনদের হাত হতে রক্ষা করিনি? আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে বিচার মীমাংসা করবেন এবং আল্লাহ কখনই মুমিনরেদ বিরুদ্ধে কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না’ (সূরা আন নিসা: ১৪১)।

আট. ধূর্ত প্রকৃতির

মানুষের মধ্যে এমন কতিপয় মানুষ আছে যারা অত্যন্ত ধূর্ত ও চালাক প্রকৃতির। সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত কোন কাজ নিজেরা করবে এবং তা থেকে ফায়দা নেবে। যখনই সেই কাজ অন্য কেউ করে তখন তা অস্বীকার করে বসে। আল-কুরআন বিষয়টি চিত্রিত করেছে এভাবে,

وَ لَمَّا جَآءَہُمۡ کِتٰبٌ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَہُمۡ  ۙ وَ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ یَسۡتَفۡتِحُوۡنَ عَلَی الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ۚۖ فَلَمَّا جَآءَہُمۡ مَّا عَرَفُوۡا کَفَرُوۡا بِہٖ ۫ فَلَعۡنَۃُ اللّٰہِ عَلَی الۡکٰفِرِیۡنَ.

‘তাদের নিকট যা আছে আল্লাহর নিকট হতে তার সমর্থক কিতাব আসল; যদি পূর্বে সত্য প্রত্যাখানকারীদের বিরুদ্ধে তারা এর সাহায্যে বিজয় প্রার্থনা করত, তবুও তারা যা জ্ঞাত ছিল তার যখন তাদের নিকট আসল তখন তারা সেটা প্রত্যাখান করল। সুতরাং কাফিরদের প্রতি আল্লাহর লা‘নত’ (সূরা আল-বাকারাহ: ৮৯)। তাদের এ ধরনের আরো একটি চরিত্র বর্ণনায় কুরআনে এসেছে,

وَ اِذَا  دُعُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ لِیَحۡکُمَ بَیۡنَہُمۡ  اِذَا فَرِیۡقٌ مِّنۡہُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ- وَ اِنۡ یَّکُنۡ  لَّہُمُ الۡحَقُّ یَاۡتُوۡۤا اِلَیۡہِ مُذۡعِنِیۡنَ.

‘ফায়সালা করার জন্য যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান করা হয়, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর সত্য তাদের স্বপক্ষে হলে তারা বিনীতভাবে রাসূলের কাছে ছুটে আসে’ (সূরা আন-নূর: ৪৮-৪৯)। এমন কিছু মানুষ আছে যারা শুধু আকৃতিতেই মানুষ। এছাড়া মনুষত্বের কোন কিছু তাদের মাঝে পাওয়া যায় না। এ যেন চলমান জড় পদার্থ, যা দেখে লোকদের হাসি পায়। মূলত এটি মুনাফিকদের অত্যন্ত আকর্র্ষণীয় একটি চিত্র। যা বেদনা মিশ্রিত কৌতুক। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اِذَا  رَاَیۡتَہُمۡ  تُعۡجِبُکَ اَجۡسَامُہُمۡ ؕ وَ اِنۡ یَّقُوۡلُوۡا  تَسۡمَعۡ  لِقَوۡلِہِمۡ ؕ کَاَنَّہُمۡ خُشُبٌ مُّسَنَّدَۃٌ.

‘তুমি যখন তাদেরকে দেখ, তখন তাদের দেহাবয়র অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনে হয়। আর যদি তারা কথা বলে তুমি তাদের কথা শোন। কিন্তু তারা তো প্রাচীরে ঠেকানো কাঠের মত’ (সূরা আল-মুনাফিকুন: ৪)।

দশ. গোপনে সত্য উপেক্ষাকারী

সমাজে এমন কতিপয় মানুষ পাওয়া যায় যারা নিজে যেমন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না, ঠিক তেমনিভাবে সত্যকে মেনে নিতেও পারে না। প্রতি মুর্হূতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে দুদোল্যমান থাকে। এ ধরনের লোক চুপি চুপি সত্য থেকে বিমুখ হতে পসন্দ করে। মূলত এটি দুর্বল এক শ্রেণীর মুনাফিকের চরিত্র। তাদের সম্পর্কে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

وَ  اِذَا مَاۤ  اُنۡزِلَتۡ سُوۡرَۃٌ  نَّظَرَ  بَعۡضُہُمۡ اِلٰی بَعۡضٍ ؕ ہَلۡ یَرٰىکُمۡ مِّنۡ اَحَدٍ ثُمَّ انۡصَرَفُوۡا ؕ صَرَفَ اللّٰہُ  قُلُوۡبَہُمۡ بِاَنَّہُمۡ قَوۡمٌ  لَّا یَفۡقَہُوۡنَ.

‘এবং যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং ইশারায় জিজ্ঞেস করে তোমাদেরকে কেউ লক্ষ্য করতেছে কি? অতঃপর তারা সরে পড়ে। আল্লাহ তাদের হৃদয়কে সত্য বিমুখ করেছেন, কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের বোধশক্তি নেই’ (সূরা আত-তাওবা: ১২৭)।

এগার. দ্বিমুখী নীতি

এমন কতক মানুষ রয়েছে যারা উড়ঁনষব ঝঃধহফধৎফ অবলম্বন করে সমাজে বিচরণ করে। তারা নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা করে না। বরং সর্বদা দ্বিমুখী নীতিতে বিশ্বাসী। যখন যেখানে যায় অবস্থান তখন সেখানে তার আপনজনে পরিণত হয়। আর অন্যত্র গেলে তা প্রত্যাখ্যান করে। এ মর্মে কুরআনে এসেছে,

وَ  اِذَا لَقُوا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قَالُوۡۤا اٰمَنَّا ۚۖ وَ  اِذَا خَلَوۡا اِلٰی شَیٰطِیۡنِہِمۡ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا مَعَکُمۡ ۙ اِنَّمَا نَحۡنُ مُسۡتَہۡزِءُوۡنَ.

‘যখন তারা মুমিনদের স্পর্শে আসে তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি, আর যখন তারা নিভৃতে তাদের শয়তানের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরাতো তোমাদের সাথেই রয়েছি; আমরা শুধু তাদের সাথে ঠাট্টা-তামাশা করে থাকি’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৪)। কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে,  مُّذَبۡذَبِیۡنَ بَیۡنَ ذٰلِکَ ٭ۖ لَاۤ اِلٰی ہٰۤؤُلَآءِ وَ لَاۤ اِلٰی ہٰۤؤُلَآءِ ‘দোটানায় দোদুল্যমান, না এদের দিকে না ওদের দিকে’ (সূরা আন-নিসা: ১৪৩)।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


* সহকারী অধ্যাপক (বিসিএস সাধারণ শিক্ষা), সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা।

[১]. ছহীহ বুখারী, ‘কিতাবুত তাফসীর’, হা/৪৭৪২।




প্রসঙ্গসমূহ »: কুরআনুল কারীম
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (২য় কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১৩তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মেসবাহুল ইসলাম
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি (৩য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
রামাযানের স্বরূপ - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ইসলামী শিষ্টাচার (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (১৪তম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
যুলমের পরিচয় ও পরিণাম - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
আল-কুরআনে মানুষ: মর্যাদা ও স্বরূপ বিশ্লেষণ (৩য় কিস্তি) - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় (৫ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ