বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা

-মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান*


(৩য় কিস্তি)

ইসলাম ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে দুধ

খাদ্যের প্রত্যেকটি উপাদান দুধে সুষমভাবে বিরাজমান, তাই দুধকে ‘সুষম খাদ্য’ বলা হয়। মূলত সুস্বাদু ও আদর্শ খাদ্য হল দুধ। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে দুধ সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। দুধ সম্পর্কে হাদীছ গ্রন্থে মহানবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীও স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে।

মায়ের দুধ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা

(ক) মহান আল্লাহ বলেন,

وَ الۡوَالِدٰتُ یُرۡضِعۡنَ اَوۡلَادَہُنَّ حَوۡلَیۡنِ کَامِلَیۡنِ لِمَنۡ اَرَادَ اَنۡ یُّتِمَّ الرَّضَاعَۃَ وَ عَلَی الۡمَوۡلُوۡدِ لَہٗ رِزۡقُہُنَّ وَ کِسۡوَتُہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ لَا تُکَلَّفُ نَفۡسٌ اِلَّا وُسۡعَہَا لَا تُضَآرَّ وَالِدَۃٌۢ بِوَلَدِہَا وَ لَا مَوۡلُوۡدٌ لَّہٗ بِوَلَدِہٖ وَ عَلَی الۡوَارِثِ مِثۡلُ ذٰلِکَ فَاِنۡ اَرَادَا فِصَالًا عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡہُمَا وَ تَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡہِمَا وَ اِنۡ اَرَدۡتُّمۡ اَنۡ تَسۡتَرۡضِعُوۡۤا اَوۡلَادَکُمۡ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ اِذَا سَلَّمۡتُمۡ مَّاۤ اٰتَیۡتُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ

‘আর যে স্তন্যপানের কাল পূর্ণ করতে ইচ্ছে করে, তার জন্য মাতাগণ পূর্ণ দু’বছর স্বীয় সন্তানদেরকে স্তন্য দান করবে, আর সন্তানের পিতাগণ বিহিতভাবে প্রসূতিদের খোরাক ও তাদের পোশাক দিতে বাধ্য; কাউকেও তার সাধ্যাতীত কার্যভার দেয়া হয় না, নিজ সন্তানের কারণে মাতাকে এবং নিজ সন্তানের কারণে পিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা চলবে না এবং উত্তরাধিকারীগণের প্রতিও একই ধরণের বিধান; কিন্তু যদি তারা পরস্পর পরামর্শ ও সম্মতি অনুসারে স্তন্য ত্যাগ করাতে ইচ্ছা করে, তবে উভয়ের কোন দোষ নেই; আর তোমরা যদি নিজ সন্তানদেরকে স্তন্য পানের জন্য সমর্পণ করতঃ ন্যায়সঙ্গতভাবে কিছু প্রদান কর, তাহলেও তোমাদের কোন দোষ নেই এবং আল্লাহকে ভয় কর ও জেনে রেখো যে, তোমরা যা করছ আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩৩)
(খ) মহান আল্লাহ আরও বলেন, وَ وَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ اِحۡسٰنًا حَمَلَتۡہُ اُمُّہٗ کُرۡہًا وَّ وَضَعَتۡہُ کُرۡہًا وَ حَمۡلُہٗ وَ فِصٰلُہٗ ثَلٰثُوۡنَ شَہۡرًا ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার জন্য। তার মাতা তাকে গর্ভধারণ করেছে অতি কষ্টের সাথে, প্রসব করেছে কষ্টের সাথে, তার গর্ভধারণ থেকে শুরু করে দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত ৩০ মাস সময় লেগে যায়’ (সূরা আল-আহক্বাফ : ১৫)।
(গ) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰۤی اُمِّ مُوۡسٰۤی اَنۡ اَرۡضِعِیۡہِ ‘আমরা মূসার মাকে নির্দেশ দিলাম, তাকে (মূসাকে) দুধপান করাও’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ৭)।
(ঘ) আল্লাহ বলেন, وَ اَنۡہٰرٌ مِّنۡ لَّبَنٍ لَّمۡ یَتَغَیَّرۡ طَعۡمُہٗ ‘(জান্নাতে) দুধের এমন নহর প্রবাহিত হবে, যার স্বাদ কখনও পরিবর্তন হবে না’ (সূরা মুহাম্মাদ : ১৫)।

দুধ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশনা
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রিয় খাদ্যের মধ্যে দুধ ছিল অন্যতম। হাদীছে এসেছে,
(১)

عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَقَدْ سَقَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَدَحِى هَذَا الشَّرَابَ كُلَّهُ الْعَسَلَ وَالنَّبِيْذَ وَالْمَاءَ وَاللَّبَنَ

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিয়ালা দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিভিন্ন ধরনের পানীয় পান করাতাম। যেমন মধু, নাবীয ও দুধ।[১]
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,

(২)

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ أُسْرِىَ بِهِ لَقِيْتُ مُوْسَى قَالَ فَنَعَتَهُ فَإِذَا رَجُلٌ حَسِبْتُهُ قَالَ مُضْطَرِبٌ رَجِلُ الرَّأْسِ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ قَالَ وَلَقِيْتُ عِيْسَى فَنَعَتَهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَبْعَةٌ أَحْمَرُ كَأَنَّمَا خَرَجَ مِنْ دِيْمَاسٍ يَعْنِى الْحَمَّامَ وَرَأَيْتُ إِبْرَاهِيْمَ وَأَنَا أَشْبَهُ وَلَدِهِ بِهِ قَالَ وَأُتِيْتُ بِإِنَاءَيْنِ أَحَدُهُمَا لَبَنٌ وَالآخَرُ فِيْهِ خَمْرٌ فَقِيْلَ لِىْ خُذْ أَيَّهُمَا شِئْتَ فَأَخَذْتُ اللَّبَنَ فَشَرِبْتُهُ فَقِيْلَ لِى هُدِيْتَ الْفِطْرَةَ أَوْ أَصَبْتَ الْفِطْرَةَ أَمَا إِنَّكَ لَوْ أَخَذْتَ الْخَمْرَ غَوَتْ أُمَّتُكَ

আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মি‘রাজের রাতে আমি মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর দেখা পেয়েছি। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর আকৃতি বর্ণনা করেছেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) একজন দীর্ঘদেহধারী, মাথায় কোঁকড়ানো চুলবিশিষ্ট, যেন শানূয়া গোত্রের একজন লোক। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর দেখা পেয়েছি। অতঃপর তিনি তাঁর চেহারা বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি হলেন মাঝারি গড়নের গৌর বর্ণবিশিষ্ট, যেন তিনি এই মাত্র হাম্মামখানা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। আর ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কেও দেখেছি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে আকৃতিতে আমিই তার অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অতঃপর আমার সামনে দু’টি পেয়ালা আনা হল। একটিতে দুধ, অপরটিতে শরাব অর্থাৎ মদ। আমাকে বলা হল, আপনি যেটি ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারেন। আমি দুধের বাটিটি গ্রহণ করলাম। আর তা পান করলাম। তখন আমাকে বলা হল, আপনি ফিতরাত বা স্বভাবকেই গ্রহণ করে নিয়েছেন। দেখুন! আপনি যদি শরাব বা মদ গ্রহণ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।[২] অন্য বর্ণনায় তিনটি বাটির কথা এসেছে। সেখানে দুধ, মদ ও মধুর বাটির কথা উল্লেখ আছে।[৩]

(৩)

عَنْ أُمِّ الْفَضْلِ بِنْتِ الْحَارِثِ أَنَّ نَاسًا اخْتَلَفُوْا عِنْدَهَا يَوْمَ عَرَفَةَ فِىْ صَوْمِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ بَعْضُهُمْ هُوَ صَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ لَيْسَ بِصَائِمٍ فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ بِقَدَحِ لَبَنٍ وَهْوَ وَاقِفٌ عَلَى بَعِيْرِهِ فَشَرِبَهُ

উম্মুল ফাযল বিনতে হারিছ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, লোকজন তাঁর সমানে ‘আরাফার দিনে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছিয়াম সম্পর্কে মতভেদ করছিলেন। কেউ বলছিলেন, তিনি ছায়েম। আবার কেউ বলছিলেন, তিনি ছায়েম নন। অতঃপর আমি তাঁর কাছে এক পেয়ালা দুধ পাঠিয়ে দিলাম, তিনি তখন উটের উপর উপবিষ্ট ছিলেন, তিনি তা পান করে নিলেন।[৪]

(৪)

عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ أَبُوْ حُمَيْدٍ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ مِنَ النَّقِيْعِ بِإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَّا خَمَّرْتَهُ وَلَوْ أَنْ تَعْرُضَ عَلَيْهِ عُوْدًا

জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আবু হুমাইদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নামক এক আনছারী নাক্বি‘ নামক জায়গা থেকে এক পেয়ালা দুধ নিয়ে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলেন। তখন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, এটিকে ঢেকে আননি কেন? এর উপর একটি কাঠি দিয়ে হলেও ঢেকে রাখা দরকার।[৫]

(৫)

عَنِ الْبَرَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَدِمَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ مَكَّةَ وَأَبُوْ بَكْرٍ مَعَهُ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ مَرَرْنَا بِرَاعٍ وَقَدْ عَطِشَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فَحَلَبْتُ كُثْبَةً مِّنْ لَبَنٍ فِىْ قَدَحٍ فَشَرِبَ حَتَّى رَضِيْتُ

বারা‘ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে রওয়ানা হলেন, তখন তাঁর সাথে ছিলেন আবুবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। আবুবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমরা এক রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। সে সময় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব পিপাসার্ত ছিলেন। আবুবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি তখন একটি পাত্রে ভেড়ার দুধ দোহন করলাম। তিনি তা পান করলেন, আমি খুব খুশি হলাম।[৬]

(৬)

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نِعْمَ الصَّدَقَةُ اللِّقْحَةُ الصَّفِىُّ مِنْحَةً وَالشَّاةُ الصَّفِىُّ مِنْحَةً تَغْدُو بِإِنَاءٍ وَتَرُوحُ بِآخَرَ

আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, উত্তম ছাদাক্বাহ হল উপহার স্বরূপ দেয়া দুধেল উটনী বা দুধেল বকরী, যা সকালে একটি পাত্র পূর্ণ করে আর বিকালে পূর্ণ করে আরেকটি।[৭]

(৭)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَرِبَ لَبَنًا فَمَضْمَضَ وَقَالَ إِنَّ لَهُ دَسَمًا

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুধ পান করেছেন, এরপর তিনি কুলি করেছেন এবং বলেন, এর মধ্যে তৈল আছে।[৮]

মায়ের দুধ পানে শিশুর উপকার
আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, সন্তানদের জন্য মায়ের দুধে অপরিসীম উপকার নিহিত রয়েছে, যা তাকে কঠিন দুরারোগ্য থেকে মুক্ত রাখে। নিম্নে মায়ের দুধ পানে শিশুর জন্য কী কী উপকার বয়ে আনে তা সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হল:

১. শিশুর জীবন গঠনের সকল উপাদানই মায়ের দুধে বিদ্যমান।
২. জন্মের পর হতে ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ দিয়েই শিশুর ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মিটে যায়।
৩. মায়ের প্রথম বা শালদুধে পানি বেশী থাকে, চর্বি জাতীয় পদার্থ কম থাকে। ফলে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের অভাব সহজেই পূরণ হয়। এতে আরও রয়েছে আমিষ ও এর অংশ ল্যাকট্রোগেন্ডা বিউলিন। যার ফলে এটি নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪. মায়ের দুধ জীবাণুমুক্ত। জীবাণু ধ্বংসকারী ল্যাকটোস্ফেরিন ও লাইসেজাইম মায়ের দুধে বিদ্যমান।
৫. ‘ল্যাকট্রোজ’ নামক এমন একটি পদার্থ মায়ের দুধে আছে, যা পৃথিবীর কোন খাদ্যে নেই।
৬. মায়ের দুধে প্রথমে যে রোগ প্রতিরোধকারী দ্রব্য থাকে, তার নাম ‘ইম্যনো গ্লোবিইলিন’। সন্তান জন্মের পর হলুদ দুধের ৯৭% রোগ প্রতিরোধকারী ইম্যনো গ্লোবিইলিন।
৭. মায়ের দুধে যেসব উপকারী দ্রব্য আছে তার মধ্যে অন্যতম : (ক) পানি (খ) আমিষ (গ) ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফ্লোরাইড, ভিটামিন, এ্যামাইনো এ্যাসিড, হিস্টিডিন, লিউসিন ও ফ্রিওনিন ইত্যাদি পদার্থ।[৯]

অনুরূপভাবে শিশুর স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও নিরাপত্তা বিধান করে মায়ের দুধ। এই দুধে রয়েছে প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ উপাদান ল্যাকট্রোজ, যা শিশুদের মস্তিষ্কের কোষ ও স্নায়ুতন্ত্র গঠন ও বর্ধনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শিশুদের মাত্র ৫-৭ বছরের মধ্যে মস্তিষ্ক শতকরা ৯০ ভাগ বর্ধিত হয় এবং ১০% বর্ধন সারা জীবন ধরে হতে থাকে। এজন্য শিশুদের দুধপানে অভ্যস্ত করা অপরিহার্য। এমনকি মায়ের দুধ পানকারী শিশুদের উদরাময়/ডায়রিয়া, ফ্লু ও চর্মরোগ হয় না।

শিশুকে দুধ পান করালে মায়ের উপকার
গর্ভধারণের সময় চর্বি সহজে নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। তলপেটের থলথলে ভাব সহজেই হ্রাস পায়। মায়ের অসুস্থ শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। মায়েদের স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা হ্রাস পায় এবং তাদের জরায়ু দ্রুত পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়।[১০]

সোনামণি ও তার মায়ের মাঝে হৃদ্যতা
মা যদি শিশুকে তার বুকের দুধ পান করায়, তাহলে শিশুর প্রতি মায়ের একটা মমত্ববোধ সৃষ্টি হয় এবং মায়ের প্রতি শিশুর শ্রদ্ধাবোধ জন্ম নেয়। দুধপানের সাথে সাথে অনুভূতিহীন তরঙ্গ, স্পন্দন শিশু ও তার মায়ের মধ্যে বিনা সূতার মালার মত ভালবাসা, স্নেহমমতা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি করে দেয়। আয়া ও সেবিকা দ্বারা লালিত সন্তান মায়ের স্নেহমমতা ও পরিবারে আদর থেকে বঞ্চিত থাকে। মায়ের দুধ শিশুর জন্য আর গাভীর দুধ বাছুরের জন্য। কৌটার দুধ মানে সাদা বিষ।[১১]

মায়ের দুধের আরো কিছু উপকার
সম্প্রতি এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব শিশুরা বুকের দুধ খায়, তারা বিশেষ করে অ্যালার্জি, পেটের সমস্যা এবং কানে সংক্রমণের মতো সমস্যায় কম পড়ে। এমনকি ফুসফুসকে শক্তিশালী করে। মায়ের বুকের দুধে সব ধরনের পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। ক্যানাডিয়ান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণায় প্রমাণ করেছে যে, মায়ের দুধ পান করলে শিশুর শতকরা ৪০ ভাগ অ্যাজমার ঝুঁকি কমে। বিবিসির সূত্রে জানা যায় যে, একটি শিশু প্রতি মাসে যতদিন যতটুকু দুধই পান করুক না কেন, তার প্রতি ফোঁটাই অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।[১২]

চতুষ্পদ জন্তুর দুধ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা
(ক) আল্লাহ আরও বলেন, وَ الۡاَنۡعَامَ خَلَقَہَا لَکُمۡ فِیۡہَا دِفۡءٌ وَّ مَنَافِعُ وَ مِنۡہَا تَاۡکُلُوۡنَ ‘তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তাতে ক্ষীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রয়েছে এবং তা হতে তোমরা আহার্য পেয়ে থাক’ (সূরা আন-নাহল : ৫)। পশু থেকে আমরা পাই গোশত, দুধ, পোশাক, চামড়া ইত্যাদি।
(খ) মহান আল্লাহ বলেন, وَ اِنَّ لَکُمۡ فِی الۡاَنۡعَامِ لَعِبۡرَۃً نُسۡقِیۡکُمۡ مِّمَّا فِیۡ بُطُوۡنِہٖ مِنۡۢ بَیۡنِ فَرۡثٍ وَّ دَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَآئِغًا لِّلشّٰرِبِیۡنَ ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তুদের মাঝে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমরা তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্তিত বস্তুসমূহের মধ্যে থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দুধ, যা পানকারীদের জন্য উপাদেয় বা সুস্বাদু’ (সূরা আন-নাহল : ৬৬)। এ কারণেই দুধকে পৃথিবীর সবচেয়ে উপাদেয় ও আদর্শ খাদ্য বলে গণ্য করা হয়।
(গ) মহান আল্লাহ আরও বলেন,

وَ اِنَّ لَکُمۡ فِی الۡاَنۡعَامِ لَعِبۡرَۃً نُسۡقِیۡکُمۡ مِّمَّا فِیۡ بُطُوۡنِہَا وَ لَکُمۡ فِیۡہَا مَنَافِعُ کَثِیۡرَۃٌ وَّ مِنۡہَا تَاۡکُلُوۡنَ

‘তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয় আছে। আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থিত বস্তু থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে প্রচুর উপকারিতা আছে। তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর’ (সূরা আল-মুমিনূন : ২১)।
অতএব, সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষ ঘাস, আর লতা-পাতা কেটে প্রসেস করে মাত্র ১০০ গ্রাম দুধ বের করার ক্ষমতা রাখে কি?

চতষ্পদ জন্তু (গরু, ছাগল এবং মহিষ)-এর দুধে উপকারী বস্তুসমূহ
চতুষ্পদ জন্তুর দুধে জলীয় অংশের ভাগ থাকে সর্বাধিক। আমিষ, চর্বি ও খনিজ পদার্থ থাকে। ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্যারোটিন, মাইক্রোগ্রাম ইত্যাদি শরীর গঠনের প্রায় সকল উপাদান গরু, ছাগল ও মহিষের দুধে বিদ্যমান।

চতুষ্পদ জন্তুর দুধের উপকারিতা
ক্যালরী হচ্ছে শক্তির একক। আর চতুষ্পদ জন্তুর দুধে প্রচুর ক্যালরি বিদ্যমান। এসকল দুধে অত্যধিক খনিজ দ্রব্যের উপস্থিতি, যা দেহ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এছাড়া গরুর দুধ বাত, পিত্ত, হৃদরোগ ও রক্তদোষের মহৌষধ। বেরিবেরিরোগ ও ন্যাফ্রাইটিস রোগের উপকার করে। আর ছাগল, বকরী বা ভেড়ার দুধের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমেরিকার খাদ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ ডগ্লাস থামস বলেন, ‘বকরীর ক্ষয় জ্বর হয় না, যা গাভীর হয়ে থাকে। তুলনামূলক ভাবে বকরীর দুধ দ্রুত হজম হয়। গরুর দুধ বাচ্চাদের হজম না হলে তখন বকরীর দুধ অতি সহজে হজম হয়ে যায়। বকরীর দুধে ফ্লোরিন বেশি থাকে, যা দ্রুত হাড্ডি বৃদ্ধিতে সহায়ক। এ দুধে ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে, যা মেরুদণ্ডকে মযবুত করে। এমনকি দাঁত মযবুত করে ও চোখের জন্য উপকারী’। এ ছাড়াও বকরীর দুধে সোডিয়াম ও ভিটামিন থাকে। বকরীর দুধ ঠাণ্ডা ও সুস্বাদু হয়। চোখ ব্যথার জন্য বকরীর দুধে তুলা ভিজিয়ে রাতে চোখের উপর পট্টি বেঁধে ঘুমালে ব্যথা উপশম হয়। আর মহিষের দুধ রক্তপিণ্ড ও শরীরের দাহনাশ করে। সকল দুধেরই সাধারণ গুণ হচ্ছে মেধা, স্মৃতি, বল ও আয়ুবর্ধক। তাই ক্লান্তি দূর করে ও নিদ্রা সহজ করে।

দুধ থেকে তৈরি ঘি শরীরের চর্বি সরবরাহের এক শ্রেষ্ঠ উৎস। দুধ মানব জীবনের বহু উপকারী পানীয়। এর চেয়ে উপাদেয় খাদ্য আর নেই। দুধ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ খাদ্য। তাই দুধকে ‘আদর্শ খাদ্য’ বলা হয়ে থাকে। বাচ্চাদের বৃদ্ধির সকল উপাদানই (১০০%) দুধে থাকে।[১৩] মায়ের দুধ ও গরুর দুধে মনোক্যাপ্রিন আছে, যা এইডস প্রতিরোধে কাজ করে। রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস দুধ পান করলে ভাল ঘুম হয়। কারণ দুধে উপস্থিত ‘এল-ট্রিপলোফেন’ রক্তে ‘মেলাটোনিন’ ও ‘সেরোটিনিন’ তৈরি করে। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন আমাদের এক গ্লাস দুধ পান করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য দুধের চর্বি হৃদরোগ ও রক্তচাপের কোন ক্ষতি করে না। দুধের বিউটাইরিক এসিড, ক্যাপরাইলিক এসিড এবং কমজুগেটেড লিনোলিক এসিড ক্যান্সার সেলের বর্ধন রোধ করে। দুধের আমিষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আমিষ। এতে রয়েছে সকল প্রকার অত্যাবশ্যকীয় এ্যামাইনো এসিডের ব্যাপক সমাহার। এই আমিষের ৮০% কেসিন, যা অন্য কোনভাবে পাওয়া যায় না। এর ৯৯% হজম হয়। পানিতে ও চর্বিতে দ্রবণীয় সকল প্রকার ভিটামিনও এতে পাওয়া যায়। শরীরের বর্ধন, ক্ষয়পূরণ, মেধা বিকাশ ও সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজন এই দুধ।[১৪]

দুধের আরো কিছু মৌলিক উপকারিতা হল- দুধ ক্যালসিয়ামের একটি অন্যতম উপাদান, যা সুস্থ হাড় গঠনে সাহায্য করে। দুধ সুস্থ দাঁতের জন্যও যরূরী। কেননা দুধ দাঁতের যেকোন রোগ সহ ক্যাভিটি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। দুধের পুষ্টি উপাদান শরীরের মাংসপেশি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাড়তি বয়সী বাচ্চাদের শরীরের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক গড়ন নিশ্চিত করতে দুধ পানের কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া ব্যায়াম করা শেষে দুধ খেলে শরীরের মাংসপেশি সুগঠিত হয়। সারাদিনের ক্লান্তি আর মানসিক অবসাদ দূর করতে একগ্লাস দুধের কোন বিকল্প হয় না। গরম একগ্লাস দুধ আপনার মাংসপেশি ও নার্ভ শান্ত করে তোলে আর আপনার কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে। ত্বক উজ্জ্বল করতে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করা ভাল। কেননা দুধের নিউট্রিইয়েন্স ও ল্যাক্টিক অ্যাসিড উপাদান ত্বক সফট রাখে, এর অ্যামিনো অ্যাসিড ত্বক মশ্চেরাইজ করে ও দুধের প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান ত্বকের যেকোন ধরণের ড্যামেজ রোধ করে।

দুধ পান করার সময় দু‘আ

اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ

উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া ঝিদনা মিনহু।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য এই খাদ্যে বরকত দিন এবং আমাদেরকে এর চাইতে উত্তম খাদ্য খাওয়ান’।[১৫]

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

* চাঁদপুর, খুলনা।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৬০৬; মিশকাত, হা/৪২৮৬।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৮; মিশকাত, হা/৫৭১৬।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৬১০।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬৬১ ‘আরাফায় সাওয়ারীর উপর অবস্থান করা’ অনুচ্ছেদ-৮৮, ‘হজ্জ’ অধ্যায়-২৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১১২৩।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৬০৬ ‘দুধ পান করা’ অনুচ্ছেদ-১৪, ‘পানীয় দ্রব’ অধ্যায়-৭৪; মিশকাত, হা/৪২৯৯।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৬০৭।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৬০৮।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৬০৯।
[৯]. বিজ্ঞানের আলোকে কুরআন সুন্নাহ, পৃ. ৩২।
[১০]. মাসিক আত-তাহরীক, ডিসেম্বর ২০০১।
[১১]. প্রাগুক্ত।
[১২]. দৈনিক যুগান্তর, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ‘লাইফস্টাইল ডেস্ক’।
[১৩]. মাসিক আত-তাহরীক, জানুয়ারী/২০০২।
[১৪]. দৈনিক ইত্তেফাক ১০/০৬/২০১৫।
[১৫]. আবূ দাঊদ, হা/৩৭৩০; তিরমিযী, হা/৩৪৫৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩৩২২; মিশকাত হা/৪২৮৩, সনদ হাসান।




ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
কুরআনী প্রবাদ সংকলন : তাৎপর্য ও শিক্ষা (শেষ কিস্তি) - প্রফেসর ড. লোকমান হোসেন
কুরবানীর মাসায়েল - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মূর্তিপূজার ইতিহাস - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৮ম কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ফিলিস্তীন, হে মুসলিম! - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
ফিতনা পরিচিতি ও আমাদের করণীয় (শেষ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩টি উপায় (শেষ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
মুছীবতে ধৈর্যধারণ করার ফযীলত - শায়খ আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন : সংশয় নিরসন (৩য় কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী

ফেসবুক পেজ