ইখলাছ বিহীন আমল ও তার পরিণতি
-আব্দুল গাফফার মাদানী*
আল্লাহ তা‘আলা যখন আমাদেরকে তাঁর ইবাদত এবং আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন, তখন সাথে সাথে এর জন্য একটি মানদণ্ডও তৈরি করে দিয়েছেন। যার দ্বারা বান্দার আমল এবং ইবাদতগুলোকে যাচাই করা হবে। অতঃপর যে সকল আমল এই মানদণ্ড বা শর্তের অনুকূলে হবে, তা হবে গ্রহণযোগ্য। পক্ষান্তরে যা এরূপ হবে না, তা হবে প্রত্যাখ্যাত, অগ্রহণযোগ্য। আর ইবাদত কবুল ও প্রত্যাখ্যানের এ শর্ত বা মানদণ্ডই হচ্ছে ইখলাছ। তাই ইবাদত কবুল হওয়া বা না হওয়া সে ইবাদতের ইখলাছের উপর নির্ভরশীল
‘ইখলাছ’-এর পরিচয়
ইখলাছের পরিচয় দিতে গিয়ে ইমাম ঈয ইবনু আবদিস সালাম (৫৭৭-৬৬০ হি.) বলেন,
الإخلاص أن يفعل المكلف الطاعة خالصة لله وحده، لا يريد بها تعظيماً من الناس ولا توقيراً، ولا جلب نفع ديني، ولا دفع ضرر دنيوي
‘ইখলাছ হচ্ছে বান্দা তার একনিষ্ঠ আনুগত্য কেবল আল্লাহর নিকটে নিবেদন করবে এবং এর বিনিময়ে মানুষের নিকট কোন সম্মান বা মর্যাদা কামনা করবে না। আর না এর দ্বারা কোন দ্বীনী সুবিধা অর্জন অথবা দুনিয়াবী ক্ষতি দূরীকরণের ইচ্ছা করবে’।[১]
ইবাদতে ইখলাছ
ইখলাছ হচ্ছে দ্বীনের বুনিয়াদ। এটি ইবাদতের রূহ ও তা কবূলের শর্ত। ইখলাছ ইবাদতকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে। অতঃপর আল্লাহ তা কবুল করেন, এতে বরকত দেন এবং এর দ্বারা বান্দার উপকার সাধন করেন। আল্লাহ বান্দার প্রতিটি আমলে ইখলাছ ধারণ ও অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর দ্বারাই তিনি তাঁর তাদের পরীক্ষা করবেন। যেমনটি তিনি তাঁর কিতাবে বলেছেন, لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ‘তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম?’ (সূরা আল-মুলক: ২)। এই আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) (৭০১-৭৭৪ হি.) বলেন, ‘আল্লাহ বলেননি, ‘অধিক আমল’ (أكثر عملا) বরং বলেছেন, ‘উত্তম আমল (أحسن عملا) । আর আমল ততক্ষণ পর্যন্ত উত্তম হতে পারে না, যতক্ষণ না তা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হবে এবং রাসূল (ﷺ)-এর শরী‘আত অনুযায়ী হবে। তাই যখন কোন আমল থেকে এদু’টি শর্তের কোন একটি শর্ত হারিয়ে যাবে, তখন তা বাতিল ও নিষ্ফল বলে গণ্য হবে’।[২]
তাই যেকোন আমল, যেকোন ইবাদত আল্লাহর নিকটে কবুল হওয়ার মৌলিক শর্ত দু’টি। যথা: ইখলাছ- তা আল্লাহর জন্য, কেবল আল্লাহর জন্যই হতে হবে। আর অন্যটি হলো তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী তা হতে হবে। ইখলাছ হচ্ছে সকল নবী রাসূলগণের দাওয়াতের সারনির্যাস। ইখলাছের দিকেই ছিল তাঁদের সকলের দাওয়াত। যেমনটা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰہَ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ ‘আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে...’ (সূরা আল-বাইয়িনাহ: ৫)।
ইখলাছ বিহীন আমল:
যে ব্যক্তি আমল করে, ইবাদত করে এবং তার এই আমল ও ইবাদতের দ্বারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন কামনা করে না, বরং তা দ্বারা মানুষের নিকট মর্যাদা ও সম্মান পেতে চায়, লোকদের দেখানোর জন্য বা তাদের নিকট থেকে প্রশংসা কুড়ানোকে উদ্দেশ্য বানায়, তার সে আমল তার কোনই কাজে আসবে না।
عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ
الْبَاهِلِىِّ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ ﷺ فَقَالَ أَرَأَيْتَ رَجُلًا
غَزَا يَلْتَمِسُ الأَجْرَ وَالذِّكْرَ مَا لَهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ
«لَا شَىْءَ لَهُ». فَأَعَادَهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ يَقُوْلُ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ
«لَا شَىْءَ لَهُ». ثُمَّ قَالَ «إِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا
مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا وَابْتُغِىَ بِهِ وَجْهُهُ».
আবূ উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এসে বলল, ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে আপনি কী বলেন, যে ব্যক্তি সম্পদ এবং সুনামের জন্য জিহাদ করে, তার জন্য কী রয়েছে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন তার জন্য কিছুই নেই। তিনি তা তিনবার বললেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, তার জন্য কিছুই নেই। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা খালেছ আমল ব্যতীত, যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া আর কিছুই উদ্দেশ্য না হয়, আর কিছুই কবুল করেন না’।[৩]
আমলে ইখলাছ তথা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠতা না থাকলে তা কখনোই আল্লাহর নিকটে কবুলযোগ্য নয়, বরং তা তার জন্য বোঝা স্বরূপ হবে এবং তার জন্য জাহান্নামে যাওয়ার কারণও হতে পারে। যেমনটি হাদীছে কুদসীতে এসেছে, রাসূল (ﷺ) বলেন, মহান আল্লাহ বলেন,
أنا أغْنى الشُّرَكاءِ عَنِ الشِّرْكِ، فَمَن عَمِلَ عَمَلًا أشْرَكَ مَعِيْ فِيْهِ غَيْرِي فَهو لِلَّذِيْ أشْرَكَ بِهِ، وأنا مِنهُ بَرِيءٌ
‘আমি সমস্ত অংশীদারদের চাইতে অংশীদারি তথা শিরক থেকে অধিক অমুখাপেক্ষী। কেউ যদি এমন কাজ করে, যাতে সে আমার সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করে, তাহলে আমি তাকে তার অংশীদারি সহ বর্জন করি (অর্থাৎ তার আমলই নষ্ট করে দিই’।[৪] হাদীছটিতে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে ইবাদত নিবেদন করাকে শিরকের অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে। কেননা, লোক দেখানোর জন্য আমল করা রিয়া(رياء) এবং রিয়া ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত। ইখলাছ ও রিয়ার মাঝে চমৎকার সম্পর্ক তুলে ধরতে গিয়ে ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৯১-৭৫১ হি.) বলেন,
الإخلاص استواء أعمال العبد في الظاهر والباطن. والرِّياء: أن يكون ظاهره خيرًا من باطنه
‘ইখলাছ হচ্ছে বান্দার আমলে অভ্যন্তরীণ ও দৃশ্যমান দিক থেকে সমতা থাকা। আর রিয়া হচ্ছে, তার অভ্যন্তরীণ দিকের চাইতে দৃশ্যমান দিকটি অধিকতর উত্তম হওয়া’।[৫] ফুযাইল ইবনু ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) (১০৭-১৮৭ হি.) বলেন,
ترك العمل من أجل الناس رياء، والعمل من أجل الناس شرك، والإخلاص أن يعافيك الله منهما
‘মানুষের জন্য কোন আমল পরিত্যাগ করা রিয়া। আর মানুষের জন্য কোন আমল করা শিরক। আর ইখলাছ হল, যে আল্লাহ তোমাকে এ দু’টি থেকেই বাঁচিয়ে রাখবেন’।[৬] তাই বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলা ইখলাছ বিহীন আমল কবুল করেন না। তার কোন প্রতিদানও বান্দা লাভ করে না।
عَنْ مَحْمُوْدِ
بْنِ لَبِيْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ «إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ:
الرِّيَاءُ».
মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের ব্যাপারে আমার সর্বাপেক্ষা ভয়ের বস্তু যা আমি ভয় পাচ্ছি তা হচ্ছে ছোট শিরক- রিয়া (অর্থাৎ লোক দেখানো ধর্মকর্ম)’।[৭] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, اذهب فخذ أجرك ممَّن عملتَ له، لا أجر لك عندنا ‘তুমি যাও! এবং তোমার প্রতিদান নেও তার কাছ থেকে যার জন্য তুমি আমল করেছ। কেননা তোমার কোন প্রতিদান আমার কাছে নেই’।[৮] এমনকি দুনিয়ায় যা কিছু আল্লাহর প্রতি ইখলাছ ব্যতিরেকে করা হয় তার প্রতি আল্লাহর লা‘নত উচ্চারিত হয়েছে। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেন, اَلدُّنْيَا مَلْعُوْنَةٌ، مَلْعُوْنٌ مَا فِيْهَا إلَّا مَا ابْتُغِيَ بِهِ وَجْهَ اللهِ ‘পৃথিবী অভিশপ্ত এবং অভিশপ্ত তার মধ্যে যা কিছু আছে সে সকল (পার্থিব বিষয় ও) বস্তুও। তবে সেই বস্তু (বা কর্ম) নয় যার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের আশা করা হয়’।[৯] আন্যত্র তিনি বলেন, مَنْ يُسَمِّعْ يُسَمِّعِ اللهُ بِهِ، وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللهُ بِهِ ‘যে ব্যক্তি লোক শুনানো ‘ইবাদত করে আল্লাহর বিনিময়ে তার ‘লোক-শুনানোর উদ্দেশ্য’ প্রকাশ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ‘ইবাদত করবে আল্লাহর এর বিনিময়ে তার ‘লোক দেখানোর উদ্দেশ্য’ প্রকাশ করে দেবেন’।[১০]
হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) (৭৭৩-৮৫২ হি.) এ হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘ইমাম খাত্তাবী (রাহিমাহুল্লাহ) (৩১৯-৩৮৮ হি.) বলেন, এর অর্থ হল- যে ব্যক্তি ইখলাছ বিহীন আমল করবে এবং এর দ্বারা চাইবে মানুষ তাকে দেখুক এবং তার (প্রশংসা) শুনুক, তাকে এর দ্বারাই প্রতিদান দেয়া হবে। আল্লাহ তাকে প্রসিদ্ধ করে দেবেন, তাকে (মানুষের সামনে) উন্মুক্ত করে দেবেন, সে যা গোপন করার ইচ্ছা করত, তা তিনি প্রকাশ করে দেবেন। আরো বলা হয়, যে ব্যক্তি তার আমলের দ্বারা মানুষের নিকট সম্মান ও খ্যাতি লাভের উদ্দেশ্য করে, এর দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে না, আল্লাহ তাকে সেসব মানুষের নিকট আলোচনার বিষয় বানিয়ে দেবেন, যাদের নিকট সে মর্যাদা পেতে চাইত এবং তার জন্য আখেরাতে কোনই প্রতিদান নেই।[১১]
এমনকি যদি কেউ তার আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি সৃষ্টির সন্তুষ্টি, বিশেষ করে লোক দেখানো বা লোকদের কাছ থেকে সম্মান, মর্যাদা বা খ্যাতি লাভের ইচ্ছা করে, তবে তার সে আমল তার কোন কাজে আসবে না। বরং একটি আমলের ভিতরে আল্লাহর ইখলাছ ও সৃষ্টির সন্তুষ্টি বা তাদের নিকট থেকে মর্যাদার কামনা- এ দু’টি বিষয় একত্রিত হওয়া কখনই সম্ভব নয়। যেমন ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৯১-৭৫১ হি.) বলেন,
لا يجتمع الإخلاص في القلب ومحبة المدح، والثناء، والطمع، فيما عند الناس إلا كما يجتمع الماء والنار
‘বান্দার অন্তরে আল্লাহর ইখলাছ এবং মানুষের প্রশংসা, গুণগানের ভালোবাসা ও কামনা কখনও একত্রিত হতে পারে না। ঠিক যেমন পানি ও আগুন কখনো একত্রিত হয় না’।[১২] ইখলাছের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইখলাছ বিহীন আমল ঐ মুসাফিরের ন্যায়, যে তার ব্যাগ বালি দ্বারা পূর্ণ করে বহন করে, অথচ তা তার কোন উপকারে আসে না’।[১৩]
ইখলাছ বিহীন আমলের পরিনাম
ইখলাছ বিহীন আমলের পরিণতি খুবই ভয়াবহ। ইসলামে যে কোন কাজে বিশুদ্ধ নিয়তের গুরুত্ব অনেক বেশি। নিয়তে বিশুদ্ধতা না থাকলে ভালো কাজেরও কোন মূল্য নেই। এমনকি নিয়তে গরমিল থাকলে ভাল কাজ করেও কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। নিয়তের কারণে অনেক ভালো কাজও নিষ্ফল প্রমাণিত হয়। আবার ভালো কাজ করতে না পারলেও শুধু নিয়ত করার কারণেই মহান আল্লাহ ছাওয়াব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মনে রাখা যরূরী যে, দুনিয়া ও পরকালের সফলতায় নিয়তের বিশুদ্ধতা খুবই যরূরী। নিয়তের কারণেই দুনিয়া ও পরকালে মিলবে জান্নাত ও নে‘মত। আর নিয়তের গরমিলের কারণে ভালো কাজ করেও দুনিয়া ও পরকালে হতে হবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত। যেতে হবে জাহান্নামে। সুতরাং মুমিন-মুসলিমের উচিত, প্রথমেই নিয়ত ঠিক করে নেয়া অতঃপর আমল করা। যদি নিয়ত ঠিক হয়, তবে আমলেরও পরিপূর্ণ প্রতিদান পাওয়া যাবে। আর যদি নিয়ত ঠিক না হয়, তবে ভালো কাজেও ছাওয়াব পাওয়া যাবে না বরং তার জন্য জাহান্নামের আজাব সুনিশ্চিত।
ইখলাছের নিদর্শন/পরিচায়ক (ضوابط الإخلاص)
প্রথমতঃ যেকোন আমলের শুরুতে ইখলাছের সাথে নিয়ত বিশুদ্ধকরণ একজন মুসলিমের অবশ্য করণীয় কাজগুলোর মাঝে অন্যতম। কেননা এটিই ইবাদত কবুল হওয়া বা না হওয়ার জন্য মৌলিক মাপকাঠি। সুতরাং যে ব্যক্তি তার নিয়তকে শুদ্ধ করতে চায়, তাকে অবশ্যই তার সে ইবাদতের কারণ বা উদ্দেশ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে যে, ‘কিসে তাকে এ ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করলো? বিশুদ্ধ নিয়ত ও সুন্নাতে নববী তথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অনুসৃত পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ইহজাগতিক যাবতীয় কাজকর্মও নেক আমলে পরিণত হয়। মানুষ মনে করে, মসজিদে গিয়ে ছালাত পড়া, কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করা, হজ্জ করা এবং রামাযান মাসের ছিয়াম সাধনাই তো ইবাদত। পক্ষান্তরে ক্ষুধা-পিপাসা নিবারণ, প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ, বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথোপকথন থেকে শুরু করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনের সাথে সম্পৃক্ত যাবতীয় স্বভাবজাত কার্যক্রম শুধুই দুনিয়াবি কাজকর্ম। এর সাথে দ্বীন-ধর্ম ও ইবাদতের আবার কী সম্পর্ক? আসলে এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা।
বস্তুত আমরা আমাদের জীবনব্যাপী স্বভাবজাত যত ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে থাকি, তার প্রতিটিই নির্ভেজাল নেক আমলে পরিণত হতে পারে। শুধু প্রয়োজন বিশুদ্ধ নিয়ত এবং রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণ। যার নিয়ত যত বিশুদ্ধ, তার ইবাদত তত সুন্দর। বিশুদ্ধ নিয়তের জন্য চারটি গুণ থাকা প্রয়োজন। যথা:
- নিয়তকারীকে মুসলিম হতে হবে।
- নিয়তকারীকে সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন হতে হবে।
- যে কাজ বা ইবাদতের জন্য নিয়ত করছে, সেই কাজ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকা চাই।
- যে কাজ বা ইবাদত করতে চায়, তা করার সুন্নাত নিয়ম এবং উদ্দেশ্য জানা থাকা চায়।
বিশুদ্ধ নিয়তের জন্য মানুষ ছওয়াবের ভাগীদার হয়ে যায়। শরী‘আহসম্মত কোন কারণে কাজটি করতে না পারলেও সে নিয়তের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয় না। আর কাজটি করতে পারলে কাজের পূর্ণ ছওয়াব অর্জন হয়। যেমন: কোন ব্যক্তি সুস্থ অবস্থায় তাহাজ্জুদ, চাশতের ছালাত সহ আরো অনেক নফল ইবাদতে অভ্যস্ত। কিন্তু অসুস্থ, বার্ধক্য বা অন্য কারণে সে ঐ ইবাদতগুলো আদায় করতে না পারলেও সে ছাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে না।
حَدَّثَنَا
إِبْرَاهِيْمُ أَبُوْ إِسْمَاعِيْلَ السَّكْسَكِىُّ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا بُرْدَةَ
وَاصْطَحَبَ هُوَ وَيَزِيْدُ بْنُ
أَبِىْ كَبْشَةَ فِىْ سَفَرٍ، فَكَانَ يَزِيْدُ يَصُوْمُ فِى السَّفَرِ فَقَالَ
لَهُ أَبُوْ بُرْدَةَ سَمِعْتُ أَبَا مُوْسَى مِرَارًا يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ
اللهِ ﷺ «إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا
كَانَ يَعْمَلُ مُقِيْمًا صَحِيْحًا».
আবূ ইসমাঈল আস-সাকসাকী বলেন, আবূ বুরদাহ-কে বলতে শুনেছি, তিনি এবং ইয়াযিদ ইবনু আবূ কাবশা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সফরে ছিলেন। আর ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মুসাফির অবস্থায় ছিয়াম রাখতেন। আবূ বুরদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁকে বললেন, আমি আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে একাধিকবার বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন বান্দা পীড়িত হয় কিংবা সফরে থাকে, তখন তার জন্য তা-ই লেখা হয়, যা সে আবাসে সুস্থ অবস্থায় আমল করত।[১৪]
স্নেহের ছাত্র ও সম্মানিত উস্তাদদের জন্য দু’টি কথা
ইলম অর্জন ও বিতরণ করা সবচেয়ে বড় ইবাদত, যা নফল ইবাদত অপেক্ষা সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ। তাই একজন ছাত্র ও শিক্ষককে যে সব গুণাবলী অর্জন করা উচিত সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নিয়তকে বিশুদ্ধ করা। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, العلم لا يعدله شيء لمن صحت نيته ‘ইলেমর সাথে কোন বস্তুর তুলনা হয় না (অতুলনীয়) যদি নিয়ত বিশুদ্ধ হয়’।[১৫] হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوْبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ
আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চাল-চলন ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি দৃষ্টি দিয়ে থাকেন তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি’।[১৬]
আর এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, অন্তরের আমলের মূল কেন্দ্রবিন্দু হল সকল কাজ একনিষ্ঠভাবে শুধু আল্লাহর জন্য করা। সকল আমলের মাঝে জ্ঞান অন্বেষণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে জন্য জ্ঞান অন্বেষণে নিয়তকে বিশুদ্ধ করা একজন তালিবুল ইলমের জন্য আবশ্যক। প্রতিটি ছাত্রের উচিত এই গুণটি অর্জন কর।
ইখলাছ হল বান্দা আর তার রবের মধ্যকার গোপন বিষয়। এটা সকল ইবাদতের রূহ বা আত্মা। সকল সৎ আমলের মূল। এর উপর ভিত্তি করেই আমল কবুল করা হয় অথবা প্রত্যাখ্যান করা হয়। জ্ঞান অর্জন করা অন্যতম একটি ইবাদত। এটি শ্রবণ করা, লেখা, গ্রহণ করা এবং মুখস্ত করা এসব কিছুই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং নিয়ত বিশুদ্ধ থাকলে ইবাদত গ্রহণ করা হবে আর বিশুদ্ধ না থাকলে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না। ছহীহ মুসলিমের বর্ণনা রয়েছে
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِيْ غَيْرِيْ تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ
আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, মহান আল্লাহ বলেন, আমি শারীকদের শিরক হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যদি কোন লোক কোন কাজ করে এবং এতে আমি ছাড়া অপর কাউকে শারীক করে, তবে আমি তাকে ও তার শিরকী কাজকে প্রত্যাখ্যান করি’।[১৭] আর এই জন্যই প্রায় সকল ইমাম (إنما الأعمال بالنيات)‘নিয়তই সকল কাজের মূল’ এই হাদীছ দিয়ে তাদের কিতাব লেখা শুরু করেছেন। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তার ছহীহুল বুখারী শুরু করেছেন এই হাদীছটি দিয়েই। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তালিবুল ইলেমকে নিয়ত বিশুদ্ধ করণের বিষয়ে সতর্ক করা এবং সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করার প্রতি উৎসাহিত করা।
ইমাম আব্দুল গনি আল-মাকদিসী, ইমাম বাগাভী, ইমাম নববী (রাহিমাহুমুল্লাহ) সহ প্রায় সকল ইমাম বুখারীর এই মানহাজ অনুসরণ করেছেন। এমনকি আব্দুর রহমান বিন মাহাদী বলেছেন, ্রلو صنفت الأبواب لجعلت حديث عمر في كل بابগ্ধ. ‘আমি যদি কোন কিতাব রচনা করতাম তাহলে অবশ্যই সেই কিতাবের প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতেই এই হাদীছটি নিয়ে আসতাম। তিনি আরো বলেন,وعنه أنه قال: ্রمن أراد أن يصنف كتابًا، فليبدأ بحديث ্রإِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتগ্ধ ‘যে ব্যক্তি কোন কিতাব লিখতে চায় সে যেন নিয়তের হাদীছ দ্বারা লেখা শুরু করে’।
নিয়ত বিশুদ্ধকরণের ব্যাপারে দলীল-প্রমাণ
প্রথমতঃ কুরআন থেকে দলীল
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰہَ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ ۬ۙ حُنَفَآءَ وَ یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ذٰلِکَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ
‘আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে এবং ছালাত কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বীন’ (সূরা আল-বাইয়িনাহ: ৫)। তিনি আরো বলেন,
وَ لَقَدۡ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ وَ اِلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکَ ۚ لَئِنۡ اَشۡرَکۡتَ لَیَحۡبَطَنَّ عَمَلُکَ وَ لَتَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
‘আর আপনার প্রতি ও আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই ওহী হয়েছে যে, যদি আপনি শিরক করেন তবে আপনার সমস্ত আমল তো নিস্ফল হবে এবং অবশ্যই আপনি হবেন ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা আয-যুমার: ৬৫)।
দ্বিতীয়তঃ হাদীছ থেকে প্রমাণ
তিন শ্রেণীর ব্যক্তি দিয়ে জাহান্নাম উদ্বোধন করা হবে। তন্মধ্যে রয়েছে এমন এক ব্যক্তি, যে জ্ঞান অর্জন করেছে ও শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন অধ্যায়ন করেছে। তখন তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তার প্রদত্ত নে‘মতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এত (বড় নে‘মত পেয়ে বিনিময়ে) তুমি কী করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনারই (সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে কুরআন অধ্যায়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এজন্য যাতে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলে। কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এ জন্য যাতে লোকে বলে সে একজন ক্বারী। তা বলা হয়েছে। তারপর আদেশ দেয়া হবে এবং তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।[১৮] অন্য আরেকটি হাদীছে এসেছে:
عَنْ
أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ
« مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ لَا
يَتَعَلَّمُهُ إِلّا لِيُصِيْبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ
الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ». يَعْنِى رِيْحَهَا.
আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ইলমের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা যায়, কোন লোক যদি দুনিয়াবী স্বার্থ লাভের জন্য তা শিক্ষা করে, তবে সে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধি পাবে না’।[১৯]
জ্ঞান অর্জনে নিয়ত বিশুদ্ধ করণের উপকারিতা
- জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হয়।
- মহান আল্লাহ জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘কাজেই জেনে রাখুন যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই। আর ক্ষমা প্রার্থনা করুন আপনার ও মুমিন নর-নারীদের ত্রুটির জন্য। আল্লাহ্ তোমাদের গতিবিধি এবং অবস্থান সম্পর্কে অবগত রয়েছেন’।
- নিজের এবং অন্যের থেকে মূর্খতা দূর করা যায়। ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘নিয়ত বিশুদ্ধ করে জ্ঞান অর্জন করলে এর সমতুল্য আর কোন আমল নেই’।
- জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শরী‘আত সংরক্ষণ হয় এবং এর থেকে সন্দেহ-সংশয় দূর করা যায়। কেননা আলেমরা না থাকলে শরী‘আত সংরক্ষিত থাকতো না এবং কেউ এর বিরোধী বিষয়গুলোকে প্রতিহত করতে পারত না। সুতরাং জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শরী‘আত সংরক্ষণ করা সম্ভব।
- নবী (ﷺ)-এর শরী‘আত অনুসরণ করা। কেননা জ্ঞান অর্জন করা ছাড়া তার শরী‘আত অনুসরণ করা সম্ভব নয়। আর আমল করার পূর্বে জ্ঞান অর্জন করা যরূরী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি জেনে রাখো যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার অর্থে কোন ইলাহ নেই’। এখানে মহান আল্লাহ আমল করার পূর্বে জ্ঞান অর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
- জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে আল্লাহর শরী‘আত প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহ কিতাব নাযিল করেছেন মানুষের মাঝে বিধান দেয়ার জন্য। আর তিনি তার নবীকেও এরূপ নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তো আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি যাতে আপনি আল্লাহ আপনাকে যা জানিয়েছেন সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করতে পারেন। আর আপনি বিশ্বাসভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক করবেন না’।
এছাড়াও চিন্তা পেরেশানি ও বিপদ-আপদ দূর করা ও আল্লাহর সাহায্য লাভ সহ ইখলাছের বহুবিধ ফায়দা ও উপকারিতা রয়েছে। যেমনটি দেখা যায় গুহায় আটকা পড়া তিন ব্যক্তি ও আসাবে কাহফ এর ঘটনা থেকে। নবী (ﷺ) বলেন, إِنَّمَا يَنْصُرُ اللَّهُ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِضَعِيفِهَا بِدَعْوَتِهِمْ وَصَلَاتِهِمْ وَإِخْلَاصِهِمْ ‘আল্লাহ্ তা‘আলা এ উম্মতকে সাহায্য করবেন তার দুর্বলদের দ্বারা, তাদের দু‘আ, ছালাত এবং ইখলাছের দরুন’।[২০]
সুতরাং মুসলিম হিসাবে আমাদের সকলের উচিত ইখলাছকে আমাদের মূল সম্বল ও হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার ছালাত, আমার উপাসনা (কুরবানী), আমার জীবন ও আমার মরণ, বিশ্ব-জগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য’ (সূরা আল-আন‘আম: ১৬২)।
* শিক্ষক, দারুল হুদা ইসলামী কমপ্লেক্স, বাঘা, রাজশাহী।
তথ্যসূত্র :
[১]. মাক্বাছিদুল মুকাল্লাফীন ফীমা ইয়ুতা‘আব্বাদু বিহী লি রব্বিল আলামীন, পৃ. ৩৫৮।
[২]. ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩৯।
[৩]. নাসাঈ, হা/৩১৪০, সনদ হাসান।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৮৫।
[৫]. মাদারিজুস সালিকীন ফী মানাযিলিস সায়িরীন, দারু ইত্বআতিল ইলম- রিয়ায, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪৯।
[৬]. প্রাগুক্ত।
[৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩১১৯, ২৭৭৪২, সনদ হাসান।
[৮]. আল-মাত্বলিবুল ‘আলিয়া বি যাওয়ায়েদিল মাসানিদিছ ছামানিয়া, হা/৩২১৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৮৩৮; ইবনু হিব্বান, হা/৪০৪।
[৯]. আল-জামিউছ ছগীর, হা/৪২৬৭; ছহীহুত তারগীব, হা/০৯।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৯৯ ; ছহীহ মুসলিম হা/২৯৮৭।
[১১]. ফাৎহুল বারী বিশারহি ছহীহিল বুখারী, ১১শ খণ্ড, পৃ. ৩৩৬।
[১২]. আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ. ১৪৯।
[১৩]. আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ. ৪৯।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯৯৬।
[১৫]. ফাতওয়া হারাম আন-নববী, পৃ. ৬৬।
[১৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪।
[১৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৮৫।
[১৮]. তিরমিযী, হা/২৩৮২; সনদ ছহীহ।
[১৯]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৬৪, সনদ ছহীহ।
[২০]. নাসাঈ, হা/৩১৮১।