বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ অপরাহ্ন

ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও তার সমাধান

-ড. মুযাফফর বিন মুহসিন


(৫ম কিস্তি)

(৫) যঈফ ও জাল হাদীছের উপর আমল করা :

দ্বীন ইসলামের ক্ষতি সাধন, মুসলিম ঐক্য বিনষ্টকরণ এবং তাদেরকে সঠিক কর্মসূচী থেকে বিভ্রান্তকরণে যে কয়টি বিষয় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে, তার মধ্যে জাল ও যঈফ হাদীছ অন্যতম। মুসলিম জাতির প্রায় সকল বিষয়ে মতপার্থক্য থাকার নেপথ্যে রয়েছে এর প্রধান ভূমিকা। অথচ হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে কেউ যেন মিথ্যা, প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির আশ্রয় না নেয়, সেজন্য রাসূল (ﷺ) চূড়ান্ত হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে গেছেন। এরপরও ইহুদী-খ্রীষ্টান চক্র এবং পথভ্রষ্ট কতিপয় মুসলিম গোষ্ঠী ইসলামের নামে অসংখ্য জাল ও যঈফ হাদীছ রচনায় প্রবৃত্ত হয়েছে।

উক্ত চক্রের বিরুদ্ধে মুহাদ্দিছগণ আপোসহীন সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন এবং তাদের মুখোশ উন্মোচন করেন। তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে লক্ষ লক্ষ জাল ও যঈফ হাদীছকে ছহীহ হাদীছ থেকে পৃথক করে স্বতন্ত্র গ্রন্থে একত্রিত করেন। কিন্তু মুসলিম সমাজের যারা কর্ণধার, তাদের অধিকাংশই এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা নির্দ্বিধায় জাল ও যঈফ  হাদীছ  প্রচার করেন, বই-পুস্তকে, প্রবন্ধ-নিবন্ধে লিখেন, পেপার-পত্রিকা ও মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। এভাবেই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জাল ও যঈফ হাদীছ চালু আছে। সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হিসাবে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কথার যে স্বতন্ত্র গুরুত্ব ও মর্যাদা আছে, সেদিকে তাদের কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। তাঁর চূড়ান্ত হুঁশিয়ারী হাদীছের পাতাতেই  থেকে  গেছে। নি¤েœ এ ব্যাপারে আলোকপাত করা হল,

জাল ও যঈফ হাদীছের পরিচিতি :

যঈফ হাদীছের সংজ্ঞায় ইবনুছ ছালাহ (মৃ. ৬৪২ হি.) বলেন,

كُلُّ حَدِيْثٍ لَمْ يَجْتَمِعْ فِيْهِ صِفَاتُ الْحَدِيْثِ الصَّحِيْحِ وَلاَ صِفَاتُ الْحَدِيْثِ الْحَسَنِ ... فَهُوَ حَدِيْثٌ ضَعِيْفٌ

‘যে হাদীছে ছহীহ ও হাসান হাদীছের বৈশিষ্ট্য সম্পৃক্ত হয়নি তাকেই যঈফ হাদীছ বলে’।[১] ইমাম নববী জাল হাদীছের সংজ্ঞায় বলেন,  هُوَ الْمُخْتَلَقُ الْمَصْنُوْعُ وَشَرُّ الضَّعِيْفَ ‘রচিত, বানোয়াট ও নিকৃষ্ট দুর্বল বর্ণনাকে মওযূ বা জাল বলে’।[২] ডঃ মাহমূদ আত-ত্বহ্হান বলেন,

 هُوَ الْكِذْبُ الْمُخْتَلَقُ الْمَصْنُوْعُ الْمَنْسُوْبُ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ

‘রাসূল (ﷺ)-এর দিকে সম্পর্কিত বানোয়াট মিথ্যা হাদীছকে মওযূ বা জাল হাদীছ বলে’।[৩]

রাসূল (ﷺ)-এর হুঁশিয়ারী :

শরী‘আতে হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য কঠোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এই নির্দেশ সাময়িক বা স্থানিক নয়; বরং সর্বব্যাপী সকল যুগের জন্য। রাসূল  (ﷺ) যে কথা বলেননি সে কথা তাঁর নাম দিয়ে বর্ণনা করা জঘন্য অপরাধ। যদিও তা একটি কথাও হয়। এর পরিণাম সরাসরি জাহান্নাম। যেমন হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بَلِّغُوْا عَنِّىْ وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوْا عَنْ بَنِىْ إِسْرَائِيْلَ وَلاَحَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.

‘আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘একটি আয়াত (কথা) হলেও তোমরা আমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও। আর বাণী ইসরাঈলদের সম্পর্কেও বর্ণনা কর, তাতে সমস্যা নেই। তবে কেউ যদি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করে তাহ’লে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়’। [৪] অন্য হাদীছে বলেন, مَنْ يَّقُلْ عَلَىَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‘কেউ যদি আমার সম্পর্কে এমন কথা বলে, যা আমি বলিনি তাহ’লে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে তৈরি করে নেয়’।[৫]

উক্ত হাদীছদ্বয় থেকে প্রমাণিত হয় যে, মিথ্যা বা জাল হাদীছ বর্ণনা করা এবং প্রচার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাঁর নামে হাদীছ বর্ণনা করার পূর্বে সেটা তাঁর  কথা কি-না তা নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক। হাদীছ প্রচার করতে গিয়ে যদি কারো সন্দেহ হয়, তাহলে তা প্রচার করা যাবে না। এ ব্যাপারে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত বর্ণিত হয়েছে যে,

عَنِ الْمُغِيْرَةِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ إِنَّ كَذِبًا عَلَىَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ فَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.

‘মুগীরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘নিশ্চয় আমার প্রতি মিথ্যারোপ করা আর অন্য কারো প্রতি মিথ্যারোপ করা এক সমান নয়। সুতরাং আমার প্রতি যে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করবে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়’।[৬] অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন, [৭]  لاَتَكْذِبُوْا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ يَكْذِبْ عَلَىَّ يَلِج النَّارَ ‘তোমরা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করো না। কেননা যে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, [৮] إِنَّ الَّذِىْ يَكْذِبُ عَلَىَّ يُبْنَى لَهُ بَيْتٌ فِى الْنَّارِ ‘ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে তার জন্য জাহান্নামে ঘর তৈরি করা হবে’। তিনি বলেন, [৯] مَنْ رَوَى عَنِّىْ حَدِيْثًا وَهُوَ يُرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الْكَاذبِيْنَ ‘কেউ যদি আমার পক্ষ থেকে এমন কোন একটি হাদীছ বর্ণনা করে, যার সম্পর্কে সে সন্দেহ করে যে তা মিথ্যা, তাহ’লে সে মিথ্যুকদের একজন’। মুহাদ্দিছ আবী হাতিম ইবনু হিব্বান (মৃ. ২৫৪ হি.) উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন,

فَكُلُّ شَاكٍّ فِيْمَا يَرْوِىْ أَنَّهُ صَحِيْحٌ أَوْ غَيْرُ صَحِيْحٍ دَاخِلٌ فِىْ ظَاهِرِ خِطَابِ هَذَا الْخَبْرِ وَلَوْ لَمْ يَتَعَلَّمِ التَّارِيْخَ وأَسْمَاءَ الثِّقَاتِ والضُّعَفَاءِ.

‘হাদীছটি ছহীহ না গায়র ছহীহ এরূপ প্রত্যেক সন্দেহকারী ব্যক্তি উক্ত হাদীছের প্রকাশ্য অর্থের অন্তর্ভুক্ত হবেন। যদিও তিনি ইলমে তারীখ এবং দুর্বল ও নির্ভরযোগ্য রাবীদের নামগুলো না জানেন’।[১০]

উক্ত হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, হাদীছ শ্রবণকারীকেও যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একজন সাধারণ ব্যক্তির উপর মিথ্যারোপ করা আর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর  উপর  মিথ্যারোপ করা কখনোই এক নয়। কারণ তাঁর উপর মিথ্যারোপ করার অর্থই হল, আল্লাহ্র প্রতি ও তাঁর প্রেরিত সংবিধান অভ্রান্ত অহির প্রতি মিথ্যারোপ করা। জাহান্নামের ভীতির কারণে হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে ছাহাবীগণ অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁরা এমন মূলনীতি অবলম্বন করেছিলেন, যা সকলের জন্য পালন করা ছিল দুঃসাধ্য। ফলে হাদীছ জানা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বর্ণনা করতে ভয় পেতেন। কোন ছাহাবী অপরিচিত হাদীছ শুনলে তাৎক্ষণিক সেই হাদীছের পক্ষে সাক্ষী উপস্থিত করার জন্য বলতেন।[১১]

মোটকথা সমস্ত ছাহাবীই নবী করীম (ﷺ)-এর হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে ভীত-সন্ত্রস্ত থেকেছেন এবং আপোসহীন নীতি মেনে চলেছেন। তাদের ধারাবাহিকতায় তাবেঈগণও সেই পথ অবলম্বন করেছেন। প্রফেসর ড. হাসান মুহাম্মাদ মাক্ববূলী বলেন, وَقَدِ اتَّبَعَ هَذَا الْمَنَهَجَ سَائِرُ الصَّحَابَةِ .. ثُمَّ التَّابِعِيْنَ مِنْ بَعْدِهِمْ ‘সকল ছাহাবী এই মূলনীতির অনুসরণ করেছেন।.. অতঃপর তাঁদের পরবর্তী তাবেঈগণ উক্ত মূলনীতি অনুসরণ করেছেন।[১২] তাই হাদীছ গ্রহণ ও বর্জনের শর্ত এবং উছূল বা মূলনীতিসমূহ সাধারণ কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রণীত নয়; বরং শারঈ কঠোরতার আলোকে উম্মতের সেরা ব্যক্তিত্ব ইসলামের চার খলীফার মধ্যে আবুবকর, ওমর, ওছমান, আলী (রাঃ) সহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় ছাহাবীদের পক্ষ থেকেই মূলনীতিগুলো এসেছে। অতঃপর মুহাদ্দিছগণ তা রূপায়ন করেছেন মাত্র।

ড. শায়খ মুছত্বফা আস-সুবাই বলেন, شُرُوْطُ الْأَئِمَّةِ لِلْعَمَلِ بِالْحَدِيْثِ أَنَّ هَذَا كَانَ شَرْطُ أَبِىْ بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعَلَىٍّ لِلْعَمَلِ بِالْحَدِيْثِ ‘হাদীছের উপর আমলের জন্য মুহাদ্দিছ ইমামগণ যে সমস্ত শর্তারোপ করেছেন, সেগুলো মূলত আবু বকর, ওমর ও আলী (রাঃ)-এরই শর্ত, যা তাঁরা হাদীছের আমলের ক্ষেত্রে করেছিলেন’।[১৩] অতঃপর তিনি বলেন,

وَعَلَى هَذِهِ الْعِنَايَةِ سَارَ التَّابِعُوْنَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ فِىْ التَّثَبُّتِ فِىْ الرِّوَايَةِ وَالتَّدْقِيْقِ وَالنَّقْدِ وَالتَّمْحِيْضِ وَالتَّحَرَّى فَقَدِ اسْتَطَاعُوْا بِهَذِهِ الْعِنَايَةِ أَنْ يَعْرِفُوْا حَالِ الرَّاوِىْ وَالْمَرْوِىَّ مِنْ حَيْثُ الْقَبُوْلِ وَالرَّدِّ وَمَيَّزُوْا مِنَ الصَّحِيْحِ وَالْحَسَنِ وَالضَّعِيْفِ مِنَ الْمَرْوِيَّاتِ.

‘আর এই উপযুক্ত প্রচেষ্টার উপরেই তাবেঈ ও তাদের পরবর্তীগণ বর্ণনাকে সুদৃঢ়করণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষাকরণ, সমালোচনা, পরিশোধন ও অনুসন্ধানের প্রয়াস চালু রেখেছেন। এর ফলেই বর্ণনাকারী ও বর্ণিত ব্যক্তির গ্রহণ ও বর্জনযোগ্য অবস্থা জানতে সক্ষম হয়েছেন এবং বর্ণনাগুলোর ছহীহ, হাসান ও যঈফের মধ্যে পার্থক্য করতে পেরেছেন’।[১৪]

জাল ও যঈফ হাদীছের সূচনাকাল :

রাসূল (ﷺ)-এর চিরন্তন হুঁশিয়ারী এবং ছাহাবায়ে কেরামের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিñিদ্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও জাল হাদীছের সূচনা হয়েছে। ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতের শেষ দিকে এবং আলী (রাঃ)-এর সময়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দর্শনের মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে ১ম শতাব্দী হিজরীর শেষার্ধে জাল হাদীছের সূচনা হয়। ধর্মীয় লেবাসে খারেজী, শী‘আ, ক্বাদারিয়া, মুরজিয়া প্রভৃতি পথভ্রষ্ট ফের্কা উক্ত অপকর্মের পিছনে ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে শী‘আ ও ইহুদী-খ্রীষ্টানদের দোসর যিন্দীক্বরা ছিল এক্ষেত্রে অগ্রগামী। এক শ্রেণীর কথিত আলেম, দরবেশ, সাধু, ব্যবসায়ী, কবি-সাহিত্যিকরাও এই সুযোগ হাত ছাড়া করেনি। জাতি, ধর্ম, দল, গোষ্ঠী, মাযহাব, ইমাম ও শাসকপ্রীতি, যুদ্ধে উদ্যম সৃষ্টি, আঞ্চলিক সুনাম ও ব্যক্তি ভিক্তিক গুণকীর্তনের জন্যও হাদীছ জাল করা হয়। ইহুদী প্রতারক আব্দুল্লাহ বিন সাবার চক্র জাল হাদীছ রচনার প্রতি বিশেষ প্রেরণা সৃষ্টি করে। এভাবেই মুসলিম উম্মাহর মাঝে মতানৈক্যের বীজ বপন করা হয় ও তাকে স্থায়ী করার স্বার্থেই ছহীহ হাদীছের বিরোধী অসংখ্য জাল হাদীছ রচনা করা হয়।[১৫]

শারঈ মানদ-ে জাল ও যা‘ঈফ হাদীছ :

মুসলিম উম্মাহর জন্য একমাত্র অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় বিষয় হল আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আসা অহী বা হক্ব। এই অহীর বিধান যাবতীয় দুর্বলতা ও ত্রুটি থেকে মুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, وَاتَّبِعْ مَا يُوْحىَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ ‘আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, কেবল তারই অনুসরণ করুন’ (সূরা আল-আহযাব : ২; সূরা আল-আন‘আম : ৫০ ও ১০৬)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সম্বোধন করে বলেন, اِتَّبِعُوْا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَّبَّكُمْ وَلاَتَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِهِ أَوْلِيَاءَ ‘তোমরা তারই অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। এছাড়া তোমরা অন্যান্য আওলিয়াদের অনুসরণ কর না’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৩; সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭০; সূরা লুকমান : ২১)।

উক্ত নির্দেশের সাথে সাথে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) যেন অহী ছাড়া অন্য কোন কিছুর অনুসরণ না করেন। আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তাঁকে লক্ষ্য করে বলেন, وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُمْ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءكَ مِنَ الْعِلْمِ إِنَّكَ إِذًا لَمِنَ الظَّالِمِيْنَ ‘আপনার নিকট অহী আসার পরও যদি আপনি তাদের (বিধর্মীদের) প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন, তাহলে আপনি অবশ্যই যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৪৫)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আপনার জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১২০)।

উক্ত অহী কেবল আল্লাহ্র পক্ষ থেকেই আসে। অন্য কারো পক্ষ থেকে আসে না (সূরা আল-কাহফ : ২৯)। অহী দুই ধরনের। (১) অহী মাতলূ, যা পাঠ করা হয়। এর ভাষা ও ভাব উভয়টিই আল্লাহ্র। অর্থাৎ আল-কুরআন। (২) অহী গায়র মাতলূ, যা পাঠ করা হয় না। এর ভাষা রাসূল (ﷺ)-এর, আর ভাব স্বয়ং আল্লাহ্র। অর্থাৎ ছহীহ হাদীছ। অতএব পবিত্র কুরআন যেমন অহী, তেমনি হাদীছও অহী। উভয়টি রাসূলের মাধ্যমে মানুষের কাছে এসেছে। আর তিনি শারঈ বিষয়ে কোন কথা বলতেন না, যতক্ষণ তাঁর প্রতি আল্লাহ্র অহী না আসত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَايَنْطِقُ عَنِ الْهَوَىَ إِنْ هُوَ إِلاَّ وَحْىٌ يُوْحىَ ‘তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কোন কথা বলেন না। যতক্ষণ না তার প্রতি অহী করা হয়’ (সূরা আন-নাজম : ৩-৪)।

উক্ত অহীর বিধানকে যথাযথরূপে সংরক্ষণ করার দায়িত্বও স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামীন নিয়েছেন। তাঁর দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা লক্ষ্য করুন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُوْنَ ‘নিশ্চয় আমি স্বয়ং এই যিকির অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষণ করব’ (সূরা আল-হিজর : ৯)। উক্ত ‘যিকির’ বলতে কুরআন-সুন্নাহ উভয়কেই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যিকিরকে সংরক্ষণ করার জন্য চিরন্তন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। কোন ব্যক্তি, মহল, দল ও গোষ্ঠী যদি তাতে জাল, যা‘ঈফ ও মানব রচিত কোন কিছু প্রবেশ করাতে চায়, তাহলে সেটা হবে বাতিল, প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ সেগুলোকে উৎখাত করবেন নিজ দায়িত্বেই। তাই অহীর বিধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কোন মহলই সফল হতে পারবে না। আল্লাহ বলেন, لَا يَأْتِيْهِ الْبَاطِلُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِِيْلٌ مِّنْ حَكِيْمٍ حَمِيْدٍ ‘অহীর সামনের দিক থেকেও মিথ্যা আসতে পারে না, পিছন দিকে থেকেও আসতে পারে না। এটা মহা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নাযিলকৃত’ (সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৪২)।

অতএব আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আসা পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ যে অতি স্বচ্ছ, অনিন্দ্য সুন্দর, অভ্রান্ত, অকাট্য ও নির্ভুলভাবে সংরক্ষিত। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সে জন্য জাল ও যা‘ঈফ হাদীছ কখনো অহীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।

জাল ও যঈফ হাদীছ কি আমলযোগ্য?

জাল ও যা‘ঈফ হাদীছের বিরুদ্ধে ছাহাবী, তাবেঈ এবং মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরাম যুগের পর যুগ যে কঠোর নীতি অবলম্বন করেছেন, তাতে জাল ও যা‘ঈফ হাদীছ ভিত্তিক আমল মুসলিম সমাজে থাকার কথা নয়। কিন্তু মুসলিম সমাজে এখনও ব্যাপকভাবে তা চালু আছে। অথচ শরী‘আত ভিত্তিক তীক্ষè মূলনীতির আলোকে জাল ও যা‘ঈফ হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়।

জাল হাদীছ বর্জনের ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিছ একমত। এর প্রচার-প্রসার এবং তার প্রতি আমল করা সবই মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যে হারাম। ড. ওমর ইবনু হাসান ওছমান ফালাতাহ বলেন, وَهُوَ إِجْمَاعٌ ضِمْنِىٌّ آخَرُ عَلَى تَحْرِيْمِ الْعَمَلِ بِالْمَوْضُوْعِ ‘জাল হাদীছের উপর আমল করা ইজমার আওতাধীন বিষয় সমূহের মধ্যে একটি বিশেষ হারাম’।[১৬] আহকাম, আক্বীদা, ফযীলত, ওয়ায-নছীহত কিংবা উৎসাহ ও সতর্কতা যে জন্যই জাল হাদীছ বর্ণনা করা হোক, তা মুসলিম উম্মাহর ইজমা দ্বারা হারাম, কাবীরা গোনাহ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোনাহ এবং সর্বনিকৃষ্ট অপরাধ। ইমাম নববী (৬৩১-৬৭৬ হি.) বলেন,

أَنَّهُ لَا فَرْقَ فِىْ تَحْرِيْمِ الْكِذْبِ عَلَيْهِ ﷺ بَيْنَ مَا كَانَ مِنَ الْأَحْكَامِ وَمَا لَاحُكْمَ فِيْهِ كَالتَّرْغِيْبِ وَالتَّرْهِيْبِ وَالْمَوَاعِظِ وَغَيْرِذَلِكَ فَكُلُّهُ حَرَامٌ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ وَأَقْبَحِ الْقَبَائِحِ بِإِجْمَاعِ الْمُسْلِمِيْنَ.  

‘শারী‘আতের আহকাম ছাড়াও উৎসাহ, ভীতি, বক্তব্যসহ যেকোন বিষয়েই রাসূলের উপর মিথ্যারোপ করা হোক তা হারাম। এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যে সবই হারাম, বৃহৎ কাবীরা গোনাহ সমূহ ও জঘন্য কার্যাদির অন্তর্ভুক্ত’।[১৭] অতপর তিনি বলেন,

تُحْرَمُ رِوَايَةُ الْحَدِيْثِ الْمَوْضُوْعِ عَلَى مَنْ عَرَفَ كَوْنَهُ مَوْضُوْعًا أَوْ غَلَبَ عَلَى ظَنِّهِ وَضْعَهِ فَمَنْ رَوَى حَدِيْثًا عَلِمَ أَوْ ظَنَّ وَضْعَهَ وَلَمْ يَتَبَيَّنْ قَالَ رِوَايَةُ وَضْعِهِ فَهُوَ دَاخِلٌ فِى هَذَا الْوَعِيْدِ مُنْدَرِجٌ فِىْ جُمْلَةِ الْكَاذِبِيْنَ عَلَى رَسُوْلِ اللِهِ ৎ.  

‘ঐ ব্যক্তির উপর জাল হাদীছ বর্ণনা করা হারাম যে ব্যক্তি জানে যে তা জাল অথবা সে জাল বলে ধারণা করে। যে ব্যক্তি জাল হাদীছ বলে কিন্তু তা জাল বলে প্রকাশ করে না, সে রাসূলের উপর মিথ্যারোপকারীদের যে শাস্তি তার মধ্যে অন্তর্র্ভুক্ত হবে’।[১৮] ইমাম আবুবকর খত্বীব বলেন,

يَجِبُ عَلَى الْمُحَدِّثِ أَلاَّ يَرْوِىَ شَيْئًا مِنَ الْأَخْبَارِ الْمَوْضُوْعَةِ وَالْأَحَادِيْثِ الْبَاطِلَةِ الْمَوْضُوْعَةِ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ بَاءَ بِالْاِثْمِ الْمُبِيْنِ وَدَخَلَ فِيْ جُمْلَةِ الْكَذَّابِيْنَ كَمَا أَخْبَرَ الرَسُوْلُ ﷺ.

‘মুহাদ্দিছ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল, জাল ও বাতিল হাদীছসমূহ বর্ণনা না করা। এরপরও যে ব্যক্তি তা করবে, সে প্রকাশ্য গোনাহ করবে এবং মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত হবে- যে বিষয়ে রাসূল (ﷺ) সতর্ক করেছেন’।[১৯] যায়েদ বিন আসলাম বলেন,  مَنْ عَمِلَ بِخَبَرٍ صَحَّ أَنَّهُ كِذْبٌ فَهُوَ مِنْ خَدَمِ الشَّيْطَانِ ‘হাদীছ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও যে আমল করে সে শয়তানের খাদেম’।[২০]

কারণ হল জাল হাদীছ প্রচার করা ও আমল করা মানেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর উপর সরাসরি মিথ্যারোপ করা। কিন্তু এত কঠোর সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও সমাজে লক্ষ লক্ষ জাল হাদীছ চালু আছে।

যঈফ হাদীছের হুকুম :

শর্ত-সাপেক্ষে যঈফ হাদীছের প্রতি আমল করা যাবে মর্মে পূর্ববর্তী কতিপয় বিদ্বান শিথিলতা দেখিয়েছেন। কিন্তু ছাহাবী, তাবেঈ ও মুহাদ্দিছগণ যে সমস্ত মূলনীতি এবং শর্তরোপ করেছেন, তাতে কোন ক্ষেত্রেই যা‘ঈফ হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয় বলেই প্রমাণিত হয়। কারণ হাদীছ যা‘ঈফ প্রমাণিত হওয়া মানেই তার ত্রুটি ও সন্দেহ প্রকাশ পাওয়া। আর ত্রুটিপূর্ণ ও সন্দেহযুক্ত বিষয় বর্জন করতে হবে এটা শরী‘আত কর্তৃক স্বতঃসিদ্ধ।[২১] আমরা নি¤েœ মুহাদ্দিছগণের মতামত উল্লেখ করব।

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল আল-বুখারী (রহঃ)-এর মূলনীতি :

ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হিঃ) যঈফ হাদীছকে যে সম্পূর্ণরূপেই প্রত্যাখ্যান করেছেন, তা ছহীহ বুখারীর সংকলন, রাবীদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন এবং কোন প্রকার যা‘ঈফ হাদীছকে প্রশ্রয় না দেওয়ার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়। সর্বক্ষেত্রে যা‘ঈফ হাদীছ বর্জনের পক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে শায়খ আল্লামা জামালুদ্দীন ক্বাসেমী (রহঃ) ইমাম বুখারী ও মুসলিম সম্পর্কে বলেন,

وَالظَّاهِرُ أَنَّ مَذْهَبَ الْبُخَارِىِّ وَمُسْلِمٍ ذَلِكَ أَيْضًا يَدُلُّ عَلَيْهِ شَرْطُ الْبُخَارِىِّ فِىْ صَحِيْحِهِ وَتَشْنِيْعِ الْإِمَامِ مُسْلِمٍ عَلَى رُواةِ الضَّعِيْفِ كَمَا أَسْلَفْنَاهُ وَعَدَمُ إِخَرَاجِهمَا فِىْ صَحِيْحِهِمَا شَيْئًا مِنْهُ.

‘স্পষ্ট যে, ইমাম বুখারী ও মুসলিমের রীতিও তাই। ইমাম বুখারী ছহীহ বুখারীতে যে শর্ত অবলম্বন করেছেন এবং ইমাম মুসলিম যা‘ঈফ রাবীদের উপর যে বড় দোষ আরোপ করেছেন যা আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি- তাতে সেটাই প্রমাণিত হয়। তাছাড়া তাদের ছহীহ গ্রন্থদ্বয়ে কোন প্রকার যা‘ঈফ হাদীছ বর্ণনা না করাও তার প্রমাণ’।[২২] ডঃ আব্দুল করীম বিন আব্দুল্লাহ আল-খাযীর বলেন,

اَلظَّاهِرُ مِنْ صَنِيْعِ الْبُخَارِىِّ فِىْ صَحِيْحِهِ وَشِدَّةِ شَرْطِهِ فِىْ الرُّوَاةِ وَعَدَمِ إِخْرَاجِهِ شَيْئًا مِنَ الْأَحَادِيْثِ الضَّعِيْفَةِ أَنَّ مَذْهَبَهُ عَدَمُ الْعَمَلِ بِالْحَدِيْثِ الضَّعِيْفِ.

‘ইমাম বুখারীর ছহীহ বুখারীতে হাদীছ সংকলন, রাবীদের ব্যাপারে কঠোর মুলনীতি আরোপ এবং যঈফ হাদীছ সমূহের মধ্য হতে কোন প্রকার যঈফ হাদীছ বর্ণনা না করাতেই স্পষ্ট হয় যে, তাঁর নীতি ছিল যঈফ হাদীছের প্রতি আমল না করা’।[২৩]  

ইমাম মুসলিম (রহঃ)-এর বক্তব্য :

যঈফ হাদীছ বর্জনের ব্যাপারে ইমাম মুসলিম (২০৪-২৬১ হি.)-এর বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন। তিনি তাঁর ‘ছহীহ মুসলিমের’ ভূমিকাতেই এ ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। তিনি তাঁর বক্তব্যের পক্ষে হাদীছ উল্লেখ করেছেন এবং ছাহাবী, তাবেঈ ও মুহাদ্দিছগণের মতামত পেশ করেছেন। তিনি বলেন,

وَاعْلَمْ وَفَّقَكَ اللهُ تَعَالَى أَنَّ الْوَاجِبَ عَلَى كُلِّ أَحَدٍ عَرَفَ التَّمْيِيْزَ بَيْنَ صَحِيْحِ الرِّوَايَاتِ وَسَقِيْمِهَا وَثِقَاتِ النَّاقِلِيْنَ لَهَا مِنَ الْمُتَّهِمِيْنَ أَنَّ لاَيَرْوِىَ مِنْهَا إِلاَّمَا عَرَفَ صِحَّةَ مَخَارِجِهِ وَالسِّتَارَةِ فِىْ نَاقِلِيْهِ وَأَنْ يَّتَّقِىَ مِنْهَا مَا كَانَ مِنْهَا عَنْ أَهْلِ التُّهَمِ وَالْمُعَانِدِيْنَ مِنْ أَهْلِ الْبِدْعِ.

‘তুমি (ছাত্র) জেনে রাখ, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে তাওফীক্ব দান করুন! যারা ছহীহ ও ত্রুটিপূর্ণ বর্ণনা সমূহ এবং ন্যায়পূর্ণ ও অভিযুক্তদের সম্পর্কে বুঝে, তাদের প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব হল, তারা যেন সেই বর্ণনাগুলো থেকে শুধু তাই বর্ণনা করে, যার উৎসের সত্যতা ও তার বর্ণনাকারীদের শ্লীলতা সম্পর্কে জানবে। সেই সাথে ঐগুলো থেকে সাবধান থাকবে, যেগুলো ত্রুটিযুক্ত ও অস্বীকারকারী গোঁড়া বিদ‘আতীদের থেকে এসেছে’।[২৪] উক্ত দ্ব্যর্থহীন বক্তব্যের পক্ষে দলীল হিসাবে তিনি নিম্নের আয়াত পেশ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوْا أَنْ تُصِيْبُوْا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوْا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِيْنَ.

‘হে মুমিনগণ! কোন ফাসিক ব্যক্তি যদি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তাহলে তোমরা তা যাচাই করে দেখবে। যাতে তোমরা মূর্খতাবশত কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও’ (সূরা আল-হুজুরাত : ৬)। অতঃপর ইমাম মুসলিম বলেন,

إِذْ كَانَ خَبَرُ الْفَاسِقِ غَيْرَ مَقْبُوْلٍ عِنْدَ أَهْلِ الْعَلْمِ كَمَا أَنَّ شَهَادَتَهُ مَرْدُوْدَةٌ عِنْدَ جَمِيْعِهِمْ وَدَلَّتِ السُّنَّةُ عَلَى نَفْىِ رِوَايَةِ الْمُنْكَرِ مِنَ الَأَخْبَارِ كَنَحْوِ دَلاَلَةِ الْقُرْآنِ عَلَى نَفْىِ خَبَرِ الْفَاسِقِ وَهُوَ الْأَثَرُ الْمَشْهُوْرُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ৎ مَنْ حَدَّثَ عَنِّىْ بِحَدِيْثٍ يُرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الْكَاذِبِيْنَ.

‘সুতরাং মুহাদ্দিছগণের নিকটে ফাসেক ব্যক্তির সংবাদ অগ্রহণীয়, যেমন তাদের সকলের নিকট ফাসেকের সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যাত। অনুরূপ সুন্নাহও প্রমাণ করেছে যে, হাদীছ সমূহের মধ্যে দুর্বল-ত্রুটিপূর্ণ বর্ণনা উল্লেখ করা নিষিদ্ধ, যেমন- কুরআন ফাসেক ব্যক্তির সংবাদ নিষিদ্ধ করেছে। আর সেই সুন্নাহ হল রাসূল (ﷺ)-এর প্রসিদ্ধ হাদীছ, ‘কেউ যদি আমার পক্ষ থেকে এমন হাদীছ বর্ণনা করে যার সম্পর্কে সে মিথ্যা বলে সন্দেহ করে, তাহলে সে মিথ্যুকদের একজন’।[২৫] 

উক্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রমাণিত হল যে, মুহাদ্দিছগণের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় দুই মুহাদ্দিছ, হাদীছের প্রসিদ্ধ ছয় ইমামের শ্রেষ্ঠ দুই ব্যক্তিত্ব ইমাম বুখারী ও মুসলিম (রহঃ) সর্বক্ষেত্রেই যঈফ হাদীছ বর্জন করেছেন। তা আক্বীদা ও আহকামের ক্ষেত্রে হোক বা ফযীলত ও অন্য কোন ক্ষেত্রে হোক।

উল্লেখ্য, অন্য চার ইমামের মধ্যে ইমাম নাসাঈ ও আবুদাঊদও মূলনীতির ক্ষেত্রে ছিলেন সিদ্ধহস্ত।[২৬] ইমাম ইবনু হাযাম (৩৮৪-৪৬৫ হিঃ) জাল ও যঈফ হাদীছের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। তিনি বলেন,

إِمَّا بِنَقْلِ أَهْلِ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ أَوْ كَافَّةٍ عَنْ كَافَّةٍ أَوْ ثِقَةٍ عَنْ ثِقَةٍ حَتَّى يَبْلُغَ إِلَى النَّبِىِّ ﷺ إِلاَّ أَنَّ فِىْ الطَّرِيْقِ رَجُلاً مَجْرُوْحًا بِكِذْبٍ أَوْ غَفْلَةٍ أَوْ مَجْهُوْلِ الْحَالِ فَهَذَا أَيْضًا يَقُوْلُ بِهِ بَعْضُ الْمُسْلِمِيْنَ وَلاَ يَحِلُّ عِنْدَنَا الْقَوْلُ بِهِ وَلاَ تَصْدِيْقُهُ وَلاَ الْأَخْذُ بِشَيْئٍ مِنْهُ.

‘পূর্ব ও পশ্চিমের কোন অধিবাসীর বর্ণিত হোক, কিংবা এক জামা‘আত থেকে আরেক জামা‘আত এবং নির্ভরযোগ্য রাবী থেকে নির্ভরযোগ্য রাবী কর্তৃক বর্ণিত হোক এভাবে রাসূল (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছলে (তা গ্রহণীয়)। অন্যথা উক্ত সূত্রে যদি কোন ব্যক্তি মিথ্যুক, অলস কিংবা অপরিচিত হিসাবে অভিযুক্ত থাকে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না, যা কতিপয় মুসলিম ব্যক্তি বলে থাকে। এ ধরনের কথা বলা, বিশ্বাস করা এবং সেখান থেকে কিছু গ্রহণ করাকে আমরা হালাল মনে করি না’।[২৭]  ইবনুল আরাবী (মৃঃ ৫৪৩ হি.) সর্বক্ষেত্রে যঈফ হাদীছ বর্জনের পক্ষের মানুষ হিসাবে খুবই প্রসিদ্ধ। তিনি বলেন, إِنَّ الْحَدِيْثَ الضَّعِيْفَ لاَيُعْمَلُ بِهِ مُطْلَقًا ‘যঈফ হাদীছ কোন ক্ষেত্রেই আমল করা যায় না’।[২৮]   

বিশ্ববিখ্যাত মুজাদ্দিদ, পাঁচ শতাধিক মৌলিক গ্রন্থের প্রণেতা, শায়খ আহামদ ইবনু তাইমিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হি.) বলেন, [২৯] لاَيَجُوْزُ أَنْ يَعْتَمِدَ فِىْ الشَّرِيْعَةِ عَلَى الأَحَادِيْثِ الضَّعِيْفَةِ الَّتِىْ لَيْسَتْ صَحِيْحَةً وَلاَ حَسَنَةً ‘শরী‘আতের ক্ষেত্রে এমন যা‘ঈফ হাদীছ সমূহের উপর নির্ভরশীল হওয়া বৈধ নয়, যা ছহীহ এবং হাসান বলে প্রমাণিত হয়নি’। ইমাম শাওকানী (১১৭২-১২৫০হি./১৭৫৮-১৮৩৫ খৃ.) তাঁর দ্ব্যর্থহীন মত ব্যক্ত করে বলেন,

مَا وَقَعَ التَّصْرِيْحُ بِصِحَّتِهِ أَوْ حَسَنِهِ جَازَ الْعَمَلُ بِهِ وَمَا وَقَعَ التّصْرِيْحُ بِضُعْفِهِ لَمْ يَجُزِ الْعَمَلُ بِهِ وَمَا أَطْلَقُوْهُ وَلَمْ يَتَكَلَّمُوْا عَلَيْهِ وَلاَتَكَلَّمَ عَلَيْهِ غَيْرُهُمْ لَمْ يَجُزِ الْعَمَلُ بِهِ إِلاَّ بَعْدَ الْبَحْثِ عَنْ حَالِهِ إِنْ كَانَ البَاحِثُ أَهْلاً لِذَلِكَ.

‘বর্ণনা যখন ছহীহ অথবা হাসান হিসাবে প্রমাণিত হবে তখন আমল করা বৈধ হবে। আর যখন যা‘ঈফ হাদীছ বলে প্রমাণিত হবে তখন তার উপর আমল করা বৈধ হবে না। আর মুহাদ্দিছগণ যে হাদীছ বর্ণনা করে কিছু বলেননি এবং অন্যরাও কিছু বলেননি এমন হাদীছের প্রতি আমল করা জায়েয নয়, যতক্ষণ কোন বিশ্লেষক তার অবস্থা আলোচনা না করবেন’। [৩০]

জাল ও যঈফ হাদীছের বিরুদ্ধে আপোসহীন কণ্ঠ, মুসলিম বিশ্বের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, ঊনবিংশ শতাব্দীর সংগ্রামী মুজাদ্দিদ শায়খ আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী বলেন,

وَهَذَا وَالَّذِىْ أُدَيِّنُ اللهَ بِهِ وَأَدْعُوْ النَّاسَ إِلَيْهِ أَنَّ الْحَدِيْثَ الضَّعِيْفَ لاَ يُعْمَلُ بِهِ مُطْلَقًا لاَفِىْ الْفَضَائِلِ وَالْمُسْتَحَبَّاتِ وَلاَ فِىْ غَيْرِهِمَا.

‘এ জন্যই আমি আল্লাহ্র দিকে ফিরে যাই এবং মানুষকেও আমি এদিকেই আহ্বান করি যে, যা‘ঈফ হাদীছের উপর কোন ক্ষেত্রেই আমল করা যায় না। না ফযীলতের ক্ষেত্রে, না মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে। এতদ্ব্যতীত অন্য কোন বিষয়েও না’।[৩১] অন্যত্র তিনি বলেন,

إِنَّ الْحَدِيْثَ الضَّعِيْفَ إِنَّمَا يُفِيْدُ الظَّنَّ الْمَرْجُوْحَ وَلاَ يَجُوْزُ الْعَمَلُ بِهِ اِتِّفَاقًا فَمَنْ أَخْرَجَ مِنْ ذَلِكَ الْعَمَلِ بِالْحَدِيْثِ الضَّعِيْفِ فِىْ الْفَضَائِلِ لاَبُدَّ أَنْ يَأتِىَ بِدَلِيْلٍ وَهَيْهَاتَ.

‘নিশ্চয়ই যঈফ হাদীছ কেবল অতিরিক্ত ধারণার ফায়েদা দেয়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে যার প্রতি আমল করা বৈধ নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি বলে, ফযীলত সংক্রান্ত যঈফ হাদীছের উপর আমল করা যাবে তাকে অবশ্যই দলীল পেশ করতে হবে। কিন্তু তা তো অসম্ভব! ’[৩২]

উক্ত আলোচনায় জাল ও যঈফ হাদীছের বাস্তব অবস্থা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। মুসলিম উম্মাহ যদি উক্ত বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারে, তবে ইসলামী পুনর্জাগরণের পথের পাহাড়সম বাধা দূর হবে। কারণ এর সামাজিক প্রভাবটা খুবই বেশী। ইসলামী সমাজ আজ উক্ত ভারেই ভারাক্রান্ত।

জাল ও যঈফ হাদীছের মর্মান্তিক প্রভাব :

উপরিউক্ত কঠোরতা ও হুঁশিয়ারী থাকা সত্ত্বেও সর্ব মহলে জাল ও যঈফ হাদীছের মর্মান্তিক প্রভাব পড়েছে। এমনকি ফক্বীহগণও এর প্রভাব থেকে মুক্ত ছিলেন না। তাঁরা প্রাথমিক কোন্দলের দূষিত স্রোতে ভেসে গেছেন। নিজেদের দলীয় কর্মকা-কে প্রমাণ করার জন্য তারা জাল ও যা‘ঈফ হাদীছের আশ্রয় নিয়েছেন ফলে মুসলিম উম্মাহ্র বিভক্তি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আব্দুল হাই লাক্ষেèৗভী (রহঃ) ফিক্বহ গ্রন্থ সম্পর্কে বলেন,

فَكَمْ مِنْ كِتَابٍ مُعْتَمَدٍ اِعْتَمَدَ عَلَيْهِ أَجِلَّةُ الْفُقَهَاءِ مَمْلُوْءٌ مِنَ الْأَحَادِيْثِ الْمَوْضُوْعَةِ وَلاَ سِيَّمَا الْفَتَاوَى فَقَدْ وَضَّحَ لَنَا بِتَوْسِيْعِ النَّظْرِ أَنَّ أَصْحَابَهَا وَإِنْ كَانُوْا مِنَ الْكَامِلِيْنَ لَكِنَّهُمْ فِىْ نَقْلِ الْأَخْبَارِ مِنَ الْمُتَسَاهِلِيْنَ.

‘অনেক বিশ্বস্ত কিতাব, যার উপর বড় বড় ফক্বীহগণ নির্ভরশীল, সেগুলো জাল হাদীছ সমূহে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে ফাতাওয়ার কিতাব সমূহ। গভীর দৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, ঐ সকল গ্রন্থ প্রণয়নকারীগণ যদিও পূর্ণ ইলমের অধিকারী, কিন্তু হাদীছ সংকলনের ক্ষেত্রে তারা ছিলেন অলসতা প্রদর্শনকারী’।[৩৩] অন্যত্র তিনি আরো পরিষ্কারভাবে সকলকে সাবধান করে দিয়ে বলেন,

مِنْ هَهُنَا نَصُّوْا عَلَى أَنَّهُ لاَعِبْرَةَ لِلْأحَادِيْثِ الْمَنْقُوْلَهِ فِىْ الْكُتُبِ الْمَبْسُوْطَةِ مَالَمْ يَظْهَرْ سَنَدُهَا أَوْ يُعْلَمُ اِعْتِمَادُ أَرْبَابِ الْحَدِيْثِ عَلَيْهَا وَإِنْ كَانَ مُصَنِّفُهَا فَقِيْهًا جَلِيْلاً... أَلاَتَرَى إِلَى صَاحِبِ الْهِدَايَةِ مِنْ أَجِلَّةِ الْحَنَفِيَّةِ وَالرَّافِعِىِّ شَارِح ِالْوَجِيْزِ مِنْ أَجِلَّةِ الشَّافِعِيَّةِ مَعَ كَوْنِهِمَا مِمَّنْ يُشَارُ إِلَيْهَا بِالْأنَامِلِ وَيَعْتَمِدُ عَلَيْهِ الْأمَاجِدُ وَالْأَمَاثِلُ قَدْ ذَكَرَا فِىْ تَصَانِيْفِهِمَا مَالَمْ يُوْجَدْ لَهُ أَثَرٌ عِنْدَ خَبِيْرٍ بِالْحَدِيْثِ.

‘এজন্যই ওলামায়ে কেরাম দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করেছেন যে, ফিক্বহের বিশাল বিশাল গ্রন্থে যে সমস্ত হাদীছ সন্নিবেশিত হয়েছে সেগুলো সবই সারশূন্য (অকেজো), যতক্ষণ পর্যন্ত সেগুলোর সনদ যাচাই না করা হবে অথবা মুহাদ্দিছগণের নিকটে গৃহীত হয়েছে বলে জানা না যাবে। যদিও ফিক্বহ প্রণয়নকারীগণ মর্যাদাবান ফক্বীহ। .. (হে পাঠক!) তুমি কি হেদায়া রচনাকারীকে দেখ না, যিনি শীর্ষস্থানীয় হানাফীদের অন্যতম? এছাড়া ‘আল-ওয়াজীয’-এর ভাষ্যকার রাফেঈকে দেখ না, যিনি শাফেঈদের শীর্ষস্থানীয়? এই দু’জন ঐ সকল প্রধান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয় এবং যাদের উপর শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম ব্যক্তিগণ নির্ভর করে থাকেন। অথচ উক্ত কিতাবদ্বয়ে তারা এমন বর্ণনা সমূহ উপস্থাপন করেছেন যেগুলোর কোন চিহ্ন পর্যন্ত মুহাদ্দিছগণের নিকট পাওয়া যায় না’।[৩৪]

(চলবে ইনশাআল্লাহ)


তথ্যসূত্র : 
[১]. হাফিয আবু আমর ওছমান বিন আব্দুর রহমান ইবনুছ ছালাহ, মুক্বাদ্দামাহ ইবনুছ ছালাহ (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), পৃ. ২০।   

[২]. আল-হাফিয জালালুদ্দীন আস-সুয়ূত্বী, তাদরীবুর রাবী ফী শারহে তাক্বরীবিন নববী, ১ম খ- (বৈরুত : মাকতাবুল কাওছার, ১৪১৭ হি.), পৃ. ৩২৩।

[৩]. ড. মাহমূদ আত-ত্বহ্হান, তাইসীরু মুছত্বালাহিল হাদীছ (দিল্লী : কুতুবখানা ইশা‘আতুল ইসলাম, তাবি), পৃ. ৮৯।   

[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১, ‘নবীদের ঘটনাবলী’ অধ্যায়; মিশকাতুল মাছাবীহ, হা/১৯৮, ‘ইলম’ অধ্যায়।

[৫]. ছহীহ বুখারী, পৃ. ২৬, হা/১০৯, ‘ইলম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৮।

[৬]. ছহীহুল বুখারী, পৃ. ১৬২, হা/১২৯১, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৩; ছহীহ মুসলিম, পৃ. ৭, ‘রাসূল (ছাঃ)-এর উপর মিথ্যারোপ করার কঠোরতা’ অনুচ্ছেদ-২।

[৭]. ছহীহুল বুখারী, পৃ. ২৬,  হা/১০৬।

[৮]. মুসনাদুল ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল, ২য় খ-, পৃ. ২২, হা/৪৭৪২; সনদ ছহীহ।

[৯]. সুনানু ইবনে মাজাহ, পৃ. ২০, হা/৪০, সনদ ছহীহ।

[১০]. আশরাফ ইবনু সাঈদ, হুকমুল আমাল বিল হাদীছিয যা‘ঈফ ফী ফাযাইলিল আ‘মাল (কায়রো : মাকতাবাতুস সুন্নাহ, ১৯৯২ খৃ./১৪১২ হি.), পৃ. ২৫। 

[১১]. ছহীহ মুসলিম, পৃ. ৬৬৪, হা/২১৫৩; সুনানুত তিরমিযী, পৃ. ৬৭২, হা/৩০০৬, সনদ হাসান, ‘তাফসীর’ অধ্যায়, ‘সূরা আলে ইমরান’ অনুচ্ছেদ।      

[১২]. প্রফেসর ড. হাসান মুহাম্মাদ মাক্ববূলী আল-আহদাল, মুছত্বালাহুল হাদীছ ও রিজালুহু (ছান‘আ- সউদী আরব : মাকতাবাতুল জীল আল-জাদীদ, ১৯৯৩ খৃ./১৪১৪ হি.), পৃ. ৩৮।       

[১৩]. আস-সুন্নাহ  ওয়া  মাকানাতুহা  ফিত  তাশরীঈল  ইসলামী, পৃ. ৬৭।

[১৪]. মুছত্বালাহুল  হাদীছ  ওয়া  রিজালুহু, পৃ. ৩৮।

[১৫]. ড. ওমর ইবনু হাসান ওছমান ফালাতাহ, আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীছ, ১ম খ- (দিমাষ্ক : মাকতাবাতুল গাযালী, ১৯৮১ খৃ./১৪০১ হি.), পৃ. ১১২-১৩৮; আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা ফিত তাশরীঈল ইসলামী, পৃ. ৭৫-৭৯।

[১৬]. আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীছ, ১ম খ-, পৃ. ৩৩২।

[১৭]. আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনু শারফ আন-নববী, আল-মিনহাজ শারহু ছহীহ মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ, ১ম খ-, পৃ. ৮।

[১৮]. আল-মিনহাজ শারহু ছহীহ মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ, ১ম খ-, পৃ. ৮।

[১৯]. আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীছ, ১ম খ-, পৃ. ৩২৫।

[২০]. মুহাম্মাদ তাহির পাট্টানী, তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত (বৈরুত : দারুল এহইয়াইত তুরাছ আল-আরাবী, ১৯৯৫ খৃ./১৪১৫ হি.), পৃ. ৭।

[২১]. সূরা ইউনুস : ৩৬; সূরা আল-আন‘আম : ১১৬; ছহীহুল বুখারী, পৃ. ৬৫৬, হা/৫১৪৩; ছহীহ মুসলিম, পৃ. ৭৫৫, হা/২৪৮৪।

[২২]. আল্লামা জামালুদ্দীন ক্বাসিমী, ক্বাওয়াইদুত তাহদীছ মিন ফনূনি মুছত্বালাহিল হাদীছ (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৩৫৩ হি.), পৃ. ১১৩; হুকমুল আমাল বিল হাদীছিয যা‘ঈফ, পৃ. ৬৯।   

[২৩]. আব্দুল করীম ইবনু আব্দুল্লাহ আল-খাযীর, আল-হাদীছুয যা‘ঈফ ওয়া হুকমুল ইহতিজাজি বিহী (রিয়াদ : দারুল মুসলিম, ১৯৯৭ খৃ./১৪১৭ হি.), পৃ. ২৬২।    

[২৪]. তদেব, পৃ. ৭, অনুচ্ছেদ-১।

[২৫]. ছহীহ মুসলিম, পৃ. ৭, অনুচ্ছেদ-১। 
[২৬]. হাফিয আবু তাহের মাক্বদেসী (৪৪৮-৫০৭হি.), শুরূতুল আইম্মাহ আস-সিত্তাহ (কায়রো : মাকতাবাতুল কুদসী, ১৩৫৭ হি.), পৃ. ১৮; আল-ওয়াযউ ফিল হাদীছ, ১ম খ-, পৃ. ৬৯-৭০।

[২৭]. আবু মুহাম্মাদ আলী ইবনু আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু হাযম আল-আন্দালুসী আল-কুরতুবী আয-যাহিরী, আল-ফিছাল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহাল, ২য় খ- (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খৃ.), পৃ. ৮৪; আল-হাদীছুয যা‘ঈফ ওয়া হুকমুল ইহতিজাজি বিহী, পৃ. ২৬৫।

[২৮]. ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ১ম খ-, পৃ. ৪৭-৪৮।

[২৯]. আল-হাদীছুয যা‘ঈফ ওয়া হুকমুল ইহতিজাজি বিহী, পৃ. ২৬৭।

[৩০]. মুহাম্মাদ ইবনু আলী আশ-শাওকানী, নায়লুল আওত্বার, ১ম খ- (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), পৃ. ১২।

[৩১]. ইমাম মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, ছহীহুল জামি‘ আছ-ছগীর ওয়া যিয়াদাতুহু, ১ম খ- (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৯৮৬ খৃ. /১৪০৬ হি.), পৃ. ৫০।

[৩২]. মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ফিত তা‘লীক্ব ‘আলা ফিক্বহিস সুন্নাহ (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৯ হি.), পৃ. ৩৪।

[৩৩]. মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ﷺ) মিনাত তাকবীর ইলাত তাসলীম কাআন্নাকা তারাহু (রিয়ায : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৯৯১ খৃ./১৪১১ হি.), পৃ. ৩৭; আব্দুল হাই লাক্ষেèৗভী, জামে‘ ছাগীর-এর ভূমিকা নাফে‘ কাবীর, পৃ. ১৩।

[৩৪]. মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ জয়পুরী, হাক্বীক্বাতুল ফিক্বহ (মৌনাতভঞ্জন-ইন্ডিয়া : মাকতাবাতুল ফাহীম, জুলাই ২০০৫ খৃ.), পৃ. ১৫১।




প্রসঙ্গসমূহ »: সমাজ-সংস্কার
বিদ‘আত পরিচিতি (৩২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (১৮তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২১তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
পরনিন্দা চর্চা ও তার পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
গাযওয়াতুল হিন্দ : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ - হাসিবুর রহমান বুখারী
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও তার সমাধান (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
কুরআন মাজীদের উপর বিদ‘আতের আবরণ - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
মুছীবতে ধৈর্যধারণ করার ফযীলত - শায়খ আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম
যিলহজ্জ মাসের আমল ও তার ফযীলত - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম
ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের ধারণা: গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ

ফেসবুক পেজ