বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন

ইসলামে পর্দার বিধান 

-ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর* 

ভূমিকা 

ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত অভ্রান্ত জীবন বিধানের নাম। যা মানব জাতির জন্য কল্যাণকর। ইসলামের প্রতিটি বিধান মানুষের কল্যাণেই নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুরূপ নারীদের পর্দার বিধানও মানব সমাজের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতিটি মুসলিম নারী সঠিকভাবে পর্দার বিধান মেনে চললে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভে ধন্য হবেন। আর পুরুষজাতি বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্খিত পাপ থেকে বেঁচে যাবেন। সমাজ হতে ধর্ষণ ও ব্যভিচার হ্রাস পাবে। কেননা মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান। সে নারীদের মাধ্যমে সমাজে ফিতনা ছড়িয়ে থাকে। নারীদের দিয়ে পুরুষ জাতিকে পাপের দিকে ধাবিত করে। নারী-পুরুষের আকর্ষণ সৃষ্টিগত। তাই খুব সহজে একজন নারীর প্রতি পুরুষ আসক্ত হয়ে পড়ে। তাই মুসলিম নারীদের পর্দার বিধান মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইসলামে পর্দার গুরুত্ব

নারীর পর্দা ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সুন্দর সমাজ গড়ার চমৎকার ব্যবস্থাপনা। পর্দার বিধানের বাস্তবায়ন হলে মানুষ বহুবিধ সুফল পাবে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,

وَ اِذَا سَاَلۡتُمُوۡہُنَّ مَتَاعًا فَسۡـَٔلُوۡہُنَّ مِنۡ وَّرَآءِ  حِجَابٍ ؕ ذٰلِکُمۡ  اَطۡہَرُ  لِقُلُوۡبِکُمۡ  وَ قُلُوۡبِہِنّ

‘তোমরা তাদের (নারীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এটা তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’ (সূরা আহযাব : ৫৩)।

সমাজে বসবাস করতে গেলে প্রতিবেশী নারীর নিকট কোন জিনিস প্রয়োজন হতে পারে। এ সময় বেগানা নারীর কাছে কোন দরকারী জিনিস চাইলে তা পর্দার আড়াল থেকে চাইতে হবে। তার সামনা-সামনি হয়ে চাওয়া বৈধ নয়। তাহলে উভয়ের অন্তর পবিত্র থাকবে। সরাসরি তথা তাদের মধ্যে চোখাচোখী হলে হতে পারে সে তাকে দর্শনে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। আবার ঐ নারীও পুরুষ লোকটির উপর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তাই ইসলাম পর্দার বিধান মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছে। যাতে করে নারী-পুরুষ দু’জনই পবিত্র জীবন যাপন করতে পারে।

মুসলিম নারীকে পর্দা করার বিধান আল্লাহ তা‘আলা দিয়েছেন। পর্দাপ্রথা মেনে চলার মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হয়। তাঁর বিধান পালনের মাধ্যমে উভয় জগতে সর্বপ্রকার ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা যায়। মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ  قُلۡ  لِّاَزۡوَاجِکَ  وَ  بَنٰتِکَ وَ نِسَآءِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡہِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِہِنَّ ؕ ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَنۡ یُّعۡرَفۡنَ فَلَا  یُؤۡذَیۡنَ 

‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বলে দিন যে, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না’ (সূরা আহযাব : ৫৯)।

উম্মু সালামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলে (মদীনার) আনছারদের মহিলারা যখন বের হল, তখন তাদের মাথায় (কালো) চাদর (বা মোটা ওড়না) দেখে মনে হচ্ছিল যেন ওদের মাথায় কালো কাকের ঝাঁক বসে আছে’।[১]

পর্দার বিধান স্রেফ নবী-রাসূলদের পরিবারের মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট নয়। বরং পৃথিবীর সকল মুসলিম নারীর জন্য একই বিধান প্রজোয্য। বর্তমান সময়ে নারীদের উত্যক্ত করার ঘটনা যত্রতত্র ঘটে থাকে। এই ইভটিজিং বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইভটিজিং মুক্ত সমাজ গড়ার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা ও আইন প্রণয়নও হয়েছে। কিন্তু তা আনুপাতিক হারে বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই ইভটিজিং-এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। অথচ ইভটিজিং বা নারী উত্যক্তকরণ মুক্ত সমাজ গড়ার সুন্দর সমাধান বহু আগেই ইসলামে দেয়া হয়েছে। যা বিশ্ব জাহানের মালিকের শিক্ষার মধ্যেই পাওয়া যায়। যদি কোন নারী ইসলাম নির্দেশিত প্রকৃত পর্দা পালন করে, তাহলে কেউ তাকে উত্যক্ত বা ইভটিজিং করবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِہِنَّ وَ یَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَہُنَّ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ  زِیۡنَتَہُنَّ  اِلَّا مَا ظَہَرَ  مِنۡہَا وَ لۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِہِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِہِنَّ

‘হে নবী! আপনি ঈমানদার নারীদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান থাকে তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তাদের গ্রীবা ও গলদেশ চাদর দ্বারা ঢেকে রাখে’ (সূরা আন-নূর : ৩১)।

মুসলিম নারীদেরকে স্বীয় দৃষ্টি নত রাখার ও পর্দা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যা নিত্য প্রয়োজনে প্রকাশ করতে বাধ্য হতে হয়, তা ব্যতীত খোলা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। অত্র আয়াতের তাফসীরে ইমাদুদ্দীন ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, স্ত্রী লোকদেরকে সতীত্ব রক্ষা করে চলতে হবে। নিজেদের আভরণ (অলংকার) কারো সামনে প্রকাশ করা যাবে না। পর পুরুষের সামনে নিজের সৌন্দর্যের কোনো অংশই প্রকাশ করা যাবে না। হ্যাঁ, তবে যেটা ঢেকে রাখা সম্ভব নয় সেটা অন্য কথা। যেমন চাদর ও উপরের কাপড় ইত্যাদি। এগুলো গোপন রাখা স্ত্রীলোকের পক্ষে সম্ভব নয়। এটাও বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি এবং আংটিকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু হতে পারে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐ সৌন্দর্যের স্থান যেটা প্রকাশ করা শরী‘আতে নিষিদ্ধ। আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত আছে যে, তারা যেন নিজেদের আভরণ প্রকাশ না করে-এর অর্থ হল- তারা যেন তাদের বালা, হার, পায়ের অলংকার ইত্যাদি প্রদর্শন না করে।[২] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ الۡقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَآءِ الّٰتِیۡ  لَا یَرۡجُوۡنَ نِکَاحًا فَلَیۡسَ عَلَیۡہِنَّ جُنَاحٌ اَنۡ یَّضَعۡنَ ثِیَابَہُنَّ غَیۡرَ مُتَبَرِّجٰتٍۭ بِزِیۡنَۃٍ ؕ وَ اَنۡ یَّسۡتَعۡفِفۡنَ خَیۡرٌ   لَّہُنَّ ؕ وَ اللّٰہُ  سَمِیۡعٌ  عَلِیۡمٌ

‘বৃদ্ধ নারী যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের বহির্বাস পোশাক (চাদর, বোরকা ইত্যাদি) খুলে রাখলে কোন অপরাধ হবে না। তবে এটা হতে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (সূরা আন-নূর : ৬০)।

তবে যারা অতিশয় বৃদ্ধ বিবাহের আকাক্সক্ষা রাখে না, তাদের শালীন পোশাক পরা দোষের নয়। বার্ধক্যের চরম সীমায় পৌঁছে গেলে তাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ পর্দা মেনে চলা যরূরী নয়। সংযত পোশাক পরলেই তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। তবে তখনো পর্দা করে চলা উত্তম।

মাহরাম ব্যতীত নারীর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

মাহরাম (যার সাথে ঐ নারীর বিয়ে হারাম) ব্যতীত নারীদের দূরে ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ। এ মর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عِنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا تُسَافِرُ مَرْأَةٌ مَسِيْرَةَ يَوْمٍ وَ لَيْلَةٍ إِلَّا وَمَعَهَا ذُوْمَحْرَمٍ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলা একদিন এক রাতের সফর করতে পারে না’।[৩]

মুসলিম নারী দূরে কোন জায়গায় সফর করতে চাইলে তার সাথে মাহরাম পুরুষ থাকা অপরিহার্য। এ জন্য মহিলাদের হজ্জের সফর করার জন্য মাহরাম পুরুষ থাকাকে নারীদের হজ্জের শর্তের মধ্যে গণ্য করা হয়। এটা নারীর স্বধীনতার প্রতি হস্তক্ষেপ নয়। বরং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা। কোন নারীর ভ্রমণে একজন পুরুষ মানুষ সাথে থাকলে তাকে বখাটে কেউ সহজে উত্যক্ত করার সাহস পাবে না। তিনি পর্দাপ্রথা মেনে ভ্রমণ করলে অন্যদের কুদৃষ্টি থেকে বাঁচতে পারবে। একদিকে অপরের কুদৃষ্টি থেকে হেফাযত অপর দিকে দুষ্ট ছেলেদের থেকে রক্ষা। সব মিলিয়ে তার সফর হবে সুন্দর ও নিরাপদ। কথিত নারী স্বাধীনতার নামে ইসলামে তাদেরকে নিরাপত্তা হীনতার দিকে ঢেলে দেয়নি।

খোলা স্থানে নারীদের গোসল করা অবৈধ

খোলা স্থানে নারীদের গোসল করা শরী‘আত সম্মত নয়। তাদেরকে সুন্দরভাবে পরিপাটি ঘেরা স্থানে গোসল করতে হবে। এমর্মে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلَا يُدْخِلْ حَلِيْلَتَهُ الْحَمَّامَ

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার স্ত্রীকে সাধারণ গোসলখানায় প্রবেশ করতে না দেয়’।[৪]

عَنْ أُمَّ الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا تَقُوْلُ خَرَجْتُ مِنَ الْحَمَّامِ فَلَقِيَنِىْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَقَالَ مِنْ أَيْنَ يَا أُمَّ الدَّرْدَاءِ قَالَتْ مِنَ الْحَمَّامِ فَقَالَ وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ مَا مِنِ امْرَأَةٍ تَضَعُ ثِيَابَهَا فِىْ غَيْرِ بَيْتِ أَحَدٍ مِنْ أُمَّهَاتِهَا إِلَّا وَهِىَ هَاتِكَةٌ كُلَّ سِتْرٍ بَيْنَهَا وَبَيْنَ الرَّحْمَنِ

উম্মু দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি সাধারণ গোসলাখানা হতে বের হলাম। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি আমাকে বললেন, কোত্থেকে, হে উম্মু দারদা? আমি বললাম, গোসলখানা থেকে। তিনি বললেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে। যে কোন মহিলা তার কোন মায়ের ঘর ছাড়া অন্য স্থানে নিজের কাপড় খোলে, সে তার ও পরম দয়াময় (আল্লাহর) মাঝে প্রত্যেক পর্দা বিদীর্ণ করে ফেলে’।[৫]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَزَعَتْ ثِيَابَهَا فِىْ غَيْرِ بَيْتِ زَوْجِهَا هَتَكَتْ سِتْرَ مَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ رَبِّهَا

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে নারী স্বামীগৃহ ছাড়া অন্য গৃহে নিজের কাপড় খোলে, সে আল্লাহ তা‘আলা ও তার নিজের মাঝে পর্দা বিদীর্ণ করে ফেলে’।[৬]

পরিপূর্ণভাবে ঘেরা স্থানে মেয়েদের গোসলের ব্যবস্থা করা যরূরী। তাদের খোলা জায়গা তথা পুকুর, নদী, খাল, বিল বা হাওরে গোসল করা বৈধ নয়। এতে তাদের পর্দার ব্যাঘাত ঘটে। তারা যত্রতত্র নিজেদের পোশাক খুলতে পারে না। বাড়ীর বাহিরে গেলেই তাদেরকে শরীর পরিপাটি করে ঢেকে রাখতে হবে। 

عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّوْنَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا إِلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُوْنَا كَشَفْنَاهُ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, কাফেলা আমাদের সামনে বেয়ে পার হত, তখন আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকতাম। তারা যখন আমাদের সামনাসামনি হত, তখন আমাদের প্রত্যেকে তার চাদরকে মাথার উপর থেকে চেহারায় টেনে নিত, তারপর তারা পার হয়ে গেলে আমরা চেহারা খুলে নিতাম’ ।[৭]

শয়তান নারীকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে

শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু হিসাবে দুনিয়ায় কাজ করছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য সর্বদা তার দলবল নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। মানুষকে জাহান্নামের খড়ি বানানোয় তার চূড়ান্ত মিশন। তার মিশন বাস্তবায়নে নারীদেরকে সে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ الْمَرْأَةَ تُقْبِلُ فِيْ صُوْرَةِ شَيْطَانٍ وَتُدْبِرُ فِيْ صُوْرَةِ شَيْطَانٍ إِذَا أَحَدُكُمْ أَعْجَبَتْهُ الْمَرْأَةُ فَوَقَعَتْ فِيْ قَلْبِهِ فَلْيَعْمِدْ إِلَى إِمْرَأَتِهِ فَلْيُوَاقِعْهَا فَإِنَّ ذَلِكَ يَرُدُّ ماَ فِيْ نَفْسِهِ

জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় মহিলারা শয়তানের আকৃতিতে আসে আর শয়তানের আকৃতিতে যায়। যদি কোন নারীকে তোমাদের কাউকে ভালো লাগে এবং সে অন্তরে গেঁথে যায়, তাহলে সে যেন তার স্ত্রীর নিকট চলে যায় এবং তার সাথে মিলনে লিপ্ত হয়। নিশ্চয় এ মিলন অন্তরের কুবাসনা দূর করে দিবে’।[৮]

عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ الْمَرأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتْ إِسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ

ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘নারী হচ্ছে গোপন বস্তু। যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে নগ্নতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তুলে’।[৯]

নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ সৃষ্টিগত ভাবেই। যে কোন পুরুষই নারীর প্রতি দুর্বল। কোন নারীকে কারো মনে ধরে গেলে সে তার জন্য যে কোন কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকে। তার ভালোবাসার কাছে সবকিছুই তুচ্ছ হয়ে যায়। আর এই দুর্বলতাকেই শয়তান হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগিয়ে থাকে। নারীকে শিকারী ধরার টোপ হিসাবে ব্যবহার করে। তারা রাস্তায় বের হলে তাদেরকে সেজেগুজে অতি সুন্দর হয়ে বের হতে উদ্বুদ্ধ করে। আকর্ষণীয় নগ্ন পোশাকে বের হতে উৎসাহ যোগায়। যেন পুরুষরা তাকে দেখে সহজেই আকর্ষিত হয়ে পড়ে। ফলে পুরুষ জাতিকে পাপ কর্মে জড়িত করা শয়তানের জন্য সহজ হয়ে যায়। অপর এক হাদীছে রয়েছে-

عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ لَا تَلِجُوْا عَلَى الْمُغِيْبَاتِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِىْ مِنْ أَحَدِكُمْ مَجْرَى الدَّمِ

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমরা সেই মহিলার নিকট গমন করো না, যাদের স্বামীরা বিদেশে আছে। কারণ, শয়তান তোমাদের রক্তশিরায় প্রবাহিত হয়’।[১০]

عَنْ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِإِمْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثُهُمَا الشَّيْطانُ

ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হলে তৃতীয় জন হবে শয়তান’।[১১]

কোন নারীর সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ করা পুরুষের জন্য অবৈধ। স্বামীহীনা বিধবা বা প্রবাসীর স্ত্রীদের নিকট নির্জন সাক্ষাৎ আরো ভয়ংকর বিষয়। কেননা পুরুষের স্পর্শ পেলেই তাদের জৈবিক চাহিদা অধিক পরিমাণে জাগ্রত হয়। এমন ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের বিপদ অধিক পরিমাণে ঘটে থাকে। নির্জনতায় তাদেরকে পাপে ধাবিত করে। কারণ যখন কোন নারী-পুরুষ জনমানব শূন্য জায়গায় সাক্ষাৎ করে তখনই সেখানে শয়তান তৃতীয় জন হিসাবে উপস্থিত হয়। যার কাজই হল- ফিতনা ছড়ানো। ভালো কোন উদ্দেশ্যে সে যায় না। এক্ষণে যারা কথিত প্রেমের নামে সংগোপনে ডেটিং-চ্যাটিং বা সাক্ষাৎ করে তাদের এ বিষয়ে ভাবা উচিত। তারা যতই সাবধনতা অবলম্বন করুক-না কেন এরূপ প্রেম-ভালোবাসা ইসলামে অবৈধ। একজন বেগানা নারী তার জন্য কতটা ভয়ংকর তা সে ভাবেনি। একজন বিজ্ঞ ও সচেতন মানুষের বুদ্ধিও তাদের কাছে আকেজো হয়ে পড়ে। তাই তাদের বিষয়ে সাবধান করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِيْنٍ أَذْهَبَ لِلُبِّ الرَّجُلِ الْحَازِمِ مِنْ إِحْدَيْ كُنَّ

‘বুদ্ধি ও ধর্মের ব্যাপারে অপূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী পুরুষদের জ্ঞান তোমাদের (নারীদের) অপেক্ষা আর কেউ অধিক বিনষ্ট করতে পারে এমন কাউকে আমি দেখিনি’।[১২]

অনুরূপ কথা বহুপূর্বে ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) জুলেখাকে কেন্দ্র করে বলেছিলেন। যা আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে উল্লেখ করে বলেন,  اِنَّ  کَیۡدَکُنَّ  عَظِیۡمٌ ‘নিশ্চয় তোমাদের (নারীদের) চক্রান্ত শক্তিশালী’ (সূরা ইউসুফ : ২৮)। তবে শয়তান তাদের মাধ্যমে যে ষড়যন্ত্রই করুক না কেন তা দুর্বল। প্রকৃত মুমিনকে মহান আল্লাহ শয়তানের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করে থাকেন। এমর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اِنَّ کَیۡدَ الشَّیۡطٰنِ کَانَ ضَعِیۡفًا ‘নিঃসন্দেহে শয়তানের ষড়যন্ত্র অত্যন্ত দুর্বল’ (সূরা আন-নিসা : ৭৬)।

নারী হতেও নারীকে সাবধান থাকতে হবে

একজন নারীকে পর-পুরুষ থেকে সর্বোচ্চ সাবধান থাকতে হবে। এমনকি অপর নারী থেকেও সর্তক থাকতে ইসলামে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ মর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ قَالَ لَا يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ وَلَا الْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ وَلَا يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُلِ فِيْ ثَوْبٍ وَاحِدٍ وَلَا تُفْضِي الْمَرْأَةُ إِلَى الْمَرْأَةِ فِيْ ثَوْبٍ وَاحِدٍ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘এক পুরুষ অপর পুরুষের গুপ্তাঙ্গের প্রতি লক্ষ্য করতে পারে না। তেমনি এক নারী অপর নারীর গুপ্তাঙ্গের প্রতি লক্ষ্য করতে পারে না। দু’জন পুরুষ একটি কাপড়ের নিচে (নগ্ন শরীরে) শয্যা গ্রহণ করতে পারে না। তেমনি দু’জন নারী একটি কাপড়ের নিচে শয্যা গ্রহণ করতে পারে না’।[১৩]

عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا تُبَاشِرُ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ فَتَنْعَتْهَا لِزَوْجِهَا كَأَنَّهُ يَنْظُرُ إِلَيْهَا

ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘এক নারী অপর নারীর অঙ্গের সাথে অঙ্গ লাগাতে পারে না বা স্পর্শ করতে পারে না। কারণ সে তার স্বামীকে ঐ নারীর অঙ্গের বিবরণ দিতে পারে তখন তার স্বামী ঐ নারীকে অন্তরের চোখে লক্ষ্য করবে’।[১৪]

কোন পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে দৃষ্টি দেয়া নিষেধ। অনুরূপ একজন নারী আরেক নারীর লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টি দেয়াও নিষিদ্ধ। বস্ত্রহীন হয়ে একই কাপড়ের নিচে শুয়ে থাকাও নিষেধ। একজন নারী অপর নারীকে খালি শরীরে স্পর্শ করাও নিষেধ। ইসলামে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। কেননা কোন নারীর শারীরিক গঠন কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। এতে সে কোন সময় প্রসঙ্গক্রমে স্বীয় স্বামীর নিকট তার বিবরণ দিবে। আর তার স্বামী অন্তর চক্ষু দ্বারা তাকে ভোগ করবে। এতে বুঝা যায়, একজন যুবতীকে অপর যুবতী বিয়ের জন্য গায়ে হলুদ মাখানোও অনুচিত। কারণ এ কুসংস্কার কেন্দ্র করে নানা অপকর্ম হয়ে থাকে।

عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لِأَنْ يُطْعَنَ فيْ رَأْسِ أَحَدِكُمْ بِمِخْيَطٍ مِنْ حَدِيْدٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمَسَّ امْرَأَةً لَا تَحِلُّ لَهُ

মা‘কিল বিন ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ সুচ দ্বারা খোঁচা যাওয়া ভালো, তবুও যে নারী তার জন্য অবৈধ তাকে স্পর্শ করা ভালো নয়’।[১৫]

একজন পুরুষের জন্য বেগানা নারীকে স্পর্শ করা হারাম। নির্জনে তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করাও নিষেধ। যা কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এসবের মাধ্যমে শয়তান পুরুষ-নারীকে পাপে জড়িত করতে সহযোগিতা করে। এসব হাদীছে যুবক-যুবতী, ছাত্র-ছাত্রীর কথিত প্রেম নামক অবৈধ ভালোবাসাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর বিবাহিত নারী-পুরুষের পরকীয়া সেটা তো আরো অধিক জঘন্য। প্রেমিক-প্রেমিকার দেখা-সাক্ষাৎ, আলাপচারিতা, ডেটিং-চ্যাটিং, হাতে হাত রেখে পার্কে ঘুরাঘুরি সবকিছুই অপরাধ। বিয়ের পূর্বে প্রেম নয়, বিয়ের পরে স্ত্রীর সাথে প্রেম হয়। বিয়ের পূর্বে অন্য নারীর সাথে যা হয়, তা সবই ব্যভিচারের শামিল। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি মুসলিম যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য এসব শব্দের আবিষ্কার করেছে। বিয়ের আগে কোন নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয় না বরং ব্যভিচারের সম্পর্কই হয়ে থাকে। হাদীছে এসেছে

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ كُتِبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ نَصِيْبُهُ مِنَ الزِّنَى مُدْرِكٌ ذَلِكَ لاَ مَحَالَةَ فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظْرُ وَالأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلاَمُ وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের উপর যেনার একটি অংশ লিখা হয়েছে। সে তা পাবেই। মানুষের দু’চোখের যেনা দেখা। দু’কানের যেনা শুনা। জিহ্বার যেনা কথা বলা। হাতের যেনা স্পর্শ করা। পায়ের যেনা যেনার পথে চলা। অন্তরের যেনা হচ্ছে আকাক্সক্ষা করা। লজ্জাস্থান তার সত্য-মিথ্যা প্রমাণ করে’।[১৬]

বিধায় কথিত প্রেমিক-প্রেমিকাদের এপথ থেকে ফিরে আসা আবশ্যক। সাথে সাথে ঘটে যাওয়া কর্মের জন্য প্রভুর নিকট অনুতপ্ত হওয়া দরকার। খালেছ অন্তরে তওবা করে দ্বীন রক্ষা করা যরূরী। বিশুদ্ধচিত্তে তওবা করলে ইনশা-আল্লাহ মহান প্রভু ক্ষমা করে দিবেন।

যে সকল নারী অভিশপ্ত

এমন কতিপয় নারী রয়েছে যারা ইসলামের দৃষ্টিতে অভিশপ্ত। এদের সংখ্যাও বর্তমান সমাজে কম নয়। এরূপ বদ স্বভাবের নারীদেরকে ইসলামে ঘৃণিত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ মর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الْمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ

ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী (ﷺ) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারীর উপর অভিশাপ করেছেন এবং নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষের উপর অভিশাপ করেছেন’।[১৭]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ لَعَنَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لُبْسَةَ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لُبْسَةَ الرَّجُلِ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘রাসূল (ﷺ) সেই পুরুষের ওপর অভিশাপ করেছেন যে মহিলার পোশাক পরিধান করে এবং সে মহিলার উপর অভিশাপ করেছেন যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে’।[১৮]

عَنْ ابْنِ أَبِيْ مُلَيْكَةَ  قَالَ قِيْلَ لِعَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا إِنَّ امْرَأَةً تَلْبَسُ النَّعْلَ فَقَالَتْ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الرَّجُلَةَ مِنْ النِّسَاءِ

আবূ মুলায়কা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, একদা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে বলা হল- একটি মেয়ে পুরুষের জুতা পরে। তখন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পুরুষের বেশধারী নারীর প্রতি অভিশাপ করেছেন।[১৯]

পুরুষের বেশধারী নারী অভিশপ্ত। আবার নারীর বেশধারী পুরুষও অভিশপ্ত। পুরুষের পোশাক নারীদের এবং নারীর পোশাক পুরুষের পরিধান করা ইসলামে নিষেধ। এমন পুরুষের জুতা নারীদের পরিধান করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বর্তমান সমাজে আধুনিকতার নামে নারীদের শার্ট-প্যান্ট বা পুরুষের পোশাক পরা কী পরিমাণ বেহায়াপনা তা ভাবার বিষয়। আবার যুবকদের লম্বা চুল, কানে দুল ও নারীদের পোশাক শরী‘আত বর্হিভূত। সভ্যতার নামে এসব নষ্টামী মুসলিম নারী-পুরুষের পরিহার করা আবশ্যক। এদের অভিভাবকও জবাবদিহিতা থেকে রেহায় পাবে না। কেননা নারীর বেহায়াপনার কারণে অভিভাবককে পরকালে ফেঁসে যেতে হবে। ঐ শুনুন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কঠিন হুঁশিয়ারি।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمْ اَلْجَنَّةَ مُدْمِنُ الخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالدَّيُوْثُ الَّذِيْ يُقِرُّ فِيْ أَهْلِهِ الْخَبَثَ

ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত হারাম করেছেন। (১) সর্বদা মদপানকারী, (২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ও (৩) দায়ূছ তথা পরিবারে বেপর্দার সুযোগ দানকারী (অভিভাবকসমূহ)’।[২০] তাদের সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا لَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ تَعَالَى

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ঐসব নারীদের প্রতি অভিশাপ করেছেন, যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে দেহে উলকি (সুচিবৃদ্ধি করে চিত্র অংকন) করে বা অন্যের মাধ্যমে করিয়ে নেয়। যারা ভ্রƒ উপড়িয়ে চিকন করে, যারা দাঁত সমূহকে শানিত ও সরু বানায়। কারণ তারা আল্লাহর স্বাভাবিক সৃষ্টির বিকৃতি ঘটায়।[২১]

عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ لَعَنَ اللهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ

ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী (ﷺ) চুলে (পরচুলা) জোড়া লাগায় এবং অন্যদের দ্বারা লাগিয়ে নেই তার প্রতি অভিশাপ করেছেন।[২২]

عَنْ عَبْد اللهِ بْن عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ سَيَكُوْنُ فِىْ آخِرِ أُمَّتِىْ رِجَالٌ يَرْكَبُوْنَ عَلَى السُّرُوْجٍ كَأَشْبَاهِ الرِّجَالِ يَنْزِلُوْنَ عَلَى أَبْوَابِ الْمَسَاجِدِ نِسَاؤُهُمْ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ عَلَى رُءُوسِهِمْ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْعِجَافِ الْعَنُوْهُنَّ فَإِنَّهُنَّ مَلْعُوْنَاتٌ

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে যারা ঘরের মত জিন্ (মোটর গাড়ি) তে চড়ে মসজিদের দরজায় নামবে। আর তাদের মহিলারা হবে অর্ধনগ্না; যাদের মাথা কৃশ উটের কুঁজের মত (খোঁপা) হবে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ করো। কারণ, তারা অভিশপ্তা’।[২৩]

উপরিউক্ত হাদীছগুলোতে অভিশপ্ত নারীদের আরো কিছু পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, ১. যারা সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য শরীরে উলকি বা ট্যাটু আঁকে। আর যে এঁকে দেয়। ২. যারা ভ্রু প্লাগ করে। ৩. যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁতকে চিকন করে নেয়। ৪. যারা নিজেরা পরচুলা বা কৃত্রিম চুল লাগায় বা অন্যের সাহায্যে লগিয়ে নেয়। ৫. যারা অর্ধনগ্ন (তথা পোশাক পরার পর শীরর দেখা যায়) পোশাক পরিধান করে। ৬. যারা চুল আকর্ষণীয়ভাবে উঁচু খোপা করে বেঁধে রাখে।

এরূপ বেহায়া নারীদের আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন। এসব অভিশপ্ত নারীদের দ্বারা সমাজের কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশি ছড়াবে। তাদের দ্বারা বাহ্যিক দৃষ্টিতে যেটা কল্যাণ দেখা যায় সেটা মূলত কল্যাণ নয়। গভীর দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যাবে তাদের মাধ্যমে সমাজের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। যারা বিউটি পার্লারের ব্যবসায় জড়িত তাদের এরূপ ব্যবসার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া যরূরী।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* পরিচালক, ইয়াসিন আলী সালাফী মাদরাসা, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. আবূ দাউদ, হা/৪১০১, সনদ ছহীহ।
[২]. তাফসীরে ইবনু কাছীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৪৫।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/১০৮৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৯; তিরমিযী, হা/১১৭০; ইবনু মাজাহ, হা/২৮৯৯; মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৩৫৮৮; মিশকাত, হা/২৫১৫।
[৪]. তিরমিযী, হা/২৮০১; মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৬৯২; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৭৭৭৯; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৬৮৮; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৪; মিশকাত, হা/৪৪৭৭, সনদ হাসান।
[৫]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭০৩৮; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৬৪৬; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হা/১৫১৭; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৬৯, সনদ হাসান।
[৬]. তিরমিযী, হা/২৮০৩; ইবনু মাজাহ, হা/৩৭৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১৮৬; দারেমী, হা/২৬৫১; হাকেম, হা/৭৭৮০; ছহীহুল জামে‘, হা/২৭১০, সনদ ছহীহ।
[৭]. আবূ দাঊদ, হা/১৮৩৫; ইরওয়াউল গালীল, হা/১০২৩; মিশকাত, হা/২৬৯০, সনদ হাসান।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০৩; আবূ দাঊদ, হা/২১৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৫৭৭; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/২৩৮৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ইমান, হা/৫০৫২; মিশকাত, হা/৩১০৫।
[৯]. তিরমিযী, হা/১১৭৩; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৫৯৮; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/১৬৮৫; ছহীহ আত-তারগীব, হা/৩৪৬; মিশকাত, হা/৩১০৯, সনদ ছহীহ।
[১০]. তিরমিযী, হা/১১৭২; ইবনু মাজাহ, হা/১৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৩৬৪; মিশকাত, হা/৩১১৯, সনদ হাসান।
[১১]. তিরমিযী, হা/১১৭১; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৫৮৬; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৩৮৭; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/১০৫৭৪; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/২৯২৯; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হ/১৪৩; ছহীহুল জামে‘, হা/২৫৪৬; মিশকাত, হা/৩১১৮, সনদ ছহীহ।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/৩০৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯; তিরমিযী, হা/২৬১৩; ইবনু মাজাহ, হা/৪০০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩৪৩; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৭৪৪; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/১০০০; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/২৯; মিশকাত, হা/১৯।
[১৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯৪; তিরমিযী, হা/২৭৯৩; ইবনু মাজাহ, হা/৬৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৬১৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৫৬০; মিশকাত, হা/৩১০০।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৪০; আবূ দাঊদ, হা/২১৫০; তিরমিযী, হা/২৭৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৬৮; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪১৬০; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১০৪১৯; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১০৮৯১; মিশকাত, হা/৩০৯৯।
[১৫]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৪৮৬; ছহীহুল জামে‘, হা/৫০৪৫; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৯১০; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২২৬, সনদ ছহীহ।
[১৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯১৯; বায়হাক্বী কুবরা, হা/১৩২৮৮; মুসানদে বাযযার, হা/৮৯৪৩; ছহীহুল জামে‘, হা/৪৪৭৬; মিশকাত, হা/৮৬।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৬; ইবনু মাজাহ, হা/১৯০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩১৫১; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/১৪৩৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭৯৯; মিশকাত, হা/৪৪২৮।
[১৮]. আবূ দাঊদ, হা/৪০৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮২৯২; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৭৫১; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৭৪১৫; মিশকাত, হা/৪৪৬৯, সনদ ছহীহ।
[১৯]. আবূ দাঊদ, হা/৪০৯৯; মিশকাত, হা/৪৪৭০, হাদীছ ছহীহ।
[২০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩৭২; ছহীহুল জামে‘, হা/৩০৫২; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩৬৬; মিশকাত,  হা/৩৬৫৫, সনদ ছহীহ।
[২১]. ছাহীহ বুখারী, হা/৪৮৮৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২১২৫; তিরমিযী, হা/২৭৮২; ইবনু মাজাহ, হা/১৯৮৯; দারেমী, হা/২৬৪৭; মিশকাত, হা/৪৪৩১।
[২২]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৩৩; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৬৮৭; আবূ দাঊদ, হা/৪১৬৮; তিরমিযী, হা/১৭৫৯; নাসাঈ, হা/৫০৯৪; ইবনু মাজাহ, হা/১৯৮৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৪৫৪; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৫১৪; মিশকাত, হা/৪৪৩০।
[২৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০৮৩; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৭৫৩; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২০৪৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৮৩, আলবানী ঢ় হাসান বলেছেন।





প্রসঙ্গসমূহ »: পর্দা-হিজাব নারী সমাজ
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (৯ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
মাযহাবী গোঁড়ামি ও তার কুপ্রভাব (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : রিদওয়ান ওবাইদ
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার (১২তম কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও তার সমাধান (৩য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১৩তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
হাদীছ বর্ণনায় আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর অবদান - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব ও মূল্যায়ন - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
ইসলামী উত্তরাধিকার আইন: উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ধারা (২য় কিস্তি) - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২২তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
আল্লাহ তা‘আলাকে কি স্বপ্নযোগে দেখা সম্ভব? - হাসিবুর রহমান বুখারী

ফেসবুক পেজ