বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন

শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি

-ড. মুযাফফর বিন মুহসিন



ইসলামী শরী‘আত মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। এর যথাযথ অনুসরণ করলে মানুষ যেমন ইহকালে সাফল্য অর্জন করতে পারবে, তেমনি পরকালেও তুলনাহীন সুখ-শান্তির আধার জান্নাত লাভে ধন্য হবে। অসংখ্য মানুষ এমন কল্যাণকর জীবনই কামনা করে। কিন্তু শরী‘আত অনুসরণের শর্ত, পদ্ধতি ও মূলনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে এমন অনিন্দ্য সুন্দর জীবন লাভ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষ শরী‘আত মনে করে যে আমলগুলো করে থাকে, সেগুলো শরী‘আতের অন্তর্ভুক্তই নয়। শিরক-বিদ‘আত, জাল-যঈফ হাদীছ, ভিত্তিহীন ও উদ্ভট কাহিনীগুলোই মানুষ বেশী চর্চা করছে। এ ধরনের ইবাদত করে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতিগুলো জানা আবশ্যক।

(১) শরী‘আতের যেকোন বিধান আল্লাহ প্রদত্ত দলীল ভিত্তিক হওয়া।

শরী‘আতের সবকিছুই আল্লাহ প্রদত্ত। আর দলীল হল এর ফাউন্ডেশন। তাই দলীল ছাড়া শরী‘আত প্রমাণ করার কোন সুযোগ নেই। এখানে মানুষের তৈরি করা দলীল বিহীন মনগড়া কোন আমলের মূল্য নেই। সে জন্য প্রমাণহীন কোন আমল পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিত্যাগ করতে হবে। কত বড় ইমাম, বিদ্বান, প-িত, ফক্বীহ বলেছেন বা করেছেন, সেটা দেখার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলগণকে দলীল-প্রমাণসহই প্রেরণ করেছেন। তাই যারা শরী‘আতের দলীল দ্বারা সিদ্ধান্ত পেশ করেন, আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে বলেছেন, فَسۡـَٔلُوۡۤا اَہۡلَ الذِّکۡرِ  اِنۡ کُنۡتُمۡ  لَا  تَعۡلَمُوۡنَ ‘সুতরাং তোমরা যদি না জান, তবে যারা কুরআন-সুন্নাহতে অভিজ্ঞ তাদেরকে জিজ্ঞেস কর’ (সূরা নাহল ৪৩-৪৪; হিজর ৯)। আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ দিয়ে বলেন, وَ اتَّبِعۡ مَا یُوۡحٰۤی اِلَیۡکَ وَ اصۡبِرۡ  حَتّٰی یَحۡکُمَ  اللّٰہُ وَ ہُوَ خَیۡرُ الۡحٰکِمِیۡنَ ‘আপনার প্রতি যে অহী নাযিল করা হয়, আপনি তারই অনুসরণ করুন এবং আল্লাহ ফায়ছালা করা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করুন। বস্তুত তিনিই হচ্ছেন সর্বোত্তম ফায়ছালাকারী’ (ইউনুস ১০৯)। অন্য আয়াতে বলেন, وَّ اتَّبِعۡ مَا یُوۡحٰۤی اِلَیۡکَ مِنۡ رَّبِّکَ  اِنَّ اللّٰہَ  کَانَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرًا ‘আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়, আপনি তার আনুগত্য করুন। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সর্বজ্ঞাত’ (আহযাব ২)। অন্য আয়াতে বলেন, فَاسۡتَمۡسِکۡ بِالَّذِیۡۤ  اُوۡحِیَ   اِلَیۡکَۚ اِنَّکَ عَلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ‘অতএব আপনার প্রতি যা অহী করা হয়েছে, সেটাকেই দৃঢ়ভাবে ধারণ করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সরল পথে আছেন’ (যুখরুফ ৪৩)। অন্যত্র বলেন,

وَ اَنِ احۡکُمۡ بَیۡنَہُمۡ  بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ  وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَہُمۡ وَ احۡذَرۡہُمۡ اَنۡ یَّفۡتِنُوۡکَ عَنۡۢ بَعۡضِ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ اِلَیۡکَ

‘আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী আপনি তাদের মাঝে ফায়ছালা করুন, তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন, আল্লাহ যা আপনার প্রতি নাযিল করেছেন তা থেকে তারা যেন আপনাকে বিচ্যুত করতে না পারে’ (মায়েদাহ ৪৯)। আল্লাহ তা‘আলা দাওয়াতের শর্ত হিসাবে স্বয়ং রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লক্ষ্য করে বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الرَّسُوۡلُ بَلِّغۡ  مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ  مِنۡ رَّبِّکَ  وَ  اِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَہٗ  وَ اللّٰہُ یَعۡصِمُکَ مِنَ النَّاسِ  اِنَّ اللّٰہَ  لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡکٰفِرِیۡنَ.

‘হে রাসূল! আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তা-ই পৌঁছে দিন। আর যদি তা না করেন তবে আপনি আল্লাহ্র বার্তা পৌঁছে দিলেন না বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ আপনাকে জনগণ হতে হেফাযত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না’ (মায়েদাহ ৬৭)।

উক্ত কঠোর নির্দেশের কারণেই আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা তুলে ধরেছেন এভাবে- اِنۡ  اَتَّبِعُ اِلَّا مَا یُوۡحٰۤی  اِلَیَّ وَ مَاۤ  اَنَا  اِلَّا نَذِیۡرٌ مُّبِیۡنٌ ‘আমার প্রতি যা অহী করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আর আমি প্রকাশ্য সতর্ককারী মাত্র’ (আহক্বাফ ৯)। অন্য আয়াতে এসেছে, اِنۡ  اَتَّبِعُ اِلَّا مَا یُوۡحٰۤی اِلَیَّ  اِنِّیۡۤ  اَخَافُ اِنۡ عَصَیۡتُ رَبِّیۡ  عَذَابَ  یَوۡمٍ  عَظِیۡمٍ  ‘আমার প্রতি যা অহী করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আমি যদি আমার রবের অবাধ্যতা করি, তবে কঠিন দিনের শাস্তির আশঙ্কা করি’ (ইউনুস ১৫)। অন্যত্র বলেন, اِنۡ  اَتَّبِعُ  اِلَّا مَا یُوۡحٰۤی  اِلَیَّ  قُلۡ ہَلۡ  یَسۡتَوِی الۡاَعۡمٰی وَ الۡبَصِیۡرُ اَفَلَا  تَتَفَکَّرُوۡنَ  ‘আমার প্রতি যা অহী করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। বলে দিন, অন্ধ আর চক্ষুমান কি সমান হয়। তোমরা কি চিন্তা করবে না? (আন‘আম ৫০)। অন্য আয়াতে বলেন, قُلۡ ہٰذِہٖ سَبِیۡلِیۡۤ  اَدۡعُوۡۤا  اِلَی اللّٰہِ  عَلٰی بَصِیۡرَۃٍ  اَنَا  وَ مَنِ اتَّبَعَنِیۡ وَ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ  وَ مَاۤ   اَنَا مِنَ  الۡمُشۡرِکِیۡنَ ‘আপনি বলুন! এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহ্র দিকে, জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ মহা পবিত্র এবং আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১০৮)। বিদায় হজ্জের ভাষণে মানব জাতিকে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন,

 يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّىْ قَدْ تَرَكْتُ فِيْكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوْا أَبَدًا  كِتَابَ اللهِ وَ سُنَّةَ نَبِيِّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

‘হে মানবম-লী! আমি তোমাদের মধ্যে যা ছেড়ে যাচ্ছি, তা যদি তোমরা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাক, তবে কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হল- আল্লাহ্র কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাত’।[১]    

এ জন্যই আল্লাহ তাঁর রাসূল সম্পর্কে বলছেন,  وَ مَا یَنۡطِقُ عَنِ  الۡہَوٰی-اِنۡ  ہُوَ   اِلَّا  وَحۡیٌ   یُّوۡحٰی  ‘তিনি (মুহাম্মাদ) প্রবৃত্তির তাড়নায় কোন কথা বলেন না। যতক্ষণ না তাঁর প্রতি অহী করা হয়’ (নাজম ৩-৪)। বরং তিনি যদি নিজের পক্ষ থেকে কোন বিধান রচনা করতেন, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে হত্যা করতেন বলেও হুঁশিয়ার করেছেন। আল্লাহ বলেন,

وَ لَوۡ تَقَوَّلَ عَلَیۡنَا بَعۡضَ الۡاَقَاوِیۡلِ- لَاَخَذۡنَا مِنۡہُ  بِالۡیَمِیۡنِ- ثُمَّ  لَقَطَعۡنَا مِنۡہُ  الۡوَتِیۡنَ.

‘তিনি যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করতেন, তবে আমি তাঁর ডান হাত ধরে নিতাম। অতঃপর তাঁর গলা কেটে ফেলতাম’ (হাক্কাহ ৪৪-৪৬)।

উক্ত কঠোর হুঁশিয়ারীর কারণে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অহী ছাড়া শারঈ বিষয়ে কোন কথা বলতেন না। অনেক সময় কথা বলার সাথে সাথে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে দলীলও পেশ করতেন।[২] তাছাড়া কেউ প্রশ্ন করলে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলতেন। তারপর অহী নাযিল হলে তিনি উত্তর দিতেন।[৩] কারণ আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অহী নাযিল না হওয়া পর্যন্ত তার নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলার অধিকার ছিল না। বরং তিনি তাঁর উম্মতকে শরী‘আত হিসাবে যা কিছু দিয়েছেন, তার সবই আল্লাহ্র পক্ষ থেকে শিখানো অভ্রান্ত বিধান (ইউসুফ ৬৮; বাক্বারাহ ২৮২)। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ পোষণ করা যাবে না। নি¤েœর হাদীছগুলো থেকে সেটাই স্পষ্ট বুঝা যায়। জনৈকা মহিলা এসে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল,

ذَهَبَ الرِّجَالُ بِحَدِيثِكَ فَاجْعَلْ لَنَا مِنْ نَفْسِكَ يَوْمًا نَأْتِيكَ فِيهِ تُعَلِّمُنَا مِمَّا عَلَّمَكَ اللَّهُ فَقَالَ اجْتَمِعْنَ فِى يَوْمِ كَذَا وَكَذَا فِى مَكَانِ كَذَا وَكَذَا فَاجْتَمَعْنَ فَأَتَاهُنَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَّمَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَهُ اللَّهُ.

শুধু পুরুষ লোকেরাই আপনার হাদীছ নিয়ে যাচ্ছে। তাই আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করুন, সেই দিন আমরা আসব। আর আপনি আমাদেরকে তা-ই শিক্ষা দিবেন, যা আল্লাহ আপনাকে শিখিয়েছেন। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্রিত হবে। অতঃপর তারা একত্রিত হলে তিনি তাদের কাছে এসে তা-ই শিক্ষা দিতেন, যা আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিতেন।[৪] এ হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শিক্ষক হলেন একমাত্র আল্লাহ। অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا تَوَضَّأَ أَخَذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ فَأَدْخَلَهُ تَحْتَ حَنَكِهِ فَخَلَّلَ بِهِ لِحْيَتَهُ وَقَالَ هَكَذَا أَمَرَنِىْ رَبِّىْ عَزَّ وَجَلَّ.

‘আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ওযূ করতেন, তখন হাতে এক অঞ্জলি পানি নিতেন এবং থুতনির নীচে দিতেন। অতঃপর এর দ্বারা তাঁর দাড়ি খিলাল করতেন। তিনি বলতেন, এভাবেই আমার আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দান করেছেন’।[৫]

রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূর সময় দাড়ির নীচে এক অঞ্জলি পানি নিজ ইচ্ছায় দিবেন এমন অধিকার তাঁর ছিল না। অনুরূপ দাওয়াত পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও যে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ থেকেই পৌঁছাতে হবে সেই নির্দেশও তিনি দিয়েছেন।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَلِّغُوْا عَنِّىْ وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوْا عَنْ بَنِىْ إِسْرَائِيْلَ وَلاَحَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘একটি আয়াত (কথা) হলেও তোমরা আমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও। আর বাণী ইসরাঈলদের সম্পর্কেও বর্ণনা কর, তাতে সমস্যা নেই। তবে কেউ যদি আমার উপর ইচ্ছাকৃত মিথ্যারোপ করে, তাহলে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নেয়’।[৬]

উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে তাবলীগ করলে বা শারঈ আলোচনা করলে দলীলসহ রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উদ্ধৃতি দিয়েই পেশ করতে হবে। কোন ব্যক্তি নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত কথা বলতে পারবে না।

ছাহাবায়ে কেরামও সর্বদা দলীল তলব করতেন, কেউ কিছু বললে দলীল পেশ করতে বলতেন। এক্ষেত্রে তাঁরা এমন মূলনীতি অবলম্বন করেছিলেন, যা সকলের জন্য পালন করা ছিল দুঃসাধ্য। ফলে হাদীছ জানা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বর্ণনা করতে ভয় পেতেন। কোন ছাহাবী অপরিচিত হাদীছ শুনলে তাৎক্ষণিক সেই হাদীছের পক্ষে সাক্ষী উপস্থিত করার জন্য বলতেন এবং অন্যথা কঠোর শাস্তির কথা বলে দিতেন। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে-

عن بُسْرِ بْنِ سَعِيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا سَعِيْدِ الْخُدْرِىَّ يَقُوْلُ كُنْتُ جَالِسًا بِالْمَدِيْنَةِ فِىْ مَجْلِسِ الْأَنْصَارِ فَأَتَانَا أَبُوْ مُوْسَى فَزِعًا أَوْمَذْعُوْرًا قُلْنَا مَاشَأْنُكَ؟ قَالَ إِنَّ عُمَرَ أَرْسَلَ إِلَىَّ أَنْ آتِيَهُ فَأَتَيْتُ بَابَهُ فَسَلَّمْتُ ثَلاَثًا فَلَمْ يَرُدَّ عَلَىَّ فَرَجَعْتُ فَقَالَ مَامَنَعَكَ أَنْ تَأْتِيَنَا؟ فَقُلْتُ إِنِّىْ أتَيْتُكَ فَسَلَّمْتُ عَلَى بَابِكَ ثَلاَثًا فَلَمْ تَرُدُّوا عَلَىَّ فَرَجَعْتُ وَقَدْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اسْتَأذَنَ أَحَدُكُمْ ثَلاَثَا فَلَمْ يُوْذَنْ لَهُ فَلْيَرْجِعْ فَقَالَ عُمَرُ أَقِمْ عَلَيْهِ الْبَيِّنَةَ وَإِلاَّ أُوْجِعَنَّكَ فَقَالَ أَبَىُّ بْنُ كَعْبٍ لاَيَقُوْمُ مَعَهُ إِلاَّ أَصْغَرُ الْقَوْمِ قَالَ أَبُوْ سَعِيْدٍ قُلْتُ أَنَا أَصْغَرُ الْقَوْمِ قَالَ فَاذْهَبْ بِهِ.

‘বুসর ইবনু সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি একদা মদীনায় আনছারীদের মজলিসে বসে ছিলাম। হঠাৎ আবু মূসা আমাদের নিকট আসলেন আতঙ্কিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। আমরা বললাম, তোমার কী হয়েছে? তিনি বললেন, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আমি তাঁর বাড়ির দরজায় গিয়ে তিনবার সালাম দিলাম, কিন্তু তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন না। তাই আমি ফিরে আসি। পরে তিনি আমাকে বললেন, আমার নিকটে আসতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? আমি বললাম, আপনার নিকট আমি গিয়েছিলাম এবং আপনার দরজার গিয়ে তিনবার সালাম দিয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা আমার সালামের উত্তর দেননি। তাই আমি ফিরে এসেছি। আর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি তিনবার অনুমতি চায় আর অনুমতি যদি না দেয়, তাহলে সে যেন ফিরে আসে’। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, তুমি তাহলে এর পক্ষে দলীল পেশ কর, অন্যথা তোমাকে কঠোর শাস্তি দেব বা শাস্তি দিয়ে হত্যা করব। (ঘটনা শুনার পর) উবাই ইবনু কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, এই মজলিসের মধ্যে যে সবার ছোট সে তার পক্ষে সাক্ষী হবে। তখন আবু সাঈদ খুদরী বললেন, আমিই সবার ছোট। তিনি বললেন, তাহলে তুমি তার সাথে যাও’।[৭]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছিলেন,  فَوَ اللهِ لَأُوْجِعَنَّ ظَهْرَكَ وَبَطْنَكَ أَوْلَتَأْتِيَنَّ بِمَنْ شَهِدَ لَكَ عَلَى هَذَا ‘আল্লাহ্র কসম! অবশ্যই অবশ্যই তোমার পিঠ ও পেট চিরে তোমাকে কঠোর শাস্তি দিব অথবা তোমার এই কথার পক্ষে কাউকে সাক্ষী হিসাবে নিয়ে আসবে’।[৮] অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَاللهِ لَتُقِيمَنَّ عَلَيْهِ بِبَيِّنَةٍ ‘আল্লাহ্র কসম দিয়ে বলছি, তুমি এর পক্ষে দলীল পেশ করবে’।[৯]

অন্যত্র এসেছে, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার প্রতি এতই কঠোরতা আরোপ করেছিলেন যে, উবাই ইবনু কা‘ব তাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, فَلاَ تَكُونَنَّ عَذَابًا عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘আপনি কখনো রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীগণকে এরূপ শাস্তির ভয় দেখাবেন না’। তখন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) উত্তরে বলেছিলেন, ‘সুবহা-নাল্লাহ! আসলে আমি যখন কোন কিছু শুনি তখন তার প্রতি আস্থাশীল হতে পসন্দ করি’।[১০] মালেক মুওয়াত্ত্বার বর্ণনায় এসেছে, সাক্ষী হাযির করা হলে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আবু মূসাকে বলেছিলেন, أَمَا إِنِّي لَمْ أَتَّهِمْكَ وَلَكِنْ خَشِيتُ أَنْ يَتَقَوَّلَ النَّاسُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে অভিযুক্ত করতে চাইনি; বরং আমি আশংকা করছিলাম যে, লোকেরা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামে কোন মিথ্যা কথা রচনা করছে কি-না’।[১১]

ইবনু আব্দিল বার্র (৩৬৮-৪৬৩ হি.) বলেন, ‘এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, ইসলামের অতি নিকটবর্তী সময়ে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগেও তিনি সাক্ষী হাযির করতে বলেছেন। সুতরাং তিনি আশঙ্কা করছিলেন যে, তাদের মধ্য থেকে কেউ উৎসাহ ও ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামে মিথ্যা কথা রচনা করছে কি-না। তাই  সাক্ষী  তলব করেছেন ঐ ব্যক্তির নিকটে, যে ঐ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। মূলত তিনি তাদেরকে জানাতে চেয়েছেন যে, যে ব্যক্তি এরূপ কিছু বলবে তাকে প্রত্যাখ্যান করা হবে, যতক্ষণ সে তার পক্ষে সাক্ষী হাযির না করবে’।[১২]  অনুরূপ আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সম্পর্কেও বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَسْمَاءَ بْنِ الْحَكَمِ الْفَزَارِىِّ قَالَ سَمِعْتُ عَلِيَّا يَقُوْلُ إنِّىْ كُنْتُ رَجُلاً إِذَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُوْلِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيْثًا نَفَعَنِىَ اللهُ مِنْهُ بِمَا شَاءَ أَنْ يَّنْفَعَنِىْ وإذَا حَدَّثَنِىْ رَجُلٌ مِنْ أَصَحَابِهِ اِسْتَحْلَفْتُهُ فَإِذَا حَلَفَ لِىْ صَدَّقْتُهُ.

আসমা ইবনু হাকাম আল-ফাযারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘আমি এমন একজন মানুষ, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যখন কোন হাদীছ শুনি তখন আল্লাহ আমাকে তার থেকে উপকার দেন, তিনি আমাকে যতটুকু উপকার দিতে চান। আর কোন ব্যক্তি যখন তার সাথীদের থেকে আমার নিকট হাদীছ বর্ণনা করেন, তখন আমি তাকে শপথ করতে বলি। যখন তিনি আমার নিকট শপথ করেন, তখন সেই হাদীছকে আমি বিশ্বাস করি’।[১৩]

ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অন্য এক বক্তব্যে বলেন, اِتَّقُوا الرَّأْيَ فِيْ دِيْنِكُمْ ‘তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে রায়কে (দলীল বিহীন সিদ্ধান্ত) ভয় কর’।[১৪] খ্যাতনাম তাবেঈ ইমাম শা‘বী (২২-১০৪ হি.) বলেন,

مَا حَدَّثُوْكَ عَنْ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ فَخُذْ بِهِ وَمَا قَالُوْا فِيْهِ بِرَأْيِهِمْ فَبُلْ عَلَيْهِ.

‘তোমার কাছে তারা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীদের থেকে যা বর্ণনা করে, সেটাকে তুমি আঁকড়ে ধর। আর তারা যদি তাদের কথায় রায় (দলীল ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত) পেশ করে, তাহলে তার উপর পেশাব কর’।[১৫]

অতএব দলীল নেই এমন কথা প্রচার করা, আমল করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইসলামের ইতিহাসে প্রসিদ্ধ চার ইমামসহ মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরামও দলীলের ভিত্তিতেই মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন। ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হি.) বলেন, لَايَحِلُّ لِأَحَدٍ أَنْ يَّأْخُذَ بِقَوْلِنَا مَا لَمْ يَعْلَمْ مِنْ أَيْنَ أَخَذْنَاهُ ‘ঐ ব্যক্তির জন্য আমাদের কোন বক্তব্য গ্রহণ করা হালাল নয়, যে জানে না- আমরা সেটা কোথায় থেকে গ্রহণ করেছি’।[১৬] উক্ত বক্তব্য উল্লেখ করে শায়খ আলবানী (১৯১৪-১৯৯৯ খ্রি./১৩৩৩-১৪২০ হি.) বলেন,

فَإذَا كَانَ هَذَا قَوْلُهُمْ فِيْمَنْ لَمْ يَعْلَمْ دَلِيْلَهُمْ فَلَيْتَ شَعْرِىْ! مَاذَا يَقُوْلُوْنَ فِيْمَنْ عَلِمَ أَنَّ الدَّلِيْلَ خِلاَفُ قَوْلِهِمْ ثُمَّ أَفْتَى بِخِلاَفِ الدَّلِيْلِ؟ فَتَأَمَّلَ فِىْ هَذِهِ الْكَلِمَةِ فَإِنَّهَا وَحْدُهَا كَافِيَةٌ فِىْ تَحْطِيْمِ التَّقْلِيْدِ الْأَعْمَى.

‘যে ব্যক্তি ইমামদের কথার দলীল সম্পর্কে জানে না, তার ব্যাপারে ইমাদের বক্তব্য যদি এমন হয়, তবে আমার বুঝে আসে না, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তারা কি বলবেন, যে ব্যক্তি পরোপুরি অবগত যে, দলীল ইমামদের কথার বিরোধী, অতঃপর ঐ দলীল বিরোধী বক্তব্য দ্বারাই তিনি ফৎওয়া দেন? তাই তুমি উক্ত বাক্যটি গভীরভাবে অনুধাবন কর যে, নিশ্চয়ই এই একটি বাক্যই অন্ধ তাক্বলীদের ভিত গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম’।[১৭]

মূলকথা হল, শারঈ বিষয়ে দলীল ছাড়া কথা বলা, লেখা, আলোচনা করা সবই নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম যেভাবে দলীলের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, সেভাবে আমরাও যদি তাঁদের অনুসরণ করি, তাহলে জান্নাতের পথে পরিচালিত হতে পারব ইনশাআল্লাহ।

দলীল তালাশ না করার কারণেই বিদ‘আতের ছড়াছড়ি :

শরী‘আত বা সুন্নাত বিলুপ্তির মৌলিক কারণ হল বিদ‘আতের কুপ্রভাব। আর দলীল ভিত্তিক আলোচনা, খুৎবা, লেখালেখি, দারস না দেয়ার কারণেই বিদ‘আতের সৃষ্টি হয়েছে। সে জন্য রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক খুৎবাতেই বিদ‘আতের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করতেন। তিনি বলতেন, সর্বোত্তম হাদীছ হল, আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ হল, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ। আর সর্বনিকৃষ্ট কাজ হল বিদ‘আত এবং বিদ‘আতের পরিণাম জাহান্নাম।[১৮] কিন্তু পরবর্তী যুগের লোকেরা এই হুঁশিয়ারীকে মূল্যায়ন করেনি। ফলে কুরআন-সুন্নাহ্র পথ থেকে সিটকে পড়েছে। তাই আজ অধিকাংশ মানুষই দিকভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট। আর এই ভ্রষ্টতার কাজে সবচেয়ে বেশী ইন্ধন যুগিয়েছে একশ্রেণীর মিথ্যুক ও বিদ‘আতী আলেম, খত্বীব ও বক্তা।[১৯] তারা দুনিয়াবী পেটপূজার ব্যবসাকে জমজমাট করার জন্য স্বল্প মূল্যে শরী‘আত বিক্রি করেছে এবং শরী‘আতের নামে অসংখ্য জাল হাদীছ তৈরি করেছে ও বিদ‘আতী আমলের জন্ম দিয়েছে।  তারা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করেছে এবং হক্বকে গোপন করেছে (বাক্বারাহ ৭৯, ১৭৪ ও ৪১-৪২)। সে জন্য ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এই শ্রেণীর বক্তাদেরকে ঘৃণা করতেন।

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَطَبَ رَجُلٌ عِنْدَ عُمَرَ فَأَكْثَرَ الْكَلَامَ فَقَالَ عُمَرُ إِنَّ كَثْرَةَ الْكَلَامِ فِي الْخُطَبِ مِنْ شَقَاشِقِ الشَّيْطَانِ.

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, জনৈক ব্যক্তি একদা ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সামনে অতিরঞ্জন করে বক্তব্য পেশ করল। তখন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)বললেন, নিশ্চয় বক্তাদের অতিরিক্ত কথায় শয়তানের বমির আতশবাজি রয়েছে’।[২০]     

 (ইনশাআল্লাহ চলবে)



[১]. মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল্লাহ আবু আব্দিল্লাহ আল-হাকিম আন-নায়সাপুরী, আল-মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন, ১ম খ- (রিয়াদ : দারুল মায়মান, ১৪৩৫ হি./২০১৪ খৃ.), পৃ. ২২২, হা/৩২২, ‘ইলম’ অধ্যায়।
[২]. বুখারী ৭৪৪০; আহমাদ হা/৪১৪২; আহমাদ ইবনু শু‘আইব আবু আব্দির রহমান আন-নাসাঈ, সুনানুন নাসাঈ আল-কুবরা (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪১১/১৯৯১), হা/১১১৭৪, ৬/৩৪৩ পৃঃ, সনদ হাসান; ছহীহ বুখারী হা/৬০০১; ইবনু মাজাহ হা/১৭০৮; বুখারী হা/৬৭৮৪।
[৩]. ছহীহ বুখারী হা/৬৪২৭; মিশকাত হা/৫১৬২; বুখারী হা/১৭৮৯; মুসলিম হা/১১৮০; ছহীহ বুখারী হা/১৪৬৫, ১ম খ-, পৃঃ ১৯৮, ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৬।
[৪]. ছহীহ বুখারী হা/৭৩১০। ইমাম বুখারী অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এভাবে-باب تَعْلِيمِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أُمَّتَهُ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ مِمَّا عَلَّمَهُ اللَّهُ لَيْسَ بِرَأْىٍ وَلاَ تَمْثِيلٍ
[৫]. আবুদাঊদ হা/১৪৫, ২২৬ সনদ ছহীহ।             
[৬]. ছহীহ বুখারী হা/৩৪৬১; ১/৪৯১ পৃঃ, ‘নবীদের ঘটনাবলী’ অধ্যায়; মিশকাত হা/১৯৮, পৃঃ ৩২, ‘ইলম’ অধ্যায়।  
[৭]. ছহীহ মুসলিম হা/২১৫৩, ২/২১০, ‘আদব’ অধ্যায়, ‘অনুমতি’ অনুচ্ছেদ-৭; ছহীহ বুখারী হা/৬২৪৫, ১/৯২৩।
[৮]. ছহীহ মুসলিম হা/২১৫৩।   
[৯]. ছহীহ বুখারী হা/৬২৪৫।    
[১০]. ছহীহ মুসলিম হা/২১৫৩ (৫৭৫৯)। উল্লেখ্য, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সে সময় বাজারে যাওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাই আবু মূসার দিকে মনোযোগ দিতে পারেননি -মুসলিম হা/২১৫৩ (৫৭৫৭); বুখারী হা/২০৬২- فَقَالَ عُمَرُ أَخَفِىَ عَلَىَّ مِنْ أَمْرِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَلْهَانِى الصَّفْقُ بِالأَسْوَاق।
[১১]. ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হিঃ), আল-মুওয়াত্ত্বা (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), ২/৯৬৪ পৃঃ, হা/১৫২০, ‘অনুমতি’ অধ্যায়; ইবনু হাজার আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২ হিঃ), ফাৎহুল বারী (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৮৯/১৪১০), ১১/৩৫ পৃঃ, হা/৬২৪৫-এর আলোচনা দ্রঃ, ‘অনুমতি’ অধ্যায়।
[১২]. ফাৎহুল বারী ১১/৩২ পৃঃ।  
[১৩]. ছহীহ তিরমিযী হা/৩০০৬, ২/১২৯-৩০ পৃঃ, সনদ হাসান, ‘তাফসীর’ অধ্যায়, ‘সূরা আলে ইমরান’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৫২১, ১/২১৩ পৃঃ ও হা/৪০৬, ১/৯২ পৃঃ।  
[১৪]. বায়হাক্বী (৩৮৪-৪৫৮ হিঃ), আল-মাদখাল হা/২১০; সনদ হাসান, ঈক্বাযু হিমাম, পৃঃ ১১৭।
[১৫]. আব্দুর রাযযাক (১২৬-২১১ হিঃ), আল-মুছান্নাফ হা/২০৪৭৬; আবু নু‘আইম আল-আছবাহানী (৩৩৭-৪৩০হিঃ/৯৪৮-১০৩৮ খৃঃ), হিলইয়াতুল আওলিয়া ওয়া ত্বাবাক্বাতিল আছফিইয়া ৪/৩১৯ পৃঃ; ইবনু আব্দিল বার্র, জামিউ বায়ানিল ইলম ওয়া ফাযলিহি হা/১৪৩৮ ও ১০৬৬; সনদ ছহীহ, তাহক্বীক্ব : ঈক্বাযু হিমাম, পৃঃ ১২৪।
[১৬] . ইমাম ছালেহ বিন মুহাম্মাদ আল-ফুল্লানী (১১৬৬-১২১৮ হিঃ), ঈক্বাযু হিমাম উলিল আবছার (ক্বাত্বার : দারুল ইমাম আল-বুখারী, ২০১৬), পৃঃ ২১৪ পৃঃ; মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ছাঃ) মিনাত তাকবীর ইলাত তাসলীম কাআন্নাকা তারাহু (রিয়ায : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৯৯১/১৪১১), পৃঃ ৪৬। ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হিঃ), ই‘লামুল মুআক্কেঈন ২/৩০৯- لا يحل لأحد أن يقول بقولنا حتى يعلم من أين قلناه; ইবনু আবেদীন, হাশিয়া বাহরুর রায়েক্ব ৬ষ্ঠ খ-, পৃঃ ২৯৩ (শব্দে কিছু পরিবর্তন রয়েছে)।
[১৭]. ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ৪৭।
[১৮]. মুসলিম হা/৮৬৭; নাসাঈ হা/১৫৭৮।
[১৯]. বুখারী হা/৭০৮৪; মুসলিম হা/১৮৪৭; মিশকাত হা/৫৩৮২।  
[২০]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৮৭৬, সনদ ছহীহ।




পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১০ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
শিক্ষাদানে নববী পদ্ধতি ও কৌশল - হাসিবুর রহমান বুখারী
বিদ‘আত পরিচিতি (১২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মসজিদ: ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (১৩তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন - মাইনুল ইসলাম মঈন
রামাযান : কুরআন নাযিলের মাস - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায় (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
রামাযানের শেষ দশকের গুরুত্ব ও করণীয় - মাইনুল ইসলাম মঈন
ফাযায়েলে কুরআন (৭ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ