রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

ইসলামে ব্যবসায়িক মূলনীতি

-ছাদীক মাহমুদ*


ভূমিকা

পৃথিবীতে জীবন-যাপনের জন্য প্রতিটি মানুষকে জীবিকার অম্বেষণ করতে হয়। সে জীবিকা অর্জন অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশিত পদ্ধতিতে হওয়া যরূরী। নচেৎ সে ব্যবসা-বাণিজ্য ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে ব্যবসা করতেন এবং খুলাফায়ে রাশেদীন সহ অনেক ছাহাবীও ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা ব্যবসাকে জীবিকা অর্জনের পাশাপাশি ইবাদতের মাধ্যমও মনে করতেন।

ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রেরণা

ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রেরণা ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ اَحَلَّ اللّٰہُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا

‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সূদকে হারাম করেছেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৭৫)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,

اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً حَاضِرَۃً تُدِیۡرُوۡنَہَا بَیۡنَکُمۡ

‘কিন্তু তোমরা পরস্পর যে ব্যবসায় নগদ আদান-প্রদান কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৮২)। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ

‘ছালাত শেষ হওয়ার পর তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং মহান আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করো’ (সূরা আল-জুমু‘আহ : ১০)। এখানে ‘অনুগ্রহ’-এর অর্থ জীবিকা ও সম্পদ।[১]
ক্বাতাদা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ছাহাবীগণ ব্যবসা করতেন এবং যখন তাদের সামনে আল্লাহর কোন হক্ব এসে উপস্থিত হত, তখন তাদেরকে ব্যবসা ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত রাখত না, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর সমীপে তা আদায় করে দিতেন।[২]
রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! কোন্ প্রকার উপার্জন উত্তম? তিনি বললেন,

عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِهِ وَكُلُّ بَيْعٍ مَبْرُوْرٍ

‘মানুষের দুই হাতের কাজ ও হালাল ব্যবসায় উপার্জন’।[৩]

ব্যবসায়ে ইসলামী মূলনীতি

ইসলামে হালাল ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মূলগত ও পদ্ধতিগত দু’টি মৌলিক মূলনীতি রয়েছে।

(ক) মূলগত মূলনীতি

ব্যবসায়িক পণ্য মূলগত বা শর্তগতভাবে বৈধ ও পবিত্র হতে হবে। কেননা ইসলাম যাবতীয় কল্যাণকর ও হিতকর বস্তুকে মানবজাতির জন্য হালাল করেছে। মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সম্বোধন করে হালাল ও পবিত্র যা রয়েছে, তা থেকে আহার করতে বলেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ اِنَّہٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ

‘হে মানবসকল! পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র যা রয়েছে, তা থেকে আহার কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬৮)।
উপরিউক্ত আয়াতের আলোকে বলা যায় যে, শুধু হালাল হলেই চলবে না; বরং তা অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। এখানে ‘তাইয়্যিব’ বা পবিত্র বলতে ভেজালমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এমন উপায় অবলম্বন করতে হবে, যা মূলগত ভাবেই নির্ভেজাল, খাঁটি ও পবিত্র। অবশ্য অধিকাংশ মুফাসসির আয়াতে ‘হালাল’ শব্দ দ্বারা মূলগত বৈধতার এবং ‘তাইয়্যিব’ দ্বারা পদ্ধতিগত বৈধতার অর্থ গ্রহণ করেছেন।[৪] আর এ দু’শব্দ দিয়ে দু’টি মূলনীতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এছাড়াও শর্তগতভাবে ব্যবসায়িক মূলনীতি হল।-

১. ব্যবসায়ী যোগ্য হওয়া

চুক্তি সম্পাদনকারীর মধ্যে যোগ্যতা থাকতে হবে। অর্থাৎ তাকে জ্ঞানী, প্রাপ্তবয়ষ্ক কিংবা বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন হতে হবে। সে অবুঝ, অপ্রাপ্তবয়ষ্ক, পাগল হতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির ওপর শরী‘আতের বিধান আরোপিত হবে না, পাগল, ঘুমন্ত ব্যক্তি ও অপ্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তি’।[৫]

২. ব্যবসায়ের পুঁজি হালাল উপায়ে অর্জিত হওয়া

প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য হালাল রূযী সন্ধান করা অবশ্য কর্তব্য। কেননা হালাল সম্পদ বা খাদ্যই হল ইবাদত কবুলের শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম শর্ত। হালাল উপায়ে অর্জিত ও শরী‘আত অনুমোদিত সম্পদ বা খাদ্য গ্রহণ ছাড়া আল্লাহর দরবারে কোন ইবাদতই কবুল হবে না। হালাল খাদ্য ভক্ষণ করা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মানবম-লী! পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

كُلُّ جَسَدٍ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ فَالنَّارُ أَوْلَى بِهِ

‘হারাম খাদ্যে বর্ধিত প্রতিটি গোশতপিণ্ডই জাহান্নামের যোগ্য’।[৬]

৩. উভয়ের সম্মতি থাকা

ব্যবসায়িক কারবারে উভয় পক্ষের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি অবশ্যই থাকতে হবে। জবরদস্তি সম্মতির কোন মূল্য নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ

‘হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ বাতিল পন্থায় খেয়ো না। কিন্তু তা ব্যবসায়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্মতিতে হলে (কোন আপত্তি নেই)’ (সূরা আন-নিসা : ২৯)।

৪. পারস্পরিক সহযোগিতা

ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈধতা পারস্পরিক সহযোগিতার উপর প্রতিষ্ঠিত। আর এজন্য ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সহযোগিতা অবশ্যই থাকতে হবে। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে বলেন, ‘পুণ্য ও আল্লাহভীরুতার পথে একে অপরকে সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের পথে কখনো কারো সহযোগিতা কর না’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ২)।

(খ) পদ্ধতিগত মূলনীতি

ব্যবসার ক্ষেত্রে গ্রহণীয় উপায় ও মাধ্যমটি অবশ্যই বৈধ পন্থায় হওয়া আবশ্যক। কেননা যাবতীয় অবৈধ উপায় ও পন্থায় অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা ইসলামী শরী‘আতে নিষিদ্ধ। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কিন্তু তোমাদের পরস্পর সম্মত হয়ে ব্যবসা করা বৈধ এবং একে অপরকে হত্যা করিও না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমালংঘন করে অন্যায়ভাবে তা করবে, তাকে আমি অগ্নিতে দগ্ধ করব, আর এটা করা আল্লাহর পক্ষে সহজ’ (সূরা আন-নিসা : ২৯)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অবৈধ পন্থায় গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকগণের নিকট পেশ কর না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৮)। উপরিউক্ত আয়াতদ্বয় দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, ব্যবসার পদ্ধতি ও পন্থা অবশ্যই বৈধ হতে হবে। অন্যথা কঠোর শাস্তির ঘোষণা রয়েছে। অতএব প্রত্যেক মুসলিমের একান্ত উচিৎ ব্যবসার ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত দু’টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা।
ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও পারস্পরিক কায়কারবারের বৈধতা ও সুষ্ঠুতা নিম্নলিখিত নীতিমালার উপর নির্ভর করে-

১. ব্যবসা হবে সম্পূর্ণরূপে সূদ-ঘুষমুক্ত

সম্পূর্ণভাবে সূদ-ঘুষমুক্ত ব্যবসা ইসলামে ব্যবসায়িক মূলনীতির অন্যতম প্রধান নীতি। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সূদকে হারাম ঘোষণা করেছেন। সূদ একটি অতি প্রাচীন সমস্যা। ইসলামী সমাজে এটি একটি অমার্জনীয় অপরাধ এবং মারাত্মক ও ধংসাত্মক শোষণের কৌশল। প্রচলিত অর্থে সূদ হচ্ছে সেই বাড়তি অর্থ, যা ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে আদায় করে থাকে। অনুরূপভাবে ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি। সমাজের ক্ষমতাহীন মানুষরা তার হৃত অধিকার কিংবা অন্যের অধিকারকে করায়ত্ত করার লক্ষ্যে দুর্নীতিপরায়ণ দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে যে অবৈধ অর্থ কিংবা পণ্যসামগ্রী পর্দার অন্তরালে প্রদান করে তাই ঘুষ কিংবা উৎকোচ নামে পরিচিত।
সূদ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘যারা সূদ খায় তারা সেই ব্যক্তির মত দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করেই পাগল করে দেয়। এটা এজন্য যে, তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় তো সূদের অনুরূপ। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সূদকে হারাম করেছেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৭৫)। ঘুষ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উৎকোচ দিও না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূদ গ্রহীতা, সূদদাতা, সূদের লেখক ও তার সাক্ষীদ্বয়কে লা‘নত অর্থাৎ অভিসম্পাত করেছেন। তিনি বলেন, তারা সবাই সমান অপরাধী।[৭] ঘুষ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘ঘুষ গ্রহণকারী এবং ঘুষ দানকারী উভয়ের ওপরই আল্লাহর লা‘নত’।[৮]

২. মাপে কম না দেয়া ও ওযনে বেশী না নেয়া

ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামে ব্যবসায়িক মূলনীতির অন্যতম এটি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা মাপ ও ওযন পূর্ণ করে দাও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে। আমরা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দেই না’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৫২)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘তোমরা মেপে দেয়ার সময় মাপ পূর্ণ করে দাও এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওযন কর। এটাই উত্তম ও পরিণামের দিক দিয়ে শুভ’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৫)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘তোমরা যথার্থ ওযন প্রতিষ্ঠা কর এবং ওযনে কম দিয়ো না’ (সূরা আর-রহমান : ৯)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম করে। যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয়। আর যখন লোকদেরকে মেপে দেয় কিংবা ওযন করে দেয়, তখন কম দেয়’ (সূরা আল-মুত্বাফফিফীন : ১-৩)।

শু‘আইব (আলাইহিস সালাম)-এর সম্প্রদায় মাপে কম-বেশী করত। তাদের সতর্ক করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা শু‘আইব (আলাইহিস সালাম)-কে প্রেরণ করেছেন। তিনি স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদের এ ঘৃণ্য কাজ পরিহার করার কথা বলতেন। তিনি এ কথা বলে উপদেশ দিতেন যে, ‘তোমরা মাপ পূর্ণ করবে ও দাঁড়িপাল্লায় ওযন করবে এবং মানুষকে তাদের বস্তু কম দিয়ো না, আর পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে সীমা অতিক্রম কর না’ (সূরা হূদ : ৮৫)।

৩. প্রতারণার আশ্রয় না নেয়া

রাসূূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধোঁকাবাজী বা প্রতারণার মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।[৯] ব্যবসা একটি ইবাদত এবং জীবিকা অর্জনের সর্বোত্তম পেশা। হালাল ব্যবসার ক্ষেত্রে ধোঁকাবাজি বিরাট প্রতিবন্ধক। অনেকে ব্যবসায় ক্রেতার সাথে ধোঁকাবাজি বা মারাত্মক প্রতারণা করে থাকে, যা আদৌ উচিত নয়। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, ‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বিক্রয়ের জন্য স্তুপীকৃত) খাদ্যদ্রব্যের এক স্তুপের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় তার ভেতর হাত ঢুকালেন। অতঃপর তাঁর আঙ্গুল ভিজে গেল। তিনি খাদ্যের মালিককে বললেন, একি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! বৃষ্টির পানিতে এগুলো ভিজে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ভিজাগুলোকে খাদ্যের উপরিভাগে কেন রাখলে না? যাতে লোকেরা তা দেখতে পায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি করে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই’।[১১]

কোন কর্মচারী যদি মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে মালিককে লাভবান করে এবং নিজেও বেতন-ভাতা ও প্রমোশন বিষয়ে সুযোগ নেয়, সে কর্মচারী নিজে যেমন গুনাহের ভাগী হবে, তেমনি মালিককেও গুনাহের কাজে সহায়তা করে তাকেও গুনাহের অংশীদার করবে। এক্ষেত্রে মালিক পক্ষের যদি কর্মচারীর প্রতি এরূপ প্রতারণা না করার পূর্ব হুঁশিয়ারী থাকে তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করা যায়। আর মালিক যদি কর্মচারীর অপকর্ম জেনেও না জানার ভান করে এবং তার অজান্তে প্রতারণার মাধ্যমে তাকে উচ্চহারে লাভবান করিয়ে দিক- এরকম আশা করে থাকে; তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। এক্ষেত্রে নিজের গুনাহের বোঝার সঙ্গে সঙ্গে কর্মচারীর গুনাহের বোঝাও তাকে বহন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দুনিয়ার এ জীবনে কেউ কারও দায়-দায়িত্ব নিলেও পরকালে কেউ কারও গুনাহের বোঝা বহন করবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ لَا تَکۡسِبُ کُلُّ نَفۡسٍ اِلَّا عَلَیۡہَا وَ لَا تَزِرُ وَازِرَۃٌ وِّزۡرَ اُخۡرٰی

‘যে ব্যক্তি গুনাহ করে, তা তার দায়িত্বে থাকে। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৬৪)।

৪. পণ্যের দোষ গোপন না করা

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

اَلْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا أَوْ قَالَ حَتَّى يَتَفَرَّقَا فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُوْرِكَ لَهُمَا فِى بَيْعِهِمَا وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا

‘ক্রেতা ও বিক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করে দেয়ার অধিকার রাখে যতক্ষণ না তারা পরস্পর পৃথক হয়ে যায়। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে এবং স্পষ্ট বর্ণনা দেয় তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হয়। আর যদি তারা (পণ্যের দোষ-ত্রুটি) গোপন রাখে এবং মিথ্যা বলে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত বিনষ্ট করে দেয়া হয়’।[১২] বাবস্য-বাণিজ্যের মধ্যে পণ্যের দোষ-ত্রুটি স্পষ্ট ও পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করতে হবে। কারণ ক্রয়-বিক্রয়ে সততা, বরকত বা সচ্ছলতা আনয়ন করে। আর সেক্ষেত্রে কোন দোষ গোপন করা জায়েয নয়। মিথ্যা বলে বা পণ্যের দোষ-ত্রুটি গোপন করে ব্যবসা করলে তাতে বরকত হয় না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যত্র বলেছেন,

اَلْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ وَلَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ بَاعَ مِنْ أَخِيْهِ بَيْعًا فِيْهِ عَيْبٌ إِلَّا بَيَّنَهُ لَهُ

‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। কোন মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের নিকট ত্রুটিপূর্ণ পণ্য বিক্রয় করা বৈধ নয়। তবে যদি সে তা বলে বিক্রয় করে, তবে তা বৈধ হবে’।[১৩]

৫. দালালী না করা

ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতারণামূলক দালালী হতে নিষেধ করেছেন।[১৪] অন্যত্র তিনি বলেন, ‘ক্রেতার ভান করে তোমরা পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিও না’।[১৫]

৬. কারো দরদামের উপর দরদাম না করা

অনেক সময় দেখা যায় একজন একটা বস্তুর দরদাম করছে, পাশ থেকে আরেকজন এসে বেশী দামে বস্তুটা নিয়ে যায়। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। ক্রেতা-বিক্রেতার চূড়ান্ত কথাবার্তা শেষ হওয়ার আগে অপর কেউ তার উপর দামাদামী করা ইসলামী শরী‘আতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ বিক্রেতা গ্রাহক সংখ্যা বেশি দেখে পণ্যের দাম ন্যায্য মূল্য থেকে বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে সাধারণ আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন,

وَلَا يَبِيْعُ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ

‘তোমাদের কেউ যেন এক জনের দরদামের উপর দরদাম না করে’।[১৬]

৭. অধিক মুনাফার আশায় মাল মজুদ না করা

আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ অধিক মুনাফা লাভের আশায় পণ্য মজুদ বা ষ্টক করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ এবং মানবতার প্রতি চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শনের শামিল। কিছু মানুষ খাদ্যাভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করবে, আর কিছু মানুষ নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কৃত্রিম খাদ্য সংকট সৃষ্টি করবে- এটা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম এসব অসাধুতার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। মা‘মার ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

لَا يَحْتَكِرُ إِلَّا خَاطِئٌ

‘পাপাচারী ছাড়া অন্য কেউ মজুদদারী করে না’।[১৭]
উল্লেখ্য, মজুদদারী সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ নয়। যদি মজুদদারীর কারণে বাজারে পণ্য-সংকট সৃষ্টি না হয়, অথবা সে উদ্দেশ্যে মজুদদারী করা না হয়, তবে তা জায়েয।

৮. যথাসময়ে শ্রমিকের প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করা

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

أَعْطُوا الْأَجِيْرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرْقُهُ

‘শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরী দিয়ে দাও’।[১৮]
অনেক সময় শ্রমিকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মালিকগণ উপযুক্ত মজুরী প্রদান না করে ইচ্ছামত মজুরী দেন এবং শ্রমিকদের প্রবঞ্চিত করেন ও ঠকান। শ্রমিকগণ নীরবে তা সহ্য করে থাকে। এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে। তার মধ্যে একজন হল, যে শ্রমিকের নিকট থেকে পূর্ণ শ্রম গ্রহণ করে, অথচ তার পূর্ণ মজুরী প্রদান করে না’।[১৯]

৯. অধীনস্ত কর্মচারীদের উপর যুলুম না করা

ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তাদের অধীনস্ত শ্রমিক ও কর্মচারীরা অত্যাচারিত না হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তুমি মাযলূমের দু‘আ থেকে বেঁচে থাক। কেননা মাযলূমের দু‘আ ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা নেই (অর্থাৎ কবুল হয়ে যায়)’।[২০] তিনি বলেন, ‘যুলুম ক্বিয়ামতের দিন ঘন অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে’।[২১] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যখন কর্মচারী তোমার খাবার নিয়ে আসে, তখন তাকে খাওয়ায়ে তুমি শুরু কর। অথবা তাকে সাথে বসাও বা তাকে এক লোকমা দাও’।[২২]

১০. ক্রয়-বিক্রয়ের সময় মিথ্যা শপথ না করা

আব্দুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বাজারে পণ্য আমদানী করে আল্লাহর নামে কসম খেল যে, এর এত দাম বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা কেউ বলেনি। এতে তার উদ্দেশ্য, সে যেন কোন মুসলিমকে পণ্যের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলতে পারে। এ প্রসঙ্গে আয়াত অবতীর্ণ হয়, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে, পরকালে এদের জন্য কোন অংশ নেই। আর আল্লাহ তাদের সাথে কথা বললেন না এবং ক্বিয়ামতের দিন তাদের দিকে তাকাবেন না। আর তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্যই রয়েছে মর্মন্তুদ আযাব’ (সূরা আলে ইমরান : ৭৭)।[২৩]

উল্লেখ্য যে, ব্যবসার ক্ষেত্রে সত্য শপথ থেকেও বিরত থাকা উচিত। কেননা আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, কসম করলে অধিক মাল বিক্রিতে সহায়ক হতে পারে কিন্তু তা বরকত নষ্ট করে দেয়।[২৪] অপর এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়! ব্যবসায়িক কাজে বেহুদা কথাবার্তা এবং অপ্রয়োজনীয় শপথ হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা ব্যবসার পাশাপাশি ছাদাক্বাহ করে তাকে ত্রুটিমুক্ত কর’।[২৫]

১১. অন্যের থেকে টাকা আদায়কালে উত্তম ব্যবহার করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ قُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا

‘তোমরা মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বল’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৮৩)। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যে নম্রতার সাথে ক্রয়-বিক্রয় করে ও পাওনা ফিরিয়ে চায়।[২৬]

১২. সংশয়পূর্ণ লেনদেন থেকে বিরত থাকা

ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছু বিষয় স্পষ্ট হালাল। কিছু বিষয় স্পষ্ট হারাম, যা সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। আর কিছু বিষয় আছে সংশয়পূর্ণ সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারে না যে, বিষয়টি কি হালাল না হারাম? সেক্ষেত্রে সৎ ব্যবসায়ীর দায়িত্ব সংশয়পূর্ণ বিষয় থেকে বেঁচে থাকা। ইসলামও সন্দেহ সংশয়পূর্ণ বিষয় থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ

‘যা তোমার কাছে সন্দেহযুক্ত মনে হয়, তা পরিত্যাগ করে সন্দেহমুক্ত কাজ কর’।[২৭]

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। গুনাহসমূহ আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা, যে জানোয়ার সংরক্ষিত এলাকার চার পাশে চরতে থাকে, তার ঐ সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার সম্ভবনা রয়েছে।[২৮]

১৩. ব্যবসায়ের লাভ-লোকসানে ধৈর্যশীল থাকা

ধৈর্য আর সততা, একনিষ্ঠতা আর আত্মবিশ্বাস প্রতিটি ব্যবসায়ীর জন্য একান্ত অপরিহার্য। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ধৈর্যের অশেষ গুরুত্ব বিবৃত করেছেন এবং ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান করেছেন। যেকোন ধৈর্যশীল ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার করুণা, অনুগ্রহ ও সুপথপ্রাপ্ত হয়। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اللّٰہُ یُحِبُّ الصّٰبِرِیۡنَ

‘নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালবাসেন’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৪৬)। তিনি আরো বলেন,

وَ اصۡبِرُوۡا اِنَّ اللّٰہَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ

‘তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন’ (সূরা আল-আনফাল : ৪৬)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও। যারা বিপদ-আপদে নিপতিত হলে বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৫-১৫৬)।

উপসংহার 

মনে রাখতে হবে, রিযিকের অম্বেষণে বের হয়ে ব্যবসায়-বাণিজ্যে এমনভাবে জড়িয়ে পড়া যাবে না, যে ব্যবসা আল্লাহকে ভুলতে সাহায্য করে, ইবাদত-বন্দেগীতে গাফেল করে। কেননা ইবাদত-বন্দেগী ছেড়ে কোন ব্যক্তি ব্যবসায় সফল হোক এটা ইসলামের কাম্য নয়। অতএব বলা যায়, ব্যবসার মত একটি আদর্শ পেশাকে অবশ্যই ইসলামের আলোকে পরিচালনা করতে হবে। কোন প্রকার দুর্নীতি বা প্রতারণার আশ্রয় নেয়া যাবে না। যে ব্যবসায় দুর্নীতি ও ভেজাল প্রবেশ করবে, সে ব্যবসায়ী কুরআন ও হাদীছে ঘোষিত আদর্শ ব্যবসায়ীর মর্যাদা পাবে না। মানুষ যেন ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গে জীবিকার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য করে, সে ব্যাপারে কুরআনে স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে। তবে এই জীবিকা অর্জন হতে হবে হালাল পন্থায়। নিষিদ্ধ পন্থায় অর্জিত জীবিকায় মানুষের সামাজিক কল্যাণ হলেও চিরস্থায়ী কল্যাণ জান্নাত লাভ সম্ভব হবে না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে হালাল জীবিকা অর্জন এবং ইসলামে যে ব্যবসায়িক মূলনীতি রয়েছে তা যথাযথ পালন করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!

* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
১. তাফসীর ইবনু কাছীর, ৮ম খণ্ড, পৃ. ১২৩।
২. ছহীহ বুখারী, তা‘লীক্বাত, অধ্যায়-৩৪, অনুচ্ছেদ-৮।
৩. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩০৪; মিশকাত, হা/২৭৮৩।
৪. তাফসীরে সা‘আদী, পৃ. ৮০।
৫. আবূ দাঊদ, হা/৪৩৯৯।
৬. ছহীহুল জামে‘, হা/৪৫১৯।
৭. ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৭।
৮. আবূ দাঊদ, হা/৩৫৮০; ইবনু মাজাহ, হা/২৩১৩; মিশকাত, হা/৩৭৫৩, সনদ ছহীহ।
৯. আবূ দাঊদ, হা/৩৩৭৬, সনদ ছহীহ।
১০. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩০৪; মিশকাত, হা/২৭৮৩, সনদ ছহীহ।
১১. ছহীহ মুসলিম, হা/১০২; মিশকাত, হা/২৮৬০।
১২. ছহীহ বুখারী, হা/২০৭৯, ২০৮২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৩২।
১৩. ইবনু মাজাহ, হা/২২৪৬; ছহীহুল জামে‘, হা/৬৭০৫।
১৪. ছহীহ বুখারী, হা/২১৪২, ২১৫০।
১৫. ছহীহ বুখারী, ফাৎহুল বারী, ১০ম খ-, পৃ. ৪৮৪।
১৬. ছহীহ বুখারী, হা/২১৫০।
১৭. ছহীহ মুসলিম, হা/১৬০৫; আবূ দাঊদ, হা/৩৪৪৭; ইবনু মাজাহ, হা/২১৫৪।
১৮. ইবনু মাজাহ, হা/২৪৪৩; মিশকাত, হা/২৯৮৭।
১৯. ছহীহ বুখারী, হা/২২২৭, ২২৭০; মিশকাত, হা/২৯৮৪।
২০. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৪৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯; মিশকাত হা/১৭৭২।
২১. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৪৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৭৯; মিশকাত, হা/৫১২৩।
২২. ইবনু মাজাহ, হা/৩২৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৮০।
২৩. ছহীহ বুখারী, হা/২০৮৮।
২৪. ছহীহ বুখারী, হা/২০৮৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬০৬; আবূ দাঊদ, হা/৩৩৩৫; মিশকাত, হা/২৭৯৪।
২৫. আবূ দাঊদ, হা/৩৩২৬; মিশকাত, হা/২৭৯৮।
২৬. ছহীহ বুখারী, হা/২০৭৬।
২৭. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৩; তিরমিযী, হা/২৫১৮; মিশকাত, হা/২৭৭৩।
২৮. ছহীহ বুখারী, হা/২০৫১।




ক্রোধের ভয়াবহতা ও তার শারঈ চিকিৎসা (শেষ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ফাযায়েলে কুরআন (৫ম কিস্তি) - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম) -এর আগমন সংশয় নিরসন (৬ষ্ঠ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
পরনিন্দা চর্চা ও তার পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন - হাসিবুর রহমান বুখারী
তওবার গুরুত্ব ও ফযীলত (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন - হাসিবুর রহমান বুখারী
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (শেষ কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
তওবার গুরুত্ব ও ফযীলত (২য় কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব ও মূল্যায়ন - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন

ফেসবুক পেজ