বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ 

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম* 


(২০তম কিস্তি) 

আক্বীদা-৬ : দরূদ ও সালাম শ্রবণ করা

দেওবন্দীদের অন্যতম আক্বীদা হল, তারা বিশ্বাস করে যে, ‘যদি কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবরের পাশে দরূদ ও সালাম পাঠ করে, তবে স্বয়ং তিনি তা শুনতে পান’।[১] এ আক্বীদার সাথে তাদের আরেকটি অন্যতম আক্বীদা হল, মৃত ব্যক্তিকে সালাম দিলে সে সালামের জবাব দেয় এবং সালাম দাতাকে চিনতে পারে।[২] দেওবন্দীদের বড় বড় আলেমগণ এ বিশ্বাসের ব্যাপারে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। যেমন,

১. কাযী মাযহার হুসাইন দেওবন্দী বলেন,  

"إن الأنبياء عليهم السلام أحياء في قبورهم، يسمعون تسليم الزوّار، ولا يحول التراب والجدران دون السماع، وقد أجمعت الأمة على هذه العقيدة"

‘নবীগণ তাঁদের কবরে জীবিত আছেন, দর্শণার্থীদের সালাম শ্রবণ করেন এবং মাটি ও দেয়াল তাদের শ্রবণে বাধা দেয় না। এ বিশ্বাসে জাতি সর্বস্মতিক্রমে একমত হয়েছে’।[৩]

২. আশরাফ আলী থানূবী বলেন,

"أما كون الرسول يسمع سلام المسلم من قريب وإبلاغ الملائكة إياه من بعيد بصفة دائمة مستمرة فهو أمر ثابت"

‘যেহেতু রাসূল মুসলিমের সালাম নিকট থেকে শোনেন এবং ফেরেশতাগণ দূর থেকে তা অবিরতভাবে পৌঁছিয়ে দেন। আর এটি একটি প্রমাণিত বিষয়’।[৪]

৩. তাক্বী উদ্দীন সুবুকী বলেন,

"الرسول صلى الله عليه وسلم حي في قبره، يسمع تسليم من يسلم عليه من داخل المسجد، مهما خفض به صوته"

‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর কবরে জীবিত আছেন। যারা তাঁকে মসজিদের ভেতর থেকে সালাম দেয় তাঁর কণ্ঠস্বর যতই নিচু হোক না কেন তিনি সেই সালাম শ্রবন করেন’।[৫]

৪. ‘নবীগণ কবরে জীবিত এবং মৃতরা শুনতে পায়’ এ আলোচনা করতে গিয়ে আনওয়ার শাহ কাশমীরী বলেন,

"والأحاديث في سمع الأموات قد بلغت مبلغ التواتر وفي حديث صححه أبو عمرو أن أحدا إذا سلم على الميت فإنه يرد عليه ويعرفه إن كان يعرفه في الدنيا"

‘মৃতের শ্রবণ সম্পর্কে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির স্তরে পেীঁছেছে। আবূ ‘আমর দ্বারা প্রমাণিত একটি হাদীছে বলা হয়েছে যে, কেউ যদি মৃত ব্যক্তিকে সালাম দেয় তবে সে তাকে সাড়া দেয় এবং তাকে চিনতে পারে যদি সে তাকে এই পৃথিবীতে চিনত’।[৬]

যেহেতু দেওবন্দীদের আক্বীদা হল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কবর থেকে দরূদ ও সালাম শ্রবণ করেন। এ কারণে দেওবন্দী আলেমগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি অধিক পরিমাণে ছালাত ও সালাম পেশ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন এবং দরূদের উপর (‘দালায়েলুল খায়রাত’ নামক বই) লিখে তা পঠন ও দরূদের অন্যান্য জপ সম্পর্কে উৎসাহিত করেছেন।

দেওবন্দীদের বড় আলেম মাওলানা খলীল আহমদ সাহরানপুরীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ‘রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অধিক পরিমানে সালাত ও সালামের হাদিয়া পেশ করা, দালায়েলুল খায়রাত শীর্ষক কেতাব পঠন ও দরুদের অন্যান্য জপ সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কী?[৭] উত্তরে তিনি বলেন,

‘রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমতে অধিক পরিমাণে দরুদ ও সালামের হাদিয়া পেশ করা মুস্তাহাব, অতিশয় পূণ্যময় ও মুস্তাহাব আমল সমূহের অন্যতম আমল বলে আমরা মনে করি। ইহা ‘দালায়েদুল খায়রাত’ শীর্ষক গ্রন্থ অথবা অন্য গ্রন্থ তিলাওয়াত করে হোক তাতে কোন আপত্তি নেই। তবে .... আমাদের শায়খ রশীদ আহমদ গাংগুহীসহ অন্যান্যরাও ‘দালায়েলুল খায়রাত’ শীর্ষক গ্রন্থ তিলাওয়াত করতেন। হযরত ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ.ও তার শিষ্যদের এ গ্রন্থ তিলাওয়াতের নির্দেশ দিতেন। আমাদের মাশায়েখগণ হামেশা (সর্বদা) ‘দালায়েলুল খায়রাত’ গ্রন্থ তিলাওয়াতের হুকুম করেন ও জপ করেন। হযরত মাও: রশীদ আহমদ গাংগুহী রহ.ও ও তার শীষ্যদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও এর জপ করতেন’।[৮]

পর্যালোচনা

জেনে রাখা ভাল যে, মৃত ব্যক্তি শুনতে পায় কি না তা অদৃশ্য এবং বারযাখের বিষয় যা কেউ জানে না। কোন রায় বা বিশ্লেষণ, উপমা বা মতামতের ভিত্তিতে এটি অনুসন্ধান করা জায়েযও নয়। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,

إِنَّ اللهَ فَرَضَ فَرَائِضَ، فَلَا تُضَيِّعُوْهَا، وَحَدَّ حُدُوْدًا فَلَا تَعْتَدُوْهَا، وَحَرَّمَ أَشْيَاءَ، فَلَا تَنْتَهِكُوْهَا، وَسَكَتَ عَنْ أَشْيَاءَ رَحْمَةً لَكُمْ غَيْرَ نِسْيَانٍ، فَلَا تَبْحَثُوا عَنْهَا

‘নিশ্চয় আল্লাহ বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছেন, তোমরা তা নষ্ট করো না; তিনি সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন, তোমরা তা লঙ্ঘন করো না; তিনি কিছু জিনিষ হারাম করেছেন, তোমরা তা লঙ্ঘন করো না এবং তোমাদের জন্য রহমতের কিছু বিষয়ে নীরব থেকেছেন, বিস্মৃতির কারণে নয়; তোমরা তা অনুসন্ধান করো না’।[৯]

শরী‘আতের এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যে ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনার উপর ঈমান আনা যরূরী। তার মধ্যে অন্যতম হল ইলমুল গায়েব এবং আল্লাহর ছিফাত।[১০] এগুলো আল-কুরআন ও ছহীহ সুন্নাতে যেভাবে এসেছে, সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে। শরী‘আতে মহান আল্লাহ কে নিয়ে অনুসন্ধান করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।[১১] আর ইলমুল গায়েব মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ অবগত না (সূরা আল-আন‘আম : ৫৯)।

হাফিয ইবনু রজব হাম্বলী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

وَمِمَّا يَدْخُلُ فِي النَّهْيِ عَنِ التَّعَمُّقِ وَالبَحْثِ عَنْهُ أُمُوْرُ الغَيْبِ الخَبَرِيَّةِ الَّتِيْ أُمِرَ بِالإِيْمَانِ بِهَا، وَلَمْ يُبَيِّنْ كَيْفِيَّتَهَا

‘নিষেধাজ্ঞার মধ্যে যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে অদৃশ্যের তথ্যগত বিষয় যা মানুষকে বিশ্বাস করতে আদেশ করা হয়েছে এবং কীভাবে তা ব্যাখ্যা করা হয়নি’।[১২]

মৃত্যুর পর কবরের জীবনটা বারযাখী জীবন। এটা ইলমুল গায়েব ও আক্বীদার সাথে সম্পর্কিত। আবুল আশবাল হাসান আয-যুহাইরী আল-মিছরী বলেন,

‘হে আমার ভাই! এই (মৃত ব্যক্তির শ্রবণ সংক্রান্ত) মাস’আলা তাওহীদের খুব বড় একটি মাস’আলা। কেউ কেউ এটাকে ফিক্বহ তথা আইনশাস্ত্রের মাস’আলায় উল্লেখ করেছেন। তবে আক্বীদা এবং তাওহীদের সাথে এর সংশ্লিষ্টতা ফিক্বহের সাথে সংশ্লিষ্টতার চেয়ে অনেক বেশি। বরং আমি ফিক্বহের সাথে এর কোন সংশ্লিষ্টতা দেখতে পাচ্ছি না। নিশ্চয় এ মাস’আলা হল আক্বীদা বা বিশ্বাসগত মাস’আলার মধ্যে একটি। বিশেষ করে এটি অদৃশ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। আর অদৃশ্যের বিষয়গুলো নিরবতার বিষয়; তাতে যুক্তি এবং ইজতিহাদের কোন স্থান নেই। ফলে তারা (মৃতরা) শ্রবণ করুক বা না করুক; তারা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হোক বা শাস্তি প্রাপ্ত হোক; তারা সালামের জবাব দেক বা না দেক; তারা দর্শনার্থীদের অনুভব করুক বা না করুক; এগুলো গায়েব বা অদৃশ্যের মাস’আলা। আর নছ ছাড়া অদৃশ্যের কোন বিষয় প্রমাণিত করা কারো জন্য বৈধ নয়’।[১৩]

আর নছ বা দলীল এটাই প্রমাণ করে যে, যারা কবরে অবস্থান করছে, তাদেরকে সালাম বা কোন কিছু শুনাতে কেউ সক্ষম না। তবে মহান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শ্রবণ করান। মহান আল্লাহ বলেন, 

وَ مَا یَسۡتَوِی  الۡاَحۡیَآءُ  وَ لَا الۡاَمۡوَاتُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ  یُسۡمِعُ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَاۤ  اَنۡتَ بِمُسۡمِعٍ  مَّنۡ فِی الۡقُبُوۡرِ

‘আর সমান নয় জীবিত ও মৃতরাও। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শ্রবণ করান; আপনি শুনাতে সমর্থ হবেন না যারা কবরে রয়েছে তাদেরকে’ (সূরা ফাতির : ২২)। মহান আল্লাহ বলেন,اِنَّکَ لَا تُسۡمِعُ الۡمَوۡتٰی وَ لَا  تُسۡمِعُ  الصُّمَّ الدُّعَآءَ اِذَا وَلَّوۡا مُدۡبِرِیۡنَ ‘মৃতকে তো আপনি কথা শুনাতে পারবেন না, বধিরকেও পারবেন না আহ্বান শুনাতে, যখন তারা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়’ (সূরা আন-নামল : ৮০; সূরা আর-রূম : ৫২)।

হাদীছে এসেছে, ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বদরে অবস্থিত কূপের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, (হে মুশরিকগণ) তোমাদের রব তোমাদের কাছে যা ওয়াদা করেছিলেন তা তোমরা সত্য হিসাবে পেয়েছ কি? পরে তিনি বললেন, এ মুহূর্তে তাদেরকে আমি যা বলছি তারা তা সবই শুনতে পাচ্ছে।

এ বিষয়টি আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সামনে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, ‘নবী (ﷺ) যা বলেছেন তার অর্থ হল, তারা এখন জানতে পারছে যে, আমি তাদেরকে যা বলতাম তাই সঠিক ছিল। এরপর তিনি তেলাওয়াত করলেন (اِنَّکَ لَا تُسۡمِعُ الۡمَوۡتٰی) ‘মৃতকে তো আপনি কথা শুনাতে পারবেন না’  এভাবে পুরো আয়তটি তেলাওয়াত করলেন’।[১৪]

আহলুল সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা হল মৃতরা শুনতে পায় না। তাঁরা সালামের জবাবও দেয় না। লালকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’-বইয়ে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন,

سِيَاقُ مَا رُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ فِيْ أَنَّ الْمَوْتَى فِيْ قُبُوْرِهِمْ لَا يَعْلَمُوْنَ مِمَّا عَلَيْهِ الْأَحْيَاءُ إِلَّا إِذَا رَدَّ اللهُ عَلَيْهِمُ الْأَرْوَاحَ، قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: { وَ مَاۤ  اَنۡتَ بِمُسۡمِعٍ  مَّنۡ فِی الۡقُبُوۡرِ }

‘নবী করীম (ﷺ) থেকে যা বর্ণিত হয়েছে তার প্রেক্ষাপট। মৃতরা তাদের কবরে জানে না জীবিতরা কী করছে যদি না মহান আল্লাহ তাদের আত্মা তাদের নিকট ফিরিয়ে দেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি শুনাতে সমর্থ হবেন না যারা কবরে রয়েছে তাদেরকে’ (সূরা ফাতির : ২২)।[১৫] 

এ অনুচ্ছেদের আলোকে তিনি আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর উপরিউক্ত হাদীছটাই নিয়ে এসেছেন।[১৬] সে হাদীছে রয়েছে, ‘নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে তাদেরকে আমি যা বলছি তারা তা সবই শুনতে পাচ্ছে’। এ বিষয়টি আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সামনে উল্লেখ করা হলে তিনি বিষয়টির ব্যাপারে আপত্তি করেন এবং বলেন, ‘নবী (ﷺ) যা বলেছেন তার অর্থ হল, ‘তারা এখন জানতে পারছে যে, আমি তাদেরকে যা বলতাম তাই সঠিক’।[১৭]

ইসলামকে বুঝতে হলে সালাফে ছলেহীন-এর ব্যাখ্যা যরূরী। অহী অবতরণ হয়েছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর। ছাহাবীদের বিভিন্ন অবস্থার পেক্ষাপটে ইসলামের বিভিন্ন আহকাম অবতীর্ণ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন ইসলামের আমানতদার। তাঁর পরে এই আমানত রক্ষা ও হেফাযত করেছেন ছাহাবীগণ। এ জন্য ইসলামের যে কোন বুঝ বুঝতে হলে ছাহাবীদের বুঝ নিতে হবে। আর মৃতদের শ্রবণ সংক্রান্ত বিষয়ে ছাহাবীদের বুঝ হল, তারা শুনতে পায় না; যেমনটা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেছেন।[১৮] আবুল আশবাল হাসান আয-যুহাইরী আল-মিছরী বলেন,ومذهب أهل السنة والجماعة في هذه القضية أن الموتى لا يسمعون ‘এ বিষয়ে (মৃতদের শ্রবণ সংক্রান্ত) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব হল, মৃতরা শুনতে পায় না’।[১৯]

মৃতরা সালাম শুনতে পায় না। এটার দলীল হল, ছাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করতেন। তাঁরা তাশাহুদ ও ছালাতে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (ﷺ) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন’। তাঁরা বলতেন, ‘হে নবী (ﷺ) আপনার উপর সালাম এবং আল্লাহর রহমত’। তাঁরা নবী (ﷺ)-এর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করতেন, কেউ নিকট থেকে আবার কেউ দূর থেকে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি তাদের কথা শুনতেন? কে তাঁকে সালাম দিল এবং তার জন্য প্রার্থনা করল; যখন তাঁরা তাঁর পিছনে ছিল বা দূরে ছিল, সে কি তা শুনেছিল? বরং এগুলো হল ইবাদত।[২০]

নবী করীম (ﷺ) কবর যিয়ারত করেছেন, কবরবাসীকে সালাম দিয়েছেন এবং আমাদেরকে একই আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু শরী‘আতে এটা প্রমাণিত হয়নি যে, আমরা মৃতদেরকে সালাম দিলে তারা আমাদের কথা শুনে এবং তার জবাব দেয়। যদি সালামের জবাব দেয়া তাদের জন্য বাধ্যতামূলক হত, তাহলে এটা মহান আল্লাহর রহমত হত যে, আমরা তাদের সালামের জবাব শুনতে পেতাম। যখন আমরা শুনতে পায় না, তখন এটাও প্রমাণ করে যে, তারা আমাদের কথা শুনে না। শুনলেও তারা আমাদের কথায় সাড়া দিত না। কারণ এটা তাদের ক্ষমতা ও অন্যান্য প্রমাণের বাইরে।

ছহীহ গ্রন্থে প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হজ্জের সময় বায়তুল্লাহ পরিদর্শন করেছেন এবং কুবা মসজিদও পরিদর্শন করেছেন। জ্ঞাত বিষয় যে, ‘তাওয়াফ আল-ইফাযাহ’-কে ‘তাওয়াফ আল-যিয়ারাহ’ বলা হত। এমন কেউ আছে যে বলেছেন, ‘বায়তুল্লাহ’ ও ‘কুবা’ প্রত্যেক দর্শণার্থীর সফরকে অনুভব করে বা তার সফর সম্পর্কে জানে। সুতরাং এটিও একটি সফর। এটি তাদের জবাব দেয়ার জন্য একটি যৌক্তিক যুক্তি, যারা দাবি করে যে, যদি কোন কবরের যিয়ারতকারী তাদের সালাম দেয় তবে তারা তার সালাম শুনে এবং জবাব দেয়। আসলে বিষয়টি এমন নয়। বরং কবরবাসী শুনতে পায় না এবং বুঝতেও পারেন না। কেননা তারা মৃতদের জগতে আছেন।

অতএব, যৌক্তিক যুক্তি হল যে, (কবর) যিয়ারতের জন্য যা অপরিহার্য তাহল সালাম। কিন্তু কবরবাসীর জন্য ঐ সালাম শুনা এবং উত্তর দেয়া অপরিহার্য নয়।[২১]

ফাতাওয়া লাজনা আদ-দায়িমাহ-তে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘নবী (ﷺ) কি তাঁর সম্মানিত কবরের প্রতি প্রতিটি প্রার্থনা এবং ডাক শুনেন অথবা যখন তাঁর উপর দরূদ পাঠ করা হয়, তা কি তিনি শ্রবণ করেন। যেমনটা হাদীছে এসেছে, যে আমার কবরের নিকট আমার উপর দরূদ পাঠ করবে, আমি তা সরাসরি শুনব.....’ হাদীছের শেষ পর্যন্ত। এই হাদীছটি কি ছহীহ, যঈফ, নাকি জাল?

উত্তর : মূলনীতি হল যে, সাধারণভাবে মৃতরা আদম সন্তানদের মধ্যে জীবিতদের ডাক শুনতে পায় না এবং তাদের প্রার্থনাও শুনতে পায় না। যেমনটি মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আপনি শুনাতে সমর্থ হবেন না যারা কবরে রয়েছে তাদেরকে’ (সূরা ফাতির : ২২)। কুরআনে এবং ছহীহ সুন্নাতে এমন কিছুই প্রমাণিত হয়নি যে, নবী করীম (ﷺ) মানুষের প্রত্যেক দু‘আ অথবা আহ্বান শ্রবণ করেন যাতে এটি তাঁর জন্য বিশেষ হয়। তবে এটি তাঁর কাছ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি কেবল তারই দু‘আ ও সালাম লাভ করেন, যে তাঁর (ﷺ) উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করে। দরূদ ও সালাম পাঠকারী তাঁর কবরের নিকট থাকুক বা তাঁর থেকে অনেক দূরে থাকুক, এক্ষেত্রে উভয়েই সমান। ‘আলী ইবনুল হুসাইন ইবনু ‘আলী হতে বর্ণিত। তিনি এক ব্যক্তিকে নবীর কবরের নিকট আসতে দেখলেন। অতঃপর লোকটি কবরের নিকট প্রবেশ করে দু‘আ করলেন। তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি হাদীছ বলব না, যা আমি আমার পিতার নিকট থেকে, তিনি তাঁর পিতার নিকট থেকে এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, ‘তোমরা আমার কবরকে উৎসবস্থলে পরিণত করো না ও তোমরা নিজেদের ঘরকে কবরস্থানে পরিণত কর না এবং তোমরা আমার প্রতি দরূদ পাঠ কর। নিশ্চয় তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে তোমরা যেখানই থাক না কেন’। হাদীছটির ব্যাপারে ‘‘যে আমার কবরের নিকট আমার উপর দরূদ পাঠ করবে, আমি তা সরাসরি শুনব.....’’ আলেমদের মতে এটি একটি যঈফ হাদীছ।

আবূ দাঊদে হাসান সুত্রে আবূ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হুরায়রা হতে বর্ণিত হাদীছে এসেছে, নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন কেউ আমার উপর সালাম পাঠ করে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহ আমার প্রতি ফিরিয়ে দেন, যাতে আমি তার সালামের জওয়াব দিতে পারি’।[২২]

এটা স্পষ্ট নয় যে, তিনি মুসলিমদের অভিবাদন শুনেন, বরং এটা সম্ভব যে, তিনি তার জবাব দেন যদি ফেরেশতারা তাকে তা জানায়। যদি আমরা ধরেই নিই যে, তিনি মুসলিমের সালাম শুনেন, তাহলে তাঁর জন্য সালাম ছাড়া অন্যান্য দু‘আ এবং আহ্বান সম্পৃক্ত করা যরূরী নয়।[২৩]

যদিও অনেকেই সালাম, দরূদ, বিভিন্ন দু‘আ এবং আহ্বানের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবরকে সাহায্যপ্রাপ্তের মাধ্যম মনে করে। কেউ যদি কোন হাজত পূরণ এবং কষ্ট দূর করার জন্য মৃত রাসূল (ﷺ) বা তাঁর কবরকে কেন্দ্র করে (কবরের নিকট থেকে বা দূর থেকে কোন) দু‘আ, আহ্বান এবং সাহায্য কামনা করে, তাহলে তা শিরকে আকবার। ঐ ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে (সূরা জিন : ১৮; সূরা আল-মূমিনূন : ১১৭; সূরা ফাতির: ১৩-১৪)।[২৪]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

*পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. আক্বাঈদে উলামায়ে দেওবন্দ, পৃ. ১০। সংগৃহিত : আব্দুল্লাহ মাহমূদ বিন শামসুল হক, দেওবন্দী ও ব্রেলভী তরীকা : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা, ছিরাতে মুস্তাক্বীম, পর্ব-৫, বিষয় : ইসলাম বনাম ফের্কাবন্দী (ঢাকা : ইসলামিক রিসার্চ এ্যান্ড রিফরমেশন সেন্টার, জুলাই ২০১৯ খ্রি.), পৃ. ৩৭৬।
[২]. আনওয়ার শাহ কাশমীরী, ফাইযুল বারী ‘আলা ছহীহিল বুখারী, ৩য় খণ্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১৪২৬ হি.), পৃ. ৪২; ‘আক্বাইদু ‘উলামাই দেওবন্দ মিন কিতাবি দেওবন্দিয়া, পৃ. ৫৫; মাওসূ‘আতুল ফিরাক্বিল মুনতাসিবাতি লিল ইসলাম, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৬৫।
[৩]. ‘আক্বাইদু ‘উলামাই দেওবন্দ মিন কিতাবি দেওবন্দিয়া, পৃ. ৫৫; মাওসূ‘আতুল ফিরাক্বিল মুনতাসিবাতি লিল ইসলাম, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৬৪।
[৪]. ‘আক্বাইদু ‘উলামাই দেওবন্দ মিন কিতাবি দেওবন্দিয়া, পৃ. ৫৫।
[৫]. মাওসূ‘আতুল ফিরাক্বিল মুনতাসিবাতি লিল ইসলাম, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৬৪।
[৬]. আনওয়ার শাহ কাশমীরী, ফাইযুল বারী ‘আলা ছহীহিল বুখারী, ৩য় খণ্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১৪২৬ হি.), পৃ. ৪২; ‘আক্বাইদু ‘উলামাই দেওবন্দ মিন কিতাবি দেওবন্দিয়া, পৃ. ৫৫; মাওসূ‘আতুল ফিরাক্বিল মুনতাসিবাতি লিল ইসলাম, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৬৫।
[৭]. আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, পৃ. ৩২ ।
[৮]. আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, পৃ. ৩৩-৩৪ ।
[৯]. ত্বাবারানী; মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৭৪৬১; মু‘জামুছ ছগীর, হা/১১১১; মুজামুল কাবীর, হা/৫৮৯; ইবনু তাইমিয়্যাহ, আল-ঈমান, পৃ. ৪১; শাত্বেবী, আল-ই‘তিছাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮৪। এ হাদীছের শাহিদ থাকার কারণে কেউ কেউ এর সনদকে ছহীহ আবার কেউ কেউ হাসান বলেছেন। আহমাদ শাকির এ হাদীছের সনদকে ছহীহ বলেছেন; দ্র. আবুল ‘ইয আল-হানাফী, শারহুল আক্বীদাতিত ত্বাহাবী, পৃ. ২৮২। ইমাম নববী এ হাদীছের সনদকে হাসান বলেছেন; দ্র. ইবনুল ওযীর, আল-আওয়াছিমু ওয়াল ক্বাওয়াছিমু ফিয যাব্বি ‘আন সুন্নাতি আবিল ক্বাসিম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৩৫। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল ওহাব এ হাদীছের সনদকে হাসান বলেছেন; দ্র. মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল ওহাব, উছূলুল ঈমান (সঊদী আরব : ওযারাতুশ শুয়ূনিল ইসলামিয়্যাহ ওয়াল আওক্বাফি ওয়াদ দা‘ওয়াতি ওয়াল ইরশাদ, ৫ম সংস্করণ, ১৪২০ হি.), পৃ. ১৪৫।
[১০]. মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-উছায়মীন, শারহুল আরবা‘ইন আন-নববিয়্যাহ (দারুছ ছুরইয়া, তা.বি.), পৃ. ৩১৬।
[১১]. লালকাঈ, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত, তাহক্বীক্ব : আহমাদ ইবনু সা‘দ আল-গামিদী, ৩য় খণ্ড (সঊদী আরব :  দারুত তাইয়্যিব, ৮ম সংস্করণ, ১৪২৩ হি.), পৃ. ৫৭৯।
[১২]. ইবনু রজব হাম্বলী, জামি‘উল ‘উলূমি ওয়াল হুকমি ফী শারহি খমসীনা হাদীছান মিন জাওয়ামি‘ইল কালাম, তাহক্বীক্ব : শু‘আইব আরনাউত, ২য় খণ্ড (বৈরূত : মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ৭ম সংস্করণ, ১৪২২ হি.), পৃ. ১৭২।
[১৩]. هذه المسألة يا إخواني! من مسائل التوحيد العظيمة جداً، والبعض يذكرها في مسائل الفقه، لكن تعلقها بالاعتقاد والتوحيد أعظم بكثير جداً من تعلقها بالفقه، بل لا أرى لها وجه شبه أو تعلق بالفقه، إنما هذه المسألة من مسائل الاعتقاد، خاصة وأنها تتعلق بأمر من أمور الغيب، وأمور الغيب كلها أمور توقيفية، لا مكان للعقل ولا للاجتهاد فيها، فكونهم يسمعون أو لا يسمعون، ينعمون أو يعذبون، يردون السلام أو لا يردون السلام، يشعرون بالزائرين أو لا يشعرون بالزائرين كل هذا من مسائل الغيب، فلا يحل لأحد أن يثبت شيئاً من مسائل الغيب أو يأتيه إلا بنص
দ্র. আবুল আশবাল হাসান আয-যুহাইরী আল-মিছরী, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ লিল-লাকাঈ, ৫৮তম খণ্ড (তা.বি.), পৃ. ২।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৯৮১; নাসাঈ, হা/২০৭৬।
[১৫]. লালকাঈ, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১২২৯।
[১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৯৮১; নাসাঈ, হা/২০৭৬; শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১২২৯।
[১৭]. আবুল আশবাল হাসান আয-যুহাইরী আল-মিছরী, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ লিল-লাকাঈ, ৫৮তম খণ্ড, পৃ. ২।
[১৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৯৮১; নাসাঈ, হা/২০৭৬; আবুল আশবাল হাসান আয-যুহাইরী আল-মিছরী, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ লিল-লাকাঈ, ৫৮তম খণ্ড, পৃ. ২।
[১৯]. আবুল আশবাল হাসান আয-যুহাইরী আল-মিছরী, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ লিল-লাকাঈ, ৫৮তম খণ্ড, পৃ. ২।
[২০]. আবুল আশবাল হাসান আয-যুহাইরী আল-মিছরী, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ লিল-লাকাঈ, ৫৮তম খণ্ড, পৃ. ৫।
[২১]. আবুল আশবাল হাসান আয-যুহাইরী আল-মিছরী, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ লিল-লাকাঈ, ৫৮তম খণ্ড, পৃ. ৫।
[২২]. আবূ দাঊদ, হা/২০৪১; দা‘ওয়াতে কাবীর, হা/১৭৮, সনদ হাসান।
[২৩]. আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ লিল বুহূছিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা, ফাতাওয়া লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৭৩; ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ১ম খণ্ড (রিয়াদ : দারুল ওত্বান), পৃ. ৫৭।  
[২৪]. আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ লিল বুহূছিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা, ফাতাওয়া লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩১; ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ১ম খণ্ড (রিয়াদ : দারুল ওত্বান), পৃ. ৫৭। 




দলাদলির কুপ্রভাব : উত্তরণের উপায় - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
দু‘আ ও যিকর : আল্লাহর অনুগ্রহ ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলামে রোগ ও আরোগ্য - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
রামাযানের শেষ দশকের গুরুত্ব ও করণীয় - মাইনুল ইসলাম মঈন
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (৯ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
হজ্জ ও ওমরাহ সম্পর্কে প্রচলিত বিদ‘আতসমূহ - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (৫ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
বিদ‘আত পরিচিতি (১০ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইবাদতের দাবী - হাসিবুর রহমান বুখারী
আল-কুরআনের ব্যাপারে অমুসলিমদের মিথ্যা অভিযোগ ও তার খণ্ডন - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ