রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন

প্রতিবেশীর হক্ব আদায়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য 

- ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর* 


(শেষ কিস্তি) 

২. প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহারকারী ব্যক্তি অত্যাধিক ঘৃণিত

প্রতিবেশীর সাথে অসদাচরণকারী ব্যক্তি অতিশয় ঘৃণিত। এরূপ ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালোবাসেন না। এরূপ ব্যক্তিকে বহু মানুষ অভিশাপ দিয়ে থাকে। এ মর্মে হাদীছে বণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ لِيْ جَاراً يُؤْذِيْنِيْ فَقَالَ اِنْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مَتَاعَكَ إِلَى الطَّرِيْقِ فَانْطَلَقَ فَأَخْرَجَ مَتَاعَهُ فَاِجْتَمَعَ النَّاسُ عَلَيْهِ فَقَالُوْا مَا شَأْنُكَ قَالَ لِيْ جَارٌ يُؤْذِيْنِيْ فَذَكَرْتُ لِلنَّبِيْ ﷺ فَقَالَ اِنْطَلِقْ فَاَخْرُجْ مَتَاعَكَ إِلَى الطَّرِيْقِ فَجَعَلُوْا يَقُوْلُوْنَ اَللَّهُمَّ اَلْعِنْهُ اَللَّهُمَّ أَخْزِهِ فَبَلَغَهُ فَأَتَاهُ فَقَالَ اِرْجِعْ إِلَى مَنْزِلِكَ فَوَاللهِ! لاَ أُوْذِيْكَ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার এক প্রতিবেশী আমাকে পীড়া দেয়। তিনি বললেন, যাও, তোমার গৃহ-সামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখো। সে ব্যক্তি তখন ঘরে গিয়ে তার গৃহসামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখল। এতে তার পাশে লোকজন জড়ো হয়ে গেল। তারা জিজ্ঞেস করল, তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমার প্রতিবেশী আমাকে পীড়া দেয়। আমি তা নবী করীম (ﷺ)-কে বললে তিনি বললেন, যাও, ঘরে গিয়ে তোমার গৃহসামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখো। তখন তারা সেই প্রতিবেশীটিকে ধিক্কার দিতে দিতে বলতে লাগল, হে আল্লাহ! এর উপর তোমার অভিসম্পাত হোক। হে আল্লাহ! তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করো। এ কথা ঐ প্রতিবেশীর কানে গেলো এবং সে সেখানে উপস্থিত হল। সে তখন বলল, তুমি তোমার ঘরে ফিরে যাও। আল্লাহর কসম! আর কখনো আমি তোমাকে পীড়া দেব না’।[১]

প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া কত জঘন্য অপরাধ তা এ হাদীছে ফুটে উঠেছে। যে ব্যক্তি তার এমন নোংরা স্বভাবের কথা জানবে, সেই তাকে অভিশাপ করবে। কষ্টদানকারীর জন্য অপমান ও লাঞ্ছনার বদদু‘আ করবে। কোনো ব্যক্তির উপর এতসব মানুষের বদদু‘আ ও অভিশাপ থাকলে তার জীবন বিপদে পড়ায় স্বাভাবিক। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া গুরুতর অন্যায়। বিধায় এরূপ হীন কর্ম পরিহার করাই প্রকৃত ঈমানদারের পরিচয়।

৩. প্রতিবেশী নারীর সম্ভ্রমহানির ভয়াবহতা

একজন নারীর সম্ভ্রম অত্যন্ত মূল্যবান জিনিস। যার মূল্য টাকা-পয়সা দ্বারা নির্ধারণ করা যায় না। কোনো নারীর ইযযত-সম্ভ্রম নষ্ট করা ইসলামে স্পষ্ট হারাম। প্রতিবেশী নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো কঠিন।

عَنْ عَبْدِ اللهِ  رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَأَلْتُ النَّبِىَّ ﷺ أَىُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ قَالَ أَنْ تَجْعَلَ لِلهِ نِدًّا وَهْوَ خَلَقَكَ قُلْتُ إِنَّ ذَلِكَ لَعَظِيمٌ قُلْتُ ثُمَّ أَىُّ قَالَ وَأَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ تَخَافُ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ قُلْتُ ثُمَّ أَىُّ قَالَ أَنْ تُزَانِىَ حَلِيلَةَ جَارِكَ

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কী? উত্তরে তিনি বললেন, তাহল এই যে, তুমি তাঁর কোনো শরীক নির্ধারণ করো, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এটা তো বিরাট! অতঃপর কোন পাপ? তিনি বললেন, তোমার সাথে খাবে এই ভয়ে তোমার নিজ সন্তানকে হত্যা করা। আমি বললাম, অতঃপর কোন পাপ? তিনি বললেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা’।[২] ব্যভিচার করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। যা কোনো ব্যক্তির জন্য শোভনীয় নয়। আর প্রতিবেশী নারীর বিষয় আরো অধিক সচেতন হওয়া দরকার।

عَنْ الْمِقْدَادِ بْنِ الْأَسْوَدِ  رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ سَأَلَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَصْحَابَهُ عَنِ الزِّنَا قَالُوْا حَرَامٌ حَرَّمَهُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ فَقَالَ لأَنْ يَزْنِىَ الرَّجُلُ بِعَشْرِ نِسْوَةٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَزْنِىَ بِامْرَأَةِ جَارِهِ وَسَأَلَهُمْ عَنِ السَّرَقَةِ قَالُوا حَرَامٌ حَرَّمَهَا اللهُ عَزَّ وَجَلَّ وَرَسُوْلُهُ فَقَالَ لأَنْ يَسْرِقَ مِنْ عَشْرَةِ أَهْلِ أَبْيَاتٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَسْرِقَ مِنْ جَارِهِ

মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদা তাঁর ছাহাবীগণকে ব্যভিচার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, (তা কেমন? উত্তরে) তারা বললেন, হারাম; আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তা হারাম করেছেন। তখন তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তি দশজন নারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হলেও তা তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া অপেক্ষা লঘুতর (পাপ)। অতঃপর তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তির দশ ঘরের লোকজনের বস্তু-সামগ্রী চুরি করা তার প্রতিবেশীর ঘরে চুরি করার চেয়ে লঘুতর’।[৩]

ব্যভিচার করা কাবীরা গুনাহ। তবে প্রতিবেশী কোনো নারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া কাবীরা গুনাহের মধ্যে অন্যতম। দূরের দশটি নারীর সাথে ব্যভিচারের চেয়ে প্রতিবেশী নারীর সাথে ব্যভিচার করা বেশি অপরাধ। দূর দেশের দশ বাড়ীতে চুরি করার চেয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে চুরি করা বেশি অন্যায়। কেননা প্রতিবেশী পরস্পরের জন্য আমানত স্বরূপ। এই আমানতে বিচ্যুতি ঘটানো খিয়ানতের শামিল। যার দরুন পাপের পরিমাণও অনেক বেশি। প্রতিবেশীর কোনো জিনিসের ক্ষতি করা বৈধ নয়। বরং প্রতিবেশীর প্রতিটা জিনিস সংরক্ষণে সহযোগিতা করা নেকীর কাজ।

৪. প্রতিবেশীই ব্যক্তির ধ্বংসের কারণ

প্রতিবেশীর সাথে অসৎ আচরণ করলে তার জীবন ধ্বংসে পতিত হয়। জীবনে সফলতা লাভ করা যায় না। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

وَمَا مِنْ جَارٍ يَظْلِمُ جَارَهُ وَيُقْهِرُهُ حَتَّى يَحْمِلَهُ ذَلِكَ عَلَى أَنْ يَّخْرُجَ مِنْ مَنْزِلِهِ إِلاَّ هَلَكَ

‘আর যে প্রতিবেশী তার কোনো প্রতিবেশীকে নির্যাতন করে বা তার সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করে, যাতে সে ব্যক্তি গৃহত্যাগে বাধ্য হয়, সে ব্যক্তি নিশ্চিত ধ্বংসের মধ্যে পতিত হয়’।[৪]

প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করে তাকে গৃহত্যাগে বাধ্য করা মহাপাপ। যা একজন মানুষের ধ্বংসের কারণ। তাদেরকে নির্যাতন করা বা নিষ্ঠুর আচরণ করা নিজের ধ্বংস ডেকে আনার নামান্তর। এমনকি প্রতিবেশীকে নির্যাতন করা বা হত্যা করা ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, لاَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقْتَلَ الرَّجُلُ جَارَهُ وَأَخَاهُ وَأَبَاهُ-  ‘ক্বিয়ামত হবে না যতক্ষণ না কোনো ব্যক্তি তার প্রতিবেশী, তার ভাই এবং পিতাকে হত্যা করবে’।[৫] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ক্বিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে হত্যা বেড়ে যাবে- حَتَّى يَقْتُلَ الرَّجُلُ جَارَهُ وَابْنَ عَمِّهِ وَذَا قَرَابَتِهِ ‘এমনকি কোনো ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে, তার চাচাতো ভাইকে এবং নিকট আত্মীয়-স্বজনকে পর্যন্ত হত্যা করবে’।[৬] 

প্রতিবেশীর সাথে নিষ্ঠুর আচরণকারী ব্যক্তির জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। নিজ পিতা, আপনজন, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীকে হত্যা করা ক্বিয়ামতের পূর্বলক্ষণ। ক্বিয়ামতের পূর্বে এরূপ অনাকাঙ্খিত হত্যাকান্ড অহরহ ঘটবে। যা বর্তমান সময়ে মাঝে মধ্যেই এরূপ ঘটনা চোখে পড়ে। যা আমাদের জন্য বিপদ সংকেত দিয়ে যাচ্ছে। সময় থাকতেই সতর্কতা অবলম্বণ করা দরকার।

৫. প্রতিবেশীকে কষ্টদানকারী জান্নাতে যাবে না

প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করলে যেমন ভালো ফলাফল পাওয়া যায়, তদ্রুপ তাদের সাথে খারাপ আচরণ করলে ফলাফল হয় বেদনাদায়ক।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ  رَضِىَ اللهُ عَنْهُقَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না, যার অন্যায়ের কারণে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না’।[৭]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ  رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لاَ يَسْتَقِيمُ إِيمَانُ عَبْدٍ حَتَّى يَسْتَقِيمَ قَلْبُهُ وَلاَ يَسْتَقِيمُ قَلْبُهُ حَتَّى يَسْتَقِيمَ لِسَانُهُ وَلاَ يَدْخُلُ رَجُلٌ الْجَنَّةَ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কোনো বান্দার ঈমান দুরস্ত হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার হৃদয় দুরস্ত হয় এবং তার হৃদয়ও দুরস্ত হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না তার জিহ্বা দুরস্ত হয়। আর সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা পায় না’।[৮]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ فُلَانَةَ تُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلَاتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِيْ جِيْرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ هِيَ فِي النَّارِ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَإِنَّ فُلاَنَةَ تُذْكَرُ مِنْ قِلَّةِ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا وَصَلَاتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنْ الْأَقِطِ وَلَا تُؤْذِيْ بِلِسَانِهَا جِيْرَانَهَا قَالَ هِيَ فِي الْجَنَّةِ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! অমুক মহিলা অধিক ছালাত পড়ে, ছিয়াম রাখে এবং দান-ছাদাক্বাহ করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তবে সে নিজের মুখের দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয়। তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। লোকটি আবার বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! অমুক মহিলা যার সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে কম ছিয়াম পালন করে, দান-ছাদাক্বাও কম করে এবং ছালাতও কম আদায় করে। তার দানের পরিমাণ হল পনীরের টুকরা বিশেষ। কিন্তু সে নিজের মুখ দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন, সে জান্নাতী’।[৯]

উপরিউক্ত হাদীছগুলোতে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, প্রতিবেশীকে কষ্টদানকারী জান্নাতে যাবে না। যদি কারো নিকট থেকে স্বীয় প্রতিবেশী নিরাপদে না থাকে তাহলে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার তার জন্য জান্নাতের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। অধিক পরিমাণ ছালাত আদায়, ছিয়াম পালন এবং দান করার পরও জাহান্নামের খড়ি হতে হবে। প্রতিবেশীর কষ্টের কাছে তার এসব আমল হালকা হয়ে যাবে। অবশ্য অপরাধ পরিমাণ জাহান্নামের পুড়ার পর ঈমান ও আমল অবশিষ্ট থাকলে এক সময় জান্নাতে যাবে। তবে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার কারণে জাহান্নাম থেকে রেহায় পাবে না। তাই প্রতিবেশীর ব্যাপারে সকলের সাবধান হওয়া প্রয়োজন।

সুধী পাঠক! প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা আমাদের নিকট পরিষ্কার। আল্লাহ তা‘আলার ভালোবাসা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম এটি। তাদের সাথে সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে পরকালে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়ে যায়। মানুষের কাছে সৎ হিসাবে বিবেচিত হয়। তাদের সাথে ভালো আচরণে রিযিক্ব বর্ধিত হয়। আল্লাহ তাকে দীর্ঘ হায়াত দান করেন। মুমিন জীবনে ঈমানের পূর্ণতা লাভ করে। জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। এত কিছু পাওয়া গেলে, আর কী বাকী রইল।

পক্ষান্তরে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করলে, মহান আল্লাহ বেযার হন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। অগণিত মানুষের অভিশাপ ও রোষানলে পড়তে হয়। পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পার্থিব জীবনে ধ্বংস নেমে আসে। তাদেরকে নিরাপদে না রাখলে জান্নাত হতে মাহরূম হতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষ ছালাত পড়ে, ছিয়াম পালন করে ও দান-ছাদাক্বাহ করেও তা ফলপ্রসু হয় না। হাশরের মাঠে চূড়ান্ত বিচারে জাহান্নামের লেলিহান আগুনে পুড়তে হবে।

ইবনু উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কিছু প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীকে ক্বিয়ামতের দিন (আল্লাহর কাছে) ধরে এনে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! একে জিজ্ঞাসা করুন, কেন এ আমার জন্য তার দ্বার রুদ্ধ করে রেখেছিল এবং প্রয়োজনাতিরিক্ত বস্তু থেকে বিরত রেখেছিল’? [১০] 

আমরা যারা প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করি তাদের চিন্তা করা উচিত। আমি যদি এ পরিস্থিতির শিকার হই, তখন আল্লাহর নিকট কী জবাব দিব? আজ না হয় ক্ষমতার দাপটে, অর্থের উষ্ণ গরমে, বাহুবল ও লোকবলের প্রভাবে প্রতিবেশীর উপর নির্যাতন করছি। অন্যায়ভাবে তার সীমানা নিজের মধ্যে নিচ্ছি। কিন্তু সেই দিন এসব বড়ায় তো মুহূর্তে ধুলিকণায় পরিণত হবে। তখন বাঁচার পথ কী হবে? তাই সময় থাকতে নির্যাতিত প্রতিবেশীর নিকট ক্ষমা চাওয়া উচিত। অতঃপর আল্লাহর নিকট তওবা করে জান্নাতের পথ নিশ্চিত করা যরূরী। আবার যাদের প্রতিবেশী খারাপ, তারা মহান আল্লাহর নিকট-এর পরিবর্তনের জন্য প্রার্থনা করবেন। নিকৃষ্ট প্রতিবেশী হতে পরিত্রাণের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু‘আ করতেন এই বলে,اَللَّهُمَّ! إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ جَارِ السُّوْءِ فِيْ دَارِ الْمَقَامِ فَإِنَّ جَارَ الدُّنْيَا يَتَحَوَّلُ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুষ্ট প্রতিবেশী হতে স্থায়ী বাসস্থানের। কেননা দুনিয়ার প্রতিবেশী পরিবর্তন হয়ে থাকে’।[১১]

মহান আল্লাহ আমাদেরকে প্রতিবেশীর হক্ব আদায় করার এবং উত্তম প্রতিবেশী হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!


*পরিচালক, ইয়াসিন আলী সালাফী কমপ্লেক্স, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র:
[১]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১২৪, সনদ হাসান ছহীহ।  
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৪৭৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৬; আবুদাউদ, হা/২৩১০; নাসাঈ, হা/৪০১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬১২; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৪১৫; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪০৩; মিশকাত, হা/৪৯।  
[৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৯০৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৫৫২; ছহীহ  আত-তারগীব, হা/২৪০৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/১০৩; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬৫।  
[৪]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১২৭, সনদ ছহীহ।  
[৫]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১১৮; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩১৮৫, সনদ হাসান।  
[৬]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৬৫৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৭২৩৪, সনদ ছহীহ।  
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৬; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৪২; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/২১; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৫৩৫; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৬৪৯০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হা/১৩৫৬৩; ছহীহুল জামে‘, হা/৭৬৭৫; মিশকাত, হা/৪৯৬৩।  
[৮]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩০৭১; ছহীহ আত-তরগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৫৪; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হা/১৬৫; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৮৪১, সনদ হাসান।  
[৯]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৭৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৭৩০৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৫৪৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হা/১৩৫৬২; ছহীহ আত-তরগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৬০; মিশকাত, হা/৪৯৯২, সনদ হাসান।  
[১০]. আদাবুল মুফরাদ, হা/১১১; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৫৬৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৬৪৬, সনদ হাসান।  
[১১]. আদাবুল মুফরাদ, হা/১১৭; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/১৯৫১; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/১০৩৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১২৯০; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৯৪৩, সনদ ছহীহ।  




প্রসঙ্গসমূহ »: সমাজ-সংস্কার শিষ্টাচার
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম) -এর আগমন সংশয় নিরসন (৭ম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে ইসলাম শিক্ষার আবশ্যকতা - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১৪তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
আল-কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
তাক্বওয়াই মুক্তির সোপান - আব্দুর রশীদ
মীলাদুন্নবী ও আমাদের অবস্থান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামে রোগ ও আরোগ্য (৪র্থ কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১৪তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ