শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ অপরাহ্ন

হজ্জের শিক্ষা ও হজ্জ পরবর্তী করণীয়

-ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ*



১. ভূমিকা

হজ্জ একটি শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত এবং ইসলামের পঁচটি স্তম্ভের একটি। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হজ্জের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সাথে আর্থিক ও দৈহিক দু’টি কুরবানীই সমভাবে সম্পৃক্ত। ফলে হজ্জের মাধ্যমে খুব সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। পবিত্র হজ্জ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার একটি বিশেষ বিধান। আল্লাহ হজ্জ পালনের মধ্যে মহান উদ্দেশ্য নিহিত রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, প্রকৃত হজের পুরস্কার জান্নাত ব্যতীত অন্য কিছুই হতে পারে না। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যাঁরা হজ্জ পালন করবেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের হজ্জ কবুল করবেন এবং তাঁদের জন্য অফুরন্ত রহমত ও বরকত অবধারিত। হজের বহুমাত্রিক ইতিবাচক প্রভাব ব্যক্তি, সমাজ ও যাপিত জীবনের প্রতিটি স্তরে রয়েছে। হজ্জের শিক্ষা বাকী জীবন ধরে রাখলে শুদ্ধাচারী একজন মানুষ হিসাবে গঠন করা যায়। নিম্নে হজ্জের শিক্ষা ও হজ্জ পরবর্তী সময়ে হাজিদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

২.১   হজ্জের চেতনা তাওহীদ প্রতিষ্ঠা

তাওহীদ হল আল্লাহর একাত্বকে মনে প্রাণে বিশ্বাস, স্বীকার এবং প্রতিষ্ঠা করা। এর বিপরীত হল শিরক। যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য বলেই দয়াময় আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করলেও এ ভয়াবহ পাপের গুনাহ ক্ষমা করবেন না।[১]। আর আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে মানবজাতিকে শিরক থেকে বেঁচে থেকে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যই সকল নবী-রাসূলদের প্রেরণ করেছেন। একজন মুমিনের আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে সকল আনুগত্য ও ইবাদত হতে হবে তাওহীদী চেতনায় একীভূত ও শিরক মুক্ত। আর হজ্জ পালনের প্রথম দাফ তালবিয়া পাঠ; যা কেবল তাওহীদী চেতনাই প্রকাশ করে থাকে। আর এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাওহীদ যুক্ত তালবিয়াহ আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। যা হল-

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ

‘আমি আপনার দরবারে হাযির আছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে হাযির। আপনার কোন শরীক নেই, আমি আপনার দরবারে হাযির। নিশ্চিত সমস্ত প্রশংসা, নে‘মত আপনারই এবং সমগ্র রাজত্ব আপনার; আপনার কোন শরীক নেই’।[২]

সুতরাং হজ্জ হল তাওহীদ বাস্তবায়নের একটি অন্যতম মাধ্যম। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাওহীদ ছাড়া কোন আমলই গ্রহণ করেন না। এজন্য হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেনÑ

 أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِىْ غَيْرِى تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ

‘আমি শিরককারীদের শিরক থেকে অমুখাপেক্ষী। যে ব্যক্তি আমার সাথে অন্য কাউকে অংশী স্থাপন করবে, আমি তাকে তার অংশীকে ছেড়ে দেই’।[৩]

২.২ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম হল হজ্জ পালন করা। এ সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেছেন, مَنْ حَجَّ لِلهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ পালন করল এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হতে বিরত থাকল, সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে হজ্জ হতে ফিরে আসবে যে দিন তাকে তার মা জন্ম দিয়েছিল’।[৪] অন্যত্র আমর ইবনুল আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলছেন, أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ  ‘হে আমর! তুমি কি জান না যে, ইসলাম পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়, আর হিজরত পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়, আর হজ্জ পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়’?[৫] আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُوْرَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةُ

‘তোমরা হজ্জ ও ওমরা পরপর একত্রে আদায় কর। কেননা, এ হজ্জ ও ওমরা দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর কর দেয়। যেমন লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা হাপরের আগুনে দূর হয়। আর একটি কবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়’।[৬] 

২.৩ হজ্জের চেতনা তাক্বওয়া অর্জন

আল্লাহ অধিকাংশ হজ্জ সম্পর্কিত আয়াতেই তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জনের কথা বলেছেন। সূরা বাক্বারায় বলা হয়েছে, وَ اَتِمُّوا الۡحَجَّ وَ الۡعُمۡرَۃَ  لِلّٰہِ ‘আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরাহ পূর্ণ কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৯৬)। আর আয়াতে শেষাংশে বলা হচ্ছে- وَ اتَّقُوا اللّٰہَ وَ اعۡلَمُوۡۤا  اَنَّ اللّٰہَ  شَدِیۡدُ  الۡعِقَابِ ‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৯৬)। অনুরূপভাবে আরো বলা হয়েছে, اَلۡحَجُّ اَشۡہُرٌ مَّعۡلُوۡمٰتٌ ‘হজ্জের মাসগুলো নির্ধারিত’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৯৭)। আর উক্ত আয়াতের শেষাংশে বলা হচ্ছে, وَ تَزَوَّدُوۡا فَاِنَّ خَیۡرَ الزَّادِ التَّقۡوٰی ۫ وَ اتَّقُوۡنِ یٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ ‘নিশ্চয় সর্বোত্তম পাথেয় হল আল্লাহভীতি। অতএব হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৯৭)। আসলে হজ্জের নিয়ম-রীতি সবকিছুই যে তাক্বওয়া অর্জনের নিমিত্তে তার প্রমাণ এ আয়াত দুটিও। মহান আল্লাহ বলেন, ذٰلِکَ ٭ وَ مَنۡ یُّعَظِّمۡ شَعَآئِرَ  اللّٰہِ فَاِنَّہَا مِنۡ  تَقۡوَی  الۡقُلُوۡبِ ‘উপরেরগুলো এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ সমূহকে সম্মান করে, নিশ্চয় সেটি হৃদয় নিঃসৃত আল্লাহভীতির প্রকাশ’ (সূরা আল-হজ্জ: ৩২)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, لَنۡ یَّنَالَ اللّٰہَ  لُحُوۡمُہَا وَ لَا دِمَآؤُہَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُہُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর নিকটে পৌঁছে না। বরং তাঁর নিকট পৌঁছে তোমাদের আল্লাহভীরুতা’ (সূরা আল-হজ্জ: ৩৭)। তাক্বওয়া শুধু উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্যই নয় বরং সকল উম্মতের জন্য সর্বোত্তম নির্দেশনা ও শেষ দিবসের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়। মহান আল্লাহ বলেন, وَ لَقَدۡ وَصَّیۡنَا الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ وَ اِیَّاکُمۡ اَنِ اتَّقُوا اللّٰہَ ‘বস্তুত আমরা আদেশ করেছিলাম তোমাদের পূর্ববর্তী কিতাবধারীদের এবং তোমাদের এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর’ (সূরা আন-নিসা: ১৩১)। সুতরাং হজ্জব্রত পালন তাক্বওয়া অর্জনের একটি শ্রেষ্ঠতম মাধ্যম।

২.৪ হজ্জের মাধ্যমে দয়াময় আল্লাহকে স্মরণ

বান্দার প্রতিটি আমল আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তেই করতে হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, وَ  اَقِمِ  الصَّلٰوۃَ   لِذِکۡرِیۡ ‘আমার স্মরণে সালাত কায়েম কর’ (সূরা ত্বোহা: ১৪)। অনুরূপভাবে হজ্জ, ছিয়াম এবং প্রতিটি আনুগত্যের বিষয়গুলো আল্লাহর স্মরণেই হতে হয়। ফলে হজ্জে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর স্মরণ আবশ্যক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মহান আল্লাহ বলেন, فَاِذَاۤ اَفَضۡتُمۡ مِّنۡ عَرَفٰتٍ فَاذۡکُرُوا اللّٰہَ عِنۡدَ الۡمَشۡعَرِ الۡحَرَامِ ۪ وَ اذۡکُرُوۡہُ  کَمَا ہَدٰىکُمۡ ‘তোমাদের কোন গুনাহ নেই। আর যখন তোমরা আরাফাত থেকে (মিনায়) ফিরবে, তখন (মুযদালিফায়) মাশ‘আরুল হারামে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তোমরা তাঁকে স্মরণ কর যেভাবে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৯৮)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ  یَاۡتُوۡکَ  رِجَالًا وَّ عَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ- لِّیَشۡہَدُوۡا مَنَافِعَ  لَہُمۡ  وَ یَذۡکُرُوا  اسۡمَ اللّٰہِ فِیۡۤ  اَیَّامٍ مَّعۡلُوۡمٰتٍ عَلٰی مَا رَزَقَہُمۡ مِّنۡۢ بَہِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ

‘আর তুমি মানুষের মাঝে হজ্জের ঘোষণা প্রচার করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার (পথশ্রান্ত) কৃশকায় উটের উপর সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত হতে। যাতে তারা তাদের (দুনিয়া ও আখেরাতের) কল্যাণের জন্য সেখানে উপস্থিত হতে পারে এবং রিযিক হিসাবে তাদের দেয়া গবাদিপশুসমূহ যব্হ করার সময় নির্দিষ্ট দিনগুলোতে তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে’ (সূরা আল-হজ্জ: ২৭-২৮)।

হজ্জের যাবতীয় বিষয় শুধু আল্লাহর স্মরণেই নিমিত্তেই হয়ে হয়ে থাকে। আল্লাহর স্মরণ যে শ্রেষ্ঠ আমল সে সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيْكِكُمْ وَأَرْفَعِهَا فِىْ دَرَجَاتِكُمْ وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ إِنْفَاقِ الذَّهَبِ وَالْوَرِقِ وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوْا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوْا أَعْنَاقَكُمْ قَالُوْا بَلَى قَالَ  ذِكْرُ اللهِ تَعَالَى

‘আমি কি তোমাদেরকে অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয় পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক হতে সবচেয়ে উঁচু। স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খায়রাত করার চেয়েও বেশী ভাল এবং তোমাদের শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা ও তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভাল। তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তা হল আল্লাহর স্মরণ’।[৭]

সুতরাং হজ্জব্রত পালনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর স্মরণ যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি আমাদের মর্যাদাও উত্তরোত্তর বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য বান্দাহ হিসাবে নিজেদের গুণগতমান বৃদ্ধি পায়।

২.৫ হজের মাধ্যমে ঈমানী চেতনা দৃঢ়করণ

ইসলাম কবুলের পূর্বশর্ত ঈমান; আল্লাহকে প্রভু হিসাবে স্বীকার করে নেয়া। এই ঈমান কখনও বাড়ে আবার কখনও কমে। আল্লাহর স্মরণ, আনুগত্য, তাওবা-ইস্তিগফার, উত্তম আচরণসহ ইত্যাদি কল্যাণমূলক কাজে ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পক্ষান্তরে অলসতা, অন্যায়, পাপাচারমূলক কাজে ঈমানী চেতনা কমে যায়। আর হজ্জ এমন একটি ইবাদত যার দ্বারা অন্তরের পরিশুদ্ধি লাভ হয়। ফলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। হজ্জের আহকাম, তাহযীব-তামাদ্দুনসহ যাবতীয় আমল পালনে ঈমানে পূর্ণতা আসে। আর একাগ্রচিত্তে আল্লাহর নিকট চাইলে তিনি তা গ্রহণ করেন। মহান আল্লাহ বলেনÑ

وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ ؕ اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ  اِذَا دَعَانِ  ۙ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ  لَعَلَّہُمۡ  یَرۡشُدُوۡنَ 

‘আর যখন আমার বান্দারা আপনাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, (তখন তাদের বলুন যে,) আমি অতীব নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে আহ্বান করে। অতএব তারা যেন আমাকে আহ্বান করে এবং আমার উপরে নিশ্চিন্ত বিশ্বাস রাখে। যাতে তারা সুপথপ্রাপ্ত হয়’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮৬)। আর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, الْحُجَّاجُ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللهِ، دَعَاهُمْ فَأَجَابُوْهُ، سَأْلُوْهُ فَأَعْطَاهُمْ ‘হজ্জ ও ওমরা পালনকারী ব্যক্তি আল্লাহর সৈনিক। তারা ডাকলে আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দিবেন এবং তারা আল্লাহর নিকট চাইলে আল্লাহ তাদের তা দিবেন’।[৮]

২.৬ হজ্জ মানে আল্লাহর ডাকে সাড়া দান

সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলিমের জন্য হজ্জ পালন করা ফরয ইবাদত। এতে আল্লাহর নির্দেশনা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَ اَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ  یَاۡتُوۡکَ  رِجَالًا وَّ عَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ ‘আর তুমি মানুষের মাঝে হজ্জের ঘোষণা প্রচার করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার (পথশ্রান্ত) কৃশকায় উটের উপর সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত হতে’ (সূরা আল-হজ্জ: ২৭)। আর সেই ডাকে মানুষ সাড়া দিয়ে হজ্জে لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ... উচ্চধ্বনিতে আকাশ-বাতাশ মুখরিত করে তোলে। আর উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশনা দিয়েছেন রাসূল (ﷺ)। তিনি বলেছেন, جَاءَنِىْ جِبْرِيْلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ مُرْ أَصْحَابَكَ فَلْيَرْفَعُوْا أَصْوَاتَهُمْ بِالتَّلْبِيَةِ فَإِنَّهَا مِنْ شِعَارِ الْحَجِّ ‘জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমার নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! তোমার অনুসারীদের নির্দেশ দাও তারা যেন উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করে। কেননা তা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্য হতে অন্যতম’।[৯] উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ হজ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُلَبِّى إِلَّا لَبَّى مَنْ عَنْ يَمِيْنِهِ أَوْ عَنْ  شِمَالِهِ مِنْ حَجَرٍ أَوْ شَجَرٍ أَوْ مَدَرٍ حَتَّى تَنْقَطِعَ الأَرْضُ مِنْ هَا هُنَا وَهَا هُنَا 

‘যখন কোন মুসলিম তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ডান ও বামে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সবকিছুই তার সাথে তালবিয়া পাঠ করে। এমনকি পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত (তালবিয়া পাঠকারীদের দ্বারা) পূর্ণ হয়ে যায়’।[১০]

পৃথিবীর সব কিছুই যে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন,

تُسَبِّحُ  لَہُ  السَّمٰوٰتُ السَّبۡعُ  وَ الۡاَرۡضُ وَ مَنۡ فِیۡہِنَّ ؕ وَ اِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ  اِلَّا یُسَبِّحُ بِحَمۡدِہٖ  وَ لٰکِنۡ لَّا تَفۡقَہُوۡنَ تَسۡبِیۡحَہُمۡ ؕ اِنَّہٗ  کَانَ حَلِیۡمًا غَفُوۡرًا

‘সাত আসমান ও যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সবকিছু তাঁরই পবিত্রতা ঘোষণা করে। আর এমন কিছু নেই যা তার প্রশংসাসহ মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা বর্ণনা তোমরা বুঝতে পারো না। নিশ্চয় তিনি অতীব সহনশীল ও ক্ষমাপরায়ণ’ (সূরা বানী ইসরাঈল: ৪৪)।

২.৭ নবী-রাসূলদের স্মরণ

হজ্জব্রত পালনে গেলে পূর্ববর্তী নবী-রাসূল ও তাদের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ হয়। বিশেষ করে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম), ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) ও মা হাযেরা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) সম্পর্কে। যেমন,

(১) পবিত্র কা‘বা ঘর দর্শনের সাথে সাথে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ও ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম)-এর কথা স্মরণ হয়। কা‘বা নির্মাণ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, وَ اِذۡ یَرۡفَعُ  اِبۡرٰہٖمُ  الۡقَوَاعِدَ مِنَ الۡبَیۡتِ وَ اِسۡمٰعِیۡلُ ؕ رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ  ‘আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল বায়তুল্লাহর ভিত্তি স্থাপন করেছিল, তখন তাঁরা প্রার্থনা করেছিল, হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদের পক্ষ হতে এটি কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (সূরা আল-বাক্বারাহ.: ১২৭)।

(২) মাক্বামে ইবরাহীম। যার উপর দাঁড়িয়ে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) কা‘বা ঘর নির্মাণ করেছিলেন। এখানে সাত ত্বাওয়াফ শেষে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হয়। আর সেটা মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে হওয়া বাঞ্চনীয় যদি না ভীড় থাকে। এতে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর স্মরণ করিয়ে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, وَ اتَّخِذُوۡا مِنۡ مَّقَامِ اِبۡرٰہٖمَ مُصَلًّی ‘তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানকে ছালাতের স্থান হিসাবে গ্রহণ কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১২৫)।

(৩) যমযম কূপ ও ছাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থলে সাঈ করার প্রাক্কালে মা হাজেরার সেই স্বগতোক্তির কথা মনে পড়ে যখন পিতা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) তাঁকে ও শিশু সন্তানকে এক বিরাণভূমিতে রেখে যাচ্ছিলেন, তখন মা হাযেরা বলেছিলেন, من أمرك أن تضعني بأرض ليس فيها ضَرْع ولا زرع ، ولا أنيس ، ولا زاد ولا ماء؟ ‘আপনি কার নির্দেশে আমাকে এমন জায়গায় রেখে যাচ্ছেন যেখানে কোন দুধ, শস্য বা মানুষ কিংবা খাদ্য-পানীয় নেই? তখন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন, ربي أمرني  ‘আমার প্রভু আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তখন মা হাযেরা বলেছিলেন, فإنه لن يضيِّعنا ‘নিশ্চয় তিনি আমাদের ধ্বংস করবেন না’।[১১]

(৪) একইভাবে আরাফায় অবস্থানের সময় রাসূল (ﷺ) ছাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, كُوْنُوْا عَلَى مَشَاعِرِكُمْ فَإِنَّكُمْ عَلَى إِرْثٍ مِنْ إِرْثِ إِبْرَاهِيْمَ  ‘হজ্জের নির্ধারিত স্থানসমূহে অবস্থান কর। কারণ তোমরা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর উত্তরাধীকার প্রাপ্ত হয়েছে’।[১২] নবীগণ দীনার ও দিরহামের ওয়ারিছ হন না; বরং তারা আল্লাহর দ্বীনের ওয়ারিছ হন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ ‘আরাফার দিনের দু‘আই উত্তম দু‘আ’।[১৩]

(৫) অনুরূপভাবে পাথর নিক্ষেপের সময় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর কথা। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে,

لما أتى إبراهيم خليل الله المناسك عرض له الشيطان عند جمرة العقبة فرماه بسبع حصيات حتى ساخ في الأرض ثم عرض له عند الجمرة الثانية فرماه بسبع حصيات حتى ساخ في الأرض ثم عرض له عند الجمرة الثالثة فرماه بسبع حصيات حتى ساخ في الأرض

‘যখন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) কুরবানগাহে আসছিলেন তখন জামরায়ে আক্বাবায় শয়তান ধোঁকা দিচ্ছিল। ফলে তিনি ৭টি পাথর নিক্ষপ করলে শয়তান মাটিতে গেড়ে যায়। অতঃপর দ্বিতীয় জামরায় শয়তান ধোঁকা দিলে তিনি পুনরায় ৭টি পাথর নিক্ষেপ করেন। এতে শয়তান মাটিতে দেবে যায়। এভাবে তৃতীয় জামরাতে শয়তান ধোঁকা দিলে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ৭টি পাথর নিক্ষেপের ফলে শয়তান মাটিতে দেবে যায়’।[১৪]

(৬) কুরবানী যব্হ করার সময়কালে সেই মহান ঘটনার কথা স্মরণ হয় যখন ইবরাহীম খলীল স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানী করছেন। এটা পুত্রের নিকট বর্ণনা করতেই তার দৃঢ়চিত্ত উত্তর আমাদের অন্তরাত্মাকে শিহরিত করে তোলে। যা কুরআনের ভাষায় এসেছে এভাবেÑ

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَہُ  السَّعۡیَ قَالَ یٰبُنَیَّ  اِنِّیۡۤ اَرٰی فِی الۡمَنَامِ اَنِّیۡۤ  اَذۡبَحُکَ فَانۡظُرۡ مَاذَا تَرٰی ؕ قَالَ یٰۤاَبَتِ افۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُ ۫ سَتَجِدُنِیۡۤ  اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ مِنَ الصّٰبِرِیۡنَ- فَلَمَّاۤ   اَسۡلَمَا وَ  تَلَّہٗ   لِلۡجَبِیۡنِ

‘অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরার বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহীম তাকে বলল, হে আমার বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমি তোমাকে যব্হ করছি। এখন ভেবে দেখ তোমার অভিমত কী? সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। এভাবে পিতা-পুত্র উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং পিতা যখন পুত্রকে তার চেহারা ধরে মাটিতে কাত করে শোয়ালো’...’ (সূরা আছ-ছাফফাত: ১০২-১০৩) ।

২.৮ রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণ

হজ্জের বিধি-বিধান ও নিয়ম-কানুনগুলো আমরা রাসূল (ﷺ)-এর পদ্ধতি অনুযায়ী পালন করার চেষ্টা করি। কোন্ কাজ করলে হজ্জের ত্রুটি হবে, কোন্ আমল সুন্নাত অনুযায়ী হবে এ বিষয়ে মনোনিবেশ করি। এ ক্ষেত্রে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কথা প্রণিধানযোগ্য। তিনি হাযারে আসওয়াদকে চুম্বনের প্রাক্কালে বলেছিলেন,

إِنِّىْ أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لَا تَضُرُّ وَلَا تَنْفَعُ ، وَلَوْلَا أَنِّىْ رَأَيْتُ النَّبِىَّ ﷺ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ 

‘আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র। তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী (ﷺ)-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না’।[১৫]

২.৯ মুশরিকদের আমলের বিরুদ্ধাচরণ

জাহেলী যুগে মুশরিকরা যেভাবে হজ্জ পালন করত তা রাসূল (ﷺ) সমূলে পরিবর্তন করে দেন। হজ্জের ভাষণে তিনি বলেন,

أَلَا كُلُّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَىَّ مَوْضُوْعٌ وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوْعَةٌ وَإِنَّ أَوَّلَ دَمٍ أَضَعُ مِنْ دِمَائِنَا دَمُ ابْنِ رَبِيْعَةَ بْنِ الْحَارِثِ كَانَ مُسْتَرْضِعًا فِىْ بَنِىْ سَعْدٍ فَقَتَلَتْهُ هُذَيْلٌ وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوْعٌ وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَإِنَّهُ مَوْضُوْعٌ كُلُّهُ

‘সাবধান! জাহেলী যুগের সকল ব্যাপার (অপসংস্কৃতি) আমার উভয় পায়ের নিচে। জাহেলী যুগের রক্তের দাবিও বাতিল হল। আমি সর্বপ্রথম যে রক্তপণ বাতিল করছি তা হল আমাদের বংশের রবী‘আহ ইবনু হারিসের পুত্রের রক্তপণ। সে শিশু অবস্থায় বানু সা‘দ গোত্রে দুগ্ধপোষ্য ছিল। তখন হুযায়েল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে। জাহেলী যুগের সূদও বাতিল। আমি প্রথম যে সূদ হারাম করছি তা হল আমাদের বংশের আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিবের সূদ। তার সমস্ত সূদ বাতিল হল’।[১৬]

সুতরাং হজ্জব্রত পালন অবস্থায় যাবতীয় অপকর্ম ও জাহেলিয়াত থেকে দূরে থাকতে হবে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

أَبْغَضُ النَّاسِ إِلَى اللهِ ثَلَاثَةٌ مُلْحِدٌ فِى الْحَرَمِ ، وَمُبْتَغٍ فِى الإِسْلَامِ سُنَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ ، وَمُطَّلِبُ دَمِ امْرِئٍ بِغَيْرِ حَقٍّ لِيُهَرِيْقَ دَمَهُ

‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত লোক হচ্ছে তিনজন। (১) যে লোক হারাম শরীফে অন্যায় ও অপকর্মে লিপ্ত হয়। (২) যে লোক ইসলামী যুগে জাহেলী যুগের রীতিনীতি অন্বেষণ করে। (৩) যে লোক ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া কারো রক্ত দাবী করে’।[১৭]

২.১০ আখিরাতের কথা স্মরণ

আখিরাতের চিত্র সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَوْ قَالَ الْعِبَادُ عُرَاةً غُرْلًا بُهْمًا قَالَ قُلْنَا مَا بُهْمًا قَالَ لَيْسَ مَعَهُمْ شَىْءٌ

‘মানুষ ক্বিয়ামতের দিন একত্রিত হব খালি পায়ে বিবস্ত্র ও বুহম অবস্থায়। রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল বুহম কী? তিনি বললেন, যাদের নিকট কিছুই থাকবে না’।[১৮] একজন ব্যক্তি ইহরাম বাঁধার পর ক্ষেতখামার, ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক লেনদেন কোন কিছুই চলবে না। ফলে সকলের একই ইহরামের পোশাক ক্বিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। একইভাবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের আশায় সকল হজ্জব্রত পালনকারী ব্যক্তি আরাফার মাঠে একত্রিতভাবে অবস্থান করবে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيْهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ ‘আরাফার দিবসের ব্যতীত আর এমন কোন দিন নেই যেদিন আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক সংখ্যক লোককে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন’।[১৯] সুতরাং আরাফার ময়দানে অবস্থানও মানুষকে আখিরাতের স্মরণ করিয়ে দেয়। জ্ঞাতব্য যে, আরাফার মাঠে বিশেষভাবে দু‘আ করতে হবে। কেননা এই দিনের দু‘আ আল্লাহ কবুল করে থাকেন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ ‘আরাফার দিনের দু‘আই হল সর্বোত্তম দু‘আ’।[২০]

২.১১ ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি

হজ্জে বিভিন্ন দেশ, ভাষা ও বর্ণের লোক একত্রিত হয়। আর প্রত্যেকেই তাক্বওয়া অর্জনের প্রতিযোগিতা করে। রাসূল (ﷺ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَلَا إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ أَلَا لَا فَضْلَ لِعَرَبِىٍّ عَلَى أَعْجَمِىٍّ وَلَا لِعَجَمِىٍّ عَلَى عَرَبِىٍّ وَلَا لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ وَلَا أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ إِلَّا بِالتَّقْوَى أَبَلَّغْتُ

‘হে লোক সকল! জেনে রাখ তোমাদের প্রভু একজন, তোমাদের পিতা একজন। জেনে রাখ! অনারবদের উপর আরবদের এবং আরবদের উপর অনারবদের কোন প্রাধান্য নেই তাক্বওয়া ব্যতীত। একইভাবে কালোর উপর লালের ও লালের উপর কালোর কোন প্রাধান্য নেই তাক্বওয়া ব্যতীত’।[২১]

২.১২ উত্তম চরিত্র গঠন

হজ্জ উত্তম চরিত্র গঠনের একটি অন্যতম শিক্ষা কেন্দ্র। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, مَنْ حَجَّ لِلهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করল এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হতে বিরত রইল সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে হজ্জ হতে ফিরে আসবে যেদিন তাকে তার মাতা জন্ম দিয়েছিল’।[২২] বিদায় হজ্জে রাসূল (ﷺ) বলেছিলেন,

أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِالْمُؤْمِنِ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَالْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ النَّاسُ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ 

‘আমি তোমাদেরকে মুমিন ব্যক্তি সম্পর্কে বলে দিব না? মুমিন হল সেই ব্যক্তি মানুষ যাকে নিজের জীবন ও সম্পদের ব্যাপারে আশংকামুক্ত মনে করে এবং মুসলিম সেই ব্যক্তি যার জিহ্বা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ’।[২৩] অপর হাদীছে রাসূল (ﷺ) উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলেছেন,

يَا عُمَرُ إِنَّكَ رَجُلٌ قَوِىٌّ لَا تُزَاحِمْ عَلَى الْحَجَرِ فَتُؤْذِىَ الضَّعِيْفَ إِنْ وَجَدْتَ خَلْوَةً فَاسْتَلِمْهُ وَإِلَّا فَاسْتَقْبِلْهُ فَهَلِّلْ وَكَبِّرْ

‘হে ওমর! নিশ্চয় তুমি শক্তিশালী পুরুষ। তুমি হাজরে আসওয়াদের  নিকট ঠেসাঠেসি কর না। যাতে দুর্বলরা কষ্ট পায়। যদি তুমি ফাঁকা পাও তাহলে তুমি পাথরকে (হাযার আসওয়াদকে) চুম্বন করবে’।[২৪]

অত্র হাদীছে রাসূল (ﷺ) উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে দুর্বলদের প্রতি  সদয় হতে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং হজ্জে গেলে পরস্পর পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি হয়।

৩. হজ্জ পরবর্তী করণীয়

আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশনা অনুযায়ী হজ্জ চলাকালীন সময়ে অশ্লীলতা, কুৎসা, অন্যায় আচরণ, ঝগড়া ও কলহ-বিবাদ কনা যায় না (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৯৭)। হজ্জের এই শিক্ষা হজ্জ পরবর্তী সময়ে নিজের জীবনে আজীবন লালন ও ধারণ করতে হবে। সর্বদা তর্কবিতর্ক ও ঝগড়াবিবাদ পরিহার করে চলতে হবে। কারও ব্যবহার পসন্দ না হলেও রাগ করা যাবে না বা কটু কথা বলা যাবে না, কারও মনে কষ্ট দেয়া যাবে না। কারও দ্বারা যদি কারও কোন ক্ষতি হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। সব সময় ওযূর সঙ্গে থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং মনে সব সময় আল্লাহর যিকির জারি রাখতে হবে। নিজের স্বার্থ আগে উদ্ধার করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। নিজের আগে অন্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোন মানুষের হক নষ্ট করা যাবে না।

পবিত্র কুরআনের সর্বশেষ সূরায় সর্বশেষ আয়াতে দুই প্রকার শয়তানের কথা উল্লেখ আছে, ‘এই দুই ভয় হলো জিন শয়তান ও মানুষ শয়তান’ (সূরা আন-নাস: ৬)। এ ছাড়া রয়েছে নফস শয়তান। ত্রিবিধ শয়তানের প্ররোচনা ও তাড়না থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং মনোজগতে শয়তানি শৃঙ্খলবন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার এবং সব ধরনের শয়তানি ভাব ও প্রভাব মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে একমাত্র বিবেকের অনুসরণে মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত তথা আনুগত্য করাই হলো শয়তানকে পাথর মারার মূল রহস্য। হজ্জ পরবর্তী সময়েও যাবতীয় শয়তানী কার্যক্রম থেকে দূরে থাকতে হবে।

পৃথিবীর সব মানুষ একই পিতা-মাতার সন্তান। মানুষে মানুষে কোন প্রকার ভেদাভেদ নেই, সাদাকালোয় কোনো প্রভেদ নেই। বর্ণবৈষম্য ও বংশকৌলীন্য এগুলো মানুষের কৃত্রিম সৃষ্টি। পদ-পদবি ও অবস্থানগত পার্থক্য মানুষের মধ্যে অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে। হজ্জের মাধ্যমে তা দূরীভূত হয়। হজ্জকে মানবতার প্রশিক্ষণ বলা যায়। হজ্জের ছয় দিন এই প্রশিক্ষণই হয়। জিলহজ্জ মাসের ৭ তারিখে সব হাজি মিনার তাঁবুতে গণবিছানায় গিয়ে একাত্মতার ঘোষণা দেন। জিলহজ্জের ৯ তারিখে হাজিরা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে ঐক্যের অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেন; মিলিত হন আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলনে। এদিন সন্ধ্যা (১০ জিলহজ্জের রাতে) হাজিরা মুজদালিফায় গিয়ে সব কৃত্রিমতার অবসানের মাধ্যমে মানবতার পূর্ণতা ও আদি আসল প্রকৃত মানব রূপ লাভ করেন। সবার পদতলে মৃত্তিকা, মাথার ওপরে উন্মুক্ত আকাশ, সবার পরনে একই কাপড়। পোশাকে বাহুল্য নেই, খোলা মাথা-পাগড়ি, টুপি ও লম্বা চুলের আড়ম্বর নেই; সঙ্গে সেবক-কর্মচারী নেই, গন্তব্য এক হলেও রাস্তা জানা নেই, নিজের শক্তি-সামর্থ্য ও জ্ঞানগরিমার প্রকাশ নেই, বুদ্ধি-বিবেচনা ও কৌশল প্রয়োগের সুযোগ নেই; শুধুই আল্লাহর ওপর ভরসা। এটিই হজ্জের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও আসল শিক্ষা। এই চেতনায় বাকী জীবনেও কোন ধরনের মানুষে মানুষে বৈষম্য করা থেকে হাজিরা বিরত থাকবে।

কুরবানীর মূল প্রতিপাদ্যই হলো প্রিয়তমের জন্য অন্য সবকিছু বিসর্জন দেয়া। পশু কুরবানি একটি প্রতীক মাত্র। মনের মধ্যে যে পশুবৃত্তি বিদ্যমান, তাকে পরাভূত ও পরাজিত করাই হলো পশু যব্হ বা পশু কুরবানির আনুষ্ঠানিক শিক্ষা। এর মাধ্যমে মনের সব কুপ্রবৃত্তিকে চিরতরে বিদায় করা এবং চরিত্রের সব কুস্বভাব পরিত্যাগ করাই মূল উদ্দেশ্য। হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিজ নিজ দেশে ফিরে এসে হাজিগণ এই চেতনা লালন ও অনুশীলন করবেন। সার্বক্ষনিক রিপুর চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং যাবতীয় শয়তানি কার্যত্রম থেকে দূরে থাকবেন। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে সন্তুষ্ট করার জন্য যাবতীয় ইবাদত করবেন। বাকী জীবন শিরক থেকে নিজেরা বিরত থাকবেন এবং পরিবারকেও বিরত রাখবেন।

হজ্জের সময় বর্ণ, শ্রেণি, দেশ, জাতি, মত, পথ ও পেশা নির্বিশেষে সব দেশের সব মানুষ এক ইমামের পেছনে ছালাত আদায় করেন। এ হলো ‘ভিন্নমতসহ ঐক্য’-এর অনন্য দৃষ্টান্ত। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ সহাবস্থান করেন বলে ভাষার দূরত্ব দূর হয়ে মনের নৈকট্য অর্জিত হয় এবং প্রকৃত মানবিক অনুভূতি জাগ্রত হয়। মনের সংকীর্ণতা দূর হয়, দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হয়, চিন্তার বিকাশ সাধিত হয়। যাঁরা হজ্জের শিক্ষা লাভে ধন্য হন, তাঁরাই প্রকৃত হাজী। হজ্জ ইবাদত, এটি কোন সার্টিফিকেট কোর্স বা পদ-পদবি নয়। হজ্জ করার পর নিজ থেকেই নামের সঙ্গে হাজি বিশেষণ যোগ করা সমীচীন নয়। কবুল করার মালিক আল্লাহ। কিছু বাহ্যিক আলামত বা নিদর্শন রয়েছে, যাতে হজ্জ কবুল হলো কি হলো না, তা সাধারণভাবে বোঝা যায়। যেমন হজ্জের পরে কাজে-কর্মে, আমলে-আখলাকে, চিন্তা-চেতনায় পরিশুদ্ধি অর্জন করা বা পূর্বাপেক্ষা উন্নতি লাভ করা। হজ্জ করা বড় কথা নয়; জীবনব্যাপী হজ্জ ধারণ করাই আসল সার্থকতা।



* সহকারী অধ্যাপক (বিসিএস সাধারণ শিক্ষা), সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা।

তথ্যসূত্র:
[১]. সূরা আন-নিসা: ৪৮ ও ১১৬; এ ছাড়াও শিরকের বহুমাত্রিক ক্ষতি নিয়ে অন্য সূরায় অনেক আয়াত রয়েছে। দেখুনÑ সূরা আন-নিসা: ১৮; ১০৩-১০৪; সূরা আল-ফুরক্বান: ২৩; আয-যুমার: ৬৫।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৮৪; ১২১৮।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৮৫।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫২১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৫০।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২১।
[৬]. তিরমিযী, হা/২১১; ইবনু মাজাহ, হা/২৮৮৭।
[৭]. তিরমিযী, হা/৩৩৭৭; মিশকাত, হা/২২৬৯, সনদ ছহীহ।
[৮]. সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৮২০।
[৯]. ইবনু মাজাহ, হা/২৯২৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১২৭৮, সনদ ছহীহ।
[১০]. তিরমিযী, হা/৮২৮; মিশকাত, হা/২৫৫০, সনদ ছহীহ।
[১১]. তাফসীর ইবনু জারীর, ১৩শ খণ্ড, পৃ. ৬৯২।
[১২]. তিরমিযী, হা/৮৮৩; নাসাঈ, হা/৩০১৪, সনদ ছহীহ।
[১৩]. তিরমিযী, হা/৩৫৮৫; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৫০৩।
[১৪]. হাকেম, হা/১৭১৫; সনদ ছহীহ, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১৫৬।
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১২৭০।
[১৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৮৮২।
[১৮]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬০৮৫, সনদ হাসান।
[১৯]. সহীহ মুসলিম, হা/১৩৪৮।
[২০]. তিরমিযী, হা/৩৫৮৫, সনদ ছহীহ।
[২১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৫৩৬, সনদ ছহীহ।
[২২]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫২১।
[২৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০০৪, সনদ ছহীহ।
[২৪]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০, সনদ হাসান।




প্রসঙ্গসমূহ »: হজ্জ ও ওমরাহ
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ (শেষ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
বিদ‘আত পরিচিতি (৮ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
আল-কুরআনের ব্যাপারে অমুসলিমদের মিথ্যা অভিযোগ ও তার খণ্ডন - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় (৫ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সুন্নাতের রূপরেখা (শেষ কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
অল্পে তুষ্ট (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
তারুণ্যের উপর সন্ত্রাসবাদের হিংস্র ছোবল : প্রতিকারের উপায় (শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
গাযওয়াতুল হিন্দ : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ - হাসিবুর রহমান বুখারী
আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি (৩য় কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
ফাযায়েলে কুরআন - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ