বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায়
-মূল : মুহাম্মাদ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ
-অনুবাদক : আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ*

শাহাদত আঙ্গুলিকে বারবার নাড়াচাড়া করানো
এটা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল, যার ব্যাপারে অধিকাংশ মুছল্লীই উদাসীন এবং অবহেলার শিকার। এমনকি মুছল্লিরা এর বিশাল উপকারিতা এবং ছালাতে খুশূ‘ তথা বিনয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে এর প্রভাব সম্পর্কে অবগত নয়। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لَهِىَ أَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنَ الْحَدِيْدِ ‘এটা শয়তানের জন্য লোহার-পিটুনির চেয়েও অধিক বেশী কঠিন এবং কষ্টদায়ক’।[১] অর্থাৎ, ছালাতে তাশাহ্হুদ পড়ার সময় শাহাদত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা শয়তানের নিকট তাকে লোহা দ্বারা পিটুনি দেয়ার চেয়ে অধিক বেশী কষ্টকর। কেননা তা মুছল্লীকে ছালাতে আল্লাহর এককত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ইবাদতে ইখলাছ তথা আল্লাহভীতি আনয়নে সাহায্য করে। আর এ দু’টি এমন মহান বিষয়, যা শয়তান খুবই অপসন্দ করে। আমরা এর থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চাই।[২]

এই আমলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী হওয়ার কারণে ছাহাবীগণ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) পরস্পরের মাঝে আমলটি সম্পর্কে উপদেশ প্রদান করতেন এবং তারা আমলটি করার প্রতি খুবই আগ্রহী ছিলেন। এমনকি তারা আমলটি পালনের ক্ষেত্রে নিজেরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। পক্ষান্তরে বর্তমানে আমাদের অধিকাংশ মুছল্লীই আমলটিকে গুরুত্বহীন এবং এর প্রতি অবহেলার কারণে একে ছেড়ে দেয়। যেমন একটি আছার এ বর্ণিত হয়েছে,

كَانَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَأْخُذُ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ يَعْنِيْ الْإِشَارَةُ بِالأُصْبُعِ فِي الدُّعَاءِ

‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীগণ পরস্পরকে এ আমলটির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেন। অর্থাৎ, তাশাহ্হুদে দু‘আর সময় শাহাদত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা সম্পর্কে’।[৩] তাশাহ্হুদে শাহাদত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করার নিয়ম হল, মুছল্লী যতক্ষণ পর্যন্ত তাশাহ্হুদ পাঠ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত শাহাদত আঙ্গুল উচুঁ করে ক্বিবলার দিকে ইশারা করে নাড়াচাড়া করতে থাকবে।

ছালাতে তিলাওয়াতকৃত সূরা, আয়াত, যিক্র এবং দু‘আ পাঠের ক্ষেত্রে পরিবর্তন তথা ভিন্নতা আনা
একজন মুছল্লী যখন ছালাতে ভিন্ন-ভিন্ন সূরা, আয়াত, বিভিন্ন ধরনের যিক্র এবং দু‘আ পাঠ করবে, তখন এগুলো তার ছালাতরত অবস্থায় তার মাঝে নতুন এবং উপভোগ্য অনুভূতির আবির্ভাব ঘটাবে এবং তার মাঝে নতুনত্ব আনয়নে সহায়ক হবে। পক্ষান্তরে যারা মাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট সূরা; বিশেষ করে শুধু ছোট সূরাগুলো এবং গুটি কয়েক দু‘আ মুখস্থ করে এই উপভোগ্য এবং প্রশান্তির অনুভূতি পাওয়া তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। মূলত ছালাতে তিলাওয়াতকৃত সূরা, আয়াত, যিক্র এবং দু‘আ পাঠের ক্ষেত্রে পরিবর্তন তথা ভিন্নতা আনা সুন্নাত এবং এটা ছালাতে মুছল্লির খুশূ‘-একাগ্রতা ও বিনয়ী হওয়ার পরিপূরক। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্বীয় ছালাতে যা তিলাওয়াত করতেন এবং যে সকল যিক্র-দু‘আ পাঠ করতেন আমরা সেগুলো নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করলে এ ভিন্নতা দেখতে পাব এবং আমাদের নিকট তা স্পষ্ট হবে।

ছালাতের শুরুতে আমরা যে দু‘আটি পাঠ করি সে দু‘আটির ক্ষেত্রে আমরা একাধিক নছ তথা বর্ণনা দেখতে পাই। যেমন, এক বর্ণনায় নিম্নোক্ত দু‘আটি উল্লেখ রয়েছে:

اَللّٰهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِىْ وَ بَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَ الْمَغْرِبِ اَللّٰهُمَّ نَقِّنِىْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاىَ بَالْمَاءِ وَ الثَّلْجِ وَ الْبَرَدِ

‘হে আল্লাহ! আমার ও আমার পাপ সমূহের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেরূপ আপনি দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার পাপসমূহ হতে পরিচ্ছন্ন করুন, যেরূপ পরিচ্ছন্ন করা হয় ময়লা থেকে সাদা কাপড়কে। হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপসমূহ ধুয়ে ফেলুন পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা’। অপর এক বর্ণনায় নিম্নোক্ত দু‘আটি এসেছে:

وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّموَاتِ وَالْأرْضَ حَنِيْفًا وَّ مَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ إنَّ صَلَاتِىْ وَ نُسُكِىْ وَ مَحْيَاىَ وَ مَمَاتِىْ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَ بِذَلِكَ أُمِرْتُ وَ أَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ

‘আমি আমার মুখমণ্ডল ফিরাচ্ছি তাঁর দিকে, যিনি আসমান ও যমীনসমূহ সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার ছালাত, আমার ইবাদত বা কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ আল্লাহ্র জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। আর এ জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’। আবার অপর এক বর্ণনায় নিম্নোক্ত দু‘আটি এসেছে, سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالَى جَدُّكَ وَ لَا إله غَيْرُكَ ‘হে আল্লাহ! প্রশংসা সহকারে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বরকতময় হোক, আপনার নাম সুউচ্চ হোক। আপনি ব্যতীত কোন সত্য মা‘বূদ নেই’।

আলোচ্য যিক্র এবং দু‘আ সমূহের ভিন্নতার জন্য বিধান হল, একজন মুছল্লী তার ছালাতে সাধ্যানুযায়ী একেক সময় একেকটি দু‘আ পড়বে অর্থাৎ, দু‘আ এবং যিক্র পাঠের ক্ষেত্রে পরিবর্তন ও ভিন্নতা আনবে।

আবার ফজরের ছালাতে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তিলাওয়াতকৃত সূরার ক্ষেত্রে আমরা ভিন্ন ভিন্ন বরকতপূর্ণ আমল দেখতে পাই। যেমন, তিনি কখনও কখনও ‘ত্বিওয়ালে মুফাছ্ছাল’ তথা- সূরা ওয়াক্বি‘আহ, সূরা ত্বূর এবং সূরা ক্বফ্ পড়তেন। আবার কখনও কখনও ‘কিছারে মুফাছ্ছাল’ তথা- সূরা আশ্-শাম্স, সূরা যিলযাল, সূরা ফালাক্ব-নাস (মু‘আওভিযাতাইন) তিলাওয়াত করতেন। আরও বর্ণিত আছে যে, তিনি সূরা রূম, সূরা ইয়াসীন, সূরা ছাফ্ফাত পড়তেন। আর তিনি জুম‘আর দিন ফজরের ছালাতে সূরা সাজ্দাহ্ এবং সূরা ইনসান (দাহ্র) তিলাওয়াত করতেন।

যুহরের ছালাত সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি যুহরের ছালাতের দু’রাক‘আতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতেন। আর তিনি এ ছালাতে সূরা ত্বারিক্ব, সূরা বুরূজ, সূরা লাইল তিলাওয়াত করতেন।

আছরের ছালাতে তিনি দু’রাক‘আতে পনের আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতেন। আর তিনি ‘আছরের ছালাতে যুহরের ছালাতে পঠিত সূরাগুলো (সূরা ত্বারিক্ব, সূরা বুরূজ, সূরা লাইল) তিলাওয়াত করতেন।

মাগরিবের ছালাতে তিনি ‘ক্বিছারে মুফাছ্ছাল’ থেকে তিলাওয়াত করতেন। যেমন, সূরা ত্বীন। এছাড়াও তিনি সূরা মুহাম্মাদ, সূরা ত্বূর, সূরা মুরসালাত তিলাওয়াত করতেন।

‘এশা’-র ছালাতে তিনি ‘ওয়াসাতে মুফাছ্ছাল’ থেকে তিলাওয়াত করতেন। যেমন, সূরা আশ্-শাম্স, সূরা ইনশিক্বাক্ব তিলাওয়াত করতেন। আর নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু‘আয (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে সূরা আ‘লা, সূরা ক্বলাম, সূরা লাইল তিলাওয়াত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ক্বিয়ামুল্-লাইল তথা তাহাজ্জুদের ছালাতে তিনি ‘ত্বিওয়ালে সুওয়ার’ তথা দীর্ঘ সূরাগুলো তিলাওয়াত করতেন। তাহাজ্জুদের ছালাতে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তিলাওয়াতের সুন্নাত সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি দু’শ’ কিংবা দেড়শ’ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। আবার কখনও কখনও তিলাওয়াত সংক্ষিপ্ত করতেন।

আর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ‘র দু‘আ সর্বদা একটি পড়তেন না, বরং দু‘আ পড়ার ক্ষেত্রে ভিন্নতা আনতেন অর্থাৎ একেক সময় একেকটি পড়তেন। যেমন,

তিনি কখনও পড়তেন, سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ

আবার কখনও পড়তেন, سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهِ

আবার কখনও পড়তেন, سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رّبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ

আবার কখনও পড়তেন,

اَللّٰهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَ بِكَ اَمَنْتُ وَ لَكَ أَسْلَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ خَشَعَ سَمْعِىْ وَ بَصَرِىْ وَدَمِيْ وَلَحْمِيْ وَ عَظْمِىْ وَ عَصَبِىْ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ سَمِعَ اللهُ لِمَنَ حَمِدَهُ

‘হে আল্লাহ! আমি আপনারই জন্য রুকূ‘ করছি, একমাত্র আপনারই প্রতি ঈমান এনেছি। একমাত্র আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছি। আপনার উপরই ভরসা করছি। আমার কান, চোখ, মস্তিষ্ক, হাড়, স্নায়ূ আপনার ভয়ে-শ্রদ্ধায় বিনয়াবনত’।[৪]

আর রুকূ‘ থেকে ওঠে  سَمِعَ اللهُ لِمَنَ حَمِدَهَ বলার পর বলতেন, ربَّنا وَ لَكَ الْحَمْدُ ‘হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আপনারই’। আবার কখনও পড়তেন, ربَّنَا لَكَ الْحَمْدُ আবার কখনও পড়তেন, اَللهم ربَّنا وَلَكَ الْحَمْدُ

আবার কখনও আরও বৃদ্ধি করে বলতেন, مِلْأُ السَّمَوَاتِ وَ مِلْأُ الْأَرْضِ وَ مِلْأُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْئٍ بَعْدُ ‘হে আল্লাহ! আপনারই প্রশংসা যা আসমান পরিপূর্ণ, যমীন পরিপূর্ণ এবং আপনি যা চান তা পরিপূর্র্ণ’। আবার কখনও বৃদ্ধি করে এ দু‘আ বলতেন,

أَهْلُ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أعْطَيْتَ وَ لَا مُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَ لَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

‘হে প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! আপনি যা প্রদান করবেন, তাতে বাধা দেয়ার কেউ নেই। আর আপনি যাতে বাধা প্রদান করবেন, তা প্রদানের কেউ নেই। কোন সম্পদশালীর সম্পদ আপনার শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারবে না। সে সম্পদও আপনার নিকট থেকে প্রাপ্ত’।[৫]

আর সিজদায় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অতিরিক্ত করে বলতেন, سُبْحَانَ رَبِّىَ الأَعْلَى এবং বলতেন, سُبْحَانَ رَبِّىَ الأَعْلَى وَبِحَمْدِهِ। এছাড়া তিনি আরও বলতেন, سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ ‘(আল্লাহ) স্বীয় সত্তায় পবিত্র এবং গুণাবলীতেও পবিত্র যিনি ফেরেশতাকুল এবং জিবরীল (আলাইহিস সালাম)-এর প্রতিপালক’।[৬] এবং سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ رَبَّنَا وَ بِحَمْدِكَ اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ ‘হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ! আপনার প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা বর্ণনা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে আপনি মাফ করে দিন’। এবং

اَللّٰهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَ بِكَ أَمَنْتُ وَ لَكَ أَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَهُ وَ صَوَّرَهُ وَ شَقَّ سَمْعَهُ وَ بَصَرَهُ تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

‘হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য সিজদা করছি, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনার জন্য নিজেকে সপে দিয়েছি। আমার মুখম-ল সিজদায় অবনত হয়েছে সেই সত্তার জন্য, যিনি উহাকে সৃষ্টি করেছেন, উহার আকৃতি দান করেছেন এবং উহার কান ও চোখ খুলে দিয়েছেন। মঙ্গলময় আল্লাহ তা‘আলা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকর্তা’। ইত্যাদি ইত্যাদি দু‘আ নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পড়তেন।

আর দু’সিজদার মাঝে বসার সময় বলতেন, رَبِّ اغْفِرْ لِىْ رَبِّ اغْفِرْ لِىْ ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন’ এবং اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِىْ وَ ارْحَمْنِىْ وَاجْبُرْنِيْ وَ اهْدِنِىْ وَ عَافِنِىْ وَ ارْزُقْنِى ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন’।

আর তাশাহ্হুদের দু‘আর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন, এক বর্ণনায় এসেছে,

اَلتَّحِيَّاتُ لِلهِ وَ الصَّلَوَاتُ وَ الطَّيِّبَاتُ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِىُّ وَ رَحْمَةُ اللهِ وَ بَرَكَاتُهُ اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَ عَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ أَشْهَدُ أنْ لَا إِلَهَ إلاَّ اللهُ وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ

‘মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক সমস্ত ইবাদত আল্লাহ্র জন্য। হে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার উপর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের উপর এবং নেক বান্দাদের উপরও শান্তি অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য আর কোন মা‘বূদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার বান্দা এবং রাসূল’। অনুরূপভাবে বর্ণিত হয়েছে,

اَلتَّحِيَّاتُ الْمُبَارَكَاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ لِلهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ

অনুরূপভাবে আরও বর্ণিত হয়েছে,

اَلتَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ

সুতরাং একজন মুছল্লী শধু একটি দু‘আ পড়বে না বরং তার দু‘আ পড়ার ক্ষেত্রে ভিন্নতা আনবে তথা একেক সময় একেক দু‘আ পড়বে।

ছালাতে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠের ভিন্নতায় একাধিক দরূদ বর্ণিত হয়েছে। যেমন,

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّ عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّ عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ

‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেভাবে রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! বরকত অবতীর্ণ করুন মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর, যেভাবে আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত’। অপর এক বর্ণনায় আছে,

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ بَيْتِهِ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ

অপর এক বর্ণনায় আছে,

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِىِّ الْأُمِّىِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِىِّ الْأُمِّىِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آل إِبْرَاهِيْمَ فِي الْعَالَمِيْنَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পড়ার জন্য এরকম আরও অনেক দরূদ বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সুন্নাত হল উপরিউক্ত উল্লিখিত দু‘আগুলো একেকটা একেক সময় পড়া। শক্তিশালী দলীল দ্বারা প্রমাণিত, ছহীহ হাদীছের গ্রন্থ সমূহে প্রসিদ্ধ, কিংবা ছাহাবীগণ নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি যদি নির্দিষ্ট কোন দু‘আ শিক্ষা দেন, ভিন্ন কোন দু‘আ শিক্ষা না দেন, তাহলে নির্দিষ্ট কোন একটি দু‘আ সর্বদা পড়তে কোন বাধা-প্রতিবন্ধকতা নেই। উপরে যে সকল দলীল ও দু‘আ বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো সবই আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক প্রণীত ‘ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’ তথা ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছালাত সম্পাদনের পদ্ধতি’ নামক গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। যেগুলো তিনি হাদীছের গ্রন্থ সমূহ থেকে গবেষণা করে একত্রিত করেছেন।

[ইনশাআল্লাহ চলবে]

* অধ্যয়নরত, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।

[১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৬০০০, ২য় খণ্ড, পৃ. ১১৯, সনদ হাসান; মিশকাত, হা/৯১৭; নাছিরুদ্দীন আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), পৃ. ১৫৯।

[২]. ইমাম সা‘আতী, আল্-ফাৎহুর রব্বানী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৫।

[৩]. ইবনু আবী শায়বাহ, সনদ হাসান, নাছিরুদ্দীন আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

, পৃ. ১৪১; আবূ শায়বাহ, মুছান্নাফ (হিন্দ : দারুস সালাফিয়্যাহ, তাবি), ১০ম খণ্ড, পৃ. ৩৮১, হা/৯৭৩২।

[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; মিশকাত, হা/৮১৩।

[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০৯৯; মিশকাত, হা/৮৬৭।

[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১১৯; মিশকাত, হা/৮৭২।




প্রসঙ্গসমূহ »: ছালাত আমল
জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ - অনুবাদ : মুহাম্মদ ইমরান বিন ইদরিস
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
মাহে রামাযানে শিশু-কিশোর প্রতিপালন - আব্দুর রশীদ
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
ইসলামী সংগঠন ও তরুণ-যুবক-ছাত্র - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
হজ্জের শিক্ষা ও হজ্জ পরবর্তী করণীয় - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
মুসলিম উম্মাহর বিভ্রান্তির কারণ ও উত্তরণের উপায় (২য় কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
মীলাদুন্নবী ও আমাদের অবস্থান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামী উত্তরাধিকার আইন: উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ধারা - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
সালাফী মানহাজের মূলনীতিসমূহ (৩য় কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
ভ্রান্ত ফের্কাসমূহের ঈমান বনাম আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ঈমান : একটি পর্যালোচনা - ড. আব্দুল্লাহিল কাফী বিন লুৎফর রহমান মাদানী

ফেসবুক পেজ