ফাযায়েলে কুরআন
-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*
(২য় কিস্তি)
সূরা ও আয়াত পরিচিতি
মাক্কী ও মাদানী সূরাসমূহ : আল-কুরআনের মোট সূরা ১১৪টি, পারা ৩০টি, রুকূ ৫৫৮টি। কুরআন মাজীদের কিছু সূরা ও আয়াত মাক্কী এবং কিছু মাদানী। মাক্কী সূরা হল মদীনায় হিজরতের পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে। সেটা মক্কায় হোক বা অন্য কোন স্থানে অবতীর্ণ হোক না কেন।[১] যেমন- সূরা ক্বাফ, হুদ, ইউসুফ ইত্যাদি। মাক্কী সূরা ও আয়াতে সাধারণত মহান আল্লাহর তাওহীদ, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রিসালাত ও পরকাল সম্বন্ধে আলোচিত হয়েছে।[২]
মাদানী সূরা হল মদীনায় হিজরতের পর যা অবতীর্ণ হয়েছে। সেটা মদীনায় হোক, কোন সফরে বা যুদ্ধে হোক বা অন্য কোন স্থানে অবতীর্ণ হোক না কেন। অথবা মক্কা বিজয়ের দিনে হোক।[৩] যেমন- সূরা আল-বাক্বারাহ, আলে ‘ইমরান ইত্যাদি। মাদানী আয়াতে সাধারণত সামাজিক বিধি-বিধান ফৌজদারী আইন-কানুন, যুদ্ধ ও রাজনৈতিক বিধান আলোচিত হয়েছে।[৪] মাক্কী সূরা ৮৬টি এবং মাদানী সূরা ২৮টি। তবে ক্বাতাদাহ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে ২৬টি মাদানী সূরার কথা উল্লেখ আছে। ক্বাতাদাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সূরা আল-বাক্বারাহ, আলে ‘ইমরান, আন-নিসা, আল-মায়িদাহ, আল-বারা‘আত, আর-রা‘দ, আন-নাহল, আল-হাজ্জ, আন-নূর, আল-আহযাব, মুহাম্মাদ, আল-ফাতহ, আল-হুজরাত, আর-রহমান, আল-হাদীদ, আল-মুজাদালাহ, আল-হাশর, আল-মুমতাহানাহ, আছ-ছাফ, আল-জুমু‘আহ, আল-মুনাফিকূন, আত-তাগাবুন, আত-তালাক্ব, আত-তাহরীম, আল-যিলযাল এবং আন-নাছর সূরাসমূহ মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং অন্যান্য সমুদয় সূরাসমূহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে’।[৫]
আল-কুরআনের আয়াত সংখ্যা
কুরআনে বর্তমানে ৬২৩৬টি আয়াত রয়েছে। তবে কুরআন বিশেষজ্ঞদের মাঝে আয়াত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।[৬]
আল-কুরআনের শব্দ ও অক্ষর সংখ্যা
‘আতা ইবনু ইয়াসার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আল-কুরআনে মোট শব্দ সংখ্যা (সাতাত্তর হাজার চারশ’ ঊনচল্লিশ) ৭৭,৪,৩৯টি। অক্ষরের সংখ্যা সম্পর্কে মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কুরআনে মোট অক্ষর স্যখ্যা (তিন লক্ষ একুশ হাজার একশ’ আশি) ৩,২১,১৮০টি। ‘আতা ইবনু ইয়াসার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মোট অক্ষর হল (তিন লক্ষ তেইশ হাজার পনের) ৩,২৩,০১৫টি। হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ স্বীয় শাসনামলে ক্বারী, হাফিয ও লেখকদের একত্রিত করে নির্দেশ দেন যে, তারা যেন কুরআনুল হাকীমের অক্ষরগুলো গণনা করে তাকে অবহিত করেন। তারা সর্বসম্মতিক্রমে হিসাব করে বলেন যে, কুরআনে মোট অক্ষর রয়েছে (তিন লক্ষ সাতশ’ চল্লিশ) ৩,০০,৭৪০টি।[৭]
‘সূরা’ শব্দের অর্থ
সূরা (سُوْرَةٌ) শব্দটি আরবী। এটা একবচন। বহুবচন হল سُوَرٌ।[৮] শাব্দিক অর্থ পৃথকীকরণ, উচ্চতা, মর্যাদা উঁচু হওয়া।[৯] জাহেলী যুগের প্রখ্যাত কবি নাবিগার কবিতায় সূরা (سُوْرَةٌ) শব্দটি এই অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন তিনি তার কবিতায় বলেন,
أَلَمْ تَرَ أنَّ اللهَ أَعْطَاكَ سُوْرَةً ... تَرَى كُلَّ مَلْكٍ دُوْنَهَا يَتَذَبْذَبُ
‘তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ তোমাকে এমন মহান মর্যাদা দান করেছেন যা নি¤œ স্তর দিয়ে প্রতিটি রাজা-বাদশাহ ইতস্তত আনাগোনা করে’।[১০] অর্থাৎ আল্লাহ তাকে উঁচু মর্যাদা দান করেছেন।[১১]
তবে কুরআনের সূরাসমূহের সঙ্গে এই অর্থের সম্পর্ক এভাবে হবে যে, যেন কুরআনের পাঠক এক সূরা বা উচ্চ মর্যাদা হতে আরও উচ্চতম মর্যাদার দিকে পৃথক পৃথকভাবে যেতে পারে বা আরোহণ করতে পারে।[১২]
কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হল উচ্চতা, দেয়াল বা প্রাচীর। এ জন্যই দূর্গ বা নগরের প্রাচীরকে আরবী ভাষায় سُوَرٌ বলা হয়।[১৩] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَضُرِبَ بَیۡنَہُمۡ بِسُوۡرٍ ‘অতঃপর উভয়ের মাঝামাঝি স্থাপিত হবে একটি প্রাচীর’ (সূরা আল-হাদীদ : ১৩)।
কেউ কেউ বলেন যে, লোটা বা বর্তনের মধ্যে যে অংশ অবশিষ্ট থাকে তাকে আরবী ভাষায় سُوْرَةٌ বলা হয়। যেহেতু সূরাও পবিত্র কুরআনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই একে সূরা নামে অভিহিত করা হয়েছে। অতঃপর হামযাহকে হালকা করে দিয়ে তাকে ‘واؤ’-এর সঙ্গে পরিবর্তন করা হয়েছে।[১৪]
আবার কেউ কেউ বলেন যে, সূরার অর্থ হল সম্পূর্ণতা ও পরিপূর্ণতা। পূর্ণ উষ্ট্রীকে আরবী ভাষায় سُوْرَةٌ বলা হয়। সম্ভবত দূর্গকে سُوَرٌ বলার কারণ এই যে, ওটা যেমন প্রাসাদকে ঘিরে থাকে ও একত্রিত করে থাকে ঠিক তেমনই সূরাও আয়াতসমূহকে জমা করে থাকে। কাজেই ওকে সূরা বলা হয়েছে।[১৫]
ইবনুল ‘আরাবী আল-হাশিমী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, সূরা অর্থ মর্যাদা, সম্মান বা মহত্ত্ব। আর কুরআনের মর্যাদা ও সম্মানের কারণে سُوْرَةٌ বলা হয়।[১৬]
সূরা অর্থ এক মর্যাদা থেকে আরেক মর্যাদায় পদার্পণ করা এবং অন্য মর্যাদা থেকে পৃথক হওয়া। আবূ হায়ছাম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, কুরআনের سُوْرَةٌ বলতে বুঝায়, কুরআনের একটি খণ্ড বা ভাগ। যেমন অনেকগুলো ঘরের মধ্যে অগ্রবর্তী কোন একটি ঘর। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনকে একের পর এক অবতীর্ণ করেছেন, তাকে বিভিন্ন খ-ে বিভক্ত করেছেন। প্রত্যেক সূরাকে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন এবং অন্যান্য সূরা থেকে পৃথক বা স্বতন্ত্র করেছেন।[১৭] হাদীছে এসেছে, ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা সমূহের মধ্যে পার্থক্য বুঝে উঠতে পারতেন না, যতক্ষণ না ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ নাযিল হত’।[১৮]
‘আয়াত’ শব্দের অর্থ
আয়াত (آيَةٌ) শব্দটি আরবী। এটা একবচন। বহুবচন হল, آىٌ , آيَاىٌ এবং آيَاتٌ। শাব্দিক অর্থ হল চিহ্ন বা নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اِنَّ اٰیَۃَ مُلۡکِہٖۤ ‘তাঁর (তালূত (আলাইহিস সালাম)-এর) বাদশাহ হওয়ার চিহ্ন বা নিদর্শন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৪৮)। আয়াতকে আয়াত বলার কারণ হল, যেহেতু আয়াতের উপর বাক্য শেষ হয় এবং পূর্ববর্তী বাক্যটি পরবর্তী বাক্য হতে পৃথক হয় সেজন্য তাকে ايات বলা হয়।[১৯] কুরআনে আয়াত শব্দটি কুরআনী বাক্য, প্রমাণ, হুজ্জত, দলীল, মু‘জিযা, উপদেশ, শারঈ বিধান, আলামত বা নিদর্শন ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।[২০] যেমন-
১). কুরআনী বাক্য : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, مَا نَنۡسَخۡ مِنۡ اٰیَۃٍ اَوۡ نُنۡسِہَا نَاۡتِ بِخَیۡرٍ مِّنۡہَاۤ اَوۡ مِثۡلِہَا ‘আমরা কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত হতে দিলে তা থেকে উত্তম কিংবা তার সমতুল্য কোন আয়াত আনয়ন করি’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১০৬)। এখানে আয়াত অর্থ কুরআনী বাক্য।[২১] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, بِمَا یُنَزِّلُ وَّ اللّٰہُ اَعۡلَمُ وَ اِذَا بَدَّلۡنَاۤ اٰیَۃً مَّکَانَ اٰیَۃٍ ‘আমরা যখন এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য এক আয়াত অবতীর্ণ করি। আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন, তা তিনিই ভাল জানেন’ (সূরা আন-নাহল : ১০১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قَدۡ کَانَتۡ اٰیٰتِیۡ تُتۡلٰی عَلَیۡکُمۡ فَکُنۡتُمۡ عَلٰۤی اَعۡقَابِکُمۡ تَنۡکِصُوۡنَ ‘আমার আয়াত তো তোমাদের নিকট আবৃত্তি করা হত, কিন্তু তোমরা পিছন পায়ে ফিরে সরে পড়তে’ (সূরা আল-মুমিনূন : ৬৬)।
২). দলীল ও প্রমাণ : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنۡتُمۡ بَشَرٌ تَنۡتَشِرُوۡنَ ‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছ’ (সূরা আর-রূম : ২০)। এখানে আয়াত অর্থ দলীল ও প্রমাণ।[২২] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَ اِنۡ یَّرَوۡا اٰیَۃً یُّعۡرِضُوۡا وَ یَقُوۡلُوۡا سِحۡرٌ مُّسۡتَمِرٌّ ‘তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাচরিত যাদু’ (সূরা আল-ক্বামার : ২)। এখানে আয়াত অর্থ দলীল ও প্রমাণ।[২৩] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖ خَلۡقُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافُ اَلۡسِنَتِکُمۡ وَ اَلۡوَانِکُمۡ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّلۡعٰلِمِیۡنَ
‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’ (সূরা আর-রূম : ২২)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ تَقُوۡمَ السَّمَآءُ وَ الۡاَرۡضُ بِاَمۡرِہٖ ثُمَّ اِذَا دَعَاکُمۡ دَعۡوَۃً مِّنَ الۡاَرۡضِ اِذَاۤ اَنۡتُمۡ تَخۡرُجُوۡنَ
‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবীর স্থিতি; অতঃপর আল্লাহ যখন তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে উঠবার জন্য একবার আহ্বান করবেন তখন তোমরা উঠে আসবে’ (সূরা আর-রূম : ২৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قَالَ کَذٰلِکِ قَالَ رَبُّکِ ہُوَ عَلَیَّ ہَیِّنٌ وَ لِنَجۡعَلَہٗۤ اٰیَۃً لِّلنَّاسِ وَ رَحۡمَۃً مِّنَّا وَ کَانَ اَمۡرًا مَّقۡضِیًّا
‘তিনি বললেন, এইরূপই হবে; তোমার প্রতিপালক বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ এবং তাঁকে আমরা এ জন্য সৃষ্টি করব, যেন তিনি মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমার নিকট হতে এক অনুগ্রহের প্রতীক হন। এটা তো এক সিদ্ধান্তকৃত ব্যাপার’ (সূরা মারইয়াম : ২১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَالۡیَوۡمَ نُنَجِّیۡکَ بِبَدَنِکَ لِتَکُوۡنَ لِمَنۡ خَلۡفَکَ اٰیَۃً وَ اِنَّ کَثِیۡرًا مِّنَ النَّاسِ عَنۡ اٰیٰتِنَا لَغٰفِلُوۡنَ
‘অতএব আজ আমরা তোমার দেহকে রক্ষা করব, যেন তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন (দলীল) হয়ে থাক; আর নিঃসন্দেহে অনেক লোকেই আমার নিদর্শনাবলী হতে উদাসীন’ (সূরা ইউনুস : ৯২)।
৩). মু‘জিযা ও অলৌকিক কিছু : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَلَمَّا جَآءَہُمۡ مُّوۡسٰی بِاٰیٰتِنَا بَیِّنٰتٍ قَالُوۡا مَا ہٰذَاۤ اِلَّا سِحۡرٌ مُّفۡتَرًی وَّ مَا سَمِعۡنَا بِہٰذَا فِیۡۤ اٰبَآئِنَا الۡاَوَّلِیۡنَ
‘সুতরাং মূসা যখন ওদের নিকট আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সহ উপস্থিত হল, তখন তারা বলল, এ তো অলীক যাদু মাত্র! আমাদের পূর্বপুরুষদের কালে আমরা কখনো এরূপ কথা শুনিনি’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ৩৬)। এখানে আয়াত অর্থ মু‘জিযা।[২৪]
৪). শিক্ষা ও উপদেশ : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ قَوۡمَ نُوۡحٍ لَّمَّا کَذَّبُوا الرُّسُلَ اَغۡرَقۡنٰہُمۡ وَ جَعَلۡنٰہُمۡ لِلنَّاسِ اٰیَۃً وَ اَعۡتَدۡنَا لِلظّٰلِمِیۡنَ عَذَابًا اَلِیۡمًا
‘আর নূহের সম্প্রদায় যখন রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করল তখন আমরা তাদেরকে নিমজ্জিত করলাম এবং তাদেরকে মানব জাতির জন্য নিদর্শন (শিক্ষা বা উপদেশ) স্বরূপ করে রাখলাম; যালিমদের জন্য আমরা পীড়াদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি’ (সূরা আল-ফুরক্বান : ৩৭)। এখানে আয়াত অর্থ শিক্ষা ও উপদেশ।[২৫]
৫). শারঈ বিধান : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَتِمُّوا الصِّیَامَ اِلَی الَّیۡلِ وَ لَا تُبَاشِرُوۡہُنَّ وَ اَنۡتُمۡ عٰکِفُوۡنَ فِی الۡمَسٰجِدِ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰہِ فَلَا تَقۡرَبُوۡہَا کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ اٰیٰتِہٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّہُمۡ یَتَّقُوۡنَ
‘অতঃপর রাত্রি আসা পর্যন্ত তোমরা ছিয়াম পূর্ণ কর; তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফ করা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলন কর না; এটাই আল্লাহর সীমা, অতএব তোমরা তার নিকটেও যাবে না; এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাঁর নিদর্শনাবলী সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা মুত্তাক্বী হয়’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৭)। এখানে আয়াত অর্থ শারঈ বিধান।[২৬]
৬). আলামত, চিহ্ন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَقَدۡ کَانَ لِسَبَاٍ فِیۡ مَسۡکَنِہِمۡ اٰیَۃٌ جَنَّتٰنِ عَنۡ یَّمِیۡنٍ وَّ شِمَالٍ کُلُوۡا مِنۡ رِّزۡقِ رَبِّکُمۡ وَ اشۡکُرُوۡا لَہٗ بَلۡدَۃٌ طَیِّبَۃٌ وَّ رَبٌّ غَفُوۡرٌ
‘সাবাবাসীদের জন্য ওদের বাসভূমিতে এক নিদর্শন ছিল; দু’টি বাগান : একটি ছিল ডান দিকে, অপরটি ছিল বাম দিকে; ওদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দেয়া রুযী ভোগ কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। এ শহর উত্তম এবং তোমাদের প্রতিপালক ক্ষমাশীল’ (সূরা সাবা : ১৫)। এখানে আয়াত অর্থ আলামত।[২৭]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনু কাছীর, ফাযায়েলে কুরআন (মাকতাবাতু ইবনু তাইমিয়্যাহ, ১৪১৬ হি.), পৃ. ৩৭।
[২]. তাফসীরুল মুনীর ফিল আক্বীদাতি ওয়াশ শারী‘আতি ওয়াল মানহাজ, ১ম খ-, পৃ. ১৭।
[৩]. ফাযায়েলে কুরআন, পৃ. ৩৭।
[৪]. তাফসীরুল মুনীর ফিল আক্বীদাতি ওয়াশ শারী‘আতি ওয়াল মানহাজ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮।
[৫]. আবূ আব্দুল্লাহ শামসুদ্দীন আল-কুরতুবী, আল-জামে‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, তাহক্বীক্ব : হিশাম সামীর আল-বুখারী (রিয়াদ : দারু ‘আলিমিল কুতুব, ১৪২৩ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৬২; আবূল ফিদা ইসমাঈল ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, তাহক্বীক্ব : সামী ইবনু মুহাম্মাদ সালামাহ (দারুত ত্বায়্যেবা, ২য় সংস্করণ, ১৪২০ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৮।
[৬]. আল-জামে‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৫; তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৮।
[৭]. আল-জামে‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৫; তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৯।
[৮]. ইবরাহীম মুছত্বফা ও তার সাথীবৃন্দ, আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব (দারুদ দাওয়াহ, তা.বি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৬২; লিসানুল ‘আরব, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৩৯।
[৯]. আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৬২; ইমাম জারীর আত-তাবারী, জামি‘ঊল বায়ান ফী তা‘বীলিল কুরআন, তাহক্বীক্ব : আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির (মুয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ১৪২০ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৫; তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৯; তাজুল ‘ঊরূস মিন জাওয়াহিরিল ক্বামূস, ১২তম খণ্ড, পৃ. ১০১।
[১০]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৯।
[১১]. জামি‘ঊল বায়ান ফী তা‘বীলিল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৫।
[১২]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৯।
[১৩]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৯; তাজুল ‘ঊরূস মিন জাওয়াহিরিল ক্বামূস, ১২তম খণ্ড, পৃ. ১০১।
[১৪]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৯।
[১৫]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৯।
[১৬]. তাজুল ‘ঊরূস মিন জাওয়াহিরিল ক্বামূস, ১২তম খণ্ড, পৃ. ১০১।
[১৭]. তাজুল ‘ঊরূস মিন জাওয়াহিরিল ক্বামূস, ১২তম খণ্ড, পৃ. ১০২।
[১৮]. আবূ দাঊদ, হা/৭৮৮, সনদ ছহীহ।
[১৯]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০০।
[২০]. জামি‘ঊল বায়ান ফী তা‘বীলিল কুরআন, ২০তম খণ্ড, পৃ. ৩৭৫; আল-জামে‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ১৪তম খণ্ড, পৃ. ২৮৩; তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭৫, ৫২০; ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১১১, ২৩৭, ৩০৮; ৭ম খণ্ড, পৃ. ৪৭৫।
[২১]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭৫।
[২২]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩০৮।
[২৩]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৪৭৫।
[২৪]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৩৭।
[২৫]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১১১।
[২৬]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫২০।
[২৭]. জামি‘ঊল বায়ান ফী তা‘বীলিল কুরআন, ২০তম খ-, পৃ. ৩৭৫; আল-জামে‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ১৪তম খণ্ড, পৃ. ২৮৩।
প্রসঙ্গসমূহ »:
কুরআনুল কারীম