বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ অপরাহ্ন

ব্যভিচার ও ধর্ষণ: সমাধান কোন্ পথে

-মুস্তফা মনজুর*



এদেশের বর্তমান সময়ের এবং সম্ভবত বিগত দুই দশকের, সবচেয়ে আলোচিত ও উৎকণ্ঠার ইস্যু হচ্ছে ব্যভিচার, ধর্ষণ, ইভটিজিং, অজাচার, যৌন হয়রানি ইত্যাদি। দিন দিন এ সমস্যা বাড়ছে বৈ কমছে না। বিবেকবান সব মানুষ, শিক্ষিত-মূর্খ, তরুণ-বৃদ্ধ সবাই নিজ নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে সমাধান প্রদানেও উচ্চকিত। এক্ষেত্রে ডান-বামের বিভেদও খুব একটা দেখা যায় না, সবাই আমরা এসব ঠেকাতে চিন্তিত। আসলেও তাই হওয়া উচিত। তারপরও কেন কমছে না, বরং দিন দিন বাড়ছে। সম্ভবত এমন কোন দিন নেই যেদিন টিভি আর মিডিয়ার সংবাদে এসবের খবর নেই। এর একটাই কারণ এসব বন্ধের যত আইন আর পদ্ধতিই গৃহীত হচ্ছে সবই অকার্যকর।

আমি নিজে একাডেমিক ফিল্ডে থাকায় বলতে পারি, এ বিষয়টাও সে দৃষ্টিতেই দেখা হলে সম্ভবত সমাধান আসতে পারে। অর্থাৎ মাঠপর্যায়ের গবেষণা আর ইতিহাস ও সামাজিক অবস্থানের বিবেচনা মাথায় নিয়ে যথাসিদ্ধ গবেষণা হয়ত এর একটি সমাধান আনতে পারে। সমাজবিজ্ঞানীরা কেউ এগিয়ে আসলে হয়ত ভালো হত। আজকের আলোচনা এ বিষয়েই। কোন্ পথে সমাধান আসতে পারে। এটা কোন স্বতঃসিদ্ধ গবেষণা নয়। বরং পর্যবেক্ষণ আর যুক্তির নিরিখে ভবিষ্যতের গবেষকের জন্য দ্বার খোলার মতই একটা লিখা। আবারও বলি, এটা একাডেমিক লিখা নয়, বরং তার আদলে লিখার চেষ্টা। যথারীতি বেশ বড় (১৬০০ শব্দ প্রায়), সুতরাং পাঠক ভেবে চিন্তেই অগ্রসর হবেন বলেই বিশ্বাস।


সমস্যা চিহ্নিত করার পর এর সমাধানের সাধারণ কাজ হচ্ছে এ সমস্যার কারণ চিহ্নিত করা। তারপর কারণের উপাদান, প্রভাবক, পরিপ্রেক্ষিত, প্রেক্ষাপট, ব্যাকগ্রাউন্ড সব বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের পথ চিন্তা করা। সে হিসাবে ধরে নেয়া যায় “সমস্যা > কারণ > প্রেক্ষাপট” সমীকরণে আমাদের উদ্দিষ্ট ফর্মুলা হলো:

প্রথমতঃ সমস্যা- ধর্ষণ বা নারীর প্রতি যৌনাচার

দ্বিতীয়তঃ কারণ- মানসিকতা

তৃতীয়তঃ উপাদান/প্রভাবক- (অর্থাৎ মানসিকতার কারণ বা পরিপ্রেক্ষিত) মোটাদাগে বলা যায় নৈতিক-সামাজিক অবক্ষয়, অশ্লীলতার প্রসার, মিডিয়া ও সাংস্কৃতিতে পাশ্চাত্য আগ্রাসন, যথাযথ আইন ও এর বাস্তবায়নের অভাব, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়, পর্দা প্রথার শিথিলতা ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখানে পাঠকদের দ্বিমত থাকতেই পারে। প্রেক্ষাপটকেও কেউ কোন ঘটনায় কারণ হিসাবে উল্লেখ করতে পারেন; কিংবা এমনও হতে পারে তৃতীয় স্তর নিজেই সরাসরি সমস্যার সাথে জড়িত। তবে সমস্যা যেহেতু মানুষ সম্পর্কিত সেক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ না হোক পরোক্ষভাবে হলেও তাদের মানসিকতা, মানবিক দৈনতা এসব কার্যকর থাকবেই। তৃতীয় স্তরে আরো অনেক বিষয় আসতে পারে, সব কিছু এখানে উল্লেখ করিনি, শুধু কয়েকটি ছাড়া। দ্বিতীয় স্তরে মানসিকতাকে উল্লেখ করার কারণ, তৃতীয় স্তরের এসব বিষয় সচরাচর মানুষের মানসিকতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজ করে থাকে। এতদসত্ত্বেও এসব উপাদান সব মানুষকে সমানভাবে প্রভাবিত করতে পারে না। একই সমাজ ও পরিবেশে বাস করেও আমরা নারীর প্রতি যৌনাচারের ক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরণের মানুষ দেখতে পাই-

ক. সৎ মানসিকতা সম্পন্ন, পরিবেশের উপাদানসমূহ যাকে খারাপ করতে পারেনি।
খ. দুর্বল মানসিকতা সম্পন্ন, এ প্রকৃতির মানুষ সাধারণত সুযোগ সন্ধানী। সুযোগ পেলে খারাপ কাজ করতে পারে, আবার অনুশোচনাও করে।
গ. খারাপ মানসিকতা সম্পন্ন। এরা নিজেরাই সুযোগ সৃষ্টি করে নেয়।

এ তিন ধরনের মানুষের প্রতিটি শ্রেণিতে আবার মাত্রাগত তারতম্যও বিদ্যমান। এখন সমাজকে সার্বিক বিচারে যৌনাচারের অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন বিভিন্ন পর্যায়ের উদ্যোগ। যেমন তৃতীয় শ্রেণিকে হয়ত আইন দিয়ে আটকে রাখা যায়, আবার দ্বিতীয় শ্রেণিকে মটিভেশন কিংবা পরিবেশের সুস্থতার দ্বারা প্রথম পর্যায়ে উন্নীত করা যায়। হুট করে কোন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে, রাতারাতি এ সমস্যার সমাধান আশা করা দুরাশা বৈ কিছুই নয়।

এলক্ষ্যে প্রথমেই প্রয়োজন সার্বিক ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা (যড়ষরংঃরপ ধঢ়ঢ়ৎড়ধপয)। এমন নয় যে শুধু কারণ নিয়েই কাজ করলাম আর এর পেছনের প্রভাবক বা উপাদানগুলোকে স্বাধীন ছেড়ে দিলাম। এতে তৃতীয় শ্রেণির মানুষের অবাধ  যৌনাচারের সুযোগ থেকেই যায়; কেননা তারা, এবং প্রথম শ্রেণিও, মানসিকভাবে তুলনামূলক শক্ত অবস্থানে, যা পরিবর্তন করা বেশ দুঃসাধ্য। আবার এমনও হওয়া উচিত নয় যে, কঠোর আইন করে এর প্রয়োগ নিশ্চিত করলাম কিন্তু মনোজাগতিক পরিবর্তনের চেষ্টা করলাম না। এতেও সার্বিক বিচারে কাজ হবে না; কারণ এতে তৃতীয় শ্রেণির মানুষ দ্বিতীয় শ্রেণির মুখোশ পড়ে নেবে। পাশাপাশি সমাজের নানা প্রভাবকের সুযোগ নিয়ে যৌনাচারের মানসিকতা প্রকাশ করবে।


অনেকের ধারণা, আমাদের চিন্তার চাইতেও বেশ বড় একটা অংশের, এ ইস্যুতে আমাদের সমাজকে পুরোপুরি পাশ্চাত্য সমাজের আদলে ঢেলে সাজালে হয়ত সমাধান সম্ভব। অর্থাৎ ফ্রি মিক্সিং, অবাধ যৌনাচারের স্বাধীনতা (যেখানে সম্মতিই চূড়ান্ত)। সমাজের সবপর্যায়ে, শিশু থেকে বৃদ্ধ, গ্রাম থেকে শহর, অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে রাখলে এ বিষয়টা হয়ত এতটা খারাপ পর্যায়ে যাবে না। কেননা এতে সকলেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে, নারীসঙ্গ লাভের উদগ্র বাসনা খুব একটা কাজ করবে না, ফলে যৌনাচারের ভয়াবহতা কমে আসবে। আবার পাশ্চাত্যের ন্যায় পরস্পরের সম্মতিক্রমে যৌনাচার হলে তাতে অভিযোগ বা হয়রানির পথও বন্ধ হয়ে যাবে।

তাদের এ চিন্তা যদি এ সমস্যা সমাধানের জন্য হয়, তাহলে অন্তত সমাধান চিন্তার জন্য তাদের ধন্যবাদ দেয়াই যায়। তবে এটা অনেকটা পাগলদের মাঝে পাগল সেজে থাকার মতই। সমস্যা হলো, পাগলের ভানকারী যে কোন সময় তার আসল রূপে ফিরে যেতে পারে। যাইহোক, বহুবিধ কারণে এদেশে, এমনকি সম্ভবত বিশ্বের সবখানেই, এ পন্থা কার্যকর নয়। কারণ-

Ÿ এ চিন্তা বাস্তব সম্মত নয়। ফ্রি মিক্সিং হলেই যে সবাই আকর্ষণ হারিয়ে ফেলবে তা কিন্তু নয়। বরং সম্মতি না পেলে এর চাইতেই বেশি খারাপ অবস্থা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

Ÿ এ ধারণায় প্রথম শ্রেণির মানুষকে অস্বীকার করা হচ্ছে। অথচ সমাজের এই শ্রেণির মানুষের কারণে ফ্রি মিক্সিং সর্বজনীনতা পাবে না। গ্রহণীয় আর শালীনতার একটা মাপকাঠি সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করবেই।

Ÿ এতে পাশ্চাত্যের আদলে আইন ও এর প্রয়োগকে খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। কিন্ত তাতে দ্বিতীয় প্রকার মানুষের অবস্থান পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। এজন্যই দেখা যায়, পাশ্চাত্যে লোডশেডিং হলে হাজার নারী ধর্ষিত হয়; কেননা সুযোগ সন্ধানীদের তখন আইন আর আটকাতে পারে না।

Ÿ সমাজের অন্যান্য প্রভাবকের (অশ্লীলতা, মিডিয়ার আগ্রাসন) ফলে মানুষের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষের আধিক্য দেখা দেয়। এমনকি প্রথম শ্রেণির মানুষও দ্বিতীয় শ্রেণিতে নেমে আসতে পারে।          

সর্বোপরি, পাশ্চাত্যের আদলে করতে চাইলেও খোদ পাশ্চাত্যই এ সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। যেখানে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ দুর্বল, ধর্ম নখদন্তহীন, সে সমাজে শুধু মানসিকতাকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে আর আইন করে ধর্ষণ রোধ করা যায় না। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি তাকালে এ দৃশ্যই চোখে পরে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের তালিকায় আমাদের স্বপ্নের আমেরিকা, ইংল্যাণ্ড, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া যেমন আছে, তেমনই আছে ভারতও। অথচ বেশ ক’বছর আগেও ভারত ছিল না। কারণ সেখানে ধর্মের একটা প্রভাব কিছুটা হলেও ছিল। মিডিয়ার অনাচার তা সফলতার সাথে দূর করে ভারতকে সেরা দশে ঠাঁই করে দিয়েছে।

এ ধারণার (ফ্রি মিক্সিং) আরো বড় একটা লুপহোল হলো এতে আইনের সহজাত উদ্দেশ্য ব্যহ্যত হয়। আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো জীবনকে সহজ করা। এক্ষেত্রে জীবন বলতে ব্যক্তি জীবন না, সামষ্টিক। ইসলামেও যেমন বলা আছে, ক্বিছাছ (হত্যার বিনিময়ে হত্যা) এর মধ্যে জীবন রয়েছে; তা হত্যাকারীর জীবন নয়, সমাজের বাকী জনগণের। উদাহরণ স্বরূপ, আইন না থাকলে কী হয় তা একবার ট্রাফিক আইন তুলে দিলেও বুঝা যাবে। জীবন কত কঠিন। যাই হোক, অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে কঠোর আইন করলে তা অনেকটা ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে খাবার দেখিয়েও না দেয়ার মত হয়ে যায়। পাশ্চাত্যে ংবীঁধষ যধৎধংংসবহঃ কিংবা পযরষফ ধনঁংব ইত্যাদি ক্ষেত্রে আইন খুব কঠিন। বিনা সম্মতিতে কিছু করলেই ংবীঁধষ যধৎধংংসবহঃ বিপদ, চাকরি, পেনশন, সম্মান সব শেষ।

এখন মানুষকে নানা প্রভাবক (খোলামেলা চলাফেরা, পর্ন সাইটের সহজলভ্যতা, মিডিয়ায় অশ্লীলতার সয়লাব) যখন সারাদিন উত্তেজিত করবে আর আইন তা ঠেকিয়ে রাখবে; তখন তা জীবনকে সহজ করে না; বরং কঠিনই করে। যার ফলাফল সুযোগ পেলেই ঝাপিয়ে পড়া; তা হতে পারে নিজ দেশে, হতে পারে বিদেশে যুদ্ধক্ষেত্রের বন্দীদের নিয়ে। আর নিদেনপক্ষে ত্বালাক্বের মাধ্যমে।

বাংলাদেশেও এমনই হচ্ছে। প্রভাবকের নিয়ন্ত্রণ না করে নারী বান্ধব আইন করে পুরুষরা যেমন নির্যাতিত হচ্ছে, তেমনই সুযোগের অবাধ ব্যবহারও ধর্ষণ আর নারী নির্যাতনের হার বাড়িয়েই তুলেছে। সুতরাং, এককেন্দ্রিক চিন্তা কোন সমাধান বয়ে আনতে পারছে না; কোন দেশেই না, কোন সময়েও না।

গ  

এবার আসি এ প্রসঙ্গে ইসলামের বক্তব্য নিয়ে। আমি নিজে ইসলামের ছাত্র, ইসলাম নিয়ে যৎসামান্য পড়াশুনার সুযোগে নির্দ্বিধায় বলা যায়, ইসলামই একমাত্র এ সমস্যায় সর্বাত্মক সমাধান প্রদান করেছে।

ইসলাম শুধু মানসিকতার পরিবর্তনে হাত দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, দিয়েছে প্রভাবক আর উপাদানের ব্যাপারেও নির্দেশনা। পাশাপাশি শুধু নারীদের নয়, পুরুষদের দায়িত্ব কর্তব্যও নির্ধারিত করেছে। তিন শ্রেণির প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা কর্মপদ্ধতি বর্ণনা করেছে। ইসলামী আইনে মানসিকতার পরিবর্তনে শুধু মন-মানসের উপরই অনুপ্রেরণা আর উৎসাহ চাপিয়ে দেয়নি; বরং মানসিকতা পরিবর্তনের প্রভাবক উপাদানগুলোর ব্যাপারেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।

ইসলামে আইন প্রয়োগ ও শাস্তিপ্রদান অনেকটা প্রতিষেধকের মত। তার আগে রয়েছে প্রতিরোধ প্রচেষ্টা। এ প্রক্রিয়া অনেকটা এমন- সমাধান = প্রতিরোধ (ভয়, আশা, প্রভাবকের নিয়ন্ত্রণ) + প্রতিষেধক (ব্যক্তিগত, সামাজিক) আখিরাতের শাস্তির ভয়, জান্নাতের নে‘মতের আশা হচ্ছে মানসিক পরিবর্তনের মূল উপাদান। এতে প্রথম শ্রেণির মানুষ যেমন নিজেকে ধরে রাখতে পারে তেমনই দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের মানুষ পারে নিজেদের স্তরকে পরবর্তী স্তরে উন্নীত করতে। আর প্রভাবকের নিয়ন্ত্রণ (পর্দাপ্রথা - নর-নারী দু’জনেরই, অশ্লীলতার নিষেধাজ্ঞা, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের সংরক্ষণ) তিন প্রকার মানুষেরই মানসিক অবনমন ঠেকিয়া রাখে। হ্যাঁ, এরপরও যদি কেউ এতে লিপ্ত হয়। তাহলে প্রতিষেধক হিসাবে আইনের প্রয়োগ। প্রথমতঃ ব্যক্তিগত পর্যায়ে শাস্তি প্রদান। দ্বিতীয়তঃ সামাজিকভাবে অপরাধীর অবস্থানকে চিহ্নিত করা। এজন্যই যিনার শাস্তি প্রদানে দু’টি শর্তারোপ করা হয়েছে

১- কোনরূপ দয়া করা যাবে না,

২-তা জনসমক্ষে প্রচারিত হতে হবে।

বলতে পারেন, অবিবাহিতের জন্য মাত্র ১০০ বেত্রাঘাত, এ আর এমন কি? কিন্তু সামাজিকভাবে প্রচার তার জীবনকে কী পরিমাণ দূর্বিষহ করে তুলবে সে শাস্তির পরিমাপ করা কি সম্ভব? তাছাড়া প্রয়োজনে দেশ থেকে নির্বাসনের শাস্তিও হাদীছে আছে। আর ধর্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ষিতাকে যেমন সসম্মানে নির্দোষ প্রমাণ করার কথা আছে, তেমনই ধর্ষক কর্তৃক তাঁকে মোহর পরিমাণ টাকা প্রদানের শাস্তিও আছে।

আরো মজার ব্যাপার হলো, হুদূদের এই আইনে ক্ষমার কোন বিধান নেই। রাষ্ট্রপতি তো কোন ছাড়, কা‘বার ইমামেরও এই এখতিয়ার নেই যে, এ শাস্তি রহিত করে। শাস্তি হবেই এবং তা জনসমক্ষে।

যদি নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করা হয়, তাহলে সম্ভবত সবাই এই বিধানের উপকারিতা বুঝতে পারবেন। আফসোস হলো, প্রায় ১৪৫০ বছর পুর্বে যেখানে এত সর্বাত্মক বিধান দেয়া হলো, সেখানে আমাদের উত্তরাধুনিক গবেষকগণ কারণ, উপাদান সবকিছুকে একপাল্লায় মেপে যৌন হয়রানি বন্ধের পরিকল্পনা করেন।

এটা তো সতঃসিদ্ধ যে, ডুবন্ত জাহাজকে বাঁচাতে হলে এর সব ফুটোই বন্ধ করতে হয়। একটি ফুটোও যদি বাকী থাকে, তাহলেও জাহাজ বাঁচানো সম্ভব না। হয়ত একটু দেরি করানো যাবে, কিন্তু আজ না হয় কাল জাহাজ ডুববেই।

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ আজ এ পথেই যাচ্ছে। শুধু আইন আর এর প্রয়োগ নিয়ে মেতে থাকলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। এজন্য চাই সমন্বিত পরিকল্পনা, সর্বাত্মক বিধান। ইসলাম একটি মডেল অনেক আগেই দিয়ে গেছে। আমাদের কর্তৃপক্ষ চাইলে তার সদ্ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি মনে করেন, এটা ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে কাজ হবে, তাও চেষ্টা করে দেখেন। কিন্তু যা-ই করেন তা যেন সমন্বিত হয়। কেবল এক দুইটা ফুটো বন্ধ করার মত না হয়। আমাদের প্রিয় দেশে আমরা আর কোন ধর্ষণ দেখতে চাই না, চাই না কোন বোনের আহাজারি শুনতে।

অপেক্ষায় থাকলাম আমরা; কেউ যেন (কোন ধর্ষিতা বা সরকার) বলতে না পারে আমরা তাদের জানাইনি। হয়ত একদিন সকলেই আমরা ইসলামের দিকে ফিরে আসব।

আমাদের গন্তব্য তো হে রব! আপনার পানেই।

ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ।


* সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।




প্রসঙ্গসমূহ »: পাপ
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
আল্লাহ তা‘আলাকে কি স্বপ্নযোগে দেখা সম্ভব? - হাসিবুর রহমান বুখারী
সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য (শেষ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
বিদ‘আত পরিচিতি (১৯তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সদাচরণের প্রতিদান ও দুশ্চরিত্রের পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১৮তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
হেদায়াত লাভের অনন্য মাস রামাযান - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
আল-কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
শারঈ মানদন্ডে শবেবরাত - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ