বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন

মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ 

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম 


 (২৪তম কিস্তি)  

তাক্বলীদ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ছাহাবীদের আছার 

প্রখ্যাত ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,

كُنَّا نَدْعُو الْإِمَّعَةَ فِيْ الْجَاهِلِيَّةِ الَّذِيْ يُدْعَى إِلىَ الطَّعَامِ فَيَذْهَبُ مَعَهُ بِغَيْرِهِ وَهُوَ فِيْكُمُ الْيَوْم المحقب دينه الرِّجَال يعني المقلد.

‘আমরা জাহেলী যুগে ইম্মা‘আহ (اَلْإِمَّعَةُ) ঐ ব্যক্তিকে বলতাম, যাকে খাদ্য খাওয়ার জন্য ডাকা হলে সে অন্যকেও সাথে নিয়ে যেত। বর্তমানে তোমাদের মধ্যে ইম্মা‘আ ঐ ব্যক্তি, যে স্বীয় দ্বীনের উপর অন্য লোকদেরকে সওয়ারী বানায় অর্থাৎ মুক্বাল্লিদ’।[১] ইবনু আববাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,

وَيْلٌ لِلْأَتْبَاعِ مِنْ عَثَرَاتِ الْعَالِمِ قِيْلَ كَيْفَ ذَلِكَ؟ قَالَ يَقُوْلُ الْعَالِمُ شَيْئًا بِرَأْيِهِ ثُمَّ يَجِدُ مَنْ هُوَ أَعْلَمُ بِرَسُوْلِ اللهِ ﷺ مِنْهُ فَيَتْرُكُ قَوْلَهُ ذَلِكَ ثُمَّ يَمْضِي الْأَتْبَاعُ.

‘সর্বনাশ তাদের জন্য, যারা আলেমদের ভুলের অনুসরণ করে। বলা হল, এটা কিভাবে? তিনি বললেন, আলেম নিজস্ব রায় দিয়ে কিছু বলে। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে তার চেয়ে বেশি জানে এমন কাউকে পেলে তার ঐ কথাকে পরিহার করে সে তার অনুসারী বনে যায়’।[২]

তাক্বলীদ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ইমামদের বক্তব্য

তাক্বলীদের ব্যাপারে সালাফদের বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্ট ও পরিস্কার। তারা শিস্যদেরকে সর্বদা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বক্তব্যের নিকট মাথা নত করার কথা বলেছেন এবং তাক্বলীদ (অন্ধ অনুসরণ) করতে নিষেধ করেছেন। এ সকল মুজতাহিদ আলেমের জীবনের ব্রতীই ছিল মানুষকে কুরআন-হাদীছের অনুসারী বানানো, অন্য কারো অনুসারী নয়। এমনকি নিজের ইজতিহাদী মাসআলার ক্ষেত্রেও তাই। এ কারণে তারা মানুষকে কখনোই তাদের তাক্বলীদ করার, তাদের কথা গ্রহণ করার আদেশ করেননি, যতক্ষণ না তারা জানবেন তারা কোথায় থেকে তা গ্রহণ করেছেন। তারা প্রত্যেকেই মানুষকে কুরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরার, সেই দিকে প্রত্যাবর্তন এবং সেই দু’টির বিপরীত মতকে পরিত্যাগ করার প্রতি ঐক্যমত্য হয়েছেন। এজন্য চার ইমামগণ প্রত্যেকেই বলেছেন, ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, সেটাই আমাদের মাযহাব’।[৩] 

ইমাম আবূ হানীফা (৮০-১৫০ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য

ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,إذا صح الحديث فهو مذهبي ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, অতঃপর সেটাই আমার মাযহাব’।[৪] তিনি আরো বলেছেন,لا يحل لأحد أن يأخذ بقولنا ما لم يعلم من أين أخذناه ‘আমরা কোথা থেকে গ্রহণ করেছি, তা না জেনে আমাদের কথা গ্রহণ করা কারো জন্য বৈধ নয়’।[৫] তিনি আরো বলেছেন, لا يحل لمن يفتي من كتبي أن يفتي حتى يعلم من أين قلت ‘আমরা কোথা থেকে বলেছি, তা না জেনে আমার বই থেকে কারো জন্য ফৎওয়া দেয়া বৈধ নয়’।[৬] তিনি আরো বলেছেন, حرام على من لم يعرف دليلي أن يفتي بكلامي ‘যে ব্যক্তি আমার দলীল জানে না, আমার কথা দ্বারা ফৎওয়া প্রদান করা তার জন্য হারাম’।[৭] তিনি আরো বলেছেন, إننا بشر نقول القول اليوم ونرجع عنه غدا ‘নিশ্চয় আমরা মানুষ। আমরা আজকে যা বলি, আগামীকাল তা থেকে ফিরে আসি’।[৮] তিনি তাঁর ছাত্র আবূ ইউসুফকে লক্ষ্য করে বলেছেন,

ويحك يا يعقوب! لا تكتب كل ما تسمع مني فإني قد أرى الرأي اليوم وأتركه غدا وأرى الرأي غدا وأتركه بعد غد.

‘তোমার জন্য আফসোস হে ইয়াকুব (আবূ ইউসুফ)! তুমি আমার থেকে যা শোন তাই লিখে নিও না। কারণ আমি আজ যে মত প্রদান করি, কাল তা প্রত্যাখ্যান করি এবং কাল যে মত প্রদান করি, পরশু তা প্রত্যাখ্যান করি’।[৯] তিনি আরো বলেছেন, إذا قلت قولا يخالف كتاب الله وخبر الرسول ﷺ فاتركوا قولي ‘আমি যদি আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কথার (হাদীছ) বিরোধী কোন কথা বলে থাকি, তাহলে আমার কথাকে ছুঁড়ে ফেলে দিও’।[১০]

ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য

ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, إذا صح الحديث فهو مذهبي ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, অতঃপর সেটাই আমার মাযহাব’।[১১] তিনি আরো বলেছেন,

إنما أنا بشر أخطىء وأصيب فانظروا في رأيي فكل ما وافق الكتاب والسنة فخذوه وكل ما لم يوافق فاتركوه.

‘আমি একজন মানুষ মাত্র। আমি ভুল করি, আবার ঠিকও করি। অতএব আমার সিদ্ধান্তগুলো তোমরা যাচাই কর। যেগুলো কুরআন ও সুন্নাহর অনুকূলে হবে সেগুলো গ্রহণ কর। আর যেগুলো কুরআন ও সুন্নাহর প্রতিকূলে হবে তা প্রত্যাখ্যান কর’।[১২] তিনি আরো বলেছেন,ليس أحد بعد النبي ﷺ إلا ويؤخذ من قوله ويترك إلا النبي ﷺ  ‘নবী করীম (ﷺ)-এর পরে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার সকল কথাই গ্রহণীয় বা বর্জনীয়, একমাত্র নবী করীম (ﷺ) ব্যতীত’।[১৩]

ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) -এর বক্তব্য

ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, إذا صح الحديث فهو مذهبي ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, অতঃপর সেটাই আমার মাযহাব’।[১৪] তিনি আরো বলেছেন,

إذا وجدتم في كتابي خلاف سنة رسول الله ﷺ فقولوا بسنة رسول الله ﷺ ودعوا ما قلت. وفي رواية- فاتبعوها ولا تلتفتوا إلى قول أحد.

‘যদি তোমরা আমার বইয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ বিরোধী কিছু পাও, তাহলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী বল এবং আমার কথাকে প্রত্যাখ্যান কর’। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কথারই অনুসরণ কর এবং অন্য কারো কথার দিকে দৃষ্টিপাত কর না’।[১৫] তিনি আরো বলেছেন, كل ما قلت فكان عن النبي ﷺ خلاف قولي مما يصح فحديث النبي أولى فلا تقلدوني. ‘আমি যেসব কথা বলেছি, তা যদি নবী করীম (ﷺ)-এর ছহীহ হাদীছের বিপরীত হয়, তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীছই অগ্রগণ্য। অতএব তোমরা আমার তাক্বলীদ কর না’।[১৬] তিনি আরো বলেছেন,كل حديث عن النبي ﷺ فهو قولي وإن لم تسمعوه مني ‘নবী করীম (ﷺ)-এর প্রত্যেকটি হাদীছই আমার কথা, যদিও আমার নিকট থেকে তোমরা তা না শুনে থাক’।[১৭]

ইমাম আহমাদ (১৬৪-২৪১ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,إذا صح الحديث فهو مذهبي ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, অতঃপর সেটাই আমার মাযহাব’।[১৮] তিনি আরো বলেছেন,

لا تقلدني ولا تقلد مالكا ولا الشافعي ولا الأوزاعي ولا الثوري وخذ من حيث أخذوا .

‘তুমি আমার তাক্বলীদ কর না এবং তাক্বলীদ কর না মালেক, শাফেঈ, আওযাঈ ও ছাওরীর। বরং তাঁরা যে উৎস হতে গ্রহণ করেছেন, সেখান থেকে তোমরাও গ্রহণ কর’।[১৯] তিনি আরো বলেছেন, من رد حديث رسول الله ﷺ فهو على شفا هلكة ‘যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করল, সে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেল’।[২০]

অর্থাৎ চার ইমামের প্রত্যেকেই কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন, এ দু’টির বিপরীত মতকে গ্রহণ করার ব্যাপারে নিষেধ করেছেন, ছহীহ হাদীছকে তাদের মাযহাব (পথ বা আদর্শ) হিসাবে উল্লেখ করেছেন এবং কুরআন ও ছহীহ হাদীছ পরিত্যাগ করে তাদের অন্ধ অনুসরণ না করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। এরপরও বহু মানুষ ইমামদের অন্ধ অনুসরণ করছে। বিশেষ করে ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর। এমনকি অন্ধ অনুসারীরা তাকে নবী-রাসূলদের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারা দাবি করে যে, তাওরাতে তার ব্যাপারে সুসংবাদ দিয়েছে, মুহাম্মাদ (ﷺ) তার নাম উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, তিনি তার উম্মতের জন্য প্রদীপ। অন্ধ অনুসারীগণ তাকে এমন গুণাবলী ও মর্যাদা দিয়ে বর্ণনা করে, যা তার পদমর্যাদাকে ছোট করে এবং তার অবস্থানকে ছাড়িয়ে যায়।[২১] এমনিভাবে প্রত্যেক মাযহাবের লোকজন তাদের স্ব স্ব মাযহাব ও ইমামকে এমন গুণে গুণান্নিত করেছে, যা তাদের পদমর্যাদাকে অবনমিত করেছে।

মাযহাবের পরবর্তী ইমামদের বুঝ ও অন্ধ অনুসারীদের ধর্মান্ধতা এবং গোঁড়ামী চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। চার ইমামের যে কোন এক জনের অনুসরণ করা ওয়াজিবের নামে অন্ধ মুকাল্লিদরা ‘তাক্বলীদে শাখছী’ করতে গিয়ে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ-কে পরিত্যাগ করে প্রবৃত্তি পূজারী হয়েছে। ফলে মুসলিম বিশ্বে মাযহাবের কুপ্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে।  যেমন- ১. কুরআনকে রহিত করা, দুর্বল মনে করা, তাবীল ও অপব্যাখ্যা করা।[২২] ২. কুরআনের আয়াত পরস্পর বিরোধী মনে করা।[২৩] ৩. হাদীছকে অস্বীকার ও রহিত করা।[২৪] ৪. ইজমা‘কে প্রত্যাখ্যান করা।[২৫] ৫. সালাফে ছালেহীনের সাক্ষ্যসমূহ ও তাহক্বীকগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা।[২৬] ৬. একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ ও ফৎওয়া প্রদান করা।[২৭]
৭. সংঘর্ষ ও মারামারি করা।[২৮] ৮. কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দলীলকে পরিত্যাগ করা।[২৯] ৯. কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাপারে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ।[৩০] এবং ১০. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিরোধীতা করা এবং তাদেরকে গালিগালাজ করা।[৩১]

প্রকৃতপক্ষে গোড়া ও নির্বোধ ছাড়া কেউ তাক্বলীদ করে না।[৩২] ফলে দেখা যায় গোঁড়ামী, ধর্মান্ধতা এবং দ্বীনের মধ্যে বিপদ। আসলে মুক্বাল্লিদরা জাহেল হয় এবং তারা ভুল করে। এ কারণে আল্লামা বাদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘মুকাল্লিদ ভুল করে এবং মুক্বাল্লিদ জাহেল হয়। আর সকল কিছুর বিপদ তাক্বলীদ থেকে আসে’।[৩৩] আল্লামা যায়লাঈ হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘আর মুক্বাল্লিদ ভুল করে এবং মুক্বাল্লিদ জাহেল হয়’।[৩৪]

আসলে তাক্বলীদ করা অজ্ঞ মানুষের কাজ।[৩৫] একারণে কোন মুসলিম বলতে পারে না যে, মানুষের উপর অমুক অমুকের তাক্বলীদ ওয়াজিব। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) তাক্বলীদের বিরুদ্ধে জোরালো আলোচনা করার পর বলেছেন, ‘আর কেউ যদি এ কথা বলে যে, সাধারণ মানুষের উপর অমুক অমুকের তাক্বলীদ ওয়াজিব। তাহলে এ কথা কোন মুসলিম বলতে পারে না’।[৩৬] ইসলামে এ কারণে দলীলবিহীন অন্ধ অনুসরণকে হারাম করা হয়েছে। কেননা অন্ধ অনুসরণ মানুষকে পথভ্রষ্ট করে, জাহান্নামের যোগ্য করে, বিদ‘আতী হিসাবে আখ্যায়িত করে এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত থেকে খারিজ করে। আর এটাই মানুষের ধ্বংসের কারণ।

ইমাম ইবনু হাযম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তাক্বলীদ করা হারাম’।[৩৭] তিনি আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার কথা প্রমাণের জন্য কুরআনকে মানদন্ড নির্ধারণ করবে না, তাহলে সে সত্যবাদী নয়। বরং সে মিথ্যুক এবং আল্লাহর প্রতি অপবাদ দানকারী। আর যে ব্যক্তি তার নেতা ও বড়দের অনুসরণ করবে এবং আল্লাহ ও তার রাসূল (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে যা এসেছে, তা ছেড়ে দিবে; তাহলে কুরআনের নছ অনুযায়ী সে পথভ্রষ্ট হবে এবং অঙ্গীকার অনুযায়ী সে জাহান্নামের যোগ্য হবে’।[৩৮]

আল্লামা সুয়ূতী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘এটি বলা ওয়াজিব যে, প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যতীত অন্য কোন ইমামের দিকে সম্বন্ধিত হয়ে যায় এবং এই সম্বন্ধকরণের উপর সে বন্ধুত্ব এবং শত্রুতা পোষণ করে, তবে সে বিদ‘আতী এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে খারিজ। চাই (এই সম্বন্ধ) মূলনীতিতে হোক বা শাখা-প্রশাখাগত বিষয়ে হোক’।[৩৯]

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দীছ দেহলবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘যদি তুমি ইহূদীদের নমুনা দেখতে চাও, তাহলে (আমাদের যুগের) মন্দ আলেমদেরকে দেখ। যারা দুনিয়া সন্ধান করে এবং পূর্ববর্তী আলেমদের তাক্বলীদ করায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তারা কুরআন ও সুন্নাহর দলীল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা (নিজেদের পসন্দনীয়) আলেমের চিন্তা-ভাবনা, তার কঠোরতা ও ইসতিহসানকে কঠিনভাবে আঁকড়ে ধরেছে। তারা নিষ্পাপ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কথাকে ত্যাগ করে জাল হাদীছসমূহ ও বিকৃত ব্যাখ্যাগুলোকে গলায় জড়িয়ে ধরেছে। এটাই তাদের ধ্বংসের কারণ ছিল’।[৪০]

আল্লাহ তা‘আলা অহীর অনুসরণ করতে আদেশ করেছেন। অন্ধ-অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন। এরপরেও যারা অন্ধ-অনুকরণ করে, মূলত তারা প্রবৃত্তি পূজারী। তারা নিজেদেরকে মা‘বূদ হিসাবে গ্রহণ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘অতঃপর যদি তারা আপনার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে জানবেন যে, তারা তো শুধু নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। আল্লাহর পথ-নির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে? আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়ের পথ-নির্দেশ করেন না’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ৫০)।

অতএব, বলা যায় যে, অবশ্যই শরী‘আতের বিধান প্রবিধান সমূহের পালনে কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করা ফরয। কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফে ছলেহীনের অনুসরণ ব্যতীত নিজ খেয়াল খুশির অনুসরণই নিজেকে ধ্বংসের অতলে নিক্ষেপনের নামান্তর। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফী মানহাজ ভিত্তিক চলার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!

 (ইনশাআল্লাহ চলবে)



* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[১]­. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৮৭৬৬; আবূ জা‘ফর আত-ত্বাহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, তাহক্বীক্ব : শু‘আইব আরনাউত্ব, ১৫তম খণ্ড (মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১৪১৫ হি./১৪৯৪ খ্রি.), পৃ. ৪০৮, হা/৬১১৬; ইবনু আব্দিল বার্র, জামি‘উল বায়ানিল ‘ইলমি ওয়া ফাযলিহি, ২য় খণ্ড (সঊদী আরব : দারু ইবনিল জাওযী, ১৪১৪ হি.), পৃ. ৯৮৪, হা/১৮৭৬; শাত্বেবী, আল-ই‘তিছাম, ৩য় খণ্ড (সঊদী আরব : দারু ইবনিল জাওযী, ১৪২৯ হি.), পৃ. ৩৩২; মুহাম্মাদ আমীন শানক্বীত্বী, আযওয়াউল বায়ান ফী ইযাহিল কুরআন বিল কুরআন, ৭ম খণ্ড (বৈরূত : দারুল ফিকর, ১৪১৫ হি.), পৃ. ৩১১।

[২]­. ইবনু আব্দিল বার্র, জামেউ বায়ানিল ইলম, হা/১৮৭৭; আলবানী, আল-হাদীছ হুজ্জাতুন বিনাফসিহী ফিল আক্বাইদ ওয়াল আহকাম, পৃ. ৭৪।

[৩]. মুহাম্মাদ ইবনু হুসাইন ইবনু সুলাইমান ইবনু ইবরাহীম, আল-কাশফুল মুবদী, তাহক্বীক্ব : ড. ছলিহ ইবনু আলী ও ড. আবূ বকর ইবনু সালিম (রিয়াদ : দারুল ফুযাইলাতু, ১৪২২ হি.), পৃ. ২১১; আবূ সাহল মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান আল-মাগরাবী, মাওসূ‘আতু মাওয়াক্বিফিস সালাফ ফীল আক্বীদাতি ওয়াল মানহাজ, ৯ম খণ্ড (কায়রো : আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, তা.বি.), পৃ. ৪১৭; মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান আল-খুমাইস, উছূলুদ দ্বীন ‘ইনদাল ইমামি আবী হানীফা (রিয়াদ : দারুছ ছামী‘ঈ, ১৪১৬ হি.), পৃ. ৬।

[৪]. মাওসূ‘আতু মাওয়াক্বিফিস সালাফ ফীল আক্বীদাতি ওয়াল মানহাজ, ১০ম খণ্ড, পৃ. ১৩৫; শাহাতাতু মুহাম্মাদ সাক্বর, আর-রাদ্দু আলাল লুম‘ঈ (মিশর : দারুল খোলাফাইর রাশিদীন, তা.বি.), পৃ. ৬৮; শাহাতাতু মুহাম্মাদ ছাক্বর, কাশফু শুবহাতিছ ছূফিয়্যা (মিশর : মাকতাবাতু দারিল ‘ঊলূম, তা.বি.), পৃ. ১৮; উছূলুদ দ্বীন ‘ইনদাল ইমামি আবী হানীফা, পৃ. ৬; নাছিরুদ্দীন আলবানী, আছলু ছিফাতি ছালাতিন নাবিয়্যি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ১ম খণ্ড (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৪২৭ হি.), পৃ. ২৪।

[৫]. হাশিয়াহ ইবনু আবেদীন,  ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৯৩; আছলু ছিফাতি ছালাতিন নাবিয়্যি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৪।

[৬]. উছূলুদ দ্বীন ‘ইনদাল ইমামি আবী হানীফা, পৃ. ৬।

[৭]. ড. অছিউল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আব্বাস, আত-তাক্বলীদ ওয়া হুকমুহু ফী যুইল কিতাবি ওয়াস-সুন্নাহ, পৃ. ২০; আছলু ছিফাতি ছালাতিন নাবিয়্যি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৪।

[৮]. প্রাগুক্ত।

[৯]. প্রাগুক্ত।

[১০]. ছালেহ ফুল্লা-নী, ইক্বাযু হিমাম, পৃ. ৫০; আর-রাদ্দু আলাল লুম‘ঈ, পৃ. ৬৮; কাশফু শুবহাতিছ ছূফিয়্যা, পৃ. ১৮; আছলু ছিফাতি ছালাতিন নাবিয়্যি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৪।

[১১]. মাজমূ‘আত মিনাল মুওয়াল্লাফীন, মাজাল্লাতু জামি‘আতি উম্মিল কুরা, ৪র্থ খণ্ড (মাওক্বিঊল মাজাল্লাতি ‘আলাল ইনতারনিত, তা.বি.), পৃ. ৭০; আরশীফু মুলতাক্বী আহলিল হাদীছ, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৩৮২; মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম ইবনু ইবরাহীম, সিলসিলাতু মাছাবীহিল হুদা, ১৪তম খণ্ড, পৃ. ১৫।

[১২]. ইমাম ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ফী উছুলিল আহকাম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৪৯; আর-রাদ্দু আলাল লুম‘ঈ, পৃ. ৬৮; কাশফু শুবহাতিছ ছূফিয়্যা, পৃ. ১৮; উছূলুদ দ্বীন ‘ইনদাল ইমামি আবী হানীফা, পৃ. ৬; আছলু ছিফাতি ছালাতিন নাবিয়্যি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৪।

[১৩]. আল-ইহকাম ফী উছুলিল আহকাম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৪৫; আর-রাদ্দু আলাল লুম‘ঈ, পৃ. ৬৮; কাশফু শুবহাতিছ ছূফিয়্যা, পৃ. ১৮; আছলু ছিফাতি ছালাতিন নাবিয়্যি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮।

[১৪]. আর-রাদ্দু আলাল লুম‘ঈ, পৃ. ৬৮; কাশফু শুবহাতিছ ছূফিয়্যা, পৃ. ১৮; ছলিহ ইবনু ফাওযান, ইয়ানাতুল মুসতাফীদ বিশারহি কিতাবিত তাওহীদ, ২য় খণ্ড (মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ৩য় সংস্করণ, ১৪২৩ হি.), পৃ. ১১১; আছলু ছিফাতি ছালাতিন নাবিয়্যি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯।

[১৫]. ইমাম নববী, আল-মাজমূ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৩; আর-রাদ্দু আলাল লুম‘ঈ, পৃ. ৬৮; কাশফু শুবহাতিছ ছূফিয়্যা, পৃ. ১৮; উছূলুদ দ্বীন ‘ইনদাল ইমামি আবী হানীফা, পৃ. ৬; আছলু ছিফাতি ছালাতিন নাবিয়্যি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯।

[১৬]. ইবনু আবী হাতেম, পৃ. ৯৩, সনদ ছহীহ।

[১৭]. ইবনু আবী হাতেম, পৃ. ৯৩, সনদ ছহীহ; আর-রাদ্দু আলাল লুম‘ঈ, পৃ. ৬৮; কাশফু শুবহাতিছ ছূফিয়্যা, পৃ. ১৮।

[১৮]. মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, আল-হাদীছু হুজ্জাতুন বিনাফসিহি ফিল ‘আক্বাইদি ওয়াল আহকাম (মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৪২৫ হি.), পৃ. ৭৬; মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, হুকমি তারিকিছ ছালাত (রিয়াদ : দারুল জালালাইন, ১৪১২ হি.), পৃ. ৫৭।

[১৯].  ইলামুল মুওয়াক্কি‘ঈন, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০২; আর-রাদ্দু আলাল লুম‘ঈ, পৃ. ৬৮; কাশফু শুবহাতিছ ছূফিয়্যা, পৃ. ১৮; উছূলুদ দ্বীন ‘ইনদাল ইমামি আবী হানীফা, পৃ. ৬; আছলু ছিফাতি ছালাতিন নাবিয়্যি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২।

[২০]. নাছিরুদ্দীন আলবানী, মুকাদ্দামাতু ছিফাতি ছালাতিন নাবী (ﷺ), পৃ. ৪৬-৫৩; আর-রাদ্দু আলাল লুম‘ঈ, পৃ. ৬৮; কাশফু শুবহাতিছ ছূফিয়্যা, পৃ. ১৮; উছূলুদ দ্বীন ‘ইনদাল ইমামি আবী হানীফা, পৃ. ৭; আছলু ছিফাতি ছালাতিন নাবিয়্যি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২।

[২১]. উছূলুদ দ্বীন ‘ইনদাল ইমামি আবী হানীফা, পৃ. ১১। যেমন ‘দুররুল মুখতার’ গ্রন্থে আবূ হানীফা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি কুরআনের পর নির্বাচিত মু‘জিযা। তিনি তার মাযহাবের জন্য বিখ্যাত। তার সকল কথা বিশ্বের ইমামগণ গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহ তার ছাহাবী ও অনুসারীদের জন্য তার সময় থেকে এই দিন পর্যন্ত ঈসা ইবনু মারইয়াম তার মাযহাব অনুসারে শাসন করার বিধান করেছেন। সেখানে আরো বলা হয়েছে যে, لو كان في أمة موسى وعيسى مثل أبي حنيفة لما تهودوا ولما تنصرا ‘মূসা ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর জাতির মধ্যে যদি আবূ হানীফার মত কেউ থাকত, তাহলে তারা ইয়াহুদী ধর্ম গ্রহণ করত না এবং খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করত না’। দ্র. আলাউদ্দীন হাছাকাফী, আদ-দুররুল মুখতার শারহু তানবীরিল আবছার ও জামি‘উল বাহার, তাহক্বীক্ব : আব্দুল মুন‘ঈম খলীল ইবরাহীম (দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১৪২৩ হি.), পৃ. ১৩; ইবনু ‘আবিদীন, রদ্দুল মুহতার ‘আলাদ দুররুল মুখতার, ১ম খণ্ড (বৈরূত : দারুল ফিকর, ২য় সংস্করণ, ১৪১২ হি.), পৃ. ৫৩-৫৫।

[২২]­. তাক্বলীদে শাখছীর কারণে কুরআন মাজীদের বরকতময় আয়াত সমূহকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করা হয়। মর্যাদাসম্পন্ন আয়াতসমূহকে দুর্বল মনে করা হয়, তাবীল ও অপব্যাখ্যা করা হয়। যেমন- কারখী (২৬০-৩৪০ হি.) হানাফী (মুকাল্লিদ) বলেছেন, الْأَصْلُ أَنَّ كُلَّ آيَةٍ تُخَالِفُ قَوْلَ أَصْحَابِنَا فَإِنَّها تُحْمَلُ عَلَى النَّسْخِ أَوْ عَلَى التَّرْجِيْحِ وَالْأَوْلَى أَنْ تُحْمَلَ عَلَى التَّأْوِيْلِ مِنْ جِهَةِ التَّوْفِيْقِ ‘আসল কথা এই যে, প্রতিটি আয়াত যা আমাদের সাথীদের (হানাফী ফক্বীহদের) বিপরীত, সেটিকে মানসূখ (রহিত) রূপে গণ্য করতে হবে অথবা দুর্বল মনে করতে হবে। উত্তম এই যে, সমন্বয় করতে গিয়ে তার তাবীল বা দূরতম ব্যাখ্যা করতে হবে’। দ্র. আবুল হাসান উবাইদুল্লাহ ইবনুল হুসাইন কারখী, উছূলুল কারখী; সম্পাদনা : ড. আছমাতুল্লাহ ইনায়াতুল্লাহ (করাচী : জাবীদ বুরিশ, তাবি), মূলনীতি-২৮, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮; আলী ইবনু মুহাম্মাদ আল-বাযদূবী আল-হানাফী, উছূলুল বাযদূবী (করাচী : জাবীদ বুরিশ, তাবি), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭৩; মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান আল-বারকাতী, কাওয়াঊদুল ফিকহ (করাচী, তাবী, ১৪০৭ হি./১৯৮৬ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ২।

[২৩]­. তাক্বলীদে শাখছীর কারণে তাক্বলীদপন্থীগণ এটা মনে করেন যে, কুরআন মাজীদের দু’টি আয়াতের মাঝে বিরোধ হতে পারে। যেমন মোল্লা জিঊন হানাফী লিখেছেন, لان الايتين إذا تعارضا تساقطتا ‘কেননা যখন দুটি আয়াত পরস্পর বিরোধ হয়ে যায়, তখন দু’টিই বাতিল হয়ে যায়’। দ্র. নূরুল আনওয়ার মা’আ ক্বমারিল আকমার, পৃ. ১৯৩; ইসলামে তাক্বলীদের বিধান, পৃ. ৬৯।

[২৪]­. তাক্বলীদে শাখছীর কারণে ছহীহ হাদীছসমূকে রহিত করা এবং পিছনে নিক্ষেপ করা হয়। যেমন-

(ক) কারখী (২৬০-৩৪০ হি.) বলেছেন, أَنَّ كُلَّ خَبَرٍ يَجِيْءُ بِخِلَافِ قَوْلِ أَصْحَابِنَا فَإِنَّهُ يُحْمَلُ عَلَى النَّسْخِ أَوْ عَلَى أَنَّهُ مُعَارَضٌ بِمِثْلِهِ ثُمَّ يُصَارُ إِلَى دَلِيْلٍ آخَرَ ‘আসল কথা হল যে, প্রত্যেকটি হাদীছ যেটি আমাদের সাথীদের (হানাফী ফক্বীহদের) বক্তব্যের বিপরীতে আসবে সেটিকে রহিত কিংবা তদ্রুপ অন্য বর্ণনার বিরোধী মনে করতে হবে। অতঃপর দলীলের দিকে ধাবিত হতে হবে’। দ্র. উছূলুল কারখী, মূলনীতি-২৯, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮; উছূলুল বাযদূবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭৩; কাওয়াঊদুল ফিকহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২।

(খ) ইউসুফ বিন মূসা আল-মালাত্বী হানাফী (৭২৬-৮০৩ হি.) বলেছেন, من نظر في كتاب البخاري تزندق ‘যে ব্যক্তি বুখারীর কিতাব (ছহীহ বুখারী) পড়ে সে যিনদীক্ব (নাস্তিক) হয়ে যায়। দ্র. শিহাবুদ্দীন আবুল ফযল আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, ইনবাউল গামর বি-আবনাইল ঊমর ফী তারীখ; তাহক্বীক : ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মুঊদ খান (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘আলামিয়্যা, ২য় সংস্করণ, ১৪০৬ হি./১৯৮৬ খ্রি.), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৮৪; আব্দুল হাই ইবনু আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-হাম্বলী, শাযরাতুয যাহাব ফী আখবারি মান যাহাব; তাহক্বীক : আব্দুল ক্বাদের আরনাউত, মাহমূদ আরনাউত (দিমাষ্ক : দারু ইবনু কাছীর, ১৪০৬ হি.), ৭ম খণ্ড, পৃ. ৪০।

[২৫]. তাক্বলীদে শাখছীর কারণে বহু জায়গায় ইজমা‘কে প্রত্যাখ্যান করা হয়। যেমন, খায়রুল কুরূন’ বা স্বর্ণ যুগে এর উপর ইজমা‘ রয়েছে যে, তাক্বলীদে শাখছী হারাম। অথচ শুধুমাত্র তাক্বলীদের কারণে ছাহাবীদের ইজমা‘কে প্রত্যাখান করা হয়। যেমন- নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকাল নিয়ে ইজমা‘। কেউ কেউ মনে করে নবী করীম (ﷺ) ইন্তেকাল করেননি। বরং তিনি দুনিয়া থেকে পৃথক হয়েছেন। সকল ছাহাবীগণ এটার উপর ইজমা‘ বা একমত হয়েছেন। পরবর্তীতে তাবেঈগণ, যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছেন এবং তাদের অনুসারী এবং দ্বীনের ইমামগণও এই ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে,

 أن الرسول قد مات موتا حقيقيا وفارق الحياة في الدنيا عير أن له حياة في القبر حياة برزخية لا دنيوية

‘রাসূলুল্লাহ বাস্তবে মৃতবরণ করেছেন এবং দুনিয়া থেকে তাঁর জীবন বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তবে তাঁর কবরের জীবন বারযাখী জীবন, দুনিয়ার জীবন নয়’। ছাহাবীগণ বা তাবেঈগণ বা তাবেঈদের অনুসারী বা দ্বীনের ইমামগণের কেউই বলেননি যে, কবরে তাঁর জীবন দুনিয়াবী জীবনের ন্যায় বা তিনি মানুষদের নিকট থেকে ই‘তিকাফকারীর ন্যায় বিচ্ছিন্ন বা আলাদা হয়েছেন’। দ্র. আলী ইবনু আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু হাযম, আন-নুবযাতুল কাফিয়াহ ফী আহকামি উছূলিদ দ্বীন; তাহক্বীক : মুহাম্মাদ আহমাদ আব্দুল আযীয (বৈরূত : দারুল কুতুবিল আলামিয়্যা, ১৪০৫ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৭২; শামসুদ্দীন সালাফী আল-আফগানী, আদা’ঊ মাতুরিদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরিদীয়া- আল-মাতুরিদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত (ত্বায়েফ : মাকতাবাতুছ ছিদ্দীক, ২য় সংস্করণ, ১৪১৯ হি./ ১৯৯৮ খৃ.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৮৬।

[২৬]­. তাক্বলীদে শাখছীর কারণে সালাফে ছালেহীনের সাক্ষ্যসমূহ এবং তাহকীকগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে অনেক সময় খোলাখুলিভাবে তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যও করা হয়। অনেকেই আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ফকীহ ছাহাবী মনে করে না। যার কারণে তারা আবূ হুরায়রা প-এর হাদীছকে প্রত্যাখান করে। যেমন- হানাফী মুক্বাল্লিদদের গ্রন্থ ‘উছূলে শাশী’-তে আবূ হুরায়রা (ﷺ)-কে ইজতিহাদ ও ফৎওয়া প্রদানের মর্যাদা থেকে বের করে দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে যে, وعلى هذا ترك أصحابنا رواية أبي هريرة ‘আর এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের সাথীগণ আবূ হুরায়রার বর্ণনাকে বর্জন করেছেন’। এক হানাফী (ইরাকের) মুক্বাল্লিদ যুবক আবূ হুরায়রা সম্পর্কে বলতেন, أبو هريرة غير مقبول الحديث ‘আবু হুরায়রার হাদীছ অগ্রহণযোগ্য’। দ্র. ইসলামে তাক্বলীদের বিধান, পৃ. ৬৮; উছূলুশ শাশী মা’আ আহসানিল হাওয়াশী, পৃ. ৭৫; শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু উছমান আয-যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ওয়া ওফাইয়াতুল মাশাহীর ওয়াল আ‘লাম; তাহক্বীক : ড. ওমর আব্দুস সালাম (বৈরূত : দারুল কিতাবিল ‘আরাবী, ১৪০৭ হি./১৯৮৭ খ্রি.), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৫৪; আব্দুর রহমান ইবনু আলী ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু জাওযী, আল-মুনতাযাম ফী তারীখিল মলূক ওয়াল ইমাম (বৈরূত : দারু ছদর, ১৩৫৮ হি.), ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৫৫; শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু উছমান আয-যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; তাহক্বীক : শু‘আইব আরনাউত (মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, তাবি), ২য় খণ্ড, পৃ. ৬১৯।

[২৭]. তাক্বলীদে শাখছীর কারণে তাক্বলীদপন্থীরা অন্য ভাইদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৎওয়া পর্যন্ত দিয়ে দেয়। যার অনেক উদাহরণ পেশ করা যাবে। যেমন-

(ক) দামেশকের বিচারপতি মুহাম্মাদ বিন মূসা আল-বালাসাগূনী হানাফী (মৃ. ৫০৬ হি.) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, لو كان لي أمر لاخذت الجزية من الشافعية ‘যদি আমার হাতে ক্ষমতা থাকত তবে আমি শাফেঈদের নিকট থেকে জিযিয়া গ্রহন করতাম। দ্র. শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু উছমান আয-যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল; তাহক্বীক : শায়খ আলী মুহাম্মাদ ও শায়খ ‘আদিল আহমাদ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৫২; রাবী নং-৮২৩৯।

(খ) ঈসা বিন আবূ বকর বিন আইয়ূব হানাফীকে যখন তার পিতা জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তুমি কেন হানাফী হয়ে গেলে, অথচ তোমার পুরা বংশ শাফেঈ? তখন তিনি উত্তর দেন, أترغبون عن أن يكون فيكم رجل واحد مسلم ‘তোমরা কি এটা চাওনা যে, ঘরে একজন মুসলিম থাকুক? দ্র. মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল আছ-ছান‘আনী, ইরশাদুল নাক্বাদ ইলা তাইসীরিল ইজতিহাদ; তাহক্বীক : সালাউদ্দীন মাক্ববূল আহমাদ (কুয়েত : দারুস সালাফিয়্যাহ, ১৪০৫ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ২৩।

(গ) হানাফীদের একজন ইমাম আস-সাফকারদারী বলেছেন,لا ينبغي للحنفية ان يزوج بنته من شافعي المذهب ولكن يتزوج منهم ‘হানাফীর উচিৎ নয় যে, সে তার মেয়েকে শাফেঈ মাযহাবের কোন লোকের সাথে বিবাহ দিবে। কিন্তু তাদের মেয়েকে বিবাহ করবে। অর্থাৎ শাফেঈ মাযহাবের মানুষ হানাফীদের নিকটে আহলে কিতাব (ইহুদী ও খ্রিষ্টান)-এর হুকুমে। দ্র. ফাতাওয়া বাযযাযিয়াহ আলা হামিশি ফাতাওয়া আলমগীরিয়াহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১১২; আল-বাহরুর রায়েক্ব, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৬।

(ঘ) বেরীলভীদের ইমাম আহমাদ রেযা তার (اعلام الاعلام بان هندوستان دار الإسلام) ‘ইলাম আল ইলাম বান হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম’ বইয়ের শুরুতে ওহাবীদের কাফির, মুরতাদ এবং তাদেরকে ক্ষমা করা না জায়েয ফৎওয়া প্রদান করেছেন। দ্র. শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর, বেরেলভী মতবাদ : আক্বীদা-বিশ্বাস ও ইতিহাস; অনুবাদ : আবূ রুমাইসা মুহাম্মাদ নুর আব্দুল্লাহ হাবীব (পাবনা : আল-হুদা একাডেমী, ১৪৩৬ হি./২০১৫ খৃ.), পৃ. ৫৪।

এমনকি তাক্বলীদে শাখছীর কারণে গোঁড়া মুক্বাল্লিদগণ বায়তুল্লাহতে চার মুছাল্লা প্রতিষ্ঠা করেছিল। যে সম্পর্কে রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী বলেছেন, ‘অবশ্য চার মুছাল্লা যা মক্কা মু’আয্যামায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল নিঃসন্দেহে এটি নিকৃষ্ট বিষয় যে, জামা‘আত পুনরাবৃত্তি এবং বিচ্ছিন্নতার কারণে এটা আবশ্যক হয়ে গিয়েছিল যে, একটি জামা’আত চলার সময় অন্য মাযাহাবের লোকজন বসে থাকত, জাম’আতে শরীক হত না এবং হারাম কাজের পাপী হত। দ্র. তালীফাতে রশীদিয়াহ, পৃ, ৫১৭।

[২৮]. তাক্বলীদের শাখছীর কারণে হানাফী ও শাফেঈরা পরস্পরের সাথে রক্তাক্ত যুদ্ধ করেছে। একজন আরেকজনকে হত্যা করেছে, দোকানপাট লুট করেছে এবং মহল্লা জ্বালিয়ে দিয়েছে। দ্র. ইয়াকূত আল-হামাবী, মূ’জামূল বুলদান, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০৯; ইবনুল আছীর, আল-কামিল, ৯ম খণ্ড, পৃ. ৯২।

এছাড়াও হাম্বলী মাযহাবের লোকদের সাথে অন্যান্য মাযহাবের লোকদের সংঘর্ষ ও মারামারি হয়েছে। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আবুল ফিদা ঈসমাঈল ইবনু কাছীর (৭০১-৭৭৪ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) তার বিখ্যাত ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে মাযহাব কেন্দ্রিক সংঘর্ষ ও মারামারি, কাটাকাটির একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন,

وَفِيْهَا وَقَعَتْ فِتْنَةٌ بِبَغْدَاذَ بَيْنَ أَصْحَابِ أَبِيْ بَكْرٍ الْمَرْوَزِيِّ الْحَنْبَلِيِّ وَبَيْنَ طَائِفَةٍ مِنَ الْعَامَّةِ اِخْتَلَفُوْا فِيْ تَفْسِيْرِ قَوْلِهِ تَعَالَى (عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُوْدًا) [الإسراء: ৭৯] فَقَالَتْ الْحَنَابِلَةُ يُجْلِسُهُ مَعَهُ عَلَى الْعَرْشِ. وَقَالَ الْآخَرُوْنَ اَلْمُرَادُ بِذَلِكَ الشَّفَاعَةُ الْعُظْمَى فَاقْتَتَلُوْا بِسَبَبِ ذَلِكَ وَقُتِلَ بَيْنَهُمْ قَتْلَى فَإِنَّا للهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ.

‘(৩১৭ হিজরীতে) বাগদাদে হাম্বলী মাযহাবের ইমাম আবু বকর আল মারওয়াজী ও অন্যান্য মাযহাবের অনুসারীগণের মধ্যে চরম মারামারি, কাটাকাটি ও সংগ্রাম শুরু হয়। তারা কুরআনে উল্লিখিত সূরা ইসরার ৭৯ নং আয়াত ‘শিঘ্রই আপনার প্রভু আপনাকে মাক্বামে মাহমূদে উন্নীত করবেন’ এর অর্থকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়। হাম্বলীগণ বলেন, মাক্বামে মাহমূদের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে তাঁর সাথে আরশে আযীমে সমুন্নত করবেন। আর অন্যান্য মাযহাবপন্থীরা এর অর্থে বলেন, ‘বড় শাফা‘আত। আয়াতের এ অর্থকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে চরম মারামারি ও সংগ্রাম শুরু হয়। আর এ মাযহাব কেন্দ্রিক মারামারিতে শত শত লোক নিহত হয়। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন’। দ্র. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, (প্রকাশনী : দারূ হিজরাহ, প্রকাশকাল : ১৯৯৭ খ্রি.)  ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৪২।

[২৯]­. তাক্বলীদে শাখছীর কারণে অন্ধ অনুসরণকারীরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দলীলসমূহকে পরিত্যাগ করে। যার উদাহরণ অনেক আছে। যেমন-মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী বলেন, ‘হক্ব ও ইনছাফ এই যে, এই মাসআলায় ইমাম শাফেঈর অগ্রাধিকার রয়েছে। আর আমরা মুক্বাল্লিদ। আমাদের উপর আমাদের ইমাম আবু হানিফার তাক্বলীদ করা ওয়াজিব। দ্র. তাক্বরীরে তিরমিযী, পৃ. ৩৬।

[৩০]­. তাক্বলীদের কারণে মুক্বাল্লিদ আলেমগণ ও আমলকারীগণ কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাপারেও নির্লজ্জভাবে মিথ্যা বলে। যেমন একজন কুরআনের এই فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡہُ اِلَی اللّٰہِ وَ الرَّسُوۡلِ  আয়াতের শেষে (اِلَی اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ  وَ ) বৃদ্ধি করে এই ঘোষণা দিয়েছেন, ঐ কুরআনের উপরোল্লিখিত আয়াতটিতে আমি অক্ষমও মওজুদ আছি। দ্র. মাহমূদুল হাসান দেওবন্দী, ঈযাহুল আদিল্লাহ, পৃ. ৯৭।

আহলেহাদীছদের সম্পর্কে আশরাফ আলী থানভী বলেছেন, ‘দ্বিতীয় বার তারাবীহ চালু করার কারণে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বিদ‘আতী বলে। দ্র. ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৫৬২।

[৩১]. তাক্বলীদপন্থীরা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকদের বিরোধীতা করে এবং কুৎসিত ভাষায় তাদেরকে গালিগালাজ করে। যেমন- দেওবন্দীরা। শামসুদ্দীন সালাফী আল-আফগানী দেওবন্দীদের ব্যাপারে বলেন, ‘তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিরোধীতা করে এবং তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। তাদের মধ্যে সুবিধাবাদীরা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতকে ওহাবী নামকরণ করেছে। এমনকি তাদেরকে কুৎসিত, নোংরা, বিকৃত ভাষায় গালিগালাজ করে এবং অরুচিকর ভাষায় বিদ্রুপাত্মক উপাধিতে ভূষিত করে। দ্র. আদা’ঊ মাতুরিদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরিদীয়া- আল-মাতুরিদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৮।

একইভাবে বেরীলভীরাও কুৎসিত ভাষায় গালি দেয়। শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’ সম্পর্কে তাদের কুরুচি, অশ্লীল ও কুৎসিত বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, ‘(আহমাদ রেযা খাঁন ওহাবীদের গালমন্দ করে বলেছে) কুফরী দল, ওয়াহহাবী, অভিশপ্ত শয়তানদের থেকে এক বুযুর্গ.. হে নোংরা (আবর্জনার) কীট! তোমাকে কাফির ঘোষনা করা হল। হে ইবলিসের ভাঁড়! দাজ্জালের গাধা.. হে মুনাফিক! ওহে হেয় মূল্যহীন ওয়াহহাবী! কারুণের রাজ্যের মত ভূগর্ভের অতি গভীরে চলে যাও। হে নজদীয়্যাহর হীন (শব্দ অস্পষ্ট), ওয়াহহাবীয়্যার বিলাপকারী পেঁচা এবং দুর্বিনীত ক্রুদ্ধ’। দ্র. শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর, বেরেলভী মতবাদ : আক্বীদা-বিশ্বাস ও ইতিহাস; অনুবাদ : আবূ রুমাইসা মুহাম্মাদ নুর আব্দুল্লাহ হাবীব (পাবনা : আল-হুদা একাডেমী, ১৪৩৬ হি./২০১৫ খৃ.), পৃ. ৩১-এর টিকা।

[৩২]­. লিসানুল মীযান, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮০।

[৩৩]­. আল-বিনায়া শারহুল হিদায়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩১৭।

[৩৪]­. নাছবুর রায়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২১৯।

[৩৫]­. আলবানী, আল-হাদীছ হুজ্জাতুন বিনাফসিহী ফিল আক্বাইদ ওয়াল আহকাম, পৃ. ৭১।

[৩৬]­. ইবনু তায়মিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২২ তম খণ্ড, পৃ. ২৪৯।

[৩৭]­. আন-নুবযাতুল কাফিয়া ফী আহকামিল উছুলিদ দ্বীন, পৃ. ৭০।

[৩৮]­. فمن لم يأت بكتاب الله تعالى شاهد لقوله أو ببرهان على صدق قوله وإلا فليس صادقا لكنه كاذب آفك مفتر على الله عز و جل ومن أطاع سادته وكبراءه وترك ما جاءه عن الله تعالى وعن رسوله صلى الله عليه و سلم فقد ضل بنص القرآن واستحق الوعيد بالنار ;আলী ইবনু আহমাদ ইবনু হাযম আন্দালুসী আবূ মুহাম্মাদ, আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম (কায়রো : দারুল হাদীছ, ১৪০৪ হিঃ), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ২৭৫।

[৩৯]­. আল-কানযুল মাদফুন ওয়াল ফুলকুন মাশহূন, পৃ. ১৪৯।

[৪০]­. আল-ফাউযুল কাবীর, পৃ. ১০, ১১।




প্রসঙ্গসমূহ »: ভ্রান্ত মতবাদ
জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে ইসলাম শিক্ষার আবশ্যকতা - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (শেষ কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ (৩য় কিস্তি) - ড. মেসবাহুল ইসলাম
কালো কলপ ব্যবহারের শারঈ বিধান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
রামাযানের শেষ দশকের গুরুত্ব ও করণীয় - মাইনুল ইসলাম মঈন
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২৩তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলামী শরী‘আতে খাওয়ার আদব - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মসজিদ : ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মাদক : সুশীল সমাজ ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
বিদ‘আত পরিচিতি (৩২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
সালাফী মানহাজের মূলনীতিসমূহ (শেষ কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী

ফেসবুক পেজ