হাদীছ বর্ণনায় আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর অবদান
-ড. মেসবাহুল ইসলাম*
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সপ্তম হিজরী সনের মুহাররম মাসে খায়বর যুদ্ধের সময় ইসলাম কবুল করেন এবং স্থায়ীভাবে নবী করীম (ﷺ)-এর সঙ্গ ধারণ করেন। সে সময় থেকে নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তিকাল পর্যন্ত তিনি কখনো রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গ ত্যাগ করেননি। এটার মূলে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল- ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তারিত জ্ঞানার্জন। ইবনু আব্দুল বার্র (রাহিমাহুল্লাহ) লিখেছেন,
أسلم أبو هريرة عام خيبر وشهدها مع رسول الله ﷺ و واجب عليه رغبة في العلم راضيا يشبع يطنه فكانت يده مع يد رسول الله ﷺ وكان يدور معه حيث دار.
‘আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) খায়বরের যুদ্ধের বছর ইসলাম কবুল করেন। তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে এই যুদ্ধে শরীক হন। অতঃপর তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গ ধারণ করেন। সবসময় তাঁর সঙ্গে থাকতেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ‘ইলম হাসিল করা। এটাতেই তিনি সন্তুষ্ট থাকতেন ও তাঁর ক্ষুধা নিবৃত্ত হত। তাঁর হাতে রাসূল (ﷺ)-এর হাত বাঁধা থাকত। তিনি যেখানে যেতেন, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-ও সেখানে যেতেন’।[১]
রাসূল (ﷺ) সাধারণত যেসব কথাবার্তা বলতেন, অপর লোকের সওয়ালের জওয়াবে তিনি যা কিছু ইরশাদ করতেন, ইসলাম ও কুরআনের বিভিন্ন বিষয়ে যা কিছু শিক্ষাদান করতেন, কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করতেন, বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ ও বক্তৃতা দিতেন, রাসূল (ﷺ)-এর নিকট সারাক্ষণ উপস্থিত থেকে তা সবই তিনি গভীরভাবে শ্রবণ করতেন ও মুখস্থ করে রাখতেন। সেই সাথে তিনি নিজেও অনেক বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে রাসূল (ﷺ)-এর নিকট থেকে জেনে নিতেন এবং স্মরণ রাখতেন। অন্য ছাহাবীগণের অনেকেই পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাষাবাদের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন বলে তাঁরা খুব বেশি সময় রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে অতিবাহিত করতে পারতেন না। কিন্তু আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর এই ধরনের কোন ব্যস্ততাই ছিল না। এ কারণে তিনি অন্যদের তুলনায় অধিক হাদীছ শ্রবণের সুযোগ লাভ করেছিলেন। বিপুল সংখ্যক হাদীছ বর্ণনা করা তাঁর পক্ষে বিচিত্র কিছুই নয়। এমতাবস্থায় আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নিজেই বলেছেন,
إن إخوتن من المهاجرين كان يشغلهم الصفق بلأسواق وكنت ألزم رسول الله ﷺ على ملاء بطني فاشهد إذا غابوا واحفظ إذا نسوا وكان يشغل إخوتي من الانصار عمل أموالهم وكنت إمراء مسكينا من مساكين الصفة أعي حين ينسون.
‘আমার মুহাজির ভাইগণ অধিকাংশ সময়ে বাজারে ব্যবসায়ের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। আর আমি রাসূল (ﷺ)-এর সাথে লেগে থাকতাম। বাইরে আমার কোন ব্যস্ততাই ছিল না। ফলে তাঁরা যখন রাসূল (ﷺ)-এর দরবারে অনুপস্থিত থাকতেন, আমি তখন সেখানে উপস্থিত থাকতাম। তাঁরা ভুলে গেলে আমি তা স্মরণ রাখতাম। অপরদিকে আমার আনছার ভাইগণ তাঁদের ধন-সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু আমি ছিলাম ছুফফার একজন মিসকীন ও গরীব ব্যক্তি। ফলে তাঁরা কোন বিষয় ভুলে গেলেও আমি তা স্মরণ রাখতাম’।[২]
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বর্ণিত হাদীছের মোট সংখ্যা ৫৩৭৪টি। তন্মধ্যে ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম উভয় গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে ৩২৫টি হাদীছ, আর স্বতন্ত্রভাবে ৭৯টি হাদীছ। তন্মধ্যে কেবল ছহীহ বুখারীতে ২৩২ টি এবং বাকী ৯৩টি হাদীছ ছহীহ মুসলিমে উদ্ধৃত হয়েছে।[৩] ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ও বদরুদ্দীন আইনী (রাহিমাহুল্লাহ) লিখেছেন, روى عنه أكثر من ثمانمائة رجل من صاحب وتابع ‘আটশ’রও অধিক ছাহাবী ও তাবেঈ তাঁর নিকট থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন’।[৪]
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অন্য ছাহাবীদের অপেক্ষা এত অধিক হাদীছ কেমন করে বর্ণনা করতে পারলেন, উপরিউক্ত তাঁর নিজস্ব বিশ্লেষণ হতে তা বিশদভাবেই জানতে পারা যায়। এতদ্ব্যতীত তাঁর নি¤েœাক্ত বাণী থেকেও এ সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারণা জন্মে। তিনি নিজেই বলেছেন,
ولولا أيتنا أنزلهما الله في كتابه ما حدثت شيئا أبدا إن الذين يكتمون ما أنزلنا من البينت والهدي الخ.
‘এই আয়াত দু’টি যদি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে নাযিল না করতেন, তাহলে আমি কখনোই কোন হাদীছ বর্ণনা করতাম না। তাতে আল্লাহ বলেছেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا مِنَ الۡبَیِّنٰتِ وَ الۡہُدٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا بَیَّنّٰہُ لِلنَّاسِ فِی الۡکِتٰبِ ۙ اُولٰٓئِکَ یَلۡعَنُہُمُ اللّٰہُ وَ یَلۡعَنُہُمُ اللّٰعِنُوۡنَ.
‘আমি যেসব সুস্পষ্ট যুক্তিপূর্ণ ও হিদায়াতের কথা নাযিল করেছি, তাকে যারা গোপন করে রাখে- তাদের উপর আল্লাহর ও অন্যান্য অভিসম্পাতকারীদের অভিশাপ’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৯)।[৫]
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কমবেশি প্রায় তিন বৎসরকাল ক্রমাগতভাবে রাসূল (ﷺ)-এর সাথে থেকে হাদীছ শ্রবণ করেছেন এবং তা স্মরণ করে রেখেছেন। তার ফলেই তাঁর পক্ষে অন্য ছাহাবীদের তুলনায় এত অধিক সংখ্যক হাদীছ বর্ণনা করা সম্ভব হয়েছে। বিশেষত তাঁকে আল্লাহ তা‘আলা এত প্রখর স্মরণশক্তি দান করেছিলেন যে, তিনি যা কিছু শুনতেন, তা কখনোই ভুলে যেতেন না। যদিও তাঁর এই অতুলনীয় স্মৃতিশক্তি রাসূল (ﷺ)-এর দু‘আর ফলেই অর্জিত হয়েছিল।[৬] তাঁর সর্বাধিক হাদীছ অর্জন ও অতুলনীয় স্মৃতিশক্তির কথা তদানিন্তন সমাজে সর্বজনবিদিতও স্বীকৃত ছিল। নি¤েœাদ্ধৃত উক্তিসমূহ থেকে তা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়। উবায় ইবনু কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
إن أبا هريرة كان جريئا على أن يسئال رسول الله ﷺ عن أشياء لايسئال عنها غيره
‘আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (ﷺ)-এর নিকট প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা করার ব্যাপারে বড় সাহসী ছিলেন। তিনি এমন সব বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেন, যে বিষয়ে অপর কোন ছাহাবী জিজ্ঞাসা করতেন না’।[৭]
আবূ আমের বলেন, আমি ত্বালহার নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি এসে তাঁকে বলল, ‘হে আবূ মুহাম্মাদ! আবূ হুরায়রা রাসূল (ﷺ)-এর হাদীছের বড় হাফেয, না তোমরা, তা আজ পর্যন্ত আমরা বুঝতে পারলাম না’। তখন আবূ ত্বালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘তিনি (আবূ হুরায়রা) এমন অনেক কথাই জানেন, যা আমাদের জ্ঞান বহির্ভূত। এর কারণ এই যে, আমরা বিত্ত-সম্পত্তিশালী লোক ছিলাম, আমাদের ঘর-বাড়ি ও স্ত্রী-পরিজন ছিল, আমরা তা নিয়েই অধিক সময় মশগুল থাকতাম। শুধু সকাল ও সন্ধ্যার সময়ে রাসূল (ﷺ)-এর খিদমতে উপস্থিত থেকে আপন-আপন কাজে চলে যেতাম। আর আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মিসকীন ছিলেন। তাঁর কোন জায়গা-জমি ও পরিবার-পরিজন ছিল না। এই কারণে তিনি রাসূল (ﷺ)-এর হাতে হাত দিয়ে তাঁর সঙ্গে লেগে থাকতেন। আমাদের সকলেরই বিশ্বাস, তিনি আমাদের সকলের অপেক্ষা অধিক সংখ্যক হাদীছ শুনতে পেয়েছেন। তিনি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট না শুনে কোন হাদীছ বর্ণনা করেছেন, আমাদের কেউই তাঁর উপর এই দোষারোপ করেনি’।[৮] আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) একবার তাঁকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী রকমের হাদীছ বর্ণনা করছ? অথচ আমি রাসূল (ﷺ)-এর যেসব কাজ দেখেছি ও যেসব কথা শুনেছি, তুমিও তাই শুনেছ?’ এর জওয়াবে আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘আম্মা! আপনি তো রাসূল (ﷺ)-এর জন্য সাজ-সজ্জার কাজেই ব্যস্ত থাকতেন। আর আল্লাহর শপথ! রাসূল (ﷺ)-এর দিক থেকে কোন জিনিসই আমার দৃষ্টিকে অন্যদিকে ফিরাতে পারত না’।[৯]
উমাইয়া শাসক মারওয়ানের নিকট আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কোন ব্যাপার অসহ্য হওয়ায় তিনি রাগান্বিত হয়ে একবার বলেছিলেন, ‘লোকেরা বলে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বহু হাদীছ বর্ণনা করেন; অথচ রাসূল (ﷺ)-এর ইন্তিকালের কয়েকদিন মাত্র পূর্বেই তিনি মদীনায় আসেন’। জওয়াবে আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘আমি যখন মদীনায় আসি, তখন আমার বয়স ছিল ত্রিশ বছরের কিছু বেশি। অতঃপর রাসূল (ﷺ)-এর ইন্তিকাল পর্যন্ত আমি তাঁর সঙ্গে সঙ্গে রয়েছি। তাঁর সাথে বেগমদের মহল পর্যন্ত যেতাম, তাঁর খেদমত করতাম, তাঁর সঙ্গে লড়াই-জিহাদে শরীক হতাম, তাঁর সঙ্গে হজ্জে গমন করতাম। এ কারণে আমি অপরের তুলনায় অধিক হাদীছ জানতে পেরেছি। আল্লাহর শপথ! আমার পূর্বে যেসব লোক রাসূল (ﷺ)-এর সাহচর্যে এসেছিলেন, তাঁরাও রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে আমার সবসময় উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করতেন এবং আমার কাছে তাঁরা হাদীছ জিজ্ঞেস করতেন। ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু), ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু), ত্বালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও যুবায়র (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[১০] ত্বালহা ইবন উবায়দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
لا شك إن أبا هريرة سمع من رسول الله ﷺ ما لم نسمع.
‘আবূ হুরায়রা রাসূল (ﷺ)-এর নিকট থেকে এত হাদীছ শুনেছেন, যা আমরা শুনতে পারিনি; এতে কোনই সন্দেহ থাকতে পারে না’।[১১] ইবন উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে লক্ষ্য করে একদিন বলেছিলেন,
أنت كنت ألزمنا لرسول الله ﷺ أحفظنا لحديثه.
‘তুমি আমাদের অপেক্ষা রাসূল (ﷺ)-এর সাহচর্যে বেশ লেগে থাকতে এবং এ কারণে তাঁর হাদীছ তুমি আমাদের অপেক্ষা অধিক জানতে ও মুখস্থ করতে পেরেছ’।[১২] ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) লিখেছেন, ‘উমর ফারুক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে একদিন এ কথাই বলেছিলেন’।[১৩]
তাবেঈদের মধ্যে বহুসংখ্যক মনীষী আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর তীক্ষ্ম স্মরণশক্তি সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এখানে কয়েকজনের উক্তি উদ্ধৃত করা হল:
আবূ ছালেহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, كان أبو هريرة أحفظ أصحاب محمد ﷺ. ‘রাসূল (ﷺ)-এর ছাহাবীদের মধ্যে আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সর্বাধিক স্মরণশক্তিসম্পন্ন ও হাদীছের অতি বড় হাফেয ছিলেন’।[১৪] সাঈদ ইবন আবুল হাসান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
لم يكن أحد من الصحابة أكثر حديثا من أبي هريرة.
‘ছাহাবীদের মধ্যে আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অপেক্ষা অধিক হাদীছ বর্ণনাকারী আর একজনও ছিলেন না’।[১৫] ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সম্পর্কে লিখেছেন,
روى عنه نحو الثمانمائة من أهل العلم وكان أحفظ من روى الحديث في عصره.
‘তাঁর নিকট থেকে প্রায় আটশ’ মনীষী হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তাঁর যুগের হাদীছ বর্ণনাকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন হাদীছের সবচেয়ে বড় হাফেয’।[১৬]
বদরুদ্দীন আইনী (রাহিমাহুল্লাহ) লিখেছেন, وهو أكثر الصحابة رواية بإجماع. ‘আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছাহাবীদের মধ্যে সর্বাধিক হাদীছ বর্ণনাকারী। এতে সকল হাদীছবিজ্ঞানীই একমত’।[১৭]
ইমাম শাফেঈ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, أبو هريرة أحفظ من روى الحديث في دهره. ‘আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর যুগের সমস্ত হাদীছ বর্ণনাকারীর মধ্যে সর্বাধিক স্মরণশক্তিসম্পন্ন ও হাদীছের বড় হাফেয’।[১৮]
মুহাদ্দিছ হাকেম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
كان من أحفظ أصحاب رسول الله ﷺ وألزمهم له صحبة على شبع بطنه فكانت يده مع يده يدور حيث دار اعلي أن مات ولذلك كثر حديثه.
‘আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (ﷺ)-এর ছাহাবীদের মধ্যে অধিক স্মরণশক্তিসম্পন্ন ও হাদীছের অতি বড় হাফেয ছিলেন। তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে অন্যান্যের তুলনায় অনেক বেশি সময় অবস্থান করেছেন। কেননা তিনি প্রয়োজনের দিক দিয়ে পরিতৃপ্ত ছিলেন। তাঁর হাত রাসূল (ﷺ)-এর হাতের মধ্যে থাকত। রাসূল (ﷺ) যখন যেখানে যেতেন, তিনিও তখন সেখানে যেতেন। রাসূল (ﷺ)-এর ইন্তেকাল পর্যন্তই এই অবস্থা থাকে। আর এ কারণেই অন্যান্যদের তুলনায় আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা অনেক বেশি হয়েছে’।[১৯] ইমাম আল-হাফিয বাকী ইবন মাখলাদ আন্দালুসী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে লিখেছেন,
لأبى هريرة خمسة آلاف حديث وثلاثمائة وأربعة وسبعين حديثا وليس لأحد من الصحابة رضي الله عنهم هذا القدر ولا ما يقاربه.
‘আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বর্ণিত পাঁচ হাজার তিনশ’ চুয়াত্তরটি হাদীছ রয়েছে। ছাহাবীদের মধ্যে অন্য কেউ এ পরিমাণ কিংবা এর কাছাকাছি পরিমাণ হাদীছও বর্ণনা করেননি’।[২০]
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হাদীছের বড় হাফিয ও ছাহাবীদের মধ্যে অধিক হাদীছজ্ঞ এবং অধিক হাদীছ বর্ণনাকারী ছিলেন। ছাহাবীগণ বিচ্ছিন্নভাবে যা বর্ণনা করতেন, সেই সব হাদীছ আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর একত্রে পাওয়া যেত। ফলে সকলেই তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করতেন এবং তার উপর নির্ভর করতেন। ‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
كان يحفظ على المسلمين حديث النبي ﷺ.
‘তিনি মুসলিমদের জন্য রাসূল (ﷺ)-এর হাদীছ হিফয করে রাখতেন’।[২১]
আবূ হুরায়রা (ﷺ) যে হাদীছের অতি বড় আলিম ছিলেন, তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা যে অন্যান্যদের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে এবং তাঁর বর্ণিত হাদীছ যে সর্বোতভাবে বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্য, তা পূর্বোক্ত দীর্ঘ আলোচনা থেকে অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে।
* সিনিয়র শিক্ষক, দারুল হুদা ইসলামী কমপ্লেক্স, বাউসা হেদাতীপাড়া, বাঘা, রাজশাহী।
[১]. আল-ইসতি‘আব ফী মা‘আরিফাতিল আসহাব, ২য় খ-, পৃ. ৭০।
[২]. ছহীহুল বুখারী, ২য় খ-, পৃ. ৭২১, হা, ১৯৪২।
[৩]. আল-ইসাবাহ, ১ম খ-, পৃ. ১২৪।
[৪]. ইসাবাহ, ৪র্থ খ-, পৃ.২০৩।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, ৪র্থ খ-, পৃ. ১৯৪০, হা, ২৪৯৩।
[৬]. ইসাবাহ, ৪র্থ খ-, পৃ.২০৩।
[৭]. তদেব।
[৮]. আল-মুসাতাদরাকি হাকিম, ৪র্থ খ-, পৃ. ৫০৯।
[৯]. ইসাবাহ, ৪র্থ খ-, পৃ.২০৩।
[১০]. ইসাবাহ, ৪র্থ খ-, পৃ.২০৬।
[১১]. তদেব, পৃ. ২০৫।
[১২]. তদেব ।
[১৩]. তদেব ।
[১৪]. তদেব, পৃ. ২০৩।
[১৫]. ইসাবাহ, ৭ম খ-, পৃ.৪৩৩।
[১৬]. ইসাবাহ, ৭ম খ-, পৃ.৪৩২।
[১৭]. ‘উমদাতুল কারী, ১ম খ-, পৃ. ৩৩১।
[১৮]. আল ইসাবাহ, ৭ম খ-, পৃ. ৪৩৩।
[১৯]. তদেব।
[২০]. শারহুন নবাবী ‘আলা মুসলিম, ১ম খ-, পৃ.৬৭।
[২১]. আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছুন, পৃ. ১৩৩-১৩৪।