ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা
-মূল : শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল ওয়াহহাব
-ব্যাখ্যা : শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছাইমীন
-অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক্ব বিন আব্দুল ক্বাদির*
(৩য় কিস্তি)
মূলনীতি-৩
আমাদের যিনি নেতৃত্ব দেন তিনি যদি গোলাম হন তারপরও তার কথা শ্রবণ করা ও তা মান্য করা হল মুসলিম সমাজ সম্মিলিত থাকার পরিপূরক। সেকারণেই আল্লাহ তা‘আলা এই বিষয়টিকে শারঈ দিক দিয়ে বিভিন্ন বর্ণনার ভঙ্গিতে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। এরপরও যারা জ্ঞানের দাবী করে তাদের অধিকাংশের নিকট এই মূলনীতিটি অজানা বিষয় হয়ে গেছে। সুতরাং তার প্রতি আমল আশা করা যায় কিভাবে?
ব্যাখ্যা
মূল লেখক শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, শাসকগণ যা আদেশ করেন তা পালন করা ও যা থেকে নিষেধ করেন তা বর্জন করার মাধ্যমে তাদের কথা শ্রবণ করা এবং তাদেরকে মান্য করা হল মুসলিম সমাজ ঐক্য থাকার পরিপূরক। যদিও যিনি আমাদের নেতৃত্ব দিবেন তিনি হাবশী গোলামও হন।
আল্লাহর কিতাব থেকে দলীল
দলীল-১ : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের’ (সূরা আন-নিসা : ৫৯)।
দলীল-২ : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ وَ لَا تَنَازَعُوۡا فَتَفۡشَلُوۡا وَ تَذۡہَبَ رِیۡحُکُمۡ وَ اصۡبِرُوۡا اِنَّ اللّٰہَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ
‘আর তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং পরস্পর ঝগড়া করো না তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হযে যাবে। আর তোমরা ধৈর্যধারণ কর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সূরা আল-আনফাল : ৪৬)।
দলীল-৩ : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰہِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا
‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১০৩)।
হাদীছ থেকে দলীল
দলীল-১ : ‘উবাদাহ বিন ছামিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِىْ مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةٍ عَلَيْنَا وَأَنْ لَا نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ فِيْهِ بُرْهَانٌ
‘আমাদের থেকে যে ওয়াদা তিনি (রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণরূপে শোনা ও মানার উপর বায়‘আত করলাম। আরও (বায়‘আত করলাম) যে আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঝগড়া করব না। কিন্তু যদি স্পষ্ট কুফরী দেখ, তোমাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে আলাদা কথা’।[১]
দলীল-২ : ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
مَنْ رَأَى مِنْ أَمِيْرِهِ شَيْئًا يَكْرَهُهُ فَلْيَصْبِرْ عَلَيْهِ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَمَاتَ إِلَّا مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً
‘যে ব্যক্তি নিজ আমীরের মধ্যে অপসন্দনীয় কিছু দেখবে সে যেন তাতে ধৈর্যধারণ করে। কেননা, যে লোক জামা‘আত থেকে এক বিঘতও বিচ্ছিন্ন হবে তার মৃত্যু হবে জাহেলী মৃত্যুর মত’।[২]
দলীল-৩ : আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, مَنْ خَلَعَ يَدًا مِّنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا حُجَّةَ لَهُ ‘যে ব্যক্তি আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিল, ক্বিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার কাছে কোন প্রমাণ থাকবে না’।[৩]
দলীল-৪ : আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন,اسْمَعُوْا وَأَطِيْعُوْا وَإِنِ اسْتُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ كَأَنَّ رَأْسَهُ زَبِيْبَةٌ ‘তোমরা শোন এবং আনুগত্য কর যদিও তোমাদের ওপর কিসমিসের ন্যায় মাথা বিশিষ্ট হাবশী গোলামকে ও শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয়’।[৪]
দলীল-৫ : ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيْمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ إِلَّا أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ
‘মুসলিম ব্যক্তির অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হচ্ছে শোনা ও মানা তার প্রতিটি প্রিয় ও অপ্রিয় ব্যাপারে, যতক্ষণ না তাকে আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ করা হয়। যদি আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ তাকে দেয়া হয় তাহলে তা শুনবেও না এবং মানবেও না’।[৫]
দলীল-৬ : আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, কোন এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। আমরা একটি স্থানে অবস্থান গ্রহণ করলাম। আমাদের মধ্যকার কেউ তখন তার তাঁবু ঠিকঠাক করছিল, কেউ তীর ছুঁড়ছিল, কেউ তার পশুপাল দেখাশুনা করছিল। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নকীব হাঁক দিল ছালাতের ব্যবস্থা প্রস্তুত তখন আমরা গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশে মিলিত হলাম। তিনি বললেন,
إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِىٌّ قَبْلِىْ إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَإِنَّ أُمَّتَكُمْ هَذِهِ جُعِلَ عَافِيَتُهَا فِىْ أَوَّلِهَا وَسَيُصِيْبُ آخِرَهَا بَلَاءٌ وَأُمُوْرٌ تُنْكِرُوْنَهَا وَتَجِىءُ فِتْنَةٌ فَيُرَقِّقُ بَعْضُهَا بَعْضًا وَتَجِىءُ الْفِتْنَةُ فَيَقُوْلُ الْمُؤْمِنُ هَذِهِ مُهْلِكَتِىْ ثُمَّ تَنْكَشِفُ وَتَجِىءُ الْفِتْنَةُ فَيَقُوْلُ الْمُؤْمِنُ هَذِهِ هَذِهِ. فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ وَيَدْخُلَ الْجَنَّةَ فَلْتَأْتِهِ مَنِيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَأْتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِى يُحِبُّ أَنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ وَمَنْ بَايَعَ إِمَامًا فَأَعْطَاْهُ صَفْقَةَ يَدِهِ وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ فَلْيُطِعْهُ إِنِ اسْتَطَاعَ فَإِنْ جَاءَ آخَرُ يُنَازِعُهُ فَاضْرِبُوْا عُنُقَ الْآخَرِ
‘আমার পূর্বে এমন কোন নবী অতিবাহিত হননি যাঁর উপর এ দায়িত্ব বর্তায়নি যে, তিনি তার জাতির জন্য যে মঙ্গলজনক ব্যাপার জানতে পেরেছেন তা তাদেরকে নির্দেশনা দেননি এবং তিনি তাদের জন্য যে অনিষ্টকর ব্যাপার জানতে পেরেছেন, সে বিষয়ে তাদেরকে সাবধান করেননি। আর তোমাদের এ উম্মাত (উম্মাতে মুহাম্মাদী)-এর প্রথম অংশে তার কল্যাণ নিহিত এবং এর শেষ অংশ অচিরেই নানাবিধ পরীক্ষা ও বিপর্যয়ের এবং এমন সব ব্যাপারের সম্মুখীন হবে, যা তোমাদের নিকট অপসন্দনীয় হবে। এমন সব বিপর্যয় পর্যায়ক্রমে আসতে থাকবে যে, একটি অপরটিকে ছোট প্রতিপন্ন করবে। একটি বিপর্যয় আসবে তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, এটা আমার জন্য ধ্বংসাত্মক, তারপর যখন তা দূর হয়ে অপর বিপর্যয়টি আসবে তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, আমি তো শেষ হয়ে যাচ্ছি ইত্যাদি। সুতরাং যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে চায় এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায় তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় আসে যে, সে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং সে যেন মানুষের সাথে এমন আচরণ করে যে আচরণ সে নিজের জন্য পসন্দ করে। আর যে ব্যক্তি কোন ইমাম (বা নেতা)-এর হাতে বায়‘আত গ্রহণ করে বা আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে তার হাতে হাত দিয়ে এবং অন্তরে সে ইচ্ছা পোষণ করে, তবে সে যেন সাধ্যানুসারে তার আনুগত্য করে যায়। তারপর যদি অপর কেউ তার সাথে (নেতৃত্ব লাভের অভিলাষে) ঝগড়ায় প্রবৃত্ত হয় তবে ঐ পরবর্তী জনের গর্দান উড়িয়ে দেবে’।[৬]
মর্যাদাকর বর্ণনা : মুসলিম উম্মাহর এই অবস্থা কোন গোপন ব্যাপার নয় যে, যখন তারা দ্বীনকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করেছিল ও তার উপর ঐক্যবদ্ধ ছিল, নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল এবং ভাল বিষয়ে তাদের আনুগত্য ছিল, তখন পৃথিবীতে তাদের নেতৃত্ব ও বিজয় ছিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَیَسۡتَخۡلِفَنَّہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ کَمَا اسۡتَخۡلَفَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ وَ لَیُمَکِّنَنَّ لَہُمۡ دِیۡنَہُمُ الَّذِی ارۡتَضٰی لَہُمۡ وَ لَیُبَدِّلَنَّہُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ خَوۡفِہِمۡ اَمۡنًا یَعۡبُدُوۡنَنِیۡ لَا یُشۡرِکُوۡنَ بِیۡ شَیۡئًا
‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে খেলাফত অবশ্যই দান করবেন, যেমন তিনি (প্রতিনিধিত্ব) দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য সুদৃঢ় করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন; তারা শুধু আমার ইবাদত করবে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না’ (সূরা আন নূর : ৫৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ لَیَنۡصُرَنَّ اللّٰہُ مَنۡ یَّنۡصُرُہٗ اِنَّ اللّٰہَ لَقَوِیٌّ عَزِیۡزٌ - اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّکَّنّٰہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَوُا الزَّکٰوۃَ وَ اَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ نَہَوۡا عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ لِلّٰہِ عَاقِبَۃُ الۡاُمُوۡرِ
‘অবশ্যই আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে; নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী। আমরা তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা ছালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎকার্য হতে নিষেধ করবে; সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারে’ (সূরা আল-হাজ্জ : ৪১-৪২)।
মুসলিম উম্মাহ যখন নতুন কিছু ঘটনার জন্ম দিয়েছে, তাদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বিভিন্ন দলে পরিণত হয়েছে, তখন তাদের শত্রুদের অন্তর থেকে ভয়কে দূর করে দেয়া হয়েছে। তারা পরস্পর বিবাদ করেছে, তাই তারা ব্যর্থ হয়েছে ও তাদের শক্তি হারিয়ে গেছে এবং অন্যান্য জাতি তাদের বিরুদ্ধে একে অপরকে ডেকেছে ফলে তারা স্রোতের আবর্জনার মত আবর্জনায় পরিণত হয়েছে।
পরিশেষে এই মূলণীতিটি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, যারা ইলমের ও আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আত্মসম্মানের দাবীদার তাদের অধিকাংশের নিকট এটা পরিচিত নয়। এর প্রতি আমল ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং প্রজাদের প্রত্যেক সদ্যসই নিজেকে নেতা অথবা নেতার বিরোধী নেতার পর্যায়ে মনে করে। সুতরাং আমাদের রাজা-প্রজা সকলের উপর আবশ্যক হল, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপর যা ওয়াজিব করেছেন তা বাস্তবায়ন করা। অর্থাৎ পরস্পর হৃদ্যতা পোষণ করা, কল্যাণকর কাজে পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা, তাক্বওয়া অবলম্বন করা এবং কল্যাণকর বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা। তাহলেই আমরা সফল হতে পারব।
আমাদের উপর আরেকটি আবশ্যক হল যে, আমাদের সত্যের উপর ঐক্যবদ্ধ থাকা, হক্বের উপর পরস্পরকে সাহায্য করা, সকল কাজে নিয়তকে খাঁটি করা এবং মাত্র একটি উদ্দেশ্যের জন্য সবার আপ্রাণ চেষ্টা করা। তাহল যথাসম্ভব এ উম্মাহর দ্বীন ও দুনিয়ার বিষয়ে সংস্কার করা। আর সেটা কখনোই সম্ভব হবে না যতক্ষণ না আমাদের স্লোগান এক হবে এবং আমরা পরস্পর বিরোধিতা পরিত্যাগ করব। বরং কখনো হিতে বিপরীত হয়ে উদ্দেশ্য তো হারাবেই যা কাছে রয়েছে তাও হারিয়ে যেতে পারে।
নিশ্চয় যখন কথার মাঝে ভিন্নতা তৈরি হয় ও প্রজা যখন বিদ্রোহ করে, তখনই বিভিন্ন প্রবৃত্তি ও বিদ্বেষ অনুপ্রবেশ করে এবং প্রত্যেকেই নিজ উক্তি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যদিও ন্যায়, সত্য তার বিপরীতে প্রকাশ পায়। সে কারণে আমরা আল্লাহর নির্দেশ থেকে বেরিয়ে যাব। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ حَقَّ تُقٰتِہٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ - وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰہِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا وَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰہِ عَلَیۡکُمۡ اِذۡ کُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَیۡنَ قُلُوۡبِکُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِہٖۤ اِخۡوَانًا وَ کُنۡتُمۡ عَلٰی شَفَا حُفۡرَۃٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنۡقَذَکُمۡ مِّنۡہَا کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمۡ اٰیٰتِہٖ لَعَلَّکُمۡ تَہۡتَدُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা প্রকৃত ভীতি সহকারে আল্লাহকে ভয় কর এবং মুসলিম হওয়া ব্যতীত মৃত্যুবরণ কর না। আর তোমরা একযোগে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়রূপে ধারণ কর ও বিভক্ত হয়ে যেয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর যে নে‘মত রয়েছে তা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনিই তোমাদের অন্তঃকরণে প্রীতি স্থাপন করেছিলেন, তৎপরে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ হলে এবং তোমরা অগ্নিকুণ্ডের নিকটে ছিলে অনন্তর তিনিই তোমাদেরকে ওটা হতে উদ্ধার করেছেন; এরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্যে স্বীয় নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করেন যেন তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হও’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১০২-১০৩)।
পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের সকলেই যখন তার নিজের কল্যাণ-অকল্যাণ বুঝতে পারবে এবং হিকমতের আলোকে তা বাস্তবায়ন করবে, তখন সাধারণ ও বিশেষ সকল বিষয় অতি সুন্দর ও পরিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলবে।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* মুহাদ্দিছ, দারুল হুদা ইসলামী কমপ্লেক্স, বাউসা হেদাতীপাড়া, বাঘা, রাজশাহী।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭০৯।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৯।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৫১।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৯৩, ৭১৪২।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৯; ছহীহ বুখারী, হা/৭১৪৪।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৪।