মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১১:৫৫ অপরাহ্ন

 সর্বশ্রেষ্ঠ আমল

-হাফেয আবূ তাহের বিন মজিবুর রহমান*


মহান আল্লাহ মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য-কে তাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। মহান আল্লাহর নিকটবর্তী ও আখেরাতে কৃতকার্য হওয়ার জন্য সর্বোত্তম আমলের বিকল্প নেই। এ কারণে শরী‘আতে সর্বশ্রেষ্ঠ আমলের কথা বলে দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকেও শরীক না করে’ (সূরা আল-কাহফ : ১১০)। নিম্নে কিছু ‘সর্বশ্রেষ্ঠ আমল’ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

১. আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান আনা

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হল সর্বশ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? তিনি বললেন, إِيْمَانٌ بِاللهِ  وَرَسُوْلِهِ ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।[১]

আবূ যার গিফারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোনটি সর্বোত্তম কাজ? তিনি বললেন, إِيْمَانٌ بِاللهِ ‘আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা।[২]

আব্দুল্লাহ ইবনু হুবাশী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, إِيْمَانٌ لَا شَكَّ فِيْهِ ‘এমন ঈমান, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই’।[৩]

আমর ইবনু আবাসাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট আসলাম। অতঃপর জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ‘ঈমান’ কী? তিনি বললেন, الصَّبْرُ وَالسَّمَاحَةُ ‘ধৈর্যধারণ করা ও দানশীলতা’। আমি বললাম, কোন্ ঈমান সর্বোত্তম? তিনি বললেন, خُلُقٌ حَسَنٌ ‘সচ্চরিত্রবান হওয়া’।[৪]

উক্ত হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় সর্বোত্তম আমল হল ঈমান আনায়ন করা। কেননা ঈমানছাড়া জান্নাতে যাওয়া অসম্ভব।

এ বিষয়ে হাদীছে এক যুদ্ধের ঘটনায় পাওয়া যায় নাবী (ﷺ) বেলাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে বললেন, يَا بِلَالُ قُمْ فَأَذِّنْ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا مُؤْمِنٌ ‘হে বিলাল! উঠ এবং ঘোষণা কর যে, মুমিন ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[৫]

প্রিয় পাঠকগণ আমাদের সমাজের অনেক মানুষের ঈমান নষ্ট হয়ে যায় ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ না জানার কারণে। সুতরাং ঈমান ভঙ্গের ১০টির[৬] কোন একটি কারণ মানুষের মাঝে পাওয়া গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তাই আমাদের উচিত তাওবা করে নতুন করে ঈমান নবায়ন করা। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেন,

إِنَّ الإِيْمَانَ لَيَخْلَقُ فِيْ جَوْفِ أَحَدِكُمْ كَمَا يَخْلَقُ الثَّوْبُ الخَلَقُ؛ فَسَلُوا اللهَ أَنْ يُجَدِّدَ الْإِيْمَانَ فِيْ قُلُوبِكُمْ

‘অবশ্যই তোমাদের হৃদয়ে ঈমান জীর্ণ হয়; যেমন জীর্ণ হয় পুরনো কাপড়। সুতরাং তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা কর, যাতে তিনি তোমাদের হৃদয়ে তোমাদের ঈমান নবায়ন করে দেন’।[৭] সুতরাং আমাদের উচিত ঈমানকে নবায়ন করা।

২. যথা সময়ে ছালাত আদায় করা

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, اَلصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا ‘যথা সময়ে ছালাত আদায় করা’।[৮] অর্থাৎ আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা।

আব্দুল্লাহ ইবনু হুবাশী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, সর্বোত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, طُوْلُ الْقِيَامِ ‘দীর্ঘ ক্বিয়াম’।[৯] আমর ইবনু আবাসাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা আমি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট আসলাম। অতঃপর জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! কোন্ ছালাত সর্বোত্তম? তিনি বললেন, طُوْلُ الْقُنُوْتِ ‘দীর্ঘ ক্বিয়াম অর্থাৎ দীর্ঘ সময় ধরে ছালাত আদায় করা’।[১০] 

৩. ছিয়াম পালন করা

ছিয়াম আল্লাহর নিকট অতি পছন্দনীয় আমলগুলোর অন্যতম একটি। আবূ উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে প্রশ্ন করেছিলেন, কোন ইবাদত সর্বোত্তম? রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَا عِدْلَ لَهُ ‘তুমি ছাওম (রোযা)-কে আঁকড়ে ধর, যেহেতু ছাওমের কোন বিকল্প নাই’।[১১]

ছিয়াম এমন এক ইবাদত, যার পুরস্কার আল্লাহ তা‘আলা নিজেই দিবেন। হাদীছে কুদসীতে মহান আল্লাহ বলেন, اَلصَّوْمُ لِيْ وَأَنَا أَجْزِي بِهِ ‘ছাওম আমারই জন্য আর আমিই তার প্রতিদান দিব।[১২]

বুঝা গেল ছিয়াম পালন আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আমল। কিন্তু আজ সমাজের মানুষ বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে ছিয়াম থেকে দুরে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে  বেশি বেশি ছিয়াম রাখার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!

৪. হজ্জ পালন করা

সর্বশ্রেষ্ঠ আমলগুলোর মধ্যে হজ্জ অন্যতম একটি। হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হল সর্বশ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? তিনি বললেন, حَجٌّ مَبْرُوْرٌ ‘কবুলকৃত হজ্জ।[১৩]

উপরিউক্ত হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহর নিকট উত্তম ও প্রিয় আমল হচ্ছে কবুল হজ্জ। হজ্জ এমন একটি ইবাদত, যা হজ্জ আদায়কারীকে নিষ্পাপ শিশুর মত করে দেয়। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, مَنْ حَجَّ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ ‘যে ব্যক্তি (আল্লাহর জন্য) হজ্জ পালন করল এবং (তাতে) কোন অশ্লীল কাজ করল না ও পাপাচার করল না, সে ব্যক্তি ঠিক ঐ দিনকার মত (নিষ্পাপ হয়ে) বাড়ি ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল’।[১৪] তাছাড়া হজ্জের পুরস্কার হল জান্নাত। রাসূল (ﷺ) বলেন, وَالحَجُّ المَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الجَنَّةَ ‘আর ‘মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়’।[১৫]

৫. পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা

মহান আল্লাহর নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ আমলগুলোর অন্যতম হল পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, بِرُّ الْوَالِدَيْنِ ‘পিতা-মাতার প্রতি সদ্ধ্যবহার’।[১৬]

আল্লাহ তা‘আলা তার ইবাদতের পরেই পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاہُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে’ (সূরা বানী ইসরাইল : ২৩)।

সন্তান পিতা-মাতার সাথে যখন সদ্ব্যবহার করবে তখন তারা সন্তুষ্ট থাকবে। আর তাদের সন্তুষ্টুতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন,رِضَى الرَّبِّ فِيْ رِضَى الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِيْ سَخَطِ الْوَالِدِ ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে’।[১৭]

সুতরাং আমাদের উচিত সময় থাকতেই পিতা-মাতার  সেবা করে জান্নাতের পথকে সহজ করা।

৬. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা

মহান আল্লাহর নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ আমল হল তাঁর পথে জিহাদ করা। হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হল সর্বশ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? তিনি বললেন, أَلْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা’।[১৮] আবূ যার গিফারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নবী কারীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোনটি সর্বোত্তম কাজ? তিনি বললেন, جِهَادٌ فِي سَبِيْلِهِ ‘তাঁর (আল্লাহর) পথে জিহাদ করা’।[১৯] অন্য বর্ণনায় আছে, اَلْجِهَادُ فِىْ سَبِيلِ اللهِ ‘অতঃপর জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ (আল্লাহর পথে জিহাদ)’।[২০]

অতএব কেউ যদি একনিষ্ঠচিত্তে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, তাহলে তার প্রতিদান জান্নাত। মহান আল্লাহ বলেন,

اِنَّ اللّٰہَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَہُمۡ وَ اَمۡوَالَہُمۡ بِاَنَّ لَہُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ وَعۡدًا عَلَیۡہِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَہۡدِہٖ مِنَ اللّٰہِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِکُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِہٖ وَ  ذٰلِکَ ہُوَ الۡفَوۡزُ  الۡعَظِیۡمُ

‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সঙ্গে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য’ (সূরা আত-তওবাহ : ১১১)। মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا  الَّذِیۡنَ  اٰمَنُوۡا ہَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰی تِجَارَۃٍ  تُنۡجِیۡکُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ . تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ تُجَاہِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ  بِاَمۡوَالِکُمۡ وَ اَنۡفُسِکُمۡ ذٰلِکُمۡ  خَیۡرٌ  لَّکُمۡ  اِنۡ کُنۡتُمۡ  تَعۡلَمُوۡنَ

‘হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে? তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে’ (সূরা আছ-ছফ্ফ : ১০-১১)।

৭. জিহ্বা আল্লাহর যিকরে সিক্ত থাকা

আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হল যিকরে মশগুল থাকা। আল্লাহ ঐ ব্যক্তির আমলকে পছন্দ করেন যার জিহ্বা সর্বদা যিক্র করে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُسْر الْمُازَنِي  رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ أَعْرَابِيَانِ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ أَحَدهُمَا يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ النَّاسِ خَيْرٌ قَالَ طُوْبَى لِمَنْ طَالَ عُمُرُهُ وَحَسُنَ عَمَلُهُ وَقَالَ الآخَرُ أَيُّ الْعَمَلِ خَيْرٌ قَالَ أَنْ تُفَارِقَ الدُّنْيَا وَلِسَانُكَ رَطْبٌ مِنْ ذِكْرِ اللهِ

আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর আল-মুযানী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, দু’জন বেদুইন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকটে আগমন করল। তাদের একজন জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! (ﷺ) উত্তম মানুষ কে? তিনি বলেন, সে ব্যক্তির জন্য শুভ সংবাদ, যে দীর্ঘ জীবন লাভ করে এবং উত্তম আমল করে। অপর ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, কোন আমল উত্তম? তিনি বললেন, তুমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এমতাবস্থায় যে, তোমার জিহ্বা আল্লাহর যিকিরে সিক্ত থাকে।[২১]

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيْكِكُمْ وَأَرْفَعهَا فِي دَرَجَاتِكُمْ وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ إِنْفَاقِ الذَّهَبِ وَالْوَرِقِ وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقَكُمْ؟ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ ذِكْرُ اللهِ تَعَالَى

আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কি তোমাদের অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক হতে সবচেয়ে উঁচু, স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খয়রাত করার চেয়েও বেশি ভাল এবং তোমাদের শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা ও তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভাল? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলার যিকির।[২২]

৮. নিয়মিত আমল করা

আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আমল হল নিয়মিত আমল করা যদিও তা কম হয়। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَحَبُّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ أَدْوَمُهَا وَإِنْ قَلَّ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল সেটিই, যা নিয়মিত করা হয়ে থাকে। যদিও তা কম হয়।[২৩]

আমাদের উচিত, আমরা যে আমল করব তা যেন নিয়মিত হয়। কেননা এইরূপ আমল আল্লাহ খুব পছন্দ করেন।

পরিশেষে আল্লাহর নিকট সবার জন্য এই দু‘আ করি যে, তিনি যেন আমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করেন এবং তাঁর প্রিয় আমলগুলো পালন করার তাওফীক্ব দান করেন-আমীন!!


* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬, ছহীহ মুসলিম, হা/৮৩।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/২৫১৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৪।
[৩]. নাসাঈ, হা/২৫২৬; মিশকাত, হা/৩৮৩৩, সনদ ছহীহ।
[৪]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৪৫৪; মিশকাত, হা/৪৬।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৬০৬।
[৬]. ঈমান ভঙ্গের কারণ ১০টি। ১. আল্লাহর ইবাদতে শিরক করা  ২. আল্লাহ তা‘আলা এবং বান্দার মাঝে মাধ্যম তৈরি করা  ৩. কাফির মুশরিকদের পথকে সঠিক মনে করা  ৪. অন্যের হিদায়াত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হিদায়াত অপেক্ষা অধিক পরিপূর্ণ মনে করা। ৫. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা নিয়ে এসেছেন এর কোন বিষয়ের প্রতি ক্রোধ, বিদ্বেষ, অবজ্ঞা পোষণ করা। ৬. দ্বীনের কোন অংশ, নেকী বা শাস্তি নিয়ে ঠাট্রা-বিদ্রুপ করা। ৭. যাদু করা।  ৮. মুশরিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করা। ৯. যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে যে, এমনও কিছু লোক আছে যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শরী‘আত মানতে বাধ্য নয় এবং ১০. আল্লাহর দ্বীন-ইসলাম হতে সম্পূর্ণ বিমূখ থাকা। দ্র. সুলাইমান নাছির ইবনু আব্দুল্লাহ আল-উলওয়ান, আত-তিবইয়ানু শারহি নাওয়াকিজিল ইসলাম (কায়রো : দারুল বায়ারিক, ১৪৩০ হি./১৯৯৯ খৃ.), পৃ. ৫।
[৭]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১৪৬৬৮; মুসতাদরাক হাকেম, হা/৫; ছহীহুল জামে’, হা/১৫৯০; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৫৮৫।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৫।
[৯]. আবূ দাঊদ, হা/১৪৪৯; মিশকাত, হা/৩৮৩৩, সনদ ছহীহ।
[১০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৪৫৪; মিশকাত, হা/৪৬।
[১১]. নাসাঈ, হা/২২২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২৭৬।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৪৯২; ছহীহ মুসলিম, হা/১২৫১; তিরমিযী, হা/৭৬৪; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮২৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৭৪; নাসাঈ, হা/২২১১।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৩; মিশকাত, হা/২৫০৬।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫১২; মিশকাত, হা/২৫০৭।
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৭৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৪৯; তিরমিযী, হা/৯৩৩, মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩৫৪।
[১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৫।
[১৭]. তিরমিযী, হা/১৮৯৯; মিশকাত, হা/৪৯২৭।
[১৮]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬, ছহীহ মুসলিম, হা/৮৩।
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/২৫১৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৪।
[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৫।
[২১]. হিলইয়াতুল আওলিয়া, হা/৩২৪২; সনদ ছহীহ; মিশকাত, হা/২২৭০; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৮৩৬; ছহীহুল জামে‘, হা/৩২৮২।
[২২]. তিরমিযী, হা/৩৩৭৭; সনদ ছহীহ।
[২৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৮৩; মিশকাত, হা/১২৪২।




প্রসঙ্গসমূহ »: আমল
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (৫ম কিস্তি)  - আব্দুল গাফফার মাদানী
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৫ম কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
বিদ‘আত পরিচিতি (৩২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (১৯তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৭ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ক্বিয়ামতের ভয়াবহতা - সাজ্জাদ সালাদীন
পরনিন্দা চর্চা ও তার পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ (৩য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও তার সমাধান (৩য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
তাক্বওয়াই মুক্তির সোপান - আব্দুর রশীদ

ফেসবুক পেজ