সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৬ অপরাহ্ন

যাকাত বণ্টনে সমস্যা ও সমাধান

- ড. মুযাফফর বিন মুহসিন



ভূমিকা

যাকাত ইসলামের রুকন সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি রুকন। নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর যাকাত আদায় করা ফরয। এই ব্যক্তি যাকাত দিতে বাধ্য। অনেকে যাকাত দিতে আগ্রহী থাকার পরও বিভিন্ন জটিলতার কারণে যাকাত বণ্টন করেন না। অনেকে না বুঝার কারণে এই ফরয দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে অলসতা করেন।
যাকাত প্রদানের আবশ্যকতা

যাকাত ফরয ইবাদত। এই ইবাদতকে অস্বীকারকারী স্পষ্ট কাফির। তাই যে ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয হয়েছে তিনি যাকাত প্রদান করতে বাধ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

خُذۡ مِنۡ اَمۡوَالِہِمۡ صَدَقَۃً  تُطَہِّرُہُمۡ وَ تُزَکِّیۡہِمۡ بِہَا وَ صَلِّ عَلَیۡہِمۡ ؕ اِنَّ صَلٰوتَکَ سَکَنٌ لَّہُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ

‘(হে নবী!) আপনি তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করুন, যাতে আপনি এর দ্বারা তাদেরকে পবিত্র এবং বরকতময় করতে পারেন। আর আপনি তাদের জন্য দু‘আ করুন। নিশ্চয় আপনার দু‘আ তাদের জন্য সান্ত¦না স্বরূপ। বস্তুত আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (সূরা আত-তওবা: ১০৩)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ارۡکَعُوۡا مَعَ الرّٰکِعِیۡنَ ‘তোমরা ছালাত আদায় কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ৪৩)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,

أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ بَعَثَ مُعَاذًا ﷺ إِلَىْ الْيَمَنِ فَقَالَ ادْعُهُمْ إِلَىْ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنِّى رَسُوْلُ اللهِ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِىْ كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِىْ أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَىْ فُقَرَائِهِمْ

‘নবী করীম (ﷺ) মু‘আয (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ইয়ামান দেশে প্রেরণ করেন। অতঃপর তিনি বলেন, সেখানকার অধিবাসীদেরকে এ সাক্ষ্য প্রদানের প্রতি আহ্বান জানাবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন হক্ব ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল। যদি তারা তা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর প্রত্যেক দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যদি সেটাও তারা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদে যাকাত ফরয করেছেন। যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে এবং দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা হবে’।[১] রাসূল (ﷺ) আরও বলেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। (১) এ মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন হক্ব উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহ্র রাসূল (২) ছালাত আদায় করা (৩) যাকাত প্রদান করা (৪) হজ্জ সম্পাদন করা এবং (৫) রামাযানের ছিয়াম পালন করা’।[২]

রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর যখন আবূবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) খেলাফত গ্রহণ করলেন, তখন আরবদের কিছু লোক যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানাল। ইসলামের প্রথম খলীফা আবূবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করলেন।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا تُوُفِّىَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ وَكَفَرَ مَنْ كَفَرَ مِنَ الْعَرَبِ فَقَالَ عُمَرُ كَيْفَ تُقَاتِلُ النَّاسَ وَقَدْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُوْلُوْا لَا إِلَهَ إِلَّا اللهِ فَمَنْ قَالَهَا فَقَدْ عَصَمَ مِنِّىْ مَالَهُ وَنَفْسَهُ إِلَّا بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ فَقَالَ وَاللهِ لَأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ الْمَالِ وَاللهِ لَوْ مَنَعُوْنِىْ عَنَاقًا كَانُوْا يُؤَدُّوْنَهَا إِلَىْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَىْ مَنْعِهَا قَالَ عُمَرُ فَوَاللهِ مَا هُوَ إِلَّا أَنْ قَدْ شَرَحَ اللهِ صَدْرَ أَبِىْ بَكْرٍ  فَعَرَفْتُ أَنَّهُ الْحَقُّ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খেলাফতের সময় আরবের কিছু লোক মুরতাদ হয়ে যায়। তখন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আপনি এসব লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন? অথচ রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত  لَا إِلَهَ إِلَّا اللهِ না বলবে। যদি কেউ তা বলে, তাহলে সে তার সম্পদ ও জীবন আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের বিধান লঙ্ঘন করলে তার শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব আল্লাহ্র উপর। তখন আবূবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আল্লাহ্র শপথ! অবশ্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, যারা ছালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে। কেননা যাকাত হল সম্পদের উপর আরোপিত হক্ব। আল্লাহ্র কসম! যদি তারা একটি মেষ শাবক (অথবা পশুর রশি) দিতেও অস্বীকৃতি জানায়, যা আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)-কে তারা দিত, তাহলে যাকাত না দেয়ার কারণে অবশ্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহ্র কসম! আল্লাহ তা‘আলা আবুবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বক্ষকে যুদ্ধের জন্য প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এতে করে আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর সিদ্ধান্তই সঠিক।[৩]

উক্ত আলোচনায় যাকাত প্রদানের আবশ্যকতা ফুটে উঠেছে। যদি কোন ব্যক্তি এমনিতেই যাকাত না দেয় তবে সকল ছাহাবী, সালফে ছালেহীন এবং সকল আলেমের ঐক্যমতে তার সাথে বর্তমানেও যুদ্ধ করা যাবে বা তাকে শাস্তির সম্মুখীন করা যাবে।[৪]

আল্লাহ সম্পদ চান না তাক্বওয়া চান

যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকেরই স্বচ্ছতা নেই। তারা সম্পূর্ণ সম্পদের যাকাত বের করে না। কিছু দিয়ে এর থেকে মুক্ত হতে চান এবং জনগণকে বুঝাতে চান যে তিনি যাকাত দিলেন। বুঝাই যাচ্ছে যে, তার তাযকিইয়ায়ে নাফস বা অন্তরের পরিশুদ্ধি নেই। অথচ একনিষ্ঠতা না থাকলে যাকাত আল্লাহ্র নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।[৫] সম্পদ গোপন করে যাকাত দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কেউ যদি যাকাত না দেয় তবে আল্লাহ্র কোন যাই আসে না। তাছাড়া যাকাত পূর্ণরূপে না প্রদান করলে ব্যক্তির সম্পদ পবিত্র হবে না। কিছু অংশ গোপন করার কারণে তার পূরো সম্পদই অপবিত্র থেকে যাবে। আর এই সম্পদ ভক্ষণ করে তার কোন ইবাদত আল্লাহ্র কাছে কবুল হবে না। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কবুল করেন না’।[৬]

যাকাত আদায় না করার পরিণাম

যাকাত পরিত্যাগকারীর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের শাস্তি বর্ণনা করে বলেন,

وَ الَّذِیۡنَ یَکۡنِزُوۡنَ الذَّہَبَ وَ الۡفِضَّۃَ وَ لَا یُنۡفِقُوۡنَہَا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۙ فَبَشِّرۡہُمۡ  بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ- یَّوۡمَ یُحۡمٰی عَلَیۡہَا فِیۡ نَارِ جَہَنَّمَ فَتُکۡوٰی بِہَا جِبَاہُہُمۡ وَ جُنُوۡبُہُمۡ وَ ظُہُوۡرُہُمۡ ؕ ہٰذَا مَا  کَنَزۡتُمۡ  لِاَنۡفُسِکُمۡ فَذُوۡقُوۡا  مَا کُنۡتُمۡ  تَکۡنِزُوۡنَ

‘যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে না, (হে নবী!) আপনি তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে। (আর বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য কুক্ষিগত করে রেখেছিলে, সুতরাং এখন জমা করে রাখার স্বাদ গ্রহণ কর’ (সূরা আত-তাওবাহ: ৩৪-৩৫)।

যারা সম্পদের পাহাড় জমা করার পরেও সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করেনি উক্ত আয়াতে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তির সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। যাকাত দিতে যারা কৃপণতা করে রাসূল (ﷺ) তাদের ব্যাপারে বলেন, ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, ক্বিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টাকপড়া (বিষের তিব্রতার কারণে) মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’চোয়ালে কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার কুক্ষিগত সম্পদ, আমি তোমর জমাকৃত মাল। অতঃপর রাসূল (ﷺ) নিম্নের আয়াত পাঠ করলেন,

وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

‘আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, এই কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারনা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পণ্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে ক্বিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে’।[৭]

তাছাড়া যাকাত পরিত্যাগকারীর স্থান জাহান্নাম। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদা রাসূল (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হলে আমার হাতে রৌপ্যের বড় বড় আংটি দেখতে পান। তিনি বললেন, হে আয়েশা! এটা কী? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! আপনার উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এটা তৈরি করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলনে, তুমি কি এর যাকাত পরিশোধ করে থাক? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, هُوَ حَسْبُكِ مِنَ النَّارِ ‘তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।[৮] অন্য হাদীছে রাসূল (ﷺ) বলেন, مَانِعُ الزَّكَاةِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ فِي النَّارِ ‘যাকাত ত্যাগকারী ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামে প্রবেশ করবে।[৯]

কোন সম্পদের যাকাত প্রদান না করলে সেই সম্পদই ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ لَا يُؤَدِّى مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحَ مِنْ نَارٍ فَأُحْمِىَ عَلَيْهَا فِىْ نَارِ جَهَنَّمَ فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وَجَبِيْنُهُ وَظَهْرُهُ كُلَّمَا بَرَدَتْ أُعِيْدَتْ لَهُ فِىْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيْلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ

‘প্রত্যেক স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক যে তার হক্ব (যাকাত) আদায় করে না, অবশ্যই ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের বহু পাত তৈরি করা হবে এবং তা জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে। অতঃপর তা দ্বারা পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। যখনই তা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে, তখন পুনরায় তাকে গরম করা হবে। প্রত্যেক দিন তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে, যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান। আর তার শাস্তি এরূপ চলতে থাকবে, যতদিন না বান্দাদের বিচার নিষ্পত্তি হয়। অতঃপর সে তার পথ ধরবে, হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে’।[১০]

দীর্ঘ এ হাদীছের শেষের দিকে বলা হয়েছে- ‘উট, গরু ও ছাগল এর যাকাত না দেয়ার ব্যাপারে ছাহাবীগণ রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান সেই দিনে তার যাকাত না দেয়া উট, গরু ও ছাগল দলবল সহ হাযির হবে। একটি বাচ্চাও বাদ পড়বে না। আর সেগুলো দুনিয়ার চেয়ে হবে অনেক বেশী মোটাতাজা। উটগুলো তাদের পায়ের ক্ষুর দ্বারা মাড়াতে থাকবে এবং মুখ দ্বারা কামড়াতে থাকবে। গরু এবং ছাগলগুলো শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে এবং ক্ষুর দ্বারা মাড়াতে থাকবে’।[১১]

বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান

(১) রামাযান ধরে যাকাত দিবে, না জানুয়ারী?

যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে হিজরী সালের হিসাব করাই শরী‘আতের অনুকূলে। মহান আল্লাহ বলেন,  یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡاَہِلَّۃِ ؕ قُلۡ ہِیَ مَوَاقِیۡتُ لِلنَّاسِ وَ الۡحَجِّ ‘তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে, এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্জের সময় ঠিক করার মাধ্যম’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮৯)। উক্ত আয়াতে কারীমায় মহান আল্লাহ চাঁদকে মাসের শুরু ও শেষ নির্ধারক হিসাবে গণ্য করেছেন। রাসূল (ﷺ) বলেন,

 إِذَا رَأَيْتُمُ الْهِلَالَ فَصُومُوا وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَصُومُوا ثَلَاثِينَ يَوْمًا

‘তোমরা চাঁদ দেখে ছিয়াম শুরু করবে এবং চাঁদ দেখে ছিয়াম বন্ধ করবে। যদি চাঁদ দেখা না যায়, তবে ৩০ দিন ছিয়াম পূর্ণ করবে’।[১২] উক্ত হাদীছে রাসূল (ﷺ) মাসের শুরু ও শেষ চাঁদ দেখার সাথে নির্দিষ্ট করেছেন এবং এর উপর ছিয়ামের বিধান জারী করেছেন। আর এ বিষয়ে ছাহাবায়ে কেরামের ‘ইজমা’ রয়েছে। সঊদী আরবের ফাতাওয়া বোর্ডের স্থায়ী কমিটিও যাকাতের ক্ষেত্রে হিজরী সনকে গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করেছেন। তাছাড়া ইংরেজী বর্ষ অনুযায়ী হিসাব করলে বছরের হিসাব কম হবে। পক্ষান্তরে হিজরী হলে বছর বেশী হবে। তাতে ফক্বীর, মিসকীন ও দরিদ্রদের উপকার হবে।

উল্লেখ্য যে, শস্য-ফসল ও গবাদি পশুর ক্ষেত্রে উক্ত শর্ত নেই। এগুলো যখনই ফলবে এবং সংখ্যা পূরণ হবে, তখনই যাকাত দিবে।

(২) টাকা বা মুদ্রার যাকাত স্বর্ণের হিসাবে হবে, না রূপার হিসাবে হবে?

এযুগের অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, সোনা বা রূপার মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম টাকায় যেটির নিছাব হয়, সেটিই হচ্ছে কাগজী মুদ্রার যাকাতের নিছাব। ‘রাবেত্বাতুল আলাম আল-ইসলামী’-এর প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামী ফিক্বহ একাডেমী’ এবং সঊদী আরবের উচ্চ ওলামা পরিষদ ‘মাজলিজু হাইআতি কিবারিল ওলামা’ উক্ত ফৎওয়া দিয়েছেন। কারণ এভাবে হিসাব করলে গরীব-মিসকীনদের জন্য সুবিধা। আর বর্তমান বাজারে সোনার চেয়ে রূপার মূল্য কম। অতএব রূপার নিছাব অনুযায়ী কাগজী মুদ্রার নিছাবের হিসাব কষতে হবে।[১৩]

উল্লেখ্য যে, কারো কারো মতে, সোনার নিছাব অনুযায়ী কাগজী মুদ্রার যাকাত দিতে হবে। কেননা মূল্যের একক হিসাবে সোনা বেশী শক্তিশালী। তাছাড়া সোনার বাজারই চলমান। যদি রূপার হিসাব করা হয়, তবে অধিকাংশ মানুষের উপর যেমন যাকাত ফরয হবে।[১৪]

(৩) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির যাকাত

জানা আবশ্যক যে, ঋণের সাথে যাকাতের কোন সম্পর্ক নেই। ঋণ বাদ দিয়ে গচ্ছিত সম্পদ যা থাকবে, তারই উপরেই যাকাত দিতে হবে। কারণ রাসূল (ﷺ) যাকাত আদায়কারীকে ঋণের কথা বলতেন না।[১৫] তবে আগে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করতে চাইলে পরিশোধের পর  অবশিষ্ট সম্পদ নিছাব পরিমাণ হলে তার যাকাত আদায় করবে। ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘এটি (রামাযান) যাকাতের মাস। অতএব যদি কারো উপর ঋণ থাকে, তাহলে সে যেন প্রথমে ঋণ পরিশোধ করে। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ নিছাব পবিমাণ হলে সে তার যাকাত আদায় করবে।[১৬] তার উপর যদি নিছাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর অতিবাহিত হয়, তাহলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরয।[১৭]

(৪) ব্যবসায়িক সম্পদ

ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত সম্পদের যাকাতের ব্যাপারে অনেকে উদাসীন। অথচ যে সকল মাল দ্বারা ব্যবসা করা হয়, সে মালের উপর যাকাত ফরয। মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡفِقُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا کَسَبۡتُمۡ وَ مِمَّاۤ اَخۡرَجۡنَا لَکُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ وَلَا تَیَمَّمُوا الۡخَبِیۡثَ مِنۡہُ تُنۡفِقُوۡنَ وَ لَسۡتُمۡ بِاٰخِذِیۡہِ اِلَّاۤ اَنۡ تُغۡمِضُوۡا فِیۡہِ

‘হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি হতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দেই, তার মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর এবং এর নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প কর না; অথচ তোমরা তা গ্রহণ করবে না, তোমাদের চোখ বন্ধ করা ব্যতীত’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৬৭)। উক্ত আয়াতের
 مَا کَسَبۡتُمۡ ‘তোমরা যা উপার্জন কর’ শব্দ দ্বারা ব্যবসায়িক সম্পদকে বুঝানো হয়েছে।[১৮] তাছাড়া এক বছর অতিক্রান্ত হলে যে কোন সম্পদে যাকাত ফরয হবে।[১৯]

(৫) কল-কারখানা, ফ্যাক্টরি ইত্যাদির যাকাত

কারখানার যন্ত্রপাতি, স্থাবর সম্পত্তি ইত্যাদিতে বা সেগুলোর মূল্যে যাকাত ওয়াজিব হবে না। এগুলো বাহনের হুকুম। তবে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য নিছাব পরিমাণ হলে এবং পূর্ণ এক বছর অতিক্রম করলে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হবে।[২০] উল্লেখ্য যে, কল-কারখানা প্রতিষ্ঠার সময় যে অর্থ ব্যয় হয়েছে সেই অর্থ যাকাত প্রদান করা হতে হবে।

(৬) ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে চলমান ঋণের সমাধান

ব্যবসায় লেনদেনের ক্ষেত্রে ঋণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই ব্যবসায়িক ঋণের উপরও যাকাত ফরয। তবে কয়েকটি ধরন রয়েছে। যেমন-

(ক) ব্যক্তির উপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পরে যদি ঋণী হয়, তাহলে পুরো সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে। কিন্তু যাকাত ওয়াজিব হওয়ার আগে থেকেই যদি তার ঘাড়ে ঋণের বোঝা থাকে এবং ঋণের অর্থটা কেটে নিলে মাল নিছাব পরিমাণ না হয়, তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে না। সঊদী আরবের ফাতাওয়া বোর্ডের স্থায়ী কমিটি এই ফৎওয়া দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘ওলামায়ে কেরামের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী ঋণ যাকাত বন্ধ করতে পারবে না। রাসূল (ﷺ) যাকাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যাকাত আদায় করতে পাঠাতেন; কিন্তু তিনি বলতেন না যে, কে ঋণগ্রস্ত আর কে ঋণগ্রস্ত নয় সে বিষয়টি তোমরা খেয়াল করবে’।

(খ) কাউকে ঋণ প্রদানের পর যদি প্রদানকৃত ঋণের টাকা সহজে পাওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা থাকে, তবে তার যাকাত আদায় করতে হবে। আর সম্ভাবনা না থাকলে হাতে না পাওয়া পর্যন্ত যাকাত আদায় করতে হবে না। এমন সম্পদ অনেক বছর পরে হাতে আসলেও মাত্র এক বছরের যাকাত আদায় করতে হবে।[২১]  

(গ) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যাকাত আদায়ের পূর্বে তার ঋণ পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট সম্পদ নিছাব পরিমাণ হলে তার যাকাত আদায় করবে। ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘এটি (রামাযান) যাকাতের মাস। অতএব যদি কারো উপর ঋণ থাকে, তাহলে সে যেন প্রথমে ঋণ পরিশোধ করে। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ নিছাব পবিমাণ হলে সে তার যাকাত আদায় করবে।[২২] তার উপর নিছাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর অতিবাহিত হলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরয।[২৩]

(৭) বিক্রির জন্য প্রস্তুতকৃত পণ্যের যাকাত

অনেক সময় দেখা যায় উৎপাদিত পণ্যের পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও তা বিক্রি হয় না। ব্যবসায় নিয়োজিত পণ্য (عروض التجارة) হিসাবে এগুলোর যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ নিছাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর অতিক্রম করলে বাজার দর হিসাব করে ঐসব পণ্যের যাকাত বের করতে হবে।[২৪]

(৮) অরূপান্তরিত যাকাত

কারখানায় পণ্য তৈরির জন্য লোহা, তুলা, সুতা বা পশমসহ যে সমস্ত মালিকের কাছে ‍অরূপান্তরিত অবস্থায় থেকে যায়, সেগুলো যদি এক বছর পূর্ণ হয়, তাহলে নিছাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর অতিক্রম করলে বাজার দর হিসাব করে এসব পণ্যের যাকাত বের করতে হবে। কেননা সেগুলো ব্যবসায় নিয়োজিত পণ্য (عروض التجارة) হিসাবে গণ্য। সুতরাং ব্যবসায় নিয়োজিত পণ্যের যাকাতের দলীল এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং এর উপর ভিত্তি করে এর যাকাত ওয়াজিব হবে।[২৫] 

(৯) ‘শেয়ার’-এর যাকাত

শেয়ার কোম্পানিতে অংশগ্রহণকারী শেয়ার হোল্ডারদের সুনির্ধারিত অংশই হচ্ছে শেয়ার। শেয়ার সাধারণতঃ কোম্পানির মূলধনের একেকটি অংশ বিশেষ। এর বৈশিষ্ট্য হস্তান্তরযোগ্য। এতে শেয়ার হোল্ডারের বিশেষ অধিকার সংরক্ষিত থাকে। তাই শেয়ারহোল্ডারদের উপর তাদের শেয়ারের যাকাত দেয়া ওয়াজিব। তবে এর ধরন নিম্নরূপ-

(ক) শেয়ার কোম্পানি এই যাকাত বের করবে- যদি কোম্পানির নিয়মে সেরকম কোন বিধি থাকে কিংবা রাষ্ট্রনীতি কোম্পানিকে যাকাত বের করতে বাধ্য করে অথবা শেয়ারহোল্ডার কর্তৃক দায়িত্ব অর্পিত হয়।

(খ) কোম্পানি যদি কোন কারণে যাকাত না দেয়, তাহলে শেয়ার হোল্ডারদেরকে অবশ্যই নিজ নিজ যাকাত আদায় করতে হবে। কোম্পানি যাকাত আদায় করলে একজন শেয়ারহোল্ডারের উপর কতটুকু যাকাত ওয়াজিব ছিল, তা যদি শেয়ারহোল্ডার জানতে পারে, তাহলে তদনুযায়ী যাকাত দিবে।

(গ) বছরের মাঝখানে যদি শেয়ারহোল্ডার তার শেয়ার বিক্রি করে দেয়, তাহলে এই মূল্য তার অন্য মালের সাথে যুক্ত করে বছর পূর্ণ হলে তার যাকাত আদায় করবে। আর শেয়ার ক্রেতা পূর্বোল্লেখিত নিয়মানুযায়ী তার ক্রয়কৃত শেয়ারের যাকাত প্রদান করবে।

(১০) ব্যবহার্য স্বর্ণালংকারের যাকাত

কেউ কেউ দাবী করেন ব্যবহার্য স্বর্ণ বা রূপার যাকাত দিতে হবে না। যেমন ব্যবহার্য দামী আসবাবপত্রের যাকাত নেই। উক্ত দাবী সঠিক নয়। কারণ অলঙ্কারে যাকাত দেয়ার পক্ষে অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[২৬] পক্ষান্তরে অলঙ্কারের যাকাত নেই মর্মে জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত মাওকূফ হাদীছটি ভিত্তিহীন (باطل لا أصل له) ।[২৭]

(১১) অবসর এককালীন ভাতার যাকাত

চাকুরী শেষে এককালীন যে অর্থ পাওয়া যায় সেটা এককালীন ভাতা বা পেনসন। এটা বিলম্বে পরিশোধযোগ্য বেতন। পেনসনের পূর্ণ মালিকানা সাব্যস্ত না হওয়ায় উক্ত অর্থের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে যখন পেনসনের টাকা প্রদানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, তখন তার অন্যান্য যাকাতি মালের সাথে যোগ করে সবগুলোর হিসাব করে যাকাত দিবে।[২৮]

(১২) বায়তুল মালের যাকাত

বায়তুল মালের নির্দিষ্ট কোন মালিক না থাকায় এবং জনকল্যাণে তা ব্যয়িত হওয়ায় তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না। তাছাড়া এই প্রকার মালের পূর্ণ মালিকানা না থাকার বিষয়টিতো রয়েছেই। গনীমতের মাল বণ্টনের পূর্বে তা যেহেতু সর্বসাধারণের মাল থাকে, সেহেতু তাতে যাকাত ওয়াজিব হয় না।[২৯] অতএব সর্বসাধারণের মাল বা বায়তুল মালের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না।

(১৩) দরিদ্র ভাই, বোন, চাচা অথবা ফুফুকে যাকাত প্রদান

উক্ত দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনকে যাকাতের অর্থ প্রদানে কোন আপত্তি নেই। বরং তারাই অধিক হক্বদার। তাদেরকে যাকাত দিলে ছাদাক্বাহ নেকী পাওয়া যাবে এবং আত্মীয়তার হক্ব আদায়েরও নেকী পাওয়া যাবে। অর্থাৎ দ্বিগুণ নেকী হবে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِيْنِ صَدَقَةٌ وَعَلَى ذِي الْقَرَابَةِ اثْنَتَانِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ ‘অনাত্মীয় গরীব-মিসকীনকে যাকাত দান করলে তা যাকাতই (যাকাতের ছওয়াব পাওয়া যায়) গণ্য হয়। আর আত্মীয়-স্বজনকে যাকাত দিলে দ্বিগুণ (যাকাতের ছওয়াব এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ছওয়াব) হয়’।[৩০] বরং এক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় ফক্বীর-মিসকীনরা অগ্রাধিকার পাবে, কেননা এদের দেয়া হলে দ্বিগুণ নেকী অর্জিত হয়।

উল্লেখ্য যে, পিতা-মাতা এবং সন্তান-সন্ততিকে যাকাত দেয়া যাবে না। কারণ এরা আমাদের দায়িত্বাধীন। সুতরাং এদের দেখাশোনা করা, ভরণপোষণ করা এবং এদের পিছনে অর্থ ব্যয় করা আমাদের উপর অপরিহার্য। তাঁদের বংশীয় স্তর যত ঊর্ধ্বে হোক না কেন যেমন দাদা, পরদাদা এবং ছেলে ও মেয়েদের বংশীয় স্তর যত নিম্নে হোক না কেন যেমন পৌত্র, প্রপৌত্র ইত্যাদি। এরা গরীব হলেও এদেরকে যাকাতের মাল দেয়া যাবে না। বরং সামর্থ্য থাকলে তাদের খরচ চালানো আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। বিশেষ করে যদি তাদের খরচ চালানোর মত অন্য কেউ না থাকে।[৩১]

(১৪) দাওয়াতী প্রতিষ্ঠানে যাকাতের অর্থ প্রদান করা

পবিত্র কুরআনের বর্ণিত ৮টি খাতের মধ্যে একটি ‘ফী সাবীলিল্লাহ’। অধিকাংশ বিদ্বান এর দ্বারা শুধু আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদই উদ্দেশ্য করেছেন। তবে অনেকে বলেছেন, যে কোন কল্যাণ ও ভাল কাজও এর অন্তর্ভুক্ত। সশস্ত্র জিহাদ এবং আল্লাহ্র রাস্তায় দাওয়াত উভয়ই এর আওতায় পড়বে। ‘রাবেত্বাতুল আলাম আল-ইসলামী’-এর প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামী ফিক্বহ একাডেমী’ ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর ব্যাখ্যা নিয়ে নিম্নোক্ত আলোচনা করেছেন-

(ক) ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ ব্যাপক অর্থবোধক। মহান আল্লাহ বলেন,

اَلَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَہُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ثُمَّ لَا یُتۡبِعُوۡنَ مَاۤ  اَنۡفَقُوۡا مَنًّا وَّ لَاۤ  اَذًی ۙ لَّہُمۡ اَجۡرُہُمۡ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ ۚ وَ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ  وَ لَا ہُمۡ  یَحۡزَنُوۡنَ

‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, অতঃপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্য তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৬২)। আবূ দাঊদে এসেছে, ‘এক ব্যক্তি একটি উটকে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ বা আল্লাহ্‌র রাস্তায় উৎসর্গ করলে তার স্ত্রী হজ্জ করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) তাকে বললেন, ‘ঐ উটের পিঠেই আরোহণ করো। কেননা হজ্জ ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর অন্তর্ভুক্ত’।[৩২]

(খ) সশস্ত্র যুদ্ধের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, আল্লাহ্র কালেমাকে বুলন্দ করা। আর যুদ্ধের মাধ্যমে যেমন আল্লাহ্র কালেমাকে বুলন্দ করা যায়, তেমনি দাঈ প্রস্তুত করে তাদের মাধ্যমে দাওয়াতী কাজ করলেও আল্লাহ্র কালেমাকে বুলন্দ করা যায়। সুতরাং উভয়ই জিহাদ হিসাবে গণ্য হবে। রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো তোমাদের মাল দ্বারা, জীবন দ্বারা এবং যবান দ্বারা’।[৩৩]

(গ) ইহুদী-খ্রিষ্টানসহ ইসলামের সব শত্রু কর্তৃক ইসলাম আজ আক্বীদাগত ও স্নায়ুযুদ্ধের সম্মুখীন। ইসলামের এসব শত্রুদেরকে আর্থিক ও মানসিকভাবে সাহায্য প্রদানে অসংখ্য লোক রয়েছে। ফলে মুসলিমদেরকেও ঐ একই জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করে ইসলামের শত্রুদের মোক্বাবেলা করতে হবে। বর্তমানে একনিষ্ঠভাবে দাওয়াতী কাজের মাধ্যমেই তা সম্ভব।

(১৫) হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা

যাকাতের টাকা দিয়ে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা, হাসপাতালের ডেকোরেশন করা, যন্ত্রপাতি ক্রয় করা যাবে না। কারণ এগুলো যাকাতের খাতের মধ্যে পড়ে না।[৩৪] সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘এ ধরনের ফান্ডে যাকাতের অর্থ প্রদান করাটা আমরা জায়েয মনে করি না। এ ফান্ডের সুবিধাভোগীরা কুরআনুল কারীম নির্ধারিত যাকাতের খাতগুলোর অন্তর্ভুক্ত হবে কি-না সে নিশ্চয়তা ও আস্থা না থাকার কারণে’।[৩৫] কারণ যাকাত একটি ইবাদত এবং ইসলামের রুকনসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম রুকন। এটা শারী‘আত নির্ধারিত খাতেই বণ্টন করতে হবে।  আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘ছাদাক্বাসমূহ (যাকাত) তো শুধু ফক্বীর, মিসকীন, নিঃস্ব, অভাবগ্রস্তদের জন্য এবং ছাদাক্বাহ (আদায়ের) কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য এবং যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য এবং দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (সংগ্রামকারী) এবং (বিপদগ্রস্ত) মুসাফিরের জন্য। এ হল আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত (বিধান)। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আত-তাওবাহ: ৬০)।

(১৬) যাকাতের অর্থ থেকে সরকারী ভ্যাট বা কর প্রদান

যাকাতের টাকা থেকে সরকারী কর, শুল্ক বা রাজস্ব প্রদান করা যাবে না। কারণ এগুলো যাকাতের খাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। যাকাত ইসলামের রুকনসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম রুকন। যে খাতে এটা বণ্টন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সে খাতেই দিতে হবে (সূরা আত-তওবা: ৬০)। আর ট্যাক্স হল একটি আর্থিক জরিমানা, যা কখনোই যাকাতের খাত হিসাবে বিবেচিত হয় না।[৩৬]

(১৭) যে জমির খাযনা প্রদান করা হয়, সেই জমির ফসলের ওশর দেয়া লাগবে না

উক্ত দাবী সঠিক নয়। সরকারকে প্রদত্ত জমির খাযনার সাথে ওশরের সম্পর্ক নেই। খাযনার অজুহাত দিয়ে ফসলের ওশর দেয়া বন্ধ করা যাবে না। খাযনা হচ্ছে ভূমিকর, যার সাথে ফসলের কোন সম্পর্ক নেই। ফসল না হলেও প্রতিবছর খাযনা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু ফসল না হলে ওশর দেয়া লাগে না। ‘ওশর’ হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফসলের কর, যা ফসল হওয়া এবং নিছাব পূর্ণ হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত (সূরা আল-আন‘আম: ১৪১)। তাছাড়া খাযনার পরিমাণের সাথে ওশরের পরিমাণেরও কোন মিল নেই।[৩৭] উল্লেখ্য যে, ভূমিকর (খারাজ) ও ওশর একত্রিত হয় না মর্মে হেদায়া গ্রন্থে বর্ণিত হাদীছটি জাল।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে, যাদের নিছাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর পূর্ণ মালিকানায় থাকবে তাদেরকে যেন আল্লাহ তা‘আলা সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করার তাওফীক্ব দান করেন-আমীন!!

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৯৫ ‘যাকাত’ অধ্যায়-২৪ ‘যাকাত ওয়াজিব হওয়া’ অনুচ্ছেদ-১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯; মিশকাত, হা/১৭৭২।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬; তিরমিযী, হা/২৬০৯; নাসাঈ, হা/৫০০১; মিশকাত, হা/৪ ।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৯৯, ১৪০০, ৭২৮৪।
[৪]. ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪২৭।
[৫]. নাসাঈ, হা/৩১৪০, সনদ ছহীহ।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫; মিশকাত, হা/২৭৬০।
[৭]. সূরা আলে ইমরান: ১৮০; ছহীহ বুখারী, হা/১৪০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩।
[৮]. আবূ দাঊদ, হা/১৫৬৫, সনদ ছহীহ।
[৯]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুছ ছাগীর, হা/৯৩৫; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৭৬২, সনদ ছহীহ।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/৯৮৭; মিশকাত, হা/১৭৭৩।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/৯৮৭; মিশকাত, হা/১৭৭৩।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯০৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৮০।
[১৩]. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ৯ম খণ্ড, পৃ. ২৫৪, ফৎওয়া নং-১৮৮১।
[১৪]. ইউসুফ কারযাভী, ফিক্বহুয যাকাত (বৈরূত : মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ২য় সংস্করণ, ১৩৯৩ হি./১৯৭৩ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬৩-২৬৪।
[১৫]. আবূ দাঊদ, হা/১৫৮৩, সনদ হাসান; ছহীহ বুখারী, হা/১৩৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৩১৬।
[১৬]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৮৭৩; ইরওয়াউল গালীল, হা/৭৮৯, সনদ ছহীহ।
[১৭]. ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমা, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৮৭-৮৮, ফৎওয়া নং-২৩৯০; ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, প্রশ্ন নং-৩৫৯।
[১৮]. আব্দুর রহমান ইবনু নাছির ইবনু আব্দুল্লাহ আস-সা‘দী, তায়সীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান (বৈরূত : মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪২০ হি./২০০০ খ্রি.), পৃ. ১১৫।
[১৯]. আবূ দাঊদ, হা/১৫৭৩।  
[২০]. আবূ দাঊদ, হা/১৫৭৩; তিরমিযী, হা/৬৩১; মিশকাত, হা/১৭৮৭, সনদ ছহীহ।  
[২১]. ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৪০-৩৪১; ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, প্রশ্ন নং-৩৫৭।   
[২২]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৮৭৩; ইরওয়াউল গালীল, হা/৭৮৯, সনদ ছহীহ।    
[২৩]. ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমা, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৮৭-৮৮, ফৎওয়া নং-২৩৯০; ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, প্রশ্ন নং-৩৫৯।     
[২৪]. আবুদাঊদ হা/১৫৭৩; তিরমিযী হা/৬৩১; মিশকাত হা/১৭৮৭, সনদ ছহীহ।      
[২৫]. বাক্বারাহ ২৬৭; আবুদাঊদ হা/১৫৭৩; তিরমিযী হা/৬৩১; মিশকাত হা/১৭৮৭, সনদ ছহীহ।      
[২৬]. আবূ দাঊদ, হা/১৫৬৩; নাসাঈ, হা/২৪৭৯; মিশকাত, হা/১৮০৮-১০।  
[২৭]. ইরওয়াউল গালীল, হা/৮১৭; যঈফুল জামে‘, হা/৪৯০৬।   
[২৮]. আবূ দাঊদ, হা/১৫৭৩; তিরমিযী, হা/৬৩১; মিশকাত, হা/১৭৮৭, সনদ ছহীহ।      
[২৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৩১; মিশকাত, হা/৩৯২৯; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা, হা/১৮৪০৭।       
[৩০]. তিরমিযী, হা/৬৫৮; ইবনু মাজাহ, হা/১৮৪৪।        
[৩১]. ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ১০/৫৭-৫৯; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৪/৩০১; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ১৮/৪২২-৪২৩ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২১৮১০।        
[৩২]. আবূ দাঊদ, হা/১৯৮৮, সনদ ছহীহ।
[৩৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৪৩৭; নাসাঈ, হা/২৫২৬; মিশকাত, হা/৩৮৩৩, সনদ ছহীহ।
[৩৪]. ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৩১৬-৩১৭, ৮ম খণ্ড, পৃ. ২৮৫ ও ৪২৩; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৪শ খণ্ড, পৃ. ২৬০-২৬১; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ১৮শ খণ্ড, পৃ. ৪৮৪-৪৮৬ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৫২৮১০।
[৩৫]. ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৯শ খণ্ড, পৃ. ৪৩৭-৪৩৮। 
[৩৬]. ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ৮/৩১৬-৩১৭, ৯/২৮৫ ও ৪২৩; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৪/২৬০-২৬১; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল ইবনে উছাইমীন, ১৮/৪৮৪-৪৮৬ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৫২৮১০।    
[৩৭]. ফাতাওয়া সাত্তারিয়া, পৃ. ২০০।




প্রসঙ্গসমূহ »: যাকাত ও ছাদাক্বা
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩টি উপায় (শেষ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন : সংশয় নিরসন (৪র্থ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
বিদ‘আত পরিচিতি (১৫তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৩য় কিস্তি) - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
সচ্চরিত্রই মানব উন্নতির চাবিকাঠি - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
তারুণ্যের উপর সন্ত্রাসবাদের হিংস্র ছোবল : প্রতিকারের উপায় (শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ঈদুল ফিতরে করণীয় ও বর্জনীয় - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
কুরবানীর মাসায়েল - ইবাদুল্লাহ বিন আব্বাস
মাযহাবী গোঁড়ামি ও তার কুপ্রভাব (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : রিদওয়ান ওবাইদ
কুরবানীর মাসায়েল - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ