বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন

আল-কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত 

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম* 


(৫ম কিস্তি)  

আল-কুরআনের হাফেযকে জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রদান করা হবে  

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اِقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (ﷺ) কুরআন মুখস্থকারী সম্পর্কে বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআনের মুখস্থকারীকে বলা হবে তুমি পড় এবং উপরে আরোহণ কর। সুন্দর করে পাঠ কর যেমন সুন্দরভাবে দুনিয়ায় পাঠ করতে। তুমি পাঠ করতে করতে যেখানে গিয়ে শেষ করবে সে পর্যন্ত তোমার মর্যাদা উঁচু হবে’।[১] জ্ঞাতব্য : এখানে ছহিবুল কুরআন বলতে হাফিয এবং যারা কুরআন পড়ে ও তদানুযায়ী আমল করে, তারাও উদ্দেশ্য।[২]

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ إِذَا دَخَلَ الْجَنَّةَ اِقْرَأْ وَاصْعَدْ فَيَقْرَأُ وَيَصْعَدُ بِكُلِّ آيَةٍ دَرَجَةً حَتَّى يَقْرَأَ آخِرَ شَيْءٍ مَعَهُ.

আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআন মুখস্থকারীকে যখন জান্নাতে প্রবেশকালে বলা হবে, তুমি পড় এবং উপরে আরোহণ কর। অতঃপর সে পড়তে থাকবে ও প্রতিটি আয়াত পড়ার সাথে সাথে একটি করে স্তর অতিক্রম করবে। এভাবে তার মুখস্থ শেষ আয়াতটি পর্যন্ত সে পড়বে’।[৩] নবী করীম (ﷺ) আরো বলেছেন,يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اقْرَهْ وَارْقَهْ فَإِنَّ مَنْزِلَتَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا ‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআনের মুখস্থকারীকে বলা হবে তুমি পড় এবং উপরে আরোহণ কর। কেননা তুমি পাঠ করতে করতে যেখানে গিয়ে শেষ করবে সে পর্যন্ত তোমার মর্যাদা উঁচু হবে’।[৪]

রামাযান মাসে কুরআন তেলাওয়াত করার ফযীলত

রামযান মাস নেকি অর্জনের মাস। এ মাসের ফযীলত অত্যধিক। রামাযানের আগমনে রহমতের দরজা, আসমানের দরজা এবং জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়।[৫] বান্দাকে তার পূর্বের সমস্ত (ছগীরা) গোনাহ থেকে ক্ষমা করা হয়[৬], অসংখ্য জাহান্নামীকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হয়[৭] এবং দু‘আকারীর দু‘আ কবুল করা হয়।[৮]

অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসের ইবাদত আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় এবং মর্যাদাকর। এ মাসে বান্দার প্রত্যেক সৎকর্ম কয়েকগুণে বর্ধিত হয়। একটি নেকি দশগুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়, কিন্তু ছিয়ামপালনকারীর নেকি ব্যতীত। কেননা তার নেকি আল্লাহ নিজে প্রদান করবেন, যত খুশি তত।[৯] তাছাড়া রামাযানের প্রত্যেকটি আমলের নেকি দশগুণ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা (হাদীছে কুদসীতে) বলেছেন,وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا ‘আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ’।[১০]

এ মাস এত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ার কারণ হল আল-কুরআন রামাযানেই নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ.

‘রামাযান মাস। যে মাসে নাযিল হয়েছে কুরআন, মানবজাতির জন্য হেদায়াত ও হেদায়াতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা হিসাবে এবং হক্ব ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত : ১৮৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اِنَّاۤ  اَنۡزَلۡنٰہُ  فِیۡ  لَیۡلَۃِ  الۡقَدۡرِ.  وَ مَاۤ  اَدۡرٰىکَ مَا لَیۡلَۃُ  الۡقَدۡرِ .  لَیۡلَۃُ  الۡقَدۡرِ ۬ۙ خَیۡرٌ  مِّنۡ  اَلۡفِ شَہۡرٍ . تَنَزَّلُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ الرُّوۡحُ  فِیۡہَا بِاِذۡنِ رَبِّہِمۡ  مِنۡ  کُلِّ  اَمۡرٍ.  سَلٰمٌۛ ہِیَ حَتّٰی مَطۡلَعِ  الۡفَجۡرِ .

‘নিশ্চয় আমরা কুরআন অবতীর্ণ করেছি এক মহিমান্বিত রজনীতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রজনী কী? মহিমান্বিত রজনী হল- হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরীল) অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। (এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি, রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত’ (সূরা আল-ক্বদর, আয়াত : ১-৫)।  

রামাযানের শেষ দশক তথা লাইলাতুল ক্বদর হল হাযার মাসের চেয়েও উত্তম। অনেকে হাযার মাসের ব্যাখ্যা ৮৩ বছর ৪ মাস করেছেন। আর এক হাজার মাস সমান ৩০ হাজার রাত্রি । সুতরাং বলা যায় যে, এ রাতের ১টি হরফ তেলাওয়াত (রামাযানের বাহিরে) অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ হরফ তেলাওয়াত অপেক্ষা উত্তম। এ রাতের ১টি আয়াত তেলাওয়াত অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ আয়াত তেলাওয়াত অপেক্ষা উত্তম। এ রাতের ১টি সূরা পাঠ অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ সূরা পাঠ অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!

এ কারণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বেশি বেশি আসতেন এবং বেশি বেশি কুরআন শুনতেন ও শুনাতেন। তাই রামাযান মাসে কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত অনেক অনেক বেশী।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ النَّبِىُّ ﷺ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ  وَأَجْوَدُ مَا يَكُوْنُ فِىْ شَهْرِ رَمَضَانَ لِأَنَّ جِبْرِيْلَ كَانَ يَلْقَاهُ فِىْ كُلِّ لَيْلَةٍ فِىْ شَهْرِ رَمَضَانَ حَتَّى يَنْسَلِخَ يَعْرِضُ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الْقُرْآنَ فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيْلُ كَانَ أَجْوَدَ بِالْخَيْرِ مِنَ الرِّيْحِ الْمُرْسَلَةِ.

ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মানুষের মধ্যে অধিক দানশীল ছিলেন। যখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম)রামাযান মাসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরও বেশি দান করতেন। কারণ রামাযানের প্রতি রাতে তিনি জিবরীল (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট কুরআন তেলাওয়াত করতেন এবং প্রবাহিত বাতাসের ন্যায় অধিকহারে দান করতেন।[১১] 

আল-কুরআনের র্হাফ (প্রত্যেকটি অক্ষর) তেলাওয়াত করার ফযীলত

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةً وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لَا أَقُوْلُ اَلَمّ حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيْمٌ حَرْفٌ.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের একটি হরফ পাঠ করবে তার জন্য এর ছওয়াব আছে। আর ছওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসাবে। আমি বলি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি হরফ, বরং ‘আলিফ’ একটি হরফ, ‘লাম’ একটি হরফ এবং ‘মীম’ একটি হরফ।[১২]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اقْرَؤُوْا الْقُرْآنَ فَإِنَّكُمْ تُؤْجَرُوْنَ عَلَيْهِ وَكُلُّ حَرْفٍ عَشْرُ حَسَنَاتٍ أَمَا إِنِّيْ لَا أَقُوْلُ الم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ عَشْرٌ وَلَامٌ عَشْرٌ وَمِيْمٌ عَشْرٌ فَتِلْكَ ثَلَاثُوْنَ.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমরা কুরআন পাঠ কর। নিশ্চয় তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে এবং প্রত্যেক হরফের বিনিময়ে দশ নেকী আছে। তবে আমি বলি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি হরফ, বরং আলিফের জন্য দশটি, লামের জন্য দশটি এবং মীমের জন্য দশটি। সুতরাং সর্বমোট ত্রিশটি (নেকী)।[১৩]

আল-কুরআনে অক্ষরের সংখ্যা মতান্তরে ৩,২১,১৮০ অথবা ৩,২৩,০১৫ অথবা ৩,০০৭৪০টি।[১৪] তাহলে একবার খতম করলে তিন মিলিয়নের (৩০ লাখ) অধিক নেকি রয়েছে। আর যারা কষ্ট করে তেলাওয়াত করবে, তাদের জন্য ডাবল নেকি অর্থাৎ ৬ মিলিয়নের (৬০ লাখ) অধিক নেকি রয়েছে (সুবহা-নাল্লাহ)। সুতরাং কেউ যদি শুধু بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ  পড়ে, তবে এর বিনিময়ে ১৯০ নেকি হবে। আর যারা কষ্ট করে পড়বে, তাদের জন্য ৩৮০ নেকি হবে। আল্লাহ অধিক অবগত।

আল-কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করার ফযীলত

আল-কুরআনের প্রত্যেকটি আয়াতই মর্যাদাসম্পূর্ণ। যা তেলাওয়াত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং অসংখ্য নেকি অর্জিত হয়। প্রত্যেক আয়াত তেলাওয়াতের যেমন মর্যাদা ও নেকি রয়েছে। অনুরূপ বিশেষ বিশেষ আয়াতেরও রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। রাতে ও দিনে আল-কুরআন থেকে যা সহজ হয় তা তেলাওয়াত করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

عَلِمَ  اَنۡ  لَّنۡ تُحۡصُوۡہُ فَتَابَ عَلَیۡکُمۡ  فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ.

‘তিনি জানেন যে, তোমরা তা করতে সক্ষম হবে না। তাই তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরবশ হয়েছেন। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়’ (সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত : ২০)।

একটি আয়াত তেলাওয়াত করার ফযীলত

আল-কুরআনে ৬২৩৬টি আয়াত রয়েছে। তবে কুরআন বিশেষজ্ঞদের মাঝে আয়াত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।[১৫] কেউ যদি আল-কুরআনের একটি আয়াত শিক্ষা নেয় বা শিক্ষা দেয়, তাহলে তা একটি উটনি অপেক্ষা উত্তম হবে (সুবহা-নাল্লাহ)।[১৬]

ওক্ববা ইবনু আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বের হয়ে আসলেন আর আমরা মসজিদের একটি স্থানে উপবিষ্ট ছিলাম। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে চায় যে, প্রত্যহ সকালে বুত্বহান অথবা ‘আক্বীক্ব নামক বাজারে যাবে আর বড় কুঁজের অধিকারী দু’টি উটনী নিয়ে আসবে, কোন অপরাধ না করে ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা প্রত্যেকেই তো এমন সুযোগ গ্রহণ করতে চাই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,

أَفَلَا يَغْدُوْ أَحَدُكُمْ إِلٰى الْمَسْجِدِ فَيُعَلِّمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللهِ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ نَاقَةٍ أَوْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْإِبِلِ.

‘তবে কেন তোমাদের কোন ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাবের দু’টি আয়াত শিক্ষা দেয় না বা শিক্ষা গ্রহণ করে না? অথচ একাজ তার জন্য একটি অথবা দু’টি উটনী অপেক্ষা উত্তম! তিন আয়াত তিনটি উটনী অপেক্ষা উত্তম এবং চার আয়াত চারটি উটনী অপেক্ষা উত্তম। আর যত আয়াত পড়বে বা পড়াবে তত উটনী অপেক্ষা উত্তম হবে’।[১৭]

ফুযালা ইবনু উবাইদ ও তামীম আদ্দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন,

اقْرَأْ وَارْقَ لِكُلِّ آيَةٍ دَرَجَةً حَتَّى يَنْتَهِيَ إِلَى آخِرِ آيَةٍ مَعَهُ يَقُوْلُ رَبُّكَ عَزَّ وَجَلَّ لِلْعَبْدِ اقْبِضْ فَيَقُوْلُ الْعَبْدُ بِيَدِهِ يَا رَبُّ أَنْتَ أَعْلَمُ فَيَقُوْلُ بِهَذِهِ الْخُلْدَ وَبِهَذِهِ النَّعِيْمَ.

‘একটি করে আয়াত পড় এবং একটি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠ। এভাবে তার সাথে যত আয়াত আছে তার শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। মহামহিম আল্লাহ বান্দাকে বলবেন, আঁকড়ে ধর। তখন বান্দা বলবে, হাত দিয়ে হে আমার পালনকর্তা! আপনি অধিক জ্ঞান রাখেন। তিনি বলবেন, এই (ডান) হাত দিয়ে চিরস্থায়ীভাবে আঁকড়ে ধর এবং এই (বাম) হাত দিয়ে চিরকালীন সুখ চেপে ধর’।[১৮]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اِقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (ﷺ) কুরআন মুখস্থকারী সম্পর্কে বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআনের মুখস্থকারীকে বলা হবে তুমি পড় এবং উপরে আরোহণ কর। সুন্দর করে পাঠ কর যেমন সুন্দরভাবে দুনিয়ায় পাঠ করতে। তুমি পাঠ করতে করতে যেখানে গিয়ে শেষ করবে সে পর্যন্ত তোমার মর্যাদা উঁচু হবে’।[১৯]

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ إِذَا دَخَلَ الْجَنَّةَ اِقْرَأْ وَاصْعَدْ فَيَقْرَأُ وَيَصْعَدُ بِكُلِّ آيَةٍ دَرَجَةً حَتَّى يَقْرَأَ آخِرَ شَيْءٍ مَعَهُ.

আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআন মুখস্থকারীকে যখন জান্নাতে প্রবেশকালে বলা হবে, তুমি পড় এবং উপরে আরোহণ কর। অতঃপর সে পড়তে থাকবে ও প্রতিটি আয়াত পড়ার সাথে সাথে একটি করে স্তর অতিক্রম করবে। এভাবে তার মুখস্থ শেষ আয়াতটি পর্যন্ত সে পড়বে’।[২০] নবী করীম (ﷺ) আরো বলেছেন,يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اقْرَهْ وَارْقَهْ فَإِنَّ مَنْزِلَتَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا ‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআনের মুখস্থকারীকে বলা হবে তুমি পড় এবং উপরে আরোহণ কর। কেননা তুমি পাঠ করতে করতে যেখানে গিয়ে শেষ করবে সে পর্যন্ত তোমার মর্যাদা উঁচু হবে’।[২১]

তিনটি আয়াত তেলাওয়াত করার ফযীলত

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ إِذَا رَجَعَ إِلٰى أَهْلِهِ أَنْ يَّجِدَ فِيْهِ ثَلَاثَ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ قُلْنَا نَعَمْ. قَالَ فَثَلَاثُ آيَاتٍ يَقْرَأُ بِهِنَّ أَحَدُكُمْ فِيْ صَلَاتِهِ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ ثَلَاثِ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ.

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদের কেউ কি এটা ভালোবাসবে যে, সে যখন বাড়ী ফিরে আসবে, তখন সে তিনটি হৃষ্টপুষ্ট বড় কুঁজ বিশিষ্ট গর্ভধারিণী উটনী পাবে? আমরা বললাম, নিশ্চয়। তিনি বললেন, মনে রেখো, তিনটি আয়াত যা তোমাদের কেউ তার ছালাতে পড়ে, তা তার জন্য তিনটি হৃষ্টপুষ্ট বড় কুঁজ বিশিষ্ট গর্ভধারিণী উটনী অপেক্ষা উত্তম।[২২]

দশটি আয়াত তেলাওয়াত করার ফযীলত  

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَامَ بِعَشْرِ آيَاتٍ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِيْنَ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাত্রিতে ছালাতে দাঁড়িয়ে দশটি আয়াত পাঠ করবে, তাকে গাফেলদের মধ্যে গণ্য করা হবে না’।[২৩]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَرَأَ عَشْرَ آيَاتٍ فِيْ لَيْلَةٍ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ.

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে দশটি আয়াত তেলাওয়াত করবে, তাকে গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না’।[২৪]

عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ وَتَمِيمٍ الدَّارِيِّ عَنِ النَّبِيِّ  ﷺ قَالَ مَنْ قَرَأَ عَشْرَ آيَاتٍ فِيْ لَيْلَةٍ كُتِبَ لَهُ قِنْطَارٌ وَالْقِنْطَارُ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا فَإِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ يَقُولُ رَبُّكَ عَزَّ وَجَلَّ اقْرَأْ وَارْقَ لِكُلِّ آيَةٍ دَرَجَةً حَتَّى يَنْتَهِيَ إِلَى آخِرِ آيَةٍ مَعَهُ يَقُولُ رَبُّكَ عَزَّ وَجَلَّ لِلْعَبْدِ اقْبِضْ فَيَقُوْلُ الْعَبْدُ بِيَدِهِ يَا رَبُّ أَنْتَ أَعْلَمُ فَيَقُوْلُ بِهَذِهِ الْخُلْدَ وَبِهَذِهِ النَّعِيمَ.

ফুযালা ইবনু উবাইদ ও তামীম দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে দশটি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য ‘কিনতার’ পরিমাণ ছওয়াব লিখা হবে। আর কিনতার হচ্ছে দুনিয়া এবং তার মধ্যস্থিত সকল বস্তু হতে উত্তম। ক্বিয়ামত দিবসে সুমহান আল্লাহ বলবেন, একটি করে আয়াত পড় এবং একটি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠ। এভাবে তার সাথে যত আয়াত আছে তার শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। মহামহিম আল্লাহ বান্দাকে বলবেন, আঁকড়ে ধর। তখন বান্দা বলবে, হাত দিয়ে হে আমার পালনকর্তা! আপনি অধিক জ্ঞান রাখেন। তিনি বলবেন, এই (ডান) হাত দিয়ে চিরস্থায়ীভাবে আঁকড়ে ধর এবং এই (বাম) হাত দিয়ে চিরকালীন সুখ চেপে ধর’।[২৫]

একশ’ আয়াত তেলাওয়াত করার ফযীলত

عَنْ تَمِيْمٍ الدَّارِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَرَأَ بِمِائَةِ آيَةٍ فِىْ لَيْلَةٍ كُتِبَ لَهُ قُنُوْتُ لَيْلَةٍ.

তামীম আদ্দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাত্রে একশ’ আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য সারা রাত্রি ছালাতের ছওয়াব লেখা হবে’।[২৬]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَامَ بِمِائَةِ آيَةٍ كُتِبَ مِنَ الْقَانِتِيْنَ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একশ’ আয়াত পাঠ করবে তাকে বিনয়ীদের মধ্যে গণ্য করা হবে’।[২৭]

এক হাযার আয়াত তেলাওয়াত করার ফযীলত

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَامَ بِأَلْفِ آيَةٍ كُتِبَ مِنَ الُمقَنْطِرِيْنَ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এক হাযার আয়াত পাঠ করবে, তাকে অধিক কার্যকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে’।[২৮]

আয়াতুল কুরসী তেলাওয়াত করার ফযীলত

আয়াতুল কুরসী মর্যাদার দিক থেকে কুরআনের সর্ববৃহৎ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত। অনেকেই এ আয়াতে ‘ইসমে আযম’ আছে বলে মত দিয়েছেন। কারণ এ আয়াতে মহান আল্লাহর একক অস্তিত্ব, তাওহীদ ও গুণাবলীর বর্ণনা অনুপম ভঙ্গিতে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া হাদীছে এ আয়াতের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

১. প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর পাঠ করার ফযীলত

যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী নিয়মিত পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন অন্তরায় থাকে না। হাদীছে এসেছে, আবূ উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوْبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُوْلِ الْجَنَّةِ إِلَّا أَنْ يَمُوْتَ.

‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন অন্তরায় থাকে না’।[২৯]

২. ঘুমানোর পূর্বে পাঠ করার ফযীলত

যে ব্যক্তি ঘুমানোর পূর্বে ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়বে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ হতে সর্বদা তার জন্য একজন পাহরাদার থাকবে এবং শয়তান তার নিকট আসতে পারবে না, যতক্ষণ না সে ভোরে উঠে।

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে ফিতরার মাল পাহারায় নিযুক্ত করলেন। এসময় আমার নিকট এক ব্যক্তি আসল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্য-শস্য নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, তোমাকে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট নিয়ে যাব। সে বলল, আমি একজন অভাবগ্রস্ত লোক, আমার বহু পোষ্য রয়েছে এবং আমার অভাবও নিদারূণ। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। অতঃপর আমি যখন সকালে উপনীত হলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, আবূ হুরায়রা! তোমার গত রাতের বন্দির কী হল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! সে নিদারূণ অভাব ও বহু পোষ্যের অভিযোগ করল, তাই আমি তার প্রতি দয়া করলাম এবং তাকে ছেড়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, শোন! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নিশ্চিতভাবে বুঝলাম যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ‘সে আবার আসবে’ বলার কারণে- ‘সে আবার আসবে’। অতএব আমি তার প্রতীক্ষায় রইলাম। সে আবার আসল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্য-শস্য নিতে লাগল। এসময় আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট নিয়ে যাব। সে বলল, এবারও আমাকে ছাড়, আমি বড় অভাবগ্রস্ত এবং আমার বহু পোষ্য রয়েছে, আমি আর আসব না। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এবারও আমি তার প্রতি দয়া করলাম এবং তাকে ছেড়ে দিলাম। যখন আমি ভোরে উঠলাম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, হে আবূ হুরায়রা! তোমার বন্দির কী হল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! সে নিদারূণ অভাব ও বহু পোষ্যের অভিযোগ করল, তাই আমি তার প্রতি দয়া করে তাকে ছেড়ে  দিলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, শোন! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে, সে আবারও আসবে। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, সে আবার আসবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সে আবার আসবে। সুতরাং আমি তার প্রতীক্ষায় রইলাম। সে আবার আসল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্য-শস্য নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট নিয়ে যাব, এটা তিনবারের শেষবার, তুমি ওয়াদা করেছিলে তুমি আর আসবে না, অথচ তুমি এসেছ। সে বলল, এবারও আমাকে ছাড়, আমি তোমাকে এমন কয়টি বাক্য শিখাব, যা দ্বারা আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন। তা এই যে, যখন তুমি শয্যা গ্রহণ করবে, তখন ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়বে, ‘اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ’- আয়াতের শেষ পর্যন্ত, তাহলে আল্লাহর পক্ষ হতে সর্বদা তোমার জন্য একজন পাহারাদার থাকবে এবং শয়তান তোমার নিকট আসতে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি ভোরে উঠ। এবারও আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। যখন ভোরে উঠলাম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, তোমার বন্দির কী হল? আমি বললাম, সে বলল, সে আমাকে এমন কয়টি কথা শিখাবে, যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, শোন! সে এবার তোমাকে সত্য বলেছে, অথচ সে ডাহা মিথ্যুক। তুমি কি জান, তুমি তিন রাত্রি যাবৎ কার সাথে কথা বলছিলে? আমি বললাম, জি না। তিনি বললেন, সে ছিল একটা শয়তান।[৩০]

[ইনশাআল্লাহ চলবে]



* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[১]. আবূ দাঊদ, হা/১৪৬৪; তিরমিযী, হা/২৯১৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২২৪০, সনদ হাসান ছহীহ।

[২]. ইবনু তাইমিয়্যাহ, আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ আব্দুল ক্বাদির (দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১৪০৮ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ১২৬।

[৩]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৭৮০, সনদ ছহীহ।

[৪]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০৮৯, সনদ ছহীহ।

[৫]­. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৯৮, ১৮৯৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৭৯।

[৬]­. ছহীহ বুখারী, হা/৩৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮১৭; আবূ দাঊদ, হা/১৩৭২; ইবনু মাজাহ, হা/১৬৪১; নাসাঈ, হা/২২০৩; মিশকাত, হা/১৯৫৮।

[৭]­. তিরমিযী, হা/৬৮২; ইবনু মাজাহ, হা/১২৪২, সনদ ছহীহ।

[৮]­. মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৪৩; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৬৬১৯; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৭৯৭।

[৯]­. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৬২ ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘ছিয়ামের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ বুখারী, হা/১৯০৪।

[১০]­. ছহীহ বুখারী, হা/১৯৯৪ ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘ছিয়ামের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ।

[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯০২।  

[১২]. তিরমিযী, হা/২৯১০, সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৩২৭।

[১৩]. মুসতাদরাক হাকিম, হা/২০৮০, সনদ ছহীহ; ছহীহুল জামে‘, হা/১১৬৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬৬০।

[১৪]. আল-জামেঊ লি আহকামিল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৫; তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৯।

[১৫]. আল-জামেঊ লি আহকামিল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৫; তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৮।

[১৬]. বাংলাদেশে বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা উটের সর্বোচ্চ দাম ১৮ লাখ টাকা। আর সঊদী আরবে কোটি টাকার উপর। যদি বাংলাদেশের দাম হিসাব করি, তাহলে একটি আয়াত তেলাওয়াতের মর্যাদা ১৮ লাখ টাকা। আর যারা কষ্ট করে তেলাওয়াত করবে, তাদের জন্য ডাবল অর্থাৎ ৩৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ মর্যাদা। যদিও এটা একটি পরিসংখ্যান। মূলত কুরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও মর্যাদা বুঝানোর জন্য এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হল। কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত এর চেয়েও অত্যধিক। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!

[১৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৩; মিশকাত, হা/২১১০।

[১৮]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১২৩৯, সনদ হাসান; ছহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৩৮।

[১৯]. আবূ দাঊদ, হা/১৪৬৪; তিরমিযী, হা/২৯১৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২২৪০, সনদ হাসান ছহীহ।

[২০]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৭৮০, সনদ ছহীহ।

[২১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০৮৯, সনদ ছহীহ।

[২২]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০২, ‘কুরআনের মর্যাদাসমূহ ও এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়’ অধ্যায়; মিশকাত, হা/২১১১।

[২৩]. আবূ দাঊদ, হা/১৩৯৮; ইবনু হিব্বান, হা/২৫৭২; ইবনু খুযায়মাহ, হা/১১৪৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬৪২; ছহীহুল জামে‘, হা/৬৪৩৯, সনদ ছহীহ।

[২৪]. মুসতাদরাক হাকিম, হা/২০৪১; সিলসিলা ছহীহা, হা/৬৪৩।

[২৫]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১২৩৯, সনদ হাসান; ছহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৩৮।

[২৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৯৯৯; দারেমী, হা/৩৪৫০; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬৪৪; ছহীহুল জামে‘, হা/৬৪৬৮, সনদ ছহীহ।

[২৭]. আবূ দাঊদ, হা/১৩৯৮; ইবনু হিব্বান, হা/২৫৭২; ইবনু খুযায়মাহ, হা/১১৪৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬৪২; ছহীহুল জামে‘, হা/৬৪৩৯, সনদ ছহীহ।

[২৮]. আবূ দাঊদ, হা/১৩৯৮; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৫৭২; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/১১৪৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬৪২; ছহীহুল জামে‘, হা/৬৪৩৯, সনদ ছহীহ।

[২৯]. নাসাঈ কুবরা, হা/৯৮৪৮; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৯৭২; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৫।

[৩০]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩১১; মিশকাত, হা/২১২৩।




প্রসঙ্গসমূহ »: কুরআনুল কারীম
বিদ‘আত পরিচিতি (৭ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
শিক্ষাদানে নববী পদ্ধতি ও কৌশল - হাসিবুর রহমান বুখারী
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
হজ্জ ও ওমরার সঠিক পদ্ধতি (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
সালাম প্রদানের গুরুত্ব ও মর্যাদা - মুহাম্মাদ আরিফ হুসাইন
ফিলিস্তীন, হে মুসলিম! - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী - আব্দুল গাফফার মাদানী
রামাযানের খুঁটিনাটি - আল-ইখলাছ ডেস্ক
বিদায় হজ্জের ভাষণ : তাৎপর্য ও মূল্যায়ন - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন

ফেসবুক পেজ