মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ
-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*
(১৩তম কিস্তি)
আক্বীদা-২ : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কবর আল্লাহর অধিক নৈকট্য ও অতিশয় পূণ্য লাভের মাধ্যম এবং তা আল্লাহর আরশ ও কুরসী অপেক্ষা উত্তম
দেওবন্দীদের অন্যতম আক্বীদা হল, তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবর যিয়ারতকে মসজিদে নববীর যিয়ারত অপেক্ষা উত্তম মনে করে। এমনকি এটাকে আল্লাহর অধিক নৈকট্য ও অতিশয় পূণ্য লাভের মাধ্যম এবং সৌভাগ্যের বিষয় বলে বিশ্বাস করে। তারা এটাও বিশ্বাস করে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর কবরে সশরীরে অবস্থান করছেন। আর এ কারণে তাঁর কবর আল্লাহর আরশ, কুরসী, কা‘বা এবং আসমান-যমীনের সকল স্থান অপেক্ষা উত্তম। যেমনটা দেওবন্দী আলিমগণ বলেন,
‘রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওদ্বা শরীফ যিয়ারত আমরা ও আমাদের পূর্বসূরীগণের মতে আল্লাহর অধিক নৈকট্য লাভ, অতিশয় পূণ্য লাভ ও উন্নত স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মাধ্যম। বরং উম্মতের জন্য তা ওয়াজিব না হলেও তাঁর কাছাকাছি একটি বিষয়’। তারা আরো বলেন, ‘রওদ্বায়ে পাক যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা ও এ উদ্দেশ্যে ব্যয় করা সৌভাগ্যের বিষয়। কেউ যদি রওজা পাক যিয়ারতের নিয়তের সাথে মসজিদে নববী ও তৎসংশ্লিষ্ট মুবারক জায়গা সমূহের নিয়ত করে তবে তাতেও কোন আপত্তি নেই। বরং উত্তম হল যেমন ইবনুল হুমাম বলেছেন যে,
أن يجرد النية لزيارة قبره عليه الصلاة والسلام ثم يحصل له إذا قدم زيارة المسجد لأن في ذلك زيادة تعظيمه وإجلاله ﷺ.
‘কেবল রওজা শরীফ যিয়ারতের নিয়ত করা। যখন সেথায় পৌঁছে যাবে তখন তো এমনিতে মসজিদে নববী যিয়ারত হয়ে যাবে। কেননা মসজিদে নববী সম্মানিত হবার কারণই হল সেখানে রওদ্বায়ে আতহার এর অবস্থান’।[১]
তারা আরো বলেন, ‘এ রাওদ্বা পাকেই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সশরীরে অবস্থান করছেন। মুবারক দেহ স্পর্শী এ রাওদ্বাখানি এ মসজিদ কেন বস্তুত: কাবা শরীফে এমনকি আল্লাহর আরশ ও কুরসী থেকেও উত্তম’।[২] দেওবন্দী আলেম যাকারিয়া শাহারানপুরী তার ‘ফাযায়েলে হজ্জ’ বইয়ে লিখেছেন, ‘যেই জায়গা হুজুরে পাক (ছ)-এর শরীর মোবারকের সহিত মিলিত আছে, উহা আল্লাহ পাকের আরশ হইতেও শ্রেষ্ঠ, কাবা হইতেও শ্রেষ্ঠ, কুরছি হইতেও শ্রেষ্ঠ, এমনকি আশমান জমিনের মধ্যে অবস্থিত যে কোন স্থান হইতেও শ্রেষ্ঠ’।[৩]
তাদের দলীল : তারা এ আক্বীদা প্রমাণ করার জন্য একটি হাদীছ উপস্থাপন করেছেন। হাদীছটি হল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,مَنْ جَاءَنِيْ زَائِرًا لَا تَحْمِلُهُ إِلَّا زِيَارَتِيْ كَانَ حَقًّا عَلَيَّ أَنْ أَكُوْنَ لَهُ شَفِيْعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘অন্য কোন নিয়ত ছাড়া একমাত্র আমার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে এখানে (মদীনায়) আসবে, ক্বিয়ামতের দিবসে তার জন্য শাফা‘আত করা আমার দায়িত্ব’।[৪]
পর্যালোচনা
দেওবন্দীরা যে হাদীছের উপর ভিত্তি করে উপরিউক্ত আক্বীদা পোষণ করে, সে হাদীছটি যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। এ হাদীছে মুসলিম ইবনু সালিম আল-জুহানী[৫] নামে একজন রাবী আছেন। তার সম্পর্কে ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, সে ছিক্বাহ নয়।[৬] ড. বাশ্শার ও শু‘আইব আরনাউত (রাহিমাহুল্লাহ) তাকে যঈফ বলে উল্লেখ করেছেন।[৭] ইমাম আব্দুল হাদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা এমন হাদীছ যেখানে কবর যিয়ারতের কথা উল্লেখ নেই এবং মৃত্যুর পরও কবর যিয়ারতের কোন উল্লেখ নেই। তাছাড়া হাদীছটি যঈফ ও মুনকার। যা দ্বারা দলীল গ্রহণযোগ্য হয় না এবং তার উপর নির্ভরশীল হওয়া যায় না। ছয়টি কিতাবের (ছহীহ বুখারী, ছহীহ মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমীযি, নাসাঈ এবং ইবনু মাজাহ) সংকলনকারী কেউই এ হাদীছ উল্লেখ করেননি। ইমাম আহমাদও তাঁর মুসনাদে এবং নির্ভরযোগ্য কোন ইমামও হাদীছটি বর্ণনা করেননি।[৮]
ইবনু আব্দুল হাদী তার ‘আছ-ছারিমুল মুনকী ফির রদ্দি আলাস সুবকী’ গ্রন্থে প্রায় দশের অধিক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবর যিয়ারত সংক্রান্ত হাদীছ বর্ণনা করে বলেন, ‘(যিয়ারত সংক্রান্ত) সবগুলো হাদীছ যঈফ, ভিত্তিহীন। তাদের (রাবীদের) মধ্যে কেউ কেউ এতটাই দুর্বল যে, মুহাদ্দিছগণ তাদের উপর হাদীছ তৈরির অভিযোগ করেছেন।[৯] যেমনটা শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (৬৬১-৭২৮ হি./১২৬৩-১৩২৮ খৃ.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, كُلُّ حَدِيْثٍ رُوِيَ فِيْ زِيَارَةِ قَبْرِهِ فَإِنَّهُ ضَعِيْفٌ بَلْ كَذِبٌ مَوْضُوْعٌ ‘নবী করীম (ﷺ)-এর কবর যিয়ারত সংক্রান্ত যতগুলো হাদীছ এসেছে সবগুলোই যঈফ বরং মিথ্যা ও জাল’।[১০]
সুধী পাঠক! যদি কবর যিয়ারত সংক্রান্ত সকল বর্ণিত হাদীছ যঈফ ও জাল হয়, তাহলে তার দ্বারা কীভাবে দলীল গ্রহণ করা যেতে পারে? তার দ্বারা কোন আক্বীদা প্রমাণ করা কীভাবে সঠিক হতে পারে? তাছাড়া এই আক্বীদা স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ বিরোধী। হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَىْ ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ مَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى وَمَسْجِدِىْ هَذَا.
‘তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন দিকে সফর করা যায় না; মসজিদে হারাম, মসজিদে আক্বছা ও আমার এ মসজিদ’।[১১]
হাদীছ থেকে প্রমাণ হয় যে, শুধু মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়তে সফর করা জায়েয। সেখানে গিয়ে নবী করীম (ﷺ)-এর কবর যিয়ারতের মর্যাদা এমনিতেই অর্জন হয়ে যাবে। যার আকাক্সক্ষা প্রতিটি মুসলিমের অন্তরে সুপ্ত আছে।
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (৬৬১-৭২৮ হি./১২৬৩-১৩২৮ খৃ.) (রাহিমাহুল্লাহ) এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যার মূল কথা হল, ‘নবী কারীম (ﷺ)-এর কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব (উত্তম) আমল। তবে মদীনা মুনাওওয়ারাহ সফর করার সময় মসজিদের নিয়ত করতে হবে। যাতে করে হাদীছ لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ ‘সফর করিও না তিন মসজিদ ছাড়া’-এর বিরোধী না হয়’।[১২]
কোন মুসাফির যদি মসজিদে নববীর উদ্দেশ্যে সফর করে এবং নবী করীম (ﷺ)-এর কবর যিয়ারত করে তাহলে তা উত্তম আমল। শরী‘আতে নবী-রাসূল, নেক বান্দা এবং অন্যান্য কবর যিয়ারত করতে নিষেধ নেই। বরং কবর যিয়ারত করা শরী‘আতের নির্দেশ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কবর যিয়ারত করার অনুমতি দিয়েছেন[১৩] এবং নিজেও কবর যিয়ারত করতেন।[১৪] কিন্তু কেউ যদি মদীনাতে মসজিদ ছাড়া অথবা শুধু নবী করীম (ﷺ)-এর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করে, তাহলে তা শরী‘আত বিরোধী। কেননা নবী করীম (ﷺ) তা করতে নির্দেশ প্রদান করেননি। বরং তিনি বলেছেন, ‘তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন দিকে সফর করা যায় না’।[১৫] এমনকি কেউ যদি মসজিদ ব্যতীত শুধু কবর যিয়ারত করার মানতও করে, তবে সেই মানত পূর্ণ করতে সে বাধ্য নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা করতে আদেশ দেননি। আর আনুগত্যপূর্ণ কাজে মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব।[১৬]
ছাহাবীগণ আবূ বকর, ওমর, উছমান, আলীসহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁদের যুগের শেষ পর্যন্ত নবী করীম (ﷺ)-এর ‘কবর’ বা অন্য কোন ছালিহ বান্দার ‘কবর’-কে লক্ষ্য করে কখনো সফর করেননি। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) -এর কবর শাম দেশে ও ফিলিস্তীনে অনেক নবী-রাসূলের কবর ছিল; তাদের কেউ সেখানেও সফর করেননি। তাঁরা বাইতুল মাকদাসে সফর করতেন, সেখানে ছালাত আদায় করতেন। ছাহাবীদের যুগে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর কবরের ন্যায় আমাদের নবী (ﷺ)-এর কবর ছিল। কিন্তু ছাহাবীদের কেউই মদীনাতে কবরের জন্য কখনো সফর করেননি। বরং তাঁরা মদীনাতে আসতেন এবং নবী করীম (ﷺ)-এর মসজিদে ছালাত আদায় করতেন, ছালাতের মধ্যে তার জন্য দু‘আ করতেন। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হুজরার মধ্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবর ছিল। তারা কখনো হুজরার মধ্যে প্রবেশ করতেন না এবং হুজরার বাহিরে মসজিদের মধ্যে দেওয়ালের পাশে অবস্থানও করতেন না। বরং হুজরার বাহির থেকে তাঁরা তাঁর উপর সালাম করতেন। অতএব মসজিদে নববী ব্যতীত শুধু রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবর যিয়ারতকে উত্তম মনে করা ইসলামী শরী‘আত ও সালাফে ছলেহীনের আমল বিরোধী যা ভ্রান্ত আক্বীদার অর্ন্তভুক্ত। মহান আল্লাহ দেওবন্দীদের এমন ভ্রান্ত আক্বীদা থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাযত করুন-আমীন!!
দেওবন্দীরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবর নিয়ে যে বিশ্বাস অন্তরে পোষণ করে, তা অবশ্যই বাড়াবাড়ি।[১৭] কেননা শরী‘আতে তাঁর কবর কেন্দ্রীক এরকম কোন নির্দেশনা নেই। বরং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর কবরকে নিয়ে আশঙ্কা করতেন। পূর্ববর্তী উম্মতগণ নবী-রাসূল ও সৎলোকদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করে শিরকের সূচনা করেছিল। তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছিল।[১৮] রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও তাঁর কবরকে নিয়ে এমনটি আশঙ্কা করতেন। তাঁকে নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না করা হয় এবং তাঁর কবরকে যেন মসজিদে রূপান্তরিত করা না হয়, এ ব্যাপারে নির্দেশনা ও সতর্কবার্তা দিয়েছেন। আয়েশা (আলাইহিস সালাম) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট যখন মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন হয়, তখন তিনি বারবার চেহারার উপরে চাদর টেনে দিচ্ছিলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হচ্ছিল, তখন তা সরিয়ে দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন,لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْيَهُوْدِ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‘ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের উপর আল্লাহর লা‘নত (অভিশাপ) বর্ষিক হোক, কারণ তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।[১৯] আয়েশা (আলাইহিস সালাম) বলেন, এ কথার মাধ্যমে তারা যেসব (বিদ‘আতী ও শিরকী) কার্যকলাপ করত, তা থেকে তিনি নিজ উম্মতকে সতর্ক করছিলেন। তার কবরকে মসজিদরূপে গ্রহণ করার আশঙ্কা যদি না থাকত, তাহলে তার কবরকে উন্মুক্তই রাখা হত।[২০] অর্থাৎ যেহেতু তিনি আশঙ্কা করতেন যে, তাঁর কবরকে মসজিদ বা সিজদার স্থান করা হতে পারে তাই উন্মুক্ত স্থানে কবর করতে দেননি। বরং আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর কক্ষে তাঁর কবর করা হয়েছে।
অথচ বিদ‘আতীরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবরকে মাজার বা মসজিদে রূপান্তরিত করতে না পারলেও মনের ভিতরে ইবাদতের অন্যতম স্থান এবং শাফা‘আতের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছে। দেওবন্দীরা তার অন্যতম। তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবরকে আল্লাহর অধিক নৈকট্য ও অতিশয় পূণ্য লাভের মাধ্যম এবং সৌভাগ্যের বিষয় বলে বিশ্বাস করে এবং সেটাকে আল্লাহর আরশ, কুরসী, কা‘বা এবং আসমান-যমীনের সকল স্থান অপেক্ষা উত্তম বলে বিশ্বাস করে। তাঁর কবরের মাধ্যমে অসীলা কামনা করে। প্রকৃতপক্ষে যারা শিরক লালনকারী, কেবল তারাই কবর কেন্দ্রীক এমন বিশ্বাস নিয়ে জীবন-যাপন করে। একজন তাওহীদপন্থী তথা আল্লাহর এককত্বে বিশ্বাসী এবং শিরককারীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হল, তাওহীদপন্থীরা যখন কবর যিয়ারত করে, তখন তারা কবরবাসীর উপর সালাম দেয় এবং তাদের জন্য দু‘আ করে। আর শিরককারীরা (ও বিদ‘আতীরা) যখন কবর যিয়ারত করে, তখন তাকে (কবরবাসীকে) ¯্রষ্টার সাথে তুলনা দেয়, তার জন্য নযর পেশ করে, তাকে সিজদা করে, আহ্বান করে, তাকে আল্লাহর ন্যায় ভালোবাসে এবং আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করে।[২১] কবরকে কল্যাণ লাভের মাধ্যম মনে করে, তাকে অসীলা করে এবং তার মাধ্যমে শাফা‘আত কামনা করে। অথচ এর বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান স্পষ্ট।
কবরকে ইবাদতের স্থান নির্ধারণ করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
ইবাদত শব্দের অর্থ হল অবনত হওয়া, অনুগত হওয়া, আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যে আত্মসমর্পণ করা, তাঁর নিষেধকে বর্জন করা, তাঁর নৈকট্য লাভ করা, তাঁর প্রতিদানের আশা করা, তাঁর ক্রোধ ও শাস্তির ব্যাপারে সর্তক থাকা।[২২] শরী‘আতের পরিভাষায় ইবাদত হচ্ছে আল্লাহকে একক জেনে তাঁর নিকট অবনত হওয়া এবং ঐ কর্মের প্রতি আত্মসমর্পণ করা, যার ব্যাপারে তিনি আদেশ করেছেন এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা।[২৩] এছাড়া আল্লাহ তা‘আলা ভালোবাসেন এবং পসন্দ করেন এমন সব প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজ[২৪] এবং রাসূলগণের দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী আল্লাহর নির্দেশিত যাবতীয় ব্যাপারে আনুগত্য করা।[২৫] অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যা আদেশ করেছেন ও যা থেকে নিষেধ করেছেন[২৬] এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) যা আদেশ করেছেন ও যা থেকে নিষেধ করেছেন তাই ইবাদত (সূরা আল-হাশর : ৭)।
অথচ বর্তমানে বিদ‘আতীরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর নিষেধাজ্ঞাকে ইবাদত হিসাবে গ্রহণ করেছে। তারা কবরকে ইবাদতের স্থান হিসাবে নির্ধারণ করেছে। যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ। ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,اجْعَلُوْا فِى بُيُوْتِكُمْ مِنْ صَلَاتِكُمْ وَلَا تَتَّخِذُوْهَا قُبُوْرًا ‘তোমাদের ঘরেও কিছু কিছু ছালাত আদায় করবে এবং তাকে কবরে পরিণত করো না।[২৭] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেছেন, أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ إِنِّىْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ ‘সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করে যাচ্ছি’।[২৮] রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিষেধের কারণ হল পূর্ববর্তী উম্মতগণ নবী-রাসূলসহ নেক মানুষদের কবরকে ইবাদতের স্থান হিসাবে গ্রহণ করেছিল।[২৯] তাঁরা নবীদেরকে সম্মান করতে গিয়ে তাঁদের কবরে সিজদা দিত, ছালাত আদায়ের প্রয়াস চালাত এবং ছালাত আদায়ের ন্যায় কবরের অভিমুখি হত। তারা নবী-রাসূলদের কবরে ছালাত আদায় এবং ঐ সকল কবরের মাধ্যমে অসীলা কামনা করত। যা আল্লাহর সাথে প্রকাশ্য শিরক।[৩০] এগুলো কারণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,اَللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِيْ وَثَنًا يُعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَىْ قَوْمٍ اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‘হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তি করবেন না, যার পূজা হতে থাকবে। কেননা আল্লাহর কঠোর রোষে পতিত হয়েছে সে কওম, যারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদসমূহে পরিণত করেছে।[৩১]
সৎলোকদের নিয়ে বাড়াবাড়ি এবং শিরকের সূচনা
শিরকের সর্বপ্রথম সূচনা হয়েছিল নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর জাতির মধ্যে। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘ওয়াদ, সূয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নছর’ এগুলো হল নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর জাতির কয়েকজন সৎ ব্যক্তির নাম। তারা যখন মারা গেলেন, শয়তান তখন তাদের জাতির লোকদেরকে প্ররোচনা দিল যে, তারা যেখানে বসত সেখানে তাদের প্রতিকৃতি তৈরি করে তাদের নামে নামকরণ কর। তারা তাই করল। কিন্তু তখন পর্যন্ত তাদের উপাসনা করা হত না। তারপরে যখন সে প্রজন্ম মারা গেল এবং (পরবর্তী প্রজন্মের মাঝ থেকে) সঠিক জ্ঞান লোপ পেল, তখন তাদের উপাসনা করা শুরু হয়ে গেল।[৩২] হাফিয ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, সালাফে ছলেহীনের অনেকেই বলেছেন,
كان هؤلاء قوماً صالحين فى قوم نوح عليه السلام، فلما ماتوا عكفوا على قبورهم، ثم صوّروا تماثيلهم، ثم طال عليهم الأمد فعبدوهم.
‘ঐসব সৎ ব্যক্তিগণ মারা গেলে লোকেরা তাদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকত, পরবর্তীতে তারা তাদের প্রতিকৃতি তৈরি করল। এরপরে যখন দীর্ঘদিন পার হল, তখন তারা উপাসনা শুরু করল’।[৩৩]
ঐ সকল লোকজন দু’টি ফিতনা একত্রিত করেছে। ১. কবরের ফিতনা ২. প্রতিচ্ছবি অর্থাৎ ছবি-মূর্তির ফিতনা। আর এ দু’টির ফিতনার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইঙ্গিত দিয়েছেন। আয়েশা (আলাইহিস সালাম) হতে বর্ণিত। উম্মু সালামাহ (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর নিকট তাঁর হাবশায় দেখা মারিয়া নামক একটা গির্জার কথা উল্লেখ করলেন। তিনি সেখানে যে সব প্রতিচ্ছবি দেখেছিলেন, সেগুলোর বর্ণনা দিলেন। তখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন,
أُولَئِكَ قَوْمٌ إِذَا مَاتَ فِيْهِمُ الْعَبْدُ الصَّالِحُ أَوِ الرَّجُلُ الصَّالِحُ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا، وَصَوَّرُوْا فِيْهِ تِلْكَ الصُّوَرَ، أُوْلَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللهِ.
‘এরা এমন সম্প্রদায় যে, এদের মধ্যে কোন সৎ বান্দা অথবা বলেছেন কোন সৎ লোক মারা গেলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ বানিয়ে নিত। আর তাতে ঐ সব ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি স্থাপন করত। এরা আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম সৃষ্টিজীব’।[৩৪]
সুধী পাঠক! আদম সন্তানদের মধ্যে শিরকের সূচনা হয়েছে মূলত সৎলোকদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণে। এ জন্য মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আহলে কিতাব! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কর না এবং আল্লাহর শানে নিতান্ত সঙ্গত বিষয় ছাড়া কোন কথা বল না। নিঃসন্দেহে মারইয়াম পুত্র মসীহ ঈসা আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর বাণী, যা তিনি মারইয়ামের নিকট প্রেরণ করেছেন এবং রূহ তাঁরাই কাছ থেকে আগত। অতএব তোমরা আল্লাহকে এবং তাঁর রাসূলগণকে মান্য কর। আর একথা বল না যে, ‘আল্লাহ তিনের এক’। এ কথা পরিহার কর; তোমাদের মঙ্গল হবে’ (সূরা আন-নিসা : ১৭১)। অর্থাৎ ‘তোমরা সম্মানের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে তাকে আল্লাহর দেয়া স্থান থেকে উপরে উঠিয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেও না, যা আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য সমীচীন নয়’। এখানে যদিও আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের সম্বোধন করা হয়েছে, তথাপি তা ব্যাপক অর্থে অন্য সকল জাতিকে অন্তর্ভুক্ত করে। যেন খ্রিস্টানরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং ইয়াহুদীরা উযায়ের (আলাইহিস সালাম)-এর ব্যাপারে যেমন বাড়াবাড়ি করেছিল, তারা তেমনটি না করে। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
لَا تُطْرُوْنِيْ كَمَا أَطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ.
‘তোমরা আমার মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা কর না যেমনভাবে খ্রিস্টানরা ইবনু মারইয়াম তথা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর প্রশংসা করেছিল, নিশ্চয় আমি আল্লাহ তা‘আলার বান্দা। তাই তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল বল’।[৩৫] অর্থাৎ আমার প্রশংসার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করে আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদা থেকে উপরে উঠিয়ে দিও না। যেমন খ্রিস্টানরা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর মর্যাদার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করে তাকে ইলাহের স্থানে বসিয়েছিল। আমি শুধু আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সুতরাং তোমরা আমাকে সেভাবেই বিশেষিত কর, যেভাবে আল্লাহ বিশেষিত করেছেন।[৩৬]
সুধী পাঠক! দেওবন্দীরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবরকে নিয়ে যে বিশ্বাস লালন করে, তা আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদার উর্ধ্বে। এ ক্ষেত্রে তারা দু’টি অপরাধে অপরাধী। যেমন, ১. তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবরকে তাদের এবং আল্লাহর মাঝে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছে, যা সম্পূর্ণরূপে মুশরিকদের বিশ্বাস। মহান আল্লাহ পূর্ববর্তী মুশরিকদের সম্বন্ধে বলেন, ‘আর তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর উপাসনা করে, যা তাদের কোন ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও না এবং তারা বলে, এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী’ (সূরা ইউনুস : ১৮)। ২. সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্য দিয়েছে। অর্থাৎ তারা আল্লাহকে মাখলুক্বের সাথে সাদৃশ্য দিয়েছে এবং তাঁর কাছে পৌঁছার জন্য (তাদের ধারণা মতে) সুপারিশকারী নবীর কবরকে অসীলা করেছে। এর মাধ্যমে তারা ‘শিরক ও সাদৃশ্য’ দুই অপরাধ বা পাপে লিপ্ত হয়েছে। যার পরিণাম ভয়াবহ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে শিরক করার পাপ ক্ষমা করবেন না। তবে এর চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমা করেন। আর যে লোক আল্লাহর সাথে শিরক করে, সে যেন মহা অপবাদ আরোপ করল’ (সূরা আন-নিসা : ৪৮)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৭২)।
পরিশেষে বলা যায় যে, যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবর নিয়ে বাড়াবাড়ি করে এবং শিরকী আক্বীদা লালন করে, মহান আল্লাহ তাদের সঠিক বুঝ দান করুন এবং মুসলিম উম্মাহকে দেওবন্দীদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ থেকে হেফাযত করুন-আমীন!!
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।
তথ্যসূত্র :
[১]. মাওলানা খলীল আহমাদ সাহরানপুরী, আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ ইবনু আদম আল-কাওছারী, (দারুল ফাতহি, ১৪২৫ হি.), পৃ. ৪৫-৪৬; মাওলানা খলীল আহমাদ সাহরানপুরী, আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, ভাষান্তর : অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ আব্দুল হাকীম, দেওবন্দী আহলে সুন্নাতের আক্বীদা (আল-হাবীব ফাউ-েশন বাংলাদেশ, আগস্ট ২০১২ খৃ.), পৃ. ২৪-২৫; আলিয়্যু ইবনু আব্দিল ক্বাদির, মাওসূ‘আতুল ফিরাক্বিল মুনতাসিবাতি লিল ইসলাম, ৮ম খ-, পৃ. ৪৬৭।
[২]. আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, পৃ. ৪৭; দেওবন্দী আহলে সুন্নাতের আক্বীদা, পৃ. ২৫।
[৩]. যাকারিয়া শাহারানপুর, ফাযায়েলে হজ্জ্ব (তাবলীগী কুতুব খানা, অক্টোবর ২০০৫ খৃ.), পৃ. ১১৯; যঃঃঢ়ং://ংরঃবং.মড়ড়মষব.পড়স/ংরঃব/ধঁঃযবহঃরপরংষধসরহনধহমষধ/ধনড়ঁঃ/ফব-ড়নধহফর-ঢ়যরৎশধ.
[৪]. আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, পৃ. ৪৭; দেওবন্দী আহলে সুন্নাতের আক্বীদা, পৃ. ২৫।
[৫]. মুসলিম ইবনু সালিম আল-জুহানী মক্কার অধিবাসী। যিনি মুসলিমাতু ইবনু সালিম আল-জুহানী আল-বাছরী নামেও পরিচিত। যিনি মাসজিদে বানী হারাম-এর ইমাম ছিলেন। ইমাম দারাকুৎনী তাঁর সুনানে তাঁর নিকট থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। দ্র. তাক্বীউদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ আল-মাক্কী, আল-ইক্বদুছ ছামীন ফী তা’রীখিল বালাদিল আমীন, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ আব্দুল ক্বাদীর, ৬ষ্ঠ খ- (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৮ হি.), রাবি নং-২৪৫১, পৃ. ৬৮।
[৬]. শামসুদ্দীন আয-যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, তাহক্বীক্ব : আলী মুহাম্মাদ, ৪র্থ খ- (বৈরূত : দারুল মা‘রেফা, ১৩৮২ হি.), রাবী নং-৮৪৮৮, পৃ. ১০৪; ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব, ১০ম খ- (হিন্দ : মাত্ববা‘আতু দায়িরাতিল মা‘আরিফ, ১৩২৬ হি.), পৃ. ১৩১।
[৭]. ড. বাশ্শার ও শু‘আইব আরনাউত, তাহরীরু তাক্বরীবিত তাহযীব লিল হাফিয আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আসক্বালানী, ৩য় খ- (বৈরূত : মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১৪১৭ হি.), পৃ. ৩৭২।
[৮]. মুহাম্মাদ বাশীর ইবনু মুহাম্মাদ, ছিয়ানাতুল ইনসান আন ওসওসাতিশ শায়খি দাহলান (মাত্ববা‘আতুস সালাফিয়্যাতু, ৩য় সংস্করণ, তা.বি.), পৃ. ৫৯।
[৯]. শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু আব্দুল হাদী আল-হানবালী, আছ-ছারিমুল মুনকী ফির রদ্দি আলাস সুবকী, তাহক্বীক্ব : আক্বীল ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু যায়দ (বৈরূত : মুওয়াসসাসাতুর রাইয়্যান, ১৪২৪ হি.), পৃ. ২১।
[১০]. তাক্বীউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনু আব্দুল হালীম ইবনু তাইমিয়া, মাজমূঊ ফাতাওয়া, তাহক্বীক্ব : আনওয়ারুল বায, ‘আমিরুল জাযার (দারুল ওয়াফা, ২য় সংস্করণ, ১৪২৬ হি./ ২০০৫ খৃ.), ১ম খ-, পৃ. ২৩৬; শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া, ক্বা‘ঈদাতুন জালিলাতুন ফীত তাওয়াসসুল ওয়াল ওয়াসীলা, তাহক্বীক্ব : রবী‘ ইবনু হাদী উমাইর আল-মাদখালী (আজমান : মাকতাবাতুল ফুরক্বান, ১৪২২ হি./ ২০০১ খৃ.), ২য় খ-, পৃ. ১৫১।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/১১৮৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৯৭।
[১২]. মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৪র্থ খ-, পৃ. ৫২০।
[১৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭৭, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৬।
[১৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৯৯, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৫।
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/১১৮৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৯৭।
[১৬]. আছ-ছারিমুল মুনকী ফির রদ্দি আলাস সুবকী, পৃ. ৩৩।
[১৭]. বাড়াবাড়ির আরবী শব্দ হল, الغلو ‘গুলুউ’। অর্থ কথা ও বিশ্বাসের দ্বারা সম্মানের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করা’। দ্রষ্টব্য : আহমাদ ইবনু হাজার আল-বূত্বামী, শারহু তাত্বহীরুল জিনান ওয়াল আরকান আন দারানিশ শিরকি ওয়াল কুফরান, ব্যাখ্যাকার : আহমাদ ইবনু সাঈদ রাসলান (দারুল মা‘আরিজ, ১৪৩২ হি.), পৃ. ৪৩।
[১৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৩১;
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৩১।
[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৫২৯, ৫৩১; শারহু তাত্বহীরুল জিনান ওয়াল আরকান আন দারানিশ শিরকি ওয়াল কুফরান, পৃ. ৪৫।
[২১]. আছ-ছারিমুল মুনকী ফির রদ্দি আলাস সুবকী, পৃ. ৩৭।
[২২]. আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল-বুহূছ আল-ইলমিয়্যাহ ওয়াল-ইফতা, সংগ্রহ ও বিন্যাস : শাইখ আহমাদ ইবন আব্দুর রাযযাক আদ-দুয়াইশ (রিয়াদ : দারুল ‘আছিমাহ, ৩য় সংস্করণ, ১৪১৯ হি.), ১ম খ-, পৃ. ৮৬; তাক্বীউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ ইবন ‘আব্দুল হালীম ইবন তাইমিয়্যাহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, তাহক্বীক্ব : আনওয়ারুল বায, ১০ম খ- (দারুল ওয়াফা, ১৪২৬ হি.), পৃ. ১৫৩; ড. সালিহ বিন ফাওযান আল ফাওযান, ‘আক্বীদাতুত তাওহীদ ওয়া বায়ানু মা ইউযাদ্দুহা আও ইয়ানকুসুহা মিনাশ শিরকিল আকবার ওয়াল আসগার ওয়া তা‘তীল ওয়া বিদ‘ঈ ওয়া গাইরে যালিকা (রিয়াদ : মাকতাবাতু দারিল মিনহায, ১৪৩৪ হি.), পৃ. ৫৬; আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম, কালিমার মর্মকথা (ঢাকা : জায়েদ লাইব্রেরী, ৩য় সংস্করণ ২০১৮ খৃ.), পৃ. ৭৭।
[২৩]. আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল-বুহূছ আল-ইলমিইয়্যাহ ওয়াল-ইফতা, ১ম খ-, পৃ. ৭৬।
[২৪]. নুখবাতু মিনাল ‘ওলামা, কিতাবু উছূলুল ঈমান ফী যূইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খ- (সঊদী আরব : ওযারাতুশ শুয়ূনিল ইসলামিয়া ওয়াল আওক্বাফ ওয়াদ দাওয়াতি ওয়াল ইরশাদ, ১৪২১ হি.), পৃ. ৩৪।
[২৫]. আহমাদ ইবন হাজার আল-বাত্বামী ‘আলী ইবন ‘আলী, তাতহীরুল জিনান ওয়াল ফুরকান ‘আন দারানিশ শিরকি ওয়াল কুফরান (কুয়েত : দারুস সালাফিয়া, ১১তম সংস্করণ, ১৯৮৪ হি.), পৃ. ১৬।
[২৬]. আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল-বুহূছ আল-ইলমিয়্যাহ ওয়াল-ইফতা, ১ম খ-, পৃ. ৭৬।
[২৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩২, ১১৮৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৭৭।
[২৮]. জুনদুব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তাঁকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে থেকে আমার কোন খলীল বা একান্ত বন্ধু থাকার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে মুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ ইবরাহীমকে যেমন খলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন, সেভাবে আমাকেও খলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন। আমি আমার উম্মাতের মধ্যে থেকে কাউকে খলীল হিসাবে গ্রহণ করতে চাইলে আবূ বকরকেই তা করতাম। সাবধান থেকো তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদার স্থান) হিসাবে গ্রহণ করত। সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করে যাচ্ছি। দ্র. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৩২।
[২৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৩১।
[৩০]. ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীফ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ, ২য় খ- (বানারস : ইদারাতুল বুহূছিল ইলমিয়্যাহ ওয়াদ দাওয়াতি ওয়াল ইফতা, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৪ হি.), পৃ. ৪২০।
[৩১]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৪১৯, সনদ ছহীহ; মিশকাত, হা/৭৫০।
[৩২]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৯২০।
[৩৩]. ইবনুল কাইয়্যিম, ইগাছাতুল লাহফান মিন মাছাইদিশ শাইতান, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ হামিদ, ১ম খ- (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, তা.বি.), পৃ. ১৮৪।
[৩৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩৪।
[৩৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৪৫।
[৩৬]. শারহু তাত্বহীরুল জিনান ওয়াল আরকান আন দারানিশ শিরকি ওয়াল কুফরান, পৃ. ৪৩।