মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৪:১৮ অপরাহ্ন

ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব ও মূল্যায়ন

-ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন*


(শেষ কিস্তি)

মুসলিম সমাজের সদস্যরা সর্বাবস্থায় পরস্পরের ভ্রাতৃত্বের আবহে বসবাস করে। অপরাধ স্বীকারকারী খুনের আসামী ও রক্তের দাবিদার ফরিয়াদীর ক্ষেত্রেও ইসলাম ভাই শব্দ ব্যবহার করেছে। সম্বোধনের দিক থেকে ভ্রাতৃত্বের কাতার থেকে বের করে দেয়নি। কেননা ইসলাম শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক ধর্ম নয় এটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ও পরিপূর্ণ জাতি গঠনের দ্বীন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَمَنۡ عُفِیَ لَہٗ مِنۡ اَخِیۡہِ شَیۡءٌ فَاتِّبَاعٌۢ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ اَدَآءٌ اِلَیۡہِ بِاِحۡسَانٍ.

‘কিন্তু যদি তার ভাই-এর পক্ষ থেকে কিছু (মৃত্যুদণ্ড) ক্ষমা করে দেয়া হয় (রক্তপণের বিনিময়ে), তাহলে যেন সেক্ষেত্রে যথাযথ নিয়মের অনুসরণ করা হয় এবং সততার সাথে যেন তার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়...’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭৮)।

আয়াতের ব্যাখ্যা হল এই যে, নিহতের রক্তের দাবিদার ফরিয়াদির পক্ষ থেকে যদি রক্তপণস্বরূপ নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে খুনির মৃত্যুদণ্ড ক্ষমা করে দেয়া হয়, তাহলে তা যেন ফরিয়াদির পক্ষ থেকে রূঢ়তা বর্জন করে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা হয় এবং হত্যাকারীর পক্ষ থেকে যেন যথাযথভাবে আদায় করা হয়।[১] উল্লেখ্য, এখানে ভাই বলতে মায়ের পেটের ভাই নয় বরং দ্বীনী ভাই।

ইসলামে বাড়ীর দাস-দাসী ও চাকর-চাকরানিরাও ঈমানী ভ্রাতৃত্বের আওতাভুক্ত। মা‘রুর বিন সুয়াইদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি আবূ যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে রাবাযাহ নামক স্থানে দেখা করলাম। সেখানে গিয়ে দেখি তাঁর গায়ে ও পরনে যে জোড়-কাপড় (হুল্লাহ্) তাঁর দাসের গায়ে পরনে সেই একই ধরনের কাপড়। তখন আমি তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমি একবার এক ব্যক্তিকে (যার মা অনারব ছিল) তার ‘মা’ তুলে গালি দিয়েছিলাম।

فَقَالَ لِىَ النَّبِىُّ  صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا أَبَا ذَرٍّ أَعَيَّرْتَهُ بِأُمِّهِ إِنَّكَ امْرُؤٌ فِيْكَ جَاهِلِيَّةٌ  إِخْوَانُكُمْ خَوَلُكُمْ جَعَلَهُمُ اللهُ تَحْتَ أَيْدِيْكُمْ فَمَنْ كَانَ أَخُوْهُ تَحْتَ يَدِهِ فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ وَلَا تُكَلِّفُوْهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ فَإِنْ كَلَّفْتُمُوْهُمْ فَأَعِيْنُوْهُمْ

‘তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, ‘হে আবূ যার! তুমি তাকে ‘মা’-এর নাম ধরে ভর্ৎসনা করলে? তুমি এমন এক লোক যার মধ্যে জাহেলিয়্যাত অবশিষ্ট রয়েছে। তোমাদের ভাইয়েরা (দাস-চাকর) তোমাদের অনুগত খাদেম; তাদেরকে আল্লাহ তোমাদের অধীনস্ত করেছেন। কারো কোন ভাই (দাস-চাকর) যদি তার অধীনস্ত হয়, তাহলে সে যেন তাকে নিজে যে খাদ্য খায় তা থেকে খাওয়ায় এবং সে নিজে যে (ধরনের) কাপড় পরে তা পরায়। এবং তোমরা তার উপর এমন কাজ চাপিও না যা সে করতে অপারগ। যদি এমন কাজ কখনো চাপাও, তাহলে তোমরা তাকে সে কাজে নিজেরা সহযোগিতা করবে’।[২] আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيْهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ.

‘তোমাদের কেউ অতক্ষণ পর্যন্ত (পূর্ণাঙ্গ) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার (অপরাপর মুমিন) ভাই-এর জন্য তাই পসন্দ করবে যা সে নিজের জন্য পসন্দ করে’।[৩] হাদীছে আরো এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عَنْهُما قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المُسْلِمُ أخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يُسْلِمُهُ...

আব্দুল্লাহ ইবন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মুসলিম হল মুসলিমের ভাই; সে তার ভাইকে যুলম করবে না এবং বিপদে ঠেলে দিবে না। আর যে মুসলিম তার আরেক ভাই-এর সমস্যার সমাধান করে বা তার প্রয়োজন পূরা করে, আল্লাহ তাঁর সমস্যা সমাধান করে দেন ও প্রয়োজন মিটিয়ে দেন।[৪]  রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,  

وَاللهُ فِيْ عَوْنِ العَبْدِ مَا كَانَ الْعَبدُ فيْ عَوْنِ أَخِيْهِ.

‘আর আল্লাহ ততক্ষণ তাঁর বান্দার প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখে’।[৫]

ঈমানী-ভ্রাতারা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন তারা অপর ঈমানী ভ্রাতাদেরকে স্মরণে রাখেন ও আড়াল থেকে তাদের কল্যাণের জন্য দু‘আ করেন। উম্মুদ্দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

دَعْوَةُ الْمُسْلِمِ لِأَخِيْهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ عِنْدَ رَأْسِهِ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لِأَخِيْهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ آمِيْنَ وَلَكَ بِمِثْلٍ.

‘মুসলিম ব্যক্তির দু‘আ তার আরেক মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিত অবস্থায় কবুল করে নেয়া হয়। তার মাথার কাছে মালাক (ফেরেস্তা) নিয়োজিত রয়েছে। যত বারই সে তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দু‘আ করে ততবারই তার সাথে নিয়োজিত মালাক বলেন, আমীন এবং তোমার জন্য অনুরূপই হবে’।[৬]

কোন মুমিন ভাইকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা এবং অন্যায় করা থেকে বিরত রাখা আরেক মুমিন ভাইয়ের কর্তব্য।

عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُوْمًا...

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তুমি তোমার ভাইকে সহযোগিতা কর হোক সে অত্যাচারিত বা অত্যাচারী। তখন এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এই অত্যাচারিতকে সাহায্য করলাম তাতো বুঝলাম; কিন্তু অত্যাচারীকে সাহায্য করব কীভাবে? তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তাকে অত্যাচার করা থেকে নিবৃত রাখবে, আর সেটাই হল তাকে সাহায্য করা’।[৭]

এক মুসলিম নারী আরেক মুসলিম নারীর বোনের মত। উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে আমরা নারীদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় (ময়দানে) বের করে নিয়ে যাই। হোক তারা সাবালিকা (অবিবাহিতা তরুণী), ঋতুবতী, গৃহভ্যন্তরে অবস্থানকারিণী।

فَأَمَّا الْحُيَّضُ فَيَعْتَزِلْنَ الصَّلَاةَ وَيَشْهَدْنَ الْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْمُسْلِمِيْنَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِحْدَانَا لَا يَكُوْنُ لَهَا جِلْبَابٌ قَالَ لِتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا.

‘আর যারা ঋতুবতী তারা ছালাত থেকে দূরে থাকবে এবং কল্যাণে (নেক কাজে) এবং মুসলিমদের দু‘আয় অংশ নিবে। আমি (উম্মু ‘আতিয়্যাহ) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের মধ্যে এমন নারীও আছে যার ‘জিলবাব’  (প্রশস্ত বড় কাপড়) নেই। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তার অন্য বোন যেন তাকে তার ‘জিলবাব’ পরিয়ে নেয়’।[৮] ছহীহুল বুখারীর হাদীছে কোথাও কোথাও বোনের জায়গায় সঙ্গিনী (ছাহেবাহ) শব্দ এসেছে।[৯] নারীদের ঈদের মাঠে উপস্থিতির মাধ্যমে তাদের পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ ঘটে, তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা জোরদার হয় এবং তাদের ভিতরে ইসলামী বৃহত্তর সমাজের সদস্য হওয়ার মানসিকতা প্রবল হয়।

আত্মীয় হিসাবে আবূ বাক্র (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শ্বশুর এবং বংশ হিসাবে উভয়েই কুরাইশ বংশের। কিন্তু দ্বীনি মর্যাদার দিক থেকে তিনি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শ্রেষ্ঠ ছাহাবী ও ভ্রাতা। আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) প্রসঙ্গে বলেছেন,

إنَّ أمَنَّ النَّاسِ علَيَّ فِيْ صُحْبَتِهِ وَمَالِهَ أَبُوْ بَكْرٍ وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيْلًا غَيْرَ رَبِّيْ لَاتَّخذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيْلًا وَلَكِنْ أُخُوَّةُ الْإسْلَامِ ومَوَدَّتُهُ. 

‘সাহচর্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিক থেকে যার কাছে আমি সব চাইতে বেশি ঋণী, তিনি হলেন আবূ বাকর। আমি যদি আমার রবকে ছাড়া অন্য কাউকে একান্ত বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতাম, তাহলে আবূ বাকরকেই একান্ত বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতাম। কিন্তু (তার সাথে) ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসাটাই (উত্তম মনে করেছি)’।[১০]

ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) প্রসঙ্গে বলেছেন, وَلَكِنْ أَخِىْ وَصَاحِبِىْ ‘কিন্তু সে আমার ভাই ও সাথী’।[১১] আইয়ূব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বর্ণনায় এসেছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছেন, وَلَكِنْ أُخُوَّةُ الإِسْلَامِ أَفْضَلُ ‘কিন্তু (তার সাথে আমার) ইসলামের ভ্রাতৃত্বই অতি উত্তম’।[১২]

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর আযাদ করে দেয়া দাসীর (উম্মু আইমানের) পুত্র যাইদ বিন হারিছাহকে বলেছিলেন,وَقَالَ لِزَيْدٍ أَنْتَ أَخُوْنَا وَمَوْلَانَا ‘তুমি আমাদের ভাই এবং আমাদের মাওলা (আযাদকৃত গোলাম)’।[১৩]

ঈমানী-ভ্রাতারা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন তারা অপর ঈমানী ভ্রাতাদেরকে কল্যাণের দু‘আ করার জন্য বিশেষ আহ্বান করেন। ছাফওয়ান ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু ছাফওয়ান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সিরিয়াতে আবুদ্দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ঘরে গেলাম। আমি তাকে ঘরে পেলাম না; বরং সেখানে উম্মুদ্দারদাকে পেলাম। তিনি বললেন, তুমি কি এ বছর হজ্জ পালন করবে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, فَادْعُ اللهَ لَنَا بِخَيْرٍ ‘আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য কল্যাণের দু‘আ করবে’।[১৪] 

মৃত্যুর পরেও ইসলামী ভ্রাতৃত্ব টিকে থাকে এবং তাদের জন্য দু‘আ করতে হয়। পরম দয়াময় আল্লাহ ইরশাদ করেন,

وَ الَّذِیۡنَ جَآءُوۡ مِنۡۢ  بَعۡدِہِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا  اغۡفِرۡ لَنَا وَ لِاِخۡوَانِنَا  الَّذِیۡنَ سَبَقُوۡنَا بِالۡاِیۡمَانِ وَ لَا تَجۡعَلۡ  فِیۡ قُلُوۡبِنَا غِلًّا  لِّلَّذِیۡنَ  اٰمَنُوۡا  رَبَّنَاۤ  اِنَّکَ رَءُوۡفٌ  رَّحِیۡمٌ.

‘আর যারা তাদের পরে (মুহাজির ও আনছার ছাহাবীগণের পরে) এসেছে তারা বলে, হে আমাদের রব্! তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের ভ্রাতাদেরকে (ক্ষমা কর) যারা ঈমানের সাথে আমাদের অগ্রণী হয়েছে। আর তুমি আমাদের অন্তরে মুমিনদের ব্যাপারে বিদ্বেষ পয়দা কর না। নিশ্চয় তুমি অতীব মমতাময় অসীম দয়ালু’ (সূরা আল-হাশর : ১০)।

মুসলিম ভ্রাতাদের জন্য কল্যাণের দু‘আ করার নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও হতভাগ্য পথভ্রষ্ট রাফেযী শী‘আরা আহলে সুন্নাহ আহলেহাদীছকে ঘৃণা করে। তারা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীদেরকে গালিগালাজ করে। উত্তম মুসলিমগণকে গালিগালাজ করা, অভিশাপ দেয়া ও মিথ্যাচার করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ফের্কা হল রাফেযী শী‘আ ফের্কা। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) এই আয়াতের প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যে,

ومَا أَحسَنَ مَا اسْتَنبَطَ الإمامُ مالِك مِن هذِه الآيةِ الكَريمة أنّ الرافِضيَّ الَّذي يَسُبُّ الصَّحابةَ لَيس لَه فِي مالِ الفَيءِ نَصيب لِعَدمِ اتِّصافِه لِما مَدحَ اللهُ بِه هَؤلاءِ

‘ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) এই আয়াতে কারীমা থেকে কতই না চমৎকার একটি মাসআলা নির্গত করেছেন, তা হল- ‘রাফেযী শী‘আ যারা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীগণকে গালি দেয় তাদের ‘ফাইয়’ (যুদ্ধবিহীনভাবে প্রাপ্ত) সম্পদে কোন অংশ নেই; কেননা এই সম্পদ পাওয়ার অধিকারীদেরকে আল্লাহ যে প্রশংসা করেছেন রাফেযী শী‘আরা সে প্রশংসার গুণে গুণান্বিত নয়...। (কেননা তারা ছাহাবীগণের জন্য কল্যাণের দু‘আ করে না ও তাঁদের প্রতি অন্তরে সুধারণা ও ভালবাসা পোষণ করে না বরং তাঁদেরকে ঘৃণা করে ও গালি দেয়)’।[১৫] আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أُمِرْتُمْ بِالْاِسْتِغْفَارِ لِأَصْحَابِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَبَبْتُمُوْهُم سَمِعْتُ نَبِيَّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقوْلُ لَا تَذهَبُ هَذِهِ الْأمَّةُ حتَّى يَلْعَنَ آخِرُهَا أَوَّلَهَا

‘তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীগণের জন্য দু‘আ-ইস্তিগফার করার, অথচ তোমরা তাদেরকে গালি দাও! আমি তোমাদের নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘এই উম্মত ততদিন ধ্বংস হবে না, যতক্ষণ না তাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীগণকে অভিশাপ দিবে’।[১৬] 

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতের সদস্যদের প্রতি স্বীয় ভ্রাতৃত্বের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরস্থানের কাছে গেলেন এবং বললেন,  হে মুমিন কওমের গৃহের (কবরের) অধিবাসীরা! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক! আর আমরা তোমাদের সাথে আল্লাহ চাহেন তো মিলিত হব। (অতঃপর বললেন),

وَدِدْتُ أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوَانَنَا قَالُوْا أوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ أَنْتُمْ أَصْحَابِيْ وَإِخْوَانُنَا الَّذِيْنَ لَمْ يَأتُوْا بَعْدُ

‘আমার ভাল লাগত যদি আমরা আমাদের (পরবর্তী) ভাইদেরকে দেখতে পেতাম! ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা কি আপনার ভাই নই? তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা আমার ছাহাবী। আর আমাদের ভ্রাতারা হল যারা এখনো আসেনি (বরং আমার পরে আসবে)’।[১৭] ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) উপরিউক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন,

فَالصَّحابَةُ لَهُم الأُخُوَّةُ ومَزيَّةُ الصُّحبَة ولِأتباعِه بَعدَهُم الأخوَّة دُونَ الصُّحبَةِ.

‘ছাহাবীগণের জন্য (নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে) ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক রয়েছে এবং তার সাথে রয়েছে ছাহাবিয়্যতের বৈশিষ্ট্য। আর তাঁদের পরবর্তী অনুসারীদের জন্য রয়েছে শুধু ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ছাহাবিয়্যাতের নয়’।[১৮] অর্থাৎ উপর্যুক্ত হাদীছে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাহাবীগণের সাথে তাঁর ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেননি; বরং প্রশ্নের উত্তরে সংক্ষিপ্তভাবে তাদের অতিরিক্ত  বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন মাত্র।

তাবুকের যুদ্ধের সময় আব্দুল্লাহ যুল-বিজাদায়েন (মোটা চাঁদরের দুই টুুকরাওয়ালা) মারা যান। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর ও ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) স্বয়ং রাতের আঁধারে তার জানাযার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। অন্যান্য ছাহাবীগণ কবর খনন করেন।

ونَزلَ رسولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فيْ حُفرَتِه وأبُو بَكر وعُمر يُدَلِّيانِه إليه وهو يَقُول أدنِيا إليَّ أخاكُما فدَلَّيا إليه فلمَّا هَيَّأه لِشقِّه قال للهُمَّ إنِّي أمسَيتُ راضياً عَنه فارْضِ عَنه.

‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে তার কবরে নামলেন এবং আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাকে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে এগিয়ে দিতে থাকলেন। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা দু’জন তোমাদের ভাইটিকে আমার কাছে এগিয়ে দাও’। ফলে তারা দুইজন তাকে এগিয়ে ছিলেন। অতঃপর যখন তাকে কবরে রাখা সম্পন্ন হয়ে গেল তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি এ সন্ধ্যাকালীন কাটিয়েছি তার উপর সন্তুষ্ট অবস্থায় তুমিও তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও! এ অবস্থা দেখে ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, হায়! আমি যদি এই কবরের বাসিন্দা হতাম! (তাহলে কতই না ভাল হত)’।[১৯]

জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে মুমিন-মুসলিমদের মধ্যে যদি কোন পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ অবশিষ্ট থেকে যায়, তাহলে সেটিও পরিষ্কার করে বাইরে রেখে নির্ভেজাল ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে তারপর জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে; ভ্রাতৃত্ববিরোধী দোষগুলো সহ জান্নাতে ঢুকানো হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

اِنَّ  الۡمُتَّقِیۡنَ  فِیۡ  جَنّٰتٍ  وَّ عُیُوۡنٍ- اُدۡخُلُوۡہَا بِسَلٰمٍ  اٰمِنِیۡنَ - وَ نَزَعۡنَا مَا فِیۡ صُدُوۡرِہِمۡمِّنۡ غِلٍّ اِخۡوَانًا عَلٰی  سُرُرٍ  مُّتَقٰبِلِیۡنَ - لَا  یَمَسُّہُمۡ فِیۡہَا نَصَبٌ  وَّ  مَا ہُمۡ  مِّنۡہَا بِمُخۡرَجِیۡنَ.

‘নিশ্চয় মুমিনরা থাকবে জান্নাতসমূহ এবং ঝর্ণাগুলোর মধ্যে। তোমরা শান্তিতে নিরাপত্তায় ওগুলোর মধ্যে প্রবেশ কর! এবং তাদের বুকসমূহের (মনের) মধ্যে বিদ্যমান হিংসা-বিদ্বেষগুলো আমরা বের করে নিব আর তারা (জান্নাতের) বিছানাগুলোতে ভাই-ভাই হিসাবে পরস্পর সামনাসামনি আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে থাকবে। তাদেরকে সেখানে কোন ধরনের অবসাদ-ক্লিষ্টতা স্পর্শ করবে না এবং তাদেরকে সেখান থেকে কখনো বের করেও দেয়া হবে না’ (সূরা আল-হিজর : ৪৫-৪৮)।

বিদ‘আতী যারাই হোক না কেন, তাদের সাথে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবিয়্যত, ভ্রাতৃত্ব বা অন্য কোন ইতিবাচক সম্পর্ক নেই, তারা প্রত্যাখ্যাত ও বিতাড়িত। এরা শরী‘আতের জালিয়াত চক্র ও প্রতারক।

ক্বিয়ামতের দিন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং ‘হাউযে কাউছার’-এর নিকট উপস্থিত হয়ে উম্মতের সত্যিকার সদস্যদেরকে সেখান থেকে সুমিষ্ট পানি পান করাবেন। যে একবার সে পানি পান করবে ক্বিয়ামতের পুরো সময়ব্যাপী (৫০ হাজার বছর) তার আর পানির পিপাসা লাগবে না। পরিচিত কিছু লোক সে হাউযের দিকে এগিয়ে আসতে থাকবে পানি লাভের জন্য; কিন্তু তাদের সামনে বাঁধার দেয়াল পড়ে যাবে।[২০] নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলবেন,

إنَّهُمْ مِنِّيْ فيُقَالُ إنَّكَ لَا تَدْرِيْ مَا أَحْدَثُوْا بَعْدَكَ فَأَقُوْلُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعدِيْ

‘এরা তো আমার উম্মতের অন্তর্গত! তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না এরা আপনার পর (শরী‘আতের ভিতরে) কত কিছু নতুন আবিষ্কার (বিদ‘আত) করেছিল। তখন আমি বলব, যারা আমার পরে (দ্বীন-শরী‘আতের মধ্যে) পরিবর্তন করেছিল তারা দূর হয়ে যাক, দূর হয়ে যাক’! কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, ‘এরা তো আমার ছাহাবী’।[২১] কিন্তু বিদ‘আতে লিপ্ত হওয়ার কারণে তাদের ব্যাপারে সে দাবি প্রত্যাখ্যাত হবে ও প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। 

ছহীহ মুসলিমের কোন এক বর্ণনায় এসেছে, ‘তখন বলা হবে, তারা আপনার পরে বদলিয়ে ফেলেছিল, তখন আমি বলব, এরা দূর হয়ে যাক, দূর হয়ে যাক!’[২২] হাফেয ইমাম ইবনু আব্দুল বার্র (রাহিমাহুল্লাহ) এ হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন,

كُلُّ مَنْ أحْدثَ فِي الدِّين فهُوَ مِن المَطْرُودِينَ عَن الحَوْض كَالخَوَارجِ والرَّوافِضِ وسَائرِ أصْحابِ الأهْواءِ وكَذلِكَ الظَّلَمَةُ المُسرِفُون في الجَوْرِ وطَمسِ الحَقِّ والمُعلِنُون بالكَبائِر. وكُلُّ هَؤلاء يُخافُ عَلَيهِم أن يَكُونُوا مِمَّنْ عُنُوا بِهذا الخَبرِ واللهُ أعلَم"

‘প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যে দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কার করবে (বিদ‘আত করবে) সেই ‘হাউযে কাউছার’ থেকে বিতাড়িত হবে, যেমন খারেজীরা, রাফেযীরা (শী‘আরা) এবং অন্যান্য সকল হাওয়াপন্থীরা। অনুরূপ অত্যাচারীরা যারা অত্যাচারে এবং হক্ব বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করে এবং প্রকাশ্যে কাবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়। এদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এ শঙ্কা রয়েছে যে, তারা এই হাদীছের দ্বারা যাদেরকে বুঝানো হয়েছে তাদের মধ্যে পড়ে যাবেÑআল্লাহই অধিক জানেন’।[২৩]    

নির্ভেজাল পারস্পরিক সুসম্পর্ক ছাড়া সুন্দর সামাজিক বন্ধন ও সুদৃঢ় সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে ওঠা অসম্ভব। অনেক সময় সদাচরণের বাহ্যিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে সাধারণ নিয়ম ও সামাজিকতা রক্ষা হলেও তা বিশ্বস্ততায় রূপ লাভ করে না। ভাল মনের মানুষ না হয়ে ভাল সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ শুধুই সুনিপুণ অভিনয় ও চাতুর্যপূর্ণ বাক্যবিনিময়। আজকাল অনেক ক্ষেত্রে গরু মেরে জুতা দান করতে এবং নয় শ চুহাঁ (ইঁদুর) খেয়ে বিড়ালকে হজ্জে যেতে দেখা যায়। অন্যের সম্পদ দখল করে, অপরকে নানাভাবে নাজেহালপূর্বক অধিকার হরণ করে, বৃহত্তর দায়িত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজ সেবার প্রদর্শনী ও ভ্রাতৃত্বের মাহাত্ম্য প্রকাশের কসরতও পরিলক্ষিত হয় বেশ। আল্লাহ কারো অন্তঃসারশূন্য বাহ্যিক কর্মকাণ্ডের কোন মূল্যায়ন করেন না। হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,

قَالَ رَسْوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إنَّ اللهَ لَا يَنظُرُ إلَى صُوَرِكُمْ وأَمْوَالِكُمْ ولَكِنْ يَنظُرُ إلى قُلُوْبِكُمْ وَأَعْمَالِكُم

‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের আকৃতি-প্রকৃতি এবং তোমাদের ধন-সম্পদের দিকে তাকান না; বরং তিনি তাকান তোমাদের আত্মাগুলো এবং তোমাদের আমলগুলোর দিকে’।[২৪] হাদীছে আরো এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,

بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشّرِّ أَنْ يَحقِرَ أَخَاهُ المُسلِمَ كُلُّ المُسْلِمِ عَلى الْمُسْلِمِ حَرامٌ دَمُهُ ومَالُهُ وعِرْضُهُ

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তির পাপাচারের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে অবজ্ঞা ও খাটো করে। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপর মুসলিম পবিত্র (সম্মানিত) - তার রক্ত পবিত্র, তার মাল পবিত্র ও তার ইয্যত পবিত্র’।[২৫]

পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্ব ও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠা ও তা টিকে থাকার জন্য ইসলামী শরী‘আতে অনেক বাস্তবসম্মত বিধি-বিধান রয়েছে; যেগুলো জানা, আত্মস্থ করা ও চর্চা করা সকল মুসলিমের জন্য এবং বিশেষ করে খাঁটি ইসলামী আদর্শবাদী সংগঠনের প্রত্যেকটি কর্মীর জন্য একান্ত কর্তব্য।


* সাবেক অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

তথ্যসূত্র :
[১]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৩০; তাফসীর আল-কুরতুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৫০।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৩০ ‘আল-ঈমান’ অধ্যায়; ও হা/৬০৫০ ‘আল-আদব’ অধ্যায়।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩ ‘আল-ঈমান’ অধ্যায়।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৪২ ‘আল-মাযালিম’ অধ্যায়, হা/৬৯৫১।
[৫]. আবূ দাউদ, হা/৪৯৪৬ ‘আল-আদব’ অধ্যায় ।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৩৩ ‘আয-যিকর ওয়াদ্দু‘আ’ অধ্যায়; আবূ দাউদ, হা/১৫৩৪ ‘আল-বিতর’ অধ্যায়।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৯৫২, হা/২৪৪৪ ‘আল-মাযালিম’ অধ্যায়; তিরমিযী, হা/২২৫৫।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯০ ‘আল-ঈদাইন’ অধ্যায়, ‘নারীদের জন্য দুই ঈদে মযদানে যাওয়া বৈধ’ অনুচ্ছেদ।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৮০ ‘আল-ঈদাইন’ অধ্যায়, ‘যদি কোন নারীর ঈদে যাওয়ার জন্য জিলবাব না থাকে’ অনুচ্ছেদ; হা/৩২৪ ‘আল-হায়েয’ অধ্যায়, ‘ঋতুবতীর ঈদের মাঠে উপস্থিত হওয়া’ অনুচ্ছেদ।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৫৪ ‘ফাযায়েলু আছহাবিন্ নাবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’ অধ্যায়, ‘আবূ বাকরের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৫৬।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৫৭।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৯ ‘আছ-ছুল্হ’; মিশকাত, হা/৩৩৭৭।
[১৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৩৩ ‘আয-যিকর ওয়াদ্দু‘আ’ অধ্যায়; আবূ দাউদ, হা/১৫৩৪ ‘আল-বিতর’ অধ্যায়।
[১৫]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৭৪।
[১৬]. ইমাম বাগাভী বর্ণনা করেছেন, সনদ ছহীহ্, দেখুন : তাফসীর ইবনু কাছীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৭৪ ‘টীকা’ দ্র.)।
[১৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৯ ‘আত-ত্বাহারাহ’ অধ্যায়।
[১৮]. যাদুল মা‘আদ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৬৫; শারহ মুসলিম, ইমাম নববী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩১।
[১৯]. আস-সীরাহ্, ইবনু হিশাম, পৃ. ৮২২; আসসীরাহ্, নাদভী, পৃ. ৪৯১।
[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫৭৯, ৬৫৮৩ ‘আর-রিক্বাক্ব’ অধ্যায়।
[২১]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫৭৬, ৬৫৮২ ‘আর-রিক্বাক্ব’ অধ্যায়।
[২২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৯ ‘আত্-ত্বাহারাহ’ অধ্যায়।
[২৩]. শারহ মুসলিম, ইমাম নববী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩০।
[২৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪ ‘আল-বির’ অধ্যায়।
[২৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪ ‘আল-বির’ অধ্যায়।




ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৫ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (২য় কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
শবেবরাত - আল-ইখলাছ ডেস্ক
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব - আব্দুল গাফফার মাদানী
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
বিদ‘আত পরিচিতি (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ঈদে মীলাদুন্নবী : একটি পর্যালোচনা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (৩য় কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার (৯ম কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
ফাযায়েলে কুরআন (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ