মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন

তারুণ্যের উপর সন্ত্রাসবাদের হিংস্র ছোবল : প্রতিকারের উপায় 

-মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*


(শেষ কিস্তি)
(চ) মাদকাসক্ত
মানবতা ও সভ্যতা বিধ্বংসী মারণাস্ত্র হল মদ। মদ মানুষকে অন্ধকার রাজ্যে প্রবেশ করতে সহযোগিতা করে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির পক্ষে হেন কাজ নেই, যা তার মাধ্যমে করা সম্ভব নয়। মস্তিষ্ক বিকৃতকারী, তারুণ্যের শক্তিকে বিনষ্টকারী, জাতির ভবিষ্যৎ কা-ারী যুবসমাজের বিধ্বংসী অস্ত্র এই মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের হিংস্র আক্রমণে বর্তমানে তরুণ সমাজ হতাশাব্যঞ্জক হয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে প্রবেশ করছে। অথচ ইসলাম সকল প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম করেছে এবং নেশাদার দ্রব্য পানকারীর উপর জান্নাত হারাম করা হয়েছে। হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, كُلُّ مُسْكِر ٍحَرَامٌ ‘প্রত্যেক নেশাদার দ্রব্য হারাম’।[১] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যার বেশী খেলে মাদকতা আসে, তার অল্পটাও হারাম’।[২] নেশাদার দ্রব্য পানকারীর উপর জান্নাত হারাম ঘোষণা করে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالْدَّيُّوْثُ الَّذِىْ يُقِرُّ فِى أَهْلِهِ الْخَبَثَ

‘তিন শ্রেণীর ব্যক্তির উপর জান্নাত হারাম। যথা : নেশাদার দ্রব্য পানকারী, পিতা-মাতার সাথে অসদ্ব্যবহারকারী এবং দাইয়ূছ, যে তার পরিবারে নোংরামির বিস্তার ঘঠিয়েছে’।[৩] অতএব মাদক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং যাতে করে তরুণ ও যুব সমাজ এই জীবন বিধ্বংসী অস্ত্র মাদকতা থেকে বিরত থাতে পারে, তার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্ণরূপে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার বিকল্প কোন পথ নেই।

(ছ) সাইবার জগতের সাথে সম্পৃক্ততা
আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির চরম উন্নতির যুগে উঠতি বয়সের তরুণ ও যুবকরা সাইবার জগতের সাথে অত্যধিক পরিমাণ সম্পৃক্ত হচ্ছে। সাইবার জগৎ হচ্ছে কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন এবং ইলেক্ট্রনিক্স এর যাবতীয় অংশ বিশেষ। ইন্টারনেট এর জগতটাকেই সাইবার বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে এই সাইবারের মাধ্যমেও অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচলিত হচ্ছে। মূলত সাইবার অপরাধ বা কম্পিউটার অপরাধ এমন একটি অপরাধ, যা কম্পিউটার এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্কিত। আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক, যেমন ইন্টারনেট (চ্যাট রুম, ইমেল, নোটিশ বোর্ড ও গ্রুপ) এবং মোবাইল ফোন (এসএমএস/এমএমএস) ব্যবহার করে, অপরাধমূলক অভিপ্রায়ে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্মানহানি কিংবা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি বা ক্ষতির কারণ হওয়াকে বুঝায়। অনুরূপভাবে ফেইসবুক, ইন্সট্রগ্রাম, ইমেইল, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি অনলাইনের মাধ্যম ব্যবহার করে সাইবার জগতের অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকে। আর এর মাধ্যমে বর্তমানে সন্ত্রাসীরা তাদের সন্ত্রাসের পরিধিটা বিস্তৃত করে নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। দেশ-বিদেশের বিখ্যাত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে পরিচয়ও হচ্ছে অতি সহজে কিংবা দেশে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কাজ পরিচালনা করছে। সাইবারের এ ধরনের অপরাধ একটি জাতির নিরাপত্তা, আর্থিক ও স্বাস্থ্য হুমকি হতে পারে। হ্যাকিং, কপিরাইট লঙ্ঘন, শিশু পর্ণোগ্রাফির মত অপরাধগুলো বর্তমানে উচ্চমাত্রা ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে, রাষ্ট্রীয় বা রাষ্ট্রীয়সত্তা কর্তৃক গুপ্তচরবৃত্তি, আর্থিক প্রতারণা, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ কিংবা অন্তত একটি রাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত এরূপ বিষয়ে হস্তক্ষেপ জনিত সাইবার অপরাধকে সাইবার যুদ্ধ হিসাবে অভিহিত করা হয়। অতএব এ বিষয়ে যথেষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৫,০১,৬০৯ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৩.৫%। অন্যান্য দেশের তুলনায় এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে এই সংখ্যা প্রতি বছর ১৫-১৬% বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু মজার ব্যাপর হল, এদের মধ্যে ২৬,৩১,৫৪০ জনই ফেইসবুক ব্যবহার করে। অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় অর্ধেকই ফেইসবুক ব্যবহার করেন। ব্যবহারকারীদের মধ্যে তরুণ-তরুণীরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ।[৪]

(জ) আইনের শাসন না থাকা
তরুণ সমাজের প্রতি সন্ত্রাসের হিংস্র ছোবলের অন্যতম কারণ হল- আইনের শাসন না থাকা। আইনসম্মত বিচারের বাস্তবতা বর্তমানে অনুপস্থিত। আইন আছে কিন্তু শাসন নেই। আইন হল সমাজের সে সকল নিয়ম যা মানুষের বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। আইনের শাসন বলতে বুঝায়, বিধিবদ্ধ আইন অনুসারে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করা। যখন বিচার ব্যবস্থায় আইনের শাসন না থাকে, তখন আইনের আর কোন মূল্য থাকে না। আইন হয়ে পড়ে মেরুদ-হীন। মেরুদ- ছাড়া মানুষ যেমন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি আইনের শাসন না থাকলে আইনের আর কোন কার্যকারিতা থাকে না। আইনের শাসনের মূলনীতি হল- ‘তুমি যত বড়ই হও না কেন, আইন তোমার ঊর্ধ্বে’। অর্থাৎ আইনের নিকট সকলেই সমান, যার কাছে ধনী-গরীবের কোন মূল্য নেই।

দেশ পরিচালনার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে আইন রয়েছে। আইন রয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, চোরাকারবারীর বিরুদ্ধে, ভেজাল মিশ্রিতকারীদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, পর্ণোগ্রাফির বিরুদ্ধে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে, মানহানীর বিরুদ্ধে ইত্যাদি। এমনকি গুম, খুন, রাহাজানী, হরতাল, ভাংচুর, মানুষ হত্যা প্রভৃতির বিরুদ্ধেও কঠোর আইন করা আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আইনের শাসন নেই।

সুধী পাঠক! যে দেশে কোন রকমের অপরাধ ছাড়াই একজন নাগরিককে বছরের পর বছর কারাগারে আবদ্ধ থাকতে হয়, যে দেশে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়, যে দেশে দুর্নীতির রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, সে দেশে ‘আইনের শাসন’ কথাটির কী অর্থ দাঁড়ায়? এখানেই শেষ নয়, এটা এমন এক দেশ যেখানে উৎকোচ তথা ঘুষ দেয়া-নেয়াকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং যেখানে উৎকোচ দেয়া ছাড়া কোন কিছু নড়ে না। এমনকি অবসর ভাতা উত্তোলনের জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ঘুষ প্রদান করা লাগে। ঠিক অনুরূপভাবে সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসের রাজ্য কায়েম করছে, গ্রেফতারও হচ্ছে, জেলও হচ্ছে। কিন্তু আইনের সাথে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নেতার প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসীরা বেখসুর খালাস হয়ে যাচ্ছে। কী আশ্চর্য দেশ! কী আশ্চর্য় নেতা!

অতএব সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইনের যথাযথ শাসন প্রতিষ্ঠা করা যরূরী।

প্রতিকার সমূহ
প্রথমতঃ ধর্মীয় মূল্যবোধ বৃদ্ধি এবং ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা ও প্রতিপালন করা। ধর্মের ব্যাপারে চরমপন্থা ও ধর্মের অপব্যাখ্যা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা।

দ্বিতীয়তঃ সন্ত্রাসীদের অর্থের সকল উৎস বন্ধের ব্যবস্থা করা। এ ব্যাপারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মুসলিম সংস্থা, সংগঠ ও দেশগুলোর সমন্বিত সামরিক জোটদের সন্ত্রাসীদের অর্থের উৎস বন্ধ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে।

তৃতীয়তঃ চরমপন্থার বিপরীতে ইসলামের চিরন্তন সত্য প্রতিষ্ঠায় সঠিক ইসলামী ধারণার উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে, যা মানব প্রকৃতি ও অভিন্ন মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

চতুর্থতঃ সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি মানুষের কাছ উন্মুক্ত করা। সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের ভিডিও চিত্র ও তার ক্ষতিকর দিকসমূহ প্রকাশ করে জনগণকে সচেতন করতে হবে। অনুরূপভাবে সন্ত্রাসীদের প্রভাব খর্ব করতে তাদের ভিত্তি ধ্বংসের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের প্রচারণা মোকাবেলা করতে হবে। মিডিয়াতে সন্ত্রাসীদের বার্তা প্রচারে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ব্যাপারে সকল তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও কারিগরি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে।

পঞ্চমতঃ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো যাতে সংগঠিত হতে না পারে সে জন্য তাদের শক্তিহীন, ছত্রভঙ্গ, নির্মূল ও সুবিধা বিহীন করতে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দেয়া প্রয়োজন।

ষষ্ঠতঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এলাকায় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কুফলগুলো তুলে ধরে এবং গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সভা, সেমিনার ও মানববন্ধন ইত্যাদির আয়োজন করা যেতে পারে। শিক্ষকগণ অভিভাবকদের বড় অভিভাবক। তাঁরা শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের সময় ছাত্রদেরকে বুঝাবেন, আল্লাহর আইন চালুর নামে যারা সন্ত্রাস করছে, নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সন্ত্রাস করছে তারা আসলে আল্লাহর আইনের দুশমন। ইসলামের শত্রুদের হাতের পুতুল হিসাবেই তারা কাজ করছে। ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই এবং ইসলাম সবসময় নিয়মতান্ত্রিক পন্থাই অনুসরণ করে। এটা স্পষ্ট করতে হবে।

সপ্তমতঃ অভিভাবকগণকে লক্ষ্য রাখতে হবে, সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে এবং কোন্‌ শ্রেণীর লোকদের সাথে মেলামেশা করছে? ইসলামের নামে কোন ব্যক্তি কাউকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করছে কি-না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কে কোন্‌ধরনের বই-পত্র পড়ছে, ফোনে ইশারা-ইঙ্গিতে জাতিসত্তা, সরকার ও দেশের প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোন আলোচনা করছে কি-না এ ব্যাপারে অভিভাবকগণকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া অভিভাবকগণ যদি অনুভব করেন যে, তার সন্তান, ভাই, অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের কেউ অথবা অধীনস্থ লোকদের কেউ ইসলামের লেবাসধারী হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোন সংগঠনের প্রতি সহানুভূতিশীল, তাহলে তাকে প্রকৃত ইসলাম ও ইসলামী দল সম্পর্কে বুঝিয়ে ঐসব সন্ত্রাসবাদী-জঙ্গীবাদী সংগঠনের ছোবল মুক্ত করতে হবে।

অষ্টমতঃ খত্বীব, ইমাম ও বক্তাদেরকে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ‘আল্লাহর আইন চালু’র নামে এবং নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে, এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এটা না করলে আল্লাহর আদালতে সর্বাগ্রে আলেমদেরই জবাবদিহি করতে হবে।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বক্তাগণ কুরআন-হাদীছের আলোকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখবেন এবং ইসলামী জীবন বিধান শ্রোতাদের সম্মুখে তুলে ধরবেন। খত্বীব ও ইমামগণ সপ্তাহে একদিন অর্থাৎ জুমু‘আর দিনে খুৎবায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আলোচনা করে মানুষকে সচেতন করতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে যারা আল্লাহর আইন চালুর নামে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সন্ত্রাস করে পিতা-মাতাকে সন্তানহারা করছে, স্ত্রীকে স্বামীহারা, সন্তানকে পিতা-মাতা হারা, বোনকে ভাই হারা করছে, পরিবারের উপার্জনশীল একমাত্র ব্যক্তিকে হত্যা করে গোটা পরিবারকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করছে, তারা অবশ্যই ইসলাম, মুসলিম, দেশ-জাতি ও সমগ্র মানবতার দুশমন। এমনকি তাদেরকে সন্ধান পাওয়া মাত্র আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফোন করে ধরিয়ে দিয়ে বিচারের সম্মুখীন করার ব্যাপারে সাধারণ জনগণকে সচেতন করা।

নবমতঃ সুন্দর, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় সমাজের জন্য সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ আমাদের নৈতিক ও নাগরিক দায়িত্ব। সবুজ শ্যামল বাংলায় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কলঙ্ক মুছে দিয়ে বাংলাদেশ যাতে বিশ্বের বুকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীমুক্ত শান্তির দেশ হিসাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে এই প্রত্যাশায় সামাজিকভাবে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

হে তরুণ ও যুবসমাজ!
তোমার যৌবনের দুর্জয় সাহস আজ ব্যয়িত হচ্ছে পাশ্চাত্য দর্শন প্রতিষ্ঠায়। রাস্তা-ঘাটে মিছিল-মিটিং, হরতাল-অবরোধ, গাড়ী ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ সহ যাবতীয় অন্যায় অপকর্মে আজ তরুণ শক্তিই ব্যয়িত হচ্ছে! হে তরুণ সমাজ! নেতা-নেত্রীদের মিথ্যা আশ্বাস-প্রলোভনের অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছ তো তোমরাই, তুমিই তো ব্যাংক ডাকাতি করে থাক! চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই-চাঁদাবাজী তো তোমার মাধ্যমেই সংঘটিত হচ্ছে! অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা আর বেলেল্লাপনা তো তোমাকে দিয়েই করানো হয়ে থাকে! দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ২২টি বেশ্যালয় তো তোমার জন্যই উন্মুক্ত করা হয়েছে!! মেয়েদের শ্লীলতাহানী, ইভটিজিং, ধর্ষণ তো তোমরাই করছ! বিড়ি-সিগারেট, মদ-ফেনসিডিল, হিরোইন, ইয়াবার মত নেশার মরণ ছোবলে তো আজ তোমরাই শিকার হয়েছ!! ইন্টারনেটে, ফেইসবুকে, ইউটিউবে, টুইটারে তো তোমারই পদচারণা সবচেয়ে বেশী! ব্লু ফ্লিম ও নগ্ন-অর্ধনগ্ন ভিডিওর দর্শক তো তুমিই!! তোমাকেই তো ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, হকি প্রভৃতি খেলাতে ব্যস্ত রাখা হয়েছে! তোমার তেজদীপ্ত খুনরাঙ্গা পথ ও আপোসহীন চেতনা থেকে বিরত রাখার জন্যই তো পাশ্চাত্য ইহুদী, খ্রিষ্টান ও ব্রাক্ষ্মাণ্যবাদী গোষ্ঠী উক্ত পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তোমাকে জড় পদার্থে পরিণত করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করছে। অতএব হে যুবক! তাকিয়ে দেখ ইসলামের সুমহান আদর্শের পানে। মুক্তির হাতছানি দিয়ে ডাকছে তোমাকে জান্নাত অভিমুখে, তাহলে কেন তুমি পড়ে থাকবে প্রজ্জ্বলিত হুতাশনে!!!

যৌবনের শক্তিমত্তা, তারুণ্যের উদ্দীপ্ততা, উন্নত মানসিকতা, অজেয় শক্তির অধিকারী তরুণ সমাজই জাতির একমাত্র কর্ণধার। তরুণ তো তারাই, যাদের ব্যাঘ্র হুংকারে বাতিল শক্তির মসনদ প্রকম্পিত হয়, মানুষরূপী পশুদের হৃদয়তন্ত্রীকে ভীত সন্ত্রস্ত করে, যাবতীয় অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোসহীন থাকে, সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণ করে হক্বের উপর দৃঢ়পদে অটল থাকে, যেকোন প্রলোভনে তারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয় না, দুর্নীতি-দুরাচার, অত্যাচার-লুণ্ঠন, গুম-খুন-হত্যার বিরুদ্ধে সর্বদা আপোসহীন অবস্থান গ্রহণ করে, অসত্য ও অন্যায়কে শক্তহাতে দমন করে এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সংগ্রাম করে। তাই তো তারুণ্য বয়সের ফ্রেঁমে বাধা কোন নির্দিষ্ট সময়ের শক্তিমত্তা নয়, বরং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত উন্নত চেতনা, উদারতা, সাহসিকতা, উৎসাহ-অনুপ্রেরণার দিগি¦জয়ী সংগ্রামের এক পথ-পরিক্রমাই তারুণ্য। অতএব হে তরুণ সমাজ! তোমার এই শক্তিমত্তা কি আজ ভোঁতা হয়ে গেছে? তুমি কি কাপুরুষের মত ভীত-সন্ত্রস্ত, না-কি ইবলীস শয়তানের এজেন্টে পরিণত হয়েছ? জেগে ওঠ, অলসতা ছুড়ে ফেল, এগিয়ে চল সম্মুখ পানে। সকল ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে সত্য সংগ্রামে বীরদর্পে ঝাঁপিয়ে পড়। শাহাদতের অমীয় সুধা জান্নাতের সুখ কানন তোমার জন্য প্রস্তুত রয়েছে! তোমার শঙ্কা কিসের? তুমি তো তরুণ নওজোয়ান, বৃদ্ধ-অচল-অসাড় নয়!!

উপসংহার
তরুণ ও যুবসমাজ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। দেশের আশা-ভরসার স্থল। দেশ ও জাতিকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য যথার্থ শিক্ষার মাধ্যমে জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে রূপান্তর করতে তরুণ সমাজই একমাত্র ভরসা। মুসলিম জাতির গৌরবময় ইতিহাস ও সোনালী দিন আনয়নে তরুণ সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে তরুণ সমাজই সন্ত্রাসের হিংস্র ছোবেল আক্রান্ত। আবার জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সর্বাগ্রে এই তরুণ ও যুবসমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!


* পি-এইচ.ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩৪৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৩; মিশকাত, হা/৪৫০৩।
[২]. وَمَا أَسْكَرَ كَثِيْرُهُ فَقَلِيْلُهُ حَرَامٌ -ইবনু মাজাহ, হা/৩৩৯২; দারাকুৎনী, হা/৪৬৮৯, সনদ ছহীহ।
[৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩৭২; মিশকাত, হা/৩৬৫৫; সনদ হাসান, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩৬৬।
[৪]. https://blog.bdnews24.com/shattik/118409




প্রসঙ্গসমূহ »: যুবসমাজ শিষ্টাচার
যুলমের পরিচয় ও পরিণাম - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
কুরবানীর মাসায়েল - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রামাযানে দাওয়াতী কাজের গুরুত্ব ও প্রভাব - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
ইসলামী শিষ্টাচার - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব - আব্দুল গাফফার মাদানী
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১৩তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১১তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সুন্নাতের রূপরেখা (৩য় কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৩য় কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির

ফেসবুক পেজ