মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন

 ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ১১ রাক‘আতের নির্দেশ দিয়েছিলেন

- ব্রাদার রাহুল হোসেন (রুহুল আমিন)*


(শেষ কিস্তি)

এবার দেখুন নিজেদের ঘরের অবস্থা

যারা মুওয়াত্ত্বা মালেকের হাদীছের মত শক্তিশালী একটি রেওয়ায়েতকে ইযতিরাবের দোহাই দিয়ে প্রত্যাখ্যান করতে চান, তারাই আবার নিজেদের বেলায় হলে এই উছূল প্রয়োগ করতে একদম ভুলে যান। তারা বলেন, তারাবীহ সংক্রান্ত বিশ রাক‘আতের রেওয়ায়েতগুলোই বেশি শক্তিশালী। অথচ কোথাও এটি বিশ রাক‘আত[১], কোথাও একুশ রাক‘আত[২], আবার কোথাও তেইশ রাক‘আত।[৩] এখানে উনারা মর্জিমত তাতবীক্ব দিয়ে থাকেন, কিন্তু ইযতিরাবের নাম গন্ধও উল্লেখ করেন না। আচ্ছা! যদি বিশ, একুশ, তেইশ এর মধ্যে তাতবীক্ব সম্ভব হয়, তাহলে এগারো আর তের এর মধ্যে কেন সম্ভব নয়? মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক্ব তো তারাবীহর সাথে এশার দুই রাক‘আত সুন্নাতের কথা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন। তারপরেও এগারো আর তের সাংঘর্ষিক, অথচ এক রাক‘আত বিতরকে অস্বীকার করেও বিশ আর একুশ সাংঘর্ষিক নয়? এ কেমন বিচার?

সাক্ষী আপনাদের ঘরে

আল্লামা শওক নিমভী হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) ইমাম মালেকের রেওয়ায়েত এবং ইবনু ইসহাক্বের রেওয়ায়েতের মধ্যে তাতবীক্ব/সমন্বয় সাব্যস্ত তো করেছেন, সাথে সাথে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্বের হাদীছকে ইমাম মালেকের মুতাবে‘ হিসাবে পেশ করেছেন। তিনি বলেন-

لأن مالكاً قد تابعه عبد العزيز بن محمد عند سعيد بن منصور في سننه، ويحيى بن سعيد القطان عند أبي بكر بن أبي شيبة في مصنفه كلاهما عن محمد بن يوسف، وقالا إحدى عشرة ركعة، كما رواه مالك عن محمد بن يوسف. وأخرج محمد بن نصر المروزي في قيام الليل من طريق محمد بن إسحاق حدثني محمد بن يوسف عن جده السائب بن يزيد، قال: كنا نصلي في زمن عمر في رمضان ثلاث عشرة ركعة- قال النيموني: هذا قريب مما رواه مالك عن محمد بن يوسف أي مع الركعتين بعد العشاء

‘যেহেতু ইমাম মালেকের মুতাবা‘আত আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ করেছেন। যেমন এসেছে সুনানে সাঈদ বিন মনছূরে। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান (রাহিমাহুল্লাহ)ও ইমাম মালেকের মুতাবা‘আত রেওয়ায়েত করেছেন। যেমনটি এসেছে মুছান্নাফে ইবনু আবী শায়বাহতে। সুতরাং আব্দুল আযীয ইবনু মুহাম্মাদ এবং ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান উভয় ইমামই (ইমাম মালেকের উস্তাদ) ইমাম মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ থেকে একই রেওয়ায়েত নকল করেছেন এবং উভয়েই এগার রাক‘আতের কথা উল্লেখ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ ইবনু নছর আল-মারওয়াযী (রাহিমাহুল্লাহ)ও তদীয় ‘ক্বিয়ামুল লাইল’ গ্রন্থে মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ থেকে একই সনদে রেওয়ায়েত করেছেন। তিনি বলেন, আমাকে মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ হাদীছ বলেছেন, তিনি ছাহাবী সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে, সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমরা ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে তের রাক‘আত তারাবীহ পড়তাম। আল্লামা নিমভী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন- এটা সেই মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ থেকে রেওয়ায়েতকৃত ইমাম মালেকের রেওয়ায়েতের মতই, অর্থাৎ এখানে এশার দুই রাক‘আত সুন্নাত সহ বলা হয়েছে’।[৪]

তারপরেও যদি মনে করেন যে, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর হাদীছ আর ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ)-এর হাদীছের মধ্যে তাতবীক্ব সম্ভব নয়, তাহলে এটা তো মেনে নিতে হবে যে, মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্বের রেওয়ায়েত ইমাম মালেকের রেওয়ায়েতের বিপরীত। তো এ ক্ষেত্রেও মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব (রাহিমাহুল্লাহ)-এর হাদীছকে শায (যঈফ) বলে মেনে নিতে হবে। কেননা ইবনু ইসহাক্ব ছিক্বাহ ও মাক্ববূল হলেও তার তুলনায় ইমাম মালেক আরো বেশি আওছাক্ব ও আহফায। যখন কোন মাক্ববূল রাবী তার চেয়েও অধিক মাক্ববূল রাবীর বিপরীতে হাদীছ বর্ণনা করেন, তখন সেই হাদীছকে মুহাদ্দিছগণ ‘শায’ বলে থাকেন।

এছাড়াও যেখানে ইমাম মালেকের রেওয়ায়েতের অনুকূলে পাঁচজন রাবীর মুতাবা‘আত রেওয়ায়েত মওজুদ আছে, যাঁদের মধ্যে ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মত যবরদস্ত রাবী শরীক রয়েছেন, সেখানে আবশ্যিকভাবে ইমাম মালেকের রেওয়ায়েত রাজেহ তথা অগ্রগণ্য হবে, পক্ষান্তরে ইবনু ইসহাক্বের রেওয়ায়েত শায ও মারজুহ তথা শিথিল সাব্যস্ত হবে। তবে আমাদের নিকট তাতবীক্বই উত্তম। তাছাড়া আহনাফগণ তো ইমাম মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক্ব (রাহিমাহুল্লাহ)-কে ছিক্বাহ মানতেও নারাজ, তাহলে ইবনু ইসহাক্বের রেওয়ায়েতের সাথে ইমাম মালেকের মত দিকপাল রাবীর রেওয়ায়েতকে তুলনা করা আর সেটাকে মুযতারাব বলা আহমকী বৈ আর কী?

মালেক (রাহিমাহুল্লাহ)-এর রেওয়ায়েতের অনুকূলে মুতাবা‘আত রেওয়ায়েত সমূহ : ১. ইসমাঈল ইবনু উমাইয়্যাহ ইবনু আমর (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৪৪), ২. উসামা ইবনু যায়িদ আল-লাইছী আল-মাদানী (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৫৩), ৩. ইসমাঈল ইবনু জা‘ফর ইবনু আবী কাছীর আল-আনছারী (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৮০), ৪. আব্দুল আযীয ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৮৬), ৫. ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৯৮), ৬. ইমামুল মাগাযী মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৫০)।

মুতাবা‘আত-১ : ইসমাঈল বিন উমাইয়্যাহ বিন আমর বিন সাঈদ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে- ইমাম আবূ বাকর নিশাপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ৩২৪) বর্ণনা করেন-

حدثنا يوسف بن سعيد ثنا حجاج عن ابن جريج حدثني اسماعيل بن امية ان محمد بن يوسف ابن اخت السائب بن يزيد اخبره ان السائب بن يزيد اخبره قال جمع عمر بن الخطاب الناس علي ابي بن كعب و تميم الداري فكانا يقومان بمائة في ركعة فما ننصرف حتي نرا او نشك في فروع الفجر قال فكنا نقوم باحد عشر

এখানে ইউসুফ ইবনু সাঈদ ব্যতীত প্রত্যেকেই ছহীহায়নের রাবী। ইউসুফ ইবনু সাঈদ তিনিও ছিক্বাহ। ইবনু জুরায়েয মুদাল্লিস, তবে এখানে তার তাহদীস সুস্পষ্ট। সুতরাং সনদ ছহীহ।[৫]

মুতাবা‘আত-২ : উসামা ইবনু যায়িদ আল লাইছী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে- ইমাম আবূ বাকর নিশাপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেন,

حدثنا الربيع بن سليمان ثنا ابن وهب حدثني اسامة بن زيد عن محمد بن يوسف عن السائب بن يزيد قال جمع عمر بن الخطاب الناس في قيام رمضان علي ابي بن كعب و تميم الداري كانا يقومان احد عشرة ركعة

সনদের প্রত্যেক রাবী ছিক্বাহ। কাজেই এর সনদ ছহীহ।[৬]

মুতাবা‘আত-৩ : ইসমাঈল ইবনু জাফর ইবনু আবি কাছীর আল-আনছারী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে- আলী ইবনু হুজর ইবনু আয়্যাস আস-সা‘আদী (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ২৪৪) বর্ণনা করেন-

(حدثنا اسماعيل حدثنا محمد بن يوسف بن عبد الله بن يزيد الكندي عن السائب بن يزيد انهم كانوا يقومون في زمن عمر بن الخطاب باحدي عشرة ركعة يقرءون في الركعة با لمائتين حتي انهم ليعتمدون بالعصي (احاديث اسماعيل بن جعفر

বর্ণনাটি ছহীহ বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সনদ ছহীহ।[৭]

মুতাবা‘আত-৪. আব্দুল আযীয ইবনু মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে- ইমাম সাঈদ ইবনু মানছূর (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ২২৭) বর্ণনা করেন-

حدثنا عبد العزيز ابن محمد حدثني محمد بن يوسف سمعت السائب بن يزيد يقول : كنا نقوم في زمان عمر ابن الخطاب بإحدى عشرة ركعة نقرأ فيها بالمئين ونعتمد على العصي من طول القيام وننقلب عند بزوغ الفجر (الحاوي للفتاوي-১/৩৩৭ المصابيح للسيوطي-ص/৩৮.

সনদ ছহীহ। আল্লামা সুবকী (রাহিমাহুল্লাহ) এই রেওয়ায়েতের সনদ সম্পর্কে বলেন- وفي مصنف سعيد بن منصور بسند في غاية الصحة ‘মুছান্নাফে সাঈদ ইবনে মানছূরে এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের ছহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে’।[৮]

মুতাবা‘আত-৫. ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে- ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ২৩৫) বর্ণনা করেন-

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ الْقَطَّانُ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوْسُفَ أَنَّ السَّائِبَ أَخْبَرَهُ أَنَّ عُمَرَ جَمَعَ النَّاسَ عَلَى أُبَيٍّ وَتَمِيْمٍ فَكَانَا يُصَلِّيَانِ إحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يَقْرَآنِ بِالْمِئِيْنَ يَعْنِيْ فِيْ رَمَضَانَ. (مصنف ابن ابي شيبة-ح/৭৭৫৩)

ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) উবাই এবং তামীম আদ দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে সাথে নিয়ে লোকদের সাথে রামাযানে ১১ রাক‘আত ক্বিয়াম আদায় করতেন, প্রতি রাক‘আতে ২০০ আয়াত তেলাওয়াত হত।[৯]

সনদ বিশ্লেষণ

ছাহাবী সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ। মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ থেকে তাবি' করেন মালিক ইবনু আনাস, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল ক্বাত্ত্বান, ইসমাঈল ইবনে জা‘ফার। এখানে সবাই দলীল, সবাই নির্ভরযোগ্য, শক্তিশালী। অতএব সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে ১১ রাকা‘আত ক্বিয়ামে রামাযান এর হাদীছ বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত।

ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যামানায় ১১ রাক‘আত পড়া হত

ছাহাবী আস-সায়েব ইবনু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, كُنَّا نَقُوْمُ فِيْ زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ‘আমরা (ছাহাবীগণ) ওমর বিন খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে এগার রাক‘আত পড়তাম’।[১০]
তাহক্বীক্ব : এই রেওয়ায়াতের সকল রাবী জমহূর বিদ্বানের নিকটে নির্ভরযোগ্য ও সত্যবাদী। জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (মৃ. ৯১১ হি.) এই রেওয়ায়াত সম্পর্কে লিখেছেন, وَفِيْ مُصَنَّفِ سَعِيْدِ بْنِ مَنْصُوْرٍ بِسَنَدٍ فِيْ غَايَةِ الصِّحَّةِ ‘আর এটা (এগারো রাক‘আতের বর্ণনাটি) মুছান্নাফ সাঈদ বিন মানছূরের মধ্যে অত্যন্ত ছহীহ সনদের সাথে রয়েছে’।[১১] সুতরাং প্রমাণিত হয়েছে যে, এগারো রাক‘আত ক্বিয়ামে রামাযান (তারাবীহ)-এর উপর ছাহাবায়ে কেরামের ইজমা আছে। আল্লাহ তাদের সবার উপর সন্তুষ্ট  হোন।

মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ (মৃ. ২৩৫ হি.) গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, أَنَّ عُمَرَ جَمَعَ النَّاسَ عَلَى أُبَيٍّ وَتَمِيْمٍ فَكَانَا يُصَلِّيَانِ إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ‘নিশ্চয় ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)  লোকদেরকে  উবাই (বিন কা‘ব) ও তামীম (আদ-দারী) (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর ইমামতিতে একত্রিত করেছেন। তাই উভয়ই এগারো রাক‘আত পড়াতেন’।[১২] 
হাদীছটির সনদ ছহীহ। এর সকল রাবী ছহীহ বুখারী ও মুসলিমের রাবী এবং ইজমানুপাতে আস্থাভাজন।

২০ রাক‘আত তারাবীহর ১ নং দলীলের তাহক্বীক্ব

عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيْدٍ أَنَّ عُمَرَ بْنِ الخَّطاَّبَ اَمَرَ رَجُلًا يُصَلِّىْ بِهِمْ عِشْرِيْنَ رَكْعَةً

ইয়াহইয়া বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এক ব্যক্তিকে ২০ (বিশ) রাক‘আত পড়ার হুকুম দিলেন।[১৩]

তাহক্বীক্ব : হাদীছ মুনক্বাতি‘ হওয়ার কারণে যঈফ। ইমাম হাজাম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيْدٍ وَلَمْ يُولَدْ إلَّا بَعْدَ مَوْتِ عُمَرَ بِنَحْوِ خَمْسٍ وَعِشْرِيْنَ سَنَةً

‘ইয়াহিয়া বিন সাঈদ (রাহিমাহুল্লাহ) ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যুর ২৫ বছর পরে জন্মগ্রহণ করেছেন’।[১৪] ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

يحيى بن سعيد بن قيس الأنصاري المدني أبو سعيد القاضي ثقة ثبت من الخامسة مات سنة أربع وأربعين أو بعدها

‘ইয়াহিয়া বিন সাঈদ ছিক্বাহ এবং ছাবিত পঞ্চম স্তরের রাবি ১৪৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছেন’।[১৫] নিমাভী হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ...لكن يحي بن سعيد الأنصاري لم يدرك عمر ‘আমি বলছি এই সনদের সকল রাবী ছিক্বাহ কিন্তু ইয়াহিয়া বিন সাঈদ ওমর (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জামানা পায়নি। এই সনদ মুনক্বাতি’।[১৬] মুহাদ্দিছ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, এই সনদ মুনক্বাতি তথা বিচ্ছিন্ন।[১৭]

হাফিয যুবায়ের আলী যাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই সনদ মুনক্বাতী’।[১৮] (৬) আলী ইবনুল মাদানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ইয়াহিয়া বিন সাঈদ (রাহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছাড়া কাউকেই পায়নি।[১৯] নাছিরুদ্দীন চাঁদপুরী দেওবন্দী লিখেছেন, ইয়াহিয়া বিন সাঈদ ১৪৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে সাক্ষাৎ প্রমাণিত নয়।[২০]

মুকাল্লিদ ভাইদের বলছি এমন স্পর্শ কাতর মাসআলায় সূত্র বিচ্ছিন্ন মুনক্বাতি দলীল দেয়া কোন ধরণের দ্বীনের খেদমত? এরপরও এই বর্ণনা মুওয়াত্ত্বা মালিকের ১১ রাক‘আতের হাদীছের বিরোধী।[২১]

২০ রাকআত তারাবীহর ২ নং দলীলের তাহক্বীক্ব

عن يزيد بن رومان أنه قال : كان الناس يقومون في زمان عمر بن الخطاب في رمضان بثلاث وعشرين ركعة

ইয়াযীদ ইবনু রূমান বলেন, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে লোকেরা রামাযান মাসে ২৩ রাক‘আত ছালাত আদায় করত।[২২]

তাহক্বীক্ব : এই হাদীছ মুনক্বাত্বি সুত্র-বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে যঈফ। ইমাম বায়হাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ويزيد بن رومان لم يدرك عمر ‘ইয়াযীদ ইবনু রূমান (রাহিমাহুল্লাহ) ওমর ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর যুগ পায়নি’। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لكنه مرسل فان يزيد بن رومان لم يدرك عمر ‘কিন্তু এই সনদ মুরসাল (সনদের সূত্র বিচ্ছিন্ন) ইয়াযীদ ইবনু রূমান (রাহিমাহুল্লাহ) ওমর ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগ পাননি।[২৩] আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, أما أثر عمر رضي الله تعالى عنه فرواه مالك في ( الموطأ ) بإسناد منقطع ‘ওমর ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) উক্ত হাদীছ ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) মুওয়াত্তাতে মুনক্বাতি (বিচ্ছিন্ন) সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন’।[২৪]

নীমভী হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, قلت يزيدبن رومان لم يدرك عمربن الخطاب ‘আমি বলছি ইয়াযীদ ইবনু রূমান ওমর ইবনু খাত্তাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যুগ পায়নি’।[২৫] আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘উক্ত হাদীছের সনদে বিচ্ছিন্নতা আছে’।[২৬] হাফীয যুবায়ের আলী যাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘উক্ত সনদ মুনক্বাতি’।[২৭] এ ধরনের আরো অনেক মন্তব্য রয়েছে।

২০ রাক‘আত তারাবীহর ৩ নং দলীলের তাহক্বীক্ব

وقال محمد بن كعب القرظي كان الناس يصلون في زمان عمر بن الخطاب رضي الله عنه في رمضان عشرين ركعة يطيلون فيها القراءة ويوترون بثلاث

মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব আল-কুরজী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যামানায় লোকেরা রামাযান মাসে ২০ রাক‘আত তারাবীহ এবং ৩ রাক‘আত বিতর পড়ত।[২৮]

তাহক্বীক্ব : এই হাদীছের সনদ ইনক্বিতা হওয়ায় কারণে যঈফ। তথা এটাও বিচ্ছিন্ন সনদ। মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব কুরজী (রাহিমাহুল্লাহ) ওমর ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যামানার পায়নি। ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, محمد بن كعبৃৃ ولد سنة أربعين على الصحيحৃৃ مات محمد سنة عشرين وقيل قبل ذلك ‘মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব কুরজী (রাহিমাহুল্লাহ) জন্ম গ্রহণ করেন ৪০ হিজরীতে এবং মৃত্যু ১২০ হিজরীতে’।[২৯] অথচ ওমর ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মৃত্যু ২৩ হিজরীতে।[৩০]

অতএব ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মৃত্যুর ১৩ বছর পরে মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব কুরজী (রাহিমাহুল্লাহ) জন্মগ্রহণ করেছেন। সুতরাং এই হাদীছ কী ভাবে ছহীহ হতে পারে!!

২০ রাক‘আত তারাবীহ ৪ নং দলীলের তাহক্বীক্ব

حدثنا علي أنا بن أبي ذئب عن يزيد بن خصيفة عن السائب بن يزيد قال : كانوا يقومون على عهد عمر في شهر رمضان بعشرين ركعة وإن كانوا ليقرءون بالمئين من القرآن

সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে রামাযান মাসে লোকজন বিশ রাক‘আত তারাবীহ পড়তেন এবং তারা (প্রতি রাক‘আতে) একশ’ আয়াত করে তেলাওয়াত করতেন’।[৩১]

তাহক্বীক্ব : ২০ রাক‘আত তারাবীহ ওমর ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর দিকে যতগুলো হাদীছ উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে এই হাদীছটি সব চেয়ে মজবুত। কিন্তু  হাদীছটি শায হওয়ার কারণে যঈফ।   

শায হওয়ার প্রথম কারণ : হাদীছের রাবী ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ), যিনি ছাহাবী সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে এটি রেওয়ায়েত করেছেন। তিনি নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, প্রকৃত রাক‘আত সংখ্যার ব্যাপারে তিনি সন্দিহান ছিলেন। তিনি বলেন, আমার মনে হয় সায়িব বিন ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে একুশ রাক‘আতের কথা বলেছিলেন।[৩২] বুঝা যাচ্ছে তিনি নিজেই সন্দিহান ছিলেন।

লক্ষ্য করুন!

১). যখন রাবী ইসমাঈল ইবনু উমাইয়্যাহ স্বীয় উস্তাদ মুহাম্মাদ ইবন ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, ঐ রাক‘আত সংখ্যাটা কি এগারো হবে, না-কি একুশ? মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) ওটাকে একুশ রাক‘আত বলেছেন। তারপর ইসমাঈল ইবনু উমাইয়্যাহ সরাসরি এ বিষয়ে ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) কেই প্রশ্ন করেন। আর ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার মনে হয় সায়িব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে একুশ রাক‘আতের কথা বলেছিলেন। এই যে আমার মনে হয় (حسبت) কথাটি দ্বারা কি এই কথা প্রমাণিত হয় না যে, তিনি সেটা ভালোভাবে মনে রাখতে পারেননি? অথবা ভুলে গিয়ে পরে সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন? তা নাহলে তিনি نعم ان السائب قال كذا ‘হ্যাঁ, সায়িব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে এমনটাই বলেছিলেন, না বলে حسبت ان السائب قال احد وعشرون ‘আমার মনে হয় সায়িব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে একুশ রাক‘আতের কথা বলেছিলেন কেন বলবেন?

২). যদি এখানে মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) ভুল করতেন তাহলে তিনি অবশ্যই স্মরণ করিয়ে দেবার পর এগারো রাক‘আত বলা থেকে ফিরে আসতেন। উপরন্তু তিনি তাঁর সাতজন ছাত্রকে ঐ এগারো রাক‘আতই বলেছেন। যারা যারা সরাসরি ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বিনা মতানৈক্যে এগারো রাক‘আত ওয়ালী হাদীছ রেওয়ায়েত করেছেন তাঁরা হলেন-

. ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৭৯) ২. ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল কাত্তান (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৯৮) ৩. ইসমাঈল ইবনু উমাইয়্যাহ ইবনু আমর (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৪৪) ৪. আব্দুল আযীয ইবনু মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৮৬) ৫. ইসমাঈল ইবনু জাফর ইবনু আবি কাছির আল-আনছারী (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৮০) ৬. ইমামুল মাগাযী মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক্ব (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৫০) এবং ৭. উসামা ইবনু যায়িদ আল-লাইছী আল-মাদানী (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৫৩)। সুতরাং বলা যায়, মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) নিশ্চিতভাবে এগারো রাক‘আতের কথাই জানতেন এবং ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) রাক‘আত সংখ্যার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন না, বরং সন্দিহান ছিলেন।

শায হওয়ার দ্বিতীয় কারণ : ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) স্মরণ ও সংরক্ষণে ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর তুলনায় অধিক শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য ছিলেন। কেননা মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর স্মরণশক্তির ব্যাপারে কোন ইমামে মুহাদ্দিছ জারাহ (সমালোচনা) পেশ করেননি। পক্ষান্তরে ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর স্মরণশক্তির ব্যাপারে জারাহ রয়েছে। যেমন-

* আবুল হাজ্জাজ মিয্যী (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় ‘তাহযীবুল কামাল’ গ্রন্থে এবং ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় ‘মীযানুল ই’তিদাল’ গ্রন্থে উক্ত রাবী সম্পর্কে উল্লেখ করেন, عن أبي داود قال احمد منكر الحديث ‘ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে, ইমাম আহমদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনি মুনকারুল হাদীছ’।[৩৩] উল্লেখ্য, ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ২৪১) রাবীর কারণে মুনকার বলেননি, মুনকার বলেছেন রেওয়ায়েতে একক হওয়ার কারণে। ইমাম ইবনে হিব্বান (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ৩৫৪ হি.) বলেন, وكان يهم كثيرا إذا حدث من حفظه ‘তিনি যখন মুখস্থ কোন হাদীছ বর্ণনা করতেন তখন অনেক বেশি ভুলের শিকার হতেন’।[৩৪]

জ্ঞাতব্য : এখানে ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে দুর্বল প্রমাণ করার জন্য এই জারাহ পেশ করা হয়নি। বরং এটা বুঝানো হয়েছে যে তিনি ছিক্বাহ (নির্ভরযোগ্য), তবে মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফের চেয়ে স্মরণশক্তিতে শক্তিশালী নন। যেমন দুইজন মেধাবী ছাত্রের ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে এই ছাত্রের তুলনায় ঐ ছাত্র আরো বেশি মেধাবী। অর্থাৎ দু’জনই মেধাবী। সেজন্য ছহীহাইনে দু’জনেরই জায়গা হয়েছে।

শায হওয়ার তৃতীয় কারণ : ছাহাবী সায়িব ইবছু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) এগারো রাক‘আত সংক্রান্ত যে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, তাতে সরাসরি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অমুক অমুককে এগারো রাক‘আত তারাবীহ পড়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। পক্ষান্তরে ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর হাদীছে ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন- ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে লোকজন বিশ রাক‘আত তারাবীহ পড়ত। সত্যতা যাচাই ও নির্ভরতার দিক থেকে ইতিহাসের চেয়ে সরাসরি ঘটনা অগ্রাধিকার পাবার দাবিদার। কেননা যিনি ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি ঐ ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী। পক্ষান্তরে ইতিহাস বর্ণনাকারী সাক্ষী হতে পারেন না।

এছাড়াও ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর উক্ত রেওয়ায়েতটি আম্মাজান আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে ছহীহ বুখারীতে হা/২০১৩ বর্ণিত এগারো রাক‘আত ওয়ালী হাদীছ, ছহীহ ইবনে খুযাইমাহ হা/১০৭০ ও ছহীহ ইবনে হিব্বানে হা/২৪০১ বর্ণিত জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বিতর ব্যতীত আট রাকাআতের হাদীছ এবং ইত্তেহাফুল খিয়ারাহ গ্রন্থে বর্ণিত উবাই ইবনু কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আট রাকাআতের হাদীছ সমূহের বিপরীত। যেগুলো মারফূ‘ তথা হাদীছে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আর যেহেতু ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর রেওয়ায়েতটি মাওকূফ তথা আছারে ছাহাবা (রাযিয়াল্লাহু আনহু), তাই হানাফীদের উছূল অনুযায়ীও এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ খোদ হানাফীরাও মারফূ‘র বিপরীতে মওকূফ গ্রহণ করে না। অর্থাৎ হানাফীদের নিকট ছাহাবীদের কথা ও আমল হুজ্জত নয়।

শায এর পারিভাষিক অর্থ أن الشاذ ما رواه المقبول مخالفا لما رواه من هو أولى منه ‘কোন গ্রহণযোগ্য রাবী কর্তৃক তার থেকে অধিক শক্তিশালী রাবীর বিপরীত হাদীছ রিওয়ায়াত করাকে শায বলা হয়’।[৩৫] অর্থাৎ,কোন সিক্বাহ রাবী তার থেকে অধিক সিক্বাহ রাবীর বিপরীত রিওয়ায়াত করলে,সেটা শায বলে গণ্য হবে।

হুকুম : শায হাদীছ হচ্ছে মারদূদ (প্রত্যাখ্যানযোগ্য)। তার বিপরীত মাহফূয হাদীছ হচ্ছে মাক্ববূল (গ্রহণীয়)।[৩৬] অর্থাৎ যিনি কম ছিক্বাহ রাবী তার হাদীছ শায বিধায় তা মারদূদ (প্রত্যাখ্যানযোগ্য)। আর যিনি অধিক ছিক্বাহ রাবী তার হাদীছ মাহফূয বিধায় তা মাক্ববুল (গ্রহণযোগ্য)। হানাফীদের উছূলের ভিত্তিতে হাদীছটি আমলযোজ্ঞ নয়। যেমন-

১). শাইখুল হাদীছ মাহমুদ উল হাসান দেওবন্দী বলেন, ‘যখন এটা সাহাবীদের কর্ম, তখন সেটা হুজ্জাহ/দলীল নয়’।[৩৭] উক্ত কিতাবের অন্য স্থানে তিনি বলেন, ‘এই কথাটি ছাহাবীর, যা হানাফীদের নিকট দলীল হতে পারে না’।[৩৮]

২). খলিল আহমদ সাহারানপুরী লিখেছেন, وهو مذهب صحابي لا يقوم به حجة علي أحد ‘এবং এটি হল ছাহাবীর মাযহাব, যা কারোর জন্য দলীল/হুজ্জাহ নয়’।[৩৯]

৩). আশরাফ আলী থানভীর বিশিষ্ট খলীফা আব্দুল মজিদ দরিয়াবাদী লিখেছেন, زلات اور خطا اجتہادی سے صحابہ تک خالی نہیں۔ چہ جائیکہ بزرگ جو ان سے بہر صورت کم تر ہیں۔ ‘এমনকি ছাহাবীগণ পর্যন্ত ভুলত্রুটি থেকে মুক্ত নন, সেখানে ধার্মিক ব্যক্তিগণ তো যেকোনভাবে তাদের থেকেও নিচে’।[৪০]

৪). সরফরায খান সফদর কারমাঙ্গি গাখরাভি লিখেছেন, ‘উবাদাহ বিন সামিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এটি সঠিক ভাবে বুঝতে পারুন আর না পারুন, এটা সত্যি যে উবাদাহ বিন সামিত ইমামের পিছনে মুক্তাদি সূরা ফাতিহা পাঠ করবে সে মতের একজন ছিলেন। তাছাড়া এটা ছিল তাঁর নিজস্ব গবেষণা/ইজতিহাদ এবং নিজস্ব মাসলাক তথা মাযহাব, কিন্তু একজন ছাহাবীর বুঝ অথবা একজন ছাহাবীর মাওকূফ দলীল নয়’।[৪১]

তিনি আরো বলেন, ‘ আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর রেওয়ায়েত যেটি মুবারকপুরী সাহেব শুধু সূরা ফাতিহা পড়ার যথার্থতার দলীলরূপে উপস্থাপন করেছেন, তা এই ব্যাপারে কোন দলীল সাব্যস্ত হতে পারে না, কারণ এটা আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মাওকূফ বর্ণনা, যা কোন মারফূ‘ ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়নি’।[৪২] তিনি অন্য আরেক স্থানে লিখেন, ‘নিশ্চিতভাবে, আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মত এটা নয় যে মৃত ব্যক্তি শুনতে পারে, তবে আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কালিমা পড়েছি এবং তিনি বলেছেন যে মৃতরা শুনতে পায়, সুতরাং কার কথা আমাদের গ্রহণ করা উচিত রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর, না আয়িশার’?[৪৩]

৫). সাইয়িদুনাহ আবূ হুরায়য়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ফজরের ছালাতে কুনূত পড়তেন। এই সত্য কথাটির উপর মন্তব্য করতে গিয়ে ‘শাইখুল হাদীছ’ মুহাম্মদ তাকী উসমানী লিখেন, “এই বর্ণনাটি মাওকূফ, তাই এতে কোন দলীল নেই’।[৪৪] মুহাম্মদ তাকী উসমানী আরো বলেন,

لہٰذا اس کا صحیح جواب یہ ہے کہ یہ حضرت ابن عمر کا اپنا عمل اور اجتہاد ہے، احادیث مرفوعہ میں اس تفریق کی کوئی بنیاد مروی نہیں، نیز صحابی کا اجتہاد حجت نہیں، خاص طور سے جبکہ اس کے بالمقابل دوسرے صحابہ کے آثار اس کے خلاف موجود ہوں۔

‘অতএব, এর সঠিক উত্তর হল যে এটা ইবনে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর ব্যক্তিগত আমল এবং ইজতিহাদ, মারফূ‘ হাদীছে বর্ণিত বিষয়কে এটা আলাদা করে না, তদুপরি, ছাহাবীর ইজতিহাদ দলীল নয়, বিশেষ করে যেখানে এর বিপরীত আসার ছাহাবী থেকে বর্তমান রয়েছে’।[৪৫] অন্যস্থানে তিনি বলেন, “সুতরাং মোটকথা হল, এটা ছাহাবী আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ব্যক্তিগত ইজতিহাদ, যা মারফূ‘ হাদীছের মোকাবেলায় হুজ্জাহ/দলীল নয়’।[৪৬] তিনি আরো বলেন, ‘এখন রইল শুধু আবুবকর ছিদ্দিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর আছার। আর এর উত্তর হল, প্রথমত এর মধ্যে মারাত্মক রকমের ইজতিরাব রয়েছে এবং দ্বিতীয়ত, এটা যদি নির্ভযোগ্য সনদে বর্ণিত হওয়ার কারণে ছহীহ হিসাবেও গ্রহণ করতে হয়, তবুও এটা নিছক একজন ছাহাবীর ইজতিহাদ, যা মারফূ‘ হাদীছের মোকাবেলায় দলীল নয়’।[৪৭]

অতএব খুলাসা এই যে, ইয়াযীদ ইবনু খুছাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত বিশ রাক‘আত সংক্রান্ত হাদীছ প্রথমত তাঁর থেকেও অধিক মকবূল রাবী মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর হাদীছের বিপরীত হওয়ায় শায, দ্বিতীয়ত মারফূ‘ হাদীছের বিপরীত হওয়ায় অগ্রহণযোগ্য।

হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, এই হাদীছটি আলী ইবনু জাদ এর মুসনাদে হা/২৮২৫ এ বিদ্যমান। এতদসত্ত্বেও আলী ইবনুল জাদ (অগ্রাধিকার মতে ছিক্বাহ)- এর উপরে সমালোচনা আছে। উক্ত আলী ইবনুল জাদ ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) উপরে কঠোর সমলাচোনা করতেন। তিনি বলতেন, ‘আমাকে এটা খারাপ লাগে না যে, আল্লাহ তা‘আলা মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে আযাব দিবেন।[৪৮] জেনে রাখা ভালো হবে ছহীহ্ বুখারীতে আলী ইবনুল জাদ এর ১৪ টি হাদীছ আছে। যেগুলোর মুতাবায়াতের মধ্যে আছে।[৪৯]

সতর্কীকরণ : এই হাদীছে কে বা কারা ছালাত পড়ছিল তার  কোন উল্লেখ নেই। এই অজ্ঞাত লোকেরা যদি নিজেদের ঘরে নফল অনুধাবন করে ২০ রাক‘আত তো ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সাথে কী সম্পর্ক আছে?

দেওবন্দীদের দাবী মোতাবেক ‘তারাবীহ ২০ রাক‘আত সুন্নাতে মুয়াকাদ্দাহ’-এর বেশী পড়া যাবে না অথবা ২০ রাক‘আতের চেয়ে কম পড়া যাবে না। কেউ যদি কম পড়ে তাহলে তার তারাবীহ আদায় হবে না।[৫০] অর্থাৎ দেওবন্দীদ এবং ব্রেলভীদের মতে জামা‘আতের সাথে ¯্রফে ২০ রাক‘আত পড়াই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এর কম বেশী করা জায়েয নয়। এই জন্য রশীদ আহমদ গাংগহী সাহেব বলেছেন, যদি তারাবীহর সংখ্যায় সন্দেহ হয়ে যায়। ১৮ পড়ল, না-কি ২০; তবে এককভাবে ২ রাক‘আত পড়ে নিবে। জামা‘আতের সাথে নয়। হাদীছের (মধ্যে উল্লেখিত রাক‘আতের চেয়ে) বেশি আদায় করা নিষিদ্ধ নয়। চায় কোন সংখ্যা হোক। কিন্তু জামা‘আতের মধ্যে ২০ রাক‘আতের চেয়ে বেশি জায়েয নয়।[৫১]

দেওবন্দীদের নিকটে উক্ত হাদীছ থেকে কিছু প্রশ্ন

(ক) ঐ লোকের নাম বলতে হবে যারা ওমর ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যামানায় ২০ রাক‘আত পড়তেন। (খ) এটি প্রমাণ করতে হবে যে, ঐ লোকেরা ২০ রাক‘আত সুন্নাতে মুয়াকাদ্দাহ অনুধাবন করে পড়তেন। (গ) এটা প্রমাণ করুন, তারা মসজিদে নববীতে জামা‘আতের সাথে এই রাক‘আতসমূহ পড়তেন। (ঘ) এটি প্রমাণ করুন যে, ওমর ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এই বিষয়টি জানাছিল। (ঙ) এটা প্রমাণ করতে হবে যে, ঐ লোকেরা ২০ রাক‘আতের কম অথবা বেশি করাকে নাজায়েয মনে করতেন। যেমনটি আপনারা বলে থাকেন। (চ) এটা প্রমাণ করুন যে, ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) এই হাদীছ/আছারটি থেকে দলীল নিয়েছেন।

যদি এগুলো প্রমাণ করতে পারেন তবে এই অজ্ঞাত আছারগুলো (আছারে মাজহূলাহ) দ্বারা দলীল গ্রহণ করা প্রত্যাখাত।[৫২]

২০ রাকআত তারাবীহর ৫ নং দলীলের তাহক্বীক্ব

عبد الرزاق عن الأسلمي عن الحارث بن عبد الرحمن بن أبي ذباب عن السائب بن يزيد قال كنا ننصرف من القيام على عهد عمر وقد دنا فروع الفجر وكان القيام على عهد عمر ثلاثة وعشرين ركعة.

হারিছ ইবনু আব্দুর রহমান ইবন আবি যুবাব বলেছেন, সাইব ইবনু ইয়াযীদ বলেছেন, ওমর ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যামানায় ক্বিয়ামে রামাযান বা তারাবীহ ছিল ২৩ রাক‘আত।[৫৩]

তাহক্বীক্ব : এই সনদ দু’টি কারণে যঈফ। (ক) একজন কাযযাব তথা মিথ্যুক রাবী আছে। তার নাম হল- ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়াহইয়া আল-আসলামী। ইমাম ইয়াহিয়া ইবনু সাঈদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, كنا نتهمه بالكذب ‘উনি একজন মিথ্যুক’।[৫৪] ইমাম ইয়াহিয়া ইবনু মাঈন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, إبراهيم بن أبي يحيى ليس بثقة كذاب ‘ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়াহিয়া আল-আসলামী ছিক্বাহ নয়। অনেক বড় মিথ্যাবাদী’।[৫৫] প্রায় সব মুহাদ্দিছই এমন কথা বলেছেন।

(খ) একজন রাবী মুনকার হাদীছ বর্ণনা করতেন। আর তার নাম হল- ‘আল-হারিস ইবনু আব্দুর রহমান ইবনু আবী যুবাব’। এই রাবী (মুখতালাফ-ফি) যদিই সত্যবাদী কিন্তু প্রচুর ভুল করতেন এবং মুনকার হাদীণ বর্ণনা করতেন। হাফীয ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, صدوق يهم ‘সত্যবাদী কিন্তু ভুল করতেন’।[৫৬] ইমাম আবূ হাতিম আর-রাযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, يروى عنه [ الدراوردى – ২ ] احاديث منكرة وليس بذاك بالقوى يكتب حديثه ‘মুনকার হাদীছ বর্ণনা করতেন। ছিক্বাহ রাবীর মত নন। তবে তার হাদীছ লেখা যাবে’।[৫৭]

অতএব এই হাদীছ কোনভাবেই ছহীহ নয়। মিথ্যুক রাবীর হাদীছ দিয়ে দলীল দেয়া কোন্ ধরনের প্রতারণা?


* মুর্শিদাবাদ, ভারত।

তথ্যসূত্র : 
[১]. ক্বিয়ামুল লাইল লিল ফিরইয়াভী, পৃ. ১৮৫।
[২]. মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হা/৭৭৩।
[৩]. মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হা/৭৭৩৩।
[৪]. মির‘আতুল মাফাতীহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৩০।
[৫]. আবূ বাকর আন-নিশাপুরী, ফাওয়ায়িদ, হা/১৬, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৫।
[৬]. আবূ বাকর আন-নিশাপুরী, ফাওয়ায়িদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৫।
[৭]. আহাদীছু ইসমাঈল ইবনু জা‘ফার, হা/৪৪০।
[৮]. আল-হাবি লিল ফাতাওয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৩৭; আল-মাছাবীহ লিস সুয়ূত্বী, পৃ. ৩৮।
[৯]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, হা/৭৬৭১, অন্য নুসখা হা/৭৭৫৩, সনদ বিল ইত্তেফাক ছহীহ।
[১০]. সুনানে সাঈদ বিন মানছূর, আল-হাবী লিল-ফাতাওয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৪৯; হাশিয়া আছারুস সুনান, পৃ. ২৫০।
[১১]. সুয়ূত্বী, আল-মাছাবীহ ফী ছালাতিত তারাবীহ, পৃ. ১৫; আল-হাবী লিল-ফাতাওয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫০।
[১২]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, হা/৭৬৭০, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৯২।
[১৩]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৭৬৮২, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৬৩, অন্য নুসখা হা/৭৭৬৪, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২২৩।
[১৪]. আল-মুহাল্লা, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৬০, মাসায়ালা নং-১৮৯৯।
[১৫]. তাক্বরীবুত তাহযীব, জীবনী নং-৭৬০৯, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৫৬।
[১৬]. হাশিয়া আসারা সুনান, হা/৭৮০ ‘টীকা দ্র.।
[১৭]. দ্র. ছালাতুত তারাবীহ।
[১৮]. তাদাকে রাক‘আতে তারাবীহ, পৃ. ৪১।
[১৯]. তাহযিবুত তাহযীব, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৫০।
[২০]. হানাফী কেল্লা, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫১-১৫২।
[২১]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৩৮০; মুসনাদে ছাহাবা, ২৭তম খণ্ড, পৃ. ২৬৩; মিশকাত, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৬৪০; সুনানে বায়হাক্বী কুবরা, হা/৪৩৯২; শরহে মা‘আনিল আছার, হা/১৬১০।
[২২]. মুওয়াত্ত্বা মালিক, হা/৩৮০; মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হা/১৪৪৩; সুনানে বায়হাক্বী কুবরা, হা/৪৩৯৪।
[২৩]. আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাজ্জাব, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৩।
[২৪]. উমদাতুল কারী শারহু ছহীহিল বুখারী, হা/২০১০ এর অধীনে, ১১তম খণ্ড, পৃ. ১২৬-১২৭; আল-বিনায়া শারহুল হিদায়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৬৭।
[২৫]. আছারুস সুনান, পৃ. ৫৫; হাশিয়া আছারুস সুনান, পৃ. ২৫৩।
[২৬]. ছালাতুত তারাবীহ, পৃ. ৫৪।
[২৭]. তাদরাকে রাক‘আতে তারাবীহ, পৃ. ৪১।
[২৮]. ক্বিয়ামে রামাযান লিল মুহাম্মদ ইবনু নাছর মারওয়াযী, পৃ. ২১; অন্য নুসখা ২২০।  
[২৯]. তাক্বরীবুত তাহযীব, জীবনী নং-৬২৯৭;, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৮০।
[৩০]. তারিখুল কাবীর লিল ইমাম বুখারী, জীবনী নং-১৯৫২, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৩৮-১৩৯।
[৩১]. মুসনাদে ইবনুল যা‘আদ, হা/২৮২৫; বায়হাক্বী, হা/৪৩৯৩।
[৩২]. আবূ বকর আন-নাইসাপুরী, আল-ফাওয়াইদ, পৃ. ১৩৫- ইমাম আবূ বকর নিশাপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ-৩২৪) বর্ণনা করেন-

حدثنا يوسف بن سعيد ثنا حجاج عن ابن جريج حدثني اسماعيل بن امية ان محمد بن يوسف ابن اخت السائب بن يزيد اخبره ان السائب بن يزيد اخبره قال جمع عمر بن الخطاب الناس علي ابي بن كعب و تميم الداري فكانا يقومان بمائة في ركعة فما ننصرف حتي نرا او نشك في فروع الفجر قال فكنا نقوم باحد عشر قلت: او واحد وعشرون؟ قال لقد سمع ذالك من السائب بن يزيد ابن خصيفة فسألت يزيد بن خصيفة فقال حسبت ان السائب قال احد وعشرون.

       ‘সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) লোকজনকে উবাই ইবনু কা‘ব ও তামিম আদ-দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পেছনে জামা‘আতবদ্ধ করে দিলেন। অতঃপর তারা উভয়ে একেক রাক‘আতে একশ’ আয়াত করে তেলাওয়াত করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা দেখতাম অথবা সন্দেহ হত যে, ফযর হয়ে গেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তারাবীহ পড়া থেকে বিরত হতাম না। সায়িব ইন্তু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমরা তারাবীহ এগারো রাক‘আত পড়তাম। (মুহাম্মদ বিন ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে এই হাদীছ শুনার পর) রাবী ইসমাঈল ইবনু উমাইয়্যাহ বলেন, এগারো রাক‘আত, না-কি একুশ রাক‘আত? তখন মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে এ রকমই শুনেছেন। অতঃপর আমি (ইসমাঈল ইবনু উমাইয়্যাহ) ইয়াযীদ ইবনু খুসাইফাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একুশ রাক‘আতের কথা বলেছিলেন’।  

[৩৩]. তাহযীবুল কামাল, ৩২তম খণ্ড, পৃ. ১৭৩; মীযানুল ই’তিদাল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৩০।
[৩৪]. মাশাহিরু উলামাইল আমছার, ১ম খণ্ড, পৃ. ২১৬।
[৩৫]. তাইসীরু মুছত্বলাহুল হাদীছ লিত ত্বহহান, পৃ. ১২০; হাদিসের পরিভাষা, পৃ. ১০৮।
[৩৬]. তাইসীরু মুছত্বলাহুল হাদীছ লিত ত্বহহান, পৃ. ১২৪; হাদিসের পরিভাষা, পৃ. ১০৯।
[৩৭]. তাক্বারীরে শাইখুল হিন্দ, পৃ. ৩০।
[৩৮]. তাক্বারীরে শাইখুল হিন্দ, পৃ. ৩০।
[৩৯]. বাযলুল মাজহূদ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৯, হা/৮২১।
[৪০]. হাকিম উল উম্মত, পৃ. ২৭৫।
[৪১]. আহসান উল কালাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫৬।
[৪২]. আহসান উল কালাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩২।
[৪৩]. খাযায়েনুস সুনান, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৬৪।
[৪৪]. দরসে তিরমিযী, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৬৯।
[৪৫]. দরসে তিরমিযী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯১।
[৪৬]. দরসে তিরমিযী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৪।
[৪৭]. দরসে তিরমিযী, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৩।
[৪৮]. তাহযীবুত তাহযীব, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৫৭।
[৪৯]. বিস্তারিত দেখুন : আমীন উকাড়াবী কা তাআকুব, পৃ. ৪৫ যুবায়ের আলী যাঈ।
[৫০]. ফাতওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৯৬, সুওয়াল নং-১৮৭২।
[৫১]. আর-রায়ুন নাজীহ, পৃ. ১২-১৩; আনওয়ারুল মাসাবীহ, পৃ. ২৯।
[৫২]. তাদাকে ক্বিয়ামে রামাযান, পৃ. ১২৮।
[৫৩]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হা/৭৭৩৩, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৬১।
[৫৪]. আল-যু‘আফা লিল উক্বাইলী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৩, সনদ ছহীহ।
[৫৫]. আল-জারাহ ওয়াত তা‘দীল, ২য় খণ্ড, পৃ. ১২৬, সনদ ছহীহ।
[৫৬]. তাক্বরীবুত তাহযীব, জীবনী নং-১০৩৭, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫৮-৩৫৯।
[৫৭]. আল-জারাহ ওয়াত তা‘দীল, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৮০।




কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলামী শিষ্টাচার - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে ইসলাম শিক্ষার আবশ্যকতা - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
কর্যে হাসানাহ প্রদানের গুরুত্ব ও ফযীলত - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
আশূরায়ে মুহাররম - ছাদীক মাহমূদ
হজ্জ ও ওমরাহ সম্পর্কে প্রচলিত বিদ‘আতসমূহ (শেষ কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (৫ম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
চোগলখোরী করা ও তার পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১৩তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার (১০ম কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে ধর্মের ভূমিকা - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ