বিদ‘আত পরিচিতি
-মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*
(৯ম কিস্তি)
[এপ্রিল ২০২১ সংখ্যার পর থেকে]
মূলনীতি-৪ : বিদ‘আতের ব্যাপারে প্রচেষ্টা করার চেয়ে সুন্নাতের ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উত্তম
বিদ‘আত সম্পর্কে মুসলিমদের মাঝে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে বিদ‘আতের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একশ্রেণীর মানুষের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। বিদ‘আতী কাজ এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে, সুন্নাতী আদর্শ তাদের কাছে বিদ‘আত বলে গণ্য হয়। আর বিদ‘আতকেই সুন্নাহ মনে করে কঠোরভাবে আঁকড়ে ধরে থাকে। এমনকি তাক্বদীরে হেদায়াত নসীব না হলে বিদ‘আতের উপরেই তার মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। যা সত্যি দুর্ভাগ্য বৈ কিছুই নয়। কেননা কথা, কর্ম, সময়, শ্রম, অর্থ ও বুুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে বিদ‘আতের ব্যাপারে কোনরকম প্রচেষ্টা করার চেয়ে সুন্নাতের ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা সর্বোত্তম। প্রখ্যাত ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, اقتصاد في سنة خير من اجتهاد في بدعة ‘বিদ‘আতের ব্যাপারে প্রচেষ্টা করার চেয়ে সুন্নাতের ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উত্তম’।[১]
প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত,
أَنَّهُ رَأَى رَجُلًا يُصَلِّى بَعْدَ طُلُوْعِ الْفَجْرِ أَكْثَرَ مِنْ رَكْعَتَيْنِ يُكْثِرُ فِيْهَا الرُّكُوْعَ وَالسُّجُوْدَ فَنَهَاهُ فَقَالَ يَا أَبَا مُحَمَّدٍ يُعَذِّبُنِىَ اللهُ عَلَى الصَّلَاةِ؟ قَالَ لَا وَلَكِنْ يُعَذِّبُكَ عَلَى خِلَافِ السُّنَّةِ
‘তিনি একদা জনৈক ব্যক্তিকে ফজর উদিত হওয়ার পর দু’রাক‘আতের বেশি অনেক রুকূ ও সিজদা করতে দেখলেন। অতঃপর তিনি তাকে নিষেধ করেন। তখন লোকটি তাকে বলল, হে আবূ মুহাম্মাদ! আল্লাহ কি আমাকে ছালাত আদায়ের কারণে শাস্তি দিবেন? সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, না; বরং সুন্নাতের বিরোধিতা করার কারণে তোমাকে শাস্তি দিবেন’।[২]
সুধী পাঠক! উক্ত ব্যক্তির উদ্দেশ্য ছিল বেশি বেশি ছালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। কিন্তু তার ঐ প্রচেষ্টা সুন্নাহ ভিত্তিক ছিল না। কেননা ফজর উদয় হওয়ার পর ঐভাবে ছালাত আদায়ের কোন দলীল নেই। এজন্যই সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব (রাহিমাহুল্লাহ) তাকে বিদ‘আতী কাজের কারণে কঠোর হুঁশিয়ারী দিলেন।
সুফিয়ান ইবনু উওয়াইনা (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মালিক ইবনু আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি যে, জনৈক ব্যক্তি তার নিকট এসে জিজ্ঞেস করল যে,
يا أبا عبد الله من أين أحرم؟ قال من ذي الحليفة من حيث أحرم رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فقال إني أريد أن أحرم من المسجد من عند القبر قال لا تفعل فإني أخشى عليك الفتنة فقال وأي فتنة في هذه؟! إنما هي أميال أزيدها! قال وأي فتنة أعظم من أن ترى أنك سبقت إلى فضيلة قصر عنها رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ { فَلۡیَحۡذَرِ الَّذِیۡنَ یُخَالِفُوۡنَ عَنۡ اَمۡرِہٖۤ اَنۡ تُصِیۡبَہُمۡ فِتۡنَۃٌ اَوۡ یُصِیۡبَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ }
‘হে আবূ আব্দিল্লাহ! আমি কোথা থেকে ইহরাম বাঁধব? তিনি (মালিক বিন আনাস) (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, যুল হুলাইফা, যেখান থেকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম বাঁধতেন। তখন লোকটি বলল, আমি ইচ্ছা করছি যে, আমি মসজিদে নববী ও (নবীর) ক্ববরের নিকট থেকে ইহরাম বাঁধব। তিনি (মালিক বিন আনাস) (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি তোমার ফিতনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা করছি। অতঃপর লোকটি বলল, আমি মাত্র কয়েক মাইল দূরত্ব বাড়িয়েছি, এতে ফিতনার কী হলো! তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দূরত্ব সংক্ষেপ করেছেন আর তুমি ফযীলতের জন্য তার বেশি দূরত্ব অবলম্বন করছ- এর চেয়ে বড় ফিতনা আর কী হতে পারে। নিশ্চয় আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি’।[৩]
অতএব বিদ‘আত চর্চা না করে সর্বদা সুন্নাতের অনুশীলন ও চর্চা করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ঈমানী দায়িত্ব। আল্লাহ তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
মূলনীতি-৫ : ভালো নিয়ত, কোন বিদ‘আতকে বিদ‘আত হওয়া থেকে বিরত রাখবে না
মূলত যেকোন আমল ভালো নিয়তেই করা হয়। সুতরাং এমন আমল, যে ব্যাপারে আল-কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়নি, কিন্তু তা যদি ভালো নিয়তে করা হয়, তাহলে উক্ত ভালো নিয়ত ঐ আমলকে বিদ‘আত হওয়া থেকে বিরত রাখবে না। অর্থাৎ আমলটি যতই ভালো হোক না কেন, যদি সেই আমলের ব্যাপারে শরী‘আতের কোন নির্দেশনা না থাকে, তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত। যেমনটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করল, যে ব্যাপারে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।[৪]
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ ‘প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল’।[৫] উক্ত কাজ দ্বারা যেকোন কাজকে উদ্দেশ্য করা হয়নি। বরং এখানে কিতাব ও সুন্নাহ ভিত্তিক আমল উদ্দেশ্য। আর যে কোন কাজ যদি কিতাব ও সুন্নাহ ভিত্তিক হয়, তাহলে তার জন্য সে নেকী প্রাপ্ত হবে। প্রখ্যাত তাবেঈ মুহাম্মাদ ইবনু আজলান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, لَا يَصْلُحُ الْعَمَلُ إلَّا بِثَلَاثٍ التَّقْوَى لله وَالنِّيَّةِ الحَسَنَةِ وَالْإِصَابَةِ ‘তিনটি বিষয় ব্যতীত কোন আমলই বিশুদ্ধ নয়। যথা : আল্লাহর তাক্বওয়া, উত্তম নিয়ত এবং যথার্থভাবে সম্পাদন করা’।[৬]
সুধী পাঠক! এখানে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর ঐ ঘটনা উল্লেখ করা যরূরী যে, যারা আল্লাহর যিকিরের জন্য পাথর ব্যবহার করেছিল অর্থাৎ তাসবীহ দানা ব্যবহার করে যিকির করছিল। কিন্তু তিনি তা বরদাশত করেননি। ঘটনাটি ছিল নিম্নরূপ :
‘আমর ইবনু সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমরা ফজর ছালাতের পূর্বেই আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর বাড়ীর দরজায় গিয়ে বসে থাকতাম। যখন তিনি মসজিদে যাওয়ার জন্য বের হতেন, তখন আমরা তাঁর সাথে সাথে যেতাম। একদিন আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এসে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কি বের হয়েছেন? আমরা বললাম না, এখনো বের হননি। তখন তিনিও আমাদের সাথে বসে পড়লেন। অতঃপর যখন তিনি বের হলে তখন আমরা সবাই উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর কাছে গেলাম। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁকে বললেন, আমি একটু আগে মসজিদের মধ্যে একটি বিষয়ে দেখেছি এবং দেখে খারাপ মনে করেছি, যদিও যা দেখেছি তা ভালো ছাড়া খারাপ নয় আলহামদুলিল্লাহ। ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, বিষয়টি কী? আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আপনি একটু পরেই দেখবেন ইনশাআল্লাহ। আমি দেখলাম কিছু মানুষ কয়েকটি দলে হালাকায় (বৃত্তাকারে) বসে ছালাতের অপেক্ষা করছে। প্রত্যেক হালাকায় একজন নেতা রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে কাঁকর। নেতাগোছের ব্যক্তি বলছে, সবাই একশ’বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়–ন, তখন সবাই ১০০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলছে। তখন সে বলছে, সবাই ১০০ বার ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পড়–ন। এতে সবাই ১০০ বার ‘লা ইলা-হা ইল্লা-ল্লাহ’ বলছে। এরপর সে বলল, সবাই ১০০ বার ‘সুবহা-নাল্লাহ’ বলুন। সবাই তখন ১০০ বার ‘সুবহা-নাল্লাহ বলছে। ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, আপনি তাদেরকে কী বলেছেন? তিনি বললেন, আমি আপনার মতামতের ও নির্দেশের অপেক্ষায় তাদেরকে কিছু বলিনি। ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, আপনি তাদেরকে বললেন না কেন যে, তোমাদের পাপগুলো গুণে গুণে রাখ, আর আপনি দায়িত্ব নিতেন যে, তাদের কোন নেককর্ম নষ্ট হবে না। এরপর আমরা সবাই তার সাথে মসজিদে গেলাম। তিনি ঐ হালাকাগুলোর একটি হালাকার কাছে গিয়ে তাদেরকে বললেন, এ তোমরা কী করছ? তারা বলল, আমরা কাঁকর দিয়ে তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর গণনা করছি। তিনি বললেন,
فَعُدُّوْا سَيِّئَاتِكُمْ فَأَنَا ضَامِنٌ أَنْ لَا يَضِيْعَ مِنْ حَسَنَاتِكُمْ شَيْءٌ وَيْحَكُمْ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ مَا أَسْرَعَ هَلَكَتَكُمْ هَؤُلَاءِ صَحَابَةُ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَوَافِرُوْنَ وَهَذِهِ ثِيَابُهُ لَمْ تَبْلَ وَآنِيَتُهُ لَمْ تُكْسَرْ وَالَّذِي نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنَّكُمْ لَعَلَى مِلَّةٍ هِيَ أَهْدَى مِنْ مِلَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أوْ مُفْتَتِحُوْ بَابِ ضَلَالَةٍ
‘তোমরা তোমাদের পাপগুলো গণনা কর। আমি দায়িত্ব নিচ্ছি যে, তোমাদের কোন নেককর্ম বিনষ্ট হবে না। হতভাগা উম্মতে মুহাম্মাদী! কত দ্রুত তোমরা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছ! এখনো তোমাদের মাঝে তোমাদের নবীর ছাহাবীগণ বিপুল সংখ্যায় জীবিত রয়েছেন। দেখ! তাঁর পোশাকগুলো এখনো পুরাতন হয়নি, তাঁর আসবাবপত্র এখনো ভেঙ্গে নষ্ট হয়নি! (অথচ তার আগেই তোমরা ধ্বংসের পথে চলে গেলে)। আল্লাহর কসম করে বলছি, তোমরা কি মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দ্বীনের চেয়ে ভালো কোন ধর্ম আবিষ্কার করলে? না-কি তোমরা বিভ্রান্তি ও গোমরাহির দরজা খুলে নিলে’?
(উক্ত কথা শ্রবণ করে) সমবেত যিকিরকারীরা বলল, জনাব! আমরা তো একান্তই ভালো নিয়তে এ কাজ করছি। তিনি জবাবে বললেন,
وَكَمْ مِنْ مُرِيْدٍ لِلْخَيْرِ لَنْ يُصِيْبَهُ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدَّثَنَا أَنَّ قَوْمًا يَقْرَءُوْنَ الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ وَايْمُ اللهِ مَا أَدْرِيْ لَعَلَّ أَكْثَرَهُمْ مِنْكُمْ ثُمَّ تَوَلَّى عَنْهُمْ فَقَالَ عَمْرُو بْنُ سَلَمَةَ رَأَيْنَا عَامَّةَ أُولَئِكَ الْحِلَقِ يُطَاعِنُوْنَا يَوْمَ النَّهْرَوَانِ مَعَ الْخَوَارِجِ
‘অনেক মানুষেরই উদ্দেশ্য ভালো থাকে তবে সে ভালো পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না (অর্থাৎ উদ্দেশ্য ভালো হলেও পন্থা ভালো নয়)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেন যে, কিছু মানুষ কুরআন তেলাওয়াত করবে, কিন্তু তাদের তেলাওয়াত কণ্ঠনালির নিচে নামবে না। আল্লাহর কসম! আমি জানি না যে, হয়তো তোমাদের অনেকেই এ শ্রেণীর অন্তর্গত। এরপর তিনি তাদের নিকট থেকে চলে যান। ‘আমর ইবনু সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এ সকল হালাকায় যারা উপস্থিত ছিল তাদের অধিকাংশই দেখেছি নাহরাওয়ানের যুদ্ধে খারেজীদের পক্ষে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে’।[৭]
উক্ত হাদীছে স্পষ্ট হয় যে, শুধু ভালো নিয়তে যে কোন আমল করলেই তা বিশুদ্ধ হয়ে যায় না; বরং সেই আমলের ব্যাপারে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের স্পষ্ট দলীল থাকা আবশ্যক। অতএব ভালো নিয়ত কোন বিদ‘আতকে বিদ‘আত হওয়া থেকে বিরত রাখবে না।
মূলনীতি-৬ : আমলটি বিদ‘আত, না-কি বিদ‘আত নয়, এ ব্যাপারে মতবিরোধ থাকলে, ঐ মতবিরোধের কারণে আমলটি করা শরী‘আতে অনুমোদন নেই
ইসলামের কোন কাজের ব্যাপরে আলেমগণের মাঝে যদি এ মর্মে মতবিরোধ হয় যে, তন্মধ্যে কেউ বলছে তা বিদ‘আত আবার কেউ বলছে বিদ‘আত নয়। সুতরাং মতবিরোধের কারণে ঐ কাজটি অনুমোদনযোগ্য নয়। বরং তন্মধ্যে যার বক্তব্য সুদূঢ় প্রমাণ ও দলীলাদির ভিত্তিতে হবে সেটা গ্রহণ করা হবে। আর অন্যটা পরিত্যাগ করতে হবে। কেননা ইবাদত দলীল ছাড়া সাব্যস্ত হয় না। এ প্রসঙ্গে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৬১-৭২৮ হি./১২৬৩-১৩২৮ খ্রি.) বলেন,
وَلَيْسَ لِأَحَدِ أَنْ يَحْتَجَّ بِقَوْلِ أَحَدٍ فِيْ مَسَائِلِ النِّزَاعِ وَإِنَّمَا الْحُجَّةُ النَّصُّ وَالْإِجْمَاعُ وَدَلِيْلٌ مُسْتَنْبَطٌ مِنْ ذَلِكَ تُقَرَّرُ مُقَدِّمَاتُهُ بِالْأَدِلَّةِ الشَّرْعِيَّةِ لَا بِأَقْوَالِ بَعْضِ الْعُلَمَاءِ؛ فَإِنَّ أَقْوَالَ الْعُلَمَاءِ يُحْتَجُّ لَهَا بِالْأَدِلَّةِ الشَّرْعِيَّةِ
‘বিতর্কিত মাস’আলায় কারো পক্ষাবলম্বন করা কারো জন্য উচিত নয়। আর শরী‘আতের কোন মাস’আলা সুদৃঢ় প্রমাণাদী, ইজমা ও দলীল থেকে উদ্ভাবিত হয় এবং তা শরী‘আতের সুস্পষ্ট দলীলের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় আলিমগণের কোন কথার মাধ্যমে নয়। যদিও শরী‘আতের দলীলের ভিত্তিতে আলিমগণের বক্তব্যসমূহ সমর্থনযোগ্য’।[৮]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আতি মিনাল কিতাবাতি ওয়াস সুন্নাতি ওয়া ইজমাঈছ ছাহাবা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৫, ৮৮, আছার নং-১৪, ১১৪, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১১, হা/২০০৫; দারেমী, হা/৩৫২; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৪৫২২; সনদ ছহীহ, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪১।
[২]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৪২৩৪; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হা/৪৭৫৫; সনদ ছহীহ, সিলসিলাতুল আছারিছ ছহীহাহ, হা/৪৫, ১/৫৮।
[৩]. উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ (ভারত : ইদারাতুল বুহূছ আল-ইলমিয়্যাহ ওয়াদ দা‘ওয়াতি ওয়াল ইরশাদ, ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি.), ৮ম খণ্ড, পৃ. ৩৬৪।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; মিশকাত, হা/১৪০।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/১; মিশকাত, হা/১।
[৬]. আবুল ফারজ আব্দুর রহমান ইবনু আহমাদ ইবনু ইবনু রজব আল-হাম্বালী, জামিঊল ঊলূম ওয়াল হিকাম (বৈরূত : দারুল মা‘আরিফাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৮ হি.), পৃ. ১৩।
[৭]. দারেমী, হা/২০৪; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২০০৫।
[৮]. ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২৬তম খণ্ড, পৃ. ২০২; মিন উছূলিল ফিক্বহি ‘আলা মানহাজি আহলিল হাদীছ, পৃ. ২০৩।
প্রসঙ্গসমূহ »:
শিরক, বিদ‘আত ও কুসংস্কার