বিদ‘আত পরিচিতি
-ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*
(৩২তম কিস্তি)
গ. বিদ‘আত প্রতিরোধে আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) (মৃ. ৫৮ হি.)-এর অবদান
‘হাদীছ বর্ণনাকারীদের সরদার’ হিসাবে খ্যাত আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর একজন বিখ্যাত ফক্বীহ, মুজতাহিদ ও হাফেয ছাহাবী। তার নামের ব্যাপারে বিভিন্ন মতভেদ থাকলেও গ্রহণযোগ্য অভিমত হল: আব্দুর রহমান ইবনু ছাখর। তবে তিনি তাঁর কুনিয়াত ‘আবূ হুরাইরা’ নামে সমধিক পরিচিত। একজন দরিদ্র ছাহাবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি নবী (ﷺ)-এর নিকট থেকে পবিত্র ও বরকতময় জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তিনি ছাহাবীদের মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ইসলাম গ্রহণের পরে মাত্র চার বছর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে পেয়েছিলেন তিনি। মূলত তিনি ৭ম হিজরীরর মুহাররম মাসে ত্রিশ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আহলুছ ছুফ্ফার অন্যতম ছাহাবী ছিলেন।[১] তাঁর ব্যাপাে প্রসিদ্ধ দু’টি ঘটনা নিম্নে তুলে ধরছি। যথা:
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ أَبِىْ بَكْرٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ بْنِ دِيْنَارٍ أَبُوْ عَبْدِ اللهِ الْجُهَنِىُّ عَنِ ابْنِ أَبِىْ ذِئْبٍ عَنْ سَعِيْدٍ الْمَقْبُرِىِّ عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّاسَ كَانُوْا يَقُوْلُوْنَ أَكْثَرَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ . وَإِنِّىْ كُنْتُ أَلْزَمُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ بِشِبَعِ بَطْنِى ، حَتَّى لَا آكُلُ الْخَمِيْرَ، وَلَا أَلْبَسُ الْحَبِيْرَ، وَلَا يَخْدُمُنِىْ فُلَانٌ وَلَا فُلَانَةُ، وَكُنْتُ أُلْصِقُ بَطْنِىْ بِالْحَصْبَاءِ مِنَ الْجُوْعِ، وَإِنْ كُنْتُ لأَسْتَقْرِئُ الرَّجُلَ الآيَةَ هِىَ مَعِىْ كَىْ يَنْقَلِبَ بِىْ فَيُطْعِمَنِىْ، وَكَانَ أَخْيَرَ النَّاسِ لِلْمِسْكِيْنِ جَعْفَرُ بْنُ أَبِىْ طَالِبٍ، كَانَ يَنْقَلِبُ بِنَا فَيُطْعِمُنَا مَا كَانَ فِىْ بَيْتِهِ، حَتَّى إِنْ كَانَ لَيُخْرِجُ إِلَيْنَا الْعُكَّةَ الَّتِىْ لَيْسَ فِيْهَا شَىْءٌ، فَنَشُقُّهَا فَنَلْعَقُ مَا فِيْهَا
১- আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, লোকেরা বলে থাকেন যে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অনেক বেশি হাদীছ বর্ণনা করে থাকেন। বস্তুত আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর নিকট আত্মতৃপ্তি নিয়ে পড়ে থাকতাম। ঐ সময়ে আমি সুস্বাদু রুটি ভক্ষণ করিনি, দামী কাপড় পরিনি। তখন কেউ আমার সেবা করত না এবং আমি ক্ষুধার জ্বালায় পাথুরে ভূমির সঙ্গে পেট চেপে ধরতাম। কোন কোন সময় কুরআনে কারীমের কোন আয়াত, আমার জানা থাকা সত্ত্বেও অন্যদের জিজ্ঞেস করতাম যেন, তারা আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কিছু খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। গরীব-মিসকীনদের জন্য সবার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি ছিলেন জা‘ফর ইবনু আবূ তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। তিনি প্রায়ই আমাকে নিজ ঘরে নিয়ে যেতেন এবং যা ঘরে থাকত তাই আমাকে আহার করিয়ে দিতেন। কোন সময় ঘিয়ের খালি পাত্র এনে দিতেন, আমরা ভেঙ্গে দিয়ে তা চেটে খেতাম’।[২]
----
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ حَدَّثَنَا شُعَيْبٌ عَنِ الزُّهْرِىِّ قَالَ أَخْبَرَنِىْ سَعِيْدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ وَأَبُوْ سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ إِنَّكُمْ تَقُوْلُوْنَ إِنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ يُكْثِرُ الْحَدِيْثَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ. وَتَقُوْلُوْنَ مَا بَالُ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْأَنْصَارِ لَا يُحَدِّثُوْنَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ بِمِثْلِ حَدِيْثِ أَبِىْ هُرَيْرَةَ وَإِنَّ إِخْوَتِىْ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ كَانَ يَشْغَلُهُمْ صَفْقٌ بِالأَسْوَاقِ، وَكُنْتُ أَلْزَمُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَلَى مِلْءِ بَطْنِىْ، فَأَشْهَدُ إِذَا غَابُوْا وَأَحْفَظُ إِذَا نَسُوْا، وَكَانَ يَشْغَلُ إِخْوَتِىْ مِنَ الْأَنْصَارِ عَمَلُ أَمْوَالِهِمْ، وَكُنْتُ امْرَأً مِسْكِيْنًا مِنْ مَسَاكِيْنِ الصُّفَّةِ أَعِىْ حِيْنَ يَنْسَوْنَ، وَقَدْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فِىْ حَدِيْثٍ يُحَدِّثُهُ ্রإِنَّهُ لَنْ يَبْسُطَ أَحَدٌ ثَوْبَهُ حَتَّى أَقْضِىَ مَقَالَتِىْ هَذِهِ، ثُمَّ يَجْمَعَ إِلَيْهِ ثَوْبَهُ إِلَّا وَعَى مَا أَقُوْلُগ্ধ. فَبَسَطْتُ نَمِرَةً عَلَىَّ، حَتَّى إِذَا قَضَى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَقَالَتَهُ جَمَعْتُهَا إِلَى صَدْرِىْ، فَمَا نَسِيْتُ مِنْ مَقَالَةِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ تِلْكَ مِنْ شَىْءٍ
২- আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমরা বলে থাক, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হতে আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বেশি বেশি হাদীছ বর্ণনা করে থাকে এবং আরো বলেন, মুহাজির ও আনছারদের কী হলো যে, তারা তো আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর হাদীছ বর্ণনা করে না? আমার মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত থাকত আর আমি কোন প্রকারে আমার পেটের চাহিদা মিটিয়ে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর নিকটে পড়ে থাকতাম। তাঁরা যখন অনুপস্থিত থাকত আমি তখন উপস্থিত থাকতাম। তাঁরা যা ভুলে যেত আমি তা মুখস্থ করতাম। আর আমার আনছার ভাইয়েরা নিজেদের ক্ষেত-খামারের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। আমি ছিলাম ছুফ্ফার মিসকীনদের একজন মিসকীন। তাঁরা যা ভুলে যেতো, আমি তা মুখস্থ রাখতাম। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাঁর এক বর্ণনায় বললেন, আমার এ কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে কেউ তার কাপড় বিছিয়ে দিবে এবং পরে নিজের শরীরের সাথে তার কাপড় জড়িয়ে নেবে, আমি যা বলছি সে তা স্মরণ রাখতে পারবে। [আবূ হুরায়রা (ﷺ) বলেন] আমি আমার গায়ের চাদরখানা বিছিয়ে দিলাম যতক্ষণ না আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাঁর কথা শেষ করলেন, পরে আমি তা আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। ফলে আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সে কথার কিছুই ভুলে যাইনি’।[৩]
----
সুধী পাঠক! সর্বাধিক হাদীছ বর্ণনাকারী ছাহাবী আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীছ মুখস্থকরণ ও সংরক্ষণে প্রমাণিত হয় হাদীছ বিরোধী যাবতীয় কর্মকাণ্ড এবং বিদ‘আত ও বিদ‘আতীদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। নিম্নে বিদ‘আত ও বিদ‘আতীদের প্রতিরোধে তাঁর ভূমিকা তুলে ধরা হলো:
বিদ‘আত প্রতিরোধে তাঁর ভূমিকা
حَدَّثَنَا
ابْنُ أَبِىْ عُمَرَ قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ مُحَمَّدِ
بْنِ عَمْرٍو عَنْ أَبِىْ سَلَمَةَ عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ
اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ
«الْوُضُوْءُ مِمَّا مَسَّتِ النَّارُ وَلَوْ مِنْ ثَوْرِ أَقِطٍ». قَالَ فَقَالَ
لَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَنَتَوَضَّأُ
مِنَ الدُّهْنِ أَنَتَوَضَّأُ مِنَ الْحَمِيْمِ قَالَ فَقَالَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ
يَا ابْنَ أَخِىْ إِذَا سَمِعْتَ حَدِيْثًا
عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَلَا تَضْرِبْ لَهُ مَثَلَا.
১- আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আগুনে রান্না করা খাদ্য খেলে ওযূ করতে হবে; তা পনিরের একটা টুকরাই হোক না কেন’। (আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে এ কথা বর্ণনা করতে শুনে) ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তাঁকে প্রশ্ন করলেন, আমরা কি তৈল ব্যবহার করলেও ওযূ করব, আমরা কি গরম পানি পান করলেও ওযূ করব? তখন আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হে ভাইয়ের ছেলে! যখন তুমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কোন হাদীছ শুনতে পাও, তখন তার সামনে কোন উদাহরণ পেশ কর না’। উক্ত হাদীছের শেষাংশে ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, أَكْثَرُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ ﷺ وَالتَّابِعِيْنَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ عَلَى تَرْكِ الْوُضُوْءِ مِمَّا غَيَّرَتِ النَّارُ ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বেশিরভাগ ছাহাবী, তাবিঈন ও তাদের পরবর্তীদের মতে, আগুনে স্পর্শ করা জিনিসের ব্যবহার ও পানাহারে ওযূ করার প্রয়োজন নেই’।[৪]
----
حَدَّثَنِىْ سَلَمَةُ بْنُ شَبِيْبٍ قَالَ حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ أَعْيَنَ
حَدَّثَنَا مَعْقِلٌ عَنْ أَبِى الزُّبَيْرِ عَنْ جَابِرٍ عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ
أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ
قَالَ «إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ فَلْيُفْرِغْ عَلَى يَدِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ
قَبْلَ أَنْ يُدْخِلَ يَدَهُ فِىْ إِنَائِهِ فَإِنَّهُ لَا يَدْرِىْ فِيْمَ
بَاتَتْ يَدُهُ».
২- আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ জাগ্রত হবে তখন সে তার হাত পাত্রে ঢুকাবার পূর্বে যেন তা তিনবার ধুয়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে, তার হাত রাতে কোথায় ছিল’।[৫] উক্ত হাদীছ শুনে ক্বাইনুল আশজা‘ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
فما يصنع بالمهراس، يا أبا هريرة؟ قال أبو هريرة: أعوذ بالله من شرك يا قين
‘হে আবূ হুরাইরা! মিহরাসে (তথা এমন একটি আয়তাকার খোদাই করা পাথর, বেসিনের মতো বড়, যেখান থেকে মানুষ ওযূ করে) করা যাবে? তখন আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হে ক্বাইন! আমি এই ফাঁদ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[৬]
সুধী পাঠক! উক্ত হাদীছদ্বয়ে হাদীছের বিপরীতে কোন উদাহরণ, প্রশ্ন, যুক্তি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে আবূ হুরাইরা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।
حَدَّثَنِىْ عَبْدُ اللهِ بْنُ الرُّوْمِىِّ حَدَّثَنَا
النَّضْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ -
وَهُوَ ابْنُ عَمَّارٍ - حَدَّثَنَا يَحْيَى حَدَّثَنَا أَبُوْ سَلَمَةَ عَنْ
أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ
قَالَ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ
«لَا يَزَالُوْنَ يَسْأَلُوْنَكَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ حَتَّى يَقُوْلُوْا هَذَا
اللهُ فَمَنْ خَلَقَ اللهَ» قَالَ فَبَيْنَا أَنَا فِى الْمَسْجِدِ إِذْ جَاءَنِىْ
نَاسٌ مِنَ الْأَعْرَابِ فَقَالُوْا يَا أَبَا هُرَيْرَةَ هَذَا اللهُ فَمَنْ
خَلَقَ اللهَ قَالَ فَأَخَذَ حَصًى بِكَفِّهِ فَرَمَاهُمْ ثُمَّ قَالَ قُوْمُوْا
قُوْمُوْا صَدَقَ خَلِيْلِىْ.
৩- আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে একদিন বললেন, হে আবূ হুরায়রা! মানুষ তোমাকে প্রশ্ন করতে থাকবে। এমনকি এ প্রশ্নও করবে, আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন; তা হলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, পরবর্তীকালে একদিন আমি মসজিদে (নববীতে) উপস্থিত ছিলাম। ইত্যবসরে কতিপয় বেদুঈন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, হে আবূ হুরায়রা (ﷺ)! এ তো আল্লাহ তা‘আলা। তা হলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হাতে কিছু কংকর নিয়ে তাদের প্রতি তা নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও, আমার বন্ধু [রাসূল (ﷺ)] সত্য কথা বলে গিয়েছেন’।[৭]
জাহমিয়্যাদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান
১- আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, لَنْ تَرَوْا رَبَّكُمْ حَتَّى تَذُوْقُوا الْمَوْتَ ‘মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ না করা পর্যন্ত তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পারবে না’।[৮]
২- সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
صَلَّيْتُ وَرَاءَ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَلٰى صَبِيٍّ لَمْ يَعْمَلْ خَطِيْئَةً قَطُّ فَسَمِعْتُهُ يَقُوْلُ (اَللَّهُمَّ أَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ)
‘আমি আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পিছনে একটি বালকের জানাযার ছালাত আদায় করেছি, যে কখনও পাপ করেনি। আমি তাকে বলতে শুনেছি, اَللَّهُمَّ أَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে কবরের শাস্তি হতে রক্ষা করুন’।[৯]
খারেজীদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান
৩- উমাইর ইবনু ইসহাক (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ذَكَرُوا الْخَوَارِجَ عِنْدَ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، قَالَ : أُولَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ ‘আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিকট খারেজীদের সম্পর্কে উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, তারা তো সৃষ্টির সর্বনিকৃষ্ট’।[১০]
মুরজিয়াদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান
৪- আব্দুল্লাহ ইবনু রবী‘আহ আল-হাযরামী (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, اَلْإِيْمَانُ يَزْدَادُ وَيَنْقُصُ ‘ঈমান বাড়ে ও কমে’।[১১]
৫- আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, الإِيْمَانُ نَزِهٌ، فَمَنْ زَنَا فَارَقَهُ الإِيْمَانُ، فَمَنْ لامَ نَفْسَهُ وَرَاجَعَ رَاجَعَهُ الإِيْمَانُ ঈমান হলো খাঁটি-নিষ্কলুষ। সুতরাং যে ব্যক্তি ব্যভিচার করবে, ঈমান তাকে ত্যাগ করবে। আর সে নিজেকে দোষারোপ করে ফিরে আসলে ঈমানও তার কাছে ফিরে আসবে’।[১২]
ক্বাদারিয়্যাদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান
৬- আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, سَيَكُونُ نَاسٌ يُصَدِّقُونَ بِقَدَرٍ وَيُكَذِّبُونَ بِقَدَرٍ فَيَلْعَنُهُمْ أَبُو هُرَيْرَةَ عِنْدَ قَوْلِهِ هَذَا ‘শীঘ্রই কিছু মানুষ তাক্বদীরকে সত্যায়ন করবে এবং অস্বীকার করবে। এই কথা বলার সময় আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাদেরকে অভিশাপ দেন (যারা তাক্বদীরকে অস্বীকার করে তাদের জন্য)’।[১৩]
ঘ. বিদ‘আত প্রতিরোধে আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) (মৃত ৬৩ হি.)-এর অবদান
তিনি ছিলেন বিখ্যাত ইমাম, মুজতাহিদ ও মদীনার মুফতী। নবী (ﷺ), উমার, আলী, ইবনু আব্বাস, জাবির, যায়েদ ইবনু ছাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-এর নিকট থেকে তিনি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর নিকট থেকে ছাহাবীদের মধ্যে আয়েশা, ইবনু উমার, জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) সহ অন্যান্য এবং তাবেয়ীদের মধ্যে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব, আবূ উছমান আন-নাহদী, আলক্বামা (রাহিমাহুমুল্লাহ) সহ প্রভৃতি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি সর্বপ্রথম খন্দক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি মোট ১২টি যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন, যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছ থেকে অনেক সুন্নত এবং প্রচুর জ্ঞান সংরক্ষণ করেছিলেন। এছাড়া তিনি একজন মহান ছাহাবী, প্রাজ্ঞ আলেম এবং মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
عُرِضْتُ يَوْمَ أُحُدٍ عَلَى
النَّبِيِّ ﷺ
وَلِي ابْنُ ثَلَاثَ عَشْرَةَ، فَجَعَلَ أَبِيْ يَأْخُذُ بِيَدِيْ فَيَقُوْلُ: يَا
رَسُوْلَ اللهِ، إِنَّهُ عَبِلُّ الْعِظَامِ، وَإِنْ كَانَ مُؤَذِّنًا، قَالَ:
وَجَعَلَ النَّبِيُّ ﷺ
يُصَعِّدُ فِيَّ الْبَصَرَ وَيُصَوِّبُهُ ثُمَّ قَالَ: «رُدَّهُ» فَرَدَّنِيْ.
‘উহুদের যুদ্ধের দিন আমাকে নবী (ﷺ)-এর কাছে পেশ করা হল। তখন আমি তেরো বছরের একটি ছেলে ছিলাম এবং আমার পিতা আমার হাত ধরে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! সে হাড়ে অনেক মোটাসোটা একজন মানুষ। যদি একজন মুয়াযিযন (হিসাবে তাকে নেয়া হয়)। রাবী বললেন, ‘তখন নবী (ﷺ) আমার উপরে চোখ তুলে তাকালেন এবং মন্তব্য করলেন যে, তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। অতঃপর আমাকে (আমার পিতা) ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন’।[১৪] অর্থাৎ উহূদের যুদ্ধের দিন তিনি ছোট থাকায় তাঁকে যুদ্ধের অনুমতি ছিল না। হানযালা ইবনু আবী সুফিয়ান (রাহিমাহুল্লাহ) অনেক পণ্ডিত থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীছের ব্যাপারে আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর চেয়ে অধিক জ্ঞানী লোক সম্পর্কে আমি জানি না।[১৫] বিদ‘আতীদের বিরুদ্ধে অন্যান্য ছাহাবীদের চেয়ে আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একটু বেশি কঠোর ছিলেন। যেমন,
বিদ‘আতীদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান
১- একদা আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন: وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ فِیۡکُمۡ رَسُوۡلَ اللّٰہِ ؕ لَوۡ یُطِیۡعُکُمۡ فِیۡ کَثِیۡرٍ مِّنَ الۡاَمۡرِ لَعَنِتُّمۡ ‘তোমরা জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) রয়েছেন; তিনি বহু বিষয়ে তোমাদের কথা শুনলে তোমরাই কষ্ট পাবে’ (সূরা আল-হুজুরাত: ৭)। অতঃপর বলেন যে, هذا نبيكم وخيار أمتكم لو أطاعهم في كثير من الأمر لعنتوا فكيف بكم اليوم؟ ‘এই তোমাদের নবী এবং তোমাদের উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। যদি তাদের (ছাহাবীদের) অনেক বিষয় তিনি শুনতেন, তাহলে তাদের কষ্টের কারণ হত, তাহলে আজ তোমাদের অবস্থা কেমন’? [১৬]
২- আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَخْرُجُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى إِلَى الْمُصَلَّى، فَأَوَّلُ شَىْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلَاةُ ثُمَّ يَنْصَرِفُ، فَيَقُوْمُ مُقَابِلَ النَّاسِ، وَالنَّاسُ جُلُوْسٌ عَلَى صُفُوْفِهِمْ، فَيَعِظُهُمْ وَيُوْصِيْهِمْ وَيَأْمُرُهُمْ، فَإِنْ كَانَ يُرِيْدُ أَنْ يَقْطَعَ بَعْثًا قَطَعَهُ، أَوْ يَأْمُرَ بِشَىْءٍ أَمَرَ بِهِ، ثُمَّ يَنْصَرِفُ. قَالَ أَبُوْ سَعِيْدٍ فَلَمْ يَزَلِ النَّاسُ عَلَى ذَلِكَ حَتَّى خَرَجْتُ مَعَ مَرْوَانَ وَهْوَ أَمِيْرُ الْمَدِيْنَةِ فِىْ أَضْحًى أَوْ فِطْرٍ، فَلَمَّا أَتَيْنَا الْمُصَلَّى إِذَا مِنْبَرٌ بَنَاهُ كَثِيْرُ بْنُ الصَّلْتِ، فَإِذَا مَرْوَانُ يُرِيْدُ أَنْ يَرْتَقِيَهُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّىَ، فَجَبَذْتُ بِثَوْبِهِ فَجَبَذَنِىْ فَارْتَفَعَ، فَخَطَبَ قَبْلَ الصَّلَاةِ، فَقُلْتُ لَهُ غَيَّرْتُمْ وَاللهِ. فَقَالَ أَبَا سَعِيْدٍ، قَدْ ذَهَبَ مَا تَعْلَمُ. فَقُلْتُ مَا أَعْلَمُ وَاللهِ خَيْرٌ مِمَّا لَا أَعْلَمُ. فَقَالَ إِنَّ النَّاسَ لَمْ يَكُوْنُوْا يَجْلِسُوْنَ لَنَا بَعْدَ الصَّلَاةِ فَجَعَلْتُهَا قَبْلَ الصَّلَاةِ .
‘নবী (ﷺ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদমাঠে যেতেন এবং সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল ছালাত। আর ছালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাঁদের নছীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন তবে তা জারি করতেন। অতঃপর তিনি ফিরে যেতেন। আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, লোকেরা বরাবর এ নিয়মই অনুসরণ করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদীনার ‘আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যে আমি তাঁর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদমাঠে পৌঁছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বর দেখতে পেলাম, সেটি কাছীর ইবনু ছাল্ত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তৈরি করেছিলেন। মারওয়ান ছালাত আদায়ের পূর্বেই এর উপর আরোহণ করতে উদ্যত হলেন। আমি তাঁর কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি কাপড় ছাড়িয়ে খুৎবা দিলেন। আমি তাকে বললাম, ‘আল্লাহর কসম! তোমরা (রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ। সে বলল, হে আবূ সাঈদ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গেছে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানি না। সে তখন বলল, লোকজন ছালাতের পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই ওটা ছালাতের আগেই করেছি’।[১৭]
সুধী পাঠক! খলীফা উমাইয়া ঈদের ছালাতের পূর্বে খুতবা দেয়ার রীতি চালু করলে ছাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার কাপড় টেনে ধরেন এবং চরমভাবে বিরোধিতা করেন। বিদ‘আতের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান এখানেই পরিস্ফুটিত হয়।
৩- সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
بينا أنا عند ابن عباس إذ دخل علينا أبو سعيد الخدري، فدخل رجل من الصيارفة، فقال: يا أبا عباس ما ترى صرف الذهب وزنا بوزن والورق بالورق زيادة؟ فقال ابن عباس: ليس بذلك بأس إذا كان يدا بيد. فقال أبو سعيد: ليس كذلك، نهى عن هذا رسول الله ﷺ ، فقال ابن عباس: نحن أعلم بهذا منك، إنما كان الربا لنا. فقال أبو سعيد: أحدثك عن رسول الله ﷺ وتحدثني عن نفسك، لا يجمعني وإياك سقف بيت أبدا.
‘একদা আমি ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর নিকট থাকাবস্থায় আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাদের মাঝে প্রবেশ করলেন। অতঃপর সেখানে একজন মুদ্রা ব্যবসায়ী প্রবেশ করল এবং জিজ্ঞেস করল যে, আব্বাসের পুত্র! ওযনে সোনার বিনিময়ে সোনা ও রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্যের অতিরিক্ত ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে আপনার মতামত কী? তখন ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, হাতে হাতে তথা নগদে হলে কোন সমস্যা নেই। এমতাবস্থায় আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, এমনটি নয়। এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিষেধ করেছেন। তখন ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, আমাদের সূদের ব্যাপারে আমরা আপনার চেয়ে বেশি অবগত। তখন আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীছ বর্ণনা করছি আর তুমি আমাকে নিজের কথা বলছ। একটি বাড়ীর ছাদ কখনোই তোমাকে আর আমাকে একত্রিত করবে না’।[১৮]
সুধী পাঠক! সুন্নাহর বিপরীতে ব্যক্তিগত রায় ও সামাজিক প্রথার কোন মূল্য নেই। যেমনটি আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উক্ত উক্তির মাধ্যম স্পষ্ট হয়েছে। উল্লেখ্য, উক্ত হাদীছ শ্রবণের পর ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তাঁর অবস্থান থেকে ফিরে আসেন।[১৯]
খারেজীদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান
৪- আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
بَيْنَا النَّبِىُّ ﷺ
يَقْسِمُ ذَاتَ يَوْمٍ قِسْمًا فَقَالَ ذُو الْخُوَيْصِرَةِ رَجُلٌ مِنْ بَنِى
تَمِيْمٍ يَا رَسُوْلَ اللهِ اعْدِلْ. قَالَ « وَيْلَكَ مَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ
أَعْدِلْ». فَقَالَ عُمَرُ ائْذَنْ لِىْ فَلأَضْرِبْ عُنُقَهُ. قَالَ «لَا، إِنَّ
لَهُ أَصْحَابًا يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلَاتَهُ مَعَ صَلَاتِهِمْ، وَصِيَامَهُ
مَعَ صِيَامِهِمْ، يَمْرُقُوْنَ مِنَ الدِّيْنِ كَمُرُوْقِ السَّهْمِ مِنَ
الرَّمِيَّةِ، يُنْظَرُ إِلَى نَصْلِهِ فَلَا يُوْجَدُ فِيْهِ شَىْءٌ، ثُمَّ
يُنْظَرُ إِلَى رِصَافِهِ فَلَا يُوْجَدُ فِيْهِ شَىْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى
نَضِيِّهِ فَلَا يُوْجَدُ فِيْهِ شَىْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى قُذَذِهِ فَلَا يُوْجَدُ
فِيْهِ شَىْءٌ، سَبَقَ الْفَرْثَ وَالدَّمَ، يَخْرُجُوْنَ عَلَى حِيْنِ فُرْقَةٍ
مِنَ النَّاسِ، آيَتُهُمْ رَجُلٌ إِحْدَى يَدَيْهِ مِثْلُ ثَدْىِ الْمَرْأَةِ، أَوْ
مِثْلُ الْبَضْعَةِ تَدَرْدَرُ». قَالَ أَبُوْ سَعِيْدٍ أَشْهَدُ لَسَمِعْتُهُ
مِنَ النَّبِىِّ ﷺ
وَأَشْهَدُ أَنِّى كُنْتُ مَعَ عَلِىٍّ حِيْنَ قَاتَلَهُمْ، فَالْتُمِسَ فِى
الْقَتْلَى، فَأُتِىَ بِهِ عَلَى النَّعْتِ الَّذِى نَعَتَ النَّبِىُّ ﷺ.
‘একবার নিজ অধিকারভুক্ত কিছু মাল নবী (ﷺ) বণ্টন করে দিচ্ছিলেন। এমন সময় তামীম গোত্রের যুল খুয়াইছিরা নামক এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ইনছাফ করুন। তখন তিনি বললেন, ওয়াইলাকা (তোমার অমঙ্গল হোক) আমি ইনছাফ না করলে আর কে ইনছাফ করবে? তখন ‘উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি এর গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, না। কারণ, তার এমন কতকগুলো সঙ্গী আছে, যাদের ছালাতের সামনে নিজেদের ছালাতকে তুচ্ছ মনে করবে এবং তাদের ছিয়ামের সামনে তোমাদের নিজেদের ছিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়... গোবর ও রক্তকে এমনভাবে অতিক্রম করে যায় যে তীরের অগ্রভাগ দেখলে তাতে কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না, তার উপরিভাগে দেখলেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। তার কাঠামোতেও কোন চিহ্ন নেই। তার পাতির মধ্যেও কোন চিহ্ন নেই। এমন সময় তাদের আবির্ভাব হবে, যখন মুসলিমদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিবে। তাদের পরিচয় হলো, তাদের নেতা এমন এক ব্যক্তি হবে, যার একহাত স্ত্রীলোকের স্তনের মত অথবা পিত্তের মত কাঁপতে থাকবে। রাবী আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিয়ে বলছি যে, আমি নিশ্চয় নবী (ﷺ) থেকে একথা শুনেছি এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি নিজে ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে ছিলাম যখন তিনি এ দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। তখন সে লোকটিকে যুদ্ধে নিহত লোকদের মধ্য থেকে তালাশ করে আনার পর তাকে ঠিক সেই হালাতেই পাওয়া গেল, যে হালাতের বর্ণনা নবী (ﷺ) দিয়েছিলেন’।[২০]
৫- আছিম ইবনু শুমাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
سَمِعْتُ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ يَقُولُ وَيَدَاهُ هَكَذَا ، يَعْنِي تَرْتَعِشَانِ مِنَ الْكِبَرِ : لَقِتَالُ الْخَوَارِجِ أَحَبُّ إلَيَّ مِنْ قِتَالِ عدَّتِهِمْ مِنْ أَهْلِ الشِّرْكِ
‘আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তার হাত ছিল এমন অর্থাৎ অহংকারে তারা কাঁপছিল। তাই মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করার চেয়ে আমার কাছে খারেজীদের সাথে যুদ্ধ অধিক পসন্দের’।[২১]
মুরজিয়াদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান
৬- আওযাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলতেন যে, الشهادة بدعة والبراءة بدعة والإرجاء بدعة ‘শাহাদত (তথা বিনা দলীলে কাউকে জান্নাতী বলে সাক্ষ্য দেয়া) বিদ‘আত, বারায়াত (তথা আবূ বকর ও উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে মুক্ত করা যেমন শী‘আরা করে থাকে, তা) বিদ‘আত এবং ইরজা (তথা স্থগিতকরণ) বিদ‘আত তথা মুরজিয়ারা বিদ‘আতী’।[২২]
ক্বাদারিয়াদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান
আবূ বকর আল-কালবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
رأيت شيخا يزحف عند قصر أوس؛ قال: سمعت أبا سعيد الخدري رحمه الله يقول: لو أن رجلا صام النهار وقام الليل ثم كذب بشيء من القدر؛ لأكبه الله في جهنم رأسه أسفله
‘আমি জনৈক বৃদ্ধকে হামাগুড়ি দিয়ে আউসের প্রাসাদের দিকে যেতে দেখলাম। তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি, যদি কোন ব্যক্তি দিনের বেলা ছিয়াম রাখে এবং রাতে ছালাত আদায় করে অতঃপর ভাগ্য সম্পর্কে কিছু মিথ্যা বলে; তাহলে আল্লাহ তাকে মাথা নিচু করে ও অধোমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করুন’।[২৩]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।
[১]. মাওসূ‘আতু মাওয়াক্বিফুস সালাফ ফিল আক্বীদাতি ওয়াল মানহাজি ওয়াত তারবিয়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮০।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৭০৮ (ইফাবা, হা/৩৪৪০; আ. প্র., হা/৩৪৩৩)।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৪৭ ‘কিতাবুল বুয়ূ‘-৩৪।
[৪]. তিরমিযী, হা/৭৯; ইবনু মাজাহ, হা/৪৮৫, সনদ হাসান।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৮, শব্দ তার (ইফাবা, হা/৫৩৭; ই. সে. হা/৫৫৩); আবূ দাঊদ, হা/১০৫; মিশকাত, হা/৩৯১।
[৬]. মাওসূ‘আতু মাওয়াক্বিফুস সালাফ ফিল আক্বীদাতি ওয়াল মানহাজি ওয়াত তারবিয়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮১।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৫।
[৮]. হাফিয ইবনু আহমাদ ইবনু আলী আল-হুকমী (মৃ. ১৩৭৭ হি.), মা‘আরিজিল কবুল বিশারহি সালমিল উছূল ইলা ইলমিল উছূল (দাম্মাম: দারু ইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম সংস্করণ, ১৪১০ হি./১৯৯০ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৩৬।
[৯]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৭৭৬; মিশকাত, হা/১৬৮৯, সনদ ছহীহ। এ বিষয়ে আরো বর্ণিত হয়েছে যে- বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৭০৪২; মুছান্নাফু আব্দুর রাযযাক, হা/৬৬১০।
[১০]. মুছান্নাফু ইবনু আবী শাইবা, হা/৩৯০৪০।
[১১]. আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু হাম্বাল আশ-শাইবানী, আস-সুন্নাহ (দাম্মাম: দারু ইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম সংস্করণ, ১৪০৬ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩১৪, আছার নং- ৬২২।
[১২]. আল-আজুর্রী, আশ-শারী‘আহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৫৫, আছার নং ২২৯; আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল হামীদ আল-আছরী, আল-ওয়াজীযু ফী আক্বীদাতিস সালাফিছ ছালিহ (সঊদী আরব: ওয়াযারাতুশ শুয়ূনিল ইসলামিয়্যাহ ওয়াল আওকাফ ওয়াদ দা‘ওয়াতি ওয়াল ইরশাদ, ১৪২২ হি.), পৃ. ৯৫; ইবনু বাত্তা, আল-ইবানাহ ‘আন শারী‘আতিল ফিরক্বাতিন নাজিয়্যাহ (রিয়াদ: ফিরক্বাতুর রাইয়াহ, ২য় সংস্করণ, ১৪১৫ হি./১৯৯৪ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৭১৯।
[১৩]. আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু হাম্বাল, আস-সুন্নাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪২০, আছার নং- ৯২০; মা‘আরিজিল কবুল বিশারহি সালমিল উছূল ইলা ইলমিল উছূল, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৯৬৭।
[১৪]. হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাইন, হা/৬৩৮৯।
[১৫]. মাওসূ‘আতু মাওয়াক্বিফুস সালাফ ফিল আক্বীদাতি ওয়াল মানহাজি ওয়াত তারবিয়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৪০।
[১৬]. আবূ ইসমাঈল আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-আনছারী আল-হারুভী, যাম্মুল কালামি ওয়া আহলুহু (মদীনা মুনাওয়ারাহ: মাকতাবাতুল উলূম ওয়াল হিকাম, ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭২।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৫৬; মিশকাত, হা/১৪২৬।
[১৮]. যাম্মুল কালামি ওয়া আহলুহু (মদীনা মুনাওয়ারাহ: মাকতাবাতুল উলূম ওয়াল হিকাম, ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৩২-১৩৩, আছার নং-২৮৪।
[১৯]. মাওসূ‘আতু মাওয়াক্বিফুস সালাফ ফিল আক্বীদাতি ওয়াল মানহাজি ওয়াত তারবিয়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩০৭।
[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১৬৩ (ইফাবা, হা/৫৬১৯; আ. প্র., হা/৫৭২৩); ছহীহ মুসলিম, হা/১০৬৪।
[২১]. মুছান্নাফে ইবনু আবী শাইবা, হা/৩৯০৪১।
[২২]. আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু হাম্বাল, আস-সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩১৮, আছার নং ৬৪২। উল্লেখ্য, এ বর্ণনাটির সনদ মুনকাতি‘, কিন্তু শাহেদ থাকার কারণে বর্ণনাটি ছহীহ। দ্র.: ড. সফর ইবনু আব্দুর রহমান আল-হাওয়ালী, যাহিরাতুল ইরজা ফিল ফিকরিল ইসলামী, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৬৪।
[২৩]. আল-ইবানাহ ‘আন শারী‘আতিল ফিরক্বাতিন নাজিয়্যাহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৬৮, আছার নং- ১৬৪৭-১৬৪৯।