বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২১ অপরাহ্ন

দু‘আ ও যিকর : আল্লাহর অনুগ্রহ ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*


(৩য় কিস্তি)

যিক্রকারীদেরকে রহমত দ্বারা পরিবেষ্টন করা হয় এবং তাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ হয়

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ وَأَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُمَا شَهِدَا عَلَى النَّبِيِّ ﷺ أَنَّهُ قَالَ لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُوْنَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا حَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِيْنَةُ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيْمَنْ عِنْدَهُ

আবূ হুরায়রা ও আবূ সাঈদ খুদুরী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তাঁরা দু’জন প্রত্যায়ন করে বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেন, লোকজন যখন আল্লাহর যিক্র করে তখন আল্লাহর ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে নেন, তাঁর রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলে, তাদের উপর শান্তি নাযিল হয় এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকটে থাকা ফেরেশতাগণের সাথে তাদের ব্যাপারে আলোচনা করেন।[১]

যিক্র আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি দানকারী

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ  رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَا عَمِلَ آدَمِيٌّ عَمَلًا قَطُّ أَنْجَى لَهُ مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ ذِكْرِ اللهِ.

মু‘আয ইবুন জাবাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, বনী আদম আল্লাহর যিক্রের চেয়ে উত্তম এমন কোন আমল করে না, যা তাকে আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি দিতে পারে’।[২]

উত্তম আমল

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُسْر الْمُازَنِي  رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ أَعْرَابِيَانِ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ أَحَدهُمَا يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ النَّاسِ خَيْرٌ قَالَ طُوْبَى لِمَنْ طَالَ عُمُرُهُ وَحَسُنَ عَمَلُهُ وَقَالَ الآخَرُ أَيُّ الْعَمَلِ خَيْرٌ قَالَ أَنْ تُفَارِقَ الدُّنْيَا وَلِسَانُكَ رَطْبٌ مِنْ ذِكْرِ اللهِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর আল-মুযানী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, দু’জন বেদুইন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকটে আগমন করল। তাদের একজন জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! উত্তম মানুষ কে? তিনি বলেন, সে ব্যক্তির জন্য শুভ সংবাদ, যে দীর্ঘ জীবন লাভ করে এবং উত্তম আমল করে। অপর ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, কোন আমল উত্তম? তিনি বললেন, তুমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এমতাবস্থায় যে, তোমার জিহ্বা আল্লাহর যিক্রে সিক্ত থাকে।[৩]

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيْكِكُمْ وَأَرْفَعهَا فِي دَرَجَاتِكُمْ وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ إِنْفَاقِ الذَّهَبِ وَالْوَرِقِ وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقَكُمْ؟ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ ذِكْرُ اللهِ تَعَالَى.

আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কি তোমাদের অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক হতে সবচেয়ে উঁচু, স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খয়রাত করার চেয়েও বেশি ভাল এবং তোমাদের শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা ও তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভাল? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলার যিক্র।[৪]

যিক্রকারীর সাথী হল ফেরেশতা

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ مَا مِنْ رَاكِبٍ يَخْلُوْ فِي مَسِيْرِهِ بِاللهِ وَذِكْرِهِ إِلَّا كَانَ رَدْفُهُ مَلَكٌ وَلاَ يَخْلُوْ بِشِعْرٍ وَنَحْوِهِ إِلَّا كَانَ رَدْفُهُ شَيْطَانٌ.

উক্ববাহ ইবনু আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) বলেন, যখন কোন সওয়ারী তার ভ্রমণ পথে আল্লাহর যিক্র করে, তখন তার পিছনে একজন ফেরেশতা সওয়ার হয়। আর যখন কবিতা বা অন্য কিছু পাঠ করে তখন শয়তান তার পিছনে সওয়ার হয়।[৫]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللهَ فِيْهِ إِلَّا كَانَ عَلَيْهِمْ تِرَةً ومَا مَشَى أَحَدٌ مَمْشًى لَمْ يَذْكُرِ اللهَ فِيْهِ إِلَّا كَانَ عَلَيْهِ تِرَةً وَمَا أَوَى أَحَدٌ إِلَى فِرَاشِهِ وَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ فِيهِ إِلَّا كَانَ عَلَيْهِ تِرَةً.

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন সম্প্রদায় কোন মজলিসে বসে, অথচ সেখানে আল্লাহর যিক্র করে না, তাদের জন্য আফসোস ও লাঞ্ছনা। যখন কোন ব্যক্তি রাস্তায় চলে অথচ সেখানে আল্লাহর যিক্র করে না, তার জন্য লাঞ্ছনা। যখন কোন ব্যক্তি বিছানায় ঘুমাতে যায় অথচ সেখানে আল্লাহর যিক্র করে না, তার জন্য লাঞ্ছনা’।[৬]

আল্লাহর যিক্রে শয়তান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়

عَنْ أَبِي الْمَلِيْحِ عَنْ رَجُلٍ قَالَ كُنْتُ رَدِيْفَ النَّبِيِّ ﷺ فَعَثَرَتْ دَابَّتُهُ فَقُلْتُ تَعِسَ الشَّيْطَانُ فَقَالَ لا تَقُلْ تَعِسَ الشَّيْطُانُ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَعَاظَمَ حَتَّى يَكُوْنَ مِثلَ الَبَيْتِ وَيَقُوْلُ بِقُوَّتِي وَلَكِنْ قُلْ بِسْمِ اللهِ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَصَاغَرَ حَتَّى يَكُوْنَ مِثْلَ الذُّبَابِ.

আবুল মালীহ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে, তিনি এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমি জন্তুযানে নবী (ﷺ)-এর পিছনে বসা ছিলাম। হঠাৎ তার সাওয়ারী হোঁচট খেলে আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হয়েছে। তিনি বললেন, একথা বলো যে, না শয়তান ধ্বংস হয়েছে। কেননা তুমি একথা বললে সে অহংকারে ঘরের মত বড় আকৃতির হয়ে যাবে এবং সে বলবে, আমার ক্ষমতায় হয়েছে। অতএব বল, আল্লাহর নামে। যখন তুমি ‘আল্লাহর নামে’ বলবে শয়তান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে মাছির মত হয়ে যাবে।[৭]

আল্লাহর যিক্রকারীর জন্য জাহান্নাম হারাম

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ  رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ النَّارَ.

উবাদাহ ইবনু ছামেত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তাঁর জন্য জাহান্নামকে হারাম করে দিবেন।[৮]

ইতবান ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমার দৃষ্টিশক্তি কিছুটা কমে যাওয়ায় আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এ মর্মে সংবাদ পাঠালাম যে, আমার ইচ্ছা আপনি আমার বাড়িতে এসে এক জায়গায় ছালাত আদায় করবেন এবং আমি সে জায়গাটি ছালাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিব। তিনি (ইতবান) বলেন, নবী (ﷺ) আসলেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তার সাথে তার কতিপয় ছাহাবীও আসলেন। তিনি ঘরে প্রবেশ করেই ছালাত আদায় করতে লাগলেন। আর তার ছাহাবীগণ আপোসে কথাবার্তা বলতে থাকলেন। তাদের আলোচনার এক পর্যায়ে এসে তারা মালিক ইবনু দুখশুম সম্পর্কে মস্ত বড় আপত্তিকর কথা বলে ফেলল। আবার কেউ এ ইচ্ছাও প্রকাশ করলেন যে, নবী (ﷺ) তাকে বদ দু‘আ করুন এবং সে ধ্বংস হয়ে যাক। আবার কেউ এ বাসনাও প্রকাশ করলেন যে, যদি তার উপর আকস্মিক কোন দুর্ঘটনা নেমে আসত তাহলে খুবই উত্তম হত। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছালাত সমাপ্ত করলেন এবং জিজ্ঞেস করলে, সে (মালিক) কি এ কথার সাক্ষ্য দেয় না যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)? লোকেরা বলল, সে মুখে বলে ঠিকই কিন্তু তার অন্তরে এর প্রতি কোন বিশ্বাস নেই। তিনি বললেন, لَا يَشْهَدُ أَحَدٌ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنِّي رَسُوْلُ اللهِ فَيَدْخُلَ النَّارَ أَوْ تَطْعَمَهُ ‘যে কেউ এ সাক্ষ্য দিবে যে, ‘আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)’ সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। অথবা তিনি বলেছেন, আগুন তাকে গ্রাস করতে পারবে না।[৯]

আল্লাহর ভালোবাসা লাভ

যিক্রের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা যায়। যেমন কেউ সূরা ইখলাছ পাঠ করতে ভালোবাসে। আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ভালোবাসেন।[১০]

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা লাভ

যে ব্যক্তি শয্যা গ্রহণের সময় ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়বে, ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যূম’- আয়াতের শেষ পর্যন্ত, তাহলে আল্লাহর পক্ষ হতে সর্বদা তার জন্য একজন পাহারাদার থাকবে এবং শয়তান তার নিকট আসতে পারবে না, যতক্ষণ না সে ভোরে উঠে।[১১]

আশ্রয় প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম

যিক্র আল্লাহর নিকট আশ্রয় নেয়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। যেমন প্রবল ঝড় ও ঘোর অন্ধকারের সময় ‘সূরা আল-ফালাক্ব’ ও ‘সূরা আন-নাস’ দ্বারা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয়। কেননা এই সূরা দু’টি আশ্রয় প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।[১২] তাছাড়া আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া জন্য ‘সূরা আল-ফালাক্ব এবং ‘সূরা আন-নাস’ সবচেয়ে উত্তম সূরা।[১৩]

যে কোন বিপদাপদের মোকাবিলায় যথেষ্ট

আল্লাহর যিক্র যে কোন বিপদাপদের মোকাবিলায় যথেষ্ট। যেমন সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে সূরা আল-ইখলাছ, সূরা আল-ফালাক্ব ও সূরা আন-নাস তেলাওয়াত করা। কেননা এই সূরাগুলো যে কোন বিপদাপদের মোকাবিলায় যথেষ্ট হবে (تَكْفِيْكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ)।[১৪]

আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভ

যিক্র করার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা অর্জন করে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ছালাতের পর ৩৩ বার সুবহা-নাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলবে, সর্বমোট ৯৯ বার। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, অতঃপর একশত পূর্ণ করার জন্য (لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ) বলবে, তাহলে তার সমস্ত পাপ ক্ষমা করা হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার ন্যায় হয়’।[১৫]

শাফা‘আরে অধিকারী হওয়া

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর সকালে দশবার এবং সন্ধ্যায় দশবার দরূদ পাঠ করে, ক্বিয়ামতের দিন সে আমার শাফা‘আতের অধিকারী হবে’।[১৬]

শিরক থেকে মুক্ত থাকা

আল্লাহর যিক্র বান্দাকে শিরক থেকে মুক্ত রাখে। যেমন কেউ সূরা আল-কাফিরূন তেলাওয়াত করলে সে শিরক থেকে মুক্ত থাকবে। কেননা এই সূরা শিরক হতে মুক্ত রাখে।[১৭]         

আল্লাহর নিকট বিনয়ী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম

বিনয়ী হওয়ার জন্য যিক্র অন্যতম উপায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাত্রিতে ছালাতে দাঁড়িয়ে দশটি আয়াত পাঠ করবে, তাকে গাফেলদের মধ্যে গণ্য করা হবে না এবং যে ব্যক্তি একশ’ আয়াত পাঠ করবে তাকে বিনয়ীদের মধ্যে গণ্য করা হবে, আর যে ব্যক্তি এক হাযার আয়াত পাঠ করবে, তাকে অধিক কার্যকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে’।[১৮]

জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল

আল্লাহর যিক্র বান্দার জন্য জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল। যেমন কেউ যদি আল্লাহর পসন্দনীয় চারটি বাক্য বলে। তাহলে তা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল। ক্বিয়ামতের দিন পাঠকারীর সামনে ও পিছন থেকে রক্ষাকারী।[১৯] বাক্যগুলো হল, سُبْحَانَ  اللهِ والْحَمْدُ  لِلهِ وَلَا  إِلٰهَ إِلَّا اللهُ واللهُ اكْبَرُ।

জান্নাত লাভ করা

যিক্রের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা যায়। যেমন সূরা আল-ইখলাছের তেলাওয়াত তেলাওয়াতকারীকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়[২০] এবং জান্নাতকে ওয়াজিব করে দেয়।[২১] ‘সূরা আল-ইখলাছ’ শেষ পর্যন্ত দশবার তেলাওয়াত করলে, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন’।[২২] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘প্রত্যেক ফরয ছালাত শেষে ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য কোন বাধা থাকে না মৃত্যু ব্যতীত’।[২৩] আব্দুল্লাহ্ ইবনু আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দু’টি বিষয়ে যখন কোন মুসলিম লক্ষ্য রাখবে, সে নিশ্চয় জান্নাতে যাবে। জেনে রাখ! বিষয় দু’টি সহজ কিন্তু আমলকারী কম। প্রত্যেক ছালাতের পর দশবার ‘সুবহানাল্লাহ্’, দশবার ‘আলহামদু লিল্লাহ’ ও দশবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। মুখে এটা একশ’ পঞ্চাশ (প্রত্যেক ছালাতে ৩০ বার করে ৫ ওয়াক্ত ছালাতে ১৫০ বার) কিন্তু ক্বিয়ামতে মীযানের পাল্লায় এটা এক হাযার পাঁচশ’। আর যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন বলবে, ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আলহামদু লিল্লাহ্’ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার’ ৩৪ বার (মোট একশ’ বার)। এটা মুখে একশ’ বটে কিন্তু মীযানে এক হাযার।[২৪] যে ব্যক্তি ইয়াক্বীনের সাথে ‘সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার’ দিনে পাঠ করবে এবং সন্ধ্যার পূর্বে মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি ইয়াক্বীনের সাথে উক্ত দু‘আ রাতে পাঠ করবে এবং সকাল হওয়ার আগে মারা যাবে, সেও জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।[২৫]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০০; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৮৫২।

[২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৩২; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘ হা/৫৬৪৪।

[৩]. হিলইয়াতুল আওলিয়া, হা/৩২৪২; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৮২।

[৪]. তিরমিযী হা/৩৩৭৭; সনদ ছহীহ।

[৫]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৮৯৫; সনদ হাসান, ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭০৬।

[৬]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৮৫০; সনদ ছহীহ।

[৭]. আবূ দাউদ, হা/৪৯৮২; সনদ ছহীহ।

[৮]. তিরমিযী, হা/৩৩৮৩; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮০০; সনদ হাসান।

[৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৫; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/১৫০৫; ।

[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৭৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৮১৩; মিশকাত, হা/২১২৯।

[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩১১; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৪২৪; মিশকাত, হা/২১২৩।

[১২]. আবূ দাঊদ, হা/১৪৬৩; মিশকাত, হা/২১৬২, সনদ ছহীহ।

[১৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৯১; নাসাঈ, হা/৯৫৩, ৫৪৩৯; মিশকাত, হা/২১৬৪, সনদ ছহীহ।

[১৪]. আবূ দাঊদ, হা/৫০৮২; তিরমিযী, হা/৩৫৭৫, সনদ হাসান ছহীহ।

[১৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৯৭; মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৭১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮২০; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২০১৬; মিশকাত, হা/৯৬৭।

[১৬]. মাজমূঊল যাওয়াইদ, ১০ম খ-, পৃ. ১২০; ছহীহুল জা‘মেঈ, হা/৬৩৫৭; সনদ হাসান।

[১৭]. আবূ দাঊদ, হা/৫০৫৫; তিরমিযী, হা/৩৪০৩; দারেমী, হা/৩৪২৭; মিশকাত, হা/২১৬১, সনদ ছহীহ ।

[১৮]. আবূ দাঊদ, হা/১৩৯৮; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৫৭২; মিশকাত, হা/১২০১, সনদ ছহীহ।

[১৯]. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা, হা/১০৬৮৪; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘ হা/৩২১৪; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৬৭।

[২০]. তিরমিযী, হা/২৯০১; মিশকাত, হা/২১৩০, সনদ ছহীহ।

[২১]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৭০৯; তিরমিযী, হা/২৮৯৭; নাসাঈ, হা/৯৯৪; মিশকাত, হা/২১৬০, সনদ ছহীহ।

[২২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৪৮; সনদ হাসান; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৫৮৯।

[২৩]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৭৪০৮; আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৮০৬৮, সনদ ছহীহ; বুলুগুল মারাম, হা/৩২৬; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৯৭২।

[২৪]. তিরমিযী, হা/৩৪১০; আবূ দাঊদ, হা/৫০৬৫, মিশকাত, হা/২৪০৬, সনদ ছহীহ।

[২৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৩০৬; ‘দু‘আসমূহ’ অধ্যায়; ‘শ্রেষ্ঠতম ইস্তিগফার আল্লাহর বাণী’ অনুচ্ছেদ; আবূ দাঊদ, হা/৫০৭০; তিরমিযী, হা/৩৩৯৩;  ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৭২; মিশকাত, হা/২৩৩৫।




প্রসঙ্গসমূহ »: দু‘আ
সুন্নাতের রূপরেখা - মাইনুল ইসলাম মঈন
কুরবানীর মাসায়েল - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
ফাযায়েলে কুরআন (৫ম কিস্তি) - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
ফাযায়েলে কুরআন (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
আত্মহত্যাকারীর শারঈ বিধান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
আল-কুরআন সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের মূল্যায়ন - রাফিউল ইসলাম
বিদ‘আত পরিচিতি (২০তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১১তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
মুছীবতে ধৈর্যধারণ করার ফযীলত - শায়খ আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম
বিদ‘আত পরিচিতি (১৪তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মেসবাহুল ইসলাম

ফেসবুক পেজ