মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৭:০২ পূর্বাহ্ন

ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ 

-ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন*


(৫ম কিস্তি)


৬. কুরাইশ বংশ!

রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ আমীর বা খলীফাহ’র ক্ষেত্রে শরী’আতের বিভিন্নসূত্রে কুরাইশ বংশের কথা উল্লিখিত রয়েছে। অনেকে এ ক্ষেত্রে ইজমা’র কথা বললেও এখানে বিতর্কের অবকাশ আছে।[১] আল্লামাহ্ ইবনু খালদূন বলেন,

"واختُلِفَ في الشَّرط الخَامِس وهُو النَّسب القُرَشِي"

“সর্বোচ্চ নেতৃত্বের জন্য পঞ্চম শর্ত (তাঁর হিসাবে) নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, আর সে শর্তটি হলো তাঁর কুরাইশ বংশের হওয়া।”[২] হাদীছে এসেছে :

قالَ رسولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "لَا يَزالُ هَذا الأمرُ فِي قُرَيشٍ، مَا بَقِي مِنهُم اثْنَان"

রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘এই দায়িত্ব কুরাইশের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তাদের মধ্য থেকে দু’জনও অবশিষ্ট থাকবে’।[৩]

যোগ্য কুরাইশী থাকলে তিনিই সর্বোচ্চ আমীর বা খলীফাহ্ হবেন। এ ব্যাপারে বেশ কিছু ছহীহ হাদীছ রয়েছে। তবে কুরাইশ বংশের সাথে শর্ত যুক্ত করে দেয়া রয়েছে : "مَا أقامُوا الدِّين".  “যতক্ষণ পর্যন্তÍ তাঁরা দ্বীন ক্বায়েম রাখবেন।”[৪] আবার হাদীছে এও এসেছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

"هَلَكَةُ أمَّتي عَلي يَدَيْ غِلمَةٍ مِن قُريَش"

“কুরাইশ বংশের কিছু বালকের হাতে আমার উম্মতের ধ্বংস।”[৫] অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

اِسْمَعُوْا وَأَطِيْعُوْا وَإِنِ اسْتُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِىٌّ كَأَنَّ رَأْسَهُ زَبِيْبَةٌ

‘তোমরা শুন এবং মান যদিওবা তোমাদের উপর হাবাসী দাসকেও আমীর বানানো হয় আর তার মাথা যদি (দেখতে) হয় কিসমিসের মত (ছোট ও কুঁচকানো বিশ্রি)’।[৬] হাদীছে আরো এসেছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায়ের হজ্জের ভাষণে বলেছেন,

وَلَو استُعمِلَ عَليكُم عَبدٌ يَقُودكُمْ بِكِتابِ اللهِ فَاسْمَعُوا وأطِيعوا

‘দাসও যদি তোমাদের শাসক নিয়োজিত হয় এবং  তোমাদেরকে আল্লাহ’র কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করে, তাহলে তার কথা শ্রবণ কর এবং মান্য কর।”[৭]

তেমনই নাক বোঁচা হাবাসী গোলামও যদি কোন ধরনের আমীর হয় তারও আনুগত্য করার নির্দেশ হাদীছে রয়েছে।[৮]

আর এক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানের পিতা ইবনু খালদূন কুরাইশকে প্রাধান্য দেয়ার কারণ হিসাবে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশ বংশের হওয়ার কারণে মুসলিম রাষ্ট্রে তাঁদের বিশেষ সম্মান ছিল, তাঁদের সার্বিক দ্বীনী ও দুনিয়াবী গ্রহণযোগ্যতা ছিল অধিক আর তাঁরা ছিলেন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা এবং দ্বন্দ্ব নিরসনের মাধ্যম, সাহসিকতার প্রতীক এবং জন প্রশাসনে অভিজ্ঞ ও দক্ষ। তাই সর্বোচ্চ নেতৃত্ব তথা খিলাফত বা ইমামতের ক্ষেত্রে কুরাইশের কথা এসেছে। শরী’আত এ জাতীয় ক্ষেত্রে সকল যুগে, সকল দেশে, সকল পরিস্থিতিতে শরী’য়তের কোন বিধানকে কোন বংশের সাথে নির্দিষ্ট করে দিতে পারে না। শুধু উপরি-উক্ত হিকমতসমূহ, যুগের প্রেক্ষাপট, বিশেষ পরিস্থিতি ও বিতর্ক নিরসনের জন্য কুরাইশকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যিনিই সর্বোচ্চ নেতা হোন না কেন, তিনি যদি কিতাব ও সুন্নাত অনুযায়ী নাগরিকগণকে কল্যাণকরভাবে পরিচালনা করেন; তাহলে তারই আনুগত্য করতে হবে।”[৯] ইবনু খালদূন আরো বলেন :

"أنَّ اشتِراطَ القُرَشِيَّة إنَّما هُو لِدَفعِ التَّنازُع"

‘কুরাইশী হওয়ার শর্ত লাগানো হয়েছে বিশেষতঃ (এ বিষয়ে নির্বাচনকালীন) বিতর্ক অবসানের জন্য।”[১০] অর্থাৎ মৌলিকভাবে নয়।

ইমামুল হারামাইন আবুল মা’আলী আল-জুয়াইনী এ’ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন :

)قال إمامُ الحَرمَين أبو المَعالي الجُويني:( "فأمّا الصِّفاتُ اللازمةُ، فَمِنها النسبُ؛ فالشَرط أن الإمامَ يَكون قُرشِيا، وقال النَّبي صلى الله عليه وسلَّم :"الأئمّةُ مِن قرَيش". والذي يُوضح الحَق أنّا لا نَجِدُ أنفُسنا ثلجَ الصُدورِ واليَقينَ المَبتوتِ هذا من فلقِ رسول الله صلى الله عليه وسلم، كَما لا نَجِد ذلك في سائرِ أخبار الأحاد، فإذا لا يَقتَضي هذا الحديثُ العلمَ باشتراطِ النَّسبِ في الإمامةِ. فالوَجهُ في إثباتِ ما نُحاوِله في ذلك أن الماضِينَ ما زالوا بايِحينَ بِاختِصاصِ هذا المَنصب بِقريش، ولَمْ يَتشوّف أحَد من غير قُريش إلى الإمامةِ على تَمادي الأمَد وتَطاولِ الأزمانِ. ...ولَسنا نَعقلُ احتِياجَ الإمامةِ في وَضعِها إلى النسَبِ ... "

“সর্বোচ্চ ইমামের জন্য যে জরুরী গুণাবলী তার মধ্যে একটি হলো বংশ। আর ইমামের জন্য কুরাইশী হওয়ার শর্ত- যে প্রসঙ্গে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সর্বোচ্চ ইমামগণ হবেন কুরাইশ বংশ থেকে।” তবে যে হক্ প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে আমাদের মধ্যে আত্মতৃপ্তি ও নিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপিত হচ্ছে না যে, উপর্যুুক্ত বাক্যটি রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অলঙ্ঘনীয় পরিষ্কার নির্দেশ, আর অন্যান্য সকল বর্ণনায় ঐ রকম পাচ্ছি না। সুতরাং এই হাদীছ সর্বোচ্চ ইমামতের ক্ষেত্রে বংশের শর্তের সুনিশ্চিত জ্ঞান প্রদানের দাবি করছে না। আমরা এক্ষেত্রে যা প্রমাণ করতে চাচ্ছি তার দিকটি শুধু এই যে, পূর্ববর্তীগণ এই পদটির জন্য কুরাইশ বংশ নির্ধারিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে বলাবলি করে এসেছেন, আর সুদীর্ঘ সময় ও যুগের পর যুগ কুরাইশ ছাড়া আর কেউ এ পদের জন্য অগ্রসর হননি ...। সর্বোচ্চ ইমামতকে নির্দিষ্ট বংশের মধ্যে রাখার প্রয়োজনীয়তা আমি বুঝতে পারছি না...।”[১১]

কিন্তু কুরাইশ বংশের অনুকূলে এতগুলো ছহীহ্ হাদীছ থাকা সত্ত্বেও ইমামুল হারামাইনের সন্তোষজনক দলীল না পাওয়ার দাবি কিছুটা আশ্চর্যজনকও বটে। হতে পারে- যেহেতু বিপরীত অর্থবোধক হাদীছও প্রচুর; তাই তিনি এজাতীয় উক্তি করেছেন।  

কেউ কেউ সংগঠনের আমীরের জন্যও কুরাইশী হওয়া শর্ত করে দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। শুধু সংগঠন কেন একমাত্র রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ আমীর ছাড়া আর কারো ক্ষেত্রে কুরাইশের প্রসঙ্গ শরী‘আতের দলীলের কোথাও আসেনি কিংবা কোন গ্রহণযোগ্য আলেমও এ পর্যন্ত তা জোরালোভাবে উত্থাপন করেননি। ইসলামের মত একটি বাস্তবমুখী ধর্মে সকল যুগে, সর্বস্থানে, সকল পরিস্থিতিতে এ জাতীয় বংশীয় শর্ত আবশ্যক না থাকাটাই সঙ্গত ও স্বাভাবিক। আরও উল্লেখ্য, দুনিয়াতে রাষ্ট্রীয় আমীর খুব বেশিসংখ্যক হওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং সে জন্য দু’ একজন যোগ্য কুরাইশী খুঁজে পাওয়া গেলে যেতেও পারে; কিন্তু অন্যান্য শাখা-প্রশাখার আমীর তো শতশত সংখ্যায় প্রয়োজন, সে প্রয়োজন মিটানো যাবে কী দিয়ে? রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জীবদ্দশায় অকুরাইশী যায়েদ বিন হারিছাহ্কে মু’তার যুদ্ধে আমীরুল র্হাব তথা যুদ্ধের সেনাপতি নিয়োগ দিয়েছিলেন অতঃপর তাঁর পুত্র উছামা বিন যায়েদকে সর্বশেষ অভিযানে (শাম-ফিলিস্তীন যুদ্ধে) সেনাপতি করেছিলেন।[১২] নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আব্দুল্লাহ্ বিন উম্মে মাকতূমকে (অন্ধ ছাহাবী) দু’বার মদীনাহ্’য় তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন (ও নিজে যুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন)।[১৩] কুবা মসজিদে ইমামতি করতেন অন্য বংশোদ্ভূত ছালেম মাওলা আবী হুযায়ফাহ্, তাঁর পিছনে ছালাত আদায় করতেন আবূ বাক্র (রাযিয়াল্লাহু আনহু), ’উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু), আবূ সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মত নেতৃস্থানীয় কুরাইশগণ।[১৪] বহু কুরাইশ থাকতে আবূ হুরায়রাহ্ আদ্দাউছী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হয়েছিলেন মদীনাহ’র গভর্নর, এবং তিনি মা আয়েশাহ্ (মৃ. ৫৮ হি.) (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর জানাযাহ্ পড়িয়েছিলেন।[১৫]

আবার ’উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে দাস বংশের ইবনু আব্যা (ইবনু আব্দুর রহমান) সাময়িকভাবে নাফে’ ইবনু ’আব্দিল হারিছ-এর অনুপস্থিতিতে মদীনাহ’র গভর্নর হয়েছিলেন।[১৬] হাফিয ইবনু হাজর ’আস্ক্বালানী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী শারহ্ ছহীহুল বুখারী’-তে ‘ইমারতে ’আম্মাহ্ ’আলাল বালাদ’ বা রাষ্ট্রীয় সার্বিক ইমারত (নেতৃত্ব) ও ‘বিলায়াতে খাছ্ছাহ্’ বা বিশেষ বিশেষ ইমারত (নেতৃত্ব) নিয়ে আলোচনা করেছেন।[১৭] সুতরাং কোন সংগঠনের আমীর হওয়ার জন্য কুরাইশীর শর্ত লাগানোটা অবান্তর প্রসঙ্গ। তবে যদি যোগ্যতম ও সত্যিকার কুরাইশী পাওয়া যায় তবে মন্দ কী? কিন্তু অযোগ্য বা অজ্ঞাত কুরাইশী সংগঠনের কোন উপকারে আসবে না- এটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে আহলে হাদীছ নেতা ও বিদ্বান আল্লামাহ্ আব্দুল্লাহিল কাফী সাহেবের বক্তব্য নিম্নরূপ :

“প্রয়োজন হইলে এবং যোগ্যতম হইলে যে কোরাইশী নহে, তাহাকে খলীফা নির্বাচন করা যাইতে পারে। কারণ মু‘য়ায বিন জাবাল খাযরাজ বংশীয় আনছারী ছিলেন, কোরাইশী ছিলেন না; সুতরাং কোরাইশী ছাড়া অন্য বংশীয় কাহারো খলীফা হওয়া অসিদ্ধ হইলে হযরত ওমর কেমন করিয়া তাহাকে স্থলাভিষিক্ত করিতে চাহিতেন”?[১৮]

উল্লেখ্য, মৃত্যু শয্যায় খলীফাহ্ ’উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছিলেন যে, যদি আজ মু‘য়ায বিন জাবাল আনছারী বেঁচে থাকতেন তাহলে তাঁকে আমি খলীফাহ্ নিযুক্ত করতাম।[১৯] এ ব্যাপারে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ‘অল ইন্ডিয়া আহলে হাদীছ কনফারেন্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী জেনারেল আল্লামাহ্ ছানাউল্লাহ্ অমৃতসরীর বক্তব্য উল্লেখযোগ্য :

”قريش يت هو تو افضل هي، نه هو تو غير قريشي قابل بهي هو سكتا هي“

“যদি কুরাইশী হন তাহলে তো উত্তম, যদি না হন তাহলে অকুরাইশীও যোগ্য হতে পারেন।”[২০] আল্লামাহ অমৃতসরী আরো উল্লেখ করেন :

”اكر كوئي شخص غير قريش بهي  ايسا هي، كه اسكي حق مين يه كهنا جائز هي  { وَ زَادَہٗ بَسۡطَۃً فِی الۡعِلۡمِ وَ الۡجِسۡمِ}، تو اس كو امام بنا لينا اس حديث كي خلاف نهين هي. جو شخص امام سياست نهين هي اس كي حق مين يه سوال هي بيدا نهين هوتا“

“যদি কোন অকুরাইশীও এমন হন যার ব্যাপারে কুরআনের এ কথা প্রযোজ্য- “তিনি তাঁকে জ্ঞানে ও দেহে অতিরিক্ত শক্তি দিয়েছেন।” (সূরা আল-বাকারাহ : ২৪৭); তাহলে তাঁকে রাষ্ট্রীয় ইমাম বানানো এই হাদীছ (ইমাম কুরাইশ থেকে হবে)-এর বিরোধী নয়। আর যে ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় ইমাম নন, তার ক্ষেত্রে কুরাইশী শর্ত হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না।”[২১]

এখানে আরো উল্লেখ্য, নেতৃত্বের লোভ, জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ ও অন্যদেরকে অবজ্ঞা করার প্রবণতাও কারো কারো মধ্যে জেগে উঠে। তখন তারা ভুয়া কুরাইশী ও মিথ্যা সৈয়দ বংশের দাবি করে প্রচারণা চালায়। আর এটা নতুন কিছুও নয়। ইমামুল হারামাইন আবুল মা‘আলী আল-জুয়াইনী তাঁর যুগে (৪র্থ ও ৫ম হিজরী শতক) মিসরের শাসকদের মিথ্যা কুরাইশী ও ভুয়া ফাতেমী দাবীর একটি চিত্র তুলে ধরেছেন এভাবে :

"ولمّا اشرأبَّ لِهذا المَنصب المارِقون في فُسطاطِ مِصر، اعتَزوا إلى شَجرة النّبوة على الافتِراء، و انْتَموا انتِماء الأدْعِياء، وبَذَلوا حَرائبَ الأموالِ للكاذِبين النَسَّابين، حتى ألحَقوهُم بصَميمِ النَسب“. (غياث الأمم،ص৮১)

“মিসরের প্রাসাদে যখন সীমালঙ্ঘনকারীরা এই পদ (সর্বোচ্চ আমীর) লাভের জন্য ঘাড় বাড়াল, তখন তারা ধোঁকার আশ্রয় নিয়ে নিজেদেরকে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বংশের সাথে জুড়ে দিল। এবং বানাউটি সম্পর্ক দাবীকারীদের মত ভুয়া সম্পর্ক স্থাপন করে নিল। আর মিথ্যাবাদী জীবনীকারদের পেছনে অসংখ্য অর্থ-সম্পদ ব্যয় করলো অতঃপর তারা এদেরকে কুরাইশ বংশের সাথে যুক্ত করে দিল।”[২২]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


* সাবেক অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

তথ্যসূত্র :
[১]. প্রফেসর ড. হাসান ইব্রাহীম হাসান, আন্-নুযুম আল-ইসলামিয়্যাহ, (মাকতাবাতুল মা’আরিফ, রিয়াদ, ১৪২৩ হি./২০০২), পৃ. ২৭।  
[২]. ইবনু খালদূন, মুকাদ্দিমাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৪১; ড. সুলায়মান কাসেম, আন্-নিযাম আস্সিয়াসী ফিল-ইসলাম, পৃ. ১৫২।
[৩]. বুখারী, আল-আহকাম, আমীর হবে কুরাইশ থেকে, (আব্দুল্লাহ বিন উমার থেকে বর্ণিত), হা/৭১৪০।
[৪]. বুখারী, আল-আহকাম, অধ্যায় : আমীরগণ কুরাইশ থেকে, (আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত), হা/৭১৩৯।
[৫]. বুখারী, আল-ফিতান, অধ্যায় : নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা : কুরাইশের বেওকুফ হঠকারী বালকদের হাতে আমার উম্মতের ধ্বংস, (আবূ হুরায়রাহ্ থেকে বর্ণিত), হা/৭০৫৮।
[৬]. বুখারী, আল-আহকাম, ইমামের কথা শুনা ও মানা যদি তা গুনাহের কাজ না হয়, (আনাস বিন মালিক থেকে বর্ণিত), হা/৭১৪২।
[৭]. মুসলিম, বিভাগ : আল-ইমারাহ্,  অধ্যায় : আমীরদেরকে মান্য করা ওয়াজিব যতক্ষণ তা গুনাহ’র কাজ না হয়, (উম্মুল হুছাইন থেকে বর্ণিত), হা/৪৭৩৫; নাসায়ী, বিভাগ : বাই’য়াত, অধ্যায় : ইমামের আনুগত্য করার তাগিদ, হা/৪২০৩; ইবনু মাজাহ, আল-জিহাদ, অধ্যায় : নেতার আনুগত্য, হা/২৮৬১।
[৮]. মুসলিম, বিভাগ : ইমারাহ্, হা/৪৭৩৯।
[৯]. দেখুন : মুকাদ্দিমাহ ইবনু খালদুন, পৃ. ১/২৪৩-২৪৫; এ বিষয়ে আরো দেখুন : আল্লামাহ্ ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, ফাতাওয়া ছানাইয়্যাহ, পৃ. ২/৫৯৯, ৬১৩; ড. সুলাইমান কাসেম, আন্-নিযাম আস্-সিয়াসি ফিল-ইসলাম, পৃ. ১৫২-১৫৪; ড. হাসান ইব্রাহীম, আন্-নুযুম আল-ইসলামিয়্যাহ, পৃ. ৩৭; শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ দেহলভী, হুজ্জাতুল্লাাহ আল-বালিগাহ, অধ্যায় : আল-খিলাফাহ্, পৃ. ২/৪২৫-৪২৭।
[১০]. ইবনু খালদূন, মুকাদ্দিমাহ, পৃ. ১/২৪৪-২৪৫।
[১১]. আবুল মা’আলী আল-জুয়াইনী, গিয়াছুল উমাম, পৃ. ৭৯-৮১।
[১২]. ‘প্রমাণাদিসংগঠন ও তরুণ’ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
[১৩]. আবূ দাউদ, খিরাজ, ফায়’ ওয়া ইমারাহ্, অধ্যায় : অন্ধ প্রশাসক হতে পারেন, হা/২৯৩১।
[১৪]. বুখারী, আল-আহকাম, অধ্যায় : মাওয়ালিদেরকে কাযীর পদে ও প্রশাসনিক পদে ইত্যাদি পদে নিয়োগ করা, হা/৭১৭৫।
[১৫]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ্ ওয়ান-নিহায়াহ্, পৃ. ৮/৪৮৮।
[১৬]. দেখুন : ফাতহুল বারী, হাফেয ইবনু হাজার ’আস্কালানী, পৃ. ১৩/১৮০, হাদীছ : ছহীহ্ মুসলিম-এর বরাতে।
[১৭]. ফাতহুল বারী, পৃ. ১৩/১৩১।
[১৮]. পাকিস্তানের শাসন সংবিধান, আল্লামা কাফী, মাসিক তর্জুমানুল হাদীছ, ২য় বর্ষ, ১০ম সংখ্যা, ১৩৭০ হি., পৃ. ৪৪৫।
[১৯]. প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৪৫, বরাত : আল-ইমামাতু ওয়াছ্-ছিয়াছাহ্, ইমাম ইবনু কুতাইবাহ্, পৃ. ২৩।
[২০]. ফাতাওয়া ছানাইয়্যাহ্, পৃ. ২/৫৯৯।
[২১]. প্রাগুক্ত, পৃ. ২/৬১৩।
[২২]. গিয়াছুল উমাম, পৃ. ৮১।




ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৩য় কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারী - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
বিদ‘আত পরিচিতি (২৫ তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
হেদায়াত লাভের অনন্য মাস রামাযান - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৫ম কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
জীবন ব্যবস্থা হিসাবে আল-কুরআনের মূল্যায়ন - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
তাক্বওয়াই মুক্তির সোপান (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - আব্দুর রশীদ
ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের ধারণা: গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
বিদ‘আত পরিচিতি (১৭তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২১তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ