মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন

ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন  সংশয় নিরসন 

-হাসিবুর রহমান বুখারী*


(৫ম কিস্তি)

ইসলামের স্বর্ণযুগে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা

বর্তমান যুগের মত নবী করীম (ﷺ)-এর যুগেও দাজ্জাল আলোচিত ছিল। ইবনুছ ছাইয়্যাদ নামক ব্যক্তিকে দাজ্জাল মনে করা হত। তার  পূর্ণ নাম ছিল ছাফ ইবনুছ ছাইয়্যাদ।[১] সে আরবীয় ইয়াহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিল। শৈশবকাল থেকেই নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রতি তার অহেতুক বিদ্বেষের কারণে তাকে দাজ্জাল হিসাবে অনুমান করা হত। তার বৈশিষ্ট্যগুলো ভণ্ড দাজ্জালের মতই ছিল। বর্ণনা করা হয় যে, নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) ইবনুস সাইয়্যাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন, সে সময় ইবনুছ ছাইয়্যাদ কেবল কৈশরে পৌঁছেছিল। নবী করীম (ﷺ) বললেন, ‘তোমার উভয় হাত ভূলুন্ঠিত হোক। তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)? ইবনুছ ছাইয়্যাদ বলল, ‘না, কিন্তু আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল’? অতঃপর ওমর ইবনু খাত্তাব বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাকে অনুমতি দিন; আমি তাকে হত্যা করি’। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) বললেন, ‘তোমার মতে যদি সে সেই ব্যক্তি (দাজ্জাল) হয়, তাহলে তুমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না এবং যদি সে না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করায় কোনই কল্যাণ নেই’।[২]

ছাফ ইবনু সাইয়্যাদের পিছন থেকে দেখার জৈবিক ক্ষমতা ছিল। ‘ছহীহ মুসলিম’-এর কিছু বর্ণনাতে আরো জানা যায় যে, ছাফ ইবনু সাইয়্যাদের মানুষের মন পড়ার ক্ষমতা ছিল। আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, একদা আমরা নবী করীম (ﷺ)-এর সঙ্গে হাঁটছিলাম। নবী করীম (ﷺ) ইবনুস সাইয়্যাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, তোমার বিষয়ে আমি একটি কথা লুক্কায়িত রেখেছি। ইবনুছ ছাইয়্যাদ বলল, আপনার হৃদয়ে دُخٌّ  ধোঁয়া শব্দটি লুক্কায়িত রয়েছে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘চলে যা অভিশপ্ত, তুই তোর পরিমণ্ডল অতিক্রম করতে পারবি না’। তখন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাকে ছেড়ে দিন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাকে ছাড়ো, যার সম্বন্ধে তুমি আশঙ্কা করছ সে যদি ঐ লোকই হয়ে থাকে তবে তুমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না’।[৩] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘যদি সে প্রকৃতপক্ষেই দাজ্জাল হয়, তবে তো তাকে হত্যা করতে পারবে না। আর যদি সে দাজ্জাল না হয় তবে তাকে হত্যা করাতে কোন কল্যাণ নেই’।[৪]

আবূ সাঈদ আল-খুদ্‌রী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদিন মক্কা যাওয়ার পথে ইবনুছ ছাইয়্যাদ মক্কা পর্যন্ত আমার সফর সঙ্গী ছিল। পথে সে আমাকে বলল, এমন কতিপয় লোকের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটেছে যারা ধারণা করে যে, আমিই দাজ্জাল। আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জালের কোন সন্তান হবে না? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ, শুনেছি। তখন সে বলল, আমার তো সন্তানাদি রয়েছে। আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জাল মক্কা ও মদীনাতে প্রবেশ করতে পারবে না? আমি বললাম, হ্যাঁ, শুনেছি। সে বলল, মনে রাখুন, আমি তো মদীনায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং এখন মক্কা যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, অতঃপর এসব কথা বলার পর পরিশেষে সে বলল, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই জানি দাজ্জালের জন্মস্থান, বাসস্থান এবং তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে। আবূ সাঈদ আল-খুদ‌রী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘(এ কথা বলে) সে আমাকে দ্বিধা ও সংশয়ে ফেলে দিল’।[৫]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনুছ ছাইয়্যাদ বলবে, আমার ব্যাপারে তোমাদের কী হয়েছে? আল্লাহর নবী (ﷺ) কি এ কথা বলেননি যে, দাজ্জাল ইয়াহুদী হবে? কিন্তু আমি তো মুসলিম। তিনি বলেছেন, দাজ্জালের কোন সন্তান হবে না অথচ আমার তো সন্তানাদি রয়েছে। তিনি তো এ-ও বলেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা দাজ্জালের উপর মক্কা প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। অথচ আমি হজ্জও করেছি। আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘সে অবিরত এমনভাবে বলে যেতে লাগল, যার ফলে আমি তাকে সত্যবাদী মনে করার কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। অতঃপর সে বলল, আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি জানি, দাজ্জালের অবস্থান সম্পর্কে। আমি তার পিতা-মাতাকেও চিনি। লোকেরা ইবনুছ ছাইয়্যাদকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যদি দাজ্জাল হও, তাতে কি তুমি আনন্দিত হবে? উত্তরে সে বলল, যদি আমাকে দাজ্জালরূপে সাব্যস্ত করা হয়, তবে আমি তাতে অসন্তুষ্ট হব না’।[৬]

সে নবী করীম (ﷺ) এবং তাঁর ছাহাবীদের যুগে নবুওয়াতের কথিত দাবীদার ছিল, যে পরবর্তীতে রিদ্দার যুদ্ধের পর নিখোঁজ হয়ে যায়। ছাফ ইবনু সাইয়্যাদ ছাহাবীদের সাথে ইয়ামামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এটি রিদ্দার যুদ্ধের একটি যুদ্ধ ছিল, যা নবী করীম (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর স্বঘোষিত ভণ্ডনবী মুসায়লামা ইবনু হাবীবের বিরুদ্ধে খলীফা আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক পরিচালিত হয়েছিল। ইবনুছ ছাইয়্যাদ যুদ্ধের সময় অন্তর্ধানিত হয়েছিল[৭] এবং পরবর্তীতে তার সাথীদের কেউ আর কখনো তাকে দেখেনি।

মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আব্দুল্লাহকে আল্লাহর নামে কসম করে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ইবনুছ ছাইয়্যাদই হল প্রকৃতপক্ষে দাজ্জাল। আমি বললাম, আপনি আল্লাহর নামে কসম করে এ কথা বলছেন? তিনি বললেন, আমি ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট এ সম্পর্কে কসম খেতে শুনেছি। অথচ নবী করীম (ﷺ) তার এ কথাকে অগ্রাহ্য করেননি।[৮]

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে যে কয়েকটি বিষয় আমাদের সম্মুখে পরিস্ফুটিত হয় তা নিম্নরূপ : রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কথা ‘তাকে ছাড়ো, যার সম্বন্ধে তুমি আশঙ্কা করছ সে যদি ঐ লোকই হয়ে থাকে তবে তুমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না’।[৯] এখান থেকে আমরা বেশ কয়েকটি উপদেশ গ্রহণ করতে পারি। যেমন (১) প্রকৃতপক্ষে দাজ্জাল একজনই, যাকে ঈসা (আলাইহিস সালাম) ব্যতীত অন্য কেউ হত্যা করতে পারবে না। (২) ইসলাম ও মুসলিম বিদ্ধেষী মানেই সে দাজ্জাল নয়। বরং আমরা এতটা বলতে বলতে পারি যে, তার কার্যাদি দাজ্জালের আনুরূপ্য। (৩) দাজ্জালের কোন পরিবার থাকবে না। আদতে সে কিন্তু ইয়াহুদী মতবাদে বিশ্বাসী হবে।

দাজ্জাল জন্মগ্রহণ করবে, না-কি প্রকাশিত হবে? বর্তমানে দাজ্জাল কোথায় অবস্থান করছে?

বর্তমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রায়শই পরিলক্ষিত হয় যে, কোন একটি আশ্চর্যজনক, বিস্ময়কর ও অদ্ভূত প্রকৃতির শিশুকে দেখিয়ে বলা হয়, অমুক অঞ্চলে দাজ্জাল জন্মগ্রহণ করেছে। ফটো এডিটের মাধ্যমে কাল্পনিক ছবি তৈরি করা হয়, যার কপালে তিনটি চোখ লাগানো হয়ে থাকে অথবা এক চক্ষুকে সম্পূর্ণরূপে প্রলেপ করে দেয়া হয়ে থাকে অথবা নাসিকার উপরিভাগে শুধু একটি চোখ বসানো হয়ে থাকে। তার সাথে ললাটে আরবী অক্ষরে কাফির লিখে দেয়া হয়, সারা শরীরে লোম বসিয়ে দেয়া হয়। অনেকেরই অমুসলিমদের মত ধারণা যে, দাজ্জাল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে আসতেই আছে, তাইতো কখনো কখনো কোন দেশের শাসকের মুখমণ্ডলকে একটু বিকৃত করে বলা হয়, ‘এই সেই দাজ্জাল’। আর সোস্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের ছবির আধিক্যের ফলে সাধারণ মানুষেরা মনে করে থাকেন যে, ব্যাপারটা হয়তো এমনিই। ফলস্বরূপ দাজ্জাল শব্দটি শুনা মাত্রই আমাদের স্মৃতিপটে ঐ সব চিত্রগুলোই ভেসে ওঠে যেগুলো আমরা দেখে অভ্যস্ত। প্রকৃতপক্ষে দাজ্জালের আকার-আকৃতি কেমন হবে? সে জন্মগ্রহণ করবে, না-কি আবির্ভূত হবে? এ সম্পর্কে মানুষের ইসলামী জ্ঞান খুবই নগণ্য।

প্রকৃতপক্ষে দাজ্জাল জন্মগ্রহণ করবে না। কেননা তার জন্ম অনেক পূর্বেই হয়ে গেছে, বহুকাল থেকেই সে প্রাচ্যের কোন একটি দ্বীপের উপর লৌহ দ্বারা নির্মিত শিকলে বাঁধা অবস্থায় অবস্থান করছে। যেমন জাস্‌সা-সাহ্ নামক জন্তুর ঘটনায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যা নিম্নরূপ :

ফাতিমা বিনতু কায়স (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছালাত আদায়ন্তে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় মিম্বারে বসে গেলেন। অতঃপর তিনি বললেন, প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্থানে বসে যাও। তারপর তিনি বললেন, তোমরা কি জান, আমি কী জন্য তোমাদেরকে সমবেত করেছি? ছাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই (ﷺ) সর্বাধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ আমি তোমাদেরকে কোন আশা বা ভয়-ভীতির জন্য একত্রিত করিনি। তবে আমি তোমাদেরকে কেবল এজন্য একত্রিত করেছি যে, তামীম আদ-দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) প্রথমে খ্রিষ্টান ছিল। সে আমার কাছে এসে বায়‘আত গ্রহণ করেছে এবং ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে আমার নিকট এমন একটি কাহিনী বর্ণনা করেছে যদ্বারা আমার সে বর্ণনার সত্যায়ন হয়ে যায়, যা আমি দাজ্জালের ব্যাপারে তোমাদের নিকট বর্ণনা করেছিলাম।

সে আমাকে বলেছে যে, একবার সে লাখ্‌ম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশজন লোকসহ একটি সামুদ্রিক জাহাজে আরোহণ করেছিল। সামুদ্রিক ঝড় এক মাস পর্যন্ত তাদেরকে নিয়ে খেলা করতে থাকে। অতঃপর সূর্যাস্তের সময় তারা সমুদ্রের এক দ্বীপে আশ্রয় গ্রহণ করে। তারপর তারা ছোট ছোট নৌকায় বসে ঐ দ্বীপে প্রবেশ করে। দ্বীপে নামতেই জন্তুর ন্যায় বিস্ময়কর প্রকৃতির একটি জিনিসের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ ঘটে। তার পূর্ণ দেহ পশমে ভরা ছিল। পশমের কারণে তার অগ্র-পশ্চাৎ চেনার উপায় ছিল না। লোকেরা তাকে বলল, হতভাগা! তুই কে? সে বলল, আমি জাস্সা-সাহ। লোকেরা বলল, ‘জাস্‌সা-সাহ্! সে আবার কী? সে বলল, ঐ যে গীর্জা দেখা যায়, সেখানে চল। সেখানে এক লোক গভীর আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষা করছে। তামীম আদ-দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, তার মুখে অপেক্ষমাণ ব্যক্তির কথা শুনে আমরা ভয়ে শঙ্কিত হলাম যে, সে কোন শয়তান তো নয়! আমরা দ্রুত পদব্রজে গীর্জায় প্রবেশ করতেই দীর্ঘাকৃতির এমন এক ভয়ঙ্কর লোককে দেখতে পেলাম, যা ইতোপূর্বে আমরা আর কখনো দেখিনি। লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় দু’হাঁটুর মধ্য দিয়ে তার উভয় হাত ঘাড়ের সাথে মিলানো।

আমরা তাকে বললাম, তোর সর্বনাশ হোক, তুই কে? সে বলল, তোমরা আমার সন্ধান কিছু না কিছু পেয়েই গেছ। এখন তোমরা বল, তোমাদের পরিচয় কী? তারা বলল, আমরা আরবের বাসিন্দা। আমরা সমুদ্রে নৌকায় চড়ে ভ্রমণ করছিলাম। আমরা সমুদ্রকে উত্তাল তরঙ্গে উদ্বেলিত অবস্থায় পেয়েছি। এক মাস পর্যন্ত ঝড়ের কবলে থেকে অবশেষে আমরা তোমার এ দ্বীপে এসে পৌঁছেছি। অতঃপর ছোট ছোট নৌকায় আরোহণ করে এ দ্বীপে আমরা প্রবেশ করেছি। এখানে আমরা একটি সর্বাঙ্গ পশমে আবৃত জন্তুকে দেখতে পেয়েছি। পশমের আধিক্যের কারণে আমরা তার অগ্র-পশ্চাৎ চিনতে পারছি না। আমরা তাকে বলেছি, তোর সর্বনাশ হোক! তুই কে? সে বলেছে, সে না-কি জাস্সা-সাহ। আমরা বললাম, জাস্সা-সাহ! সে আবার কী? তখন সে বলেছে, ঐ যে গীর্জা দেখা যায়, তোমরা সেখানে চল। সেখানে এক লোক গভীর আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা দ্রুত তোর কাছে চলে এসেছি‌‌। আমরা তার কথায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি এই ভেবে যে, না জানি সে আবার কোন্ শয়তান? অতঃপর সে বলল, তোমরা আমাকে বাইসানের খেজুর বাগানের সংবাদ বল। আমরা বললাম, এর কোন্ বিষয়টি সম্পর্কে তুই সংবাদ জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, বাইসানের খেজুর বাগানে ফল আসে কি-না? এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি। আমরা তাকে বললাম, হ্যাঁ, ফল ধরে। সে বলল, অচিরেই এগুলোতে কোন ফল ধরবে না। তারপর সে বলল, আচ্ছা! তিবরিয়্যাহ নামক সমুদ্রের ব্যাপারে আমাকে অবগত কর। আমরা বললাম, এর কোন্ বিষয় সম্পর্কে তুই আমাদের থেকে জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, এর মধ্যে পানি আছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, সেখানে বহু পানি আছে। অতঃপর সে বলল, সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন এ সাগরে পানি থাকবে না। সে আবার বলল, ‘যুগার’-এর ঝর্ণার ব্যাপারে তোমরা আমাকে অবহিত কর। তাঁরা বলল, তুই এর কী সম্পর্কে আমাদের নিকট জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, এর ঝর্ণাতে পানি আছে কি? আর এ জনপদের লোকেরা তাদের ক্ষেতে এ ঝর্ণার পানি দেয় কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, এতে অনেক পানি আছে এবং এ জনপদের লোকেরা এ পানির মাধ্যমেই তাদের ক্ষেত আবাদ করে। সে আবার বলল, তোমরা আমাকে উম্মীদের নবীর ব্যাপারে খবর দাও। সে এখন কী করছে? তারা বলল, তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে এসেছেন। সে জিজ্ঞেস করল, আরবের লোকেরা তার সাথে যুদ্ধ করেছে কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, করেছে। সে বলল, সে তাদের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করেছে। আমরা তাকে খবর দিলাম যে, তিনি আরবের পার্শ্ববর্তী এলাকায় জয়ী হয়েছেন এবং তারা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। সে বলল, এটা কি হয়েই গেছে? আমরা বললাম, হ্যাঁ‌। সে বলল, বশ্যতা স্বীকার করে নেয়াই জনগণের জন্য কল্যাণকর ছিল। এখন আমি নিজের ব্যাপারে তোমাদেরকে বলছি, ‘আমিই মাসীহ দাজ্জাল। অতি সত্ত্বরই আমি এখান থেকে বাহির হওয়ার অনুমতি পেয়ে যাব। বাইরে বেরিয়ে আমি সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ প্রদক্ষিণ করব। চল্লিশ দিনের ভেতর এমন কোন জনপদ থাকবে না, যেখানে আমি প্রবেশ করব না। তবে মক্কা ও ত্বাইবাহ ব্যতীত এ দু’টি স্থানে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। যখন আমি এ দু’টির কোন একটি স্থানে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন এক ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারি হাতে সম্মুখে এসে আমাকে বাধা প্রদান করবে। এ দু’টি স্থানের সকল রাস্তায় ফেরেশতাদের পাহারা থাকবে।

বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর ছড়ি দ্বারা মিম্বারে আঘাত করে বললেন, এ হচ্ছে ত্বাইবাহ, এ হচ্ছে ত্বাইবাহ, এ হচ্ছে ত্বাইবাহ। অর্থাৎ এই মদীনাই হল ত্বাইবাহ। সাবধান! আমি কি এ কথাটি ইতোপূর্বে তোমাদেরকে বলিনি? তখন লোকেরা বলল, হ্যাঁ, আপনি বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তামীম আদ-দারীর কথাটি আমার খুবই ভাল লেগেছে। যেহেতু তা সামঞ্জস্যপূর্ণ আমার ঐ বর্ণনার, যা আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল, মদীনা ও মক্কা বিষয়ে ইতোপূর্বে বলেছি। জেনে রেখো! উল্লেখিত দ্বীপ সিরিয়া সাগর অথবা ইয়ামান সাগরের পার্শ্বস্থ এলাকায় অবস্থিত। যা পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থিত, পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থিত, পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থিত। এ সময় তিনি নিজ হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারাও করলেন। বর্ণনাকারী ফাতিমা বিনতু ক্বায়স (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, এ হাদীছ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে এভাবেই সংরক্ষণ করেছি।[১০] অন্য বর্ণনায় এসেছে, দাজ্জাল বলবে, أَمَا إِنَّهُ لَوْ قَدْ أُذِنَ لِيْ فِيْ الْخُرُوْجِ قَدْ وَطِئْتُ الْبِلَادَ كُلَّهَا غَيْرَ طَيْبَةَ ‘আমাকে যদি বাহির হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয় তবে আমি ত্বাইবাহ ব্যতীত সমগ্র পৃথিবী প্রদক্ষিণ করব’।[১১]

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বর্তমানে দাজ্জাল প্রাচ্যের কোন একটি দ্বীপে আবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে, সেটি আসলে কোন্ দ্বীপ? এ কথা নিশ্চিতরূপে বলা অসম্ভব। কেননা এগুলো অদৃশ্যের খবর, তাই যেখানে যতটুকু যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবেই তার উপর ঈমান আনতে হবে। খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে গবেষণার নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা মোটেও কাম্য নয়। সে কারোর রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে আসতে পারে না, আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত সে সেখান থেকে বাহির হতে পারবে না। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আত্মপ্রকাশ ও অবতরণের বিষয়গুলো ইলমে গায়ব বা অদৃশ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ থেকে স্পষ্ট দলীল ব্যতীত কোন মন্তব্য করা অনুচিত। ধারণার বশবর্তী হয়ে কোন কথা বলা জায়েয নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৩৬)। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উপর অপরিহার্য যে, তারা পরকাল কেন্দ্রিক ও অদৃশ্যের জ্ঞান বিষয়ক কোন তথ্য দলীল ব্যতীত গ্রহণ করবে না। শ্রবণ করার পর মানার পূর্বে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করতে হবে।[১২]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


* মুর্শিদাবাদ, ভারত।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১৭৪, ৩০৫৫।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯২৪।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১৭৩-৬১৭৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৯২৪।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৩০।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯২৭।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯২৭।
[৭]. আবূ দাঊদ, হা/৪৩৩২, সনদ ছহীহ।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯২৯।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১৭৩-৬১৭৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৯২৪।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৪২; আবূ দাঊদ, হা/৪৩২৫, ৪৩২৬; তিরমিযী, হা/২২৫৩; ইবনু মাজাহ, হা/৪০৭৪।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৪২।
[১২]. ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২২৮৪৯৩।




ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও তার সমাধান (৩য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (৮ম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
বিদ‘আত পরিচিতি (১৯তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৫ম কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
ফাযায়েলে কুরআন (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৫ম কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
জীবন ব্যবস্থা হিসাবে আল-কুরআনের মূল্যায়ন - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
রামাযানে দান-ছাদাক্বাহ - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
সচ্চরিত্রই মানব উন্নতির চাবিকাঠি - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৩য় কিস্তি) - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ