মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন

সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য

-হাসিবুর রহমান বুখারী*


(শেষ কিস্তি)

(৭) আক্বল বা বিবেক-বুদ্ধিকে শরী‘আতের অনুসারী করা

মানুষের আক্বল বা বুদ্ধি-বিবেচনা শক্তি একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। তবে এটি সর্বদা ইসলামী শরী‘আতের অনুসারী হবে। শরী‘আত কখনো আক্বলের অনুসরণ করবে না। সালাফী মানহাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাঁরা অহী অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা কুরআন ও সুন্নাহ থেকেই জ্ঞান আহরণ করেন। তাঁদের বুদ্ধি, বিবেচনা, বুঝ-ব্যবস্থা ও মতামতকে তাঁরা সর্বদা কুরআন ও সুন্নাহর সাথে মিলিয়ে দেখে। যদি সেগুলো কুরআন-সুন্নাহর সাথে মিলে যায় তাহলে তাঁরা তা গ্রহণ করে আর যদি বিপরীত হয় বা সাংঘর্ষিক হয় তাহলে তাঁরা তা বর্জন করে এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যিনি শরী‘আত দিয়েছেন তাঁর কথাই মূল। মূল শরী‘আতদাতা হলেন আল্লাহ তা‘আলা। রাসূল (ﷺ)ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরী‘আত প্রদান করেছেন। তাঁদের কথার দিকেই নিজের মনোযোগ দিতে হবে। তাঁদের কথার উপরেই নির্ভর করতে হবে। তাঁদের কথারই অনুসরণ করতে হবে। কোন কারণেই এবং কোন সময়েই তাঁদের কথাকে মানুষের বিবেক-বুদ্ধির অনুসারী বানানোর চেষ্টা করা যাবে না। ইমাম শাত্বিবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, والعقل إذا لم يكن متبعا للشرع لم يبق إلا الهوى والشهوة ‘আক্বল যদি শরী‘আতের অনুসারী না হয় তাহলে প্রবৃত্তি ও মনোবাসনা ছাড়া আর কিছুই বাকী থাকে না’।[১] মোট কথা হচ্ছে সালাফগণ আয়াত-হাদীছ থেকে মাসআলা সাব্যস্ত করতে গিয়ে নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিতেন না। ইসলামী গবেষণায় আক্বলের প্রয়োজনীয় ব্যবহার করতে কোন বাধা তো নেই-ই বরং আদেশ আছে। কিন্তু সালাফদের বুঝ ও নীতিমালা অনুসরণ না করে নিজের বুঝ অনুযায়ী কেউ যদি আক্বলকে অগ্রাধিকার দিয়ে কুরআন ও হাদীছ বুঝতে যায় তাহলে সে নিশ্চিত পথভ্রষ্ট হবে। কেউ যদি কুরআন বুঝতে হাদীছকে অগ্রাধিকার না দিয়ে আক্বলকে অগ্রাধিকার দেয় তাহলে আয়াতের অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝতে মারাত্মক ভুল করবে। আবার কেউ যদি হাদীছের গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণে রিজালশাস্ত্র ও জারাহ-তা‘দীলের নীতিমালাকে অগ্রাহ্য করে নিজের বুঝ মত নীতিমালা বানিয়ে হাদীছ গ্রহণ করে এবং বর্জন করে তাহলেও তারা পথভ্রষ্ট হবে।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেউ কেউ কুরআন ও সুন্নাহ বোঝার ক্ষেত্রে সালাফদের মানহাজকে বাদ দিয়ে আক্বলকে অগ্রাধিকার দেয়ার কারণে অনেক আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে এবং ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিমের হাদীছসহ অনেক মুতাওয়াতির ও ছহীহ হাদীছকে অস্বীকার করছে। এগুলো সব সালাফের মানহাজকে পরিত্যাগ করার পরিণতি। সালাফদের মানহাজ হচ্ছে আক্বলকে কুরআন ও সুন্নাহর অনুগামী বানানো, কুরআন ও সুন্নাহকে আক্বলের অনুগামী বানানো নয়।

(৮) শুধু হক্বের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করা

সালাফী মানহাজের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল শুধু হক্বের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করা অর্থাৎ হক্ব ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করা। এখানে হক্ব বলতে চূড়ান্ত হক্বকে বুঝানো হয়েছে। আর চূড়ান্ত হক্ব হচ্ছে আল্লাহর কিতাব কুরআন ও রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাহ। নিরঙ্কুশ পক্ষপাতিত্ব শুধু এই দু’টি জিনিসের প্রতি পোষণ করাই সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য। সালাফগণ এই দু’টা জিনিস ছাড়া অন্য কোন কিছু বা কারো কথা কিংবা কারো আমলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করতেন না। তিনি যে-ই হোন না কোন কোন ছাহাবী, তাবিঈ, তাবি‘ তাবিঈ, মুজতাহিদ ইমামগণ, ফক্বীহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিছ, আলিম, যে-ই হোন না কেন তাঁর কথা বা কাজের প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্য ও পক্ষপাতিত্ব বৈধ নয়। রাসূল (ﷺ)-ই হলেন একমাত্র মানুষ যার অন্ধ আনুগত্য করা যায় এবং করা শুধু বৈধই নয়, আবশ্যকও। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা পেয়েছেন এবং তাবলীগ করেছেন তারই শুধু পক্ষপাতিত্ব চলবে। কারণ একমাত্র অহীই হল চূড়ান্ত হক্ব। অন্য কিছু নয়।

ইসলামে ছাহাবীদের কথা, তাবিঈ, তাবি‘ তাবিঈ, মুজতাহিদ ইমামগণ, ফক্বীহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিছ, আলিম, শাইখদের কথার মূল্য আছে। এই মূল্য ততক্ষণ, যতক্ষণ তাঁরা কুরআন ও সুন্নাহ-এর অনুকূলে কথা বলবেন, মতামত দিবেন। তাঁরা কেউই নিষ্পাপ নয়। তাঁরা কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নন। তাদের কথা গ্রহণযোগ্যও হতে পারে আবার অগ্রহণযোগ্যও হতে পারে। গ্রহণযোগ্য কি-না তা যাচাই করতে হবে কুরআন ও সুন্নাহ দিয়ে। রাসূল (ﷺ) ছাড়া কারো কথাই নিরঙ্কুশভাবে, নির্দ্বিধায় গ্রহণ করা যাবে না।

ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) চমৎকার কথা বলেছেন। একদা তিনি রাসূল (ﷺ)-এর ক্ববরের দিকে ইশারা করে বলেন, ‘এই কবরবাসী ছাড়া বাকী প্রত্যেকের কথা গ্রহণও করা যেতে পারে আবার বর্জনও করা যেতে পারে’। তবে গ্রহণ ও বর্জনের এই সিদ্ধান্ত হতে হবে সালাফগণের মানহাজ অনুযায়ী কুরআন ও সুন্নাহর মাপকাঠিতে, নিজের খেয়ালখুশি অনুযায়ী নয়।

(৯) দ্বীনের সকল দিক ও বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

اَفَتُؤۡمِنُوۡنَ بِبَعۡضِ الۡکِتٰبِ وَ تَکۡفُرُوۡنَ بِبَعۡضٍ ۚ فَمَا جَزَآءُ  مَنۡ یَّفۡعَلُ ذٰلِکَ مِنۡکُمۡ اِلَّا خِزۡیٌ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ یُرَدُّوۡنَ اِلٰۤی اَشَدِّ الۡعَذَابِ ؕ وَ مَا اللّٰہُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ.

‘তবে কি তোমরা ধর্মগ্রন্থের কিছু অংশে বিশ্বাস আর কিছু অংশকে অবিশ্বাস কর? অতএব তোমাদের যেসব লোক এমন কাজ করে, তাদের প্রতিফল পার্থিক জীবনে লাঞ্ছনাভোগ ছাড়া আর কী হতে পারে? আর ক্বিয়ামতের (শেষ বিচারের) দিন কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। তারা যা করে সে সম্বন্ধে আল্লাহ অনবহিত নন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৮৫)।

সালাফী মানহাজ শুধু দ্বীনের একটি বা দু’টি দিক বা বিষয়কে নিয়ে গঠিত নয়। দ্বীনের সকল দিক ও বিভাগ এর অন্তর্ভুক্ত। তাওহীদ, ঈমান, ছালাত, যাকাত, ছিয়াম, হজ্জ, জিহাদ, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ, পারস্পরিক সম্পর্ক, অধিকার, সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি; সব কিছুই এই দ্বীনে ও মানহাজে রয়েছে। উমার ইবনু আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘রাসূল (ﷺ) এবং তাঁর পরবর্তী মুসলিম শাসকগণ/প-িতগণ কিছু রীতিনীতি ও বিধি-বিধান চালু করেছেন। সেগুলো আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ, আল্লাহর আনুগত্যের পূর্ণতা দেয়া এবং আল্লাহর দ্বীনের শক্তি বৃদ্ধি করার নামান্তর। সৃষ্টিজগতের কারোর এই বিধান পরিবর্তনের অধিকার, ক্ষমতা নেই। কারোর জন্য এই বিধানের বিরোধিতা করারও সুযোগ নেই। যে ব্যক্তি এই বিধানের অনুসরণ করবে সেই সঠিক পথপ্রাপ্ত। আর যে এই বিধানের দ্বারা সাহায্য কামনা করবে সেই সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। যে ব্যক্তি এই বিধানকে পরিত্যাগ করবে সে মুমিনদের পথ ছেড়ে অন্য কারো পথের অনুসরণ করছে। আল্লাহও তাকে সেদিকেই ফিরিয়ে দেন যেদিকে সে মুখ ফেরাতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে পৌঁছে দেন। আর জাহান্নাম কতই না খারাপ প্রত্যাবর্তনস্থল’।[২]

সত্যিকারের সালাফী মানহাজ কোন নির্দিষ্ট দল, গ্রুপ, মাযহাব বা সংগঠন না। মূলত এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পথ ও পদ্ধতি। এটি কোন দেশে, ভূখ-ে বা এলাকায় সীমাবদ্ধ কোন মানহাজ নয়। এটি কোন লেখকের লেখা বই বা গবেষকের গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি কুরআন ও সুন্নাহ-এর পথ। রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবীগণের রেখে যাওয়া হিদায়াতের পথ, অনুসরণের উদ্দেশ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সামগ্রিক দাওয়াতের নাম। এই দাওয়াত শিরক ও বিদ‘আত থেকে দূরে থেকে প্রবৃত্তিপূজারী ও পথভ্রষ্টদের বিরোধিতার দাওয়াত। সালাফী মানহাজ মৌলিকভাবে একটি আক্বীদা, মূল্যবোধ, জীবনব্যবস্থার নাম। কোন যুগে ও স্থানে এই মানহাজের অনুসরণ ছাড়া জাতির সংস্কার ও সংশোধন সম্ভব নয়। এই মানহাজ একদিকে যেমন সর্বাধিক পুরাতন আবার একই সাথে আধুনিকও।

(১০) বিদ‘আত ও বিদ‘আতীদের সম্পর্কে সতর্ক হওয়া এবং সতর্ক করা

যা নবী (ﷺ)-এর আদর্শ নয় তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন তিনি বলেছেন, ‘কেউ আমাদের এই দ্বীনের অংশ নয় এমন কিছু উদ্ভাবন করলে বা অনুপ্রবেশ ঘটালে তা পরিত্যাজ্য-প্রত্যাখ্যাত। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মীয় কাজের মধ্যে এমন বিষয় উদ্ভাবন করে যা তাতে নেই (দলীলবিহীন), তা অগ্রহণযোগ্য (অর্থাৎ সেটিই বিদ‘আত)’।[৩] তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা (দ্বীনের মধ্যে) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয় বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আত ভ্রষ্টতা’।[৪] অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এদের শাস্তিস্বরূপ বলেছেন,

مَن أحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا أوْ آوَى فِيْهَا مُحْدِثًا، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ والمَلَائِكَةِ والنَّاسِ أجْمَعِيْنَ لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ ولَا عَدْلٌ.

‘যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদ‘আত উদ্ভাবণ করে কিংবা কোন বিদ‘আতীকে আশ্রয় দেয় কিংবা সাহায্য করে তার উপর আল্লাহ তা‘আলার, ফেরেশতাদের ও সকল মানব জাতির লা‘নত ও অভিসম্পাত। তার কোন ফরয কিংবা নফল ইবাদত গৃহীত হবে না’।[৫]

(১১) সালাফদের বুঝ ও মানহাজকে অতিক্রম না করা

সালাফগণ মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁরাই ইসলামকে শতভাগ সঠিকভাবে বুঝেছেন। তাঁদের বুঝ ছিল নিষ্কলুষ ও বিশুদ্ধ। তাদের মানহাজ ছিল ইসলামের সঠিক রূপরেখা নির্ভর। তাদের অন্তর ছিল যাবতীয় কদর্য হতে মুক্ত। তাই তাঁরা যেভাবে ইসলাম বুঝেছেন সেভাবেই উম্মাহকে ইসলাম বুঝতে হবে। তাঁদের বুঝকে অবজ্ঞা ও অতিক্রম করার কোন সুযোগ নেই। বিখ্যাত ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘কেউ যদি তৃপ্তিসাধন করতে চায় সে যেন রাসূল (ﷺ)-এর ছাহাবীদের মাধ্যমে তৃপ্তিসাধন করে। কারণ এই উম্মাহর মধ্যে তাঁরা সবচেয়ে পুণ্যবান, সবচেয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী, সবচেয়ে কম ভানকারী, সর্বাধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত ও সবচেয়ে উত্তম অবস্থার অধিকারী। আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁর নবী (ﷺ)-এর সাহচর্যের ও তাঁর দ্বীন ক্বায়িমের জন্য পসন্দ করেছেন। অতএব তোমরা তাঁদের যথাযথ মর্যাদা জেনে নাও এবং তাদের পদঙ্কানুসারণ কর। কারণ তাঁরাই সঠিক হিদায়াতের উপর ছিলেন।

ইমাম আওযায়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তুমি নিজেকে সুন্নাহর উপর ক্বায়িম রাখ, সালাফগণ যেখানে থেমেছেন তুমিও সেখানে থাম এবং সালাফগণ যা বলেছেন তুমিও তাই বল। তুমি তোমার সালাফে ছালিহীনের পথে চল। সালাফগণের জন্য যা যথেষ্ট ছিল তা তোমার জন্যও যথেষ্ট’।[৬]

ইমাম আবূ হাতিম আর-রাযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমাদের মতাদর্শ ও চাওয়া-পাওয়া হচ্ছে, রাসূল (ﷺ)-এর, তাঁর ছাহাবীদের ও তাবিঈদের অনুসরণ করা এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতে আহলে আছারদের মতাদর্শকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা’।[৭]

(১২) অতিরঞ্জন ও অবহেলার মাঝে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ کَذٰلِکَ جَعَلۡنٰکُمۡ اُمَّۃً وَّسَطًا لِّتَکُوۡنُوۡا شُہَدَآءَ عَلَی النَّاسِ وَ یَکُوۡنَ الرَّسُوۡلُ عَلَیۡکُمۡ شَہِیۡدًا.

‘এভাবে আমরা তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি, যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ হতে পার এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হবে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৪৩)।

‘ওয়াসাত্ব’ শব্দের অর্থ সর্বোৎকৃষ্ট বিষয়। আবার (وسط) শব্দের অর্থ হয় মধ্যবর্তী, মধ্যপন্থী। সে হিসাবে এ আয়াতে মুসলিম সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মানের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে যে, এ সম্প্রদায়কে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করা হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়কে মধ্যপন্থী, ভারসাম্যপূর্ণ সম্প্রদায় বলে অভিহিত করা হয়েছে। এতে মুসলিম সম্প্রদায়ের আত্মিক ও চারিত্রিক ভারসাম্য আলোচিত হয়েছে যে, তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ ও কামনা-বাসনা বিসর্জন দিয়ে আসমানী গ্রন্থের নির্দেশ অনুযায়ী নিজেরাও চলে এবং অন্যদেরকেও চালাবার চেষ্টা করে। কোন ব্যাপারে কলহ-বিবাধ সৃষ্টি হলে তার মীমাংসাও তারা গ্রন্থের সাহায্যেই করে, যাতে কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের স্বার্থপরতার কোন আশংকা নেই। বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকেও মুসলিম জাতি এক ভারসাম্যপূর্ণ সম্প্রদায়। তাদের মধ্যে রয়েছে, ঈমানের ভারসাম্য। পূর্ববতী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে একদিকে দেখা যায়, তারা নাবীগণকে আল্লাহর পুত্র মনে করে তাদের উপাসনা ও আরাধনা করতে শুরু করেছে। যেমন, এক আয়াতে রয়েছে, ‘ইয়াহুদীরা বলেছে, উযায়ের আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিস্টানরা বলেছে, ঈসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর পুত্র’ (সূরা আগ-তাওবাহ : ৩০)। অপরদিকে এসব সম্প্রদায়েরই অনেকে নবীর উপর্যুপরি মু‘জিযা দেখা সত্ত্বেও তাদের নবী যখন তাদেরকে কোন ন্যায়যুদ্ধে আহ্বান করেছেন, তখন তারা পরিষ্কার বলে দিয়েছে, ‘আপনি এবং আপনার পালনকর্তাই যান এবং শক্রদের সাথে যুদ্ধ করুন। আমরা এখানেই বসে থাকব’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ২৪)।

সালাফী মানহাজের বৃহত্তর ক্ষেত্রের কারণে কেউ কেউ সালাফী নাম ধারণ করে অথচ সালাফী মানহাজকে ধারণ করে না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাড়াবাড়ি করে, কঠোরতা আরোপ করে আবার কেউ কেউ বেশি ঢিল দেয় এবং সহজতার নামে দ্বীনের মূলনীতিকে ধ্বংস করে। অথচ সালাফী মানহাজ হচ্ছে মধ্যমপন্থী মানহাজ। সাধারণত এই মানহাজের কাউকে একটি-দু’টি পাপের কারণে বা ভুলের কারণে মানহাজ থেকে বের করে দেয়া হয় না। বরং ভুলকারীদের সংশোধন করে সবাইকে নিয়ে সামনে আগাতে চায়।

(১৩) হক্ব ও ন্যায়ের উপর অবিচল থাকা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاسۡتَقِمۡ کَمَاۤ  اُمِرۡتَ ‘অতএব আপনি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছেন, সেভাবেই দৃঢ় থাকুন’ (সূরা হূদ : ১১২)। ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইস্তিক্বামাত’ শব্দের অভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ডান বা বাম কোনদিকে একটুও পরিমাণ না ঝুঁকে একদম সোজাভাবে থাকা। সর্বাবস্থায় দ্বীনের পথে সঠিকভাবে চলার অর্থ হচ্ছে আক্বাঈদ, ইবাদত, লেনদেন, আচার-ব্যবহার, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থ উপার্জন ও ব্যয় তথা নীতি-নৈতিকতার যাবতীয় ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে থেকে তাঁরই নির্দেশিত সোজা পথে চলা। তন্মধ্যে কোন ক্ষেত্রে, কোন কার্যে এবং পরিস্থিতিতে গড়িমসি করা, বাড়াবাড়ি করা অথবা ডানে বামে ঝুঁকে পড়া ইস্তিক্বামাতের পরিপন্থী। দুনিয়ায় যত গোমরাহী ও পাপাচার দেখা যায়, তা সবই ইস্তিক্বামাত হতে সরে যাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। আক্বাঈদ অর্থাৎ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ইস্তিক্বামাত না থাকলে, মানুষ বিদ‘আত হতে শুরু করে কুফর ও শিরক পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

(১৪) সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করায় আগ্রহী হওয়া

সালাফে ছালিহীনের মানহাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সর্বাবস্থায় ঐক্যবদ্ধ থাকা ও মুসলিম জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰہِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا ‘তোমরা সকলে আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধর এবং তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

إِنَّ اللهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِيْ أَوْ قَالَ أُمَّةَ مُحَمَّدٍ ﷺ عَلَى ضَلَالَةٍ وَيَدُ اللهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ.

‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতকে অথবা তিনি বলেছেন মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উম্মতকে কখনো ভ্রষ্টতার উপরে ঐক্যবদ্ধ করবেন না। আর আল্লাহর সাহায্য জামা‘আতের উপরে’।[৮] ইমাম ত্বাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

ونرى الجماعة حقا وصوابا والفرقة زيغا وعذابا

‘আমরা জামা‘আতবদ্ধ থাকাকে সত্য ও সঠিক মনে করি এবং বিচ্ছিন্ন থাকাকে ভ্রষ্টতা ও শাস্তি মনে করি’।[৯] শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

ثم إن الاعتصام بالجماعة والائتلاف من أصول الدين

‘অতঃপর নিশ্চয় জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরা ও ঐক্যবদ্ধ থাকা দ্বীনের মৌলিক নীতিমালার অন্যতম নীতি’।[১০]

সালাফগণ এবং সালাফদের অনুসারীরা সর্বদা জামা‘আত ও হক্বকে কেন্দ্র করে জোটবদ্ধ থাকতেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আদেশ দিয়ে অসংখ্য আয়াতের মধ্যে বলেছেন। যেমন, ‘এবং তোমরা আল্লাহর অনুসরণ কর এবং তাঁর রাসূলের অনুসরণ কর। তোমরা একে অপরের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। তাহলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি চলে যাবে’ (সূরা আল-আনফাল : ৪৬)।

(১৫) বিচ্ছিন্নতা ও মতবিরোধকে ছুঁড়ে ফেলা

সালাফদের যুগে মতপার্থক্য থাকলেও বিভক্তি ও বিভ্রান্তি ছিল না। তাদের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন অটুট ছিল। কারণ তারা ছিলেন ইসলামের ব্যাপারে সবচেয়ে জ্ঞানী। কিন্তু যখনি সালাফদের মানহাজ ও বুঝকে অবজ্ঞা করে যে যার মত নিজের বিবেকবুদ্ধি দিয়ে ইসলাম বুঝতে শুরু করে তখনি মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের দেয়ালে চিড় ধরে, ছড়িয়ে পড়ে মুসলিম সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিভ্রান্তি। কারণ ইসলামকে বিবেকবুদ্ধি দিয়ে নিজের মতে করে বুঝা অসম্ভব। তা এলাহী। তাকে এলাহী বুঝের আলোকেই বুঝতে হবে। আর সেই এলাহী বুঝ সালাফগণ রাসূল (ﷺ) থেকে গ্রহণ করেছেন। তাই সালাফদের বুঝে ইসলাম বুঝা ছাড়া কোন উপায় নেই।

ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিভ্রান্ত ফিরক্বা হচ্ছে খারিজী ফিরক্বা। তাদের বিভ্রান্তির মূল কারণ হচ্ছে কুরআনের একটি আয়াত। সে আয়াতকে বুঝতে গিয়ে তারা সালাফদের বুঝকে অমান্য করে নিজেদের বুঝের আলোকে বুঝার চেষ্টা করে। ফলে তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এভাবে শী‘আ, জাহমিয়্যাহ, মু‘তাযিলাহ, ক্বাদিরিয়্যাহ, মুরজিয়্যাহ, জাবরিয়্যাহ সহ প্রত্যেকটা ফিরক্বার বিভ্রান্তির মূল কারণ হচ্ছে সালাফদের বুঝের আলোকে ইসলামকে না বুঝে নিজেদের বুঝের আলোকে বুঝা।

এ প্রসঙ্গে ইমাম আবূ উছমান দারিমী (রাহিমাহুল্লাহ) চমৎকার বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাফদের বুঝকে গ্রহণ না করে তাদের বিরোধিতা করে, সে মূলত নিজের প্রবৃত্তিকে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করতে চায় এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যের বিপরীতে কুরআনকে নিজের বুঝ দ্বারা তা’বীল করতে চায়। তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাক ও সালাফদের মানহাজে অটল থাকতে চাও তাহলে তাঁদের থেকে ইলম অর্জন কর, তাঁদের পদ্ধতিতে হিদায়াত তালাশ কর এবং তাদের মতামতকে ইমাম হিসাবে মেনে নাও। আল্লাহর কসম! তোমরা তাঁদের চেয়ে বেশি কুরআনের জ্ঞান রাখ না, এমনকি তাঁদের সমপরিমাণও না। তাঁদের বর্ণিত মতামতকে গ্রহণ করা ছাড়া তাঁদের অনুসরণ সম্ভব নয়। যে তাঁদের মতামতকে গ্রহণ করবে না সে মূলত মুমিনদের পথকে বর্জন করতে চায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি তার নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করবে, তাকে আমরা সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা কত মন্দ আবাস! (সূরা আন-নিসা : ১১৫; আর-রাদ্দু ‘আলাল জাহমিয়্যাহ, পৃ. ১০৬)।

(১৬) সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা

সালাফী মানহাজের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানুষদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা। এই কাজটি ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কুরআন ও সুন্নাহতে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধের প্রতি উৎসাহিত করে অসংখ্য নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক নবী-রাসূল এই দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ), তাঁর সাহাবীগণ, তাবিঈ, তাবি' তাবিঈ, ইমাম ও মুজাদ্দিদগণ সবাই নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী এই দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই এই কাজটি সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।

‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ’ ছাড়া কোন মানবসমাজ টিকে থাকতে পারে না। সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি গড়ে উঠার পেছনে এর ভূমিকা অত্যধিক। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ تَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ.

‘তোমরাই শ্রেষ্ঠতম জাতি। মানবম-লীর জন্য তোমাদের অভ্যুত্থান হয়েছে, তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান করবে, অসৎ কার্য (করা থেকে) নিষেধ করবে, আর আল্লাহতে বিশ্বাস করবে’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০)। অন্য আয়াতে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর মুমিন পুরুষরা ও মুমিনা নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু, তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে। আর যথাযথভাবে ছাালাত আদায় করে ও যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এসব লোকের প্রতিই আল্লাহ অতি সত্বর করুণা বর্ষণ করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান হিকমতওয়ালা’ (সূরা আত-তাওবাহ : ৭১)।

যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমতা দিয়েছেন তাদের মৌলিক চারটি কাজের দু’টিই হচ্ছে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আমি তাদেরকে পৃথিবীতে (রাজ) ক্ষমতা দান করলে তারা ছালাত আদায় করে, যাকাত প্রদান করে এবং সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎকার্য হতে নিষেধ করে। আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর আয়ত্তে’ (সূরা আল-হাজ্জ : ৪১)।

উপরিউক্ত আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা ইসলামের একটি বৈশিষ্ট্য এবং প্রত্যেক মুসলিমের আবশ্যিক দায়িত্ব। তবে এই দায়িত্ব প্রত্যেকের মেধা, ক্ষমতা ও পদ-পদবির কারণে কমবেশি হয়। ছাহাবীগণ, তাবিঈগণ ও তাবি‘ তাবিঈগণ সব সময়ই সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের পরবর্তীতে তাঁদের অনুসারীরাও প্রত্যেক যুগে এমনকি আজকের যুগেও এই কাজ করে যাচ্ছেন। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের এই দায়িত্ব পালন করে যাবেন, ইনশাআল্লাহ।

(১৭) সালাফদের মানহাজ পূর্ণাঙ্গ

সালাফদের মানহাজের অন্যতম শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে তাদের মানহাজের পূর্ণাঙ্গতা। এর মধ্যে কোন ত্রুটি ও বিচ্যুতি নেই। তাদের মানহাজ ছাড়া বাকি মানহাজ অপূর্ণাঙ্গ, বিচ্যুত ও বিভিন্ন ভ্রষ্টতায় পরিপূর্ণ। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

لا يكاد شيء إلا ويوجد فيه عن أصحاب النبي

‘হয়তো এমন কোন জিনিস পাওয়া যাবে না যে-ব্যাপারে ছাহাবীদের মত পাওয়া যাবে না’।[১১]

সালাফদের মানহাজ পূর্ণাঙ্গ ও বিচ্যুতমুক্ত হওয়ার কারণে হচ্ছে- সালাফদের প্রথম প্রজন্ম তথা ছাহাবীগণ সরাসরি রাসূল (ﷺ)-এর পবিত্র হাতে গড়ে উঠে। দ্বিতীয় প্রজন্ম গড়ে উঠে রাসূল (ﷺ)-এর ছাত্রের হাতে। আর তৃতীয় প্রজন্ম গড়ে রাসূল (ﷺ)-এর ছাত্রের ছাত্রের হাতে। তাই তাঁদের মানহাজ ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল স্থান-কাল ও পাত্রের উপযুক্ত। এ প্রসঙ্গে ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

لا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلها

‘এই উম্মাহর শেষ প্রজন্ম মূল প্রজন্ম ছাড়া সঠিক থাকতে পারবে না’। তাই তো ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

لا تتكلم في مسألة ليس لك فيها إمام

‘তুমি এমন মাসআলার ব্যাপারে মুখ খুলো না যে মাসআলায় তোমার কোন ইমাম নেই’।[১২]


* মুর্শিদাবাদ, ভারত।

[১]. আল-ই‘তিছাম, পৃ. ৩৫।

[২]. সীরাতে উমার, পৃ. ৩৮; শারহু উছূলিল ই‘তিকাদি আহলিস সুন্নাহ, ১ম খ-, পৃ. ৯৪; আস-সুন্নাহ, ১ম খ-, পৃ. ৩৫৭।

[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৯২৯, ২৪৬০৪, ২৪৯৪৪, ২৫৫০২, ২৫৬৫৯, ২৫৭৯৭।

[৪]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; তিরমিযী, হা/২৬৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৪৫; ছহীহুল জা'মি‘, হা/২৫৪৯।

[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৭০, ৩১৭২, ৩১৭৯, ৬৭৫৫, ৭৩০০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৭০; আবূ দাঊদ, হা/২০৩৪।

[৬]. আল-ই‘তিকাদ, পৃ. ৩১৫; হিলয়াতুল আওলিয়া, ৮ম খ-, পৃ. ২৫৪।

[৭]. আল-ই‘তিক্বাদ, ১ম খ-, পৃ. ১৭৯।

[৮]. তিরমিযী, হা/২১৬৭।

[৯]. মাতানুত্ব ত্বাহাবিয়্যাহ, ১ম খ-, পৃ. ৮৫।

[১০]. মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২২শ খ-, পৃ. ৪৪৫।

[১১]. মাসাঈলুল ইমাম আহমাদ বি-রিওয়ায়াতি আবী দাউদ, পৃ. ২৭৭।

[১২]. মানাক্বিবু ইমাম আহমাদ, পৃ. ১৭৮।




প্রসঙ্গসমূহ »: সালাফে ছালেহীন
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ফিলিস্তীন, হে মুসলিম! - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারী - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (৬ষ্ঠ কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (১২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ১১ রাক‘আতের নির্দেশ দিয়েছিলেন - ব্রাদার রাহুল হোসেন (রুহুল আমিন)
বিদ‘আত পরিচিতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায় (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
সর্বশ্রেষ্ঠ আমল - হাফেয আবূ তাহের বিন মজিবুর রহমান
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় (৫ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ