বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

বিদ‘আত পরিচিতি 

-ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান* 


 (শেষ কিস্তি)

বিদ‘আত প্রতিরোধে করণীয়

এক্ষণে আমরা বিদ‘আত প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ আলোচনা উপস্থাপন করব

১. আল-কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান অর্জন করা

বিদ‘আত প্রতিরোধে এটি সবচেয়ে বড় মাধ্যম। কেননা অজ্ঞতা সকল সফলতার অন্তরায়। এজন্য বিদ‘আত প্রতিরোধে বিশ্বাসী ও প্রয়াসী প্রত্যেক ব্যক্তিকে আল-কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান অর্জন করা বাধ্যতামূলক। ইসলামের প্রথম বাণী হল, اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ ‘পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা আল-‘আলাক্ব : ১)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, فَاعۡلَمۡ  اَنَّہٗ  لَاۤ اِلٰہَ  اِلَّا اللّٰہُ ‘আপনি জানুন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই’ (সূরা মুহাম্মাদ : ১৯)। কারণ জ্ঞান অর্জন ছাড়া প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করা যায় না। আল্লাহ প্রদত্ত শরী‘আত চিরন্তন ও অপরিবর্তনশীল, আপোসহীন ও অপ্রতিরোধ্য। তার নিজস্ব স্বকীয়তা ও সাতন্ত্র্য রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الۡکِتٰبَ بِالۡحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡہِ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ مُہَیۡمِنًا عَلَیۡہِ فَاحۡکُمۡ  بَیۡنَہُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَہُمۡ عَمَّا جَآءَکَ مِنَ الۡحَقِّ ؕ لِکُلٍّ جَعَلۡنَا مِنۡکُمۡ شِرۡعَۃً وَّ مِنۡہَاجًا

‘আর আমি এ কিতাবকে আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যা হক্বের সাথে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেরও সত্যতা প্রমাণকারী এবং ঐ কিতাবসমূহের সংরক্ষকও। অতএব আপনি তাদের পারস্পরিক বিষয়ে আল্লাহর নাযিলকৃত এই কিতাব অনুযায়ী মীমাংসা করুন। এটা পরিত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজ করবেন না। তোমাদের প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আমি নির্দিষ্ট শরী‘আত এবং নির্দিষ্ট পন্থা নির্ধারণ করেছি’ (সূরাহ আল-মায়িদাহ : ৪৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
 ثُمَّ جَعَلۡنٰکَ عَلٰی شَرِیۡعَۃٍ  مِّنَ الۡاَمۡرِ فَاتَّبِعۡہَا وَ لَا تَتَّبِعۡ  اَہۡوَآءَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ‘এরপর আমি আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরী‘আতের উপর। সুতরাং আপনি তার অনুসরণ করুন, মূর্খদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না’ (সূরা আল-জাছিয়াহ : ১৮)।

মুসলিম হিসাবে তার জীবন বিধান সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান রাখা আবশ্যক। তাই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর দ্বীনী ইলম অর্জন করা ফরয।[১] ‘আকীদাহ ও ‘আমল সম্পর্কে এতটুকু ‘ইলম অর্জন করা, যাতে দ্বীনের হুকুম-আহকাম, তাওহীদ-শিরক, সুন্নাত-বিদ‘আত, হালাল-হারাম সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। আসলে কুরআন-সুন্নাহর উপর সঠিক জ্ঞান না থাকাই বিদ‘আত নির্মূূল করা সম্ভব নয়।

২. ‘ইলমে হাদীছ জানা ও তার প্রচার করা

হাদীছ হলো ইসলামী শরী‘আতের দ্বিতীয় উৎস। হাদীছ ব্যতীত শরী‘আত অসম্পূর্ণ। এ সম্পর্কে অজ্ঞতা শরী‘আতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করে। এজন্য ‘ইলমে হাদীছ সম্পর্কে সর্বস্তরে মানুষদেরকে যেমন জ্ঞান অর্জন করতে হবে, তেমনি সে অনুযায়ী ‘আমল করতে হবে। দেশের অধিকাংশ মানুষ চাই শিক্ষিত হোক আর অশিক্ষিত, চাই ‘আলিম হোক আর সাধারণ মানুষ হোক, এই ‘ইলমে হাদীছ সম্পর্কে জ্ঞান একেবারে অপ্রতুল। ফলে শরী‘আত অনুসরণের ক্ষেত্রে তারা যেমন কোন কিছু যাচাই-বাছাই না করে বাপ-দাদাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত নিয়ম-নীতিকে আঁকড়ে ধরে, অনুরূপভাবে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন রসম, রেওয়াজ ও রীতি-নীতিকে সর্বশেষ আশ্রয় হিসাবে মনে করে। এছাড়া প্রবৃত্তির চাহিদার আলোকে সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ করার কারণে বিদ‘আতের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এলাকার কিছু অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত মাতব্বর, প্রামাণিক, মেম্বর, চেয়ারম্যান কিংবা ‘আলিমদের নিজস্ব মনগড়া বিধানের আলোকে সমাজ পরিচালনা হয় থাকে। তাদের নিকট ‘ইলমে হাদীছের গুরুত্ব যেমন নেই, তেমনি এ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণাও তাদের নেই। অথচ বিদ‘আত উৎখাতের জন্য ‘ইলমের হাদীছের উপর জ্ঞান অর্জন করা এবং তার ব্যাপক প্রচারের কোন বিকল্প নেই। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِىَّ قَالَ «بَلِّغُوْا عَنِّىْ وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوْا عَنْ بَنِىْ إِسْرَائِيْلَ وَلَا حَرَجَ ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ».


‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াতও জানা থাকলে তা প্রচার কর এবং বানী ইসলাঈলদের সত্য কাহিনী প্রচার কর। তবে কেউ যদি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করে তাহলে তার থাকার জায়গা জাহান্নাম’।[২] অতএব বেশি বেশি ‘ইলমে হাদীছ জানা ও চচা করা এবং প্রচার করার মাধ্যমে বিদ‘আত প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৩. বিদ‘আত সৃষ্টির মূল কারণসমূহ নির্মুল করা।

কোন কিছু এমনিতেই যেমন সৃষ্টি হয় না, তেমনি এমনি এমনি নির্মূল করা সম্ভব হয় না। তাই বিদ‘আত সৃষ্টির নেপথ্যেও কিছু মৌলিক কারণ রয়েছে। ফলে সমাজে বিদ‘আতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। সর্বাগ্রে কেই কারণগুলো নির্ণয় করা এবং তার নির্মূল করার চেষ্টা করা। যেমন, দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা, প্রবৃত্তির অনুসরণ, ‘আলিমদের অন্ধ অনুসরণ, কাফির-মুশরিকদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা, ‘আলিমদের নীরবতা, স্বার্থপরতা ও দায়িত্ব পালনে অবহেলা, জাল ও জা‘ঈফ হাদীসের উপর নির্ভরতা ইত্যাদি কারণে সমাজে বিদ‘আত সৃষ্টি হয়ে থাকে। অতএব বিদ‘আত প্রতিরোধ করতে হবে এই বিদ‘আত সৃষ্টির মৌলিক কারণগুলো আগে নির্মূল করতে হবে।

৪. যাবতীয় যঈফ ও জাল হাদীছের উপর ‘আমল পরিত্যাগ করা

জাল ও যঈফ হাদীছ ইসলামকে যত ক্ষতিসাধন করেছে অন্যান্য কারণ ততটা করেনি। অখণ্ড মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিনষ্টকরণ এবং তাদেরকে সঠিক কর্মসূচী থেকে বিভ্রান্তকরণেও এই জাল ও যঈফ হাদীছের রয়েছে মুখ্য ভূমিকা। মুসলিম জাতির প্রায় সকল বিষয়ে মতপার্থক্য থাকার নেপথ্যেও রয়েছে এর প্রধান ভূমিকা। অথচ হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে কেউ যেন মিথ্যা, প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির আশ্রয় না নেয়, সেজন্য রাসূল (ﷺ) চূড়ান্ত হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে গেছেন। ছাহাবাই কিরাম উক্ত হুঁশিয়ারীর ব্যাপারে সতর্ক থেকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এরপরও ইহুদী-খ্রিস্টান চক্র এবং পথভ্রষ্ট কতিপয় মুসলিম গোষ্ঠী ইসলামের নামে অসংখ্য জাল ও যঈফ হাদীছ রচনায় প্রবৃত্ত হয়েছে।

উক্ত পরিস্থিতিতে মুহাসিছগণ ঐ চক্রের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন এবং তাদের মুখোশ উন্মোচন করেন। তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে লক্ষ লক্ষ জাল ও যঈফ হাদীছকে ছহীহ হাদীছ থেকে পৃথক করে স্বতন্ত্র গ্রন্থে একত্রিত করেন। উম্মতের জন্য যুগের পর যুগ তাঁরা এভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ খেদমতের আঞ্জাম দিয়েছেন। কিন্তু মুসলিম সমাজের যারা কর্ণধার, তাদের অধিকাংশই এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা নির্দ্বিধায় জাল ও যঈফ  হাদীছ  প্রচার করেন, বই-পুস্তকে, প্রবন্ধ-নিবন্ধে লিখেন, পেপার-পত্রিকা ও মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। এভাবেই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জাল ও যঈফ হাদীছ চালু আছে। সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হিসাবে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কথার যে স্বতন্ত্র গুরুত্ব ও মর্যাদা আছে, সেদিকে তাদের কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। তাঁর চূড়ান্ত হুঁশিয়ারী হাদীছের পাতাতেই  থেকে  গেছে। অতএব মুসলিম উম্মাহ যদি জাল ও যঈফ হাদীছের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারে, তবে বিদ‘আত থেকে মুসলিম সমাজ মুক্ত হতে পারবে।

৫. শরী‘আতের যাবতীয় আহকাম ছহীহ দলীল ভিত্তিক হতে হবে।

ইসলামী শরী‘আতের কোন বিধান পালনের ক্ষেত্রে দলীল বিহীন ও মনগড়া কোন কিছু করার সুযোগ নেই। প্রমাণহীন কোন বিষয় পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিত্যাগ করতে হবে। কত বড় ইমাম, বিদ্বান, পণ্ডিত, ফকীহ বলেছেন বা করেছেন, তা দেখার প্রয়োজন নেই। কারণ প্রমাণহীন কথার কোন মূল্য নেই। এটা বিদ‘আত প্রতিরোধের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَسۡـَٔلُوۡۤا اَہۡلَ الذِّکۡرِ  اِنۡ کُنۡتُمۡ  لَا  تَعۡلَمُوۡنَ- بِالۡبَیِّنٰتِ وَ الزُّبُرِ

‘সুতরাং তোমরা যদি না জান, তবে স্পষ্ট দলীলসহ আহলে যিকিরদের জিজ্ঞেস কর’ (সূরাহ আন-নাহল : ৪৩-৪৪)। রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবাই কিরাম সর্বদা দলীলের ভিত্তিতেই মানুষকে আহ্বান জানাতেন।[৩]

ইসলামের ইতিহাসে প্রসিদ্ধ চার ইমামসহ মুহাদ্দিছ ‘উলামাই কিরামও দলীলের ভিত্তিতে মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন। ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) (৮০-১৫০ হি.) বলেন,

لَايَحِلُّ لِأَحَدٍ أَنْ يَّأْخُذَ بِقَوْلِنَا مَا لَمْ يَعْلَمْ مِنْ أَيْنَ أَخَذْنَاهُ

‘ঐ ব্যক্তির জন্য আমাদের কোন বক্তব্য গ্রহণ করা হালাল নয়, যে জানে না- আমরা উহা কোথা থেকে গ্রহণ করেছি’।[৪]

ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) (১৫০-২০৪ হি.) বলেন,

إِذَا رَأَيْتَ كَلاَمِىْ يُخَالِفُ الْحَدِيْثَ فَاعْمَلُوْا بِالْحَدِيْثِ وَاضْرِبُوْا بِكَلاَمِىْ الْحَائِطَ

‘যখন তুমি আমার কোন কথা হাদীসের বরখেলাফ দেখবে, তখন হাদীসের উপর ‘আমল করবে এবং আমার কথাকে দেওয়ালে ছুড়ে মারবে’।[৫] ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) (৯৩-১৭৯ হি.), ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) (১৬৪-২৪১ হি.) সহ অন্য ইমামগণও একই কথা বলেছেন।[৬]

৬. প্রচলিত কোন ‘আমল শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে ভুল প্রমাণিত হলে সাথে সাথে তা বর্জন করা এবং সঠিকটা গ্রহণ করা

দেশের মুসলিম সমাজে অসংখ্য এমন ‘আমল প্রচলিত রয়েছে, যা শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক নয়। সুতরাং এমনটা প্রমাণ হলেই সাথে সাথে ভুলটা বর্জণ করতে হবে এবং সঠিকটা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র গোঁড়ামি করা যাবে না। এখনো অধিকাংশ ‘আলিম করছেন, এখনো সমাজে চালু আছে, এ সমস্ত কথা বলা যাবে না। ভুল হওয়া মানুষের স্বভাবজাত। তবে ভুল করার পর যে সংশোধন করে নেয়, সেই সর্বোত্তম। রাসূল (ﷺ) বলেন,

كُلُّ ابْنِ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِيْنَ التَّوَّابُوْنَ

‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী আর উত্তম ভুলকারী তারাই, যারা তাওবাহ করে’।[৭] যারা ভুল করার পর তওবা করবে এবং সংশোধন করে নিবে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং ইহকাল ও পরকালে চিন্তামুক্ত রাখবেন।[৮] তাওবাহ করে ফিরে আসলে পূর্বের সমস্ত পাপ নেকীতে পরিণত করে দিবেন।[৯] ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছাহাবীদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও অনেক বিষয় অজানা ও স্মরণ না থাকার কারণে ভুল সিদ্ধান্ত পেশ করেছিলেন। কিন্তু সঠিক বিষয় জানার পর বিন্দুমাত্র দেরী না করে তার প্রতি আত্মসমর্পণ করেছেন।[১০]

৭. শরী‘আতের কোন বিষয়কে খুঁটিনাটি বলে অবজ্ঞা না করা

ইসলামী শরী‘আতের কোন বিধানই খুঁটিনাটি নয়। নির্দেশিত সকল বিষয় পালনীয় এবং নিষেধকৃত সকল বিষয় থেকে বিরত থাকা একজন মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। অনুরূপ কোন সুন্নাতই ছোটখাটো নয়। রাসূল (ﷺ) আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েই তাঁর উম্মতের জন্য ছোট বড় বিষয় নির্ধারণ করেছেন।[১১] অতএব শরী‘আতের কোন বিষয়কে অবজ্ঞা করা ও খুঁটিনাটি বলে তাচ্ছিল্য করা অমার্জনীয় অপরাধ। রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবীগণ এই অবহেলাকে মুহূর্তের জন্যও বরদাশত করেননি। একদা রাসূল (ﷺ) বারা ইবনু ‘আযিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ঘুমানোর দু‘আ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তার এক অংশে তিনি বলেন, 

آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِىْ أَنْزَلْتَ وَنَبِيِّكَ الَّذِىْ أَرْسَلْتَ قَالَ الْبَرَاءُ فَقُلْتُ وَبِرَسُوْلِكَ الَّذِىْ أَرْسَلْتَ قَالَ فَطَعَنَ بِيَدِهِ فِىْ صَدْرِىْ ثُمَّ قَالَ وَنَبِيِّكَ الَّذِىْ أَرْسَلْتَ

‘(হে আল্লাহ!) আপনার নবীর প্রতি ঈমান আনলাম, যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন’। আর বারা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘এবং আপনার রাসূলের প্রতি ঈমান আনলাম, যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন’। উক্ত কথা শুনে রাসূল (ﷺ) বারার বুকে তাঁর হাত দ্বারা আঘাত করে বলেন, বরং ‘আপনার নবীর প্রতি ঈমান আনলাম, যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন’।[১২] এখানে রাসূল (ﷺ) ‘নবীর’ স্থানে ‘রাসূল’ শব্দটিকে বরদাশত করলেন না।

অতএব বিদ‘আত নির্মূল করতে গেলে শরী‘আতের কোন বিষয়কে খুঁটিনাটি বলে অবজ্ঞা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৮. বির্ধর্মীদের অনুসরণ না করা

শরী‘আতে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে যে, কোন মুসলিমের জন্য বিধর্মীদের অনুসরণ করা হারাম। তাদের কোন বিধান, নিয়ম-নীতি, উৎসব ইত্যাদি যেমন অনুসরণ করা যাবে না, তেমনি অংশগ্রহণ করা বা সহযোগিতা করাও যাবে না। যারা ইসলাম ধর্মকে মানে না আল্লাহ‌কে বিশ্বাস করে না তাদের উৎসব, রীতিনীতি ও কালচার পালন করে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ ও সমর্থন করা যাবে না।  অথচ ইসলামের অধিকাংশ ক্ষেত্রে অমুসলিমদের প্রভাব লক্ষণীয়। ফলে দেখা যাচ্ছে ইসলাম বিরোধী আমল, আখলাক এবং শিরক-বিদ‘আতের ছড়াছড়ি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا  تَتَّخِذُوا الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا دِیۡنَکُمۡ ہُزُوًا وَّ لَعِبًا مِّنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ وَ الۡکُفَّارَ اَوۡلِیَآءَ ۚ وَ اتَّقُوا  اللّٰہَ  اِنۡ  کُنۡتُمۡ  مُّؤۡمِنِیۡنَ

‘হে মুমিনগণ! তোমরা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যারা তোমাদের দ্বীনকে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্য থেকে তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও কাফিরদেরকে। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক’ (সূরাহ আল-মায়িদাহ : ৫৭)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوا الۡیَہُوۡدَ وَ النَّصٰرٰۤی اَوۡلِیَآءَ ۘؔ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ؕ وَ مَنۡ  یَّتَوَلَّہُمۡ  مِّنۡکُمۡ فَاِنَّہٗ  مِنۡہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ  لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ  الظّٰلِمِیۡنَ

‘হে মুমিনগণ! ইহুদী ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ জালিম কওমকে হিদায়াত দেন না’ (সূরাহ আল-মায়িদাহ : ৫১)। হাদীছে এসেছে, ইবনু ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত’।[১৩] শাইখুল ইসলাম ইব‌নু তাইমিয়্যাহ (রহ.) বলেন,

وَقَدْ دَلَّ الْكِتَابُ وَجَاءَتْ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَسُنَّةُ خُلَفَائِهِ الرَّاشِدِينَ الَّتِي أَجْمَعَ أَهْلُ الْعِلْمِ عَلَيْهَا بِمُخَالَفَتِهِمْ وَتَرْكِ التَّشَبُّهِ بِهِمْ

‘আল্লাহর কিতাব, নবী (ﷺ)-এর সুন্নাত, খুলাফায়ে রাশিদীনের আদর্শ ও সকল ‘আলিম একমত যে, মুশরিকদের বিরোধিতা করতে হবে এবং তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা যাবে না’।[১৪] এছাড়া আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ হল-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ

‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু’ (সূরাহ আল-বাক্বারাহ : ২০৮)। অতএব কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় ইহুীদ-খ্রিস্টান, হিন্দু ও মুশরিকদের রীতি-নীতির অনুসরণ করা, তাদের উৎসব পালন করা ও সেখানে সহযোগিতা করা।

৯. প্রচার-প্রচারণা

প্রচারেই প্রসার। এক্ষেত্রে বিদ‘আতের কুফল ও তার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে প্রচার করা জরুরী। আর দেশে বিভিন্ন ধরণের প্রচার মাধ্যম থাকে। এ সকল প্রচার মাধ্যম জনমত ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেটসহ পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে বিদ‘আত প্রতিরোধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

১০. গণসচেতনতা

বিদ‘আতের ভয়াবহ পরিণতি এবং তার নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সকল স্তরের মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। সুন্নাতের প্রতি মানুষের মানসিকতাকে জাগ্রত করতে হবে। যাতে সমাজের প্রতিটি মানুষ বিদ‘আতের পরিণতি ও তার প্রচার-প্রসারের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয় এবং সুন্নাত গ্রহণে আত্মনিয়োগ করতে পারে। বিষয়টি কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। কেননা এদেশের জনগণ ধর্মভীরু এবং সচেতন। তাদেরকে যদি বিদ‘আতের কুফল এবং তার ইহকালীন ও পরকালীন পরিণতির বিষয় বুঝিয়ে দেয়া যায়, তাহলে তা সময় সাপেক্ষ হলেও অসম্ভব নয়। এজন্য নিম্নোক্ত পন্থাগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে :

প্রথমতঃ দেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচীতে বিদ‘আত সংক্রান্ত বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত করা। শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিদ‘আতের কুফল ও তার পরিণতির বিষয় সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান দানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা শিক্ষা কারিকুলাম ও সিলেবাসে থাকতে হবে। সুন্নাহর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারণার বিষয়গুলো সেখানে অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবেচ। এছাড়া বিদ‘আত প্রতিরোধের জন্য বিদ‘আত সংক্রান্ত উচ্চতর গবেষণাকে উৎসাহিত করতে হবে। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থ্্্্্ার পাঠ্যসূচীতে বিদ‘আত সংক্রান্ত বিষয়াবলী যৎসামান্যই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার কতিপয় স্তরে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই নগণ্য। সুতরাং শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যসূচীতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হলে সার্বিকভাবে জনগণ সচেতন হবে এবং তা বিদ‘আত প্রতিরোধে ও সুন্নাহ বাস্তবায়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দ্বিতীয়তঃ মসজিদে খুতবাহ। বছরে বায়ান্ন দিন এলাকার জনগণ মসজিদে জুম‘আর সালাতে অংশগ্রহণ করেন হন। এ জুম‘আর সালাতের খুতবায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা করা হয়। সে সব বিষয়ের পাশাপাশি যদি ইমাম সাহেবগণ বিদ‘আতের পরিচয়, কুফল ও তার ক্ষতিকর দিকগুলো এবং সুন্নাহর পরিচয়, তা বাস্তবায়নের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন, তাহলে ধীরে ধীরে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হবে। 

তৃতীয়তঃ ওয়াজ মাহফিল, তাফসীর মাহফিল, ইসলামী জালসা, তা‘লীমী বৈঠক, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে বরেণ্য ‘উলামায়ে কিরাম, যুগশ্রেষ্ঠ মুফাসসির এবং খ্যাতনামা অভিজ্ঞ পণ্ডিত ব্যক্তিগণ বক্তব্য রেখে থাকেন। এসব অনুষ্ঠানে নানা বয়স, পেশা, শিক্ষা ও পদমর্যাদার বহুলোকের সমাগম হয়ে থাকে। সুতরাং এসব অনুষ্ঠানে যদি বিদ‘আত কুফল এবং তার পরিণতির এবং সুন্নাহর অনুসরণের কথা বিশদভাবে বুঝিয়ে বক্তব্য রাখা যায়, তাহলে নিঃসন্দেহে আলোড়ন সৃষ্টি হবে এবং জনমত গড়ে উঠবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সুচিন্তিত ও সুবিন্যস্ত পরিকল্পনা।

চতুর্থতঃ বিদ‘আত বিরোধী পোষ্টার। পোষ্টার, লিফলেট ও স্টিকারের মাধ্যমে বিদ‘আতের বিরুদ্ধে  এবং সুন্নাহর পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা যায়। এগুলো মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়, অনুভূতিকে আকর্ষণ করে। বিদ‘আত প্রতিরোধে এবং সুন্নাহ প্রতিষ্ঠার জন্য বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, উন্মুক্ত জমায়েতের স্থান, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেগুলো লাগিয়ে বিদ‘আতের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা যেতে পারে।

উপসংহার

বিদ‘আত সকল শ্রেণীর মানুষের জন্যই বিপদজনক। তাই এ সম্পর্কে সবার স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। কিন্তু বর্তমানে নির্ভেজাল তাওহীদ ও বিশুদ্ধ সুন্নাহর চর্চা হারিয়ে যেতে বসেছে। মানুষের মাঝে এ ব্যাপারে তেমন কোন ধারণা নেই। মানুষ আজ বিদ‘আতকেই সুন্নাহ মনে করে জীবন-যাপন করছে। বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি অবলোকন করে যদি বিদ‘আতের স্বরূপ উদ্ঘাটন করা যায় এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে স্পষ্ট করা যায়, তাহলে সমাজ থেকে সহজেই তা বিদূরীত হবে। আর এই পরিকল্পনা সফল করার জন্য একমাত্র মানদণ্ড হতে হবে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর আদর্শ ও তাঁর গৃহীত মূলনীতি। কারণ তিনি যে আদর্শ বাস্তবায়ন করে গেছেন, তার চেয়ে সুন্দর ও স্থায়ী জীবনাদর্শ আজও পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই তাঁকেই মডেল হিসাবে পেশ করতে হবে। তাছাড়া মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর আদর্শের মাধ্যমেই যে সমাজ থেকে সকল ধরনের বিদ‘আতের মূলোৎপাটন করতে পারে এ বিষয়টিও সর্বাগ্রে উপলব্ধি করতে হবে।

মুসলিমদের ‘আকীদাহ-বিশ্বাস ও ‘আমলের দুরবস্থা অবর্ণনীয়। শিরকী ‘আকীদাহর বাহুল্যতা ও বিদ‘আতী ‘আমলের ছড়াছড়ি যেন গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে। এমন কোন দিক ও বিভাগ নেই যা শিরক ও বিদ‘আতের রোগে আক্রান্ত নয়। সংস্কার কার্যক্রমই দুর্দশাগ্রস্ত এই মুসলিমদের মাঝে আবারো আশার সঞ্চার করতে পারে। আবারো যে বিশুদ্ধ ইসলামের বিজয় কেতন উন্মুক্ত আকাশে উড়তে পারে তার বাস্তবতা দেখতে পাওয়া যায় ফেলে আসা দিনগুলোতে। মানবতার জন্য সেই সোনালী ইতিহাস অবশ্যই প্রেরণাদায়ক। তাই শিরক-বিদ‘আত মূলোৎপাটনে রাসূল (ﷺ) যেমন তরুণ কাফেলাকে কাজে লাগিয়েছিলেন, তেমনি আমাদেরকেও প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী তরুণ সমাজকে কাজে লাগাতে হবে। তবে এই সংস্কার কার্যক্রম সফল করার জন্য সর্বপ্রথম এর বাধাগুলোকে নির্মূল করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তাই প্রকৃত ইসলামকে উপলব্ধি করা এবং ‘আকীদাহগতভাবে এর গভীরে প্রবেশ করা পূর্বশর্ত। সেই সাথে ইসলামকে হিকমতের সাথে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করা এবং কার্যকর করাও যরূরী কর্তব্য। এছাড়া আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনকে বিতর্কিত করার জন্য যে গোষ্ঠীগুলো প্রচারণা চালাচ্ছে, তাদেরকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মুকাবিলা করতে হবে। শার‘ঈ অপব্যাখ্যা, যঈফ ও জাল হাদীছ ও মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির অভিশাপকে আন্তরিকতার সাথে বর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সকল স্তরের মানুষকে চরম উদারতার পরিচয় দিতে হবে।

বাংলাদেশের  মুসলমানদের মধ্যে বিদ‘আত প্রতিরোধের প্রত্যাশা পুরো মাত্রায় থাকলেও কিভাবে তা পূরণ হবে, সেই রোডম্যাপ সম্পর্কে অধিকাংশেরই অজানা। তাই এগুলো বিষয়ে বেশি বেশি আলোচনা পর্যালোচনা ও সামাজিক গবেষণা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। আমরা তারই আংশিক আমাদের গবেষণায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

বিদ‘আতের ভয়াবহতার পরিধি অনেক বৃহৎ ও ব্যাপক। তাই স্বল্প পরিসরে আলোচনা করে তা উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া এ বিষয়ে উচ্চতর গবেষণাও অনেক অপ্রতুল। তাই আল্লাহর তাওহীদকে সমুন্নত করা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিশুদ্ধ সুন্নাতকে পুনরুদ্ধার করা এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে মুসলিম জনসাধারণ, দ্বীনের দাঈ ও গবেষকদের সামনে পেশ করার জন্য এই পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। আমি আশা করি নির্ভেজাল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ও বিদ‘আত মূলোৎপাটন পূর্বক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাতী আদর্শের প্রতিষ্ঠা ও বিদ‘আত উচ্ছেদসাধন করার জন্য আগামীতে এ বিষয়ে আরো নতুন নতুন গবেষণা সম্পাদিত হবে।  


* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১] ইবনু মাজাহ, হা/২২৪, সনদ হাসান।     
[২]. সহীহুল বুখারী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১২৭৫, হাদীস সংখ্যা-৩২৭৪; সুনানুত তিরমিযী, ৫ম খণ্ড, পৃ.৪০, হাদীস সংখ্যা-২৬৬৯; মিশকাতুল মাসাবীহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৩, হাদীস সংখ্যা-১৯৮।     
[৩]. সূরাহ ইউসুফ : ১০৮; সূরাহ আন-নাজম : ৩-৪; সূলাহ আল-হা-ক্কাহ : ৪৪-৪৬; সহীহুল বুখারী, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২১৭৫, হাদীস সংখ্যা-৫৪৩২; আহমাদ ইবনু শু‘আইব আবূ ‘আব্দির রহমান আন-নাসাঈ, সুনানুন নাসাঈ আল-কুবরা (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১৪১১ হি./১৯৯১ খ্রি.), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৪৩, হাদীস সংখ্যা-১১১৭৪,; ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্দির রহমান আবূ মুহাম্মাদ আদ-দারিমী, সুনানুদ দারিমী (বৈরুত : দারুল কিতাবিল ‘আরাবী, ১৪০৭ হি.), হাদীস সংখ্যা-২০২; মিশকাতুল মাসাবীহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৬, হাদীস সংখ্যা-১৬৬।
[৪]. ইবনুল কাইয়িম, ই‘লামুল মুআক্কিঈন ‘আন রাব্বিল ‘আলামীন (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১৪১৪ হি./ ১৯৯৩ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০৯; ইবনু ‘আবিদীন, হাশিয়া বাহরুর রায়েক, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৯৩; মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, সিফাতু সালাতিন নাবী (সা.) মিনাত তাকবীর ইলাত তাসলীম কাআন্নাকা তারাহু (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৪১১ হি./১৯৯১ খ্রি.), পৃ. ৪৬।
[৫]. শাহ অলিউল্লাহ দিহলভী, ইকদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদ ওয়াত তাকলীদ (কায়রো : আল-মাতবা‘আতুস সালাফিয়াহ, ১৩৪৫ হি.), পৃ. ২৭।
[৬]. প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮।
[৭]. সুনানুত তিরমিযী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৬৬৯, হাদীস সংখ্যা-২৪৯৯; মিশকাতুল মাসাবীহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৭, হাদীস সংখ্যা-২৩৪১।
[৮]. সূরাহ আল-আন‘আম : ৪৮, ৫৪।
[৯]. সূরাহ আল-ফুরকান : ৭০।
[১০]. সহীহুল বুখারী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৬১৮, হাদীস সংখ্যা-৪১৮৭; সহীহ মুসলিম, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৬৯৪, হাদীস সংখ্যা-২১৫৩।
[১১]. সুনানু আবী দাঊদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৪, হাদীস সংখ্যা-১৪৫; মিশকাতুল মাসাবীহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৮, হাদীস সংখ্যা-৪০৮।
[১২]. সুনানুত তিরমিযী, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৪৬৮, হাদীস সংখ্যা-৩৩৯৪।
[১৩]. সুনানু আবী দাঊদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৪১, হাদীস সংখ্যা-৪০৩১; মিশকাতুল মাসাবীহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৮৭, হাদীস সংখ্যা-৪৩৪৭।
[১৪]. ইবনু তাইয়িম্যাহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ৩২৭।




ইসলামে রোগ ও আরোগ্য (৪র্থ কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (১৫তম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের ধারণা: গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ (৫ম কিস্তি) - ড. মেসবাহুল ইসলাম
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
পরনিন্দা চর্চা ও তার পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
দু‘আ ও যিকর : আল্লাহর অনুগ্রহ ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ফিলিস্তীন, হে মুসলিম! - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে ধর্মের ভূমিকা (শেষ কিস্তি) - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
বিদ‘আত পরিচিতি (২০তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ