মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ন

জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম

–আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*


(৪র্থ কিস্তি)


আহলেহাদীছ বা আহলুল হাদীছের পরিচয়

ফারসী সম্বন্ধ পদে আহলেহাদীছ ও আরবী সম্বন্ধ পদে আহলুল হাদীছ একই অর্থ বহন করে, যার অর্থ হাদীছের অনুসারী।[১] পবিত্র কুরআন ও হাদীছের বহুস্থানে ‘আল্লাহর কিতাব’-কে ‘হাদীছ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে (সূরা আন-নিসা : ৭৮, ৮৭; আল-আ‘রাফ : ১৮৫; ইউসুফ : ১১১; আল-কাহ্ফ : ৬; ত্ব-হা : ৯; আয-যুমার : ২৩; আল-জাছিয়াহ : ৬; আত-তূর : ৩৪; আন-নাজম : ৫৯; আল-ওয়াক্বি‘আহ : ৮১; আল-ক্বলম : ৪৪; আল-মুরসালাত : ৫০; আল-গাশিয়াহ : ১)।[২] এছাড়াও হাদীছেও হাদীছকে ‘হাদীছ’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।[৩] আহলেহাদীছগণ কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী জীবন গড়ার নীতিতে বিশ্বাসী, সেজন্য তাদেরকে ‘আছহাবুল হাদীছ’ বা ‘আহলুল হাদীছ’ কিংবা ‘আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’ বলা হয়।

أهل শব্দটি আরবী। এর অর্থ অনুসারী, অধিবাসী ইত্যাদি।[৪] হাদীছ (حديث) কথা বা বাণীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ কথা বা বাণী একটার পর একটা শব্দ আকারে মুখ হতে বা লেখনীর মাধ্যমে নতুনভাবে বের হয়ে আসে।[৫] হাদীছ এমন বাক্য, যার সমন্বয়ে কথা বলা হয় এবং যা শব্দ ও লিপি আকারে নিসৃত হয়।[৬] আভিধানিক অর্থে বর্ণনা, সংবাদ, নতুন, অনাদির বিপরীত প্রভৃতি অর্থেও হাদীছ-এর ব্যবহার হয়ে থাকে। হাদীছ (حديث) শব্দটি একবচন। বহুবচনে আহাদীছ (أحاديث) বা উহদূছাহ (أحدوثة)।[৭] পারিভাষিক অর্থে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা বা কর্ম বা মৌন সম্মতি বা সৃষ্টিগত বা চারিত্রিক গুণাবলীকে হাদীছ বলা হয়।[৮]

সুন্নাহ (السنة) অর্থ দাগ। ছুরি ধার করার উদ্দেশ্যে পাথরের উপর বারবার ঘর্ষণের ফলে সেখানে যে দাগ পড়ে যায়, সেটাই সুন্নাহ। নিয়মিতভাবে কোন কাজ করলে তাকে সুন্নাহ বলে।[৯] সুন্নাহ (السنة) শব্দটি একবচন। বহুবচনে (السنن) সুনান। আভিধানিক অর্থ (دائم) নিয়মিত, (الطريقة المسلوكة) প্রচলিত পদ্ধতি, (الطريقة المحمودة) প্রশংসনীয় রীতি[১০] বা (الطريقة المسلوكة والمعتدة في الحياة) সমাজ জীবনে প্রচলিত সাধারণ রীতি।[১১] এতদ্ব্যতীত সুন্নাহ অর্থ এমন রীতি যা ইতিপূর্বে কেউ চালু করেনি। এমনিভাবে সুন্নাহ অর্থ জীবন পদ্ধতি, রাস্তা, পথ, রীতি, পদ্ধতি[১২] সীরাত, তরীকা বা পন্থা[১৩], ‘অভ্যাস’[১৪], বা সহজ-সরল পথ তথা ছিরাতে মুস্তাক্বীম’।[১৫] পারিভাষিক অর্থে সুন্নাহ হল ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা ও কাজের মাধ্যমে যা প্রকাশ পেয়েছে, যা কুরআন নয়’।[১৬] অর্থাৎ নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে কথা, কর্ম ও মৌনসম্মত হিসাবে যা প্রকাশ পেয়েছে। যার মাধ্যমে তিনি উম্মতের জন্য বিধান আরোপ করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তাছাড়া অহীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় এরূপ নিজ সত্তাগত ও দুনিয়াবী বিষয়সমূহের বাইরে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শরী‘আত বিষয়ক সকল কথা, কর্ম ও মৌনসম্মতিকেও সুন্নাহ বলে’।[১৭] অতএব আহলুল হাদীছ বা আহুলুস সুন্নাহ হল তারাই, যারা কল্যাণের সাথে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), ছাহাবী এবং তাদের অনুসারী তাবেঈণের অনুসরণ করে। আর যারা তাদের মানহাজকে গ্রহণ করে এবং তাদের অনুসরণ করে এবং তাদের আছারের মাধ্যমে ক্বিয়ামত পর্যন্ত মুমিনগণের পথের অনুসরণ করে তারাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত।

মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত তারাই, যারা আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে, তার উপর ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং অন্য কোন আক্বীদা এবং রীতি-নীতির দিকে দৃষ্টি দেয় না। এ কারণেই তাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত নামে নামকরণ করা হয়েছে। কেননা তাঁরা সুন্নাহর ধারক ও বাহক। এছাড়া তাদেরকে আহলুল জামা‘আতও বলা হয়। কেননা তারা সুন্নাহর উপর জামা‘আতবদ্ধ বা ঐক্যবদ্ধ’।[১৮]

শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তারা হলেন- নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর ছাহাবীগণ যার উপরে ছিলেন তাঁর অনুসারী। তাঁরা নবী নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত শক্তভাবে ধারণকারী, তাঁরা হলেন ছাহাবীগণ, তাবেঈগণ এবং যারা তাদের অনুসরণ করে। যেকোন স্থানে ও যেকোন সময়ে যারা (সুন্নাহর) অনুসরণের ক্ষেত্রে দৃঢ়পদ থাকেন এবং বিদ‘আত থেকে দূরে থাকেন। তারা দ্বীনের সাহায্যকারী হিসাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের দিকে সম্পৃক্ত থাকার কারণে এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে এবং কথায়, আমলে ও বিশ্বাসে জামা‘আতবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরে থাকার কারণে তাদেরকে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে’।[১৯]

শায়খুল ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত তারাই, যারা সৎভাবে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর ছাহাবীগণ এবং তাবেঈগণের পথ অনুসরণ করেন। এটা জ্ঞাত বিষয় যে, আহলেহাদীছ তারাই, যারা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহর জ্ঞান নিয়ে গবেষণাকারী উম্মতের বড় একটি দল। তারা সর্বদা একাজেই ব্যস্ত থাকেন এবং গবেষণার মাধ্যমে তাদের জীবন অতিবাহিত করেন। আর তারা যত্ন সহকারে হাদীছ মুখস্থ, সংকলন এবং বাছাই করে থাকেন। এমনকি তারা যঈফ এবং মিথ্যা হাদীছ থেকে ছহীহ হাদীছকে স্পষ্ট করে তোলেন। এ ব্যাপারে কেবল তাদেরকে তারাই বিরোধিতা করে, যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর মুমিনবান্দাগণের শত্রু’।[২০] অতএব যারা আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে হাদীছ ও সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে, তার উপর ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং অন্য কোন আক্বীদা এবং রীতি-নীতির দিকে দৃষ্টি দেয় না। তাদের উপর কখনোই জঙ্গী অপবাদ আরোপ করা যায় না। একজন আহলেহাদীছ যেমন জঙ্গী হতে পারে না, তেমনিভাবে একজন জঙ্গি কখনো আহলেহাদীছ হয় না।

ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থা

জঙ্গিবাদ, চরমপন্থা এবং সন্ত্রাস পদ্ধতিগত ব্যবহার যা প্রায়ই ধ্বংসাত্মক এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ঘটানো হয়। যে সকল বিধ্বংসী কার্যকলাপ জনমনে ভীতির উদ্ধেগ ঘটায়, ধর্মীয়, রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৃত রুচিবিরুদ্ধকাজ, যা জনগনের নিরাপত্তার জন্য উপেক্ষা এবং হুমকি এবং যা আইন বহির্ভূত কার্যকলাপ। অথচ জঙ্গিবাদ, চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। বর্তমানে আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে ‘ইসলাম’-কে সন্ত্রাসের জনক বলে বিচিত্র করা হচ্ছে। অথচ ইতিহাস ও বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। সন্ত্রাস বলতে যা বুঝানো হয়েছে তার শুরু হলো ইহুদী উগ্রবাদীদের দ্বারা। প্রাচীন যুগ থেকে ইহুদী চরমপন্থী ধার্মিকগণ ‘ধর্মীয় আদর্শ’ ও ‘ধর্মীয় রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। মানব ইতিহাসে প্রাচীন যুগের প্রথম প্রসিদ্ধ সন্ত্রাসী কর্ম ছিল উগ্রবাদী ইহুদী যীলটদের সন্ত্রাস। ঐ সকল ইহুদী যীলটরা নিজেদের ধর্মীয় ও সামাজিক স্বাতন্ত্র্য এবং স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আপোসহীন ছিল। যে সকল ইহুদী রোমান রাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা করত বা সহাবস্থানের চিন্তা করত এরা তাদেরকে গুপ্ত হত্যা করত। এরা প্রয়োজনে আত্মহত্যা করত কিন্তু প্রতিপক্ষের হাতে ধরা দিত না।[২১] মধ্যযুগে খ্রিষ্টানদের মধ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারণে সন্ত্রাসের অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। বিশেষত ধর্মীয় সংস্কার, পাল্টা-সংস্কারের যুগে ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্টদের মধ্যে অগণিত যুদ্ধ ছাড়াও বহির্ভুত সন্ত্রাসের অনেক ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে।[২২] যে কোন এনসাইক্লোপীডিয়া বা তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থে সন্ত্রাসের ইতিহাস সন্ধান করলে চরমপন্থা বা সন্ত্রাসের উৎপত্তি এবং ক্রমবিকাশে মুসলমানদের অবদান খুবই কম পাওয়া যাবে। আধুনিক ইতিহাসে ভারতে, ইউরোপে ও অন্যান্য দেশে অগণিত সন্ত্রাসী দল ও সন্ত্রাসী ঘটনা পাওয়া যাবে। যাদের অধিকাংশই ইহুদী, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।

বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী ঘটনা হলেই প্রথমে মুসলিমদেরকে দায়ী করা হয় এবং প্রচার মাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে অনেক সময় এদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করা যায় না। কিন্তু অন্যরা তা করলে প্রচার মাধ্যম তা ফলাও করে প্রচার করে না। বিশ্বের যে কোন সংস্থার রিপোর্ট দেখলেও তা বোধগম্য যে, পৃথিবীতে অমুসলিমরাই চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের মদদদাতা। ইউরোপোলের রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে সন্ত্রাসীদের ৯৯.৬ শতাংশই অমুসলিম।[২৩] ইউরোপ ও আমেরিকার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বিশ্বের মোট সন্ত্রাসী ঘটনার ৫ শতাংশের জন্যও মুসলিম দায়ী নয়। এফবিআই’র সরকারী নথিপত্রের আলোকে এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৮০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সংঘটিত সব সন্ত্রাসী আক্রমনের মাত্র ৬ শতাংশের জন্য দায়ী মুসলিম। বাকী ৯৪ শতাংশে জন্য দায়ী অন্যরা। তার মধ্যে ল্যাতিনরা ৪২ শতাংশ, চরম বামপন্থীরা ২৪ শতাংশ, চরমপন্থী ইহুদীরা ৭ শতাংশ, কমিউনিষ্টরা ৫ শতাংশ এবং অন্য গ্রুপগুলো ১৬ শতাংশ। আর ইউরোপে মুসলিম সন্ত্রাসী এক শতাংশের কম। হেগভিত্তিক ইউরোপিয়ান পুলিশ অফিস তথা ‘ইউরোপোলের ইইউ টেরোরিজম সিচুয়েশন অ্যান্ড ট্রেন্ড রিপোর্ট’-এ প্রকৃত সন্ত্রাসের এ বাস্তব চিত্র পাওয়া গেছে।[২৪]

বর্তমানে কিছু নামধারী মুসলিম বিভিন্ন দেশে অযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষ হত্যা করছে বা সন্ত্রাসের আশ্রয় নিচ্ছে বলে শোনা যায়। এগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রমাণিত নয়। সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী ঘটনা আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস। যুক্তরাষ্টের দাবি ওসামা বিন লাদেন বা তার বাহিনী তা করেছে। আর এ ঘটনার জন্য তারা ঘোষণা করে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ তত্ত্ব। আর এ তত্ত্বের মাধ্যমে আফগানিস্তান ও ইরাকের লক্ষ লক্ষ নিরীহ নিরস্ত্র অযোদ্ধা নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। অথচ ১৯৮৭ সালে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে এ ওসামাকে তারাই তৈরি করে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে।[২৫] মূলত টুইন টাওয়ার হামলা ছিল নিছক আইওয়াশ। আর এর পিছনে তাদের উদ্দেশ ছিল ওসামার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে মুসলিম জাতিকে নিধনের সুদূরপ্রসারী এক নীল-নকশা আঁটা। যার মাধ্যমে একদিকে বিশ্বব্যাপী একক কর্তৃত্ব সম্প্রসারণ করা, অন্যদিকে একটি সম্ভাবনাময় মুসলিম সভ্যতার প্রতিরোধ করা।[২৬] আর এ লক্ষ্যেই তারা ৯/১১-এর নাটক মঞ্চস্থ করে এবং এর মাধ্যমে কেবল ওসামা বিন লাদেনকে নয়, বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বকেই বিশ্বের নিকট জঙ্গি বা সন্ত্রাসী জাতি হিসেবে পরিচিতি করার সুযোগ গ্রহণ করে। প্রকৃতপক্ষে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ ইসলামী দেশগুলোর নিয়ন্ত্রন ও তাদের দেশগুলোর নীরব ইসলামায়ন রোধে জঙ্গিবাদের ইসূকেই সর্বোত্তম বিবেচনা করে এবং তাদের স্বার্থেই ‘জঙ্গিবাদ’ সৃষ্টি করে। আমেরিকা তার অসৎ স্বার্থ চরিতার্থ করতে যথেষ্ট সফল হয়েছে। কেননা ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এ তত্ত্বের ভিত্তিতে তারা মূলত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নয়, বরং ইসলামের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর অমুসলিম জাতি আজ মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। কারণ তাদের কথা, কার্যক্রম এবং বিবৃতি এটাই প্রমাণ করে। যেমন ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে ডেনমার্কের রাণী এক বিবৃতিতে বলেন,

We are being challenged by Islam these years globally as well as locally. It is a challenge we have to take seriously… We have to show our opposition to Islam and we have to, at times, run the risk of having unflattering labels placed on us because there are some things for which we should display no tolerance.

‘বর্তমান বছরগুলোতে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে এবং স্থানীয়ভাবে ইসলামের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি। এ চালেঞ্জকে আমাদের কঠিনভাবে গ্রহণ করতে হবে। ইসলামের প্রতি আমাদের বিরোধিতা আমাদেরকে অপ্রশংসনীয় বদনাম গ্রহণের ঝুঁকিও গ্রহণ করতে হবে। কারণ কিছু কিছু বিষয় আছে, যে বিষয়ে আমাদের কোন নমনীয়তা বা সহনশীলতা প্রদর্শন করা উচিত নয়’।[২৭]

আমেরিকার প্রসিদ্ধ ও প্রভাবশালী চিন্তাবিদ ও লেখিকা অ্যান কালটার বিষয়টা আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের জন্য সকল মুসলিম দেশ দখল করে মুসলিমদেরকে জোরপূর্বক খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করার দাবি জানিয়ে লিখেন, We should invade their countries, kill their leaders and convert them to Christianity. ‘আমাদের উচিত তাদের দেশগুলো আক্রমণ করা, তাদের নেতাদেরকে হত্যা করা এবং ধর্মান্তরিত করে তাদেরকে খ্রিষ্টান বানানো’।[২৮]

আমেরিকাসহ পুরো অমুসলিম জাতি এখন তাদের উদ্দেশ্য সাধনে অনেকটা সফল। কারণ এখন কোথাও কোন হামলা হলেই দায়ভার চলে আসে ইসলাম ও মুসলিমের উপর। আর মুসলিম বিশ্বের গায়ে সন্ত্রাসী তকমা লাগিয়ে নানা দেশে তারা নীরবে ফায়দা লুটে নিচ্ছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সোনালি অধ্যায়গুলো তারা পরিবর্তন করতেই মুসলিম এবং ইসলামের উপর জঙ্গিবাদের এ অধ্যায় রচনা করেছে। অন্যদিকে নিজেদেরকে শান্তিকামী সাধুর ইমেজেও প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। যে ‘শান্তিকামী’ সন্ত্রাসীদের পিছনের ইতিহাস কেবল সন্ত্রাসেরই ইতিহাস। বিশ্বের এমন কোন দেশ খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর যেখানে মার্কিন হস্তক্ষেপ হয়নি। জ্বলন্ত প্রমাণগুলোর মধ্যে অন্যতম ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির উপর মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ নৃশংস পারমাণবিক আক্রমণ। যে আক্রমণে মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ জাপানী মৃত্যুবরণ করে।[২৯] আমেরিকা ১৯৫০-৭৩ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে পঁচিশ থেকে ত্রিশ লক্ষ ভিয়েতনামীকে হত্যা করে। ১৯৫৫-৭৩ সালে কম্বোডিয়ায় দশ থেকে বিশ লক্ষ কম্বোডিয়াকে, ১৯৫৯-৮০ কিউবার বিপ্লবের পর আমেরিকা রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে বহু মানুষকে হত্যা করে। ১৯৮১ সালে নিকারাগুয়ায় তের হাজারেরও বেশি এবং ১৯৮৯ সালে পানামায় কয়েক হাজার মানুষ হত্যা করে। ১৯৮১-৮৯ সালে সি. আই. এ.-এর আক্রমণে প্রেসিডেন্ট মুআম্মার গাদ্দাফীর সন্তানসহ শতশত মানুষকে হত্যা করে এবং পরবর্তীতে ন্যাটোর মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। ১৯৬০ সালে কলম্বিয়ায় সাতষট্টি হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। ১৯৯৯ সালে কসোভোয় তিন হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। ১৯৪৮ সালে প্যালেস্টাইনে তাদেরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ইসরাঈলী সেনাবাহিনী কয়েক হাজার ফিলিস্তিনীকে হত্যা করে এবং অদ্যাবধি হত্যাকাণ্ড চলছেই। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে প্রায় দশ লক্ষ মানুষকে এবং ২০০৩ সালে ইরাকে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়।[৩০]

উপরিউক্ত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে এটাই বোধগম্য যে, বিশ্বের সকল সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য কত শতাংশ মুসলিম দায়ী? ১ বা ২ শতাংশও নয়! তাহলে কেন চরমপন্থা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে!

অথচ জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা, চরমপন্থার পথ অবলম্বন করা, হত্যা করা, দুনিয়াতে বিপর্যয়, বিশৃঙ্খলা তৈরি করা, জঙ্গিকর্মকাণ্ড কাজ পরিচালনা করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। কোন নামধারী মুসলিমের সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডের জন্য তার ধর্ম ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়। অথচ বিশ্বের সর্বত্র এবং সকল জাতির মধ্যেই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে। অন্য কোন ধর্মের কোন ব্যক্তির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তার ধর্মকে কখনোই দায়ী করা হয় না।

ইতিহাসে ব্যক্তি সন্ত্রাসের মধ্যে হিটলার, জোসেফ স্ট্যালিন, মাওসেতুং, মুসোলীনী, ম্যাক্সমিলিয়ান রোবসপিয়া, অশোক সহ অসংখ্য ব্যক্তি এক একটি আত্মঙ্কের নাম। এক হিটলারই মেরেছে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ। জোসেফ স্ট্যালিন ২ কোটি মানুষকে হত্যা করেছে। তার অবরোধের কারণে প্রায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। ইতিহাসে স্ট্যালিনকে বলা হয় ‘খুনি স্টালিন’। মানুষ সম্পর্কে স্টালিন বলত, ‘হত্যা সব সমস্যার সমাধান’।[৩১] সে বলত, There is a man there is a problem. No men no problem. মাওসেতুং চীনে তার মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে দেড় থেকে দুই কোটি মানুষকে হত্যা করেছে। মুসোলীনী শুধু ইটালিতেই প্রায় চার লক্ষ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। কথিত ফরাসী বিপ্লবের হোতা ম্যাক্সমিলিয়ান রোবসপিয়ার ২ লক্ষের বেশী মানুষকে হত্যা করেছে। হিন্দু নেতা ‘অশোক’ শুধু কলিপের কেটা যুদ্ধেই এক লাখের বেশী মানুষকে হত্যা করেছে। এ ধরনের আরো অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে।[৩২]

এমনিভাবে ধর্মের নামে বা ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় খ্রিষ্টানরা কর্তৃক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৩৯-১৯৪৫) হলোকস্ট-এ প্রায় ৬ লক্ষ মিলিয়ন ইহুদী নারী-পুরুষ ও শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। স্পেনে ও ক্রুসেড যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হাজার হাজার নিরস্ত্র মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয়। বসনিয়া, স্রেব্রেনিসায় মুসলিম হত্যাকাণ্ডও ইতিহাসের রাজ সাক্ষি। যায়নবাদী ইহুদীরা ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অগণিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে  লিপ্ত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে।[৩৩] মেনাহেম বেগিনের নেতৃত্বে কিং ডেভিড হোটেল উড়িয়ে দেয়া এবং দির ইয়াসিন নামক গ্রামের নিরস্ত্র নিরীহ মানুষদের গণহত্যা ইতিহাসে অন্যতম ঘটনা। ‘এনকার্টা এনসাইক্লোপীডিয়া’-তে এ ঘটনাকে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও জমকালো সন্ত্রাসী ঘটনা (The most spectacular terrorist incident) এবং বিংশ শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম সন্ত্রাসী ঘটনা (The most deadly terrorist incidents of the 20th century) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনে সেই ১৯৪৮ সাল হতে অদ্যাবধি চলছে ঐ হত্যাকাণ্ড । ২০০২ সালে গুজরাটে হিন্দুরা গুজরাট ও কেন্দ্রীয় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং পুলিশের প্রত্যক্ষ সহায়তায় হাজার হাজার মুসলিম নারী-পুরুষ হত্যা, নারীকে ধর্ষণ এবং মুসলিম নাগরিকদের বাড়িঘর ও সম্পদ লুট করেছে। কাশ্মীরে চলছে হত্যার হোলি খেলা। ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসের অন্যতম ঘটনা আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বৃটিশদের সাথে আইরিশদের শক্রতা ও বিরোধিতার মূল উৎস ধর্ম। বৃটিশগণ প্রটেস্ট্যান্ট এবং আইরিশগণ ক্যাথলিক। ১৯৭০-২০০০ সাল পর্যন্ত আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির গুপ্তহত্যা, বোমা হামলা, বাণিজ্যিক কেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণ ইত্যাদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে শতশত বেসামরিক নিরস্ত্র নারী-পুরুষ এবং শিশু নিহত হয়েছে।

ধর্মভিত্তিক ও ধর্মীয় সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় এবং উপযুক্ত উদাহরণ হলো বর্তমানে মায়ানমারে হায়না সম্প্রদায় বৌদ্ধধর্মের অনুসারী কর্তৃক মুসলিম নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী। ১৯৩৭ সালের পর থেকে অদ্যাবধি বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বার্মি সেনা কর্তৃক লক্ষ লক্ষ মুসলিম নারী-পুরুষ এবং শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার।[৩৪] নারীদেরকে ধর্ষণ করে তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। বাড়ীঘর, ধন-সম্পদ লুট করা হচ্ছে। সকল মুসলিমকে ঘরবাড়ী থেকে উচ্ছেদ করে আগুনে তা ভস্মিভূত করা হচ্ছে এবং তারা প্রাণের ভয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। এশিয়ার বিভিন্ন দে র আশ্রয়ের সংখ্যা প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ। বাংলাদেশের মত একটি ছোট রাষ্ট্রে প্রায় ৮ থেকে ৯ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করছে। এরূপ ধর্মভিত্তিক চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের অগণিত উদাহরণ আছে। যা লিখে শেষ করা যাবে না। এ সকল চরমপন্থা ও সন্ত্রাসকে অনেকেই সন্ত্রাসী ও ন্যক্কারজনক ঘটনা বলে স্বীকার করেছেন এবং বর্তমানে এগুলো বিষয় আলোচিত। কিন্তু কখনোই এ সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য সন্ত্রাসীদের ধর্মকে দায়ী করা হয়নি বা হয় না। অথচ এগুলো চরমপন্থা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড একান্তই ধর্মীয় বিদ্বেষে, ধর্মীয় প্রেরণায় এবং ধর্মগ্রন্থের বাণীকেই ভিত্তি করে করা হয়েছে বা হচ্ছে, তবুও কখনোই তাদেরকে খ্রিষ্টান সন্ত্রাসী, ইহুদী সন্ত্রাসী, ক্যাথলিক সন্ত্রাসী, প্রটেস্ট্যান্ট সন্ত্রাসী, অর্থোডক্স সন্ত্রাসী, হিন্দু সন্ত্রাসী বা বৌদ্ধ সন্ত্রাসী বা জঙ্গি বলা হয় না। কখনো বলা হয় না, খ্রিষ্টান, ইহুদী, হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্ম সন্ত্রাসী ধর্ম বা জঙ্গি ধর্ম। বলা হয় না এগুলো ধর্মের মূল শিক্ষা ব্যবস্থা হল জঙ্গি শিক্ষা বা সন্ত্রাসী শিক্ষা ব্যবস্থা। বিশ্বের যে কোন প্রান্তে কোন খ্রিষ্টান , ইহুদী, হিন্দু, বৌদ্ধ বা অন্য কোন ধর্মের সন্ত্রাসীদের বিষয়ে তাদের ধর্মকে উল্লেখ করা হয় না বা ধর্মকে দায়ী করা হয় না। বরং দেশ বা জাতির পরিচয় তুলে ধরে বলা হয় বাঙ্গালী, তামিল, মনিপুরী, ইটালিয়, স্পেনিয়, পাকিস্তানী, তুর্কী বা জার্মান সন্ত্রাসী। কিন্তু কোথাও কোন নামধারী মুসলিম কোন সন্ত্রাসী বা চরমপন্থার কাজ করলে তার ধর্মকে দায়ী করা হয়। তাকে বলা হয় বাঙ্গালী, ভারতীয়, পাকিস্তানি, আফগানিস্তানী, ইরাকি বা ফিলিস্তীনি মুসলিম সন্ত্রাসী বা মুসলিম জঙ্গি। অথচ সর্বক্ষেত্রে জঙ্গি, চরমপন্থা বা সন্ত্রাসের কারণ ও দাবী একই। আসলে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, চরমপন্থা, সন্ত্রাস এবং হত্যার যা কিছু বলা হয় তার অধিকাংশই ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার। এরূপ মিথ্যা প্রচারণার পাশাপাশি এটাও দৃশ্যমান যে, প্রকৃতই কিছু নামধারি মুসলিম ইসলামের অপব্যাখ্যা করে ইসলামের নামে, ইসলাম বা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে বা অন্যায়ের প্রতিবাদের নামে হত্যা বা ধ্বংসাত্মক কর্মে লিপ্ত হচ্ছে। আসলে ইসলামের নাম করে এরূপ জঙ্গি বা চরমপন্থা পথ অবলম্বনের ব্যাপারে ইসলামের কতটুকু অনুমোদন আছে? শারঈ মুলনীতিতে জঙ্গিবাদ বা চরমপন্থার অবস্থান কি? ইসলামে অবৈধ হত্যার পরিণাম কি? ইসলামের সাথে জঙ্গিবাদ বা চরমপন্থার সম্পর্ক কি? এবং এ চরমপন্থা ও জঙ্গিবাদের কারণ কি? তা আমাদেরকে অবশ্যই অবগত হবে হবে। তাহলে বিষয়টা সকলের নিকট পরিস্ফুট হবে ইনশাআল্লাহ।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র:
[১]. মুহাম্মাাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, আহলেহাদীছ আন্দোলন উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ (রাজশাহী : হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, জানুয়ারী ২০১১ খ্রি.), পৃ. ২৬।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫০২৬; ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/১০; মিশকাত, হা/১৪১।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৯, ৬৫৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৪৫।
[৪]. ইবরাহীম মুছত্বফা ও তার সাথীবৃন্দ, আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব (দারুদ দাওয়াহ, তারিখ বিহীন), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩১।
[৫]. মু‘জামু মিক্বইয়াসিল লুগাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৬।
[৬]. নাছিরুদ্দীন আলবানী, আল-হাদীছু হুজ্জিয়াতুন বিনাফসিহি ফিল আক্বাইদি ওয়াল আহকাম (কুয়েত : দারুস সালাফিয়্যাহ, ১৪০৬ হি.), পৃ. ১৫।
[৭]. মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম ইবনু জামা‘আহ, আল-মিনহালুল রাবী ফী মুখতাছার ‘উলূমিল হাদীছিন নববী; তাহক্বীক্ব : ড. মুহীউদ্দীন আব্দুর রহমান রমাযান (দিমাস্ক : দারুল ফিকর, ২য় সংস্করণ, ১৪০৬ হি.), পৃ. ৩০; ড. ছুবহী ছালেহ, উলূমুল হাদীছ, ২য় সংস্করণ (দামেস্ক : দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩৮৩ হি.), পৃ. ৩।
[৮]. আব্দুল হক্ব দেহলভী, মুক্বাদ্দামা ফী উছূলিল হাদীছ; তাহক্বীক্ব : সালমান আল-হুসাইনী আন-নাদভী (বৈরূত : দারুল বাশাইরিল ইসলামিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ, ১৪০৬ হি.), পৃ. ৩৩; আব্দুল কারীম মুরাদ ও আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ, মিন আত্বইয়াবিল মিনাহ ফী ইলমিল মুসত্বালাহ; অনুবাদ : শাইখ আব্দুল খালেক সালাফী (ঢাকা : তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ডিসেম্বর ২০১১), পৃ. ১৭।
[৯]. আহলেহাদীছ আন্দোলন উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ, পৃ. ২৬।
[১০]. মুহাম্মাদ শাওক্বানী, ইরশাদুল ফুহূল ইলা তাহক্বীক্বিল হাক্বি মিন ‘ইলমিল ইছূল (দারুল কিতাবিল ‘আরাবী, ১৪১৯ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৫; উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতুল মাছাবীহ (বানারস : ইদারাতুল বহূছিল ‘আলামিয়্যাহ ওয়াদ দা‘ওয়াতি ওয়াল ইফতা, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৪ হি.), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪১৪; আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ, ফাতহুল ক্ববিয়্যিল মাতীন ফী শারহিল আরবা‘ইন, পৃ. ৮৫; যাইনুদ্দীন ইবনু রজব, জামি‘উল ‘উলূম ওয়াল হুকম ফী শারহি খমসীনা হাদীছান মিন জাওয়ামি‘ইল কালাম, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৩০।‍
[১১]. আল-হাদীছ হুজ্জিয়্যাহ, পৃ. ১৫।
[১২]. আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫৬; ইবনু মানযূর, লিসানুল আরব (বৈরূত : দারু ছাদর, ১ম সংস্করণ, তাবি), ১৩তম খণ্ড, পৃ. ২২০।
[১৩]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ বিন মুহাম্মাদ আল-উছায়মীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল (মিশর : দারুল ওয়াত্বান, ১৪১৩ হি.), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৮৫ ও ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৩; লিসানুল আরব, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ২২০; ড. মুহাম্মাদ আমান ইবনু আলী আল-জামেঈ, মানযিলাতুস সুন্নাহ ফিত তাশরীঈল ইসলামী (সঊদী আরব : মারকাযু শুয়ূনিদ দাওয়াহ, ৩য় সংস্করণ, তাবি), পৃ. ৭।
[১৪]. ইবনু তায়মিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া (দারুল ওয়াফা, ৩য় সংস্করণ ১৪২৬ হি.), ১৩ তম খণ্ড, পৃ. ২০।
[১৫]. আবুবকর শামসুদ্দীন কুরতুবী, আল-জামেঊ লি আহকামিল কুরআন (রিয়ায : দারু আলিমিল কুতুব, ১৪২৩ হি.), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২১৬; মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ আশ-শাওকানী, ফাৎহুল ক্বাদীর (দামেস্ক : দারু ইবনি কাছীর, ১ম সংস্করণ, ১৪১৪ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৩৯।
[১৬]. ইবরাহীম ইবনু মূসা ইবনু মুহাম্মাদ আল-লাখমী আশ-শাত্বেবী, আল-মুওয়াফিক্বাত (দারু ইবনি ‘আফফান, ১ম সংস্করণ ১৪১৭ হি./১৯৯৭ খ্রি.), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৮৯-এর টীকা-১ দ্রষ্টব্য; মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫৬।
[১৭]. ইরশাদুল ফুহূল ইলা তাহক্বীক্বিল হাক্বি মিন ‘ইলমিল ইছূল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৫ ; আল-হাদীছু হুজ্জিয়াতুন বিনাফসিহি ফিল আক্বাইদি ওয়াল আহকাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫।
[১৮]. মুহাম্মাদ ছালেহ আল-উছায়মীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; তাহক্বীক্ব : ফাহাদ ইবনু নাছির ইবনু ইবরাহীম (দারুল ওত্বান, ১৪১৩ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭; প্রশ্ন নং-৭; ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১০; প্রশ্ন নং-৪।
[১৯]. শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, বায়ানু আক্বীদাতি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আতি ওয়া লুযূমিত তাবাঈহা, পৃ. ৫; ড. সাঈদ ইবনু আলী ইবনু ওয়াফ আল-ক্বাহতানী, নূরুস সুন্নাতি ওয়া যুলূমাতুল বিদ‘আতি, পৃ. ৪; মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছায়মীন, ফাৎহু রাব্বিল বারিয়্যাহ বিতালখীছিল হাবাবিয়্যাহ, পৃ. ১৫; ছালেহ ইবনু ফাওযান আল-ফাওযান, শারহুল আক্বীদাতিল ওয়াসিত্বিয়্যাহ, পৃ. ১০; মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম আল-হামাদ, মুখতাছার আক্বীদাতু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত, পৃ. ৩।
[২০]. শায়খুল ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবুন আব্দুল ওয়াহহাব, জাওয়াবু আহলিস সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ ফী নাক্বযি কালামিশ শী‘আ ওয়ায যায়দিয়্যাহ (রিয়ায, সঊদী আরব : দারুল ‘আছিমাহ, ৩য় সংস্করণ, ১৪১২ হি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪।
[২১]. Encyclopedia Britannica, Articles : Terrorism & article : Zealot, Microsoft Encarta 2007. 1993-2006, Terrorism. সংগৃহীত : ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, পৃ. ১৫।
[২২]. Encyclopedia Britannica, Articles : Terrorism & Ideology. সংগৃহীত : ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, পৃ. ১৫।
[২৩]. ইউরোপোল ইইউ টেরোরিজম সিচুয়েশন অ্যান্ড ট্রেন্ড রিপোর্ট; সংগৃহীত : উইকিপিডিয়া।
[২৪]. ইউরোপোল ইইউ টেরোরিজম সিচুয়েশন অ্যান্ড ট্রেন্ড রিপোর্ট; সংগৃহীত : উইকিপিডিয়া।
[২৫]. তাওহীদের ডাক, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম, ওসামা ট্র্যাজেডি এবং ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র আরেক ভেল্কি (রাজশাহী : বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও পাঠাগার বিভাগ, ৮ম সংখ্যা, নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০১১ খ্রি.), পৃ. ৩৪।
[২৬]. তাওহীদের ডাক, ওসামা ট্র্যাজেডি এবং ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র আরেক ভেল্কি, পৃ. ৩৪।
[২৭]. The daily Independent, Dhaka, sub-editorial, ১৮/০২/২০০৬. সংগৃহীত : ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, পৃ. ১৮।
[২৮]. The Wisdom of Ann Coulter, a News-network feature, The Independent (Dhaka), 8/9/2006, p 12. সংগৃহীত : ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, পৃ. ১৯।
[২৯]. তাওহীদের ডাক, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম, সা¤্রাজ্যবাদীদের লোলুপ দৃষ্টি : হিরোশিমা-নাগাসাকিতে রক্ষাক্ত ট্রাজেডি (রাজশাহী : বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও পাঠাগার বিভাগ, ২৪তম সংখ্যা, জুলাই-আগষ্ট ২০১৫ খ্রি.), পৃ. ২৬।
[৩০]. তাওহীদের ডাক, ওসামা ট্র্যাজেডি এবং ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র আরেক ভেল্কি, পৃ. ৩৪।
[৩১]. তাওহীদের ডাক, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম, গাযায় রক্তের প্রসবণ : মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ (রাজশাহী : বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও পাঠাগার বিভাগ, মে-জুন ২০১৪ খ্রি.), পৃ. ৩৫।
[৩২]. ডাঃ যাকির নায়েক, সন্ত্রাস কি শুধু মুসলমানদের? লেকচার সমগ্র (ঢাকা : ইসলামিক একাডেমী বাংলাদেশ, মে ২০০৯), পৃ. ৬০৪-৬০৫; সংগৃহীত : ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন, পৃ. ৭১।
[৩৩]. তাওহীদের ডাক, গাযায় রক্তের প্রসবণ : মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ, পৃ. ৩১- ৩৫।
[৩৪]. তাওহীদের ডাক, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম, আরাকানে রোহিঙ্গা উৎপীড়ন : এক রক্তমাখা ইতিহাস ও মানবতার লজ্জা (রাজশাহী : বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও পাঠাগার বিভাগ, ১০ম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১২ খ্রি.), পৃ. ৩১-৩৭।




প্রসঙ্গসমূহ »: দাওয়াত ও জিহাদ
মুছীবতে ধৈর্যধারণ করার ফযীলত - শায়খ আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম
মুসলিম বিভক্তির কারণ ও প্রতিকার (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
আল-কুরআন সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের মূল্যায়ন - রাফিউল ইসলাম
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১০ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ (২য় কিস্তি) - ড. মেসবাহুল ইসলাম
ইসলামে রোগ ও আরোগ্য (৩য় কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
মুসলিম বিভক্তির কারণ ও প্রতিকার (শেষ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
বিদ‘আত পরিচিতি (২৫ তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন - মাইনুল ইসলাম মঈন
শবেবরাত - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ