বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৪ অপরাহ্ন

ইসরাঈলি বর্বরতায় রক্তাক্ত মানবতা 

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম* 


ইসরাঈলের পরিচয় 

রক্তের অভিলাশে উন্মাদ, বিকৃতমস্তিষ্ক ও খ্যাপা রক্ত পিপাসু ইয়াহুদীরা মূলত ইসরাঈলের (ইয়াকূব (আলাইহিস সালাম)-এর) বংশধর। তাদের আদি বাসস্থান ছিল কেন‘আন, যা বর্তমান ফিলিস্তীন এলাকায় অবস্থিত। তখনকার সময় ফিলিস্তীন ও সিরিয়া একত্রিতভাবে ‘শাম’ নামে পরিচিত ছিল। প্রথম ও শেষ নবী ব্যতীত প্রায় সকল নবীরই আবাস্থল ছিল ইরাক ও শাম অঞ্চলে। যার গোটা অঞ্চলকে এখন ‘মধ্যপ্রাচ্য’ বলা হচ্ছে। ইয়াকূব (আলাইহিস সালাম)-এর মোট ১২ জন সন্তান ছিলেন। পরবর্তীতে এই ১২ জন সন্তান হতে ১২টি গোত্রের উদ্ভব হয়। আজকের ইসরাঈল জাতি, নবী ইয়াকূব (আলাইহিস সালাম)-এর সন্তান সৃষ্ট ১২টি সম্প্রদায়ের সদস্য। ইতিহাসে যাদেরকে ইয়াহুদী নামে নামকরণ করা হয়েছে।

ইসরাঈলিদের শঠতা, ধূর্তামি এবং পরিণতি

ইয়াহুদী জাতির ইতিহাস শুরু হয় নবীদের সাথে প্রবঞ্চণার মাধ্যমে। তাদের এই প্রতারণা ও ঠকামি শেষ নবী এবং তাঁর উম্মত পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ইয়াহুদী জাতি এতটাই ধূর্ত ও নিষ্ঠুর, যাদের ইতিহাস পড়লে শরীরের লোমে শিহরণ জাগে। অন্তরটা ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে উঠে। যেমন-

১. তারা ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)-কে অত্যন্ত জঘন্য ও নির্মমভাবে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি।[১]

২. বস্তুতঃ ইয়াকূব (আলাইহিস সালাম)-এর বারজন পুত্রের বংশধারা থেকেই যুগে যুগে জন্মগ্রহণ করেন লক্ষাধিক নবী ও রাসূল। ইয়াহুদীরা নবীদের বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে চুরি, যেনা, পাগল, জাদুকর সহ অসংখ্য নোংরা তোহমত লাগিয়েছে এবং হাযার হাযার নবীকে হত্যা করেছে।

৩. তারা পৃথিবীতে সর্ব প্রথম ‘ত্রিত্ববাদ’-এর জন্ম দেয়। কুচক্রী ইয়াহুদীরা রোমান সম্রাটের মাধ্যমে ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।[২] আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে আসমানে উঠিয়ে নেন। ইয়াহুদীরা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে নবী বলে স্বীকার করেনি। বরং অত্যন্ত লজ্জাজনক ভাবে তারা তাকে জনৈক ইউসুফ মিস্ত্রির জারজ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছিল (নাঊযুবিল্লাহ)।[৩] তারা সেন্টপলের মাধ্যমে ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর ধর্মকে এবং ধর্ম গ্রন্থকে বিকৃতি করে। তারা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর সত্য দ্বীনকে বিকৃতি ও বিধ্বস্ত করে; তাই কুরআন ইয়াহুদীদেরকে (مغضوب) বা ‘অভিশপ্ত’ বলে এবং নবীদেরকে হত্যা এবং শেষ নবী (ﷺ)-এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য খ্রীষ্টানদেরকে ‘পথভ্রষ্ট’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

৪. তারা সিরিয়ায় শেষ নবীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পারেনি।[৪] বনু নযীর ইয়াহুদী গোত্র ছাদের উপর থেকে পাথর গড়িয়ে দিয়ে মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে হত্যার চক্রান্ত করেছিল। ইয়াহুদী সালাম বিন-মিশকাম-এর স্ত্রী জয়নব বিনতুল হারিস বকরীর গোশতের মধ্যে বিষ মিশিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ হেফাজত করেছিলেন। তারা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর বিরুদ্ধে নানারূপ কুৎসা ও মিথ্যা প্রচার করে বেড়াত। মুনাফিক্বদের সাথে মিলিত হয়ে দিন-রাত মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করত।

৫. তারা বনু আউস ও বনু খাযরাজ গোত্রকে এক অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ‘বূয়াস’ এর মত দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংগঠিত করে। ৭. বিভিন্ন যুদ্ধে তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের সাহায্য করেছে। তারা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই-এর নেতৃত্বে উহুদ যুদ্ধে ৩০০ জন সৈন্য মাঝপথ হতে কেটে পড়ে। ৮. তাদের কারণে রিদ্দার যুদ্ধ হয়েছিল।

৯. আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা ধুরন্দর ইয়াহুদী ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খেলাফতের সময় কূফাবাসীকে এ বলে উত্তেজিত করেছিল যে, আলীই প্রকৃতপক্ষে খেলাফতের উত্তরাধীকারী এবং ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অন্যায়ের অধিকারী। ফলে বিদ্রোহীরা ৪০ দিন পর্যন্ত ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বাসগৃহ অবরোধ করে শেষ পর্যন্ত তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

১০. অতঃপর আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) খলীফা হলে সাবায়ীপন্থীরা ভান করে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষাবলম্বন করে এবং মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর বংশধরদের প্রতি একান্ত মহব্বত রাখে মর্মে একটি দল গঠন করে।[৫] তারা ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যার বিচারকে উপলক্ষ করে মুসলিম নেতৃবৃন্দকে দুই ভাগে ভাগ করে উষ্ট্রের যুদ্ধের (আলি ও আয়েশা-এর মধ্যে যুদ্ধের) ঘটনা ঘটায়। যাতে প্রায় দশ হাযার লোক শহীদ হন।

১১. তাদের প্ররোচনায় ইউফ্রেটিস নদীর তীরে ছিফ্ফীনের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এর মূল কারণ ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার নীল-নকশা ও মুসলিম বাহিনীর মধ্যকার ভুল বুঝাবুুঝি। শুধু তাই নয় আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ঊর্ধ্বে তুলতে তুলতে তাঁকেই প্রকৃত নবী বলে তারা প্রচার করতে থাকে। এরাই ইতিহাসে ‘শী‘আ’ নামে পরিচিত। মূলতঃ কুচক্রী ইয়াহুদীদের এটা ছিল মুসলিমদের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্টের এক শক্তিশালী দুরভিসন্ধি।

ইসরাঈলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পশ্চিমা পরাশক্তির প্রতারণা

প্যালেষ্টাইন মুসলিম, খ্রীষ্টান ও ইয়াহুদীদের নিকট এক পবিত্র ভূমি। সুলতান দ্বিতীয় সেলিমের সময়ে প্যালেষ্টাইন তুর্কীদের অধিকারে আসে। এই সময় আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাথে প্যালেষ্টাইনে আর একটি আন্দোলন শুরু হয়। ইয়াহুদীদের এ আন্দোলন ‘জিওনিষ্ট আন্দোলন’ (The Zionist Movement) নামে পরিচিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে তারা ইয়াহুদী নেতা থিয়োডোর হারজালের নেতৃত্বে জাতীয় আন্দোলন শুরু করে। বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে তারা দলে দলে প্যালেষ্টাইনে এসে বসতি স্থাপন করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুরস্ক জার্মানীর পক্ষ নিলে মিত্রশক্তি মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালি ঘাঁটি তৈরি করতে চায়। মূলতঃ এটি ছিল আরব জাহানের নেতৃবৃন্দদের জন্য একটি টোপ বিশেষ।

আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য মিত্র শক্তি সাহায্য করবে। ইংরেজরা ইবনে সঊদকে তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করার জন্য উষ্কানি দিল। কিন্তু ইবনে সঊদ বৃটিশ অভিসন্ধি বুঝতে পেরে চুপ থাকলেন। মুনাফিক শরীফ হুসাইন ক্ষমতার লোভে আরব নেতৃবৃন্দের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইংরেজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেন এবং ইংরেজদের প্ররোচনায় হঠাৎ তুরস্কের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন।[৬] অন্যদিকে মিত্রশক্তি জিওনিষ্টদের প্যালেষ্টাইনে জাতীয় আরবভূমি স্থাপনে সাহায্য করবে বলে জানায়। ইয়াহুদী ও আরবদের নিকট ব্রিটিশ সরকারের পরষ্পর বিরোধী প্রতিশ্রুতি দানের মাধ্যমে ইংরেজদের সুবিধা হল। আরব সৈন্য নিয়ে ইংরেজরা তুরস্ক আক্রমণ করল এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনী সিরিয়া ও মেসোপটেমিয়া অধিকার করল। বিজাতীয় তুর্কীদের তাড়াতে গিয়ে আরবরা প্রতারক সন্ত্রাস ইউরোপিয়দের ডেকে আনল। ইয়াহুদীদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর ইয়াহুদীদের জাতীয় আরবভূমি সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা তৈরি করল এবং তা ঘোষণা করল ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে। যা ‘বেলফোর ঘোষণা’ (Belfour Declaration) নামে পরিচিত।

ফলে প্যালেষ্টাইন বা ফিলিস্তিনি সমস্যা শুরু হয়। ১৯১৯ খ্রীষ্টাব্দে ‘প্যারিস সম্মেলন’ যখন প্যালেষ্টাইন নামক দেশটিকে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ‘ম্যান্ডেট’ হিসাবে স্থাপন করে, তখন থেকে অসংখ্য ইয়াহুদী দলে দলে আসতে শুরু করে। ১৯১৭ সালে প্যালেষ্টাইনে মোট জনসংখ্যা ছিল ৭ লাখ। যার শতকরা ৯২ ভাগ আরব ফিলিস্তীন ও শতকরা আট ভাগ ইয়াহুদী। এদিকে বৃটেন এক ইয়াহুদী স্যার হার্বাট স্যামুয়েলকে ফিলিস্তীনে বৃটিশ হাই কমিশনার করে পাঠায়। ফলে ফিলিস্তিনে ইয়াহুদী সংখ্যা হয় ১৯১৮ সালে ৫৬,০০০ জন, ১৯২৫ সালে ১,০৮,০০০ জন, ১৯৩৫ সালে ৩,০০,০০০ জন এবং ১৯৪৮ সালে ৫,৪০,০০০ জন।[৭] বর্তমানে প্যালেষ্টাইনে মোট জনসংখ্যা ৯৭ লাখ। যার শতকরা ৭৩% ইয়াহুদী এবং ২১% আরব। অর্থাৎ ৭১ লাখ ৮১ হাজার ইয়াহুদী এবং ২ লাখ ৬৫ হাজার আরব বর্তমানে ফিলিস্তিনে বসবাস করছে।   

বৃটিশদের পৃষ্ঠপোষকতায় দলে দলে ইয়াহুদী আগমন করলে আরব-ইয়াহুদী দাঙ্গা শুরু হয়। ১৯২১, ২৯ ও ৩৬ খ্রীষ্টাব্দে উপরিউক্ত দাঙ্গার ফলে অসংখ্য লোক হতাহত হয়। ১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার একটি রয়েল কমিশন (Royal commission) নিয়োগ করে। এর মাধ্যমে প্যালেষ্টাইনকে আরব, ইয়াহুদী ও বৃটিশ অধিকৃত জেরুজালেম অঞ্চলে বিভক্ত করার পরিকল্পনা পেশ করে। ফলে আরব-ইয়াহুদী সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায়। ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তার নিজের নীতি ‘হোয়াইট পেপার’-এ ঘোষণা করে। এত বলা হয় যে, দশ বছর পর একটি প্যালেষ্টাইন রাষ্ট্র গঠন করা হবে। প্যালেষ্টাইনে ইয়াহুদী প্রবেশ সীমাবদ্ধ করা হল। এই সিন্ধান্ত আরব বিশ্ব মেনে নিলেও ইয়াহুদীরা মেনে নেয়নি। ফলে তারা আমেরিকার সহযোগিতা কামনা করে। ১৯৪২ ও ১৯৪৪ সালে বিশ্ব জিওনিষ্ট সম্মেলন হয়। তারা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ঢ্রুম্যানকে চাপ দেয়। ফলে তিনি প্যালেষ্টাইনে এক লক্ষ ইয়াহুদী অধিবাসী গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব দেন। ফলে ১৯৪৫ সালে আরবলীগ গঠিত হয়। ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ সরকার প্যালেষ্টাইন সমস্যা জাতিসংঘে পেশ করে। জাতিসংঘ একটি বিশেষ কমিটি (Special commitee) নিয়োগ করে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্যালেষ্টাইন আরব, ইয়াহুদী ও জেরুজালেম রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়। ফলে ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দে ইয়াহুদী ও আরবদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। অতঃপর আরবগণ যখন বিজয়ের পথে, তখন জাতিসংঘ চার সপ্তাহের জন্য যুদ্ধ থামাতে বলে। তাদের কৌশল হল, ইয়াহুদীরা যাতে এই যুদ্ধ বিরতির সময় আমেরিকা ও রাশিয়া হতে অস্ত্রশস্ত্র আমদানি করে। তারা তাই করল। আমেরিকা উদ্বাস্তু বেশে প্যালেষ্টাইনে সৈন্য পাঠাল। আরবগণ ইয়াহুদীদের সঙ্গে আর পেরে উঠতে পারল না। ফলশ্রুতিতে তারা প্যালেষ্টাইনের একটি অংশ দখল করে ইসরাঈল বা ইয়াহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এবং তেলআবিবকে রাষ্ট্রের রাজধানী করে। ১৯৪৯ খ্রীষ্টাব্দে জাতিসংঘ মুসলিম জাহানের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও ইসরাঈল রাষ্ট্রকে স্বীকার করে নেয়।[৮]

ইসরাঈলী বর্বরতা এবং ফিলিস্তিনিদের অবস্থা  

অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট ইয়াহুদী জাতির পশুত্বব্যঞ্জক ও নিষ্ঠুর আচরণে ফিলিস্তিন বিশেষ করে গাযা আজ এক মৃতুপুরী। বছরের পর বছর ধরে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মুসলিমকে হত্যা করেও তাদের রক্ত পিপাসা নিবারণ হয়নি। ১৯২১ সালের পর থেকে অদ্যাবধি গণহত্যা চলছে। তারা গাযায় ধ্বংসলীলা অব্যাহত রেখেছে। সেখানে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। সেই ধারায় অব্যাহত রেখে গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ ‘আল-আক্বসা মসজিদের ইসরাঈলি অপবিত্রকরণ ও অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ইসরাঈলীদের ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার’ প্রতিক্রিয়া হিসাবে আবারও ইসরাঈল ও হামাসের যুদ্ধ শুরু হয়। হামাস এ যুদ্ধকে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ এবং ইসরাঈলিরা ‘অপারেশন আয়রন সোর্ডস’ নামে যুদ্ধ পরিচালনা করছে। ইসরাঈলিরা প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার সংরক্ষিত সৈন্য স্থল হামলার জন্য গাজার কাছাকাছি প্রস্তুত রেখেছে। মুসলিম বিশ্বসহ মানবতার ফেরিওয়ালা পশ্চিমেরা তাদের বর্বরতা বসে বসে অবলকন করছে। তারা বিমান ও রকেট হামলা, গোলাবর্ষণ, বোমাবর্ষণ, শেলবর্ষণ, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ সহ বিষাক্ত পদার্থ সাদা ফসফরাস[৯] আর্টিলারি প্রজেক্টাইল এবং বন্দুক দিয়ে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

অস্ত্রের কারখানা, হামাসের প্রশিক্ষণ গ্রাউন্ড ধ্বংস এবং জঙ্গি দমনের নামে এখন পর্যন্ত তারা গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। তাদের বর্বর হামলায় গাজার বিভিন্ন বন্দর, মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, মিডিয়া সংস্থা এবং সাহায্য সংস্থাগুলো, আবাসিক ভবনসহ, মসজিদ ও হাসপাতাল ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। গাজার বেশিরভাগ এলাকা হামলার ফলে সমতল ভূমিতে রূপ নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজারের বেশী। নিহতের মধ্যে প্রায় ৪০০০ জন শিশু। আর আহত হয়েছেন ১৬২৯৭ জন। ২,০০,০০০ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরাঈলরা উত্তর গাজা থেকে আরো ১১ লাখ বাসিন্দাদের সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এবং নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিচ্ছে। অন্যদিকে হামাস গাজাবাসীকে ‘নিজের বাড়িতে অবিচল থাকতে এবং দখলদারিত্বের দ্বারা পরিচালিত এই জঘন্য মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের মুখে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে’ আহ্বান করছে। কেননা তারা ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারিত্বের শিকার হয়েছে। তারা দেখসে যে, তাদের ভূমি প্রতিনিয়ত বসতি দ্বারা দখল হয়ে যাচ্ছে ও সহিংসতায় জর্জরিত, তাদের অর্থনীতি স্তিমিত, তাদের মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং তাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত।

তাদের সামনে গাযা জ্বলছে। জ্বলন্ত গাযায় প্রাণ ঝরছে। মরছে নিরীহ নারী-পুরুষ আর নিষ্পাপ শিশু। মায়ের কোলে থাকা শিশুর প্রাণ যাচ্ছে বোমার আঘাতে, বাবার হাত ধরে পথে থাকা শিশুও মরছে একইভাবে। অনেক আদরের ছোট্ট সোনার ছোট্ট শরীরটি কাপড়ে মুড়ে মা তুলে দিচ্ছেন বাবার হাতে দাফন করতে। কিন্তু এই কলিজার টুকরা শিশু সন্তান দাফন করতে গিয়ে বাবাকেও কাফনের কাপড় পরিধান করতে হচ্ছে। হাসপাতালে শিশুদের আহাজারী, বুকফাঁটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। অনেকেই হয়তো জানে না তাদের পিতামাতা আর বেঁচে আছে কি-না। আবার কখনো বিমান হামলায় একই পরিবারের ১৯ জন সদস্য একসাথে মাটিতে নিথর দেহ নিয়ে লুটিয়ে পড়ছে। আবার কোন কোন দিন একই সাথে একই সময়ে শত শত মানুষের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে ফিলিস্তিনি ময়দান। জীবন বাঁচানোর তাগিদে যে মানুষগুলো হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের দেহগুলোও বোমা হামলায় হাসপাতালের ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়েছে। তারা প্রতিনিয়ত বিষাক্ত ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে জীবন যুদ্ধের সঙ্গে লড়ছে।

ইসরাঈলরা গাজাবাসীর সাথে জানেয়ারের চাইতে নিকৃষ্ট আচরণ করে মানবতাকে রক্তাক্ত করেছে। গাজাকে তারা অবরুদ্ধ করে সেখানে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। তারা নাকি মানব প্রাণীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। ইসরাঈলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, ‘আমরা মানব প্রাণীর বিরুদ্ধে লড়াই করছি এবং আমরা সেই অনুযায়ী আচরণ করছি’। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ গাদি আইজেনকোট এবং রন ডার্মারকে পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়ে মন্ত্রিসভার নেতৃত্বে ইসরায়েল একটি যরূরী যুদ্ধকালীন সরকার গঠন করেছে।

অথচ এগুলো অমানবিক, ঘৃণ্য, আপত্তিজনক, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার উপর আক্রমণ। যেমনটা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ ইসরাঈলের অমানবিক আচরণগুলোকে ‘ঘৃণ্য’ বলে অভিহিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ করার দায়ে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস একটি বিবৃতি জারি করে বলে যে, সরিয়ে নেয়ার এ আদেশটি ‘আপত্তিজনক’ এবং ‘চিকিৎসা সেবা এবং মানবতার উপর আক্রমণ’।

বিশ্ব মোড়লদের দ্বৈবিধ্য আচরণ ও মুসলিম হত্যার সমর্থন  

ইসলাঈরা যখন গাযায় মুসলিম নিধনে নিয়োজিত। মানবতার ফেরিওয়ালা বিশ্ব মোড়লরা তখন ইসরাঈলকে সাহায্য সহযোগিতায় এবং ফিলিস্তিনিদের সমালোচনায় ব্যস্ত। যুক্তরাষ্ট্র গাযা অঞ্চলে ইসরাঈলের সামরিক অভিযান বৃদ্ধির প্রস্তুতির পাশাপাশি পূর্ব ভূমধ্য সাগরে দ্বিতীয় রণতরী ও এয়ার ফোর্সের ফাইটার জেট পাঠিয়েছে। যখন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দ্রুত ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আরব রাষ্ট্রগুলোও এ ধরনের মানবিক যুদ্ধবিরতি ও গাজার ওপর নির্বিচার হামলা বন্ধের সিদ্ধান্তে সমর্থন জানাচ্ছে। ঠিক তখনই যথারীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশ সহিংসতার জন্য ফিলিস্তিনের নিন্দা করছে। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে ইসরাঈলি সহিংসতার সমালোচনা করে তোপের মুখে পড়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

হামাসের উপর দোষারোপ করে ইয়াহুদী সম্প্রদায় গাযার উপর যে বর্বর হামলা করছে তা ইতিহাসে বিরল। ভারী অস্ত্র, বোমা, ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হচ্ছে নিরাপরাধ একটি বেসামরিক জনসমাজ। যাদের কোন শক্তিশালী সেনাবাহিনী নেই, নেই অস্ত্রশস্ত্র, তাদেরই উপর চালানো হচ্ছে পুরাদস্তুর সামরিক আক্রমণ। দানবীয় হত্যালীলার বাস্তবতা এড়িয়ে গিয়ে পশ্চিমা কূটনীতিক মহল এবং বিশ্বমোড়লরা বরাবরের মত নগ্নভাবে ইসরাঈলের পক্ষ নিচ্ছে। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সামরিক হামলা, জাতিসংঘ চার্টার অনুযায়ী আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিবিরোধী। তারপরও বিশ্ব মোড়লারা নীরব; বরং তারা ইসরাঈলকে কূটনীতি ও সামরিক সহায়তা প্রদান করছে। তারা ফিলিস্তিনকে দায়ী করছে আর ইসরাঈলকে সমর্থন করছে।

ইসরাঈলকে স্থল হামলা শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্র বাধা দিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘ইসরাঈলিরা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিচ্ছে’। এই সন্ত্রাসি প্রেসিডেন্ট আবার ইসরাঈল-হামাস সংঘাতের মধ্যেই ইসরাঈলের প্রতি সংহতি জানাতে ১৮ অক্টোবর ২০২৩ তেল আবিব গিয়েছেন। ফিলিস্তিনের হাসপাতালে ইসরাঈলি হামলা ও হতাহতের পর থেকে ‘যুদ্ধাপরাধ’, ‘চরম নৃশংসতা’, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যখন প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনই ইসরাঈলের পক্ষ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছেন যে, ‘ইসরাঈল নয়, অন্য পক্ষ গাজার হাসপতালে হামলা চালিয়েছে’। এই হল বিশ্ব মোড়লদের দ্বৈবিধ্য আচরণ ও মুসলিম হত্যার সমর্থন। 

হে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়! তোমরা নীরব কেন? বিশ্বমোড়ল নামের হায়েনা পশুরূপী মানুষদের দ্বৈবিধ্য আচরণ আর কতদিন সহ্য করবে? কোথায় বিশ্বশান্তি সংস্থা? কোথায় মানবাধিকার সংস্থা? কোথায় জাতিসংঘ?

অথচ জাতিসংঘ সনদে সকল জাতিকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সীমানা সম্পর্কে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া আছে।[১০] কিন্তু স্থায়ী অধিবাসী ফিলিস্তীনিদের হটিয়ে, হত্যা করে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত (জাতিসংঘের মাধ্যমে) ইয়াহুদী রাষ্ট্রের এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে কোন সীমানা নেই। একটি মাত্র রাষ্ট্র, যার সীমানা অনির্ধারিত। তাই সে জেরুযালেম, ফিলিস্তীন, লেবানন ও সিরিয়ার একটি অংশকে যুক্ত করে বৃহত্তর ইসরাঈল রাষ্ট্র গঠন করবে এবং সীমানা ঘোষণা করবে। ৬৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন তারা সীমান্তের চূড়ান্ত রূপ দেয়নি। এটাকে বলে Green line. তাদের লক্ষ্য হল ইউফ্রেটিস থেকে নীলনদ, লোহিত সাগরের তীর থেকে তুর্কী সীমান্ত এই আরবী এলাকা, যা এক সময় অটোমান সাম্রজ্যের অধীনে ছিল, তা দখলে এনে চূড়ান্ত সীমান্ত ঘোষণা করা। এটাই হল জায়নবাদী ইসরাঈলি আধিপত্যবাদ। আর এটাকে জাতিসংঘ এবং পরাশক্তির মোড়লরা সমর্থন দিচ্ছে। শিশুদের বুকফাঁটা আর্তনাদ, গগণ বিদারী কান্না আর গাযার রক্তাক্ত ময়দান দেখেও তাদের পাষাণ হৃদয় কাঁপছে না। বরং ইসরাঈলদের সমর্থন দিয়ে ফিলিস্তীনি আরবদের দোষারোপ করছে। ধিক! জাতিসংঘ! ধিক! ইউরোপ!

মুসলিম বিশ্বের মানসিকতা এবং মধ্যপ্রাচ্যের পরিণতি  

মুসলিম নেতৃবৃন্দের মানসিকতার ফল হল আজকে গাযার রক্ত স্রোত। আজ মুসলিম বিশ্বসহ আরব বিশ্ব মুখে কুলুপ দিয়ে মজা দেখছে; বরং প্রকারন্তরে গাযার হত্যালীলা এবং ধ্বংসযজ্ঞকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে। মুখে কিছু নিন্দা করতে হয় তাই করছে। মুসলিম প্রধান দেশের নেতৃবৃন্দের ক্ষমতার প্রতি লোভ এবং মুনাফিকীর কারণে ইসরাইল এরূপ বর্বরতম ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো একবাক্যে ইসরাইল এবং পশ্চিমা পরাশক্তিদের যদি হুঙ্কার ছাড়ে তাহলে তারা অবশ্যই এই রক্তের হোলি খেলা বন্ধ করতে বাধ্য। কিন্তু না; অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি ক্ষমতার চেয়ার ছিটকে পরে। বরং তাদের কাছে মুসলিম বন্ধুর চেয়ে আমেরিকা বন্ধু অনেক ভাল। কারণ তাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারলেই ক্ষমতার চেয়ার সুদৃঢ় থাকবে, অন্যথা নয়। আরব রাষ্ট্রগুলোতে রাজনীতিকদের মধ্যে ইসলাম ভীতি এত বেশি জোরালো হয়ে উঠেছে যে, তা ইসরাঈলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যক্রম অপসন্দ করার বিষয়টিও পেছনে ঠেলে দিয়েছে। অথচ তাদের উচিত ছিল গাযার প্রতি সমর্থন এবং ইসরাঈলের প্রতিরোধ করা। অথচ বাস্তবতা তার বিপরীত।

অধিকাংশ মুসলিম দেশে ইয়াহুদী-খ্রীষ্টানদের দর্শন, মতবাদ এবং তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মুসলিমরা মুসলিমদের নিধন কাজে ব্যস্ত, সেখানে গাযার মানুষের করুণ আর্তনাদ কী তাদের কর্ণকুহরে পৌঁছাবে? অথচ ৭১১ খ্রি. সিন্ধুর জলদস্যু কর্তৃক আরব জাহাজ লুণ্ঠন হলে মুসলিম নর-নারীর আর্তনাদ হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কর্ণকুহরে পৌঁছার সাথে সাথে মুহাম্মাদ বিন কাসেমের নেতৃত্বে সিন্দু রাজা দাহিরের বাহিনীকে পরাজিত করে মুসলিম শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

অতএব হে মুসলিম নেতৃবৃন্দ! তোমাদের এরকম শৌর্যবীর্য থাকা সত্ত্বেও কিসে তোমাদের বিচ্যুতি ঘটাল? নেতৃত্ব বা ক্ষমতার লোভ তো তোমাদের মধ্যে ছিল না! ক্ষমতার লোভ করতে গিয়ে আজকে মধ্য প্রাচ্যের এই পরিণতি। মুসলিম রাজত্ব ধ্বংস হয়ে অমুসলিমদের রাজত্ব চলছে! যা ওপেন সিক্রেট। এমনকি অমুসলিমরাও বার বার মুসলিম নেতৃবৃন্দের এমন নীরবতার জন্য সামলোচনা করেছেন। বৃটিশ এম.পি, লেখক ও সাংবাদিক জর্জ গ্যালওয় মুসলিম নেতৃবৃন্দের কড়া সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘আপনাদের লজ্জা বলতে কী কিছু আছে’? তিনি আরো বলেছেন,

Will any one any Arab or Muslim leader stand up and lift even a finger to help the Palestinian people in this massacre? May God damn you. where is Erdogan? The would be Outoman protector? Where? Where is Waleed bin Talal bin Abdel Aziz Al-Saud, CO-owner of fox and sky News, where are the kings and Emirs of the Arab world? So ready to pay for the murder of Arab where is king Abdullah, ‘Custodian of Mosques’? Where is General Sisi “The new Nesser’? I address the Arab and Muslim Leader Sincerely with this question. Have you no Sence of Shane? Judge Your selves before you are Judged....

অর্থাৎ ‘কেউ কী নেই, আরব অথবা মুসলিম নেতা? কেউ উঠে দঁাঁড়াও না এবং তোমার একটি আঙ্গুল হলেও কেন বাঁড়িয়ে দিচ্ছ না গণহত্যার শিকার ফিলিস্তীনিদের জন্য? সৃষ্টিকর্তা তোমাকে ধ্বংস করে দিবে। কোথায় এরদোগান, অটোমানের রক্ষাকর্তা? কোথায় ওয়ালিদ বিন আব্দুল আযীয আল-সঊদ, ফক্স এবং স্কাই নিউজের সহযোগী মালিক? কোথায় আরব জাহানের শাসনকর্তা? আরবদের এই খুনের দায় সবাইকে নিতে হবে। কোথায় দুই মসজিদের সেবক বাদশা আব্দুল্লাহ? কোথায় মিশরের জোনারেল সিসি, নতুন আব্দুল নাছের? শ্রদ্ধার সঙ্গে আমি আরব এবং মুসলিম নেতাদের কাছে উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর চাই। তাদের বলতে চাই, আপনাদের লজ্জা বলে কী কোন অনুভূতি আছে? বিচারের কাঠগড়ায় দঁাঁড়ানোর আগে নিজেকে বিচার করুন’। অতএব, হে মুসলিম নেতৃবৃন্দ! অমুসিলম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন।

স্বল্প ক্ষতির দীর্ঘ লড়াই এবং পরাশক্তিদের মধ্যপ্রাচ্য নীতি

ফিলিস্তিন অভিযানে ইসরাঈলের সামরিক উদ্দেশ্য হল, হামাসের ধ্বংস সাধন। এই কথা বলে ইসরাঈল আগেও একাধিকবার গাযায় হামলা করেছে। এগুলো আক্রমণে ইসরাঈল কী চায়? তাদের স্ট্রাটেজি বা কৌশল কী? মধ্যপ্রাচ্যকে উত্তপ্ত রাখা ও ধ্বংস সাধনের উদ্দেশ্য কী? ইসরাঈলের সামরিক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তারা এক দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের অংশ হিসাবেই এসব স্বল্প মেয়াদি সংঘাতে লিপ্ত আছে। তাদের যুক্তি হল, এটি হল ইংরেজীতে যাকে বলে ‘লং ওয়ার অব অ্যাট্রিশন’, যার অর্থ ‘স্বল্প ক্ষতির দীর্ঘ লড়াই’। তারা স্বল্প ক্ষতির মাধ্যমে দীর্ঘ যুদ্ধ করতে প্রস্তুত।

প্রথম আরব-ইসরাঈল যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৪৮ সালে, দ্বিতীয়বার আবার যুদ্ধ হয় ১৯৫৬ সালে সুয়েজখাল নিয়ে। এরপর ১৯৬৭ সালে। সর্বশেষ যুদ্ধটি হয় ১৯৭৩ সালে। প্রতিটি যুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরাঈলের নিকট পরাজিত হয়েছে এবং একই সাথে বিশাল এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণও হারিয়েছে। ইতিপূর্বে পশ্চিম তীর ছিল জর্ডানের অধীন এবং গাযা উপদ্বীপ ছিল মিসরের মালিকানাধীন। ৬৭ সালে ইসরাঈল এই এলাকাগুলো দখল করে নেয়। তাছাড়া পরাশক্তি তথা ইউরোপ দেশগুলো এই স্বল্প ক্ষতির দীর্ঘ লড়াইয়ের পিছনে অনেক কারণ ও উদ্দেশ্য রয়েছে, যা তাদের মধ্যপ্রাচ্য নীতির অন্তর্ভুক্ত। তারা ইসরাঈলের মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করতে চায় এবং ইসরাঈলকে পুরোপুরি এই কাজে নিয়োজিত রাখতে চায় সহযোগী হিসাবে। তাদের মৌলিক কারণের মধ্যে অন্যতম হল-

১. মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশকেই প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে উঠতে না দেয়া।[১১] ২. মধ্যপ্রাচ্যে তেলসম্পদ ও ভূরাজনৈতিক সম্ভাবনার প্রতি লক্ষ্য রেখে এখানে একটি লাঠিয়াল রাষ্ট্র হিসাবে ইসরাঈলকে প্রতিষ্ঠা করা। ৩. সামরিক স্বৈরাচার ও রাজ পরিবারকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা এবং কোথাও আঞ্চলিক সামরিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে তা সমূলে ধ্বংস করা। ৪. আরবদের হত্যা করা এবং তাদেরকে ইয়াহুদী-খ্রীষ্টানদের দাসে পরিণত করা।[১২] ৫. ইয়াহুদী হোলোকস্ট[১৩] (ঐড়ষড়পধঁংঃ)-এর কাহিনী দ্বারা খ্রীষ্টান হোলোকষ্ট ভুলিয়ে দেয়া।

প্রশ্ন হচ্ছে আবার সেই ইয়াহুদী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনাকেই সাম্রাজ্যবাদ মহীয়ান করতে চায় কেন? তাহল তাদের অতীতের জঘন্য ও ঘৃণ্য অপরাধ লুকিয়ে রাখার মতলব।

সুধী পাঠক! ইউরোপের এই সাদা মানুষগুলো কি আদিবাসীদের নিবির্চারে হত্যা করেনি? জনগোষ্ঠীর পর জনগোষ্ঠীকে কী নিশ্চিহ্ন করেনি? কালোদেরকে কী দড়িতে লটকিয়ে মারেনি? পুড়িয়ে হত্যা করেনি? তাদের ইতিহাস কী আমরা মনে রেখেছি বা জানি? আমেরিকান ইন্ডিয়ান, মায়া, ইনকা, দাস হিসাবে ধরে নিয়ে যাওয়া আমেরিকায় আফ্রিকার কালো মানুষসহ আরো অগণিত মানুষ, যাদের ইতিহাস সাম্রাজ্যবাদ মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর। বর্তমানের হামলাটাও সাদা মানুষদের হোলোকষ্টকে ভুলিয়ে দেয়ার একটি অংশ। আর ফিলিস্তিনের মানুষ হল এই বর্বর আগ্রাসনের মূল লক্ষ্য।

ইসরাঈলী আগ্রাসন মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধের নির্দশন 

প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ হয়েছে। এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলামত অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে প্রথম এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ থেকে চলমান মহাযুদ্ধের পার্থক্য হচ্ছে, সেসব যুদ্ধ সম্পর্কে সারাবিশ্বের মানুষ জানত। এখন বার্সেলোনা বা বুয়েন্স আয়ারেসের রাস্তায় চলমান লোকজন বুঝতেই পারছে না যে, একটি যুদ্ধ চলছে। মুসলিম সাম্রাজ্যের কেন্দ্রভূমি বাগদাদ নগরী এবং ওছমানিয়া খেলাফত ধ্বংস করার পরও মুসলিম নেতৃবৃন্দের বোধোদয় হয়নি। প্রতিটি বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি করে ঘটনাকে সাইনবোর্ড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অষ্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর পারমানবিক বোমা ব্যবহারের ভীতি। মুসলিমদের সঙ্গে আরব-ইসরাঈল যুদ্ধ শুরু করেও তারা যখন লাভবান হতে পারল না; তখন মধ্যপ্রাচ্যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন শুরু করে। তবে সেই জন্য নাইন-ইলেভেনের মতো সন্ত্রাসী ঘটনাকে অনুঘটক হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। আর এই ঘটনার মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল জায়নবাদী ইয়াহুদীচক্র এবং খ্রিষ্টানরা। কিন্তু সেটা না হওয়াতে তারা ‘ছায়া যুদ্ধ’ শুরু করেছে। মুসলিমদেরকে দু’খণ্ডে বিভক্ত করে শেষ করে দিচ্ছে।

আফগানিস্তানের তালেবানদের কমিউনিষ্ট বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধে আল-কায়েদার মত মুসলিম জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার পেছনে ‘সি আই’-এর ভূমিকার কথা এখন সর্বজনবিদিত। সেই আল-কায়েদাকে দমনের নামে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সহ বিভিন্ন দেশে মার্কিনীদের দেশব্যাপী যুদ্ধ চলেছে। মুসলিম দেশগুলোতে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইকে চাঙ্গা করার জন্য বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের গোয়েন্দা সংস্থাদের মাঝে সমন্বয় করতে ইসরাইলের ‘মোসাদ’ কাজ করছে। এর অংশ হিসাবে সিরিয়ার আল-কায়েদাকে যেমন অস্ত্রশস্ত্র দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তেমনিভাবে প্রতিপক্ষ মিলিশিয়াকেও অস্ত্রের যোগান দেয়া হয়েছে। এক পক্ষকে পশ্চিমা উৎস হতে অন্যপক্ষকে রাশিয়া হতে। এইভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে এক সময় লড়াইরত আল-কায়েদা জিহাদী গ্রুপ ও হিজবুল্লাহর শী‘আ মিলিশিয়া গ্রুপকে ইরাক এবং সিরিয়ায় পরস্পরের মুখোমুখি রাখা হয়েছে। তাছারা মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিমদের মধ্যকার শী‘আ-সুন্নী দ্বন্দ্ব। আফগানিস্তান, ইরাক শেষ। সিরিয়াকে মিশর থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ইসরাঈলের অবস্থান। পাশাপাশি সকল জায়গায় গৃহ যুদ্ধ। এখন ইসরাঈল গাযায় যে হামলা চালাচ্ছে এটা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ছায়াযুদ্ধ। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রণে আনা মানে গোটা মুসলিম বিশ্ব পরিণত হবে পশ্চিমাদের হাতের পুতুলে। এটাই তাদের মুসলিম বিশ্বযুদ্ধ বনাম ছায়াযুদ্ধের মৌলিক উদ্দেশ্য। এটা শুধু মধ্যপ্রাচ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং অন্যান্য অঞ্চলেও কাজ চলছে।

আফ্রিকার সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র নাইজেরিয়া থেকে মুসলিম নেতৃত্ব সরানো হয়েছে ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে, সুদানকে দিখণ্ডিত করা হয়েছে, মিশরে ব্রাদারহুডকে হটিয়ে ইসরাঈলের অনুগতরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল। আলজেরিয়ার জনগণের হাতে ক্ষমতা নেই। মালিতে মুসলিমদের অবস্থা সূচনীয়। আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের অবস্থা আরও করুণ। সেখানে এখনিক ক্লিনসিং (জাতি নিশ্চিতকরণ) চলছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ইউরোপের খ্রীষ্টানেরা বন্দুকের জোরে প্রায় সমগ্র আফ্রিকা দখল করল। পূর্ব তিমুর ও দক্ষিন সুদান তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

পরিশেষে বলব, ইসরাঈলের পিতা বলে পরিচিত বেনগুরিয়ান বলেছিলেন, ডব সঁংঃ ঃবৎৎড়ৎ, ধংংধংংরহধঃরড়হ, ওহঃরসরফধঃরড়হ, ষধহফ, পড়হভরংপধঃরড়হ ধহফ ঃযব পধঃঃরহম ড়ভ ধষষ ংড়পরধষ ংবৎারপবং ঃড় ৎরফ ঃযব মধষরষবব ড়ভ রঃং ধৎধন ঢ়ড়ঢ়ঁষধঃরড়হ. তাই তারা তাদের পিতার ঘোষণা অনুযায়ী ভয় প্রদর্শন, সন্ত্রাসী, গুপ্তহত্যা, জমি বাজেয়াপ্ত করা কোনটার ব্যত্যয় করেনি।

তাহলে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় নীরব কেন? মুসলিমদের রক্তের কি কোন মূল্য নেই; পবিত্র ভূমির কি কোন মর্যাদা নেই? অথচ ফিলিস্তিন অঞ্চলকে মহান আল্লাহ ‘বরকতময় এলাকা’ বলে অভিহিত করেছেন। এ অঞ্চলটি হল ইবরাহীম, ইয়াকূব, দাঊদ, সুলাইমান, ঈসা সহ কয়েক হাজার নবী (আলাইহিস সালাম)-এর জন্মস্থান, বাসস্থান, কর্মস্থল, স্মৃতিবিজড়িত স্থান এবং মৃত্যুস্থান। অহী অবতরণস্থল, ইসলামের কেন্দ্র, ইসলামি সংস্কৃতির চারণভূমি এবং তাওহীদের প্রচার ও প্রসারের ঘাটি। মুসলিমদের প্রথম ক্বিবলা (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫০)। যেখানে রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ইমামতিতে নবী-রাসূলগণ ছালাত আদায় করেছেন। যে মসজিদে নেকির আশায় সফর করা যায় এবং সেখানে ছালাত আদায় করলে দু’ হারাম ব্যতীত অন্যান্য মসজিদ হতে ২৫ হাজার গুণ বেশি নেকি হয়। মুমিনদের সব চেয়ে বড় ফেতনা দাজ্জাল সমগ্র পৃথিবীতে বিচরণ করতে পারলেও চারটি মসজিদে পেীঁছতে পারবে না; তার মধ্যে অন্যতম হল বায়তুল মুক্বাদ্দাস।[১৪] এটা সেই পবিত্র ভূমি যেখান থেকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিরাজে গিয়েছিলেন (সূরা বানী ইসরাঈল : ১)।

বর্তমানে সেই ফিলিস্তিন ও বায়তুল মুক্বাদ্দাস অবরুদ্ধ। অথচ এটা মুসলিম-মুমিনদের পবিত্র ভূমি (সূরা আল-মায়িদাহ : ২০-২১)। নবী-রাসূলদের যুগ থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন সময় এই পবিত্র ভূমি অত্যাচারীদের হাতে দখল ও অবরুদ্ধ ছিল। মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সময় অবিশ্বাস্য শক্তি-সামর্থ্যরে মালিক আমালেক্বা সম্প্রদায় পবিত্র ভূমিকে দখল করে রেখেছিল। মহান আল্লাহর অনুগ্রহে নবী ইউশা‘ বিন নূন (আলাইহিস সালাম) ঐ পবিত্র ভূমিকে মুক্ত করেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাস পুনর্দখল করেন। সেই দিন মহান আল্লাহ সূর্যকে থামিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে তাঁরা সূর্যাস্তের পূর্বেই বিজয় লাভ করতে পারেন (সূরা আল-মায়িদাহ : ২৩-২৫)।[১৫] ৬৪৮ সালে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খেলাফতকালে মুসলিমরা ফিলিস্তিন জয় করেন। ১০৯৬ সালে খ্রিষ্টানরা আবার তা পুনর্দখল করে। ১১৮৭ সালে সিপাহশালার সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী আবার ফিলিস্তিন জয় করেন। এরপর থেকে খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদী চক্র ফিলিস্তিনে ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করেন এবং ব্রিটিশ ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য মদদে জায়নাবাদী অবৈধ ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের কাছে আবারও পবিত্র ভূমি ও বায়তুল মুক্বাদ্দাস অবরুদ্ধ, লাঞ্চিত এবং রক্তাক্ত।

অথচ এর সংরক্ষণ, পবিত্রতা রক্ষা করা শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়; বরং সব মুসলিমের ওপর ওয়াজিব। তাছাড়া নির্যাতিত নিপিড়ীত মানুষের আর্তনাদ শোনা এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো মুসলিমদের ঈমানী দায়িত্ব। মুসলিমদের শরীরে রক্ত, তেজ, শক্তি, সামর্থ্য সবই আছে, নেই শুধু ঈমান ও তাক্বওয়া। যার কারণে মাজলূম জনতা, নারী ও নিষ্পাপ শিশুর আর্তনাদ তাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে না। করলেও তারা শিহরিত হচ্ছে না। ভীতি, বিলাসীতা ও কাপুরুষতা তাদের হিম্মতকে পিষ্ট করেছে। অথচ মুসলিমদের চিন্তা, দুঃখ ও ভীতির কিছু নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৩৯)। মুসলিমরা যদি আবারও ইউশা‘ বিন নূন (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সাথীদের ন্যায় সেই ঈমান, তাক্বওয়া এবং মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, তাহলে আবারও পবিত্র ভূমি পুণর্দখল করতে পারবে; অন্যথা নয় (সূরা আল-মায়িদাহ : ২৩)।

অতএব হে মুসলিম নেতৃবৃন্দ! ঐক্যবন্ধ হোন! আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরুন ও দলে দলে বিভক্ত হওয়া এবং ইহুদী-খ্রীষ্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত হোন। ঈমানকে মজবুত করুন এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করুন; ইনশাআল্লাহ বিজয় আসবেই। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন-আমীন!!

(তথ্যসুত্র : ইউকিপিডিয়া সহ বিভিন্ন অনলাইন জার্নাল, পত্র-পত্রীকা এবং আর্টিকেল থেকে সংগৃহিত)


* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. সূরা ইউসুফ : ১৫-১৮।
[২]. মাহমূদ ও মুহাম্মাদ সিদ্দিক, ইসরাঈল ও মুসলিম জাহান (ঢাকা : ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ১ম প্রকাশ, জানুয়ারী ১৯৮৯), পৃ. ১৪৮-৫০।
[৩]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, নবীদের কাহিনী (রাজশাহী : হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ১১তম প্রকাশ, ডিসেম্বর, ২০১০), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৫।
[৪]. ইসরাঈল ও মুসলিম জাহান, পৃ. ১৬৪-৬৫।
[৫]. ইসরাঈল ও মুসলিম জাহান, পৃ. ১৯৩।
[৬]. মোঃ একরাম উল্লাহ দুলাল, মধ্য প্রাচ্যের ইতিহাস (ঢাকা : কে আলী প্রকাশক, প্রথম সংস্কর, ১৯৬৫), পৃ. ৩২৬।
[৭]. ইসরাঈল ও মুসলিম জাহান, পৃ. ৩০৭।
[৮]. মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস, পৃ. ৩৪১।
[৯]. সাদা ফসফরাস হল একটি অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। এটাকে আগ্নেয় অস্ত্র হিসাবেও ব্যবহার করা হয়। এটা অনেক উজ্জ্বল আলো ও ধোঁয়া ছড়াতে পারে। এর মূল উপাদান হল ফসফরাসেরই একটি আইসোটোপ। এটা মানব শরীরের জন্য খুবই বিপদজনক। এটা মানুষের ত্বকের নরম টিস্যুতে প্রথম আঘাত আনে। এরপর এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে। অধিক সময় এর সংস্পর্শে থাকলে সেই ব্যক্তি মারা যেতে পারে।
[১০]. ইসরাঈল ও মুসলিম জাহান, পৃ. ১৯৩।
[১১]. নয়া দিগন্ত, শনিবার ৯ আগষ্ট ২০১৪।
[১২]. নয়া দিগন্ত, শনিবার ৯ আগষ্ট ২০১৪।
[১৩]. Holocaust অর্থ আগুনে সম্পূর্ণ ধ্বংস, (বিশেষতঃ মানুষের জীবন) সামগ্রিক হত্যাকাণ্ড বা সম্পূর্ণ বিনাশ।
[১৪]. চারটি মসজিদ হল বায়তুল্লাহ, মসজিদে নববী, বায়তুল মুক্বাদ্দাস ও মসজিদে তূর। দ্র. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, হা/৩৭৫০৬; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৯৩৪।
[১৫]. নবী ইউশা‘ বিন নূন (আলাইহিস সালাম) জিহাদের মাধ্যমে জুমু‘আর দিন আছরের পরে মহান আল্লাহর অনুগ্রহে ঐ পবিত্র ভূমিকে মুক্ত করেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাস পুনর্দখল করেন। যখন সূর্য পশ্চিমের দিকে ঢলে যাচ্ছিল, তিনি আশক্সক্ষা করলে যে, শনিবার তাদের উপর আসবে। তখন তিনি সূর্যকে বললেন, إِنَّكِ مَأْمُورَةٌ وَأَنَا مَأْمُورٌ، اللَّهُمَّ احْبِسْهَا عليَّ ‘নিশ্চয় তুমি আদিষ্ট আমিও আদিষ্ট। হে আল্লাহ এটি আমার জন্য আটকে রাখুন’। মহান আল্লাহ তা আটকে রাখলেন এমনকি বিজয় লাভ করলেন’। দ্র. ছহীহ বুখারী, হা/৩১২৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৪৭; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৮০৮; তাফসীর ইবনু কাছীর, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৮০।




প্রসঙ্গসমূহ »: সাময়িক প্রসঙ্গ
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (৩য় কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায় (৮ম কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
তাক্বওয়া অর্জনে ছিয়াম - প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
সালাফী মানহাজ অনুসরণের মর্যাদা - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
যুলমের পরিচয় ও পরিণাম - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
হজ্জ ও ওমরাহ সম্পর্কে প্রচলিত বিদ‘আতসমূহ - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (ত্রয়োদশ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
তারুণ্যের উপর সন্ত্রাসবাদের  হিংস্র ছোবল : প্রতিকারের উপায় (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (১৭তম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
অহংকার করা ও তার পরিণাম (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর

ফেসবুক পেজ