বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬ অপরাহ্ন

ফাযায়েলে কুরআন

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*


(৭ম কিস্তি)

২). সন্দেহমুক্ত কিতাব


 কুরআনের অন্যতম মর্যাদা হল- এটা সন্দেহমুক্ত কিতাব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,ذٰلِکَ الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ  فِیۡہِ  ‘এটা (আল-কুরআন) সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২)। رَیۡبَ -এর অর্থ সংশয় ও সন্দেহ।[১] ইবনু আব্বাস, ইবনু মাসঊদ এবং আরও কয়েকজন ছাহাবী (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) থেকে এ অর্থ বর্ণিত হয়েছে। رَیۡبَ শব্দটি আরবদের কবিতায় অপবাদের অর্থেও এসেছে।لَا رَیۡبَ فِیۡہِ  -এর অর্থ হল, ‘এই কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়া[২], আল্লাহর অহী, তাঁর কথা এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অহী অবতরণ করেছেন, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই’।[৩] যেমনভাবে মৃত্যু, পুনরুত্থান এবং ক্বিয়ামতের ব্যাপারে সন্দেহ নেই।[৪]

আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির জন্য এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যা সম্পূর্ণ সন্দেহমুক্ত।[৫] এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতরণ এতে কোন সন্দেহ নেই। আল-কুরআনের সবকিছু স্পষ্ট। এতে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন নেই।[৬] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ذٰلِکَ  الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ  فِیۡہِ  ہُدًی  لِّلۡمُتَّقِیۡنَ

‘এটা (কুরআন) সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা মুত্তাক্বীদের জন্য পথ প্রদর্শক’ (সূরা  আল-বাক্বারাহ : ২)।

আল-কুরআন জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ এমন সত্য কিতাব, যার মাধ্যমে সর্তক করা হয়েছে এমন সম্প্রদায়কে, যাদের নিকট পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি, যেন তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

تَنۡزِیۡلُ الۡکِتٰبِ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ مِنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ - اَمۡ  یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىہُ ۚ بَلۡ ہُوَ  الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّکَ لِتُنۡذِرَ قَوۡمًا مَّاۤ  اَتٰہُمۡ  مِّنۡ نَّذِیۡرٍ مِّنۡ قَبۡلِکَ لَعَلَّہُمۡ  یَہۡتَدُوۡنَ

‘এ কিতাব সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া, এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে কি তারা বলে এটা তো সে নিজে মিথ্যা রচনা করেছে? না, বরং এটা আপনার প্রতিপালক হতে (আগত) সত্য, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারেন, যাদের নিকট আপনার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি, যেন তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়’ (সূরা আস-সাজদাহ : ২-৩)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مَا کَانَ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنُ اَنۡ یُّفۡتَرٰی مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ  وَ لٰکِنۡ تَصۡدِیۡقَ الَّذِیۡ بَیۡنَ یَدَیۡہِ وَ تَفۡصِیۡلَ الۡکِتٰبِ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ  مِنۡ  رَّبِّ  الۡعٰلَمِیۡنَ

‘আর এই কুরআন কল্পনাপ্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে, এটা তো সেই কিতাবের সত্যতা প্রমাণকারী, যা এর পূর্বে (নাযিল) হয়েছে এবং আবশ্যকীয় বিধানসমূহের ব্যাখ্যা বর্ণনাকারী, এতে কোন সন্দেহ নেই, এটা বিশ্বপ্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে’ (সূরা ইউনুস : ৩৭)।

এটা আল-কুরআনের মু‘জিযা। মানুষের পক্ষে কুরআনের মত অনুরূপ কুরআন, দশটি সূরা এবং কোন সূরার ন্যায় একটি সূরা তৈরি করা অসম্ভব। কেননা কুরআনের বিশুদ্ধতা, নির্ভেজাল, বাগ্মিতা, সুন্দর বাচনভঙ্গি, শব্দ ও বাক্যের ক্রটিমুক্তি, ভাষার অলঙ্কার, বাহুল্যবর্জিত, মূল্যবান, বিরল, সম্মানিত ও বলিষ্ঠ অর্থের অন্তর্ভুক্তি, যা দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণকর ও উপকারী; রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়া ছাড়া অসম্ভব। যার সত্তা, গুণাবলী, কাজ, কথার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই এবং যার কথার সাথে সৃষ্টির কথার কোন সাদৃশ্য নেই। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর এই কুরআন কল্পনাপ্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে, ...’ (সূরা ইউনুস : ৩৭)।[৭]

কুরাইশ কাফির-মুশরিকরা অহী (কুরআন) অবতরণ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করত। তারা ধারণা করত যে, এটা মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই রচনা করে। এ কারণে তারা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উম্মাদ (সূরা আত-তাকভীর : ২২), কবি, গণক (সূরা আল-হাক্ব-ক্বাহ : ৪১-৪২) ইত্যাদি বলে অপবাদ দিত। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ঐ সকল ভ্রান্ত ধারণা রদ করে আয়াত অবতরণ করে বলেন,

اِنَّہٗ  لَقَوۡلُ  رَسُوۡلٍ  کَرِیۡمٍ -   وَّ مَا ہُوَ بِقَوۡلِ شَاعِرٍ  قَلِیۡلًا  مَّا تُؤۡمِنُوۡنَ  - وَ لَا بِقَوۡلِ کَاہِنٍ  قَلِیۡلًا مَّا تَذَکَّرُوۡنَ  - تَنۡزِیۡلٌ مِّنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ.

‘নিশ্চয় এ কুরআন এক সম্মানিত রাসূলের বাণী। আর এটা কোন কবির কথা নয়; তোমরা খুব অল্পই ঈমান পোষণ করে থাক, এটা কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। এটা সৃষ্টিকুলের রবের নিকট থেকে নাযিলকৃত’ (সূরা আল-হাক্ব-ক্বাহ : ৪০-৪৩)। 

পবিত্র কুরআন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এতে কোন সন্দেহ নেই। আর এ চ্যালেঞ্জ বিভিন্ন স্থানে এসেছে। কাফিররা কুরআনের ব্যাপারে সন্দেহ করত। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। আল-কুরআন যদি মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ থেকেই তৈরি হয়, তাহলে মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো তাদের মতই একজন মানুষ। তাহলে অক্ষরজ্ঞানহীন মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি কুরআন তৈরি করতে পারে, তারাও অনুরূপ নিয়ে আসুক এবং এ ব্যাপারে তাদের সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করুক।[৮] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلۡ لَّئِنِ اجۡتَمَعَتِ الۡاِنۡسُ وَ الۡجِنُّ عَلٰۤی اَنۡ یَّاۡتُوۡا بِمِثۡلِ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنِ لَا یَاۡتُوۡنَ بِمِثۡلِہٖ وَ لَوۡ کَانَ بَعۡضُہُمۡ لِبَعۡضٍ  ظَہِیۡرًا.

‘বলুন, যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ আনতে পারবে না’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৮৮)।

অতঃপর তাদেরকে বলা হয়েছিল যে, কুরআনের মত কুরআন না আনতে সক্ষম হলে কুরআনের দশটি সূরা যেন নিয়ে আসে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىہُ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِعَشۡرِ سُوَرٍ مِّثۡلِہٖ مُفۡتَرَیٰتٍ وَّ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ  اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ.

‘নাকি তারা বলে, সে এটা নিজে রচনা করেছে? বলুন! তোমরা যদি (তোমাদের দাবিতে) সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যাকে পার (এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য) ডেকে নাও’ (সূরা হূদ : ১৩)। কিন্তু তারা তাতেও অপারগ হয়। তখন তাদেরকে কুরআনের সূরাসমূহের একটি সূরা নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ করা হয় কিন্তু কাফির-মুশরিকরা তাও আনতে সক্ষম হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مَا کَانَ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنُ اَنۡ یُّفۡتَرٰی مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ  وَ لٰکِنۡ تَصۡدِیۡقَ الَّذِیۡ بَیۡنَ یَدَیۡہِ وَ تَفۡصِیۡلَ الۡکِتٰبِ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ  مِنۡ  رَّبِّ  الۡعٰلَمِیۡنَ  - اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىہُ  قُلۡ فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّثۡلِہٖ وَ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ  اِنۡ  کُنۡتُمۡ  صٰدِقِیۡنَ.

‘আর এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো রচনা হওয়া সম্ভব নয়। বরং এর আগে যা নাযিল হয়েছে এটা তার সত্যায়নকারী এবং আল কিতাবের বিশদ ব্যাখ্যা। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে। নাকি তারা বলে, তিনি এটা রচনা করেছেন? বলুন, তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (সূরা ইউনুস : ৩৭-৩৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ رَیۡبٍ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلٰی عَبۡدِنَا فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّنۡ مِّثۡلِہٖ  وَ ادۡعُوۡا شُہَدَآءَکُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ  اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ.

‘এবং আমরা আমাদের বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে তোমরা যদি সন্দিহান হও তবে তার ন্যায় একটি ‘সূরা’ তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারীদেরকেও ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩)। আর ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ কুরআনের অনুরূপ কুরআন, একটি সূরা বা একটি আয়াতও রচনা করতে সক্ষম হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا وَ لَنۡ تَفۡعَلُوۡا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِیۡ وَقُوۡدُہَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ    اُعِدَّتۡ لِلۡکٰفِرِیۡنَ.

‘অনন্তর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং তোমরা তা কখনও করতে পারবে না, তাহলে তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় কর যার ইন্ধন মানুষ ও প্রস্তরপুঞ্জ, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৪)।

এ চ্যালেঞ্জ কুরআনের শুধু ভাষাশৈলীর উপর করা হয়নি। সাধারণভাবে লোকেরা এ চ্যালেঞ্জটিকে নিছক কুরআনের ভাষাশৈলী, অলংকার ও সাহিত্য সুষমার দিক দিয়ে ছিল বলে মনে করে। কুরআন তার অনন্য ও অতুলনীয় হবার দাবীর ভিত্তি নিছক নিজের শাব্দিক সৌন্দর্য সুষমার ওপর প্রতিষ্ঠিত করেনি। নিঃসন্দেহে ভাষাশৈলীর দিক দিয়েও কুরআন নযীরবিহীন। কিন্তু মূলত যে জিনিসটির ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, কোন মানবিক মেধা ও প্রতিভা এহেন কিতাব রচনা করতে পারে না, সেটি হচ্ছে তার বিষয়বস্তু, অলংকারিত্ব ও শিক্ষা।

মানুষের লেখা যে কোন কিতাব, গ্রন্থে ভুল থাকতে পারে, সন্দেহ ও সংশয় থাকতে পারে। কিন্তু আল্লাহর কালামে কোন ভুল ও সন্দেহ নেই এবং থাকতেও পারে না। কোন লেখকই বইয়ের শুরুতে লিখতে পারে না যে, ‘এই গ্রন্থে কোন সন্দেহ নেই’। শুধু আসমান-যমীনের অধিপতি তা পারেন। তিনি তাঁর কালামে ভূমিকা সূরার পর দ্বিতীয় সূরার শুরুতেই বলেছেন,

ذٰلِکَ  الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ  فِیۡہِ  ہُدًی  لِّلۡمُتَّقِیۡنَ

‘এটা (কুরআন) সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা মুত্তাক্বীদের জন্য পথ প্রদর্শক’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২)। এতে কোন প্রকারের সন্দেহ নেই। এর খবর সত্য, এর আদেশ-নিষেধ সত্য। অথচ অবিশ্বাসীরা সন্দেহ করত, এটা কোন মানুষের রচিত। মক্কায় কিছু ক্রীতদাস ছিল, যারা তাওরাত ও ইঞ্জীল সম্পর্কে অবগত ছিল। প্রথমে তারা খ্রিষ্টান বা ইয়াহুদী ছিল, পরে মুসলিম হয়। তাদের ভাষাও ছিল অশুদ্ধ। মক্কার কাফিররা এদের প্রতিই ইঙ্গিত করে বলত যে, ‘অমুক দাস মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কুরআন শিক্ষা দেয়! তাদের উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ لَقَدۡ نَعۡلَمُ  اَنَّہُمۡ  یَقُوۡلُوۡنَ  اِنَّمَا  یُعَلِّمُہٗ بَشَرٌ  لِسَانُ الَّذِیۡ یُلۡحِدُوۡنَ  اِلَیۡہِ اَعۡجَمِیٌّ  وَّ ہٰذَا لِسَانٌ عَرَبِیٌّ  مُّبِیۡنٌ.

‘আমরা তো জানিই, তারা বলে, তাঁকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবী নয়; আর এ তো স্পষ্ট আরবী ভাষা’ (সূরা আন-নাহল : ১০৩)। অর্থাৎ ওরা যাদের কথা বলে, তারা তো শুদ্ধভাবে আরবীও বলতে পারে না, অথচ কুরআন এমন বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট আরবী ভাষায়, যার সাহিত্যশৈলী সুউচ্চ এবং যার অলৌকিকতা অতুলনীয়। চ্যালেঞ্জের পরও একটি আয়াতও কেউ আনতে সক্ষম হয়নি। পৃথিবীর সকল সাহিত্যিক মিলেও এর সমতুল্য বাণী রচনা করতে অক্ষম।

অতএব যারা এই কুরআনের কোন একটি সূরা, আয়াত, শব্দ বা হরফ নিয়ে সন্দেহ করবে, তারাই মিথ্যাবাদী, অনাচারী ও সীমালংঘনকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰہِ  لَا یَہۡدِیۡہِمُ  اللّٰہُ  وَ لَہُمۡ  عَذَابٌ  اَلِیۡمٌ  - اِنَّمَا یَفۡتَرِی الۡکَذِبَ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰہِ  وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡکٰذِبُوۡنَ.

‘যারা আল্লাহর আয়াতে বিশ্বাস করে না, তাদেরকে আল্লাহ পথনির্দেশ করেন না এবং তাদের জন্য আছে বেদনাদায়ক শাস্তি। যারা আল্লাহর আয়াতে বিশ্বাস করে না, তারাই শুধু মিথ্যা উদ্ভাবন করে এবং তারাই মিথ্যাবাদী’ (সূরা আন-নাহল : ১০৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ قَالَ الَّذِیۡنَ  کَفَرُوۡۤا اِنۡ ہٰذَاۤ  اِلَّاۤ  اِفۡکُۨ افۡتَرٰىہُ وَ اَعَانَہٗ  عَلَیۡہِ  قَوۡمٌ   اٰخَرُوۡنَ  فَقَدۡ  جَآءُوۡ  ظُلۡمًا  وَّ  زُوۡرًا  - وَ قَالُوۡۤا اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ اکۡتَتَبَہَا فَہِیَ تُمۡلٰی عَلَیۡہِ  بُکۡرَۃً   وَّ اَصِیۡلًا  - قُلۡ اَنۡزَلَہُ الَّذِیۡ یَعۡلَمُ السِّرَّ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ  اِنَّہٗ  کَانَ غَفُوۡرًا  رَّحِیۡمًا.

‘অবিশ্বাসীরা বলে, এ মিথ্যা ব্যতীত কিছুই নয়; সে নিজে তা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে; ওরা অবশ্যই সীমালংঘন করে ও মিথ্যা বলে। ওরা বলে, এগুলো তো সে কালের উপকথা; যা সে লিখিয়ে নিয়েছে। অতঃপর এগুলো সকাল-সন্ধ্যা তাঁর নিকট পাঠ করা হয়। বলুন, এটা তিনিই অবতীর্ণ করেছেন যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীর রহস্য অবগত আছেন। নিশ্চয় তিনি চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আল-ফুরক্বান : ৪-৬)।

৩.) পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী

কুরআনের অন্যতম একটি বিশেষত্ব হল যে, এটি পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবের সত্যায়নকারী। অর্থাৎ কুরআনের পূর্বে যে সকল আসমানী কিতাব অবতরণ করা হয়েছিল, কুরআন সেই সকল কিতাবের সত্যায়নকারী। এটা মহান প্রতিপালকের নিকট হতে আসা সর্বশেষ গ্রন্থ। তার পূর্বে যত আসমানী গ্রন্থ এসেছে মুসলিমরা তা বিশ্বাস করে এবং কুরাআন তার সত্যায়ন করে। পূর্ববর্তী কিতাবধারীরা যদিও এ কুরআন বিশ্বাস না করে, তবুও মুসলিমরা তাদের কিতাবে বিশ্বাস রাখে, যেহেতু তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং কুরআন তার সত্যায়ন করেছে। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা (তাওরাত ও ইঞ্জীলের অধিকারীদের উদ্দেশ্য করে) বলেছেন যে, তারা যেন সেই কুরআনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে যা তাদের নিজস্ব কিতাবেরও সত্যতা স্বীকার করে। এটা এনেছেন এমন নবী যিনি নিরক্ষর আরাবী, সুসংবাদ প্রদানকারী, ভয় প্রদর্শনকারী, আলোকময় প্রদীপ সদৃশ, যাঁর নাম মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), যিনি তাওরাত ও ইঞ্জীলকে সত্য প্রতিপন্নকারী এবং যিনি সত্যের বিস্তার সাধনকারী। তাওরাত ও ইঞ্জীলেও মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বর্ণনা ছিল বলে তাঁর আগমনই ছিল তাওরাত ও ইঞ্জীলের সত্যতার প্রমাণ।[৯]

কুরআন হল তাওরাতের সত্যায়নকারী। এ কারণে তাদেরকে কুরআনের প্রতি বিশ্বাস করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সংবাদ প্রদান করেছেন যে, কুরআনকে সত্য বলে স্বীকার করার অর্থ হল তাওরাতকে সত্য বলে স্বীকার করা। কেননা যিনি মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওতের স্বীকৃতি প্রদান, তাঁকে সত্যায়ন করা এবং তাঁর অনুসরণ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। অনুরূপ তিনি একই নির্দেশ ইঞ্জীল ও তাওরাতেও প্রদান করেছেন। তাওরাতের সত্যায়ন হল কুরআনের সত্যায়ন এবং কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার অর্থ হল তাওরাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।[১০]

উপরিউক্ত কারণেই তাদেরকে ঈমান আনা এবং তাঁকে (মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে) অনুসরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কুরআন তাদের বিশ্বাসের অনুকুলে, প্রতিকুলে নয়। আর কুরআন যখন তাদের (তাওরাত ও ইঞ্জীল) কিতাবের অনুরূপ কিতাব, বিপরীত নয়; তাহলে ঈমান আনয়ন করতে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। কেননা অন্যান্য রাসূলের মত তিনি (মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম))ও এটা নিয়ে আগমন করেছেন। আর এ কারণে তারাই ঈমান ও সত্যায়নের দিক থেকে অগ্রগামী। কেননা তারাই কিতাব ও ইলমের অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَکُمۡ ‘তোমাদের সাথে যা আছে তা (কুরআন) তারই সত্যতা প্রমাণকারী’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৪১)। আল্লাহ তা‘আলা এখানে ইঙ্গিত প্রদান করেছেন যে, তোমরা যদি ঈমান আনয়ন না কর, তাহলে তোমাদের মিথ্যারোপ তোমাদের উপর ফিরে যাবে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস সালাম), ঈসা (আলাইহিস সালাম) সহ অন্যান্য নবীর নিকট যা (অহী) অবতরণ করেছিলেন, নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপরও তাই অবতরণ করেছেন। আর তাঁকে মিথ্যারোপ করার অর্থ হল অন্যান্য নবী-রাসূলকেও মিথ্যারোপ করা।[১১] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مِنۡ  قَبۡلِہٖ کِتٰبُ مُوۡسٰۤی  اِمَامًا وَّ رَحۡمَۃً  وَ ہٰذَا کِتٰبٌ مُّصَدِّقٌ.

‘আর এর আগে ছিল মূসার কিতাব পথ প্রদর্শক ও রহমতস্বরূপ। আর এ কিতাব (তার) সত্যায়নকারী’ (সূরা আল-আহক্বাফ : ১২)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ اِذۡ قَالَ عِیۡسَی ابۡنُ  مَرۡیَمَ یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ  اِنِّیۡ  رَسُوۡلُ  اللّٰہِ  اِلَیۡکُمۡ مُّصَدِّقًا  لِّمَا بَیۡنَ  یَدَیَّ  مِنَ  التَّوۡرٰىۃِ وَ مُبَشِّرًۢا  بِرَسُوۡلٍ یَّاۡتِیۡ  مِنۡۢ  بَعۡدِی اسۡمُہٗۤ  اَحۡمَدُ  فَلَمَّا جَآءَہُمۡ  بِالۡبَیِّنٰتِ قَالُوۡا ہٰذَا  سِحۡرٌ  مُّبِیۡنٌ.

‘আর স্মরণ করুন, যখন মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা বলেছিলেন, হে বনী ইসরাঈল! নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব থেকে তোমাদের কাছে যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী এবং আমার পরে আহমাদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তার সুসংবাদদাতা’ (সূরা আছ-ছাফ্ফ : ৬)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

نَزَّلَ عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ بِالۡحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡہِ وَ اَنۡزَلَ التَّوۡرٰىۃَ وَ الۡاِنۡجِیۡلَ.

‘তিনি হক্ব সহ আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যতা প্রতিপাদনকারী এবং তিনি তাওরাত ও ইনজীল অবতীর্ণ করেছিলেন’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ৩)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ اٰمِنُوۡا بِمَاۤ اَنۡزَلۡتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَکُمۡ وَ لَا تَکُوۡنُوۡۤا اَوَّلَ کَافِرٍۭ بِہٖ  وَ لَا تَشۡتَرُوۡا بِاٰیٰتِیۡ ثَمَنًا قَلِیۡلًا  وَّ اِیَّایَ فَاتَّقُوۡنِ

‘এবং আমি যা অবতীর্ণ করেছি তৎপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তোমাদের সাথে যা আছে তা তারই সত্যতা প্রমাণকারী এবং এতে তোমরাই প্রথম অবিশ্বাসী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহের পরিবর্তে সামান্য মূল্য গ্রহণ করো না এবং তোমরা বরং আমাকেই ভয় কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৪১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ لَمَّا جَآءَہُمۡ کِتٰبٌ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَہُمۡ  وَ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ یَسۡتَفۡتِحُوۡنَ عَلَی الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا  فَلَمَّا جَآءَہُمۡ مَّا عَرَفُوۡا کَفَرُوۡا بِہٖ  فَلَعۡنَۃُ اللّٰہِ عَلَی الۡکٰفِرِیۡنَ

‘এবং যখন আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের নিকট যা আছে তার সত্যতা সমর্থক গ্রন্থ উপস্থিত হল এবং পূর্ব হতেই তারা কাফিরদের নিকট তা বর্ণনা করত, অতঃপর যখন তাদের নিকট সেই পরিচিত কিতাব আসল, তখন তারা তাকে অস্বীকার করে বসল। সুতরাং এরূপ কাফিরদের উপর আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হোক’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৮৯)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ اِذَا قِیۡلَ لَہُمۡ  اٰمِنُوۡا بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ قَالُوۡا نُؤۡمِنُ بِمَاۤ  اُنۡزِلَ عَلَیۡنَا وَ یَکۡفُرُوۡنَ بِمَا وَرَآءَہٗ  وَ ہُوَ الۡحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَہُمۡ   قُلۡ فَلِمَ تَقۡتُلُوۡنَ اَنۡۢبِیَآءَ اللّٰہِ مِنۡ قَبۡلُ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ

‘এবং যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা বিশ্বাস কর, তখন তারা বলে যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে আমরা তার প্রতি বিশ্বাস করি এবং তাছাড়া যা রয়েছে তা তারা অবিশ্বাস করে, অথচ এটা সত্য, তাদের সাথে যা আছে এটা তারই সত্যায়িতকারী; আপনি বলুন! যদি তোমরা বিশ্বাসীই ছিলে, তবে ইতিপূর্বে কেন আল্লাহর নবীগণকে হত্যা করেছিলে?’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৯১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلۡ مَنۡ کَانَ عَدُوًّا لِّجِبۡرِیۡلَ فَاِنَّہٗ نَزَّلَہٗ عَلٰی قَلۡبِکَ بِاِذۡنِ اللّٰہِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡہِ وَ ہُدًی وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ .

‘আপনি বলুন! যে ব্যক্তি জিবরীলের সাথে শত্রুতা রাখে তিনিই তো সে আল্লাহর আদেশে এ কুরআনকে আপনার অন্তঃকরণ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন, যে অবস্থায় তা স্বীয় পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা প্রমাণ করছে এবং কুরআন মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও সুসংবাদ’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৯৭)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ لَمَّا جَآءَہُمۡ  رَسُوۡلٌ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَہُمۡ نَبَذَ فَرِیۡقٌ مِّنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ  کِتٰبَ اللّٰہِ وَرَآءَ  ظُہُوۡرِہِمۡ کَاَنَّہُمۡ لَا  یَعۡلَمُوۡنَ .

‘এবং যখন আল্লাহর নিকট হতে তাদের নিকট যা আছে তার সত্যায়নকারী রাসূল তাদের নিকট আগমন করল, তখন যাদেরকে গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের একদল আল্লাহর গ্রন্থকে নিজেদের পশ্চাদ্ভাগে নিক্ষেপ করল, যেন তারা কিছ্ইু জানে না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১০১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ اٰمِنُوۡا بِمَا نَزَّلۡنَا مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَکُمۡ.

‘হে কিতাব প্রাপ্তগণ! তোমাদের সঙ্গে যা আছে তার সত্যতা সত্যায়নকারী যা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি তৎপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর’ (সূরা আন-নিসা : ৪৭)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الۡکِتٰبَ بِالۡحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡہِ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ مُہَیۡمِنًا عَلَیۡہِ.

‘আর আমরা এ কিতাব (কুরআন)-কে আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যা হক্বের সাথে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেরও সত্যতা প্রমাণকারী এবং ঐসব কিতাবের সংরক্ষকও’ (সূরা আল-মায়িদা : ৪৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ الَّذِیۡۤ  اَوۡحَیۡنَاۤ  اِلَیۡکَ  مِنَ الۡکِتٰبِ ہُوَ الۡحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡہِ 

‘আমরা আপনার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছি তা সত্য, এটা পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক’ (সূরা ফাতির : ৩১)।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬২।
[২]. প্রাগুক্ত।
[৩]. আবূ বকর আল-জাযাইরী, আইসারুত তাফাসীর লি কালামিল ‘আলিয়্যিল কাবীর (মদীনা : মাকতাবাতুল ‘উলূম, ৫ম সংস্করণ, ১৪২৪ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯।
[৪].  رَیۡبَ-শব্দটিকে আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে বহু অর্থে ও বহু স্থানে ব্যবহার করেছেন। যেমন- (১). মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত : আল্লাহ তা‘আলা মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত মানুষের জন্য স্থির করেছেন এক নির্দিষ্ট কাল, যাতে কোন সন্দেহ নেই-দ্র. সূরা বানী ইসরাঈল : ৯৯। (২). পুনরুত্থান : পুনরুত্থান সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই-দ্র. সূরা আল-হজ্জ : ৫। (৩). ক্বিয়ামত : আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিনে সকল মানুষকে একত্রিত করবেন, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই- দ্র. সূরা আলে ‘ইমরান : ৯, ২৫; সূরা আন-নিসা : ৮৭; সূরা আল-আন‘আম : ১২; সূরা আল-কাহফ : ২১; সূরা আল-হজ্জ : ৭; সূরা আল-মুমিন : ৫৯।
[৫]. জামি‘ঊল বায়ান ফী তা‘বীলিল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ২২৯।
[৬]. আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ শামসুদ্দীন আল-কুরতুবী, আল-জামিঊ লি-আহকামিল কুরআন (রিয়াদ : দারু ‘আলিমিল কুতুব, ১৪২৩ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫৭।
[৭]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৬৭।
[৮]. প্রাগুক্ত।
[৯]. আল-ইমামুল হাফিয আবূ মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান ইবনু আবী হাতিম আর-রাযী, তাফসীর ইবনে আবী হাতিম (বৈরূত : আল-মাকতাবাতুল ‘আছারিয়্যা), ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৬; তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৪৩।
[১০]. জামি‘ঊল বায়ান ফী তা‘বীলিল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৯৯।
[১১]. তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান, পৃ. ৫০।




প্রসঙ্গসমূহ »: আমল কুরআনুল কারীম
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
বিদায় হজ্জের ভাষণ : তাৎপর্য ও মূল্যায়ন (শেষ কিস্তি) - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৯ম কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
চোগলখোরী করা ও তার পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
মাযহাবী গোঁড়ামি ও তার কুপ্রভাব (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : রিদওয়ান ওবাইদ
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
বিদ‘আত পরিচিতি (৯ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারী - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (১৫তম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ইসলামে কথা বলার নীতি : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ

ফেসবুক পেজ