বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন

সুন্নাতের রূপরেখা

-মাইনুল ইসলাম মঈন*


(৩য় কিস্তি)

পবিত্র কুরআনের আলোকে সুন্নাহর গুরুত্ব

কুরআনে এমন অনেক আয়াত রয়েছে, যা স্পষ্ট নির্দেশ করে যে, মুমিনদের জন্য সুন্নাহ অনুসরণ করা ফরয। কোন মুসলিমের পক্ষে উক্ত আয়াতগুলোর অস্বীকার করা সম্ভব নয়। কুরআনে এ আয়াতগুলোর সংখ্যা এতই বেশি যে, তা ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। নিম্নে আয়াতগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিন্যস্ত করে আলোচনা করা হল :

ক). নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আনুগত্য করার নির্দেশ

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡہُ اِلَی اللّٰہِ وَ الرَّسُوۡلِ  اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ  ذٰلِکَ خَیۡرٌ  وَّ  اَحۡسَنُ  تَاۡوِیۡلًا

‘হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর, তবে আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং যারা তোমাদের মধ্যে কর্তৃত্বের অধিকারী তাদের মান্য কর। তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতভেদ ঘটলে তা আল্লাহ ও রাসূলের কাছে পেশ কর। এটাই উত্তম এবং পরিণামে সর্বোৎকৃষ্ট’ (সূরা আন-নিসা : ৫৯)।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু আবিল ইয আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

 كَيْفَ قَالَ {وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ} وَلَمْ يَقُلْ وَأَطِيْعُوْا أُوْلِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ؟ لِأَنَّ أُوْلِي الْأَمْرِ لَا يُفْرَدُوْنَ بِالطَّاعَةِ بَلْ يُطَاعُوْنَ فِيْمَا هُوَ طَاعَةٌ لِلهِ وَرَسُوْلِهِ. وَأَعَادَ الْفِعْلَ مَعَ الرَّسُوْلِ لِأَنَّ مَنْ يُطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ فَإِنَّ الرَّسُوْلَ لَا يَأْمُرُ بِغَيْرِ طَاعَةِ اللهِ بَلْ هُوَ مَعْصُوْمٌ فِيْ ذَلِكَ وَأَمَّا وَلِيُّ الْأَمْرِ فَقَدْ يَأْمُرُ بِغَيْرِ طَاعَةِ اللهِ فَلَا يُطَاعُ إِلَّا فِيْمَا هُوَ طَاعَةٌ لِلهِ وَرَسُوْلُهُ

‘ভেবে দেখুন! আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,  {وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ} অর্থাৎ রাসূলের আনুগত্য কর, এমনটি বলেননি যে, وَأَطِيْعُوْا أُوْلِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ অর্থাৎ উলুল আম্রের আগে أَطِيْعُوْا (আনুগত্য কর) শব্দটি উল্লেখ করেননি। যেমন করেছেন الرَّسُوْلَ শব্দের পূর্বে। কেননা স্বতন্ত্রভাবে শাসকদের আনুগত্য করা যাবে না। বরং যেখানে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য আছে, কেবল সেখানেই শাসকদের আনুগত্য করতে হবে। الرَّسُوْلَ এর সাথে أَطِيْعُوْا ফেল (ক্রিয়া) পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। কেননা যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর আনুগত্যের আদেশ ছাড়া অন্য কোন আদেশ করেন না। তিনি এতে মাছূম বা নিষ্পাপ। আর শাসকগণের বিষয়টি ভিন্ন। তারা আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে অন্য বিষয়েও আদেশ করেন। সুতরাং শুধু সে ক্ষেত্রেই তাদের আনুগত্য করতে হবে, যেখানে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য রয়েছে’।[১]

فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ (কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

أن قوله "فإن تنازعتم في شيء" نكرة في سياق الشرط تعم كل ما تنازع فيه المؤمنون دقه وجله جليه وخفيه

‘এই আরবী বাক্যাংশ অনির্দিষ্টবাচক। ‘কোন বিষয়’ শব্দটি একটি শর্ত হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে ব্যাপারটা সাধারণভাবে সকল বিষয়ে প্রযোজ্য বলে বোঝা যায়; অর্থাৎ মুসলিমরা দ্বীন সংক্রান্ত ছোট অথবা বড় যে বিষয়েই মতবিরোধ পোষণ করবে, তার সবকিছুকেই আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহর কাছে নিয়ে যাবে’।[২] তিনি আরো বলেন,

"فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ" ولم يقل وإلى الرسول. فإن الرد إلى القرآن رد إلى الله والرسول فما حكم به الله تعالى هو بعينه حكم رسوله وما يحكم به الرسول صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هو بعينه حكم الله. فادا رددتم إلى الله ما تنازعتم فيه يعني كتابة فقد رددتموه إلى رسوله. وكذلك إذا رددتموه إلى رسوله فقد رددتموه إلى الله وهذا من أسرار القرآن من هم أولي الأمر

‘উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ বলেন, "فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ" (আল্লাহ ও রাসূলের কাছে উপনীত কর)- কিন্তু ‘আল্লাহর কাছে এবং তাঁর রাসূলের কাছে উপস্থিত কর’, এভাবে বলেননি (অর্থাৎ ‘কাছে’ শব্দটি কেবল একবারই ব্যবহৃত হয়েছে)। বাক্যটা এভাবে গঠনের কারণ হল, কুরআনের কাছে নিয়ে যাওয়া মানেই আল্লাহ ও রাসূলের কাছে নিয়ে যাওয়া। অতএব আল্লাহর সিদ্ধান্ত ঠিক তাই, যা তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সিদ্ধান্ত। আর আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সিদ্ধান্ত নেন, তাই হচ্ছে আল্লাহর সিদ্ধান্ত। সুতরাং কোন একটা বিষয়ে মতবিরোধ পোষণ করলে মুসলিমরা যখন তা সমাধান করার জন্য আল্লাহর (কিতাবের) কাছে নিয়ে যায়, তখন তারা কার্যত তা তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছেই নিয়ে যায়। আবার যখন তারা কোন বিষয়কে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর  কাছে উপস্থিত করে, তখন তারা আসলে সেটাকে আল্লাহর কাছেই উপস্থিত করল। পবিত্র কুরআনে যে সমস্ত সূক্ষ্ম ও সুচারু অভিব্যক্তি দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলোরই এটি একটি অন্যতম নিদর্শন’।[৩]

খ). রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা দেন তা গ্রহণ করা ও যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مَاۤ  اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ  فَخُذُوۡہُ  وَ مَا نَہٰىکُمۡ  عَنۡہُ فَانۡتَہُوۡا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর আর যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর’ (সূরা আল-হাশর : ৭)।

‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ লা‘নত করেছেন ঐ সমস্ত নারীর প্রতি যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকন করে, নিজ শরীরে উল্কি অংকন করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভুরু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। সে সব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি আনয়ন করে। এরপর বানী আসাদ গোত্রের উম্মু ইয়াকূব নামের এক মহিলার কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে সে এসে বলল, আমি জানতে পারলাম, আপনি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি লা‘নত করেছেন। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার প্রতি লা‘নত করেছেন, আল্লাহর কিতাবে যার প্রতি লা‘নত করা হয়েছে, আমি তার প্রতি লা‘নত করব না কেন? তখন মহিলা বলল, আমি দুই ফলকের মাঝে যা আছে তা (পূর্ণ কুরআন) পড়েছি। কিন্তু আপনি যা বলেছেন, তা তো এতে পাইনি। ‘আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, যদি তুমি কুরআন পড়তে তাহলে অবশ্যই তা পেতে, তুমি কি পড়নি? ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক’ (সূরা আল-হাশর : ৭)। মহিলাটি বলল, হ্যাঁ নিশ্চয় পড়েছি। তখন ‘আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তখন মহিলা বলল, আমার মনে হয় আপনার পরিবারও এ কাজ করে। তিনি বললেন, তুমি যাও এবং ভালমত দেখে এস। এরপর মহিলা গেল এবং ভালভাবে দেখে এল। কিন্তু তার দেখার কিছুই দেখতে পেল না। তখন ‘আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, যদি আমার স্ত্রী এমন করত, তবে সে আমার সঙ্গে একত্র থাকতে পারত না।[৪]

এই আয়াতটি সুনির্দিষ্টভাবে যুদ্ধের গনীমতের মালের কারণে নাযিল হলেও কোন আলেমই এ ব্যাপারে শর্ত জুড়ে দেননি যে, আয়াতটি শুধু যুদ্ধের গনীমতের মালের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

ইবনু জুরায়েয (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, এর অর্থটা বরং সাধারণ- রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা তোমাদের আদেশ করেন তা অবশ্যই করতে হবে, তিনি তোমাদের জন্য যা নিষেধ করেন তা অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, وَالْحَقُّ أَنَّ هَذِهِ الْآيَةَ عَامَّةٌ فِيْ كُلِّ شَيْءٍ يَأْتِيْ بِهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَمْرٍ أَوْ نَهْيٍ أَوْ قَوْلٍ أَوْ فِعْلٍ ‘এই আয়াতের কথাগুলো সাধারণভাবে প্রযোজ্য। আয়াত নাযিলের পিছনের ঘটনা আয়াতের অর্থকে সীমাবদ্ধ করে দেয় না। বরং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে আসা সকল নিয়ম, আদেশ বা নিষেধ এবং কথা ও কর্মের বেলায় তা প্রযোজ্য’।[৫]

আল্লাহ তা‘আলা সূরা আল-হাশরের আয়াতটি, اَنَّ اللّٰہَ  شَدِیۡدُ  الۡعِقَابِ (আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর) এই কথা দ্বারা সমাপ্তি ঘটিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। ড.  হুসাইন শাওয়াত্ব বলেন,

دلت الآية على أن من لم يأتمر بأمر السنة ولم ينته عما نهت عنه فإنه يعذب أشد العذاب ولا يكون هذا العقاب الشديد إلا في حق الكافرين

‘এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়, যে ব্যক্তি সুন্নাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করে না এবং তার নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকে না, সে কাফির হওয়ার দরুন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে, কেননা এ ধরনের শাস্তির হুমকি কেবল কাফিরের জন্যই হতে পারে’।[৬]

গ). রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য করলে আল্লাহর আনুগত্য করা হয়

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,مَنۡ یُّطِعِ الرَّسُوۡلَ فَقَدۡ اَطَاعَ اللّٰہَ  وَ مَنۡ تَوَلّٰی  فَمَاۤ  اَرۡسَلۡنٰکَ عَلَیۡہِمۡ حَفِیۡظًا ‘কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল এবং কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে, আপনাকে আমরা তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে পাঠাইনি’ (সূরা আন-নিসা : ৮০)।

এই আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছেন যে, আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চেয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি আনুগত্যকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। আয়াতটি এতই পরিষ্কার যে, একে অন্য কোনভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। আল্লামা ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

لَا عَلَيْكَ مِنْهُ إِنْ عَلَيْكَ إِلَّا الْبَلَاغُ فَمَنْ تَبِعك سَعِد وَنَجَا وَكَانَ لَكَ مِنَ الْأَجْرِ نَظِيْرُ مَا حَصَلَ لَهُ وَمَنْ تَوَلَّى عَنْكَ خَابَ وَخَسِرَ وَلَيْسَ عَلَيْكَ مِنْ أَمْرِهِ شَيْءٌ

‘তোমার কাজ তো শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। ভাগ্যবান ব্যক্তি মেনে নেবে এবং মুক্তি ও পুণ্য লাভ করবে। তবে তাদের ভাল কাজের পুণ্য তুমিও লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি মানবে না সে হতভাগা। সে নিজের ক্ষতি নিজেই করবে। তাদের পাপ তোমার উপর হবে না’।[৭]

হাদীছে এসেছে,مَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ رَشِدَ وَمَنْ يَعْصِهِمَا فَقَدْ غَوَى ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য করল সে সঠিক পথ পেল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতা করল ও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অবাধ্যতা করল, সে পথভ্রষ্ট হল’।[৮] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,مَنْ أَطَاعَنِىْ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِىْ فَقَدْ عَصَى اللهَ ‘যে আমাকে মান্য করল, সে আল্লাহকে মান্য করল। আর যে আমাকে অমান্য করল, সে আল্লাহকে অমান্য করল’।[৯] অর্থাৎ নবীর আদেশ অথবা সুন্নাহ অনুসরণ না করা এবং আল্লাহর আদেশ মোতাবেক না চলা উভয় সমান কথা। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

أَنَّ طَاعَةَ الرَّسُوْلِ طَاعَةٌ لِلهِ، ...... أَنَّ الرَّسُوْلَ لَا يَأْمُرُ إِلَّا بِمَا أَمَرَ اللهُ بِهِ وَلَا يَنْهَى إِلَّا عَمَّا نَهَى اللهُ عَنْهُ

‘এই আয়াত প্রমাণ করে যে, নবী কারীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য মানেই আল্লাহরই আনুগত্য।........ আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন নির্দেশ দেন না এবং আল্লাহ নিষেধ না করা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন বিষয়ে নিষেধ করেন না’।[১০]

ঘ). নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি আনুগত্যের শপথ করা মানে আল্লাহর আনুগত্যের শপথ করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اِنَّ  الَّذِیۡنَ یُبَایِعُوۡنَکَ  اِنَّمَا یُبَایِعُوۡنَ اللّٰہَ  یَدُ اللّٰہِ  فَوۡقَ  اَیۡدِیۡہِمۡ فَمَنۡ  نَّکَثَ فَاِنَّمَا یَنۡکُثُ عَلٰی نَفۡسِہٖ  وَ مَنۡ  اَوۡفٰی بِمَا عٰہَدَ عَلَیۡہُ اللّٰہَ  فَسَیُؤۡتِیۡہِ  اَجۡرًا عَظِیۡمًا

‘যারা আপনার হাতে বাই‘আত করে, তারা তো আল্লাহরই হাতেই বাই‘আত করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতঃপর যে তা ভঙ্গ করে, তা ভঙ্গ করার পরিণাম তারই, আর যে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ করে তিনি (আল্লাহ) অবশ্যই তাকে মহা পুরস্কার দেন’ (সূরা আল-ফাতহ : ১০)।

সুতরাং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বাই‘আত করা মানেই আল্লাহর কাছে বাই‘আত করা। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য আর আল্লাহর আনুগত্য একই বিষয়।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* এম.ফিল গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়;  শিক্ষক, মহব্বতপুর দারুল উলূম আলিম মাদরাসা, মোহনপুর, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছদরুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবন আলাউদ্দীন আলী ইবন মুহাম্মাদ ইবনে আবিল ইয আল হানাফী, শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বাহাবিয়্যাহ (বৈরূত : মুওয়াসাসাতুর রিসালাহ, ১০ম সংস্করণ, ১৪১৭ হি./১৯৯৭ খ্রি), ২য় খণ্ড, পৃ. ৫৪৩।
[২]. হুজিয়্যাতুস সুন্নাহ্, পৃ. ৩০১।
[৩]. ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওয্যিহ, আর রিসালাতুত্ তাবুকিয়্যাহ্ (জেদ্দা : মাকতাবাতুল মাদানী, তা.বি.), পৃ. ৪১; আলী আছ-ছালেহী, আয-যূউল-মুনির আলাত তাফসীর (রিয়াদ : মুওয়াসাসাতুন নূর লিত তবা‘আতে ওয়াত তাজলীদ, তা.বি.), পৃ. ২৩৫।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৮৮৬, ৪৮৮৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২১২৫; আবূ দাউদ, হা/৪১৬৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৯৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪২৩০; মুখতাসার তাফসীর ইবনে কাছীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৭২-৪৭৩; ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া, তাফসীরে জাকারিয়া (বাদশাহ্ ফাহ্দ কুরআন মুদ্রন কমপ্লেক্স, তা.বি.) ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬০৭।
[৫]. মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ আশ-শাওকানী, ফাৎহুল ক্বাদীর (বৈরূত : দারু ইবনু কাছীর, ১ম সংস্করণ, ১৪১৪ হি.), ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৩৬।
[৬]. ড. হুসাইন শাওয়াত্ব, হুজিয়্যাতুস সুন্নাহ ওয়া তারীখুহা (হুকুত তবা‘আ মাহফূজাতু লিল জামি‘আতি আমরিকিয়্যাহ্ আল-আরামিয়্যাহ, ১৪২৫ হি/২০০৪ খ্রি.), পৃ. ২৫২।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮৭০, মুহাম্মাদ আলী আছ-ছাবুনী, মুখতাছার তাফসীরে ইবনে কাছীর, (বৈরূত : দারুল কুরআনিল কারীম, ৭ম সংস্করণ, ১৪০২ হি./১৯৮১ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৪১৬।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮৭০।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৭১৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩; নাসাঈ, হা/৪১৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪২৮।
[১০] ফাতহুল ক্বাদীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৬৫।




প্রসঙ্গসমূহ »: সুন্নাত
মুসলিম বিভক্তির কারণ ও প্রতিকার (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ঈদুল ফিতরে করণীয় ও বর্জনীয় - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
মাদক : সুশীল সমাজ ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
গাযওয়াতুল হিন্দ : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ - হাসিবুর রহমান বুখারী
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম) -এর আগমন সংশয় নিরসন (৬ষ্ঠ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ১১ রাক‘আতের নির্দেশ দিয়েছিলেন (শেষ কিস্তি) - ব্রাদার রাহুল হোসেন (রুহুল আমিন)
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৯ম কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
হজ্জ ও ওমরাহ সম্পর্কে প্রচলিত বিদ‘আতসমূহ (শেষ কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
সর্বশ্রেষ্ঠ আমল - হাফেয আবূ তাহের বিন মজিবুর রহমান
মসজিদ: ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান

ফেসবুক পেজ