ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ
-ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন*
(১১তম কিস্তি)
‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পুত্র মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ বলেন,
قُلْتُ لِأَبِيْ أَيُّ النَّاسِ خَيْرٌ بَعْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ قُلْتُ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ ثُمَّ عُمَرُ وَخَشِيْتُ أَنْ يَقُوْلَ عُثْمَانُ قُلْتُ ثُمَّ أَنْتَ؟ قَالَ "مَا أَنَا إِلَّا رَجُلٌ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ
‘আমি আমার পিতা ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বললাম, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর কোন্ ব্যক্তি সর্বোৎকৃষ্ট? তিনি বললেন, আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। আমি বললাম, অতঃপর কে? তিনি বললেন, অতঃপর ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। পরে আবার তিনি ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নাম উল্লেখ করে ফেলেন কিনা এজন্য ইতস্তত বোধ করে আমি বললাম, তারপর কি আপনি? তিনি বললেন, ‘আমি তো মুসলিমদের মধ্যে একজন ব্যক্তি ছাড়া আর কিছু নই!”[১]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَعِدَ أُحُدًا وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ، فَرَجَفَ بِهِمْ فَقَالَ اثْبُتْ أُحُدُ! فَإِنَّمَا عَلَيْكَ نَبِيٌّ وَصِدِّيْقٌ وَشَهِيْدَانِ
আনাস বিন মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু), ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একদিন উহুদ পর্বতের উপর উঠলেন। তখন উহুদ পর্বত তাঁদের নিয়ে কাঁপা শুরু করে দিল। এ সময় নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হে উহুদ! স্থির হও! তোমার উপর একজন নবী, একজন ছিদ্দীক ও দু’জন শহীদ আছেন’।[২] এ হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বীয় কন্ঠে আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যে ছিদ্দীক্ব এবং ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যে, সর্বোচ্চ মর্যাদাবান শহীদগণের অন্তর্গত- তা পরিষ্কারভাবে ঘোষিত হয়েছে। তাঁরা সবাই যে হক্ব খলীফাহ্ ও তাঁদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীরা যে পাপী ও অপরাধী তা ফুটে উঠেছে। শেষোক্ত দুই খলীফাহ’র বিষয়ে ঘৃণা উদ্রেককারী ও তাঁদের হত্যাকারীরা যে ভ্রষ্টাচারী ও কুপথের পথিক তাও জানান দেয়া হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত। ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
حَسِبْتُ إِنِّيْ كُنْتُ كَثِيْرًا أَسْمَعُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ ذَهَبْتُ أَنَا وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ وَدَخَلْتُ أَنَا وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ،وَخَرَجْتُ أَنَا وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ
‘আমার মনে পড়ে যে, আমি বহুবার নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমি, আবূ বাকর ও ‘উমর গিয়েছি; আমি, আবূ বাকর ও ‘উমার প্রবেশ করেছি, আমি, আবূ বাকর ও ‘উমার বের হয়েছি’।[৩] অর্থাৎ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অধিকাংশ সময়ের ও কাজের সঙ্গী যে, আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু), ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)- তা এ বক্তব্য থেকে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠে।
পরবর্তী খলীফাহ্ মনোনয়নের ক্ষেত্রে খুলাফায়ে রাশেদীনের প্রত্যেক খলীফাহ্ই নিজ সন্তানাদি ও পরিবারের সদস্যদেরকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এড়িয়ে গেছেন।[৪] তাই বলে যোগ্য পারিবারিক সদস্য যথাযথ সমর্থন নিয়ে নেতৃত্ব পেলে তা অবৈধ হবে- এ কথা বলা যাবে না। কিন্তু ইসলামী নেতৃত্বের সাধারণ নিয়ম-পদ্ধতি, গতিবিধি ও প্রাণ-শক্তি (Spirit) হল-পারতঃপক্ষে পরিবারতান্ত্রিকতাকে এড়িয়ে চলা। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যথাযথ জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচিত খলীফাহ্ ছিলেন। যার বিস্তারিত বিবরণ ছহীহ্ বুখারী সহ হাদীছের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এবং ইতিহাসের গ্রন্থাবলীতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যুর সময় যথাযোগ্য লোকদের সাথে পরামর্শপূর্বক নির্দ্বিধায় ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে তাঁর পরবর্তী খলীফাহ্ হিসাবে মনোনয়ন দিয়ে যান এবং বলেন, ‘হে জনগণ! আমি আমার জানা মতে উত্তম ব্যক্তিকে খলীফাহ্ মনোনয়ন করে গেলাম যিনি আমার আত্মীয় নন। অতঃপর তাঁকে জনগণ অকুণ্ঠভাবে সমর্থন করেন ও বাই‘আত করেন।[৫] আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মৃত্যুশয্যার সময় ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ১৫ দিন মসজিদে নববীতে জামা‘আতে ছালাতের ইমামত করেছেন।[৬]
এ বিষয়ে প্রখ্যাত আলেম ও আহলে হাদীছ নেতা আল্লামাহ্ আব্দুল্লাহেল কাফী (রহ) উল্লেখ করেছেন, ‘তাঁহাকেই (উমর ফারূক্কে) খলীফা রূপে গ্রহণ করাইবার জন্য তিনি (আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)) জনমত গঠন করিয়াছিলেন এবং সকল প্রকার মতানৈক্যের অবসান ঘটাইবার পর তিনি তাঁহার নাম ঘোষণা করেন।”[৭]
উল্লেখ্য, ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কর্তৃক ঘোষিত মজলিসে শূরার (পরামর্শ পরিষদ/কমিটি) ছয় সদস্যের মধ্যে ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন অন্যতম প্রধান সদস্য। সুতরাং ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বিচক্ষণতা, পক্ষপাতহীনতা ও ইনছাফ এখানে সুস্পষ্ট। এ শূরা-কমিটির সদস্য আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তৎকালীন সময়ে জাতীয় ও সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্বাচন প্রক্রিয়া যথার্থভাবে কার্যকর করার জন্য যে নিঃস্বার্থতা, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা, আমানতদারীর পরিচয় দিয়েছেন এবং জনমত যাচাইয়ের লক্ষ্যে দিন-রাত নিরলসভাবে যে কঠোর শ্রম ব্যয় করেছেন, তা দুনিয়ার শুদ্ধ ও সঠিক নির্বাচনের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত ও অনুকরণীয় আদর্শ। অতঃপর উৎকৃষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ও সর্বমহলের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তৃতীয় খলীফাহ্ নির্বাচিত হন[৮] এবং তিনি নিজে মৃত্যুর সময় পরবর্তী খলীফাহ্ হওয়ার জন্য তাঁর কোন সন্তান বা নিকট আত্মীয়ের নাম প্রস্তাব বা ইশারাও করে যাননি।
অতঃপর ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জনগণের দাবি অনুযায়ী খলীফাহ্ হন এবং তাঁর পরবর্তী খলীফাহ্ হিসাবে নিজ সন্তানাদির কারো কারো নাম প্রস্তাব করে যাননি বা সেদিকে ইঙ্গিতও করেননি কিংবা সে জন্য কারো পক্ষে ক্ষেত্রও প্রস্তুত করে যাননি; বরং বলেছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা উম্মতের এখতিয়ারের জন্য উম্মুক্ত রেখে গেছেন; তাই আমি কারো নাম প্রস্তাব করছি না। ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে মৃত্যু শয্যায় তাঁকে জনগণ বললেন, اِسْتَخلِفْ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ ‘হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি আপনার পরবর্তী খলীফাহ্ মনোনীত করে যান’।
فقال لا و لكنْ أدَعُكُم كما تَركَكُم رسولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يعني بِغيرِ اسْتِخلاف .فإن يُرد اللهُ بكم خيراً يَجمَعُكم على خيرِكم كما جمَعكُم على خيرِكُم بَعدَ رسولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
‘উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘না’, বরং যেভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাদেরকে রেখে গিয়েছিলেন, আমি সেভাবেই রেখে যেতে চাই অর্থাৎ খলীফাহ্ মনোনীত না করে। যদি আল্লাহ আপনাদের কল্যাণ করতে চান, তাহলে যিনি আপনাদের মধ্যে উত্তমতার নেতৃত্বে আপনাদেরকে একতাবদ্ধ করবেন; যেমন একতাবদ্ধ করেছিলেন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর অপনাদের মধ্যে যিনি উত্তম তাঁর নেতৃত্বে (আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নেতৃত্বে)’।[৯]
খুলাফায়ে রাশেদীন চতুষ্টয়ের কাউকেই পরবর্তী নেতৃত্বের ব্যাপারে সামান্যতম সমালোচনার বিষয়ে পরিণত করার তিলমাত্র অবকাশ নেই। উল্লেখ্য, খুলাফায়ে রাশেদীন পূর্ণাঙ্গ যোগ্যতার অধিকারী ও সর্ববিষয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন; তাঁদের প্রত্যেকের প্রতি জনগণের অকুুণ্ঠ শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ও সমর্থন ছিল। দৃশ্যতঃ কোন সমস্যা যদি দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে সেটা ছিল নিছক সাময়িক ভুল বুঝাবুঝি কিংবা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির কারণে বা উদ্ভূত পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অথবা বিশেষ প্রশাসনিক বিষয়ে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, সর্বোচ্চ ইমাম হবে কুরাইশ থেকে। যদিও বিশেষ প্রয়োজনে ও যথাযোগ্য কুরাইশী দুষ্প্রাপ্য হলে অ-কুরাইশীও সর্বোচ্চ নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হতে পারেন। (এ বিষয়ে আলোচনা ইতঃপূর্বে হয়েছে।) কিন্তু তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেননি যে, সর্বোচ্চ নেতৃত্ব কুরাইশ বংশের শাখা তাঁর নিজস্ব গোত্র হাশেমী গোত্র থেকে হতে হবে। সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বিষয়টি কারো পুত্রতো দূরস্থান নিজের গোত্রের মধ্যেও সীমাবদ্ধ করা হয়নি। দেখা যাচ্ছে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুত্যুর পর ১ম, ২য় ও ৩য় খলীফাহ্ যথাক্রমে আবূ বাকর ছিদ্দীক্ (রাযিয়াল্লাহু আনহু), ‘উমার ফারূক্ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও ‘উছমান গনী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এনাদের কেউ হাশেমী গোত্রের লোক নন, যদিও কুরাইশ বংশের। একমাত্র ৪র্থ খলীফাহ্ আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হাশেমী গোত্রের লোক। আবূ বাকর ইবনু আবী কুহাফাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বংশগতভাবে কুরাইশী কিন্তু গোত্রীয় দিক থেকে ‘তাইম’ গোত্রের লোক- ‘তাইমী’। ‘উমার বিন খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বংশগতভাবে কুরাইশী কিন্তু গোত্রীয় দিক থেকে ‘আদী’ গোত্রের লোক- ‘আদাভী’। ‘উছমান বিন ‘আফ্ফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বংশগতভাবে কুরাইশী কিন্তু গোত্রীয় দিক থেকে ‘উমাইয়্যাহ্’ গোত্রের লোক - ‘উমাভী’।
উল্লেখ্য, আরাবী ব্যাকরণের দিক থেকে শুদ্ধ উচ্চারণ হল ‘কুরাশী’ কিন্তু যেহেতু ‘কুরাইশী’ শব্দটি বেশি প্রচলিত তাই ‘কুরাইশী’ লেখা হচ্ছে। সর্বোচ্চ আমীরের পদ যে হাশেমী গোত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় সে প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন,
ولا أن يكون من بني هاشم فقط دون غيرهم من قريش؛ فإن الإجماع قد انعقد على إمامة أبي بكر وعمر وعثمان وليسوا من بني هاشم
‘সর্বোচ্চ ইমাম কুরাইশ বংশ থেকে হতে হবে, (যদিও তাতে বিতর্ক ও বিভিন্ন প্রসঙ্গ রয়েছ) তবে হাশেমী গোত্র ছাড়া কুরাইশ বংশের অন্য কোন গোত্র থেকে হতে পারবে না- এমন কোনো শর্ত নেই’।[১০] এ বিষয়ে ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন,
وأن يكون قرشيًا على الصحيح ولا يشترط الهاشمي ولا المعصوم من الخطأ، خلافًا لغلاة الروافض
‘মতবিরোধের পরে শুদ্ধ মত এই যে, সর্বোচ্চ ইমামকে (সহজপ্রাপ্য হলে) কুরাইশ বংশ থেকে হতে হবে, তবে শুধু হাশেমী গোত্র থেকে হতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই। তাকে সকলপ্রকার গুনাহ থেকে মা‘ছূম তথা নিষ্পাপ হতে হবে- এমন শর্তও নেই, অতি উগ্রবাদী রাফেযী-শী‘আরা এর বিরোধিতা করেছে, (অর্থাৎ তাদের মিথ্যা দাবি অনুযায়ী তাঁকে নিষ্পাপ হতে হবে)’।[১১]
সর্বোচ্চ জাতীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথাযথ যোগ্যতা ও গুণাবলীর আলোকে[১২] গণ-পরিধি অনেকটা ব্যাপক ও বিস্তৃত থাকার মধ্যে যথেষ্ট হিকমত, তাৎপর্য ও শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, যা মুসলিম সমাজের চিন্তাবিদ ও দায়িত্বশীলদের অত্যন্ত গুরুত্ব ও সতর্কতার সাথে অনুধাবন করা উচিত। কোনো গোত্রকে বা পরিবারকে নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করা জরুরী নয় বরং যথাযথ নেতৃত্বের জন্য যদি কোনো গোত্র বা পরিবার প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায় ও ইতিবাচক কাজে লাগে তাহলে তা বিবেচ্য বিষয়। নির্দিষ্ট গোত্রের মধ্যে নেতৃত্বকে সীমাবদ্ধ না করার হিকমত ও তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম আলেম ও চিন্তাবিদ শাহ্ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
وإنَّما لَم يَشتَرِطْ كَوْنه هاشميًا مثلًا لِوَجْهَين: ألّا يَقعَ الناسُ في الشكِّ فيَقُولُوا إنَّما أرادَ ملْكَ أهلِ بَيتِهِ كَسائِرِ المُلوكِ؛ فيَكُونُ سَبباً لِلاِرتِداد. ولِهذه العِلَّة لَم يعط النَّبيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المِفتاح لِعبّاس بن عبدِ المُطَّلِب
والثاني: أنّ المُهِمَّ في الخلِافةِ رِضا الناسِ وَاجْتِماعِهم عَليه وتَوقِيرِهم إيَّاه أن يُقيمَ الحُدود ويُناضلَ دُونَ المِلَّةِ ويُنَفِّذَ الأحكامَ. وَاجْتِماعُ هذِه الأُمور لا يَكونُ إلا في وَاحدٍ بَعدَ وَاحِد. وفي اشْتِراطِ أنْ يَكونَ من قَبيلَةٍ خاصَّة تَضيِيْقٌ وحَرَج؛ فرُبَّما لَم يَكُنْ في هذه القَبيلَة من تَجتَمِعُ فيه الشُّروطُ وكان في غيرِها. ولِهذه العِلَّةِ ذَهبَ الفُقَهاءُ إلى المَنعِ عن اشْتِراطِ كَونِ المُسَلَّم فيه مِن قَريَةٍ صَغيرة، وجَوَّزوا كَونه من قَرية كَبيرة
‘(খলীফাহ্ তথা সর্বোচ্চ নেতৃত্বের জন্য শর্তের মধ্যে এটিও একটি যে, তাকে কুরাইশী হতে হবে... (এ ক্ষেত্রে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বৃৃহত্তর বংশ কুরাইশ বংশের কথা আছে); তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বীয় গোত্র হাশেমী গোত্রের শর্তের কথা (আলেমগণ) বলেননি; এবং তা দু’টি কারণে:
প্রথমতঃ যাতে জনগণ এই সন্দেহের মধ্যে পতিত না হয় যে, তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্বীয় গোত্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। আর তাই তিনি মাক্কাহ্ বিজয়ের সময় কা‘বা ঘরের চাবি স্বীয় চাচা ‘আব্বাস (বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশেম)-কে দেননি; (বরং তা ‘উছমান বিন ত্বালহার কাছেই ফেরত দিয়েছেন, যিনি কুরাইশ বংশের হলেও হাশেমী গোত্রের নন)।
দ্বিতীয়তঃ আর খিলাফতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল খলীফাহ্’র প্রতি জনগণের সন্তুষ্টি, তাঁর সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, তাঁকে যথেষ্ট সম্মান সমীহ করা। আর তাঁর কর্তব্য হল নির্ধারিত দণ্ডবিধি কার্যকর করা, জাতির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংগ্রাম করা এবং শরী‘আতের হুকুম আহকাম বাস্তবায়িত করা। আর এ সকল কিছু বিভিন্ন গোত্রের বিভিন্ন জনের মধ্যে একের পর এক পাওয়া যায় (সব সময় একই গোত্রের লোকের মধ্যে পাওয়া যায় না।) তদুপরি একটি বিশেষ গোত্রের মধ্যে এ দায়িত্ব সীমাবদ্ধ করে দিলে তা প্রাপ্য হওয়া সুকঠিন ও কষ্টকর হয়ে পড়বে; হতে পারে সে গোত্রের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মধ্যে এ সকল শর্তের সমাহার ঘটবে বরং তা অন্য গোত্রের কারো মধ্যে পাওয়া যাবে’।[১৩] (এ বিষয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনা ইতঃপূর্বে করা হয়েছে)।
দুঃখজনক ও লজ্জাকর হলেও সত্য যে, অনেক সময় ধর্মীয় নেতাদের মধ্যেও যেন কেমন নেতৃত্বাভিলাষ আর আমীরত্ববিলাশ প্রকাশ পায়। আমীরত্বের রাজ-সিংহাসন, বাসভবন, আহরণ ভক্ষণ, কর্তৃত্বের শিহরণ, হাজারো মুরিদ-রূপি সমর্থনে পুলক অনুধাবন- এ সব কিছুর আমেজে আত্মহারা হয়ে তারা স্বয়ং আর স্বীয় পরিবার ছাড়া আর কারো জন্য এ নেতৃত্বের দায়িত্বের যোগ্য হওয়া বা এটি প্রাপ্য হওয়া বৈধই মনে করেন না। ভাবখানা এমন যে, আমি নিজে একবার ‘মসনদে’ বসে পড়েছি আর এর ধারে কাছে আসে কোন্ বেটা! আমিত্বের দিক থেকে এ যেন সেই নযরুল ইসলামের কবিতার মত :
আমি চেঙ্গিস,
আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ![১৪]
উল্লেখ্য যে, এ কবিতায় কবি ‘আমি’ শব্দ উল্লেখ করেছেন কম ও বেশি ১৩১ বার, তা করা হয়তো বা কবির কবিতার জন্য প্রয়োজন ছিল এবং হতে পারে সেটা তাঁর জন্য বৈধও বটে। কিন্তু ইসলামী সংগঠন ও জামা‘আতের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এ জাতীয় আমিত্বমিশ্রিত কথা ও কাজ একান্তই অসঙ্গত, অবৈধ ও পরিত্যাজ্য।
কোনো জামা‘আত-সংগঠন যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে তার সাংগঠনিক অবকাঠামোর (Frame; Structure) উপর সততার ভিত্তিতে দাঁড়ায়, তাহলে ধারাবাহিক নেতৃত্বের সৃষ্টি হয় এবং জটিলতর, স্পর্শকাতর ও সুকঠিন সমস্যার সময়োপযোগি সমাধান বের করা সহজ হয়। শুধু কেন্দ্রে নয় বরং সংগঠনের সকল স্তরে ধারাবাহিক নেতৃত্ব তৈরি ও তা প্রতিষ্ঠিত করা সংগঠনের স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। রাষ্ট্র ও অফিস আদালতের ক্ষেত্রেও বিষয়টি বিভিন্ন পদের নামভেদে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। সর্বস্তরে ভালো মানসিকতা ও দলীয়-কর্মস্পৃহা (Team-spirit) তৈরি করতে না পারলে কোনোদিন সামষ্টিক কর্ম (Team-work) তার অভীষ্ট লক্ষ্যে (Desired target) পৌঁছাতে পারে না।
গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টি আকর্ষণীয় বিষয় এই যে, নেতৃত্ব যদি হয় খোদগরজ, তাঁর লক্ষ্য যদি হয় আত্মসংস্থাপন ও পরিবার প্রতিষ্ঠা তদুপরি পদ আটকে রাখা ও আঁকড়ে থাকা এবং ধারাবাহিকভাবে যথাযথ যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির পথ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার রুদ্ধ করা; আর কথিত কর্মীদের লক্ষ্য যদি হয় কিছু সুপ্ত বাসনা পূরণ ও পার্শ্ব-নেতৃত্বের দৌড়ে গলা বাড়িয়ে দেয়া, কিংবা অতি উঁচু মাত্রার ভালোবাসার অভিনয় করে নীচু মানের স্বার্থ উদ্ধার করা; তাহলে সেটি সংগঠন ও জামা‘আতের নামে একটি স্বার্থবাদী ও ধান্ধাবাজী বলয়ে পরিণত হয়- যা কোনো ইসলামী অঙ্গন ও দ্বীনি মহল তো দূরাস্থান সাধারণ কোনো ক্ষেত্রেও তা আদৌ কাম্য নয়।
লক্ষ্যপানে দৃঢ়তার সাথে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে যাওয়া, সার্বিক অবস্থার মূল্যায়ন এবং নেতিবাচক পরিস্থিতির যথাযথ মোকাবেলা করার জন্যও প্রয়োজন সর্বস্তরে নীতি-নৈতিকতাবিশিষ্ট বলিষ্ঠ নেতৃত্বসম্পন্ন সচল সংগঠন। নেতৃবৃন্দ কর্মীদেরকে তাদের নিজ সংগঠনের খিদমত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিবেন- এটাই তো কাম্য। অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কর্মীদেরকে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও কাজ দিতে না পারাটা তাদের অন্যত্র আনাগোনা করার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের ছাত্রাবস্থায় ঢাকা কলেজের একটি ফলকে লিখা ছিল, ‘ছাত্রের অমনোযোগিতার কারণ শিক্ষক তাঁর নিজের মধ্যে খুঁজে দেখবেন’। সুতরাং জামা‘আত-সংগঠন ও কর্মীদের সমস্যাদি, স্থবিরতা, নিস্ক্রিয়তা ও অযোগ্যতার কারণগুলো প্রথমত সংগঠনের নেতৃবৃন্দকেই তাদের নিজেদের মধ্যে খুঁজে দেখতে হবে।
নেতা যদি অতি আধ্যাত্মিকতার হালতে বিরাজ করেন আর কর্মীরা হয় বুজুর্গভাবের রহস্যময় অনুসারী- তাহলে সেটা হলো পীর-মুরিদী ও পুরোহিততন্ত্র। আর নেতার কথা ও কাজ শরী‘আত ও বাস্তবতার মাপে ও ধোপে টিকুক বা না টিকুক, সর্বাবস্থায় কর্মীরা তার অন্ধভাবে মান্যকারী- তাহলে সেটা হলো সাংগঠনিক তাক্বলীদ। আর নেতা যদি তার নিজের এক পথে হাঁটেন আর কর্মীরা চলে তাদের আরেক পথে- তাহলে সেটা সাংগঠনিক হঠকারীতা ও তামাশা। আর সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের আলোকে নেতার শরী‘আতসম্মত নির্দেশ নিশ্চিত হওয়ার পরও বিনা-ওজরে যদি তা অমান্য করা হয়- তাহলে সেটা হল অবাধ্যতা ও অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। আর নেতা যদি কর্মীকে ব্যবহার করেন নিজ স্বার্থে আর কর্মী নেতাকে ব্যবহার করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে- তাহলে সেটা হল সাংগঠনিক চাতুর্য, ধূর্ততা ও স্বার্থপরতা। আবার যদি একজন আরেক জনের নাম ভাঙ্গিয়ে খায়; বাস্তবে কেউ কারো নয় অথবা সংগঠনকে রুযি-রোযগারের মাধ্যম ও ইয্যত লাভের কৌশল হিসাবে ব্যবহার করে- তাহলে সেটা হল সংগঠন-বাণিজ্য। আবার যদি স্বৈরাচারী নেতার গো-বেচারী জ্বী-হুজুর কর্মী হয়- তাহলে সেটি হল রাজতান্ত্রিক বা স্বৈরতান্ত্রিক সংগঠন। এর সাথে যদি নেতার সন্তান-সন্ততিকে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার পরিকল্পনার সাথে অযাচিতভাবে যুক্ত করা হয় বা সুকৌশলে সে ফাঁদ সুনিপুণভাবে যথাস্থানে (এমনকি গঠনতন্ত্রে) পেতে রাখা হয়- তাহলে সেটাতো আরো সোনায় সোহাগা (সংগঠনের গোদের উপর বিষফোঁড়া)। নেতৃত্বের সন্তানেরা যদি সংগঠনের যত্রতত্র বেফাঁশ হস্তক্ষেপ করা শুরু করে ও এটাকে পৈত্রিক সম্পদ মনে করে এবং এর সর্বত্র অবাধে বিচরণ করতে থাকে- তাহলে সেটা পরিবারতান্ত্রিক সংগঠন। আবার ভেদ-বুদ্ধিহীন বিচক্ষণতাবিবর্জিত অকর্মা নেতা এবং তার সাথে বেখবর কর্মীদের সমাহার হলে- সেটা হবুচন্দ্র নেতার গবুচন্দ্র মার্কা কর্মীর সংগঠন। অনুরূপ নেতা যদি অতি নিগূঢ়-চিন্তা, বাড়তি গবেষণা ও অতি লিখনীর বিভোর হালতে বিরাজমান থাকেন আর কর্মীরা কাগজ-কলম-শিল্পের মসলিন-নগরীতে, বয্মে তাফকীরে, আঞ্জুমানে তাক্রীরে, তাহযীবে তাহরীরে, বাহরে ফালসাফাহ্, মাকালাত ও নিকাতে ‘আমীকাহ্ ও দাকায়েকে মুশায়েরাহ্, হাকায়েকে মুনাযারাহ্ ইত্যাদির জগতে কামালিয়্যাত হাসিল করতে তাঁর সহযোগী সাজেন- তাহলে সেটা বিশেষভাবে ভাববাদী দার্শনিক, চিন্তাবিলাসী, তার্কিক ও কলমনবিসদের আস্তানা।
দীন লেখক এটা বলছে না যে, এগুলো না-জায়েয; তবে সত্যের খাতিরে এটা না বলে উপায়ন্তর নেই যে, সংগঠনের নামে মুখ্য কাজকে পাশ কাটিয়ে গৌণ কাজকে প্রাধান্য দিয়ে এ জাতীয় বলয় ও পরিবেশ সৃষ্টি করে কর্মীদেরকে অপ্রত্যক্ষ কর্মে মহাদক্ষ ও ব্যতিব্যস্ত করে রেখে শেষ বিকালে শুধু নেতৃত্বের স্বীয় মাকসূদ ও তাঁর পরিবারের চাওয়া পাওয়াই সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত হয় ও তাদেরই স্বার্থের জয়ধ্বনি রয়ে রয়ে বাজতে থাকে। সাংগঠনিক বলয় ও কথিত কর্মীরা যেন অনেকটা এগুলোতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় মূলত সংগঠন যায় রসাতলে এবং শুধু বাহারী সাইনবোর্ড, দু’ চারটি জমকালো মাহফিল ও প্রচার কৌশল ছাড়া আর তেমন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। এ জাতীয় সংগঠনের নেতৃত্ব ও কর্মীদের ক্ষেত্রে বিখ্যাত উর্দূ-কবি আকবর এলাহাবাদীর দুঃখভারাক্রান্ত অথচ ব্যঙ্গরসাত্মক কবিতার এ দু’টি পঙক্তি খুবই উপাদেয় :
উনহি কি মতলব কো কাহ্ রাহা হোঁ যবান মেরি হ্যায় বাত উনকি,
উনহি কি মাহফিল সুনওয়ারতা হোঁ চেরাগ মেরা হ্যায় রাত উনকি।
কিন্তু বিদ্রোহী কবি নজরুলের তো স্বভাব আবার অন্য রকম। বিরহাত্মক গানে তিনি খুবই মমতাময় কিন্তু দ্রোহাত্মক কবিতায় তার ভাষা খুবই আগ্রাসী। তাই তিনি এজাতীয় ক্ষেত্রে বলতে বলতে চান :
কোথা চেঙ্গিস, গজনী-মাহমূদ কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙ্গে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেয়া দ্বার!
খোদার ঘরে কপাট লাগায় কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খোলা রবে সদা চালা হাতুড়ি শাবল চালা!
হায়রে ভজনালয়,
তোমার ধর্মের মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গাহে স্বার্থের জয়।[১৫]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* সাবেক অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, বিভাগ : ফাযায়িলুছ্ছাহাবাহ্, অধ্যায় : ফাযলু আবী বাকর, হা/৩৬৭১।
[২]. ছহীহ বুখারী, বিভাগ : ফাযায়িলুছ্ছাহাবাহ্, অধ্যায় : ফাযলু আবী বাকর, হা/৩৬৭৫।
[৩]. ছহীহ বুখারী, বিভাগ : ফাযায়িলুছ্ছাহাবাহ্, অধ্যায় : ফাযলু আবী বাকর, হা/৩৬৮৫।
[৪]. মূল উদ্ধৃতি ও দলীল অন্যত্র উল্লেখ করা হয়েছে।
[৫]. পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
[৬]. ইমাম সুয়ূত্বী, তারীখুল খুলাফা, পৃ. ৮১।
[৭]. পাকিস্তানের শাসন সংবিধান, আল্লামাহ্ আব্দুল্লাহেল কাফী, তর্জুমানুল হাদীছ, ২য় বর্ষ, ১০ম সংখ্যা, ১৩৭০ হি., পৃ. ৪৪৩।
[৮]. আল-আউয়াছিমু মিনাল ক্বউয়াছিম, (টীকা : মুহব্বুদ্দীন আল-খতীব), পৃ. ৫২-৫৩, ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ’র মিনহাজুস্সুন্নাহ’র বরাতে, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৬৮-১৭২ ও ২৩৩-২৩৪।
[৯]. বিদায়াহ্ নিহায়াহ্, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪০২।
[১০]. তাফসীর কুরতুবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩১২, (সূরাহ্ আল-বাকারার ৩০ নং আয়াতের ‘আল-খালীফাহ্’ সংক্রান্ত তাফসীরে)।
[১১]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০৪, (সূরাহ্ আল-বাকারার ৩০ নং আয়াতের ‘আল-খালীফাহ্’ সংক্রান্ত তাফসীরে)।
[১২]. এ বিষযে এ বিভাগের সূচনায় আলোচিত হয়েছে।
[১৩]. হুজ্জাতুল্লহিল বালিগাহ, অধ্যায় : খিলাফাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৭৪-৩৭৫।
[১৪]. কাযী নযরুল ইসলাম, কবিতা : ‘বিদ্রোহী’।
[১৫]. কাজী নজরুল ইসলাম, কবিতা : ‘মানুষ’।