সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন

ঈদে মীলাদুন্নবী : একটি পর্যালোচনা

-আল-ইখলাছ ডেস্ক 



মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান তথা নবী করীম (ﷺ)-এর জন্ম বার্ষিকী উদযাপন করা নিকৃষ্ট বিদ‘আত। হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে ওবাইদীরা এ বিদ‘আতের প্রবর্তন করে। বর্তমান ও অতীতের ওলামায়ে কেরাম একে বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন। যারা এ ধরনের বিদ‘আতের প্রবর্তন করেছে এবং আমল করেছে, ওলামায়ে কেরাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই জন্ম বার্ষিকী উদযাপন করা বৈধ নয়। এ বিষয়ে দলীসমূহ নিম্নে পেশ করা হল-

প্রথম দলীল : যে সকল কুসংস্কারের (বিদ‘আতের) ব্যাপারে শরী‘আতে কোন প্রমাণ বা দলীল নেই, তার অন্যতম হল মীলাদ অনুষ্ঠান তথা জন্ম বার্ষিকী উদযাপন করা। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে এ প্রসঙ্গে কোন বক্তব্য, আমল এবং সমর্থন পাওয়া যায় না। আর তিনি আমাদের আদর্শ বা নেতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَاۤ  اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ  فَخُذُوۡہُ ٭ وَ مَا نَہٰىکُمۡ  عَنۡہُ فَانۡتَہُوۡا ‘আল্লাহর রাসূল তোমাদেরকে যা কিছু দেন তোমরা তা গ্রহণ কর আর যা কিছু থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক’ (সূরা আল-হাশর : ৭)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ  فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰہِ  اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ  لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰہَ وَ الۡیَوۡمَ  الۡاٰخِرَ  وَ ذَکَرَ  اللّٰہَ  کَثِیۡرًا ‘তোমাদের জন্য আল্লাহ্র রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে’ (সূরা আল-আহযাব : ২১)। নবী করীম (ﷺ) বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ  ‘যে ব্যক্তি আমার শরী‘আতে এমন কিছু সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।[১]

দ্বিতীয় দলীল : খুলাফায়ে রাশেদীন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অন্য ছাহাবীগণ মীলাদুন্নবী উদযাপন করেননি। এমনকি তার দাওয়াতও দেননি, অথচ তাঁরাই হচ্ছেন নবী করীম (ﷺ)-এর পরে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। খুলাফায়ে রাশেদীনের মর্যাদা সম্পর্কে নবী করীম (ﷺ) বলেন,

عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ فَتَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَالْمُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ .

‘তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাত এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাগণের সুন্নাত অনুসরণ করবে, তা কঠিনভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরবে। দ্বীনের নামে নতুন সৃষ্টি হতে সাবধান! নিশ্চয় প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত ও প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহী’।[২]

তৃতীয় দলীল : মীলাদুন্নবী উদযাপন করা বক্রতা সৃষ্টিকারী ও পথভ্রষ্টের প্রথা। এ প্রথাকে সর্বপ্রথম ফাতেমী ওবাইদী গোত্রের লোকেরা হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে প্রবর্তন করে। তারা নিজেদেরকে ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে সম্পৃক্ত করে যা অন্যায়, অযৌক্তিক ও অপবাদ ব্যতীত আর কিছুই নয়। মূলত তারা ইহূদী। কেউ বলেন, তারা অগ্নিপূজক, আবার কেউ বলেন, তারা মুলহিদীন বা নাস্তিক’।[৩] তাদের প্রথম ব্যক্তি হল, মইজুদ্দীন ওবাইদী। সে পাশ্চাত্যের অধিবাসী। সেখান থেকে সে ৩৬১ হিজরীর শাওয়াল মাসে মিসরে আগমন করে এবং ৩৬২ হিজরী রামাযান মাস পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে।[৪] এখানে কোন বিবেকবান বা জ্ঞানসম্পূর্ণ মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা উচিত হবে যে, সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাত ছেড়ে একজন ইহূদীর অনুসরণ করবে? অসম্ভব প্রশ্নই আসে না।

চতুর্থ দলীল : আল্লাহ তা‘আলা এ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নে‘মত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে কবুল করে নিলাম’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৩)। আর নবী করীম (ﷺ) সুস্পষ্টভাবে দ্বীনের প্রচার করেছেন। জান্নাতে পৌঁছার কোন পথ ছাড়েননি অর্থাৎ জান্নাতে পৌঁছার সকল পথ ও জাহান্নাম হতে বাঁচার সকল উপায় উম্মতের সামনে বর্ণনা করে দিয়েছেন। এ কথা সকলের জানা যে, আমাদের নবী (ﷺ) সকল নবীদের সর্দার এবং তিনি সর্বশেষ নবী, পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছেছেন এবং আল্লাহ্র বান্দাদের কল্যাণ কামনা করেছেন। সুতরাং যদি মীলাদুন্নবী উদযাপন করা দ্বীনের অংশ হত আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ হত, তাহলে অবশ্যই তিনি তাঁর উম্মতের জন্য তা বর্ণনা করতেন। যা তাঁর জীবনে একবার হলেও আমল করে দেখাতেন। নবী করীম (ﷺ) বলেন,

إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِىٌّ قَبْلِىْ إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ.

‘আমার পূর্বে এমন কোন নবী প্রেরিত হয়নি যাঁর উপর এ দায়িত্ব বর্তায়নি যে, তিনি তাঁর উম্মতের জন্য কল্যাণকর বিষয় জানতে পেরেছেন তা তাদেরকে নির্দেশনা দেননি এবং তিনি তাদের জন্য যে অকল্যাণকর বিষয় জানতে পেরেছেন, সে বিষয়ে তাদেরকে সাবধান করেননি’।[৫]

পঞ্চম দলীল : এ জাতীয় বিদ‘আতী অনুষ্ঠানের আবিষ্কারকের মাধ্যমে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা দ্বীনকে এ উম্মতের জন্য পরিপূর্ণ করেননি, তাই দ্বীনের পরিপূরক কিছু আবিষ্কারের প্রয়োজন হয়েছে। তেমনি এ কথা বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এ উম্মতের জন্য কল্যাণকর সকল বিষয় প্রচার করেননি। যে কারণে পরবর্তীতে আল্লাহর অনুমোদন ব্যতিরেকে শরী‘আতে নতুন কিছু আবিষ্কারের প্রয়োজন দেখা দেয় যার মাধমে তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছা পোষণ করে থাকে। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ের অন্যায় ও ভুল। এটা অল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর উপর অভিযোগ। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দ্বীনকে ও বান্দাদের জন্য সকল নে‘মতকে পূর্ণ করে দিয়েছেন।

ষষ্ঠ দলীল : এ উম্মতের বড় বড় আলেমগণ কুরআন ও হাদীছের ভিত্তিতে মীলাদুন্নবী উদযাপন করার প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাঁরা বিদ‘আত পরিহার করতে ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুসরণ করতে বলেন এবং কথা, কাজ ও আমলে তাঁর নবী (ﷺ)-এর বিরোধিতা করা হতে সতর্ক করেন।

সপ্তম দলীল : মীলাদুন্নবী উদযাপনের দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ভালোবাসা অর্জিত হয় না বরং তাঁর অনুসরণ ও সুন্নাত অনুযায়ী আমলের দ্বারা তা অর্জিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلۡ  اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰہَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰہُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ غَفُوۡرٌ  رَّحِیۡمٌ  ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহকে ক্ষমা করবেন, বস্তুত আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১)।

অষ্টম দলীল : মীলাদুন্নবী মূলত জসমে জুলূস ও ঈদে মীলাদুন্নবী ইহূদী-খ্রিস্টানদের উৎসবের সদৃশ। আর ইহূদী ও খ্রিস্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে ও তাদের অনুসরণ করতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন’।[৬]

নবম দলীল : সারা বিশে^ মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে অধিকহারে লোক সমাগম হওয়া দ্বারা জ্ঞানী লোকেরা কখনো প্রভাবিত হয় না বা ধোঁকায় পড়ে না। কেননা সঠিক ও সত্য হওয়াটা মানুষের আধিক্যতা দ্বারা বুঝা যায় না বরং শরী‘আতের দলীলের মাধ্যমে বুঝা যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اِنۡ تُطِعۡ  اَکۡثَرَ مَنۡ  فِی الۡاَرۡضِ یُضِلُّوۡکَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ‘তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরণ কর, তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে ফেলবে’ (সূরা আল-আন‘আম : ১১৬)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَ مَاۤ  اَکۡثَرُ النَّاسِ وَ لَوۡ حَرَصۡتَ بِمُؤۡمِنِیۡنَ ‘তুমি যত প্রবল আগ্রহ ভরেই চাও না কেন, মানুষের অধিকাংশই ঈমান আনবে না’ (সূরা ইউসুফ : ১০৩)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,وَ قَلِیۡلٌ  مِّنۡ عِبَادِیَ  الشَّکُوۡرُ  ‘আমার বান্দাদের অল্পই কৃতজ্ঞ’ (সূরা সাবা : ১৩)।

দশম দলীল : শরী‘আতের মূলনীতি হল, ‘যে সকল ব্যাপারে মানুষ তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া করে, সে সকল বিষয়ে আল-কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা (সর্বাবস্থায়) আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিগণের; যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ এবং রাসূলের (নির্দেশের) দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ এবং ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক; এটাই উত্তম এবং সুন্দরতম মর্মকথা’ (সূরা আন-নিসা : ৫৯)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ  اِذۡ نَادٰی رَبُّکَ مُوۡسٰۤی  اَنِ ائۡتِ الۡقَوۡمَ  الظّٰلِمِیۡنَ  ‘তোমরা যেসব বিষয়ে মতভেদ কর তার মীমাংসা আল্লাহর উপর সোপর্দ’ (সূরা আশ-শু‘আরা : ১০)। নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি মীলাদ অনুষ্ঠান তথা জন্মবার্ষিকী উদযাপনের ব্যাপারে আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (ﷺ)-এর দিক-নির্দেশনার প্রতি ধাবিত হবে, সে জানতে পারবে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন অল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল তোমাদেরকে যা কিছু দেন তোমরা তা গ্রহণ কর আর যা কিছু থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক’ (সূরা আল-হাশর : ৭)। আল্লাহ তা‘আলা দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মীলাদুন্নবী উদযাপনের জন্য কাউকে নির্দেশ দেননি, তিনি এবং তাঁর ছাহাবীগণও তা কখনো করেননি। সুতরাং মীলাদুন্নবী উদযাপন করা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তা নবাবিষ্কৃত বিদ‘আত।

এগারতম দলীল : মুসলিমের জন্য শরী‘আত হচ্ছে সোমবারের দিন ছিয়াম পালন করা। কেননা নবী করীম (ﷺ)-কে সোমবারের দিনের ছিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيْهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيْهِ ‘এ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এদিনই আমি নবুওত প্রাপ্ত হয়েছি অথবা আমার উপর (কুরআন) নাযিল করা হয়েছে’।[৭] সুতরাং নবী করীম (ﷺ)-এর আদর্শ হল সোমবার ছিয়াম পালন করা; মীলাদুন্নবী উদযাপন করা নয়।

বারতম দলীল : মীলাদুন্নবী উদযাপন অনুষ্ঠানগুলো নিকৃষ্ট ও নিষিদ্ধ বিষয়াবলী থেকে মুক্ত নয়। নিকৃষ্ট কাজের কিছু উদাহরণ নি¤েœ উল্লেখ করা হল: (১) মীলাদপন্থীদের (অংশগ্রহণকারীদের) রচিত অধিকাংশ কবিতা ও প্রশংসামূলক বাক্যগুলোতে শিরকী ও বাড়াবাড়িমূলক কথা পাওয়া যায়। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর প্রশংসা করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে বলেন, ‘তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি কর না, যেমন ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে খ্রিস্টানরা বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি তাঁর বান্দা, তাই তোমরা বলবে, আল্লাহ্র বান্দা ও তাঁর রাসূল’।[৮] (২) মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে অনেক ক্ষেত্রে হারাম কাজও হয়ে থাকে। যেমন- নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশা, গান-বাদ্য ব্যবহার করা, মদ-গাজা খাওয়া ইত্যাদি। আবার কখনও কখনও এতে বড় শিরকও সংঘটিত হয়। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট বা অন্য কোন অলীর নিকট সাহায্য চাওয়া। আল্লাহর কিতাবের অসম্মান করা, কুরআনের বৈঠকে ধুমপান করা, অর্থ-সম্পদের অপচয় করা ইত্যাদি। মীলাদের দিনগুলোতে উচ্চৈঃস্বরে মসজিদে যিকির করার সাথে সাথে হাত তালি দেয়া ও সুর করে শরী‘আত পরিপন্থী কবিতা আবৃতি করা।[৯] যা হকপন্থী আলেমগণের ঐকমত্যে শরী‘আত সম্মত নয়’।[১০] (৩) মীলাদ অনুষ্ঠানে আরো কিছু নিকৃষ্ট কাজ সংঘটিত হয়। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্মের ঘটনা আলোচনা কালে তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়ানো এই বিশ^াস নিয়ে যে, তিনি এ মীলাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন। তাই তাঁর অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়িয়ে যান। আর এসবই চরম ভ্রান্তি ও মূর্খতা, যা নিন্দিত। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ক্বিয়ামতের পূর্বে কবর থেকে বের হবেন না, কোন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করবেন না, কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন না। বরং তিনি ক্বিয়ামত পর্যন্ত স্বীয় কবরে অবস্থান করবেন। আর তাঁর রূহ ইল্লিয়্যিনের সর্বোচ্চ স্তরে তাঁর প্রভুর নিকটে সম্মানিত স্থানে রয়েছে।[১১] যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘অতঃপর তোমরা অবশ্যই মরবে। তারপর ক্বিয়ামতের দিন তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে’ (সূরা আল-মুমিনূন : ১৫-১৬)। নবী করীম (ﷺ) বলেন, ‘আমি ক্বিয়ামতের দিন আদম সন্তানের সর্দার হব এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি যার কবর খুলে যাবে এবং আমিই প্রথম সুপারিশকারী ও প্রথম সুপারিশ গৃহীত ব্যক্তি’।[১২] উক্ত আয়াত, হাদীছ এবং এ জাতীয় আয়াত ও হাদীছসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, নবী করীম (ﷺ) অন্যান্য মৃত্যুদের মত মৃত। তিনি ক্বিয়ামতের দিন কবর থেকে উত্থিত হবেন। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আর এ বিষয়ে সমস্ত আলেমের ঐকমত্য রয়েছে, এতে কারো মতবিরোধ নেই’।[১৩]

অথএব মুসলিম উম্মাহকে এই জঘন্য ইসলাম পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে মীলাদুন্নবীর টাটকা বিদ‘আত থেকে বিরত থাকার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!


[১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮।

[২]. আবূ দাঊদ, হা/৮৬০৭; তিরমিযী, হা/২৬৭৪।

[৩]. শায়খ আলী মাহফুয, আল-ইবদা‘ ফী মাযারিল ইবতিদা‘, পৃ. ২৫১; ড. নাছের ইবনু আব্দুর রহমান আল-জাদী‘, আত-তাবাররুক : আনওয়াহু ওয়া আহকামুহু, পৃ. ৩৫৯-৩৭৩; ড. ছালেহ আস-সুহাইমী, তানবীহ উলিল আবছার ইলা কামালিদ্দীন ওয়ামা ফিল বিদা‘ঈ মিন আখত্বার, পৃ. ২৩২।

[৪]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১১/২৭২-২৭৩, ৩৪৫, ১২/২৬৭-২৬৮ এবং ৬/২৩২, ১২/৬৩, ১১/১৬১, ১২/১৩, ১২/২৬৬ পৃ.।  

[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৪।

[৬]. ইবনু তাইমিয়াহ, ইক্বতিযাউ আছ-ছিরাতিম মুস্তাক্বীম লিমুখালিফাতিল আছহাবীল জাহীম, ২য় খ-, পৃ. ৬১৪-৬১৫প; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ, ১ম খ-, পৃ. ৯৫।

[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৬২।

[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৪৫।

[৯]. মীলাদ অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য একটি কবিতা যেমন, ‘বালাগাল ‘উলা বি কামালিহী’। যা দু‘আ হিসাবে পড়া হয়। মূলত এটি কোন দু‘আ নয়, বরং কবিতা। বাক্যটি পারস্য কবি শেখ সা‘দী (৫৮৫/৬০৬-৬৯১ হি.) স্বীয় ‘গুলিস্তাঁ’ গ্রন্থে আরবীতে লিখিত তার অল্প সংখ্যক কবিতা সমূহের মধ্যে রাসূল (ﷺ)-এর প্রশংসায় লিখিত কবিতার একটি অংশ। এটি দরূদ হিসাবে পাঠ করা যাবে না। কারণ এটি একটি কবিতা মাত্র। দ্বিতীয়তঃ এটি শিরক মিশ্রিত। এখানে বলা হয়েছে, ‘উচ্চতা তার পূর্ণতায় পৌঁছে গেছে’। অথচ এটি কেবল আল্লাহর জন্য খাছ। তৃতীয়তঃ এখানে রাসূল (ﷺ)-কে নূরের তৈরি কল্পনা করা হয়েছে। যাঁর দেহের আলোকচ্ছটায় অন্ধকার বিদূরিত হয়েছে। এটি কুরআন বিরোধী আক্বীদা’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ১১০)। সূতরাং এটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, স্বয়ং কবিও এটিকে দরূদ বলেননি। বরং শেষে বলেছেন, صَلُّوا عَلَيْهِ وَآلِهِ ‘তোমরা তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি দরূদ পাঠ কর’।

[১০]. শায়খ আলী মাহফুয, আল-ইবদা‘ ফী মাযারিল ইবতিদা‘, পৃ. ২৫১-২৫৭।

[১১]. শায়খ ইবনু বায, আত-তাহযীরু মিনাল বিদা‘ঈ, পৃ. ১৩।

[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৭৮।

[১৩]. আত-তাহযীরু মিনাল বিদা‘ঈ, পৃ. ১৪ এবং ৭-১৪।




তওবার গুরুত্ব ও ফযীলত (২য় কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
রজব মাসের বিধানসমূহ - অনুবাদ : ইউনুস বিন আহসান
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আলো ও অন্ধকার (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
কুরবানীর মাসায়েল - আল-ইখলাছ ডেস্ক
সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ এবং তার প্রতিদান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে ইসলাম শিক্ষার আবশ্যকতা - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১৮তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
রামাযানের খুঁটিনাটি - আল-ইখলাছ ডেস্ক
বিদ‘আত পরিচিতি (১৬তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মাহে রামাযানে শিশু-কিশোর প্রতিপালন - আব্দুর রশীদ

ফেসবুক পেজ