শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন

আল-কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*


(৪র্থ কিস্তি) 

রাতে কুরআন তেলাওয়াত করার ফযীলত

আল্লাহ আল্লাহ বলেন,

اِنَّ  رَبَّکَ یَعۡلَمُ  اَنَّکَ  تَقُوۡمُ  اَدۡنٰی مِنۡ ثُلُثَیِ الَّیۡلِ وَ نِصۡفَہٗ  وَ ثُلُثَہٗ  وَ طَآئِفَۃٌ  مِّنَ  الَّذِیۡنَ مَعَکَ ؕ وَ  اللّٰہُ  یُقَدِّرُ الَّیۡلَ وَ النَّہَارَ ؕ عَلِمَ  اَنۡ  لَّنۡ تُحۡصُوۡہُ فَتَابَ عَلَیۡکُمۡ  فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ

‘অবশ্যই আপনার রব জানেন যে, আপনি রাতের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কম, অথবা অর্ধরাত অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ দাঁড়িয়ে থাকেন (ইবাদত করার জন্য) এবং আপনার সাথে যারা আছে তাদের মধ্য থেকে একটি দলও (দাঁড়িয়ে ইবাদত করে)। আর আল্লাহ রাত ও দিন নিরূপণ করেন। তিনি জানেন যে, তোমরা তা করতে সক্ষম হবে না। তাই তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরবশ হয়েছেন। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়’ (সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত : ২০)।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ بِتُّ عِنْدَ خَالَتِيْ مَيْمُوْنَةَ لَيْلَةً وَالنَّبِىُّ ﷺ عِنْدَهَا فَتَحَدَّثَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَعَ أَهْلِهِ سَاعَةً ثُمَّ رَقَدَ فَلَمَّا كَانَ ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ أَوْ بَعْضُهُ قَعَدَ فَنَظَرَ إِلَى السَّمَاءِ فَقَرَأَ (اِنَّ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافِ الَّیۡلِ وَ النَّہَارِ لَاٰیٰتٍ  لِّاُولِی الۡاَلۡبَابِ) حَتَّى خَتَمَ السُّوْرَةَ

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, একবার আমি আমার খালা মায়মূনার গৃহে রাত্রি যাপন করলাম, আর নবী করীম (ﷺ) সেই রাতে তাঁর গৃহেই ছিলেন। তিনি তাঁর পরিবারের সাথে কিছু সময় আলাপ করলেন, অতঃপর নিদ্রায় গেলেন। অতঃপর যখন রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশ অথবা কিছু বাকি ছিল, তখন তিনি উঠলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে তেলাওয়াত করতে লাগলেন, ‘নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং রাত্র-দিনের পরিবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনসমূহ আছে’ (সূরা আলে ‘ইমরান, আয়াত : ১৯০)। এমনকি তিনি সূরা শেষ করে ফেললেন।[১]                                                                                                                                                                                                                                                                                                         

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَرَأَ عَشْرَ آيَاتٍ فِيْ لَيْلَةٍ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে দশটি আয়াত তেলাওয়াত করবে, তাকে গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না’।[২]

عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ وَتَمِيمٍ الدَّارِيِّ عَنِ النَّبِيِّ  ﷺ قَالَ مَنْ قَرَأَ عَشْرَ آيَاتٍ فِيْ لَيْلَةٍ كُتِبَ لَهُ قِنْطَارٌ وَالْقِنْطَارُ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا

ফুযালা ইবনু উবাইদ ও তামীম দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে দশটি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য ‘কিনতার’ পরিমাণ ছওয়াব লিখা হবে। আর কিনতার হচ্ছে দুনিয়া এবং তার মধ্যস্থিত সকল বস্তু হতে উত্তম’।[৩]

তাছাড়া রাতে কুরআন তেলাওয়াত করা ফেরেশতা ও প্রশান্তি অবতরণের মাধ্যম। ছাহাবী উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এক রাতে সূরা আল-বাক্বারাহ পড়ছিলেন, তখন তাঁর কাছে ঘোড়া বাঁধা ছিল। হঠাৎ ঘোড়া লাফিয়ে উঠল। তিনি চুপ করলেন, ঘোড়া শান্ত হল। আবার তিনি পড়তে শুরু করলেন, আবার ঘোড়া লাফিয়ে উঠল। তিনি চুপ করলেন, ঘোড়া শান্ত হল। পুনরায় তিনি পড়া আরম্ভ করলেন, পুনরায় ঘোড়া লাফিয়ে উঠল। এবার তিনি ক্ষান্ত দিলেন। কেননা তাঁর পুত্র ইয়াহ্ইয়া ঘোড়ার নিকটে শয়ন করা ছিল। তিনি আশঙ্কা করলেন, তার কোন বিপদ হয় কি-না? এরপর তিনি তাকে দূরে সরিয়ে আকাশের দিকে মাথা উঠালেন এবং দেখলেন, শামিয়ানার ন্যায়, যাতে বাতিসমূহের মত রয়েছে। যখন তিনি সকাল উঠলেন, তখন নবী করীম (ﷺ)-কে এটা জানালেন। তখন তিনি বললেন, হে ইবনু  হুযাইর! তুমি পড়তে থাকলে না কেন? হে ইবনু হুযাইর! তুমি পড়তে থাকলে না কেন? তখন ইবনু হুযাইর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার ঘোড়া ইয়াহইয়াকে মাড়িয়ে দেবার ভয় করছিলাম। আর সে ছিল ঘোড়ার নিকটে। অতএব আমি ক্ষান্ত দিয়ে তার নিকটে গেলাম এবং আকাশের দিকে মাথা উঠালাম। দেখলাম, শামিয়ানার ন্যায়, এতে বাতিসমূহের মত রয়েছে। অতঃপর আমি সেখান থেকে বের হলাম, আর দেখতে দেখতে তা অদৃশ্য হয়ে গেল। শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এটা কী ছিল জানো? উসাইদ বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তারা ছিল ফেরেশতাদের দল। তোমার স্বর শুনে তাঁরা এসেছিলেন। যদি তুমি পড়তে থাকতে তাঁরা ভোর পর্যন্ত সেখানে থাকতেন, আর মানুষ তাঁদের দেখতে পেত, তাঁরা মানুষ হতে অদৃশ্য হতেন না।[৪] অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنِ الْبَرَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ  قَالَ كَانَ رَجُلٌ يَقْرَأُ سُوْرَةَ الْكَهْفِ وَإِلَى جَانِبِهِ حِصَانٌ مَرْبُوْطٌ بِشَطَنَيْنِ فَتَغَشَّتْهُ سَحَابَةٌ فَجَعَلَتْ تَدْنُوْ وَتَدْنُوْ وَجَعَلَ فَرَسُهُ يَنْفِرُ فَلَمَّا أَصْبَحَ أَتَى النَّبِىَّ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ تِلْكَ السَّكِيْنَةُ تَنَزَّلَتْ بِالْقُرْآنِ

বারা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এক ব্যক্তি সূরা আল-কাহ্ফ তেলাওয়াত করছিলেন। তার ঘোড়াটি দু’টি রশি দিয়ে তার পাশে বাঁধা ছিল। তখন এক টুকরো মেঘ এসে তার উপর ছায়া দান করল। মেঘখ- ক্রমেই নিচের দিকে নেমে আসতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি ভয়ে লাফালাফি শুরু করে দিল। সকাল বেলা যখন নবী (ﷺ)-এর নিকট উক্ত ঘটনার কথা ব্যক্ত করেন, তখন তিনি বললেন, এ ছিল আস-সাকীনা তথা প্রশান্তি, যা কুরআন তেলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল।[৫]  

عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ لَا يَنَامُ حَتَّى يَقْرَأَ "آلم تَنْزِيْلُ" وَ "تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ

জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, ‘নবী করীম (ﷺ) সূরা  আস-সাজদাহ এবং সূরা আল-মুলক না পড়ে ঘুমাতেন না’।[৬]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَقُوْلُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ إِنِّيْ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهْوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِيْ فِيْهِ وَيَقُوْلُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِيْ فِيْهِ فَيُشْفَعَانِ

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ছিয়াম এবং কুরআন ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। ছিয়াম বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে দিনে তার খাদ্য ও প্রবৃত্তি হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ বকুল করা হবে।[৭]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ كُنْتُ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَسَمِعْتُهُ يَقُوْلُ إِنَّ الْقُرْآنَ يَلْقَى صَاحِبَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِيْنَ يَنْشَقُّ عَنْهُ قَبْرُهُ كَالرَّجُلِ الشَّاحِبِ يَقُوْلُ لَهُ هَلْ تَعْرِفُنِىْ؟ فَيَقُوْلُ مَا أَعْرِفُكَ فَيَقُوْلُ لَهُ أَنَا صَاحِبُكَ الْقُرْآنُ الَّذِىْ أَظْمَأْتُكَ فِي وَأَسْهَرْتُ لَيْلَكَ وَإِنَّ كُلَّ تَاجِرٍ مِنْ وَرَاءِ تِجَارَتِهِ وَإِنَّكَ الْيَوْمَ مِنْ وَرَاءِ كُلِّ تِجَارَةٍ قَالَ فَيُعْطَى الْمُلْكَ بِيَمِيْنِهِ وَالْخُلْدَ بِشِمَالِهِ وَيُوْضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ وَيُكْسَى وَالِدَاهُ حُلَّتَيْنِ لَا يَقُوْمُ لَهُمَا أَهْلُ الدُّنْيَا فَيَقُوْلَانِ بِمَ كُسِيْنَا هَذَا؟ قَالَ فَيُقَالُ لَهُمَا بِأَخْذِ وَلَدِكُمَا الْقُرْآنَ ثُمَّ يُقَالُ لَهُ اقْرَأْ وَاصْعَدْ فِىْ دَرَجِ الْجَنَّةِ وَغُرَفِهَا فَهُوَ فِىْ صُعُوْدٍ مَا دَامَ يَقْرَأُ هَذًّا كَانَ أَوْ تَرْتِيْلًا

আব্দুল্লাহ ইবনু বুরায়দা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট ছিলাম। তাঁকে বলতে শুনলাম যে, নিশ্চয় কুরআন ক্বিয়ামতের দিন হাফেযের সাথে সাক্ষাৎ করবে যখন কবর ফেটে যাবে- ফ্যাকাশে ব্যক্তির ন্যায়। কুরআন হাফেযকে বলবে, তুমি আমাকে চিনতে পারছ? হাফেয বলবেন, তোমাকে চিনতে পারছি না। কুরআন বলবে, আমি তোমার সাথী কুরআন। আমার জন্যই তোমাকে তৃষ্ণার্ত করেছি এবং তোমার রাতকে জাগিয়েছি। নিশ্চয় প্রত্যেক ব্যবসায়ীর ব্যবসার পরে লভ্যাংশ থাকে। নিশ্চয় তোমার জন্যও লভ্যাংশ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন কুরআনের হাফেযকে তার ডান হাতে মালিকানা দেয়া হবে আর বাম হাতে দেয়া হবে স্থায়ী নে‘মত এবং তার মাথায় সম্মানের মুকুট পরানো হবে। আর তার মাতা-পিতাকে এমন দুই জোড়া কাপড় পরানো হবে, দুনিয়াবাসীর কোন কিছুই তার সমপরিমাণ হবে না। তখন মাতা-পিতা বলবে, আমাদেরকে এটা কেন পরানো হল? তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলে তাই। অতঃপর হাফেযকে বলা হবে, তুমি কুরআন পড়তে থাক আর জান্নাতের মার্যাদা ও রূমসমূহের দিকে আরোহণ করতে থাক। স্বাভাবিকভাবে বা তারতীলসহ পড়তে পড়তে যেখানে আরোহণ করবে, সেটাই হবে মর্যাদা।[৮]

ফজরে কুরআন তেলাওয়াত করার ফযীলত

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اِنَّ نَاشِئَۃَ الَّیۡلِ  ہِیَ اَشَدُّ وَطۡاً  وَّ  اَقۡوَمُ قِیۡلًا.  اِنَّ  لَکَ فِی النَّہَارِ سَبۡحًا طَوِیۡلًا

‘নিশ্চয় রাত্রির জাগরণ (কুরআন) হৃদয়ঙ্গমের জন্য অধিক সহায়ক এবং সঠিক তেলাওয়াতের পক্ষে অধিক অনুকূল। অবশ্যই দিবাভাগে রয়েছে আপনার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা’ (সূরা আল-মুযযাম্মিল, আয়াত : ৬-৭)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ  قُرۡاٰنَ  الۡفَجۡرِ ؕ اِنَّ  قُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ  کَانَ  مَشۡہُوۡدًا

‘ফজরের কুরআন। নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতা) উপস্থিত থাকে’ (সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ৭৮)।

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ فِى قَوْلِهِ تَعَالَى (اِنَّ  قُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ  کَانَ  مَشۡہُوۡدًا) قَالَ تَشْهَدُهُ مَلَائِكَةُ اللَّيْلِ وَمَلَائِكَةُ النَّهَارِ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘ফজরের ক্বিরাআতে তথা ছালাত হাযির হয়’-এর ব্যাখ্যায় নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, তাতে হাযির হয় রাত্রের ফেরেশতাগণ এবং দিনের ফেরেশতাগণ।[৯]

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি (ﷺ) বলেছেন,

تَفْضُلُ صَلَاةُ الْجَمِيْعِ صَلَاةَ أَحَدِكُمْ وَحْدَهُ بِخَمْسٍ وَعِشْرِيْنَ جُزْءًا وَتَجْتَمِعُ مَلَائِكَةُ اللَّيْلِ وَمَلَائِكَةُ النَّهَارِ فِىْ صَلَاةِ الْفَجْرِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَبُوْ هُرَيْرَةَঃ  فَاقْرَءُوْا إِنْ شِئْتُمْ (اِنَّ  قُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ  کَانَ  مَشۡہُوۡدًا)

‘জামা‘আতের ছালাত তোমাদের কারো একাকি ছালাত হতে পঁচিশ গুণ অধিক নেকি রাখে। আর ফজরের ছালাতে রাতের ও দিনের ফেরেশতাগণ একত্রিত হয়। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলতেন, তোমরা চাইলে (এর প্রমাণ স্বরূপ) এ আয়াত পাঠ কর (اِنَّ  قُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ  کَانَ  مَشۡہُوۡدًا) ‘ফজরের কুরআন। নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতা) উপস্থিত থাকে’ (সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ৭৮)।[১০]

বাড়ীতে কুরআন তেলাওয়াত করার ফযীলত

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ مَقَابِرَ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِيْ يُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের ঘরসমূহকে কবরস্থানে পরিণত কর না। নিঃসন্দেহে শয়তান সেই ঘর হতে পলায়ন করে, যে ঘরে সূরা আল-বাক্বারাহ তেলাওয়াত করা হয়’।[১১]

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ كَتَبَ كِتَابًا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ بِأَلْفَيْ عَامٍ أَنْزَلَ مِنْهُ آيَتَيْنِ خَتَمَ بِهِمَا سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ وَلَا تُقْرَآنِ فِيْ دَارٍ ثَلَاثَ لَيَالٍ فَيَقْرَبُهَا الشَّيْطَانُ

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টি করার দুই হাযার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছেন, যা হতে দু’টি আয়াত নাযিল করে তা দ্বারা সূরা আল-বাক্বারাহ সমাপ্ত করেছেন। এমন হতে পারে না যে, কোন ঘরে তা  তিন রাত্রি পড়া হবে আর তারপরও শয়তান তার নিকটে যাবে’।[১২]

মসজিদে কুরআন তেলাওয়াত করার ফযীলত

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِىْ بَيْتٍ مِنْ بُيُوْتِ اللهِ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَيَتَدَارَسُوْنَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِيْنَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيْمَنْ عِنْدَهُ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর কোন ঘরে আল্লাহর কিতাব পাঠ এবং পরস্পর আলোচনা করার জন্য সমবেত হয়, তখন আল্লাহ তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করেন, আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে ফেলে এবং ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখেন। আর আল্লাহ ফেরেশতাদের মাঝে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করেন’।[১৩]

ওক্ববা ইবনু আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বের হয়ে আসলেন আর আমরা মসজিদের একটি স্থানে উপবিষ্ট ছিলাম। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে চায় যে, প্রত্যহ সকালে বুত্বহান অথবা ‘আক্বীক্ব নামক বাজারে যাবে আর বড় কুঁজের অধিকারী দু’টি উটনী নিয়ে আসবে, কোন অপরাধ না করে ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা প্রত্যেকেই তো এমন সুযোগ গ্রহণ করতে চাই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,

أَفَلَا يَغْدُوْ أَحَدُكُمْ إِلٰى الْمَسْجِدِ فَيُعَلِّمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللهِ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ نَاقَةٍ أَوْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْإِبِلِ

‘তবে কেন তোমাদের কোন ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাবের দু’টি আয়াত শিক্ষা দেয় না বা শিক্ষা গ্রহণ করে না? অথচ একাজ তার জন্য একটি অথবা দু’টি উটনী অপেক্ষা উত্তম! তিন আয়াত তিনটি উটনী অপেক্ষা উত্তম এবং চার আয়াত চারটি উটনী অপেক্ষা উত্তম। আর যত আয়াত পড়বে বা পড়াবে তত উটনী অপেক্ষা উত্তম হবে’।[১৪]

কুরআনের হাফেযের ফযীলত

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ وَ اِنَّا  لَہٗ  لَحٰفِظُوۡنَ.

‘আমরাই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই এর সংরক্ষণকারী’ (সূরা আল-হিজর, আয়াত : ৯)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَتۡلُوۡنَ  کِتٰبَ اللّٰہِ  وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ  وَ اَنۡفَقُوۡا مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ سِرًّا وَّ عَلَانِیَۃً  یَّرۡجُوۡنَ  تِجَارَۃً  لَّنۡ تَبُوۡرَ

‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে, ছালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিযিক দিয়েছেন তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না’ (সূরা আল-ফাতির, আয়াত : ২৯)।

আব্দুল্লাহ ইবনু বুরায়দা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট ছিলাম। তাঁকে বলতে শুনলাম যে, নিশ্চয় কুরআন ক্বিয়ামতের দিন হাফেযের সাথে সাক্ষাৎ করবে যখন কবর ফেটে যাবে- ফ্যাকাশে ব্যক্তির ন্যায়। কুরআন হাফেযকে বলবে, তুমি আমাকে চিনতে পারছ? হাফেয বলবেন, তোমাকে চিনতে পারছি না। কুরআন বলবে, আমি তোমার সাথী কুরআন। আমার জন্যই তোমাকে তৃষ্ণার্ত করেছি এবং তোমার রাতকে জাগিয়েছি। নিশ্চয় প্রত্যেক ব্যবসায়ীর ব্যবসার পরে লভ্যাংশ থাকে। নিশ্চয় তোমার জন্যও লভ্যাংশ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন কুরআনের হাফেযকে তার ডান হাতে মালিকানা দেয়া হবে আর বাম হাতে দেয়া হবে স্থায়ী নে‘মত এবং তার মাথায় সম্মানের মুকুট পরানো হবে। আর তার মাতা-পিতাকে এমন দুই জোড়া কাপড় পরানো হবে, দুনিয়াবাসীর কোন কিছুই তার সমপরিমাণ হবে না। তখন মাতা-পিতা বলবে, আমাদেরকে এটা কেন পরানো হল? তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলে তাই। অতঃপর হাফেযকে বলা হবে, তুমি কুরআন পড়তে থাক আর জান্নাতের মার্যাদা ও রূমসমূহের দিকে আরোহণ করতে থাক। স্বাভাবিকভাবে বা তারতীলসহ পড়তে পড়তে যেখানে আরোহণ করবে, সেটাই হবে মর্যাদা।[১৫]

আবূ উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,اِقْرَؤُوا الْقُرْآنَ وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ هَذِهِ الْمَصَاحِفُ الْمُعَلَّقَةُ فَإِنَّ اللهَ لَنْ يُعَذِّبَ قَلْبًا وَعَى الْقُرْآنَ ‘তোমরা কুরআন তেলাওয়াত কর, কুরআনের এ সমস্ত লটকানো কপির সাথে তোমাদের ধোঁকা দেয়া উচতি নয় (অর্থাৎ তোমরা কুরআন মুখস্থ কর)। কারণ যে অন্তর কুরআন মুখস্থ করেছে, আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন না’।[১৬]

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

يَجِىءُ الْقُرْآنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُوْلُ يَا رَبِّ حَلِّهِ فَيُلْبَسُ تَاجَ الْكَرَامَةِ ثُمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ زِدْهُ فَيُلْبَسُ حُلَّةَ الْكَرَامَةِ ثُمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ ارْضَ عَنْهُ فَيَرْضَى عَنْهُ فَيُقَالُ لَهُ اقْرَأْ وَارْقَ وَتُزَادُ بِكُلِّ آيَةٍ حَسَنَةً

‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআন হাযির হয়ে বলবে, হে আমার রব! একে (হাফেযে কুরআনকে) অলংকার পরিয়ে দিন। অতঃপর তাকে মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। কুরআন আবার বলবে, হে আমার রব! তাকে আরো বৃদ্ধি করে দিন। সুতরাং তাকে আরো মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। পুনরায় বলবে, হে আমার রব! তার প্রতি আপনি সন্তুষ্ট হোন! ফলে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। অতঃপর তাকে বলা হবে, তুমি একটি একটি করে আয়াত পড়তে থাক এবং উপরের দিকে আরোহণ করতে থাক। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার জন্য একটি করে নেকী বৃদ্ধি করা হবে’।[১৭]

عَنْ أَبِيْ مُوْسٰى الْأَشْعَرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَثَلُ الْمُؤْمِنِ الَّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ مَثَلُ الْأُتْرُجَّةِ رِيْحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا طَيِّبٌ وَمَثَلُ الْمُؤْمِنِ الَّذِيْ لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ مَثَلُ التَّمْرَةِ لَا رِيْحَ لَهَا وَطَعْمُهَا حُلْوٌ وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ الَّذِيْ لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ مَثَلُ الْحَنْظَلَةِ لَيْسَ لَهَا رِيْحٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ الَّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ مَثَلُ الرَّيْحَانَةِ رِيْحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘সেই মুমিনের উপমা- যে কুরআন পড়ে, যেন উতরুজ্জা[১৮] বা লেবুজাতীয় এক ধরনের ফল, যার গন্ধ উত্তম এবং স্বাদও উত্তম। আর সেই মুমিনের উপমা- যে কুরআন পড়ে না, যেন খেজুর, যার কোন গন্ধ নেই, তবে তার স্বাদ উত্তম। আর সেই মুনাফিকের উপমা- যে কুরআন পড়ে না, যেন তা তিক্ত ফল, যার কোন গন্ধ নেই, অথচ তার স্বাদ তিতা। আর সেই মুনাফিকের উপমা- যে কুরআন পড়ে, যেন সেই ফুল, যার গন্ধ আছে অথচ তার স্বাদ তিতা’।[১৯]

আল-কুরআনের হাফেয হল আল্লাহর পরিবার-পরিজন

কুরআনের হাফেয হল আল্লাহর পরিবার-পরিজন। আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

إِنَّ لِلهِ أَهْلِيْنَ مِنَ النَّاسِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ مَنْ هُمْ؟ قَالَ هُمْ أَهْلُ الْقُرْآنِ أَهْلُ اللهِ وَخَاصَّتُهُ

‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট মানুষদের থেকে একদল লোকের স্থান রয়েছে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেন করলেন, হে আল্লাহ রাসূল (ﷺ)! তারা কারা? তিনি (ﷺ) বললেন, তারা কুরআন সংরক্ষণকারীগণ আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা’।[২০]

হাফেযকে সম্মান করা হল আল্লাহকে সম্মান করা

عَنْ أَبِىْ مُوْسَى اَلأَشْعَرِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ مِنْ إِجْلَالِ اللهِ إِكْرَامَ ذِى الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ وَحَامِلِ الْقُرْآنِ غَيْرِ الْغَالِىْ فِيْهِ وَالْجَافِىْ عَنْهُ وَإِكْرَامَ ذِى السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ

আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় বৃদ্ধ মুসলিম, আল-কুরআনের ধারক-বাহক ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান দেখানো মহান আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত’।[২১]

কুরআনের হাফেয পাঠক লিপিকার সম্মানিত ফেরেশতার মত

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَثَلُ الَّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهُوَ حَافِظٌ لَهُ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَمَثَلُ الَّذِيْ يَقْرَأُ وَهُوَ يَتَعَاهَدُهُ وَهُوَ عَلَيْهِ شَدِيْدٌ فَلَهُ أَجْرَانِ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, ‘কুরআনের হাফিয পাঠক লিপিকার সম্মানিত ফেরেশতার মত। খুব কষ্টদায়ক হওয়া সত্ত্বেও যে বারবার কুরআন মাজীদ পাঠ করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে’।[২২]

আল-কুরআনের হাফেযকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা হবে  

عَنْ عِصْمَةَ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَوْ جُمِعَ الْقُرْآنُ فِيْ إِهَابٍ مَا أَحْرَقَهُ اللهُ بِالنَّارِ

‘ইছমাহ ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যদি কুরআনকে একত্রিত করা হয় একটি চামড়ার উপর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে আগুন দ্বারা পুড়িয়ে ফেলবেন না’।[২৩]

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَوْ جُمِعَ الْقُرْآنُ فِيْ إِهَابٍ مَا أَحْرَقَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي النَّارِ

ওক্ববাহ্ ইবনে আমির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যদি কুরআনকে একটি চামড়ার উপর একত্রিত করা হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলবেন না।[২৪] অন্য বর্ণনাতে আছে। ওক্ববাহ ইবনু আমির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,لَوْ جُعِلَ الْقُرْآنُ فِيْ إِهَابٍ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ مَا احْتَرَقَ ‘যদি কুরআনকে একটি চামড়ায় একত্রিত করা হয় এবং তা আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে তা পুড়বে না’।[২৫]

[ইনশাআল্লাহ চলবে]


* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :

[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭৬৩; মিশকাত, হা/১১৯৫।
[২]. মুসতাদরাক হাকিম, হা/২০৪১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬৪৩।
[৩]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১২৩৯, সনদ হাসান; ছহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৩৮।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০১৮, ‘ফাযায়েলে কুরআন’ অধ্যায়, ‘কুরআন তেলাওয়াতের সময় প্রশান্তি নেমে আসে এবং ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯৬; মিশকাত, হা/২১১৬।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০১১; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯৫; মিশকাত, হা/২১১৭।
[৬]. আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৭০০; মুসতাদরাক হাকিম, হা/৩৫৪৫; তিরমিযী, হা/২৮৯২।
[৭]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/১৯৯৪; মিশকাত, হা/১৯৬৩, সনদ ছহীহ।
[৮]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩০০৪৫; দারেমী, হা/৩৪৩৪; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হা/১৪৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৮২৯, সনদ ছহীহ।  
[৯]. তিরমিযী, হা/৩১৩৫; মিশকাত, হা/৬৩৫, সনদ ছহীহ।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৮, ‘আযান’ অধ্যায়, ‘ফজর ছালাত জামা‘আতে আদায়ের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৪৯।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭৮০; তিরমিযী, হা/২৮৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৮০৮; মুসতাদরাক হাকেম, হা/৩০২৯; মিশকাত, হা/২১১৯।
[১২]. তিরমিযী, হা/২৮৮২; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৭৮২; মুসতাদরাক হাকেম, হা/৩০৩১; দারেমী, হা/৩৩৮৭; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৪৬৭; মিশকাত, হা/২১৪৫, সনদ ছহীহ।
[১৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৯; আবূ দাঊদ, হা/১৪৫৫; তিরমিযী, হা/২৯৪৫; ইবনু মাজাহ, হা/২২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪২১; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৭৬৮; মিশকাত, হা/২০৪।
[১৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৩; মিশকাত, হা/২১১০।
[১৫]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩০০৪৫; দারেমী, হা/৩৪৩৪; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হা/১৪৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৮২৯, সনদ ছহীহ।  
[১৬]. দারেমী, হা/৩৩১৯, সনদ ছহীহ।  
[১৭]. তিরমিযী হা/২৯১৫; হাকেম হা/২০২৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৮০৩০, সনদ ছহীহ।  
[১৮]. উতরুজ্জা- এটি লেবুর চেয়ে বড় লেবু বা কমলার ন্যায় বেশ রসালো ও সুস্বাদু একটি ফল। ঘণ ডাল ও পাতা বিশিষ্ট গাছগুলো বেশ বড় ও লম্বাকৃতির হয়। এ গাছের ফলগুলো সোনালী বা কমলা রংয়ের হয়ে থাকে। পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে এর জন্ম হলেও বর্তমানে আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে বিদ্যমান।
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৪২৭, ৭৫৬০; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯৭, ‘কুরআনের মর্যাদাসমূহ ও এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়’ অধ্যায়, ‘হাফিযুল কুরআনের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ।
[২০]. ইবনু মাজাহ, হা/২১৫, সনদ ছহীহ।
[২১]. আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৫৭; আবূ দাঊদ, হা/৪৮৪৩, সনদ হাসান ছহীহ।
[২২]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৯৩৭; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৭৬৭।
[২৩]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১৩৯৩৪; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/২৪৪৪; ছহীহুল জামে‘, হা/৫২৬৬, সনদ হাসান।
[২৪]. শু‘আবুল ঈমান, হা/২৭০০, আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, হাদীছে সনদ হাসান; ছহীহুল জামে‘, হা/৫২৮২।
[২৫]. দারেমী, হা/৩৩১০, সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৫৬২।




প্রসঙ্গসমূহ »: কুরআনুল কারীম
ইবাদতের দাবী - হাসিবুর রহমান বুখারী
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৪র্থ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
বিদ‘আত পরিচিতি (১৩তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
মূর্তিপূজার ইতিহাস - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
যমযমের ইতিহাস ও ফযীলত - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (শেষ কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি (২য় কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
ইসলামী শরী‘আতে খাওয়ার আদব - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআনী প্রবাদ সংকলন : তাৎপর্য ও শিক্ষা (শেষ কিস্তি) - প্রফেসর ড. লোকমান হোসেন
অল্পে তুষ্ট (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ