মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ
-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*
(১২তম কিস্তি)
দেওবন্দীদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ
দেওবন্দীরা শাখাগত মাসআলায় হানাফী মাযহাবের অনুসারী। তাদরে মধ্যে রয়েছে তাসাউফপন্থী বা সূফীবাদী আবার অনেকেই রয়েছে কবরপূজারী।[১] দেওবন্দীদের অন্যতম শাখা ১. তা‘লীম ও তাদরীস এবং ২. তাবলীগ ও তারবিয়াহ। যা ‘জামা‘আতে তাবলীগ’ অর্থাৎ তাবলীগ জামা‘আত নামে পরিচিত।[২] এই স্তরে তাদের মধ্যে ব্যাপক ভাল আমলের পাশাপাশি বিভিন্ন কুসংস্কার, উপকথা, কল্পকাহিনী, কবরপূজারী ও ছূফীবাদের অনুপ্রবেশ ঘটে। আর এ কারণে এই জামা‘আতে মাতুরীদিয়াদের এই স্তর ভিন্ন আকার ধারণ করে। এই জামা‘আত গোপনে পর্যায়ক্রমে ছূফীদের চিন্তা-চেতনা, তাদের দর্শন প্রকাশ করে বা ছড়িয়ে দেয়। দেওবন্দীদের অন্যতম একজন বড় লেখক, দেওবন্দীদের অন্যতম সাময়িকী ‘আত-তাজাল্লী’-এর সম্পাদক শায়েখ ‘আমির আল-উছমানী স্বীকার করেছেন এবং স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছেন যে,أن كل بلاء وبدعة وخرافة دخلت علي الديوبندية إنما دخلت من أبواب التصوف ‘প্রত্যেক দুর্যোগ, বিদ‘আত, কুসংস্কার এবং কল্পকাহিনী তখনি দেওবন্দীদের মধ্যে প্রবেশ করেছে যখন থেকে ছূফীবাদ বা অধ্যাত্মিকতা প্রবেশ করেছে’।[৩] নি¤েœ দেওবন্দীদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ আলোচনা করা হল।
আক্বীদাগত মানহাজ
দেওবন্দীদের আক্বীদাগত মানহাজ হল বিভ্রান্তিকর। তারা নিজেদেরকে ইমাম আবূ হানীফার অনুসারী দাবী করলেও কোন ক্ষেত্রেই তাকে অনুসরণ করে না। না আক্বীদার ক্ষেত্রে, না অন্যান্য ক্ষেত্রে। যেমনটা তাদের ইমাম মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপূরী বলেন, ‘আমরা, আমাদের জামাত শরী‘আতের সকল বিধান- প্রবিধানে আল্লাহর ইচ্ছায় ইমাম আযম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অনুসারী। আকাইদের ক্ষেত্রে আবুল হাসান আশ‘আরী (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম আবু মনসুর মাতুরীদী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অনুসারী এবং ‘তারই সাথে তরীকতে সুফিয়ার ক্ষেত্রে আমরা নকশাবন্দিয়া চিশতিয়া, শুহরাওয়ার্দিয়া ও মুজাদ্দেদিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখি’।[৪] মাওলানা ইউসুফ আহমাদ লুধিয়ানী বলেন, ‘দুই ফের্কা (দেওবন্দী ও ব্রেলভী) আক্বীদায় ইমাম আবুল হাসান আশ‘আরী ও ইমাম আবু মানছূর মাতুরীদীকে ইমাম ও অনুসারী মনে করে’।[৫]
পর্যালোচনা : দেওবন্দীরা ইমাম আবূ হানীফার অনুসারী হলেও মানহাজ[৬] তাদের ভিন্ন। তাদের মানহাজ ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মানহাজের বিপরীত। ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মানহাজ হল, তিনি আক্বীদা গ্রহণের ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছেন। কিতাব ও সুন্নাহ হল ইমাম আবূ হানীফার মূল ভিত্তি ও দলীল, যা উপেক্ষা করা যায় না। কেননা এ দু’টি সীমালঙ্ঘন করা হচ্ছে আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান ছাড়াই কথা বলা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অগ্রগামী হওয়া।[৭]
অন্যদিকে তাওহীদের বিভিন্ন শাখার ক্ষেত্রে মাতুরীদীদের মানহাজ হল, তারা ‘দলীল’-কে পরিত্যাগ করে ‘আক্বল’-কে প্রাধান্য দেয়। কেননা তাদের নিকট আক্বলটাই চূড়ান্ত।[৮]
এছাড়াও মাতুরীদীদের শাখা দেওবন্দীরা নিজেদেরকে ছূফী তরীকার দিকে সম্পৃক্ত করে। অথচ এভাবে নিজেদেরকে কোন তরীকার দিকে সম্পৃক্ত করার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই; এসব পরবর্তীদের মাধ্যমে নব উদ্ভাবিত বিষয়। এ ব্যাপারে সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া বোর্ড ‘আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ’-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে,
الطريقة المنسوبة إلى الشيخ عبد القادر وأبي الحسن الشاذلي هل يكون على الإنسان حرج إذا دخل فيها وانتسب إليها وهل هي سنة أو بدعة؟
প্রশ্ন : শায়খ আব্দুল কাদের ও আবুল হাসান শাযেলীর দিকে সম্পৃক্ত তরীকায় কেউ যদি প্রবেশ করে এবং সেদিকে সম্পৃক্ত করে, তবে কি তাতে সমস্যা আছে? এটা সুন্নাত না-কি, বিদ‘আত?
জবাব : ‘আবূ দাউদ ও অন্যান্য সুনান গ্রন্থকার আল-ইরবায বিন সারিয়াহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বললেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে আমাদের উদ্দেশ্য এক জ্বালাময়ী ভাষণ দিলেন, তাতে চোখগুলো অশ্রুসিক্ত হল এবং অন্তরগুলো বিগলিত হল। তখন এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! এ যেন কারো বিদায়ী ভাষণ! অতএব আপনি আমাদেরকে আরো অছীয়ত করুন। তখন তিনি বলেন,
أُوصِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَّعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِىْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيْرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَّكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি, শ্রবণ ও আনুগত্যের উপদেশ দিচ্ছি, যদিও সে (আমীর) একজন হাবশী গোলাম হয়। কারণ তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাত এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাগণের সুন্নাত অনুসরণ করবে, তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে। সাবধান! (দ্বীনের মধ্যে) প্রতিটি নব আবিষ্কার সম্পর্কে! কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হল বিদ‘আত এবং প্রতিটি বিদ‘আত হল ভ্রষ্ট’।[৯]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, অচিরেই তাঁর উম্মতের মাঝে অসংখ্য ইখতিলাফ তৈরি হবে; বিভিন্ন তরীকা ও মানহাজে বিভক্ত হয়ে পড়বে এবং অনেক বিদ‘আত ছড়িয়ে পড়বে। সে-সময় তিনি মুসলিমদের আল্লাহর কিতাব ও তাঁর (মুহাম্মাদ (ﷺ))-এর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরার ও তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে থাকার আদেশ দিয়েছেন। আর সতর্ক করেছেন বিচ্ছিন্নতা, মতপার্থক্য ও নিত্যনতুন বিদ‘আতের অনুসরণের ব্যাপারে। কারণ তা এমন ভ্রষ্ট ও গোলকধাঁধা, যে সে পথে হাঁটবে সে আল্লাহর রাস্তা থেকে ছিটকে পড়বে। তিনি তাদেরকে সেই নছীহত করেন, যে নছীহত আল্লাহ তাঁর বান্দাদের করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰہِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহ্র রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ ( সূরা আলে-ইমরান : ১০২)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَاَنَّ ہٰذَا صِرَاطِیۡ مُسۡتَقِیۡمًا فَاتَّبِعُوۡہُ وَ لَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِکُمۡ عَنۡ سَبِیۡلِہٖ ذٰلِکُمۡ وَصّٰکُمۡ بِہٖ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ .
‘আর এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ কর এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমারা তাক্বওয়ার অধিকারী হও’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৫৩)।
আমরা আপনাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর নছীহতের মাধ্যমে নছীহত করছি যে,
وننصحكم بلزوم منهج أهل السنة والجماعة ونحذركم ما أحدث أهل الطرق من تصوف مدخول وأوراد مبتدعة وأذكار غير مشروعة وأدعية فيها شرك بالله أو ما هو ذريعة إليه كالاستغاثة بغير الله وذكره بالأسماء المفردة وذكره بكلمة آه وليست من أسمائه سبحانه وتوسلهم بالمشايخ في الدعاء واعتقاد أنهم جواسيس القلوب يعلمون ما تكنه وذكرهم الله ذكرا جماعيا بصوت واحد في حلقات مع ترنحات وأناشيد إلى غير ذلك مما لا يعرف في كتاب الله وسنة رسوله صلى الله عليه وسلم.
‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পদ্ধতিতে চলার পরামর্শ দিচ্ছি এবং তরীকাপন্থীরা যেসব ছূফীবাদ, বিভিন্ন বিদ‘আতী ওযীফা, শরী‘আত বহির্ভূত যিক্র আযকার এবং শিরকী অথবা শিরকের দিকে ধাবিতকারী যেসব দু‘আ তৈরি করেছে তা থেকে সতর্ক করছি। শিরকী দু‘আ হচ্ছে যেমন, গাইরুল্লার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া, শুধু নামসমূহের মাধ্যমে তাঁর যিক্র করা, হুঁ হুঁ করে তাঁর যিক্র করা; অথচ হুঁ হুঁ আল্লাহর নাম নয়, দু‘আতে পীরকে অসিলা বানানো, পীর তার মনের কথা জানে বলে মনে করা, নেচেকুঁদে ও সুরে সুরে একসাথে এক আওয়াজে আল্লাহর যিক্র করা এবং অন্যান্য পদ্ধতিতে যিক্র করা, যা কুরআন ও সুন্নায় পাওয়া যায় না’।[১০]
দেওবন্দীদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ
আক্বীদা-১ : নবীগণ কবরে জীবিত
মাতুরীদীরা (আশ‘আরীসহ) বিশ্বাস করে যে, নবীগণ কবরে জীবিত। দুনিয়াবী জীবনযাপনের ন্যায় কবরে জীবনযাপন করছে। তবে মাতুরীদীদের প্রথম সারির কেউ এ ব্যাপারে স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেনি। কিন্তু মাতুরীদীদের পরবর্তী স্তর দেওবন্দী, কাওছারী এবং বেরীলভীরা বলে যে, নবীগণ কবরে জীবিত এবং দুনিয়াবী জীবনযাপনের ন্যায় কবরে জীবনযাপন করে।[১১] যেমন,
১. মাওলানা খলীল আহমদ শাহারানপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
حضرة الرسالة ﷺ وبجميع الأنبياء صلوات الله عليهم والشهداء لا برزخية كما هي حاصلة لسائر المؤمنين بل لجميع الناس.
‘রাসূলে করীম (ﷺ) রওযাহ পাকে পার্থিব জীবনের ন্যায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। এতে কোন প্রকার সংশয় নেই। আর তা তাঁর ও তামাম আম্বিয়া কেরামের জন্য এবং গুহাদায়ে কেরামের জন্য নির্দিষ্ট। তারা অন্যান্য মুমিন মুসলমানের ন্যায় বারজাখী জীবনযাপন করছেন না’।[১২]
২. আল্লামা সুয়ূতী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
أن النبي ﷺ حي في قبره ..أن مفارقة الروح له في بعض الأوقات.. حياة النبي ﷺ في قبره هو و سائر الأنبياء معلومة عندنا علما قطعيا..
‘নবী করীম (ﷺ) কবরে জীবিত.. এবং তাঁর রুহ কিছু সময়ের জন্য (তাঁর নিকট থেকে) বিচ্ছেদ বা পৃথক..সন্দেহাতীত জ্ঞানের মাধ্যমে আমাদের নিকট জ্ঞাত বিষয় যে, নবী করীম (ﷺ) এবং সমস্ত নবী-রাসূলগণ (আলাইহিস সালাম) কবরে জীবিত’।[১৩]
৩. ইমাম তকীউদ্দীন সুবুকী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,حياة الأنبياء والشهداء في القبور كحياتهم في الدنيا... ‘আম্বিয়ায়ে কেরাম ও শুহাদায়ে কেরাম তাদের কবরে পার্থিব জীবনের ন্যায় জীবিকা নির্বাহ করছেন’।[১৪]
৪. আনোয়ার শাহ কাশমীরী (মৃ. ১৩৫২ হি.) এবং শাবীর আহমাদ উছমানী (মৃ. ১৩৮৯ হি.) স্পষ্ট করে বলেছেন যে, أن النبي ﷺ يصلي في قبره بأذان وإقامة ‘নবী করীম (ﷺ) কবরে আযান ও ইক্বামতের দ্বারা ছালাত আদায় করেছেন’।[১৫] দলীল হিসাবে হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) কবর শরীফে নামাযের বিষয় উপস্থাপন করেছেন। ছালাততো সশরীরে জীবিতাবস্থায়ই হয়ে থাকে। এতে প্রমাণিত হয় তাদের এ জীবন বারযাখী হলেও পার্থিবতার সাথে কোন পার্থক্য নেই। এ বিষয়ে আমাদের শায়খ কাসিম নানুতবী (রাহিমাহুল্লাহ) অভিনব কায়দায় গভীর তথ্যানুসন্ধানে একটি পুস্তিকা রচনা করেছেন। যা ‘আঁবে হায়াত’ নামে প্রকাশিত রয়েছে।[১৬]
মুহাম্মাদ ক্বাসিম নানূতুবী (মৃ. ১২৯৭ খৃ.), দেওবন্দীদের ইমাম শাইখ রশীদ আহমাদ গানগুহী (মৃ ১৩২৩ হি.) এবং দেওবন্দীদের দ্বিতীয় ইমাম ও তাদের অন্যতম শায়খ আশরাফ আলী থানভী (দেওবন্দীদের নিকট যিনি ‘হাকীমুল ইম্মাহ’ নামে পরিচিত) হায়াতুন্নবীর (নবীগণের কবরে জীবিত হওয়ার) ব্যাপারে দলীল পেশ করেছে এই বলে যে, ‘নবীদের কোন ওয়ারীছ নেই এবং তাঁর স্ত্রীগণ অন্য কারও জন্য হালালও নয়’। এই দু’টি হাদীছের উপর ভিত্তি করে তারা বলেছে, فهذا دليل على أن النبي ﷺ حي في قبره حياة عنصرية لكنه انعزل عن الناس كما ينعزل المعنكف ‘নবী কবরে জীবিত থাকার ব্যাপারে এটাই দলীল। কিন্তু তিনি মানুষ থেকে নিঃসঙ্গ হয়েছেন যেমনভাবে ই‘তিকাফকারী (মানুষের নিকট থেকে) নিঃসঙ্গ হয়’।[১৭]
পর্যালোচনা
আশ‘আরী, মাতুরিদী, দেওবন্দী এবং কাওছারীদের উপরিউক্ত আক্বীদাটি মিথ্যা, কুসংস্কার, কুরআনের স্পষ্ট বিরোধী এবং ছাহাবীদের আক্বীদা বিরোধী। নবী করীম (ﷺ) যখন মৃতবরণ করলেন, তখন ছাহাবীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ‘সুনহ’-এ অবস্থিত তাঁর বাড়ি থেকে ঘোড়ায় চড়ে চলে এলেন এবং নেমে মসজিদে প্রবেশ করলেন। সেখানে লোকজনের সঙ্গে কোন কথা না বলে আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর ঘরে প্রবেশ করে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)-এর দিকে অগ্রসর হলেন। তখন তিনি একখানি ‘হিবারাহ’ ইয়ামানী চাদরে আবৃত ছিলেন। আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ﷺ)-এর মুখম-ল উন্মুক্ত করে তাঁর উপর ঝুকে পড়লেন এবং চুমু খেলেন, অতঃপর ক্রন্দন করতে লাগলেন এবং বললেন,
بِأَبِىْ أَنْتَ يَا نَبِىَّ اللهِ لَا يَجْمَعُ اللهُ عَلَيْكَ مَوْتَتَيْنِ أَمَّا الْمَوْتَةُ الَّتِى كُتِبَتْ عَلَيْكَ فَقَدْ مُتَّهَا.
‘হে আল্লাহ্র নবী (ﷺ)! আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আল্লাহ আপনার জন্য দুই মৃত্যু একত্র করবেন না। তবে যে মৃত্যু আপনার জন্য অবধারিত ছিল তা তো আপনি কবূল করেছেন’।[১৮]
আবূ সালামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, (তারপর) আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বাহিরে আসলেন। তখন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) লোকজনের সাথে বাক্যালাপ করছিলেন। আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁকে বললেন, বসে পড়–ন। তিনি তা মানলেন না। আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁকে বললেন, বসে পড়–ন, তিনি তা মানলেন না। তখন আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ‘কালিমাতুশ শাহাদাত’ দ্বারা (বক্তব্য) আরম্ভ করলেন। লোকেরা ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ছেড়ে তাঁর (আবূ বকর) দিকে আকৃষ্ট হলেন। আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন,
فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا ﷺ فَإِنَّ مُحَمَّدًا ﷺ قَدْ مَاتَ وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللهَ فَإِنَّ اللهَ حَىٌّ لَا يَمُوْتُ قَالَ اللهُ تَعَالَى (وَ مَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوۡلٌ ۚ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِہِ الرُّسُلُ ؕ اَفَا۠ئِنۡ مَّاتَ اَوۡ قُتِلَ انۡقَلَبۡتُمۡ عَلٰۤی اَعۡقَابِکُمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّنۡقَلِبۡ عَلٰی عَقِبَیۡہِ فَلَنۡ یَّضُرَّ اللّٰہَ شَیۡئًا ؕ وَ سَیَجۡزِی اللّٰہُ الشّٰکِرِیۡنَ).
‘তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ইবাদত করতে, মুহাম্মাদ (ﷺ) সত্যই মারা গেছেন। আর যারা মহান আল্লাহর ইবাদত করতে, নিশ্চয় আল্লাহ চিরঞ্জীব, অমর। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘মুহাম্মাদ (ﷺ) একজন রাসূল মাত্র আর কিছু নন। তার পূর্বেও অনেক রাসূল চলে গেছেন। অতএব যদি তিনি মারা যান অথবা নিহত হন তাহলে কি তোমরা পায়ের গোড়ালিতে ভর করে পেছনে ফিরে যাবে? আর যদি কেউ সেরূপ পেছনে ফিরেও যায়, তবে সে কখনও আল্লøাহর বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ অতি সত্বর কৃতজ্ঞদের পুরস্কার দিবেন’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৪৪)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اِنَّکَ مَیِّتٌ وَّ اِنَّہُمۡ مَّیِّتُوۡنَ ‘হে নবী আপনি তো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল’ (সূরা আয-যুমার : ৩০)। (রাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন) আল্লাহর কসম! মনে হচ্ছিল যেন আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর তেলাওয়াত করার পূর্বে লোকদের জানাই ছিল না যে, আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেছেন। এখনই যেন লোকেরা আয়াতখানি তাঁর নিকট থেকে পেলেন। প্রতিটি মানুষকেই তখন ঐ আয়াত তেলাওয়াত করতে শোনা গেল।[১৯]
আবূ আব্দুল্লাহ শামসুদ্দীন আফগানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘এটা ছিল আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর আক্বীদা। তিনি কুরআনের স্পষ্ট আয়াত দ্বারা পথনির্দেশ করেছেন। সকল ছাহাবীগণ এটার উপর ইজমা বা একমত হয়েছেন। পরবর্তীতে তাবেঈগণ, যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছেন এবং তাদের অনুসারী এবং দ্বীনের ইমামগণও এই ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাস্তবে মৃতবরণ করেছেন এবং দুনিয়া থেকে তাঁর জীবন বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তবে তাঁর কবরের জীবন বারযাখী জীবন, দুনিয়ার জীবন নয়’। ছাহাবীগণ বা তাবেঈগণ বা তাবেঈদের অনুসারী বা দ্বীনের ইমামগণের কেউই বলেননি যে, কবরে তাঁর জীবন দুনিয়াবী জীবনের ন্যায় বা তিনি মানুষদের নিকট থেকে ই‘তিকাফকারীর ন্যায় বিচ্ছিন্ন বা আলাদা হয়েছেন’।[২০]
তাদের সংশয় নিরসণ
প্রথম দলীল : তাদের সংশয়, সন্দেহ, অনিশ্চয়তা এবং অস্পষ্টতা এই যে, তারা দলীল পেশ করেছে, ‘তিনি কোন ওয়ারিছ বা উত্তরাধীকারী রেখে যাননি’। এই কারণে নবী করীম (ﷺ) কবরে দুনিয়াবী জীবন যাপন করছেন।
জবাব : বরং নবী করীম (ﷺ)-এর এই কথার মূল কারণ, আর সেটা হল, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, لَا نُوْرَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ ‘আমরা কাউকে ওয়ারিছ বানাই না, আমরা যা রেখে যাই তা সবই ছাদাক্বাহ’।[২১] আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত। একবার ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ও আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আবূ বকর সিদ্দিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিকট আসলেন তাদের ওয়ারিশ চাওয়ার জন্য। তাঁরা তখন তাদের ফাদাকের জমি এবং খায়বারের অংশ দাবি করছিলেন। তখন আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁদেরকে বললেন,
سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ ( لَا نُوْرَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ) إِنَّمَا يَأْكُلُ آلُ مُحَمَّدٍ ﷺ مِنْ هَذَا الْمَالِ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ وَاللهِ لَا أَدَعُ أَمْرًا رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَصْنَعُهُ فِيْهِ إِلَّا صَنَعْتُهُ.
‘আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছি তিনি বলেছেন, আমরা যা কিছু (সম্পদ) ছেড়ে যাই কেউ তার ওয়ারিশ হবে না, সবই ছাদাক্বাহ। এ মাল থেকে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পরিবার ভোগ করবেন। আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে আমি এতে যেভাবে করতে দেখেছি, তা সেভাবেই করব, কোন ব্যতিক্রম করব না’।[২২]
দ্বিতীয় দলীল : তাদের দ্বিতীয় দলীল হল- ‘নবী করীম (ﷺ)-এর স্ত্রীগণ অন্য কারও জন্য বৈধ নয়’। এটাই প্রমাণ করে যে, নবী করীম (ﷺ) দুনিয়াবী জীবন-যাপনের ন্যায় কবরে জীবন যাপন করছেন।
জবাব : নবী করীম (ﷺ) কবরে দুনিয়াবী জীবন-যাপনের ন্যায় জীবিত। আর এ কারণেই তার স্ত্রীগণ অন্য কার জন্য বৈধ নয়। বিষয়টা এমন নয়। বরং নবী করীম (ﷺ)-এর সম্মান ও মর্যাদার জন্য তাঁর স্ত্রীগণ অন্যদের জন্য অবৈধ। কেননা তিনি তাঁর উম্মাতের পিতা[২৩] এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাঁর উম্মাতের মাতা।[২৪] হারাম হওয়া (মাতাকে বিবাহ করা হারাম) এবং সম্মান ও মর্যাদার কারণে তাঁরা (স্ত্রীগণ) অন্যদের জন্য অবৈধ। তাছাড়া তাঁরা দুনিয়াতেও যেমন নবী করীম (ﷺ)-এর স্ত্রী ছিল, আখেরাতেও নবী করীম (ﷺ)-এর স্ত্রী হিসাবে তাঁরাই থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَلنَّبِیُّ اَوۡلٰی بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ مِنۡ اَنۡفُسِہِمۡ وَ اَزۡوَاجُہٗۤ اُمَّہٰتُہُمۡ ‘নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার পতœীরা তাদের মাতা’ (সূরা আল-আহযাব : ৬)।
অতএব কুরআন, সুন্নাহর দলীল ও সালাফে ছলেহীনের আক্বীদা এটাই প্রমাণ করে যে, নবীগণ মৃত এবং তাদের কবরের জীবন হল বারযাখী। যারা নবীগণ কবরে জীবিত বলে বিশ্বাস করে, তারা ভ্রান্ত আক্বীদা লালন করে। যা কুরআন, হাদীছ এবং সালাফদের আক্বীদা বিরোধী। যা থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এমন ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণ করা থেকে হেফাযত করুন-আমীন!!
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।
[১]. আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়া- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ২৮৮।
[২]. আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়া- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ২৮৯।
[৩]. আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়া- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ২৯০।
[৪]. মাওলানা খলীল আহমদ সাহরানপুরী, আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, ভাষান্তর, অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ আব্দুল হাকীম; দেওবন্দী আহলে সুন্নাতের আক্বীদা (সিলেট : আল হাবীব ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৪৩৩ হি./২০১২ খৃ.), পৃ. ২২।
[৫]. হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানী, ইখতিলাফে উম্মত আওর ছিরাতে মুস্তাক্বীম, পৃ. ৩৭।
[৬]. মানহাজ অর্থ সরল-সোজা পথ, প্রশস্ত রাস্তা, আলোকিত পথ। সাধারণত পরিষ্কার, স্পষ্ট পথকেই মানহাজ বলে (সূরা আল-মায়েদাহ : ৪৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৪৩০, সনদ ছহীহ; ইবনু মানযূর, লিসানুল আরব, ২য় খ-, পৃ. ৩৮৩)। মানহাজ শব্দের সাথে সালাফ শব্দটিও জড়িত। সালাফ অর্থ ‘অগ্রবর্তী বা গত হওয়া, উপদেশ, শিক্ষা, অগ্রগামী (সূরা আন-নিসা : ২২-২৩; সূরা আল-মায়েদাহ : ৯৫; সূরা আয-যুখরুফ : ৫৬; ছহীহ বুখারী, হা/৬২৮৬)। সালাফ হলেন, রাসূল (ﷺ), ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের যুগের সৎ ব্যক্তিবর্গ (ছহীহ বুখারী, হা/২৬৫২; সূরা আলে ‘ইমরান : ১১০)। আর ‘মানহাজুস সালাফ’ অর্থ হল, রাসূল (ﷺ), ছাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনে এযামের পথ, কর্মপন্থা ও মূলনীতি। তাদের কর্মপন্থা ও ব্যাখ্যাকে যারা ঈমানের সাথে গ্রহণ করবে, তারা মুক্তি পাবে। আর যারা প্রত্যাখ্যান করবে তারা ধ্বংস হবে এবং পথভ্রষ্ট হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তারা যদি তোমাদের ঈমান আনার মত ঈমান আনে, তবে তারা হেদায়াত পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারা ভ্রষ্টতার মধ্যে রয়েছে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৩৭)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, সালাফদের পথ অনুসরণ না করলে আল্লাহ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন (সূরা আন-নিসা : ১১৫)। তাই শরী‘আত বুঝার ক্ষেত্রে তাঁদের ব্যাখ্যা ও মূলনীতি অনুসরণ করা ফরয। এ কারণেই আল্লাহ তাঁদের পথ অনুসরণ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন (সূরা আত-তওবা : ১১৯; সূরা আল-হাশর : ৮)। এটাই হল মানহাজ।
মনে রাখা আবশ্যক যে, মানহাজ শব্দটি আক্বীদার চেয়েও ব্যাপক। কারণ মানহাজ আক্বীদা, ইবাদত, আখলাক, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতিসহ মুসলিমের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্যই আবশ্যক (ড. ছালিহ আল-ফাওযান, আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ, পৃ. ৭৬)। একজন মুসলিম প্রতিটি ক্ষেত্রেই সালাফদের মানহাজকে প্রাধান্য দিবে। কেউ যদি কোন একটি বিষয়ে মানহাজকে প্রত্যাখ্যান করে তাহলে সে সালাফী নয়। ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মানহাজ হল ঐ সমস্ত সুন্দর পদ্ধতি যা অনুসরণ করলে আক্বীদা, আমল ও ইবাদতের মাসআলাসমূহের সঠিক ও বিশুদ্ধ পন্থা নিশ্চিত হয়’ (এটা সালাফদের মানহাজ নয়, পৃ. ২২)।
[৭]. মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান আল-খুমাইস, উছূলুদ দ্বীন ইনদাল ইমাম আবী হানীফা (সঊদীআরব : দারুছ ছামীঈ‘, তা.বি), পৃ. ৫৭৫।
[৮]. উছূলুদ দ্বীন ইনদাল ইমাম আবী হানীফা, পৃ. ৫৭৭।
[৯]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; মিশকাত, হা/১৬৫, সনদ ছহীহ।
[১০]. আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল-বুহূছ আল-ইলমিইয়া ওয়াল-ইফতা, সংগ্রহ ও বিন্যাস : শাইখ আহমাদ ইবনু আব্দুর রাযযাক আদ-দুয়াইশ (রিয়ায : দারুল ‘আছিমাহ, ৩য় সংস্করণ, ১৪১৯ হি.), অধ্যায়, ‘আক্বীদা’, অনুচ্ছেদ, ‘শাযেলী তরীকার ন্যায় অন্যান্য তরীকা কি ইসলামে আছে’ ফাতাওয়া নং-৪, ২য় খ-, পৃ. ২৯১।
[১১]. আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ৪৮৪।
[১২]. আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, পৃ. ২৬; আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ৪৮৪।
[১৩]. আবুল ফযল জালালুদ্দীন আব্দুর রহমান আবূ বকর আস-সুয়ূতী, আর-রাসাইলুল আশরু (বৈরূত : দারুল কুতুবিল আলামিয়্যা, তাবি), পৃ. ১৯৭; আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ৪৮৪।
[১৪]. আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, পৃ. ২৬; আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ৪৮৪।
[১৫]. আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, পৃ. ২৬; আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ৪৮৪।
[১৬]. আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, পৃ. ২৬; আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ৪৮৫।
[১৭]. আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ৪৮৫।
[১৮]. ছহীহ বুখারী, হা/১২৪১; (ইফাবা, ২য় খ-, পৃ. ৩৫৭; হা/১১৬৯) ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘কাফন পরানোর পর মৃত ব্যক্তির নিকট গমন করা’ অনুচ্ছেদ।
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/১২৪২; (ইফাবা, ২য় খ-, পৃ. ৩৫৭; হা/১১৬৯) ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘কাফন পরানোর পর মৃত ব্যক্তির নিকট গমন করা’ অনুচ্ছেদ।
[২০]. هذه كانت عقيدة أبي بكر الصديق التي أرشد إليها صريح القران وأجمع عليها بقية الصحابة رضي الله عنهم أجمعين والذين اتبعوهم بإحسان من التابعين وأتباعهم وأئمة الدين من أن الرسول قد مات موتا حقيقيا وفارق الحياة في الدنيا عير أن له حياة في القبر حياة برزخية لا دنيوية ولم يقل أحد من الصحابة أو التابعين أو أتباع التابعين أو أحد من أئمة هذا الدين : إن حياته في قبره حياة دنيوية عنصرية أو إنه انعزل عن الناس انعزال المعتكف -আদা’ঊ মাতুরিদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরিদীয়া- আল-মাতুরিদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খ-, পৃ. ৪৮৬।
[২১]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৭৩০; (ইফাবা, ১০ম খ-, পৃ. ১৮৭; হা/৬২৭৪) ‘ফারায়িয’ অধ্যায়, ‘নবী করীম (ﷺ)-এর বাণী : আমরা যা কিছু (সম্পদ) ছেড়ে যাই, কেউ তার ওয়ারিছ হবে না, সবই ছাদাক্বাহ’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯; তিরমিযী, হা/১৬০৮; নাসাঈ, হা/৪১৪১; মিশকাত, হা/৫৯৬৭।
[২২]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৭২৬; (ইফাবা, ১০ম খ-, পৃ. ১৮৪; হা/৬২৭০) ‘ফারায়িয’ অধ্যায়, ‘নবী করীম (ﷺ)-এর বাণী : আমরা যা কিছু (সম্পদ) ছেড়ে যাই, কেউ তার ওয়ারিছ হবে না, সবই ছাদাক্বাহ’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯; আবূ দাউদ, হা/২৯৬৮।
[২৩]. জামেঈল বায়ান ফী তাবীলিল কুরআন, ২০তম খ-, পৃ. ২০৯; মা‘আলিমুত তানযীল, ৪র্থ খ-, পৃ. ১৯২; আল-জামেঈ লি-আহকামিল কুরআন, ৫ম খ-, পৃ. ৩৫৯; তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৪র্থ খ-, পৃ. ৩৩৭।
[২৪]. সূরা আল-আহযাব : ৬।